বেঁচে থাকো, বাবা

যুধিষ্ঠির এর ছবি
লিখেছেন যুধিষ্ঠির (তারিখ: বিষ্যুদ, ২১/০১/২০১০ - ৪:৫৮পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমাদের পরিবারে মুরুব্বিদের পা ছুঁয়ে সালাম করার ব্যাপারটা অতটা মানা হত না। শুধু ঈদের দিন, বছরে দু'বার, বাবার সাথে নামাজ পড়ে এসে মা আর বাবার পা ছুঁয়ে সালাম করাটা আমাদের ভাইবোনদের রীতি ছিলো। যখনই মা'র পা ছুঁতে যেতাম, মা মাথায় হাত বুলিয়ে বলতেন - বেঁচে থাকো, বাবা। আমি একবার মা'কে জিজ্ঞেস করেছিলাম, আচ্ছা শুধু এটা বলো কেনো তুমি সবসময়? আমরা বেঁচে থাকি, এটা ছাড়া আর কিছু চাও না তুমি? মা মিষ্টি হেসেছিলেন। আমার মুখের দিকে গভীর করে তাকিয়ে আবারও হাত বুলিয়ে দিয়েছিলেন।

একটু বড় হয়ে আবার ভাবি। আসলেই তো, মা কেন এরকমটা বলেন?

সেই যে, আমাকে গর্ভে নিয়ে আমার পরিশ্রান্ত মা, সঙ্গে মেডিক্যাল কলেজের তরুণী ছাত্রী আমার খালা, যুদ্ধ-যুদ্ধ ঢাকায় জীবন আর সম্ভ্রমের ঝুঁকি নিয়ে কাকভোরে রওয়ানা হলেন হাসপাতালের দিকে, একটা ভাঙ্গা রিকশায় চড়ে। বুড়ো হাড্ডিসার রিকশাওয়ালা। না খাওয়া শরীরটা টেনে-হিঁচড়ে অমানবিক কষ্টে কোনরকমে আড়াইজন মানুষকে টানতে টানতে ধীরগতিতে যেতে থাকলেন। সামনে দেড়টা টাকা পাওয়ার জ্বলজ্বলে প্রত্যাশা, পেছনে খালার করুন অনুরোধ, "চাচা, আরেকটু জোরে। আরেকটু, দেখেন না চাচা। অবস্থা কিন্তু ভালো না"। অবস্থা তো আরও খারাপ হতে পারতো। ওনারা তো হাসপাতালে পৌঁছতে নাও পারতেন। পৌঁছলেও অনেক দেরী হয়ে যেতে পারতো। জীবিত থাকলেও অন্য ক্ষতি হয়ে যেতে পারতো। যুদ্ধাক্রান্ত সেই শহরে, সাঁই সাঁই করে ছুটে যায় কাভার্ড ভ্যান। রাস্তার মোড়ে মোড়ে জলপাই মিলিটারি, কালো কালো বন্দুকে শান দেয়। মা আর খালার দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকায়। কিন্তু কি মনে করে কিছু বলে না। নিশ্চয়ই মহাশক্তিমান কেউ একজন চেয়েছিলেন আমি হই। সে শহরে একটা ডাক্তার তো সময়মত পাওয়া নাও যেতে পারতো। ডাক্তার পাওয়া গেলেও তারপর রক্ত, ওষুধ, টাকাপয়সা। আরও কতগুলো দুষ্প্রাপ্য অনুঘটক। যে কোন
একটা সমীকরণ না মিললে আমি হই না।

কিন্তু সব কেমন কেমন করে মিলে যায়। আমি হই। আমার মা'র রুগ্ন শরীর পুরো সেরে ওঠে না আর কোনদিনই, এক আনন্দময় জন্মের কষ্টকর ছাপ বাকি জীবন বয়ে বেড়ান তিনি। তারপরও অপূর্ব এক সুখ নিয়ে বেঁচে ওঠেন, আমাকে দেখেন। তারপর আবার সেই ঢরঢরে রিকশা। জলপাই ট্রাক। বন্দুক। বাবার কাঁপা কাঁপা হাত। ভীত সন্ত্রস্ত কোলে চড়ে নানীর হাতে বানানো কাঁথা মুড়ে বাসায় আসা হয় আমার।

এসব অনিশ্চয়তায় আমার জন্ম আর বেঁচে থাকা নিয়ে সন্দিহান হয়ে থাকার কারণেই আমার মা কি পরবর্তী জীবনে আমাদের শুধু বেঁচে থাকাটাই চেয়ে এসেছিলেন?

