১. কৌতুহলের শুরু:
বিবিসি, এএফপি অথবা টাইম ম্যাগাজিনের রিপোর্টগুলো সত্যি হয়ে থাকলে ঢাকার মীরপুরে গত ১৭ই ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়ে গেছে পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে বড় কলেরা ভ্যাকসিনের ট্রায়াল। রিপোর্ট অনুযায়ী মীরপুর এলাকার আড়াই লাখ লোকের ওপরে এই ভ্যাকসিনের পরীক্ষা চালানো হবে। যে ভ্যাকসিন ব্যবহার করা হবে সেটি ভারতে তৈরী এবং সস্তা। চার বছর ধরে ট্রায়ালে অংশগ্রহণকারীদের পর্যবেক্ষণ করা হবে। প্রাপ্ত ফলাফল থেকে বোঝা যাবে বাংলাদেশে এবং পৃথিবীর অন্য যে কোন জায়গায় কলেরার প্রতিষেধক টীকা বৃহত্তর জাতীয় পরিসরে ব্যবহার করা যাবে কি না।
বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র (আইসিডিডিআর,বি) এবং ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের যৌথ উদ্যোগে এই পরীক্ষা চালানো হচ্ছে। রিপোর্ট থেকে এটাও জানা যাচ্ছে যে, ট্রায়ালের জন্য বিল অ্যাণ্ড মেলিণ্ডা গেইটস ফাউণ্ডেশন থেকে অনুদান পাওয়া গেছে। ভ্যাকসিন অবশ্যই ট্রায়ালের অংশগ্রহণকারীদের বিনামূল্যে দেয়া হচ্ছে। এটাও জানা গেলো আমেরিকার সিডিসি (সেণ্টার ফর ডিজিজ কণ্ট্রোল অ্যাণ্ড প্রিভেনশন)-ও এই ট্রায়ালের সাথে জড়িত, এবং তারা বেশ উৎসুক হয়ে এর ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করছে।
এর চেয়ে বেশি কিছু রিপোর্টে নেই। জানার দরকারও হয়তো নেই, কারণ আপাত দৃষ্টিতে খবরটা দারুণ। প্রথমত: দেশে কলেরা মোকাবেলার জন্য এটা নিঃসন্দেহে একটা ভালো পদক্ষেপ হবে। এর আগে কখনো জাতীয় পর্যায়ে কোন দেশে কলেরার প্রতিষেধক দেয়া যায় নি এর উচ্চমূল্যের কারণে। এবার সেটা হয়তো সম্ভব হবে কারন এই নতুন প্রতিষেধকটি আগেরটির চেয়ে দামে দশ ভাগের এক ভাগ।
দেশের অনলাইন পত্রিকাগুলোতে নিয়মিত চোখ বুলাই, তাই এরকম বড় একটা খবর বিদেশের পত্রিকাগুলোতে কেন পড়লাম প্রথম, সে ব্যাপারটি ভাবালো। একটু উৎসুক হয়ে দেশের পত্রিকাগুলো খুঁজতে গিয়ে মোটামুটি বড় ধরণের ধাক্কা খেতে হলো। একমাত্র প্রথম আলো ছাড়া আর কোন পত্রিকায় এটির কোন খবর খুঁজে পেলাম না, প্রথম আলোতেও পাওয়া গেলো ১৮ই ফেব্রুয়ারির পত্রিকায়, অর্থাৎ কর্মসূচি শুরু হবার একদিন পরে, তাও তৃতীয় পৃষ্ঠার এক কোনায়। উপরের লিঙ্কগুলো খেয়াল করলে দেখবেন বিদেশি সংবাদ মাধ্যমগুলো এ খবরটি দিয়েছে একদিন আগে বা ঘটনার দিনে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েব সাইটে কিছু পাওয়া গেলো না, সেটা আসলে আশা করাও উচিৎ হয় নি। আইসিডিডিআরবি-র ওয়েব সাইট দেখে মনে হলো সেটি একটি ভালো এবং নিয়মিত যত্ন-আত্তি নেয়া সাইট, সেখানেও কোন খবর নেই। এমনকি কোন উল্লেখ নেই তাদের প্রেস-রিলিজের পৃষ্ঠাতেও। প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক,এই রাখঢাক কেন? উত্তর খুঁজতে গিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানা গেলো।
২. তথ্য সংগ্রহ :
