লেটার ফ্রম লাইবেরিয়া-৭

যুবরাজ এর ছবি
লিখেছেন যুবরাজ [অতিথি] (তারিখ: বিষ্যুদ, ১৬/১০/২০০৮ - ১:৪১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

লাইবেরিয়াতে জাতিসংঘ বাহিনী কাজ করছে বহুজাতিক শান্তিরক্ষী বাহিনী হিসেবে।

লাইবেরিয়াকে চারটি সামরিক সেক্টর বা জোন এ ভাগ করা হয়েছে। সেগুলো হলো নাইজেরিয়ান সেক্টর,পাকিস্তানী সেক্টর, বাংলাদেশ সেক্টর এবং ইথিওপিয়ান সেক্টর। এই চার সেক্টরের দায়িত্ব হলো নিজেদের আওতাধীন এলাকার সার্বিক আইন-শৃংখলা নিশ্চিত করা, সকল অবস্থায় শান্তি বজায় রাখা, স্থানীয় সরকারকে সাহায্য করা, স্কুল-কলেজ, ব্রীজ-কালভার্ট মেরামত করা, চিকিৎসা সেবা প্রদান করা,এক্স কম্ব্যাট্যান্ট বা প্রাক্তন যোদ্ধাদেরকে পুর্ণবাসিত করা, ড্রাগ ট্রাফিকিং বন্ধ করা, স্থানীয় জনসাধারনকে আত্মকর্ম সংস্থানে সাহায্য করা, জাতিসংঘ ও অন্যান্য মানবাধিকার সংস্থাগুলোর যাতায়াত ও কার্যক্রমের নিরাপত্তা প্রদান ইত্যাদি বিবিধ কাজ।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সম্পর্কে বিদেশীরা কি ভাবে এটা আমার সবসময় জানার ইচ্ছা থাকে। আপনারা শুনে ভীষন খুশি হবেন আমাদের সব কাজকর্মকে এখানে উদাহরন হিসেবে ব্যবহার করা হয়। আমেরিকান এক অফিসার মনরোভিয়াতে আমাকে একদিন বলেছিলেন যে, বাংলাদেশ আর্মির প্রফেশনালিজম এর সাথে তার দেশের আর্মিও পারবে না। কথাটা হয়তো বাড়াবাড়ি, কিন্তু এখানে না আসলে বিশ্বাস করতাম না যে আমরা মেধা, মননে, কোন কিছুতেই পিছিয়ে নেই। আপনি এখানে বাংলাদেশ উচ্চারণ করুন, সাথে সাথে কিছু প্রশংসাবাণী কানে আসবে। আমি স্যালুট করি আমাদের পূর্বতন ব্যাটেলিয়ান, সেনাদলগুলোকে যারা এই সুমহান, অর্পিত দায়িত্বকে পালন করে দেশের জন্য সুনাম বয়ে এনেছেন।

২০০৩ সালের অক্টোবরে যখন গৃহযুদ্ধ বন্ধ করার জন্য জাতিসংঘে রেজুলেশন পাশ হয়, তখন দুই পক্ষের যুদ্ধ বন্ধে সিয়েরা লিয়নে কর্মরত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি ব্যাটালিয়ানকে জরুরী ভিত্তিতে আকাশপথে মনরোভিয়াতে নামানো হয়। সেই সেনাদলের রানওয়ে দখল, পরবর্তীতে এয়ারপোর্ট দখল এবং রাজধানী মনরোভিয়াকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা, দুই পক্ষের যুদ্ধের মাঝখানে পড়া- যে কোন হলিউডের চলচিত্রকে অবলীলায় হার মানাবে। ব্যাপারটা কতো ভয়ানক ছিল শুধু একটা তথ্য দিলেই আপনারা বুঝতে পারবেন। এই বাহিনী নামার আগে ECOWAS (ECONOMIC COMMUNITY OF WEST AFRICAN STATES) এর একটি শান্তিরক্ষী সেনাদল বিদ্রোহীদের হাতে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল। আমার কাছে এয়ারপোর্ট দখলের পুরো ভিডিও চিত্রটি আছে। আমি মনে করি এসব জিনিস প্রচার মাধ্যমে আসা উচিত। আমাদের জাতীয় দিবসে এগুলো দেখানো হলে জাতিগত হীনমন্যতাবোধ থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি পাব আমরা।