বেড়ে ওঠাতেও অনিশ্চয়তা ছিলো। যুদ্ধের সময়ে জন্মানো শিশুদের তো অনেক সমস্যা হয়। হঠাৎ হঠাৎ বিমান আক্রমনের সাইরেন। মাথার ওপরে বিকট গর্জনে চলে যাওয়া ফাইটার জেট। ডাক্তার পঁইপঁই করে বলে দেন, বাসার সবচেয়ে ভেতরের বাথরুমের একদম কোনায় গিয়ে বাচ্চার কানে তুলো গুঁজে দিয়ে কোলে নিয়ে বসে থাকবেন কিন্তু। এসময় বাচ্চারা নিরাপত্তার অভাবে ভোগে। হঠাৎ ভয় পেয়ে গেলে বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে। সাবধান! মা সবই করেন। আমিও বেঁচে থাকি। বাথরুমের কোনায় আধইঞ্চি আধআউন্স করে বড় হই।

এরপর পাকিস্তানী সেপাইরা যখন আসে আমাদের বাসা তল্লাশীতে, আমাদেরকে গুলী করার মত যথেষ্ট সন্দেহ হয় না তাদের, তাই বেঁচে থাকি। তারও পরে, সদ্য স্বাধীন দেশ। ব্যর্থ নেতৃত্ব। অনাচারে ভরে যাওয়া চারপাশ। খাবার দুর্মূল্য, ছোঁয়া যায় না। বাবা ভোর সকালে সাইকেল চড়ে দূর-দূরান্তে গিয়ে একজগ দুধ নিয়ে আসেন। কাউকে বিশ্বাস নেই, তাই গরু আর গোয়ালার সামনে দাঁড়িয়ে দুধ দোয়ানো পাহাড়া না দিলে দুধের বদলে নিশ্চিত পানি। তারপর বাসায় এনে অবশ্য সেই পানিই মেশানো হয়। নাহলে ওইটুকু দুধ দিয়ে দুদিন চলবে কি করে? আমি পানি মেশানো খাঁটি দুধ খাই। অপুষ্টিতে মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে যাই।

তারপরও জীবন চলতে থাকে। বড় হই। বেঁচে-বর্তে থাকি। বাঁচতে শিখি। ফুটানি করতে শিখি। জীবন নিয়ে অনিশ্চয়তা আর শংকাও তো থাকে সেই সাথেই।

একদিন ছিনতাইকারীর ছুরির মুখ থেকে কি সৌভাগ্যে বেঁচে আসি। আরেকদিন কক্সবাজারে বেড়াতে যেয়ে জোয়ারে ডুবতে ডুবতে বেঁচে যাই অজ্ঞাতপরিচয় এক লোকের শার্টের হাতা আঁকড়ে ধরে।

অন্য আর এক দিন নতুন শেখা শখের বাইসাইকেল নিয়ে ক্লাসে যাবার পথে জুতার ফিতে জড়িয়ে যায় প্যাডেলে। শান্তিনগরের মোড়ে হুড়মুড় করে পড়ি আগুয়ান ছয় নাম্বার বাসের সামনে। মাটিতে অসহায় হয়ে পড়ে থাকা অবস্থায় বাসগুলো দেখতে কি বিশাল আর কি উঁচু লাগে, আর কি ভয়ংকর! ভাঙ্গা কাচের ভেতর দিয়ে খয়েরী শার্ট পড়া বাসের ড্রাইভারের নিরুদ্বেগ সরু চোখে চোখ পড়ে। ঘ্যাঁচ করে ব্রেক চেপে কষে গালি দেয় একটা। আমি শুনতে পাই না। আমি তাকিয়ে দেখি কটকটে হলুদ, সবুজ আর লাল রঙে ডিজাইন করে লেখা বাসের নাম, "মায়ের দোয়া"। কয়েকটা জীর্ন মলিন হাত এগিয়ে আসে। কি ভরসার সেই হাত! যে হাতগুলো অন্য সময় কাছে আসলে তাড়াতাড়ি পকেটে হাত দিয়ে মানিব্যাগের অস্তিত্ব নিশ্চিত করতাম, যে হাতগুলোর ছোঁয়া হঠাৎ লেগে গেলে অন্য সময়ে আগে তাড়াতাড়ি সাবান খুঁ‍জতে যেতাম, সেই হাতগুলো খামচে ধরে বেঁচে যাই সে যাত্রা।