২.১. ভ্যাকসিনটার নাম হলো ShanChol১,২। নির্মাতা ভারতের Shantha Biotechnics, যেটি ফ্রান্সের Sanofi Aventis-এর একটি প্রতিষ্ঠান। সহযোগিতায় ছিলো সিউল ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান International Vaccine Institute (IVI)। একজন মানুষকে ভ্যাকসিনটির দুই ডোজ নিতে হয় দুই সপ্তাহের ব্যবধানে। শুধু ভ্যাকসিনের মোট দাম পড়ে ৪ ইউ এস ডলারের মত।৩ এটা নিয়ে এত হৈচৈ এর কারণ হলো এর আগে যে ভ্যাকসিনটা প্রচলিত ছিলো (Dukoral), সেটি অত্যন্ত কার্যকর, কিন্তু দাম ৪০ ইউ এস ডলারের বেশি, তাই ব্যাপক আকারে টীকা দেয়া বাস্তবসম্মত ছিলো না।৩
২.২. ভারতের স্বাস্থ্য বিভাগ এটি অনুমোদন করছে,কিন্তু বিশ্ব সাস্থ্য সংস্থা (WHO) এখনও করে নি। চিন্তার বিষয় হলো, ভারত সরকার ভ্যাকসিনটি ব্যবহারের অনুমোদন দিলেও জাতীয় পর্যায়ে বিশাল আকারের কোন কর্মসূচী নেয়ার কোন পরিকল্পনা তারা অনুমোদন করেনি।৩ এমন কি হতে পারে যে একটি ভ্যাকসিন অনুমোদন করার আগে হয়তো WHO বড় আকারের ট্রায়াল আশা করে, যেটা এখন বাংলাদেশে করা হচ্ছে? পাকিস্তানে বন্যার পরে কলেরার প্রকোপ ঠেকানোর জন্য এই একই ড্রাগ দিয়ে বড় আকারে টীকা কার্যক্রম চালানোর জন্য IVI গত বছর ব্যাপক তদবীর চালিয়েছিলো, কিন্তু পাকিস্তান সরকার রাজী হয়নি৩।
২.৩. ভারত ও পাকিস্তান সরকারের এই অনীহা আসলে বেশ যুক্তিসঙ্গত – এর কারণটি মূলত রোগ প্রতিরোধের বাজেটের সঠিক ব্যবহার নিয়ে। WHO সবসময়ই বলে এসেছে, কলেরা প্রতিরোধে ভ্যাকসিন কখনোই একমাত্র সমাধান নয়, বরং পরিস্কার খাবার পানি আর স্বাস্থ্যকর পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থার অবকাঠামো তৈরী করাটা প্রাথমিক লক্ষ্য হওয়া উচিৎ। তাদের মতে ভ্যাকসিনের ব্যবহার করতে হবে একটি সহযোগী পদক্ষেপ হিসেবে, অথবা ভুমিকম্প বা বন্যার মত বড় ধরনের কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষেত্রে শেষ রক্ষা হিসেবে।৪
২.৪. যদিও নতুন ভ্যাকসিনটির দাম আগেরটির চেয়ে দশ ভাগের এক ভাগেরও কম, তারপরও কলেরার জন্য জাতীয় পর্যায়ে প্রতিষেধক টীকা দানকে WHO এবং অন্য অনেক বিশেষজ্ঞরা কার্যকর পদক্ষেপ মনে করেন না। ভ্যাকসিনের খরচ ছাড়াও এরকম একটি কর্মসূচি চালাতে অন্যান্য যে খরচ হয় সেটি অনেক। ইন্দোনেশিয়ার সুনামির পরে বান্দা আচেহতে কলেরার পূর্বপ্রচলিত ভ্যাকসিন Dukoral প্রয়োগের সময় মাথাপিছু অতিরিক্ত ৮ ডলার লেগেছিলো শুধু প্রাথমিক ডোজগুলো দিতেই ৩। তাদের মতে, এর পেছনে টাকা খরচ করার চাইতে সমপরিমাণ টাকা দিয়ে যদি খাবার পানি এবং স্যানিটেশনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা যায়, সেটি বাংলাদেশের মত দেশের জন্য বেশি কার্যকর। তাছাড়া জাতীয় পর্যায়ে ভ্যাকসিনেশনের ক্ষেত্রে কলেরার ভাইরাসকে ঠেকানোর চাইতে pneumococcus (নিউমোনিয়ার জীবানু) আর rotavirus (জটিল ডাইরিয়ার জীবানু) এগুলোকে ঠেকানো বেশি জরুরী আর কার্যকর ৩। একটি দাতা সংস্থা Global Alliance For Vaccines And Immunisation (GAVI) এর মধ্যেই ঘোষনা করেছে যে ২০১৩ পর্যন্ত তারা কোনরকম কলেরা টীকাদান কর্মসূচীতে অনুদান দেবে না, যাতে করে তারা pneumococcus এবং rotavirus-এ বেশি মনোযোগ দিতে পারে৩।