আমার এই লেখা পড়ে কেউ মনে করবেন না, আমি সেনাবাহিনীর সদস্য হিসাবে সেনাবাহিনীর স্তুতির জন্য কলম ধরেছি। এই কথাটা মনে রাখুন, আমি নিয়মিত লিখে যাচ্ছি আমার নিজের প্রেরণায়, নিজের আনন্দে, যেখানে সমালোচনা প্রয়োজন, আমি নির্দ্বিধায় তা করবো। আর সবার মত আমিও আমার দেশের যে কোন অর্জনে আপ্লুত হই। বাঙ্গালী জাতির সহস্র বছরের শ্রেষ্ঠ অর্জন ’৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ, ’৯৭ এর আইসিসি জয়, ২০০৬ নোবেল বিজয় আর জাতিসংঘে শান্তিরক্ষী বাহিনীর অংশগ্রহণ - এ প্রতিটি ঘটনায় বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিশ্বে উজ্জল হয়েছে। গর্ব করার মত কিছু তো করতে পারি না আমরা, তাই সেনাদলের গর্বেই বুক ফুলিয়ে হাঁটি লাইবেরিয়ার মাটিতে।


মন্তব্য

ফারুক হাসান এর ছবি

এই কথাটা মনে রাখুন, আমি নিয়মিত লিখে যাচ্ছি আমার নিজের প্রেরণায়, নিজের আনন্দে, যেখানে সমালোচনা প্রয়োজন, আমি নির্দ্বিধায় তা করবো।

চলুক

কবি এর ছবি

সেনা বাহিনী-র প্রটোকলে না আটকালে ইঊ টিঊবে কি ভিডিও চিত্রটি তুলে দেয়া যায়?

যুবরাজ এর ছবি

ভিডিওটা অনেক বড়।আমি ইউটিউবে চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু জায়গা হয়না।আর আমাদের ইন্টানেটের লাইন খুব ধীর গতির। আর কি উপায় আছে বলুন?

হাতের কাছে ভরা কলস, তবু তৃষ্ণা মিটেনা।
----------------------------------------------------------------------------

দিগন্ত এর ছবি

প্রথমে টুকরো করুন। তারপরে রোজ একটা করে তুলে দিন ... সিরিজে থাকবে ১,২,৩ করে ...


হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

ছোটন এর ছবি

যুবরাজ, আপনার উচিত সেই ভিডিও ইউটিউবের মতো জায়গায় আপলোড করে দেয়া।

লেখা খুব ভাললাগছে।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

হুমম ভালো।

নন্দিনী এর ছবি

আপনার সিরিজটা দূর্দান্ত হচ্ছে ।

নন্দিনী

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

এমন উদ্দীপক কিছু তো দেখানো যায়ই। সেনাবাহিনী সম্পর্কে মূলত নেতিবাচক ধারণার পেছনে কারণগুলো খুব স্বাভাবিক। দেশ দখল ছাড়া অন্য কোন কাজে সেনাবাহিনীকে দেখতে চাই আমরাও। বিতর্কের অতীত এরকম কিছু সাফল্যগাঁথার আশায়ই তো গরিব দেশের এত কষ্ট করে সেনাবাহিনী রাখা।