এধরনের ঘটনাগুলোকেই মায়ের শংকার মোক্ষম কারণ মনে করে আমার প্রশ্নের উত্তর জেনে গেছি বলে বোধহয় একটা আত্মতৃপ্তি অনুভব করি। তাছাড়াও জীবনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যস্ত হয়ে তারপরে যতদিন পর্যন্ত মা'কে এই প্রশ্নটা করার সুযোগ থাকে, ততদিন এটা নিয়ে আর কখনো ভাবিনা আমি।

***

এসব ঘটনার অনেক অনেক বছর পর, যুদ্ধহীন, দারিদ্র্যহীন, রিকশাহীন, ধুলোমাটিহীন চকচকে এক শহরে জন্ম নেয়া আমার ছোট্ট মেয়েটা একদিন গভীর রাতে ঘুম ভেঙ্গে ডুকরে কেঁদে ওঠে। আমরা লাফিয়ে উঠি। বুক ধড়ফড়, কি হলো, কি হলো! আসলে কিছুই না, দুঃস্বপ্ন-টুঃস্বপ্ন হবে। নতুন হওয়া বাবা-মা'র অতিদুশ্চিন্তা। আমি মেয়েটার নরম চুলে হাত বুলিয়ে দেই। ওর কোমল গালে ঠোঁট ছুঁইয়ে আদর করে দেই। ও আবার ঘুমিয়ে যায়। হঠাৎ চমকে টের পাই, আমার অজান্তে অকারণেই আমার মুখ দিয়ে ফিসফিস করে বের হয়ে আসছে তিনটা শব্দ!

"বেঁচে থাকিস মামণিটা"।

হঠাৎ করেই বুঝে যাই, মা'র কাছে আর কোনদিন যে প্রশ্নটা করা হবে না, তার উত্তর আমি কখনোই পাইনি। অর্থহীন প্রশ্নটার কোন উত্তরও আসলে হয় না।

সেই প্রশ্নটাই নিজে শোনার জন্য অপেক্ষাও শুরু হয়ে যায় আমার ঠিক সেদিন থেকেই।


মন্তব্য

রেশনুভা এর ছবি

অন্তরটা ছুঁয়ে দিলেন।

স্বপ্নহারা এর ছবি

চোখটা জলে ভরে গেল! মা-কে একবছর হয়ে গেল দেখিনা, বড় অস্থির লাগে! ভাল্লাগেনা কোনকিছুই...

-------------------------------------------------------------
স্বপ্ন দিয়ে জীবন গড়া, কেড়ে নিলে যাব মারা!

-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

এই সব 'বেঁচে থাকা' একদিন ফুরিয়ে যায় প্রিয়জনদের চলে যাওয়া দেখতে দেখতে। হাজারো নিয়মের ব্যত্যয় ঘটলেও এই নিয়মের কোন ব্যত্যয় হয়না। জীবনের অর্জনের হিসাব গুনতেই সময় হয়ে যায়। পরকালের জন্য সঞ্চয় হয় কমই।

পাঁচ মিনিট আগে দেশ থেকে দু:সংবাদ এলো-- মামার অবস্থা খারাপ। সেকারণেই বোধহয় মন-খারাপ-রকমের ভালো লাগলো লেখাটা।

যুধিষ্ঠির এর ছবি

আপনার মামা সুস্থ হয়ে উঠুন তাড়াতাড়ি। ভালো লেগেছে শুনে ভালো লাগলো।

তিথীডোর এর ছবি

ঘুমভাঙ্গা চোখে লেখাটা পড়া, ভীষণভাবে ছুঁয়ে গেলো...
খারাপ হয়ে থাকা মন আরো খারাপ হয়ে গেলো!

-------------------------------------------------
"সুন্দরের হাত থেকে ভিক্ষা নিতে বসেছে হৃদয়/
নদীতীরে, বৃক্ষমূলে, হেমন্তের পাতাঝরা ঘাসে..."