২.৫. ShanChol এর প্রাথমিক ডোজের কার্যকারিতা বছর দুয়েকের মধ্যে অনেক কমে যায়৩, এবং তখন বুস্টার ডোজ দেয়া জরুরি। এই খরচটি মূল হিসাবে ধরলে, ভ্যাকসিন কর্মসূচীর পেছনে টাকা খরচ করার উপযোগিতা আরও কমে যায়। তারপরও প্রশ্ন থাকে বাংলাদেশের মত তথ্য অব্যবস্থাপনা আর স্বাস্থ্য অসচেতনতার দেশে এই বুস্টার ডোজটি নিশ্চিত করা কতটুকু সম্ভব সেটি নিয়ে।
২.৬. অন্যসব ট্রায়ালের মতই এখানে প্ল্যাসিবো ব্যবহার করা হবে। অর্থাৎ আড়াই লাখ লোকের এক তৃতীয়াংশ লোককে আসলে ভ্যাকসিন দেয়া হবে না, এবং এই ৮০ হাজার লোককে কণ্ট্রোল গ্রুপ হিসেবে পর্যবেক্ষণে রাখা হবে।
২.৭ কলকাতায় ২০০৬ সালে ShanChol-এর একটি ফেজ-থ্রী ট্রায়াল শুরু হয়েছে ৩,৫। এখনও এটি চলছে কি না সে ব্যাপারে কোন তথ্য আমি পাইনি। তবে এর অন্তর্বর্তী ফলাফল এর মধ্যেই প্রকাশ করা হয়েছে। এটুকু মোটামুটি বোঝা যাচ্ছে যে এই ট্রায়ালটি ৬৬০০০-৭০০০০ লোকের উপরে চালানো হয়েছে। নতুন কোন সাবজেক্ট আর নেয়া হচ্ছে না, তবে এই ৭০ হাজার মানুষ হয়তো এখনো পরীক্ষাধীন আছেন। অনুমান করছি সে কারণে এটিকে এখনও চলমান ট্রায়াল বলা যেতে পারে। বাংলাদেশে যে কোন পর্যায়ের ট্রায়াল চলছে সেটি আমি জানতে পারিনি। উইকিপিডিয়া থেকে জানতে পারছি, ফেজ-থ্রী ট্রায়াল একটার বেশি করা হতে পারে। এর পরের ধাপ হলো ফেজ-ফোর ট্রায়াল, যেটি করা হয় শুধুমাত্র ভ্যাকসিন বাজারজাতকরণের অনুমতি পেলেই। সেটি যেহেতু এখনও পাওয়া যায় নি, তাহলে এটা ধরে নেয়া যেতে পারে যে বাংলাদেশে যেটি হচ্ছে, সেটিও আসলে ফেজ-থ্রী ট্রায়াল। তাহলে এটি কলকাতার ফেজ-থ্রী ট্রায়াল থেকে আলাদা কেন? তাছাড়া এটাও উল্লেখ করার মত, বর্তমানের ট্রায়ালটি clinicaltrials.gov তে তালিকাবদ্ধ নেই, যেখানে পথিবীর প্রায় সব ট্রায়ালের খোঁজই থাকে।
২.৮ আশির দশকে শেষভাগে ভিয়েতনামের VA Biotec কলেরার আরেকটি সস্তা ভ্যাকসিন বের করেছিলো। এটি তৈরীতে সাহায্য করেছিলো সুইডেন সরকার, Dukoral এর উদ্ভাবকদের সহায়তায়। এটি এ পর্যন্ত ভিয়েতনামে ২০ মিলিয়ন শিশুর উপরে স্বার্থকভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে। কলকাতার ফেজ-থ্রী ট্রায়ালের অন্তর্বর্তী ফলাফল থেকে জানা গেছে, ShanChol এর কার্যকারিতা ভিয়েতনামের এই ভ্যাকসিনের সমপর্যায়ের (৬৭%) ৩।
৩. তারপর স্বাভাবিকভাবেই আরও কৌতুহল, আরো প্রশ্ন:
৩.১. প্রথম প্রশ্ন, ভারতীয় কম্প্যানীর তৈরী ভ্যাকসিনটির ব্যাপক আকারের ট্রায়াল ভারতে হলো না কেন? ভারতের তৈরি টীকা বাংলাদেশে পরীক্ষা করাটা শুনতে ভালো লাগে না, যখন ভারত নিজেই এই পরীক্ষা করতে চায় না। ভারত কিন্তু কলেরামুক্ত কোনো দেশ নয় যে তাদের এই পরীক্ষা করার দরকার নেই। মীরপুরের আড়াই লাখ লোকের উপরে চার বছর ধরে যে পরীক্ষা হবে, সেটি করার মত এলাকা এবং জনগন ভারতেও ছিলো। ভারত সরকার এ ব্যাপারে আগ্রহ না দেখানোর কারনটি যদি হয় WHO এর নির্দেশনা অনুসারে ভারত পরিস্কার পানি এবং পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থার অবকাঠামো নির্মানে