তানভীর এর ছবি

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর গর্বে কেন যেন গর্বিত হতে পারি না আমি! কারণ, যারা আমাকে 'ব্লাডি সিভিলিয়ান' মনে করে তাদের জন্য ভেতর থেকে শ্রদ্ধা আসে না আমার। উহু, অতটা দেশপ্রেমিক নই আমি। আপনি আমেরিকান আর্মির কথা বলেছেন। আমেরিকায় আমেরিকান সেনাদের সমর্থন জানানো দেশপ্রেমের সমার্থক। কারণ, আমেরিকার জনগণ জানে শুধু তাদের রক্ষার জন্যই জীবন দিচ্ছে তাদের সেনারা (সেটা তাদের যেভাবেই বোঝানো হোক)। বাংলাদেশের ম্যাংগো পিপলকে রক্ষার জন্য কবে, কোন সেনা জীবন দিয়েছে? উল্টো দেখি সবসময় গায়ে বুটের লাথিই পড়ে এসেছে। নাগরিক অধিকার বিঘ্নিত করে রাজধানীর মাঝখানে ক্যান্টনমেন্ট বসিয়ে ট্যাংক উঁচিয়ে দম্ভ দেখানো- কেবল বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষেই সম্ভব। আমেরিকান সেনাবাহিনীরও এত সাহস নেই। জাতিসংঘ থেকে ডলার গোনার নিশ্চয়তায় যে বীরত্ব প্রদর্শন তাতে দেশের সুনাম কিছুটা বাড়লেও, অন্তত তা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে জাতিগত হীনমন্যতাটুকু ঝেড়ে ফেলতে চাই না!

= = = = = = = = = = =
ঊষার দুয়ারে হানি আঘাত
আমরা আনিব রাঙা প্রভাত
আমরা ঘুচাব তিমির রাত
বাধার বিন্ধ্যাচল।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

তানভীরের মন্তব্যে গোঁফসুদ্ধ আস্ত (বিপ্লব)
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

যুবরাজ এর ছবি

তানভীর ভাই, আপনার কথাগুলো রুঢ় শোনালেও বাংলাদেশের মুক্ত চিন্তার বেশিরভাগ মানুষ সেনাবাহিনী সম্পর্কে এরকম ধারনাই পোষন করেন।আমি দুঃখ পাচ্ছি নিজেদের দেশে আমাদের সম্পর্কে এরুপ ধারনার জন্য।আমার কিছু করার নেই।তবে আমি স্বপ্ন দেখি আমাদের সেনাবাহিনী, একদিন দেশের প্রতিটি মানুষের হৃদয়ের কাছাকাছি যাবে।

এখন আমি শুধু দুটো কথা বলব।"ব্লাডি সিভিলিয়ান"- কথাটা বাংলাদেশ আর্মির কোন অফিসার, জোয়ান উচ্চারন করেন বা করেছেন আজ পর্যন্ত আমার চোখে,কানে আসেনি। কাকে ব্লাডি সিভিলিয়ান বলব? আমার বাবাকে? আমার শরীরে, ধমনিতে যে রক্ত বইছে তা কি ব্লাডি সিভিলিয়ানের রক্ত নয়? বহুল ব্যবহৃত এই শব্দটি ২০০৮ সালে এসে কেউ বললে আমি মেনে নিব না।ঔপনিবেশীক মনমানসিকতা বিলুপ্ত।অনেক উদাহরন দিতে পারতাম,কিন্তু সেগুলো আমার জন্য বাড়াবাড়ী হয়ে যাবে।সযত্নে বিতর্ক এড়ালাম।আপনি বুদ্ধিমান, বুঝে নিবেন আশাকরি।

ঢাকা শহরের ১৯৪৯ সালে প্রনীত ৫০ বছরের মাস্টার প্ল্যানে বলা হয়েছিল, ৫০ বছর পড়ে অর্থাৎ ১৯৯৯ সালে ঢাকা শহর বর্ধিত হবে বিজয় সারনীর মোড় পর্যন্ত অর্থাৎ বর্তমান পর্যটন পর্যন্ত, এর প্রমান পাবেন তেজগাও বিমানবন্দরের অবস্থান দেখলে এবং তেজগাও শিল্প এলাকার অবস্থান দেখলে।দুটোই শহরের বাহিরের হিসেবে করা হয়েছিল।ঢাকা ক্যান্টনম্যান্ট করা হয়েছিল আরো নিরাপদ দুরত্বে।