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

মৃদুল আহমেদ এর ছবি

অনন্যসাধারণ একট লেখা রুমি ভাই। অনন্যসাধারণ।
ভীষণ ক্ষেপে ছিলাম আপনার ওপর। সহজে আর কথাবার্তা বলব না আপনার সাথে, এরকম পরিকল্পনাও ছিল। দেশে এসে আমার সাথে দেখা না করেই আবার উড়াল দিলেন, ব্যাপারটাকে কিন্তু খুব সহজভাবে নেই নি আমি। কিছু কিছু অভিমানবোধ আমার এখনো পুরোমাত্রায় সক্রিয়।
আপনার এই লেখাটা সেই মানসিক দেয়াল ভেঙ্গে দিল নিমেষেই।
--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

যুধিষ্ঠির এর ছবি

যাক, লেখাটা দিয়ে অন্ততঃ তোমার কোনদিন কথা না বলার পণ কিছুটা হলেও ভাঙ্গা গেলো। দেখা করতে পারিনি বলে এমনিতেই খুব খারাপ লেগেছে, সুমন। ক্ষেপে থেকো না। দেশে আর বিদেশে যে দুটো শহরে তুমি আছো বা থাকবে, সেখানে এমনিতেই আমার যাতায়াত হবে অনেকবার, দেখা অবশ্যই হবে শিগগিরি।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

খুব ভালো লাগলো লেখাটা... সকালটা সুন্দর হয়ে গেলো...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

দ্রোহী এর ছবি

মন ছুঁয়ে যাওয়া লেখা....

ওয়াইল্ড-স্কোপ [অতিথি] এর ছবি

চলুক চলুক চলুক

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

মন খারাপ

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

সচলদের কাছে আমার একটা বিনীত জিজ্ঞাসা। আপনারা কি মনে করেন এই পোস্টটি যিনি লিখেছেন তার লেখার বা নিয়মিত লেখার সামর্থ্য নেই? জিজ্ঞাসাটি করার কারণ, এই পোস্টের লেখক প্রায়ই অমন দাবী করে থাকেন।

এটি অন্যায়, ধর্ম্মপুত্র! নিজের অলসতার জন্য পাঠককে বঞ্চিত করা অন্যায়।

************************************

অশ্বিনীকুমার চতুর্থ পাণ্ডব একবার একজন সদ্য প্রসূতির কাছ থেকে তার অভিজ্ঞতার কথা শুনেছিলেন, সেটি মোটামুটি এই রকমঃ

- গর্ভধারণের শুরুর এক/দুই/তিন মাসে ছেলে হবে না মেয়ে হবে এই নিয়ে স্বামীর সাথে আলোচনা।

- চার/পাঁচ/ছয় মাসের মাথায় চিন্তা, ছেলে হোক বা মেয়ে হোক বাচ্চাটা সুস্থ্য-সবল-স্বাভাবিক হবে তো?

- সাত/আট/নয় মাসের সময় চিন্তা, সন্তান জন্মানোর সময় আমি বাঁচবো তো? আমি মরে গেলে আমার বাচ্চাটার কী হবে?

- দশ মাস/প্রসবকালীন প্রার্থনা, হে প্রভু আমি বাঁচি আর না বাঁচি আমার সন্তানটিকে বাঁচাও, তাকে পৃথিবীতে আসতে দাও, বেঁচে থাকতে দাও।

মায়ের এই আকাঙ্খা বা প্রার্থনা সম্ভবতঃ আমৃত্যু একই রকম থেকে যায়।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

যুধিষ্ঠির এর ছবি

অলসতা ভাঙ্গার চেষ্টা তো চলছে পাণ্ডবদা! কিন্তু ব্যস্ততা এসে বাগড়া দিচ্ছে ইদানিং। কি করবো!

হিমেল [অতিথি] এর ছবি

শুধু অসাধারণ বললে আসলে লেখাটা ফিল করা যায় না। এরকম একটা লেখা অনেক দিনের অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।

পুরো দিনটাই কাটবে আজকে মা এর কথা মনে করে!