বেশি আগ্রহী, তাহলে বাংলাদেশ কেন ভ্যাকসিনেশনের ব্যাপারে উৎসাহী হলো সে প্রশ্ন দেশের নাগরিকরা জানতে চাইতেই পারেন। আমার জানামতে কলেরা এ মুহূর্তে বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় সমস্যা নয়। আইসিডিডিআর,বি এবং অন্যান্য অনেক সরকারী বেসরকারী সংগঠনের কার্যক্রমের কারণে কলেরা এবং অন্যান্য ডায়রিয়াজনিত রোগ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। গত ২০-২৫ বছরে আমাদের দেশে যে বড় বড় বন্যা আর সাইক্লোন হয়েছে, কোনটিতেই কলেরা আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়নি। বিদেশি রিপোর্টগুলোতে আইসিডিডিআর,বি-র নাসমিন আহমেদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, এই প্রকল্পের ফলাফল অন্যান্য দেশে জাতীয় পর্যায়ে কলেরা টীকা প্রকল্প চালু করতে সাহায্য করবে। মীরপুরের মানুষরা তাহলে ভ্যাকসিন বাজারজাত করার গিনিপিগে পরিণত হলো? যদিও এটা নতুন না, বাংলাদেশে বস্তির মানুষরা ১৯৮৫ সালেও কলেরার আরেকটি ভ্যাকসিনের (Dukoral)গিনিপিগ হয়েছিলেন।৩,৫ আমার জন্য এ খবরটিও অজানা ছিলো।
৩.২. আইসিডিডিআর,বি মূলত একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান। যে কোন গবেষণায় অংশগ্রহণের প্রতি এর বিজ্ঞানীদের আগ্রহ থাকবে এটাই হয়তো স্বাভাবিক, তারপরও দেশের দীর্ঘমেয়াদী কল্যাণের কথা তারা ভাববেননা কেন সেটা নিয়ে প্রশ্ন করা যেতেই পারে। সম্প্রতি হাইতির ভূমিকম্প-পরবর্তী কলেরার প্রকোপ আমেরিকাতে বেশ হৈ চৈ ফেলেছে। ফ্লোরিডাতে হাইতি-ফেরত একজন কলেরাতে আক্রান্ত হয়েছেন বলেও জানা গেছে। সিডিসি আর গেইটস ফাউণ্ডেশনের এই ভ্যাকসিনের ব্যাপারে উৎসাহের কারণ এখান থেকে অনুমান করা সম্ভব। কিন্তু বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যখন এখানে জড়িত, সেখানে একটা পারস্পরিক দায়বদ্ধাতার হিসাব রাখা জরুরী ছিলো। প্রথম আলো-র ২০০৯-এর একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, আইসিডিডিআরবির জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী ফিরদাউসি কাদরি বলেছেন, “আইসিডিডিআরবিতে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের বেশির ভাগই মিরপুর থেকে আসে। তাই এই টিকা পরীক্ষার জন্য ওই এলাকাকেই প্রথম বেছে নেওয়া হয়েছে।” যদি ধরে নেয়া যায় যে সবকিছু মিলিয়ে মাথাপিছু ১০ ডলারও খরচ হবে প্রাথমিক পর্যায়ের টীকাগুলো দিতে,তাহলেও ১ লাখ ৬০ হাজার লোকের পেছনে খরচ হবে সাড়ে ১১ কোটি টাকারও বেশি, বুস্টার ডোজ দিতে ধরে নিলাম দু’বছর পরে খরচ হবে এর আরও অর্ধেকটা। এই যে দু’বছরে যে প্রায় ১৮ কোটি টাকা খরচ হবে, সেটি দিয়ে মীরপুর এলাকার আড়াই লাখ লোকের জন্য পরিস্কার পানি আর স্বাস্থ্যকর পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা করা যেত বলেই মনে হয়, যেটি দীর্ঘ মেয়াদে কলেরা নির্মূল করতে পারতো। সেটি WHO এর নির্দেশনা অনুযায়ীও সঠিক কাজই হত। বিল অ্যাণ্ড মেলিণ্ডা গেইটস ফাউণ্ডেশন টাকা দিচ্ছে বুঝলাম, সেটি আমরা কেন আমাদের প্রয়োজনমত খরচ করতে পারবো না?
