লেটার ফ্রম লাইবেরিয়া আমার লাইবেরিয়া থেকে লেখা দিনপঞ্জি। প্রায় ৬ মাস হলো আমি বাংলাদেশে চলে এসেছি। অনেক এ জানতে চেয়েছেন আমার এই সিরিজ কি শেষ? যেহেতু আমি লাইবেরিয়া থেকে চলে এসেছি সুতরাং লে্টার ফ্রম লাইবেরিয়া নামটা এখন আর উপযুক্ত নয়। তবে এখানে একটা কথা আছে। এই নামেই সবাই আমার ব্লগ পড়েছেন। লাইবেরিয়ার অনেক মজার গল্প এখনো আমার বলা হয় নাই।তাই ঠিক করলাম এই নামটা থাকুক।চলুক যতদিন লাইবেরিয়ায় গল্প শেষ না হয়।
লাইবেরিয়া থেকে আসার কিছু দিন আগে মনরোভিয়া থেকে আমেরিকান আর্মির এক ফুল কর্নেল এলেন তার নাম উহ্য রাখলাম। তিনি বিরাট চ্যাম্পিয়ান টাইপ লোক, তিনি বিভিন্ন দেশে মানুষ মেরেছেন, নানা বর্ণের, নানা গোত্রের,ভাষার। মানুষ মারার ভালো শিকারি হওয়ায় আমেরিকান সরকার তার ঘাড়ে, কাঁধে বেশ কিছু রিবন, মেডেল লাগিয়ে দিয়েছে। আমার মায়া সভ্যতার সেই জংলি প্রধানের কথা মনে পড়ে গেল যার ঘাড়ে, গলায় বেশ কিছু মৃত মানুষের হাড়- গোড় শোভা পেত- যা তাঁর বীরত্তের নিদর্শন।
এই মহান বীর কে আমার অসুস্থ্য মনে হল।তাঁর কথায় বার্তায় অহংকার, নিজের স্তুতি ঝরে ঝরে পরতে লাগল। লাইবেরিয়ার জাতিসংঘ দপ্তর, এই ব্যক্তি কে পাঠিয়েছে আমাদের সামরিক যন্ত্র-পাতি ঠিক আছে কিনা দেখার জন্য। ঠিক থাকলে বাংলাদেশ সরকার Reimbursement পাবে। তিনি এখানে পরিদর্শন বাবৎ DA (Daily Allowance) হিসাবে ২৩০ ডলার পাবেন।তার থাকা খাওয়ার এন্তেজাম তার নিজের। আমাদের এখানে থাকলে তার ঐ DA টা কাটা যাবে।কিন্তু এখানে কোন হোটেল না থাকায় Symbol of Good Gesture হিসাবে আমরা তাদের রাখি এবং যাওয়ার সময় পরের দিন এক খান Certificate ও দেই যে তিনি সরকারি কোন সুযোগ সুবিধা পাননি।আলোচ্য আমেরিকান কর্ণেল সাহেবকে ও হয়ত তেমনই সুবিধা দেওয়া হতো।
গোল বা্ধঁল অন্য জায়গায়, যখন তিনি বাংলাদেশ সেনা দলের একজন কে অযথা গালাগালি করলেন, তার ব্যক্তিগত একটা কাজ না করে দেওয়ার জন্য। তার সামরিক হুমকি ধামকিতে বিন্দুমাত্র বিচলিত না হয়ে, তার অনেক অধঃস্তন হয়ে - কাজটা তার নিজের করা উচিত তা মনে করিয়ে দিলাম।
এবার তিনি যারপরনাই ক্ষুদ্ধ হলেন কিন্তু কিছু করতে পারলেন না। না পেরে গালি দিলেন।
আমি সেটার অপেক্ষায় ছিলাম।আমি এবং আমার সহকর্মিরা মিলে ঠিক করলাম এই লোকটাকে আমরা আমাদের ক্যাম্পে জায়গা দিবনা। সে আজ রাতে জঙ্গলে রাত কাটাবে।আমরা যেখানে থাকতাম, তার আশে পাশে কোন থাকার জায়গা বা হোটেল ছিলনা।সুতরাং তাকে রাতে ড্রাইভ করে হয় মনরোভিয়াতে যেতে হবে আর না হয় জঙ্গলে রাত কাটাতে হবে। মনরোভিয়া প্রায় ১৯৫ কিঃমি দূর। যেতে হবে রাতের বেলা। সন্ধ্যার পর এই রাস্তায় অহরহ মানুষ তুলে নিয়ে যায়, পুরোটা রাস্তা জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে। কেউই একা যেতে চায়না।
