ঘুমের মধ্যে আলার্ম বন্ধ করার জন্য ঘড়ি হাতের কাছে আনতেই দেখি ৭ টা বাজে। ধড়মরিয়ে উঠলাম ঘুম থেকে।সর্বনাশ! আজ ১৬ ডিসেম্বর, আজ বাংলাদেশ কান্ট্রি প্রেজেন্টেশন দেয়ার কথা আমার ফোর্স হেডকোয়ার্টারে সকাল ৯ টায়।এখান থেকে যেতেই লাগে দেড় ঘন্টা। আমি ২ মিনিটে বাথরুমের কাজ শেষ করলাম।গাড়ির জন্য খোঁজ করতে গিয়ে জানলাম, সব গাড়ি চলে গেছে।অন্য একজন সিনিয়র একই রাস্তায় যাচ্ছেন, উনাকে অনুরোধ করার সাথে সাথেই আমাকে তুলে নিলেন। ড্রাইভারকে পিছনে পাঠিয়ে স্যার ড্রাইভিং সিটে বসলেন, আমি উনার পাশে।স্যারকে মনে করিয়ে দিলাম যে ড্রাইভার ব্যতিত অন্যকারো ড্রাইভিং করার অনুমতি নাই। স্যার অভয় দিলেন, বললেন সমস্যা নাই।
আমি জানতাম স্যার একজন ভাল ড্রাইভার। স্যার, স্পেসাল সিকিউরিটি ফোর্সের একজন এজেন্ট(এসএসএফ)। উনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী/ প্রধান উপদেস্টার সাদা বিএমডব্লিউটা চালাতেন। এছাড়া ড্রাইভিং এর উপরে থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়া থেকে কোর্স সমাপ্ত করা।তার ড্রাইভিং পারদর্শীতা নিয়ে আমার কোন সন্দেহের অবকাশ নাই। কিন্তু সমস্যা হল রাস্তায় যেকোন জায়গায় থামাতে পারে এবং চেক করলে খামখা একটা রিপোর্ট খাব। এমনিতেই আজ দেরি করে ফেলেছি। ফোর্স হেডকোয়ার্টারে সময় মত পৌঁছাতে না পারলে, চাকরি নিয়া টানাটানি।
কিন্ত যেখানে বাঘের ভয় সেইখানেই সন্ধ্যে হয়।মাঝামাঝি রাস্তায় আসতেই দেখি মিলিটারী পুলিশ গাড়ী থামিয়ে চেক করছে।সারা মাসে একদিনে তারা এই কাজটা করে আর সৌভাগ্য ক্রমে আজি সেই শুভদিন। রাগে দুঃখে মাথার-শরীরের সব চুল ছিঁড়তে মন চাচ্ছে!
লাইবেরিয়াতে মিলিটারী পুলিশ হল সব নেপালী আর্মীর। সাইজে ছোট হলে কি হবে, ছোট মরিচে ঝাল বেশি থাকে।এদের ঝাল আর বেশী। সুন্দর ছোট-খাট একজন ক্যাপ্টেন সম্ভবতঃ আমাদের জুনিয়ারই হবে।তাকে পরিচয় দিলাম। সুন্দর করে একটা স্যালুট দিয়ে বলল, স্যার আপনাদের আইডি কার্ড নাম্বার বলেন।(বাংলাদেশে রাস্তা-ঘাটে আমরা যে সাধারন মানুষ জনকে আটকাই, এবং জেরা করি, তাদের কেমন লাগে, হাড়ে-হাড়ে টের পাচ্ছি এখন)।
তাকে বললাম, ভাই জান, আজ আমাদের দেশের প্রেজেন্টেশন আছে ন’টায়। আমরা এমনিতেই লেইট করে ফেলেছি।আপনি আমাদের ছেড়ে দেন আজ, কোনদিন আর ড্রাইভিং করবনা।কসম খোদার।সে মুচকি হেসে বলল স্যার, আমি বুঝতে পেরেছি, আপনারা খুব তাড়ার মধ্যে আছেন। আমি অত্যন্ত দুঃখিত আপনাদের অসুবিধা সৃস্টির জন্য, তবে আমার কিছু করার নেই। আপনারা এখানে বসে এই ফরম টা ফিলাপ করে দিয়ে যান। আপনারা যেখানে খুশি তার পর সেখানে যান, আমার কোন আপত্তি নাই।
কথায় আছে আর্মির বুদ্ধি হাঁটুতে থাকে, আর মিলিটারী পুলিশের বুদ্ধি থাকে হাঁটুর নিচে গোঁড়ালীতে।
তারে পঞ্চাশ বারেও বোঝান গেলনা, সে অনড়। মনে হল গাছের সাথে কথা বলাও ভাল। অগত্যা নিজের নামে রিপোর্ট নিজেরাই বানালাম।তার হাতে কাগজ ধরিয়ে অগ্নি-দৃষ্টি হেনে আমরা জায়গা ছাড়লাম।
সময় মাত্র ১৫ মিনিট হাতে।