৩.৩. দেশের সংবাদ মাধ্যমে আর জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলোর ওয়েবসাইটে এই বিষয়টি প্রকাশ না করাটাও বেশ বিরক্তিকর। এটা কি বাংলাদেশি মিডিয়ার উদাসীনতা? নাকি এটা ইচ্ছে করে গোপন রাখা হয়েছে? বিদেশী সংবাদ মাধ্যমগুলো যেহেতু এ খবর সময়মত পেয়েছে, তার মানে এই দাঁড়ায় যে খবরটা দেশীয় মাধ্যমগুলো থেকে ইচ্ছেকৃতভাবে সরিয়ে রাখা হয়েছে। সেটার কারণ কি? এই টীকার কার্যকারিতা দুই বছরে কমে আসে, এবং বুস্টার ডোজ দিতে হয়, এ কথাও কোন রিসার্চ পেপার বা ভ্যাকসিনের বাক্সের ভেতরের কাগজ না পড়লে জানা সম্ভব না। সরকার এখানে কত টাকা খরচ করছেন সে ব্যাপারেও কোন তথ্য কোথাও চোখে পড়েনি।
৩.৪. ShanChol এর জন্য WHO এর কাছে অনুমোদন চাওয়া হয়েছে ২০০৯-এর সেপ্টেম্বরে। সেটি এখনো মেলে নি। WHO বেশ স্পষ্ট করেই বিভিন্ন সময় বলেছে, কলেরার জন্য ভ্যাকসিন এককভাবে যথেষ্ট নয়, সঙ্গে বিশুদ্ধ পানি আর পয়োব্যবস্থার অবকাঠামো ঠিক করতে হবে। তাছাড়া, দুই ডোজের এই ভ্যাকসিন পনেরো দিনের ব্যবধানে দিতে গিয়ে অনেকটা প্রয়োজনীয় সময় কেটে যাবে, সে কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায়ও এটি তেমন কার্যকর হবে না। পাকিস্তান সরকার সম্ভবত এ কারণেই এই ভ্যাকসিন প্রয়োগে বাধা দিয়েছিলো। Shantha Biotechnics এবং IVI এর মধ্যেই এক ডোজের ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছে।৩ তাহলে এ সময়ে এই ভ্যাকসিনকে দেশে দেশে ছড়িয়ে দেয়াটা জরুরী কেন? এ মুহূর্তে এমনটা মনে হওয়া স্বাভাবিক যে ShanChol-এর গবেষণার অর্থ উঠিয়ে নিয়ে আসার প্রয়োজন আছে তার নির্মাতাদের কাছে, এবং সেটি সম্ভব একমাত্র ভ্যাকসিনটির ব্যপক ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলেই। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, “দিশারি প্রকল্পটির (পাইলট প্রজেক্ট) কার্যকারিতা প্রমাণিত হলে সারা দেশে নিয়মিত টিকাদান কর্মসূচির সঙ্গে কলেরা টিকাকেও সম্পৃক্ত করা হবে। এখন যে টিকাটি খাওয়ানো হচ্ছে, সেটি ভারত থেকে আমদানি করা হয়েছে। তবে শিগগির বাংলাদেশেও টিকা তৈরি হবে। কমপক্ষে চারটি ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান টিকা তৈরির প্রস্তুতি নিয়েছে”। এই খবর নিঃসন্দেহে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের জন্য আনন্দের, বিশেষ করে WHO-এর অনুমোদন ছাড়াই যদি এতটা পাওয়া সম্ভব হয়।
৩.৫. কলকাতার ট্রায়াল শেষ হবার আগেই বাংলাদেশে তার তিন গুন বড় আকারের একটি ট্রায়ালের প্রয়োজন পড়লো কেন এবং সে প্রয়োজনটি কোথাও ব্যাখ্যা করা হলো না কেন? যে ভ্যাকসিন ভিয়েতনামে ২০ মিলিয়ন শিশুর উপরে ইতিমধ্যে পরীক্ষিত, সেটি ব্যবহার না করে একটা নতুন ভ্যাকসিনের ট্রায়ালে আমাদের দেশের লোককে কেন অংশগ্রহণ করতে হবে সে উত্তরটাও জানা জরুরী।
৩.৬ ভ্যাকসিন ট্রায়াল নিয়ে সারা পৃথিবীতে কেলেংকারি কম হয় নি। বিশেষ করে প্ল্যাসিবোর ব্যবহার নিয়ে সবসময়ই বিতর্ক আছে। তবে আজকাল মানুষকে সাবজেক্ট হিসাবে ব্যবহার করা হলে ন্যুনতম কিছু নীতিমালা পালন করা হয়৬। সাবজেক্টের কাছ থেকে সজ্ঞান অনুমতি নিতে হয়। ম্যাস ট্রায়ালের ক্ষেত্রে সমাজের বা দেশের নেতারা এই অনুমতি দিতে পারেন এলাকার মানুষের পক্ষে। প্রশ্ন হলো, ভ্যাকসিন ট্রায়ালের ক্ষেত্রে এরকম এথিকস কতটুকু অনুসরণ করা হচ্ছে? মীরপুরবাসীরা কি জানেন তারা একটি পরীক্ষার সাবজেক্ট? যে ৮০ হাজার লোক প্ল্যাসিবো পাবেন, তারা কি জানবেন যে তারা কনট্রোল গ্রুপের সাবজেক্ট মাত্র? নাকি আমাদের দেশের সরকার আর অন্য দেশের ভ্যাকসিন নির্মাতারা আমাদের ভালোটা আমাদের চেয়ে ভালো বোঝেন, তাই এসব খবর মীরপুরবাসীদের না জানানোই ভালো? ১৯৮৫ সালের Dukoral-এর ট্রায়ালে যারা অংশগ্রহণ করেছিলেন, তাদের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া যদি কিছু হয়ে থাকে, সেটির খোঁজ কেউ রেখেছে? সেই মানুষগুলোর সরকার বা নেতারা কি তাদের স্বার্থ রক্ষা করেছেন? কেন যেন সন্দেহ হয় করেননি। আমার সন্দেহ মিথ্যা প্রমাণিত হোক, এই আশা করি।
কৃতজ্ঞতা: সচল অনার্য সঙ্গীত ও স্বাধীন-এর প্রতি, তথ্য আর বিশ্লেষণ দিয়ে সাহায্য করার জন্য।
আপডেট (২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১১): অনুচ্ছেদ ২.৭, ২.৮ ও ৩.৫ যোগ করা হলো, আর আগের ৩.৫ কে নতুন ৩.৬ নাম্বারে রাখা হলো।
মন্তব্য
ওয়েটাইতেছিলাম। আগে গিয়ে পড়ি।
আমেরিকায় একটি নতুন ঔষুধ ডেভলপ করতে এক বিলিয়ন ডলারের মত খরচা পড়ে। স্বভাবতই তাই এরা গিয়ে ভারতের মত জায়গায় ঔষুধ ডেভলপ করছে। এবং বাংলাদেশকে বেছে নেয়া হয়েছে গিনিপিগ হিসেবে। যেন আমাদের ঘেন্না করে বলা হচ্ছে, "আরে এই ফকিন্নির পুতেরাতো এমনিতেই মরতো। এই টিকার ফলে বরং খানিকটা বাঁচার সুযোগ হবে!" হায়রে আমাদের সরকার! হায়রে আমাদের দুর্ভাগা দেশ!!