সুতরাং তার জন্য জঙ্গলের রাত ছাড়া আর কোন বিকল্প রাস্তা খোলা ছিল না।
অনেক হাড়-গোড় তিনি কাঁধে লাগালেও তার বীরত্ত চুপসে গেল। তিনি বুঝতে পারলেন তাকে আমরা খাতির করবনা এবং জঙ্গলে রাত কাটানোর মত সাহস তার নাই। অতএব তিনি মিন মিন করলেন।মিন মিন করে যা বলতে চাইলেন, তা হল তিনি যা করেছেন তার জন্য তিনি শরমিন্দা। আমরাও ব্যাপক শরমিন্দা হলাম,তবে অন্য কারনে। লজ্জিত হলাম এত বড় বীর পুরুষ জঙ্গলে রাত কাটাতে পারবেন না বলে।
জন্মগত ভাবে আমার ঘাড়ের একটি স্নায়ু বাঁকা। আর্মির ট্রেনিং এ সেটা সোজা না হয়ে আরেকটু বেশী বাঁকা হয়ে গেছে।সবাই যখন তাকে মাফ করে দেই দেই অবস্থা, তখন আমি ছোট একটা শর্ত দিলাম। না মানলে গন্তব্য মনরোভিয়া।
প্রস্তাব ছিল তিনি তিন ঘন্টা আমাদের RP Gate অর্থাৎ Regimental Police Gate এর সামনে গাড়ী সহ দাঁড়িয়ে থাকবেন। তিন ঘন্টা পূর্ণ হলে তখন আমরা তাকে ঢুকতে দিব।
আমরা অভদ্র ছিলাম না।মাত্র দেড় ঘন্টা পার হলে তাকে আমরা ভিতরে নিয়ে আসি।তবে তার চেহারা অসাধারন রকম কালো ছিল।
মন্তব্য
স্টারে কাচ্চি। খালি আইসা লই।
এরকম কাহিনী আরো শুনতে চাই।
শুনাব। তবে খুব ব্যস্ততায় আছি রে ভাই, ছুটি পেলেই লিখব।
--------------------------------------------------------------------------------
হাতের কাছে ভরা কলস, তবু তৃষ্ণা মিটেনা
হাতের কাছে ভরা কলস, তবু তৃষ্ণা মিটেনা।
----------------------------------------------------------------------------
একটা বিশাল ভুল হয়ে গেছে। এটার শিরোনাম লেটার ফ্রম লাইবেরিয়া-১৬ হওয়ার কথা। ভুলে ১৭ হয়ে গেছে। কেউ আছেন কি ঠিক করে দেওয়ার??
@ হিমু ভাই, শরম দিলেন, আমি শরমিন্দা! আপনাকে স্টারে না র্যাডিসনে (ওটা আবার আর্মির কিনা )
-------------------------------------------------------------------------------হাতের কাছে ভরা কলস, তবু তৃষ্ণা মিটেনা
হাতের কাছে ভরা কলস, তবু তৃষ্ণা মিটেনা।
----------------------------------------------------------------------------
ঠিক করে দেয়া হলো।
ধনে পাতা ঃ)
--------------------------------------------------------------------------------হাতের কাছে ভরা কলস, তবু তৃষ্ণা মিটেনা
হাতের কাছে ভরা কলস, তবু তৃষ্ণা মিটেনা।
----------------------------------------------------------------------------
=======================
ছায়ার সাথে কুস্তি করে গাত্রে হলো ব্যাথা!
=======================
কোথাও হরিণ আজ হতেছে শিকার;
বাঘের বাবা।
--
সিরিজের ১৬ নম্বরটা কই।
পানীয় আমার তরফ থেকে (বউয়ের নির্দেশে সব ধরণের হালাল)।
পৃথিবী কথা বলছে আপনি কি শুনছেন?
পৃথিবী কথা বলছে আপনি কি শুনছেন?