৫০ বছর পর ঢাকা শহর তুরাগ নদী পাড় হয়ে জয়দেবপুর চৌরাস্তা পার হয়ে গেছে।ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট পড়ে গেছে শহরের ঠিক মাঝখানে।

আমেরিকার নগরবিদরা এমন ভুল করেন না বলেই তাদের শহরের মাঝখানে এমন সেনানিবাস নেই।আমাদের সেনাবাহিনীর ও এমন দম্ভ দেখানো সাহসের প্রয়োজন পড়তোনা , যদিনা নগরবিদরা আরেকটু চিন্তা করে সেনানিবাসটা দূরে প্ল্যান করতেন।

বুটের লাথী মারার অভ্যাস এই সেনাবাহিনী বহু আগে ত্যাগ করেছে।আবার বলব, বিতর্ক এড়াতে চাই, নাহলে অনেক উদাহরন নিয়ে আসতে পারতাম।

ধন্যবাদ।

হাতের কাছে ভরা কলস, তবু তৃষ্ণা মিটেনা।
----------------------------------------------------------------------------

তানভীর এর ছবি

ভাইসাব, তেজগাঁও-এর বিমানবন্দর যদি সরিয়ে শহরের বাইরে নেয়া হতে পারে, ক্যান্টনমেন্টই তবে বহাল তবিয়তে একই জায়গায় থাকবে কেন? ঢাকার মাস্টার প্ল্যান তৈরী হয়েছিল ১৯৫৯ সালে। ১৯৭১-এ স্বাধীনতা যুদ্ধের পরে ব্যাপক জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে (৩ লাখ থেকে বেড়ে হয়েছিল ১২ লক্ষ) সেটা তখনই গ্রহণযোগ্যতা হারায়। এখান থেকে বিস্তারিত পড়ে নিতে পারেন। নগরপরিকল্পনাবিদরা তো আর ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হবে এটা মাথায় রেখে প্ল্যান করে নি। কাজেই স্বাধীন হবার আগে ঢাকা শহর যেভাবে বর্ধিত হবার কথা ছিল, স্বাধীনতার পরে হিসাব-নিকাশ সব উলটে যাওয়াই স্বাভাবিক।
আর সেনাবাহিনী সাধারণ মানুষের হৃদয়ের কাছাকাছি কখনো যেতে পারলেই আমি বেশি খুশী হবো।

= = = = = = = = = = =
ঊষার দুয়ারে হানি আঘাত
আমরা আনিব রাঙা প্রভাত
আমরা ঘুচাব তিমির রাত
বাধার বিন্ধ্যাচল।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

বুটের লাথী মারার অভ্যাস এই সেনাবাহিনী বহু আগে ত্যাগ করেছে।

অ্যাঁ
আমরা তো কিছুদিন আগেই দেখলাম প্রকাশ্য রাজপথে... খেলার মাঠে... বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের উপর এর প্রদর্শন।
আপনার বর্ণিত এই বহু আগেটা আসলে কতদিন আগে?
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

alpin aldin এর ছবি

vai, haowar upore kotha bolate apnara habituated.ami nije du er oi ghotonar sob kichu jani................simple ekta ghotonake kendro kore er shuru.........bakita ki bollam na............r aponi kobe kothai du er ghotonai army er hate boot er lathi khaite dekhsen janaiyen pl...................bloddy civilian word ta socholer ke ke nijer mukhe shunechen or aponader samne use korche aponader uddessho kore ..doya koira reference soho janaiyen pl.
vai aziz super market,tsc ,modhu te ,amtolai,raju baskorje,das e amra o jai,publik library chraukola bad dei na............bose bose dekhi aponader desh joy korar kirti kolap..........mind khaiyen na pl.................