নৈষাদ এর ছবি

চমৎকার লাগল লেখাটা...।

অতিথি লেখক এর ছবি

মনটা ছুয়ে দিল

জুয়েইরিযাহ মউ এর ছবি

কেমন বিষন্ন করা লেখা....... প্রাণ ছুঁয়ে গেলো।

--------------------------------------------------------
জানতে হলে পথেই এসো, গৃহী হয়ে কে কবে কি পেয়েছে বলো....


-----------------------------------------------------------------------------------------------------

" ছেলেবেলা থেকেই আমি নিজেকে শুধু নষ্ট হতে দিয়েছি, ভেসে যেতে দিয়েছি, উড়িয়ে-পুড়িয়ে দিতে চেয়েছি নিজেকে। দ্বিধা আর শঙ্কা, এই নিয়েই আমি এক বিতিকিচ্ছিরি

নিবিড় এর ছবি

চমৎকার লেখা যুধিষ্ঠির দা


মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।

সবজান্তা এর ছবি

অসাধারণ ! শুধু অসাধারণ বললেও আসলে কম বলা হয়... কিন্তু আর কিছু মাথাতেও আসছে না মন খারাপ

লেখাটা পছন্দের পোস্টে যোগ করছি। ভালো থাকুন।

পুনশ্চ: আপনি কি এবার আর বইগুলি কিনতে পেরেছিলেন পরে ?


অলমিতি বিস্তারেণ

যুধিষ্ঠির এর ছবি

ধন্যবাদ, সবজান্তা। না বইগুলো কিনতে পারিনি শেষমেষ। আসার আগের দিন শুক্রবারে আজিজে গিয়েছিলাম, কিন্তু জায়গাটা সেদিন বন্ধ থাকে জানতাম না। কি আর করা।

সাঈদ আহমেদ এর ছবি

এক অদ্ভুত জীবন চক্রের কী অসাধারন বর্ণনা... মামণিটা বেচেঁ থাকুক, আর মামণিটার বাবাটা লিখতে থাকুক।
-----------
"সে এক পাথর আছে কেবলি লাবণ্য ধরে"

-----------
চর্যাপদ

যুধিষ্ঠির এর ছবি

ওই অদ্ভুত জীবনচক্রের ব্যাপারটা মাথায় ঘুরছিলো বলেই লেখাটা শুরু হয়েছিলো। পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

পড়লাম, আর মন্তব্যের জন্যে লগিন করলাম...
পান্ডবদার ঐ প্রশ্ন বিনীতভাবে রেখে গেলাম আমিও...

_________________________________________

সেরিওজা

তুলিরেখা এর ছবি

সচলে এসে আমার এ কী সর্বনাশ হলো!
ছিলাম আধারোবট হয়ে, ভালোই ছিলাম---এরকম সব আশ্চর্য মনকেমনকরা লেখা পড়তে পড়তে কোন্‌ দিন পুরোপুরি মানুষ হয়ে যাবো হয়তো!
ভালো থাকবেন মরমী লেখক।
-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

যুধিষ্ঠির এর ছবি

আপনার লেখা পড়ে তো মনে হয় আপনি আমাদের অনেকের চেয়ে অনেক বেশি পুরোপুরি মানুষই আছেন এখনও। ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগলো।

ফকির লালন এর ছবি

মন খারাপ করা খাসা লেখা, যাক, বেঁচে থাকো, লিখতে থাকো।

অতিথি লেখক এর ছবি

অসম্ভব রকমের মন কেমন করা লেখা। আমিও বলি, ঘুমন্ত ছেলের মাথায় হাত রেখে চুল ঘেটে দিতে দেতে বলি, বেঁচে থাক বাবা।
মধুবন্তী মেঘ

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

বলার মতো কিছু পাচ্ছি না। এ ধরনের লেখা পড়ার পর আসলে বলার মতো কিছু থাকেও না। সেদিন রানা মেহেরের 'কাঠঠোকরা' পড়ার পর আর কিছুই পড়িনি। এখন আপনার এই লেখাটা পড়ে সিদ্ধান্ত নিলাম আর কিছু পড়ব না আজ।

পাঠক হিসেবে একটা ছোট্ট অনুরোধ, আপনি লেখালেখিতে আরও নিয়মিত হোন।

যুধিষ্ঠির এর ছবি

নিয়মিত হবার চেষ্টা করছি, অপ্র। দেখি কী হয়।

শাওন [অতিথি] এর ছবি

দুর্দান্ত !!! অসাধারন!!! জবাব নেই......... hail যুধিষ্ঠির ভাই।

বইখাতা এর ছবি

অসাধারণ !