এবার খানা টা কেউ স্পন্সর করলেই হয়। আমি শুধু র্যাডিসন চিনায়া দিব।
----------------------------------------------------------------------------
হাতের কাছে ভরা কলস, তবু তৃষ্ণা মিটেনা
হাতের কাছে ভরা কলস, তবু তৃষ্ণা মিটেনা।
----------------------------------------------------------------------------
বাঃ বাঃ, অনেক দিন পর আপনার লেখা পড়ে আরাম পেলাম, তার উপর এমন বীরত্বপূর্ণ ব্যাপার। পরের চিঠি লিখতে আবার ছয় মাস নেবেন না যেন, তাহলে আপনাকেও দাঁড় করিয়ে রাখবো তিন ঘন্টা।
কৌতুহলঃ কলনেল সাপ কি রিম্বার্স্মেন্টে পাবার মত সাট্টিফিকেট দিয়েছিলেন?
জ্বী জনাব! আমরা কলনেল সাহেবের কাছ থেকে কাগজ-পত্র বুঝিয়া পাওয়ার পর গিয়াঞ্জাম লাগিয়েছি।
হাতের কাছে ভরা কলস, তবু তৃষ্ণা মিটেনা।
----------------------------------------------------------------------------
জনাব, লেখা সেরাম লাগলো!
----------------------------
ইহাসনে শুষ্যতু মে শরীরং
ত্বগস্থিমাংসং প্রলয়ঞ্চ যাতু।
অপ্রাপ্য বোধিং বহুকল্পদুর্লভাং
নৈবাসনাৎ কায়মেতৎ চলিষ্যতি।।
- ললিতবিস্তর
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
যুবরাজ ভাই নাকি? অনেকদিন পর
কর্ণেলের কাহিনীতে বড়ই মজা পেলাম । এরপর আশা করি নিয়মিত হবেন
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
ইউএসএ-তে যে আর্মি বলে কিছু আছে, সেটা এখানে বসে বোঝার কোনও উপায় নেই। আজ পর্যন্ত মনে হয় আর্মি চোখে পড়েছে ২-৩ বার, সবগুলোই এয়ারপোর্টে।বাকি বিশ্বের মানুষ মনে হয় ইউএস আর্মির দেখা বেশি পায়।
আহা বড়ই আরাম পেলাম পড়ে......এত্ত বড় বীর এইরকম অপমান সহ্য করল ???
জটিল ... হেভি মজা পাইলাম
................................................................................................
খাদে নামতে আজ ভয় করে, নেই যে কেউ আর হাতটাকে ধরা ...
বিপ্লব
কবেকার গল্প এটি?
____________________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ !
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
লাইবেরিয়া থেকে এসেছি ৬ মাস হল, তার আ্ররো কিছু দিন আগে, ধরেন ৭/৮ মাস আগের ঘটনা।
--------------------------------------------------------------------------------
হাতের কাছে ভরা কলস, তবু তৃষ্ণা মিটেনা
হাতের কাছে ভরা কলস, তবু তৃষ্ণা মিটেনা।
----------------------------------------------------------------------------
হ
বেশ অনেকদিন পর এই সিরিজটা আবার পড়ছি। ভালো লাগল
**************************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়
*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়
- সবচাইতে ভালো হৈতো তারে দিয়া টোমাটো দিয়া মশুরের ডাইল রান্ধাইলে। আপনেগো খাওয়াও হৈতো, ফুল কর্ণেল সাহেবের পানিশমেন্টও হৈতো।
রেডিসনে যান আর স্টারে, একলা গেলে পোষাইবো না বলে একটা ভালো অফার দিচ্ছি, আওয়াজ দিয়েন। এই গরীব আপনাদের উপকার করতে গিয়ে খেয়ে দিয়ে আসবে। এইটুকু উপকার করতে না পারলে ক্যামনে কী!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
আহারে বেচারা , এইভাবে ধরা খেলো ...চুক চুক ! * তিথীডোর
স্বাগতম স্যার । গল্পের ঝুড়ী আরও প্রসারিত হোক ।
অভিনন্দন সহ ।
জনাব, অনেকদিন পর আপনার লিখা পড়ে বড়ই আনন্দিত হইলাম।
তবে বিলম্বের কারণ কিছুটা আন্দাজ করতে পারছি। আসলে সব ব্যাটাচ্ছেলেই সমান--- বিয়ের পরে চুপসাইয়া যায়, তা সে সৈনিকই হোক বা ছাপোষা কেরাণী।
এই মন্তব্যে বিপ্লব ।
অফ টপিক : জেবতিক হক ও কি একই পন্হা অবলম্বন করিয়াছেন ?
নতুন মন্তব্য করুন