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

মানতে পারলাম না, ভাই। আমরা সবাইও জানি ঘটনার মাঝ এবং শেষ কোথায়, সেখানে কী কী হয়েছে। শুরুটাকে তুচ্ছ প্রতিপন্ন করে বাকিটুকুর দায় এড়ানোর কোন সুযোগ নেই। আপরাধ যদি কোয়ান্টিফাই করা যেত, তাহলে শুরু : শেষ = ১ : ১০০ হত।

প্রথমত, খেলার মাঠ/জিম-এ আর্মির ক্যাম্প করারই কথা না। এতে করে যে ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হচ্ছিল, সেটা মাথায় রাখা উচিত ছিল সবারই। তাছাড়া ঢাবি একটি স্পর্শকাতর জায়গা, তাও মাথায় রাখা উচিত ছিল। তবুও ঘটনার বৃত্তান্ত আপনার কাছ থেকে জানতে ইচ্ছুক। আমরাও ভুল বুঝে থাকতেই পারি। সেক্ষেত্রে "হু হু, আমি জানি কী হয়েছে" না বলে কী হয়েছে সেটা সবিস্তারে বললেই হয়। বিশেষত যখন নাম প্রকাশ না করে বলবার সুযোগ আছে।

দ্বিতীয়ত, সেখানে যা-ই হোক না কেন, তার সূত্র ধরে শিক্ষকদের রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতনও করার কথা না। অযথা সূচনার দোহাই দিয়ে এই ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়া যাবে না।

এটা আমিও মানি যে "ব্লাডি সিভিলিয়ান" কথাটা খুব কম লোকেই নিজমুখে শুনেছেন। কিন্তু কিছু কথা থাকে যেগুলো প্রতীক হয়ে যায়। ক্ষোভটা এই একটি কথার জন্য না। আমি নিজেই দেখেছি তুচ্ছ কারণে আর্মির লোকজনের হাতে মানুষকে বিব্রত, আহত হতে। অনেক ব্যাপারেই যে প্রতিক্রিয়াটি টোন-ডাউন করা যেত, তা আশা করি আপনিও মানবেন। কাঁধে বন্দুক আর পায়ে বুট নিয়ে লুঙ্গিপড়া রিকশাওয়ালাকে পেটানো খুব সহজ। বেচারা রিকশাওয়ালার হাতেও একটা বন্দুক আর পায়ে বুট পড়িয়ে তাকে শাসন করাটা কি অনেক বেশি ন্যায্য হত না? এখানেই ক্ষমতার অপব্যবহার, এখানেই ক্ষোভ। ঐ বুটের দাম রিকশাওয়ালা দেয়, তাকে বহির্শত্রুর হাত থেকে রক্ষার জন্য। আমি যেমন "পাশ্চাত্যে শিক্ষিত প্রকৌশলী" হয়েও আসলে স্রেফ কারেন্ট মিস্ত্রি, তেমনি আপনিও "সামরিক বাহিনীর সদস্য" হয়েও দেশের দারোয়ান। পদবির চর্বিটুকু ফেলে দিতে এটাই অবশেষ। মুখাপেক্ষিতা তাই দেশের প্রতি হওয়া উচিত, মানুষের প্রতি হওয়া উচিত। তাদের প্রতি একটা শ্রদ্ধাবোধ কাজ করা উচিত। দুঃখজনক বাস্তবতা এটাই যে এই দিকটি আমরা খুব কম দেখেছি বিগত ৩৭ বছরে।

আর্মির লোকজন যে সিভিলিয়ানদের তাচ্ছিল্যের চোখে দেখেন, সেই বাস্তবতা সম্পর্কে সবাইই সচেতন। এতে অস্বাভাবিক কিছুও দেখি না আমি। পাড়ার বড় ভাইয়েরাও ছোট ভাইদের সেই চোখেই দেখে। তফাৎ এখানেই যে, সিভিলিয়ানরা সমর্থন না করলে আর্মি কখনও শক্তিমান হতে পারে না। কথাগুলো সব দেশের বেলায়ই প্রযোজ্য, আমি আলাদা করে বাংলাদেশি আর্মির কথা বলছি না।

