ইউরোপ ভ্রমন শেষ। ৩০ দিনের ছুটি যেন চোখের পলকে চলে গেল। ফ্রান্স,নেদারল্যান্ড আর সুইটজারল্যান্ডেই কাটিয়ে দিলাম ৩০টা দিন। কত সুন্দর,সুন্দর সৃতি,মূহুর্ত মনের মধ্যে গেঁথে রইল। আবার কবে যাব জানিনা। রবীন্দ্রনাথের শেষের কবিতার মত “শেষ হইয়াও, হইলনা শেষ” ধরনের অনুভুতি এখনও।
ধুসর গৌধুলির কাছে ক্ষমা প্রার্থী, তার অনুরোধ সত্তেও কোলন যাত্রা হয়নি আমার। আমার অনেক কিছু প্লানের বাহিরে হয়ে গেছে। তবে আমি সবটুকু নিয়েই খুশি। আমি একজন সত্যিকারের পর্যটকের মত ঘুরেছি, দেখেছি। যেখানে যতটুকু সময় ব্যয় করা প্রয়োজন ছিল, সেখানে ততটুকুই করেছি। একা ছিলাম, সুতরাং নিজের সিধান্ত নিজেই নিয়েছি। প্যারিস অসাধারন একটা শহর, মানুষ বাদে, আর আমস্টার্ডাম শান্ত শহর, আর সুইটজারল্যান্ড ছবির মত সুন্দর, সাজানো একটা দেশ।
আমস্টার্ডামে একটা গ্রামে গিয়েছিলাম। সেটাও এক বিশেষ সৃ্তি। আমস্টার্ডামে ছিলাম নীর এবং সানেহ সাথে। ওরা বাংলাদেশে গিয়েছিল পর্যটক হিসাবে ২০০৬ এ। ওদেরকে ভর সন্ধ্যা বেলায়, বিজয় সরনীর মোড়ে, পর্যটন করপোরেশনের সামনের ফুটপাথে কয়েকটা ছেলে মিলে ঘিরে ধরেছিল।ওদের ব্যাগ,ক্যামেরা ধরে টানাটানি করছিল।আমি ভলভো বাসের জানালা দিয়ে পুরো ঘটনাটা দেখছিলাম।যাচ্ছিলাম শাহবাগ। সিগন্যাল পড়ায়, বাস থামল। কতক্ষন দিধাধন্ধে ভুগে আমিও নেমে পড়লাম, এবং রাস্তা পাড় হলাম। মজার ব্যাপার হলো, উল্টোদিকে কয়েকজন পুলিশ ভাইও ঘটনাটা দেখছিলেন এবং উপভোগ করছিলেন। আমি বাসে থেকেই আন্দাজ করেছিলাম এর পরে কি হবে। এবং হলও তাই।একটা ছেলে সানেহর ক্যামেরা নিয়ে ভোঁ দৌড় দিল।আমি সাথে সাথে দৌড় শুরু করলাম। আঠার মত লেগে ছিলাম।আমি জানতাম সে দৌড়ে একসময় ক্ষান্ত দিবে। সেনাবাহিনীর ১৭ মিনিটে ৩ কিমি দৌড় হেভী কাজে লাগল। ছেলেটাকে ২ কিমি ধাওয়া করে মানিক মিয়া এভিনিঊ এর মাঝামাঝি অন্ধকারে ক্যামেরা ফেলে ভাগল।ক্যামেরা পেয়ে চেক করে দেখলাম কিছু ভেঙ্গেছে কিনা। ঠিক আছে দেখে ফিরতি পথ ধরলাম। ওদেরকে পেয়ে গেলাম ভাসানী নভো থিয়েটারের সামনে। একজন পুলিশ সার্জেন্ট কথা বলছিলেন। সানেহ তখন কাঁদছিল। সার্জেন্টকে পরিচয় দিলাম, ঘটনা বললাম, এবং জানালাম একটাকেও ধরতে পারলাম না । উনি মোটর সাইকেল নিয়ে খুঁজতে গেলেন। এইদিকে এই দুইজনের সাথে আমার কঠিন বন্ধুত হয়ে গেল। কথায় কথায় জানলাম ওরা ভারত থেকে সড়ক পথে আগরতলা হয়ে ঢাকা এসেছে। উঠেছে পুরান ঢাকার একটা বড় হোটেলে। জিজ্ঞেস করলাম যাবে কিভাবে? বলল, ম্যাপ দেখে যাবে। মনে মনে হাসলাম, পুরান ঢাকায় ঢুকলে আমিই দিশা পাইনা, আর ম্যাপ ধরে যাবে! মায়া লাগল বেচারাদের জন্য। বড় আপার বাসায় নিয়ে গেলাম মগবাজারে, আব্বাও তখন ঢাকায়, ঈদ উপলক্ষে। আব্বা খুব খুশি হন মেহমান পেলে। রাতে আমাদের সাথে খাওয়া দাওয়া করল, আমি আর্মি জীপ দিয়ে ওদের পৌছিয়ে দিলাম হোটেলে। ঈদের দিন আমার সাথে সাথে নিয়ে ঘুরলাম। তারা অভিভুত! আমার ভাল লাগছিল তাদের এই ভাল লাগা। ঈদের দুদিন পর ওরা চলে গেল নেদারল্যান্ডে।