ফোর্স হেডকোয়ার্টার হল লাইবেরিয়াতে কর্মরত সকল সামরিক কন্টিনজেন্টের সদর দপ্তর।UNMIL(United Nations Mission In Liberia) সর্বমোট প্রায় ৪৪ টি দেশের সামরিক ব্যক্তি কাজ করেন যার মধ্যে বেশ কয়েকজন মেজর জেনারেল,ব্রিগেডিয়ার,ফুল কর্ণেল পদবীর কর্মকর্তা আছেন।এদের সবার উপরে আছেন একজন লেঃ জেনারেল যিনি ফোর্স কমান্ডার। ইনি বাংলাদেশের। স্যারকে কখন দেখিনাই, এই প্রথম দেখব।
(চলবে)
মন্তব্য
অনেক দিন পর যুবরাজ! যথারীতি ভাল লাগল লেখাটা। পরের পর্ব চাই শিঘ্রী।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
মাহবুব ভাই, ধন্যবাদ।খুবই ব্যস্ত দিন যাচ্ছে আমার, লেখার প্রচুর ইচ্ছা, কিন্তু সময় পাইনা।একটা জিনিস জানতে চাই, আপনাকে মেইল করার সিস্টেম কি? ইমেইল এ ছাড়া ও কি আপনাকে ব্যক্তিগত ম্যাসেজ় দিতে পারব? জানাবেন দয়া করে।
হাতের কাছে ভরা কলস, তবু তৃষ্ণা মিটেনা।
----------------------------------------------------------------------------
আর্মিও রিপোর্ট খায় ! খাইসে !!
তারে বলতেন - বাংলাদেশে আসিস , গাড়ি থামানির মজা টের পাওয়ামু ।
আত্মসমালোচনা খুব বিরল গুণ। আপনার লেখা সেটা দেখা যায়। লিখে চলুন আরো।
বেশ হচ্ছে।
ভালো লাগছে পড়তে।
লাইবেরিয়ান দের বানর, বিড়াল ইত্যাদি খাওয়া নিয়ে শুনতে চাই।
...........................
Every Picture Tells a Story
আপনার চিঠিগুলো ভাল লাগছে।
....................................................................................
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
ভাল লাগল । প্রেজেন্টেশনের গল্প শোনার অপেক্ষায় থাকলাম ।
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
- পর্বটা সাইজে একটু নেপালী হয়ে গেলো যুবরাজ।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
কিন্তু ঝাল ছিলনা?
হাতের কাছে ভরা কলস, তবু তৃষ্ণা মিটেনা।
----------------------------------------------------------------------------
হুম...... ভাল লাগছে যুবরাজ ভাই
*********************************************************
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
ওইদিন সকালে এ্যাত্ত কাহিনী হইছিল নাকি???
নেপালীগুলা পুরা "মুখে হাসি তালে ঠিক"।
পরের পর্ব তাত্তাড়ি.........।
স্যার, আপনারা তো চামে চলে গেসিলেন অই দিন আমাদের আগে, আমি কী যে টেনশন এ ছিলাম! অই নেপালী অফিসারটার নাম জানেন?
হাতের কাছে ভরা কলস, তবু তৃষ্ণা মিটেনা।
----------------------------------------------------------------------------
ভালো লাগছিল পড়তে- তয় বেশী ছোট হয়ে গেছে পর্বটা। বেশী বেশী লিখেন মিয়া। দুই দিন পর দেশে ফিরে আসলে তো গাড়ি থামাইতে থামাইতে দিন যাইবো।
=============================
যুবরাজ ভাইয়ের পোস্ট অনেকদিন পরে। কিন্তু পোস্ট টা অনেক ছোট হয়ে গেলো না? পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
নতুন মন্তব্য করুন