আপনার শেষ কথাটুকু নিয়ে আলাদা করে সবিস্তারে বলবো। সিভিলিয়ান সমাজে "ফল ইন লাইন" বলে কিছু নেই। আমরা হুকুম পেলেই তামিল করতে বাধ্য নই। সে-কারণেই এত তর্ক। হ্যাঁ, অনেক ক্ষেত্রে তর্ক অহেতুক কালক্ষেপনে পরিণত হয়, কিন্তু তবু এর বিকল্প নেই। ইন্সট্রাকশন এবং আইডিয়েশন হাতে হাত রেখে চলতে পারে না তেমন একটা। এটিও সাধারণ মন্তব্য, শুধু বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর জন্য বলা নয়।

যুবরাজ এর ছবি

রউফ ভাই, আমি আপনার মতামত কে শ্রদ্ধা করি।যুগে যুগে পৃথিবীর লেখক,কবি, সাহিত্যিক, মুক্ত মনের মানুষরা, সামরিক বাহিনীর প্রতি সবসময় একটি বৈরী দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়েছেন। এর জন্য সামরিক বাহিনীর কার্যকলাপ বহুলাংশে দায়ী।কিন্তু এই ২০০৯ এ আসে আমরা যদি তাদের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গী একটূ না বদলাই, " ব্লাডী সিভিলিয়ান" কথাটা বলে বিদ্দেষ ছড়াই, আমরা কোথায় যাই? আমরা ত আপনাদেরই কারো ভাই,ছেলে,ভাগ্না-চাচা।
প্লীজ়, আমি অনুরোধ করব, খারাপ কে আমরা খারাপ বলব, ভাল কেও ভাল বলব। কিন্তু সব খারাপ বা সব ভাল-এ কথাটা যেন আমরা না বলি।বাংলাদেশ সেনাবাহিনী মঙ্গল গ্রহ থেকে আসেনি,এই দেশের হাওয়া -বাতাস খেয়ে বড় হয়েছে।আমাদের কে কক্ষনো শিক্ষা দেয়া হয়নি ক্ষমতার দম্ভ দেখানোর। আর যেসব ঘটনা নিয়ে এত আলোচনা, সব সত্যি একদিন সঠিক ভাবে প্রকাশ পায়। আপনারা যা শুনেছেন ভুল শুনেন নি, তবে অন্য দিকের ও বক্তব্য আছে।
উপরে যিনি লিখছেন, সম্ভবত তিনি আমার সিনিয়ার কেউ।আমি আহবান করি, স্যার আপনি যা জানেন এখানে বলতে পারেন, আমি যেহেতু অই সময় স্পটে ছিলাম না, আমি ডিটেইলস বলতে পারবনা।ধন্যবাদ।

হাতের কাছে ভরা কলস, তবু তৃষ্ণা মিটেনা।
----------------------------------------------------------------------------

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

আমার তাৎক্ষণিক মন্তব্য একটু বেশি চাঁছাছোলা শুনিয়ে থাকলে আমি দুঃখিত। আমি কোন ব্যক্তি, বর্ণ, ধর্ম, বা গোত্রের পক্ষে-বিপক্ষে প্রেজুডিস পোষন করি না। দৌঁড়ের উপর লেখা মন্তব্য অনেকটা তেমন শুনিয়ে থাকলে দুঃখিত আবারও।

আমাদের সমাজে, আমাদের আশেপাশে অনেক রকম স্টিরিওটাইপ আছে। না চাইলেও এর মধ্যে বন্দী আমরা। আর্মি থেকে ক্রিকেট পর্যন্ত সব ক্ষেত্রেই এটি প্রযোজ্য। উদাহরণ দেই একটা। মামার মুখে শুনেছি, ব্রিটেনে নাকি গর্ডন ব্রাউনের মন্ত্রিসভা ডাক্তারে ভর্তি। কারণ হল, ডাক্তারদের ব্যাপারে মানুষ একটা নরম, বিশ্বাসী, ভক্তিভরা মানসিকতা পোষন করে। লক্ষ্য হল, সামনে ডাক্তার রেখে যতদূর সম্ভব সমালোচনা কমানো। স্টিরিওটাইপের সুবিধা নেওয়া আর কী। সেনাবাহিনীর বেলায় উল্টোটা কাজ করে। এটা বাস্তবতা, এবং এটা থেকে বের হয়ে আসা কঠিন।