যাওয়ার সময় খুব করে বলেছিল কখনও ইউরোপ গেলে অবশ্যই যেন যাই ওদের ওখানে। ভাবিনি সত্যি সত্যি যাওয়া হবে কখনও। এবার সুযোগ এলো, এবং আমি গেলাম। তারা আমাকে পেয়ে যা করল তা আমি কল্পনাও করিনি। আমি জানতাম তারা আমাকে যথেষ্ট আদর আপ্যায়ন করবে, কিন্তু এতটা ভাবিনি। আমার আগমন পারলে তারা পত্রিকায় ছাপায়। তাদের সমস্ত বন্ধু-বান্ধব জেনে গেছে আমার আগমন কাহিনী। সকল মিউজিয়ামের টিকেট কাটা, নেদারল্যান্ড থেকে সুইস টিকেট কাটা, কবে-কোথায় কোনদিন যাব তার লিস্ট তৈরী করা, হালাল মাংস খাবার কেনা, কোনদিন কি খাব না খাব তার প্ল্যান, আমার সম্মানে তাদের সকল বন্ধু-বান্ধবের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া- এ উপলক্ষে বিশাল পার্টি!! খুবই আনন্দে কেটেছে আমার এই কয়েকটা দিন। ষ্টেশনে নীরদের সব বন্ধুরা এলো বিদায় দিতে। অন্যরকম লাগছিল।
ফেরত আসার সময় ত্রিপোলী এয়ারপোর্টে ট্রানজিট ছিল। খারাপ লাগল কয়েকজন বাংলাদেশি অবৈধ শ্রমিককে ফেরত পাঠানো হচ্ছিল দেখে। পোষাক-আষাকের অবস্তা খুব খারাপ। মাটিতে বসে ছিলেন তারা। কথা বললাম তাদের সাথে। দালাল ধরে এসেছিলেন ইউরোপ যাওয়ার জন্য। এখানে ধরা পড়ে সব হারিয়ে ফেরত যাচ্ছেন দেশে। আমার সাথে অল্প কিছু ইউরো ছিল, কেক আর কফি খেলাম সবাই মিলে। ইমিগ্রেশন অফিসার আমার সবুজ পাসপোর্টটা খুব মনযোগ দিয়ে উল্টে-পাল্টে দেখল কয়েকবার, তারপর অবাক হয়ে বলল, তুমি ইউরোপে থাকনি? ফেরত চলে যাচ্ছো? আমি আর কি বলব, কিছু বললাম না।
মন্তব্য
ভাল লাগলো। বাইরে থাকি তো, এই রকম দৃশ্য/ঘটনাগুলো খুব চেনা।
ভালো লাগলো।
চমতকার
ইঊরোপের এর তিরিশ দিনের গল্প আরো চাই।
- ব্যাপার্না বস। আপনে না আসলে কী হবে, আমি ঠিকই লাইবেরিয়া সফরে গেলে আপনার ঐখানে ঢুঁ মারবো নে।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ধূসর খা-গুলি হয়ে ফেরত না এলেই হল।
- 'গাজী' সম্মান নিয়া ফিরবো তাইলে!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
নাহ গুলি ফুলি খাবে না , যুবরাজ তো আছেনই ।
-----------------------------------------
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
চমৎকার লাগল।
তারেক জিয়ার আগমন, শুভেচ্ছায় স্বাগতম
দারূন লাগলো পড়তে, ছবি-টবি থাকলে দিয়েন
................................................................................................