অবিলম্বে এই বিষয়ে সরকারী বিবৃতি এবং কি ধরণের প্রিকশন নেয়া হয়েছে সেটা জানতে চাই। যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
১. একটা তথ্য বোধহয় যোগ করে দেয়া যেতে পারে, সেটা হচ্ছে একই কম্পানি ভিন্ন উপায়ে কলেরার আরেকটি টিকা তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে। সেটির ফলাফল এখনো আশাব্যঞ্জক নয়। প্রশ্ন হচ্ছে, যদি বর্তমান টিকাটি ফলপ্রদ হয় তাহলে নতুন টিকা কেন!? বর্তমান টিকাটিকেই আরো উন্নত করবার চেষ্টা হলে অন্য কথা থাকতো। কিন্তু সেরকম কোনো দাবী এই কম্পানিটি করেনি।
২. আমার দেশের মানুষকে কোন ধরণের টিকা কেন দেয়া হচ্ছে এবং তার ফলাফল কী হবে সে বিষয়ে সরকারি প্রজ্ঞাপন/বিজ্ঞাপন আশা করছি। অন্তত সরকারি কোন ওয়েবসাইটে এই টিকাটির বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য আশা করছি। তাতে আমরা জানতে পারবো আসলে আমাদের উপর কোন ধরণের গবেষণা হচ্ছে! আমাকে না বিস্তারিত জানিয়ে আমার সম্মতি ছাড়া আমি আমার উপর কোন গবেষণা করতে দিতে রাজি নই। সেরকম কিছু করা হলে নিশ্চিতভাবেই তা মানবাধিকার লঙ্ঘন।
এই লেখাটি খুবই প্রয়োজনিয় ছিলো। যুধিষ্ঠির'দা কে
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
প্যাকেজ ইনসার্ট পড়ে দেখলাম বর্তমান ভ্যাকসিনটা পলিস্যাকারাইড (polysaccharide) বেইসড ভ্যাকসিন, তাই প্রোটিন বেইসড ভ্যাকসিনের মত কার্যকর না। তারা যদি প্রোটিন বেইসড ভ্যাকসিন নিয়ে গবেষণা করে তাতে তো কোন ক্ষতি নেই। আর প্রোটিন বেইসড ভ্যাকসিন কবে পাওয়া যাবে সেটা কেউ বলতে পারবে না।
২ং পয়েন্টে একমত।
নাগরিক অধিকার বা মানবাধিকার জাতীয় শব্দগুলো আমাদের জন্য প্রযোজ্য না
অসাধারণ একটা কাজ করেছেন যুধিষ্ঠির ভাই। এ বিষয়ে আমি এক্সপার্ট নই, তবে বর্ণনা থেকে পুরো ব্যাপারটাতেই একটা প্রতারণার গন্ধ আছে মনে হচ্ছে। এই লেখাটি সাধ্য অনুযায়ী ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবো।
সচলায়তনে এই পরিশ্রমী লেখাগুলো দেখে একজন সহসচল হিসাবে গর্বিত বোধ করি। অনেক অনেক শুভেচ্ছা আপনাকে।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
আমাদের দেশে জাতীয় পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেবার মত ক্ষমতাশালী মানুষদের ভেতর একজন ভালো মানুষও কি খুঁজে পাওয়া সম্ভব না?
এ কোন দেশে জন্ম নিলাম!
আমাদের বদের হাড্ডি বিরোধী দল কোথায় এখন ? খালি সীট আর খেলার টিকিট নিয়ে জড়িত কণ্ঠে, ঘোলাটে ঢুলু ঢুলু চোখে আমড়াগাছি করাই কি তাদের একমাত্র কাজ ? এসবের খবর রাখে তারা, নাকি বোতল নিয়ে কোথাও পড়ে আছে এখন ?