এই স্টিরিওটাইপ থেকে বের হয়ে আসার জন্য আর্মিকে অনেক কষ্ট করতে হবে, অনেক কঠিন প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে। দফায় দফায়। '৭৫ এর পর প্রায় ২০ বছর ধরে বাংলাদেশ আর্মি অনেক পথভ্রষ্ট, দেশবিমুখ মানুষ জন্ম দিয়েছে। পুরো দেশই সে-কারণে ভুগেছে। গত ২ বছরে আর্মি নিজের ভাবমূর্তি অনেক উন্নতি করার সুযোগ পেয়েছে। মানুষ তা নিয়ে সাধুবাদও দিয়েছে। এই আনন্দে আমিও সামিল।

তবে তাই বলে আত্মপ্রসাদে ভোগার সুযোগ নেই। সিভিলিয়ানের মন বুঝে উঠতে আর্মির আরেকটু সময় লাগবে। কিছু ব্যাপার ব্যারাকের বাইরে অন্যভাবে করা হয়। সাধারণ মানুষ খুব বেশি দিন "তথাস্তু" বলে হুকুম অনুসরণ করে না। প্রশ্ন করে, বিক্ষুব্ধ হয়। "আরো কঠিন শাস্তি" দিয়ে "পাবলিক"কে শুধরানো যায় না। ধমক দিয়ে মুখ বন্ধ করে রাখা সমাধানের চেয়ে সমস্যা সৃষ্টি করে বেশি। ঢাবি'র ঘটনা, মিডিয়ায় আর্মির সমালোচনা বন্ধ করার চেষ্টা, ব্লগার-সাংবাদিকদের হুমকি-ধামকি, ইত্যাদি বিষয়ে আর্মির অনেক কিছু শুধরাবার এবং ভেবে দেখার আছে।

আমার সমালোচনাটুকু এই ব্যাপারটার দিকে আলোকপাতের জন্য, কাউকে ছোট করার জন্য না। ২ বছর ধরে অনেক ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে সেনাবাহিনী পাহাড়ের চূড়ায় উঠেছে। এখন ঠিক কাজ করলে সামনে এগোবে, ভুল কাজ করলে আবারও পিছলে পেছনে পড়ে যাবে।

আর, আমি অন্য পক্ষের কথা শুনতে আসলেই অনেক বেশি আগ্রহী।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

"ব্লাডি সিভিলিয়ান"- কথাটা বাংলাদেশ আর্মির কোন অফিসার, জোয়ান উচ্চারন করেন বা করেছেন আজ পর্যন্ত আমার চোখে,কানে আসেনি।
এই কথার বিপরীতে হাজারটা উদাহরণ দেওয়া যাবে। যেমন এই পোষ্টেই দেখুন একজন তার ফুফা এবং ফুফাতো ভাইয়ের কথা বলেছেন।

প্রিয় যুবরাজ, আপনার অনুভূতিকে শ্রদ্ধা করি। বাংলাদেশ এবং প্রতিটা বাঙালীর যেকোনো অর্জনেই আপ্লুত হতে চাই আমরা। আপনি হয়তো কখনোই আমার ভাইয়ের পিঠে বুটের লাথি বসাবেন না, আমার বাবা কিংবা আমাকে হয়তো কখনোই 'ব্লাডি সিভিলিয়ান' বলে গাল দিবেন না কিন্তু আপনারই মতো পোষাক পরা গরীব দেশটির সবচেয়ে বেশি বাজেটভূগী 'সেইন্ট সেনাবাহিনী'র গর্বিত জোয়ানেরা অহর্নিশই গালিটা ঝেড়ে থাকেন অসহায় বাঙালের প্রতি। আমাদের সৌভাগ্য, আপনি হয়তো সেরকম জোয়ানদের একজন নন।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