মাহবুব লীলেন এর ছবি

দুর্ধর্ষ লেখা

পউট্টাখালি [অতিথি] এর ছবি

অসাধারণ + দুর্ধর্ষ

ওডিন এর ছবি

আমার মাকে এখনো এই প্রশ্নটা করা হয়ে ওঠেনি।
মনে হয় কখনো হবেও না।
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

মন্তব্যের ঊর্ধ্বে, তাই বিশেষ কিছু বলার চেষ্টা করলাম না।

তমিজউদদীন লোদী এর ছবি

খুব আর্দ্র করে দিলেন মনটা।
চোখের জল আটকানো গেলনা,বড় বেশী মনে পড়ে গেল মাকে।

তমিজ উদদীন লোদী

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

দেশে আপনার সঙ্গে আড্ডার সময়গুলো মনে পড়ে গেল। আহা! সচলায়তন আমাকে কত কত দারুণ মানুষের সঙ্গেই না দেখা করিয়ে দিল...

আপনার লেখা আপনার মতই। আপনজনের মতো মনে হয়। বুঝতে পারি, ভাষারও থাকে নিজস্ব প্রাণ...
____________________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ !

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

যুধিষ্ঠির এর ছবি

অত্যন্ত স্বল্পদৈর্ঘের সেই জম্পেশ আড্ডাগুলি আসলেই অনেকদিন মনে থাকবে। তোমার বেহালা না শোনার আফসোস রয়ে গেলো। পরেরবার নিশ্চয়ই হবে আশা রাখি।

সুমন সুপান্থ এর ছবি

কোন তারায় কুলাবে না এই লেখা ! স্রেফ অ-সাধারণ ! দুর্ধর্ষ। স্যালুট ।

---------------------------------------------------------
তুমি এসো অন্যদিন,অন্য লোক লিখবে সব
আমি তো সংসারবদ্ধ, আমি তো জীবিকাবদ্ধ শব !

---------------------------------------------------------
তুমি এসো অন্যদিন,অন্য লোক লিখবে সব
আমি তো সংসারবদ্ধ, আমি তো জীবিকাবদ্ধ শব !

যুধিষ্ঠির এর ছবি

যাঁরা পড়লেন, মন্তব্য করলেন, উৎসাহ দিলেন, সবার প্রতি অসীম কৃতজ্ঞতা। ভালো থাকবেন সবাই।

মামুন হক এর ছবি

ছুতারের টুকটাক, কামারের এক ঘা! ধর্মপুত্র লিখেন অনেক দিন পর পর, কিন্তু যখন লিখেন কাঁপিয়ে দিয়ে যান, নাড়িয়ে দিয়ে যান ভেতরের কলকব্জা। অপার্থিব রকমের ভালো লাগলো লেখাটি।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

আপনে ও বস্‌।

সিরাত এর ছবি

ভাল লাগলো।

মিজান [অতিথি] এর ছবি

মাঝেমাঝে সচলে আসি, অনেক লেখা পড়ি কিন্তু মন্তব্য করতে ইচ্ছা হয় না। এই লেখাটা পড়ে মন্তব্য না করে থাকতে পারলাম না। মন ছুঁয়ে গেলো ভাই আপনার লেখাটা পড়ে।

যুধিষ্ঠির এর ছবি

ধন্যবাদ। অন্য লেখাতেও মন্তব্য করবেন। করতে করতেই দেখবেন একদিন নিয়মিত মন্তব্য করা হয়ে যাচ্ছে। ভালো থাকুন।

দুর্দান্ত এর ছবি

এই আজব চক্কর থেকে মুক্তি নেই, মুক্তি চাইও না।
---
মনের ভেতরে ভেজা হাত বুলিয়ে গেলেন ভাই।
আম্মা কে ফোন করে শান্তি হল।
আপনি মানুষ না।

যুধিষ্ঠির এর ছবি

পড়ার জন্য, মন্তব্যের জন্য আবারও সবার প্রতি অসীম কৃতজ্ঞতা জানাই। একটু ব্যস্ততার কারণে সবাইকে আলাদা করে উত্তর দিতে পারলাম না। ভালো থাকবেন সবাই।

ভেড়া [অতিথি] এর ছবি

মনটা ছুয়ে দিলেন ।

মূলত পাঠক এর ছবি

চমৎকার লাগলো। ভালো থাকুন, সপরিবারে।

রাজিব মোস্তাফিজ [অতিথি] এর ছবি

কী যে ভালো লাগল লেখাটা!!