খাদে নামতে আজ ভয় করে, নেই যে কেউ আর হাতটাকে ধরা ...
ভালো লাগল পড়ে।
আমার ছোট ভাই বছরখানিক আগে লাইবেরিয়াতে ছিল, যাবার আগে ক্যমেরা দিয়েছিলাম একটা, মজার কিছু ছবি তুলে পাঠিয়েছিল, ওর থেকেই প্রথম লাইবেরিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত জানি। আপনিও ছবি দিন।
...........................
Every Picture Tells a Story
এইমাত্র, আদেশ আসল আমার উপরে বাংলাদেশের উপরে একটা ভিডিও প্রেজেন্টেশন তৈরী করার জন্য, বিজয় দিবস উপলক্ষে। আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে।আমার হাতে সময় আছে শুধুমাত্র আগামী কাল।পরশু, অর্থাৎ ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে ফোর্স হেডকোয়ার্টারে এটা দেখানো হবে।সকল জাতিসংঘ স্টাফ যারা কাজ করেন তারা থাকবেন। ফোর্স কমান্ডার এখন বাংলাদেশের। সুতরাং খুবই সুন্দর করে বাংলাদেশ কে তুলে ধরতে হবে।মান-সম্নানের প্রশ্ন। আমি এখন ছবি কোথায় পাই? আমার কম্পিউটারে বড় জোর ২০/২৫ টা ছবি আছে। ইন্টারনেটে পাগলের মত খুজতেসি। প্লীজ আমাকে একটু হেল্প করেন। লিঙ্ক দেন, কোথায় বাংলাদেশের প্রকৃতি, সংস্কৃতি, গ্রাম, বৈশাখী মেলা, ষড়ঋতু, মুক্তিযুদ্ধ এসবের উপরে ছবি পাব??খুঁজে বের করে বাছাই করার সময়ও নাই। আমি ব্যাক গ্রাউন্ডে ইন্সট্রুমেন্টাল রবীন্দ্র সংগীত দেব ভাবছি। ওটাই এখন কম্পিউটারে আছে। আর যা ছবি পাব আপনারা যা সাহায্য-সহযোগীতা করবেন, তাই ভরসা। আমার ইমেইল এড্রেস এ সরাসরি ছবি পাঠাতে পারেন, মিনিমাম রেজুলেশন যেন ৮০০ x ৬০০ থাকে। আমার ইমেইল এড্রেস হল ।- যুবরাজ, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী,লাইবেরিয়া।
হাতের কাছে ভরা কলস, তবু তৃষ্ণা মিটেনা।
----------------------------------------------------------------------------
- এইটা কোনো ব্যাপার হইলো?
মুক্তিযুদ্ধের ছবির জন্য মুক্তধারা নামে একটা সাইট আছে, জন্মযুদ্ধেও কিছু ছবি আছে। মুক্তমনাতেও খুঁজতে পারেন। এইসব গুলা সাইটই গুগল মামা দেখাবে।
আর সবচেয়ে সহজ হলো, গুগল ইমেজে সমানে সার্চাইয়া যান। খনি পাইয়া যাইবেন।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
পাইছি, থাঙ্কস। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
হাতের কাছে ভরা কলস, তবু তৃষ্ণা মিটেনা।
----------------------------------------------------------------------------
ভালো লাগলো। ধন্যবাদ। প্রেজেন্টেশন কেমন হল জানাবেন।
তামান্না কাজী
নতুন মন্তব্য করুন