সায়েদ এর ছবি

আমেরিকান এক অফিসার মনরোভিয়াতে আমাকে একদিন বলেছিলেন যে, বাংলাদেশ আর্মির প্রফেশনালিজম এর সাথে তার দেশের আর্মিও পারবে না। কথাটা হয়তো বাড়াবাড়ি, কিন্তু এখানে না আসলে বিশ্বাস করতাম না যে আমরা মেধা, মননে, কোন কিছুতেই পিছিয়ে নেই।

কথাগুলো বাংলাদেশী হিসেবে গর্বিত করে তুলছে।
ভালো লাগছে দিনপঞ্জি।

প্রফাইল এর ছবি

বুট থাকলে, পায়ে জোর থাকলে, এবং পাবলিক ফুটবল হলে লাথি দেয়াটা হয়তো দোষের কিছু নয় । তবে আলাপটা অন্যত্র। পুরাকালে ক্ষত্রিয়রা রাজা হতেন, কলিকালে শূদ্রদেরও সে সুযোগ হয়েছে। শূদ্রদের ব্যর্থতার অজুহাতে বাংলাদেশের ক্ষত্রিয় সেনারা ন্যায়দন্ড তুলে নিয়েছেন ৭৫, ৮২, ২০০৬-এ। ব্যারাকে যতই থাকুন, তাদের প্রভাব কোথায় নেই, ছিলনা?পাবলিক ফুটবল বলে কথা।

স্নিগ্ধা এর ছবি

নাইজেরিয়ান, পাকিস্তানী আর ইথিওপিয়ান সেনাদল সম্পর্কে লাইবেরীয়ানদের মনোভাব কেমন? বিশেষতঃ পাকিস্তানীদের বা পাকিস্তান সম্পর্কে?

কীর্তিনাশা এর ছবি

আর সেনাবাহিনী সাধারণ মানুষের হৃদয়ের কাছাকাছি কখনো যেতে পারলেই আমি বেশি খুশী হবো।

তানভীর ভাই'র মন্তব্যে জাঝা

চলছে............ চলুক !! চলুক

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

বাঙ্গালী জাতির সহস্র বছরের শ্রেষ্ঠ অর্জন ’৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ, ’৯৭ এর আইসিসি জয়, ২০০৬ নোবেল বিজয় আর জাতিসংঘে শান্তিরক্ষী বাহিনীর অংশগ্রহণ

ক্ষেত্রটা খুব ছোট হয়ে গেলো না? এই তবে বাঙ্গালী জাতির সহস্র বছরের শ্রেষ্ঠ অর্জন?
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

আমিএকজনা এর ছবি

নিজেকে অচল বলেই ধরে নিয়েছিলাম আপনাদের সচলায়তনের
বদউলতে সচল না হয়ে পারলাম না!!!
Warm wishes for all of u. Specially
যুবরাজ ভাইকে!!
দিনলিপি প্রতিদিন বাদ দেবেন না please!

নজমুল আলবাব এর ছবি

উজ্জলতার কথা বল্লেন শুধু। কিছু অন্ধকারের কথাও বলবেন আগামীতে আশা করি।

১/১১ রে আপনে কি মনে করেন? কোন টাইপ অফ অর্জনে পড়ে তৎপরবর্তি পিটুনি অভিযান? আশা করি বলবেন।

ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

যাক, বাংলাদেশীদেরকে তবু তো কোথাও পজিটিভলি উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরা হয়। এটা জেনে ভালো লাগছে।

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

অতিথি লেখক এর ছবি

আমার আপন ফুফাতো ভাই (নামটা প্রকাশ করছি না), সদ্য কমিশ্নড প্রাপ্ত পাইলট অফিসার। । ।। , আমার ফুফাও সেনা কর্ম্কর্তা , বাপ-বেটা ২জনই প্রায়শ বলে থাকেন-"ব্লাডি সিভিলিয়ান"!!
আপনার লেখা খুবি ভালো লাগছে, লেখার সমালোচনা করছি না

সারণী নয় সরণি হবে বানানটা

মেটালিফেরাস এর ছবি

একেবারে অন্যধরনের এক আনন্দ পাচ্ছি আপনার সিরিজটা পড়ে।
অনেক ধন্যবাদ এরকম একটা সিরিজের জন্য।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।