ইকারুস এর ছবি

চমতকার।

রানা মেহের এর ছবি

কী অপূর্ব একটা লেখা যুধিষ্ঠির
অন্য কোথাও নিয়ে যায়
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

যুধিষ্ঠির এর ছবি

আরেকবার ধন্যবাদ সবাইকে।

স্নিগ্ধা এর ছবি

দেরিতে হলেও জানিয়ে গেলাম - মুগ্ধতা!

সচল জাহিদ এর ছবি

কাজের চাপে বেশ কিছুদিন ধরেই অনিয়মিত, অথচ আজ হঠাৎ করেই আপনার নিকে ঠুকে এই লেখাটি পড়লাম। না পড়লে একটা আক্ষেপ থেকে যেত হয়ত। এ যেন নিজের কথারই প্রতিধ্বনি

----------------------------------------------------------------------------
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

যুধিষ্ঠির এর ছবি

ধন্যবাদ রিপন। তোমার ওই লেখাটা আগেই পড়েছিলাম। এখনও পড়লাম। ওরকম একটা লেখায় মন্তব্য কি করবো বুঝি না, তাই করিনি।

স্বাধীন এর ছবি

সেই প্রশ্নটাই নিজে শোনার জন্য অপেক্ষাও শুরু হয়ে যায় আমার ঠিক সেদিন থেকেই।

এভাবেই জীবন বয়ে চলে আর সভ্যতা গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে চলে। মন ছুঁয়ে গেল লেখাটা। দেরীতে হলেও পদচিহ্ন রেখে গেলাম।

যুধিষ্ঠির এর ছবি

আবারও ধন্যবাদ সবাইকে, পুরনো লেখাটা খুঁজে খুঁজে পড়ার জন্য।

আশরাফ মাহমুদ এর ছবি

মনছোঁয়া লেখা।

==============================
ঢাকার মৌন ঘ্রাণে বকুলফুলের নাভি
==============================
হা-তে এ-ক প্র-স্থ জো-ছ-না পা-ড়ে-র ঘ্রা-ণ

গৃহবাসী বাঊল এর ছবি

দুর্দান্ত লেখা। এই নিয়ে কতবার যে পড়লাম লেখাটা। কারণও আছে একটা।

আমার আম্মু বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দোয়া করেন। কখনো "আল্লাহ্‌ অনেক বড় করুক"; কখনো "আল্লাহ্‌ মনেরর সব ভাল ইচ্ছা পূরণ করুক", কখনো "জীবনে অনেক সুখি হও"। আব্বুর ও কোন কন্সটেন্ট দোয়া নাই। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দোয়া। শূধু আমার সেজফুফু র দোয়া কন্সটেন্ট। আমাদের কথ্য ভাষায় "বাঁচি থাকো বাবা"। সবসময় এই একই দোয়া। আমি একদিন তাই কৌতুহল সাম্লতে না পেরে জিজ্ঞেস করে ফেললাম, ফুফু, আপনি সবসময় এই দোয়া করেন কেন? ফুফু মুচকি একটা হাসি দিয়ে, কাছে এসে, কপালে একটা চুমু দিয়ে বললেন "বাঁচি থাকো বাবা"।

আমরা যখনি খুব কষ্ট লাগে বেঁচে থাকতে, তখনই আমার ফুফুর সেই মুচকি হাসি, কপালে চুমু আর তার সেই দোয়া'র কথা মনে হয়। আর মনে হয়, বেঁচে থাকাটা নিশ্চয়ই খুব গুরুত্বপূর্ণ, নাহলে সবাই বেঁচে থাকার দোয়া করে কেন?

এই রকম একটা লেখার জন্য গুরু গুরু

অতিথি লেখক এর ছবি

কী যে অদ্ভুত সুন্দর একটা লেখা!

---মোখলেস হোসেন

এক লহমা এর ছবি

অসাধারণ!

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।