মনমাঝি
এরকম ঘটনা কিন্তু আরো ঘটছে
৯৭-৯৮ সালের দিকে ঠাকুরগাঁওয়ের চারটা স্কুলে বাচ্চাদের মধ্যে একটা ক্যাপসুল পরীক্ষা চালাতে দেখেছিলাম
জানিনা ওটা কারা করেছিল। কী ক্যাপসুল ছিল তাও জানি না
ঘ্যাচাং
এই তথ্যগুলো ডুকেমণ্ট করে রাখতে পারলে ভালো। আমিও ক্যাপসুল বা টীকার পরীক্ষা দেখেছি অনেক।
ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল আমেরিকাতেও হয়। কথা হচ্ছে এই ট্রায়ালের সম্ভাব্য রিস্কগুলো খতিয়ে দেখা হয়েছি কিনা, কিংবা যারা এই ট্রায়ালে অংশ নিচ্ছে এসম্পর্কে তাদের অনুমতি নেয়া হচ্ছে কিনা তা দেখার বিষয়। আইসিডিডিআরবি থাকায় আমি কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছি। স্বচ্ছতার সাথে করলে এতে আমি সমস্যা দেখি না। তবে সন্দেহ হয় যখন ভারত নিজেই তাদের দেশে ট্রায়ালটি করছে না।
আমি কৌস্তভের বক্তব্য জানার জন্য আগ্রহী। বিশেষ করে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ইনস-এন্ড-আউটস সম্পর্কে।
পিপিদা আমারে ফাঁসাইলেন। সব লিঙ্ক ঘেঁটেঘুঁটে দেখতে হচ্ছে এখন। কিন্তু কথা হল, ভারতীয় ভ্যাক্সিনের সমালোচনা কী আমার করা সমীচীন?
কলকাতায় একটা ট্রায়াল হয়েছিল টাইমস বলছে।
Enter Shanchol, a two-dose vaccine produced by Shantha Biotechnics of Hyderabad and developed with funding from (among others) the Gates Foundation, which also gave $16.5 million to the ICDDR,B for the cholera vaccine project. Shanchol is safe and efficacious: a trial in the Indian city of Kolkata involving nearly 70,000 people showed that the drug gave 67% protection for at least 2 years
Read more: http://www.time.com/time/world/article/0,8599,2048937,00.html#ixzz1F0vTqOcY
আর কোম্পানির ট্রায়ালের পাবলিকেশন রেফার করছে এখানে http://www.plosone.org/article/info:doi/10.1371/journal.pone.0002323
লেখার জন্য ধন্যবাদ। তথ্য জানার অধিকারের বিষয়ে একমত। তবে ভ্যাকসিন ট্রায়াল না দেয়ার বিষয়ে পুরাপুরি একমত হতে পারছি না (বিস্তারিত পরে লেখার ইচ্ছ আছে)।
ভ্যাকসিন ট্রায়াল না দেয়ার কথা কি আমি বলেছি কোথাও? আপনার বিস্তারিত লেখার অপেক্ষায় থাকলাম।
কলকাতার ট্রায়াল নিয়ে পোস্টে এবং অন্যান্য মন্তব্যে বলেছি।
কৌস্তুভ, সমীচীন হবে না কেন, বুঝতে পারলাম না। ভারতীয় না হলে, ব্রিটিশ বা আমেরিকান হলে এ লেখাটা কি অন্যভাবে লেখার প্রয়োজন পড়তো? নিশ্চয়ই না। উৎসের কথা ভুলে গিয়ে ভাবলেই ভালো।
তাছাড়া, ভ্যাকসিনের সমালোচনা করার প্রয়োজন নেই। এটির ট্রায়ালের প্রকৃয়া নিয়ে লিখতে পারেন। সেটাই বোধহয় পিপিদা বলেছেন।
যুধিষ্ঠির ভাই ঠিক ধরেছেন। আপনি আমার কথাগুলোই বলে দিলেন। আমি আসলে ভ্যাকসিন নিয়ে কিছু আশা করিনি, কারণ সেটা (সম্ভবত) কৌস্তুভ, এবং নিশ্চিতভাবেই আমার জ্ঞানের বাইরে। ট্রায়াল নিয়ে আমার সামান্য জানাশোনা আছে, কৌস্তুভ হয়তো এসব নিয়েই কাজ করে-- তাই আবাদার করেছিলাম আরকি।
কৌস্তুভ দাদা, আপনাকে ফাঁসাবো কেন? আপনি এসব নিয়ে কাজ করেন ধারণা করেই এমন আবদার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল এথিক্যাল নিয়ম মেনে করলে আমার আপত্তি নেই। তবে আমাদের সরকার এসব বিষয়ে নজর দিয়েছে কিনা সেটা তো এখন দেখার উপায় নেই।
লেখাটি দেয়ার ফলে হয়তো কর্তৃপক্ষ নড়েচড়ে বসবে। সেজন্য লেখককে আমার সালাম।
ফেসবুকে লিঙ্ক শেয়ার করলাম। আপনারাও করুন প্লিজ।
অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ পোষ্ট। এমন বিষয়ে গণসচেতনতা সৃষ্টি হওয়া জরুরী।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
এই লেখাটা যত বেশি মানুষের কাছে পৌছানো সম্ভব সেটার চেষ্টা করি সবাই।
লেখাটি সবাই ছড়িয়ে দিন।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
পরিচিত এক জুনিয়র ছেলে মিরপুরে আইসিডিডিআরবির এক কলেরা প্রকল্পে কাজ করছে শুনছিলাম লেখাটা পড়ার পর বুঝলাম এইটাই সেইটা। আর যুধিষ্ঠির'দা কে ধন্যবাদ এই লেখাটার জন্য।
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি
সবাইকে অনুরোধ করছি লেখাটি ছড়িয়ে দিতে
আর যুধিষ্ঠিরদাকে
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
সরকার এবং সংশ্লিষ্টরা এ ব্যাপারে বিবৃতি কিভাবে না দেয় আমি বুঝি না। এটা কি আমাদের দেশীয় উদ্যোগ না বাইরের উদ্যোগ, এই উদ্যোগে আমাদের কি স্টেক, ভ্যাকসিন গ্রহণকারীরা জানে কিনা যে তারা একটি ক্লিনিকাল ট্রায়ালে জড়িত, এগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমার ক্ষুদ্র মাথা থেকে যা বুঝি, গ্রহিতাদের অজ্ঞাতে, তাদের অংশগ্রহণের ব্যাপারে সজ্ঞানে স্বাক্ষরিত স্বীকারোক্তি ছাড়া আইনত এই উদ্যোগ বি-রা-ট বিপদের মুখে আছে। বাংলাদেশের মিরপুরের একটা নাগরিকের অধিকার আমেরিকার সিয়াটলের একটা নাগরিকের চেয়ে কোনো অংশে কম না! সো ইট বেটার বি গুড!
গুড জব ধর্ম্মপুত্র! লেখাটার জন্য অপেক্ষায় ছিলাম।
বেশ কিছু ঘটনায় আমি অনলাইন মিডিয়া, ব্লগ এ'সবের শক্তিতে বিশ্বাস করি। আমি আশা করি এটা নিয়ে আমরা সবাই নানা ফোরামে, নানা ধরনের মিডিয়ায় আমাদের সাধ্যমত আলোচনা করে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তাদের বক্তব্য ও প্রকৃত সত্যটা বের করতে সক্ষম হবো।
আমাদের সরকার (তা যে-ই ক্ষমতায় থাকুক) সাধারণতঃ তাদের নেয়া সিদ্ধান্তের ব্যাপারে জনগণের কী প্রতিক্রিয়া তা জানতে আর সেই অনুযায়ী প্রতিক্রিয়া দেখাতে বেশ অনাগ্রহী থাকে। সরকারের কাছে মাথাবেচা বুদ্ধিজীবীর দল সরকারের কাজের নূন্যতম সমালোচনাকে দেশের বিরূদ্ধে ষড়যন্ত্র, গণতন্ত্র নস্যাতের চেষ্টা, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকানোর চেষ্টা হিসাবে দেখাতে কোমর বেঁধে নামে। আশার কথা এই যে, স্বাধীন অনলাইন মিডিয়ায় এখনো আত্মা বিক্রি না করে দেয়া মানুষেরা আছে। এই মানুষেরা এই ঘটনাতেও দেশের মানুষের স্বার্থবিরোধী কিছু হয়ে থাকলে তা সর্বশক্তি দিয়ে ঠেকাবে বলে বিশ্বাস করি।
১। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে, আইসিডিডিআর,বি'র কাছে ও সিটি কর্পোরেশনের কাছে পৃথক পৃথক চিঠির মাধ্যমে এই ব্যাপারে তাদের ব্যাখ্যা জানতে চাওয়া হোক। সরকারের নতুন তথ্য জানার নীতি অনুসারে এটা আমাদেরকে জানানো তাদের কর্তব্যের মধ্যে পড়বে।
২। এই ব্যাপারে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে চিঠি দিয়ে বিস্তারিত জানতে চাওয়া হোক। যেন তারা বলতে না পারে - "আমাদেরকে কিছু জিজ্ঞেস না করে আমাদের বিরূদ্ধে বিষোদগার করা হচ্ছে"।
৩। যাদের ব্রাহ্মণমাধ্যমে যাতায়ত আছে তারা সেখানে এটা নিয়ে লিখতে/বলতে পারেন।
৪। ফেসবুক, টুইটার ইত্যাদি সোশাল নেটওয়ার্কে এই লেখাটার লিঙ্ক শেয়ার করুন।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
ব্যাপার টা নিঃসন্দেহে দৃষ্টি আকর্ষক। কিন্তু, লেখক এর কয়েকটা পয়েন্টে আমার দ্বিমত আছে -
১। icddrb প্রতি টা মানুষ কে টীকা দেওয়ার আগে অনুমতি চেয়ে নেয়। যারা প্রকল্পে অংশগ্রহণ করতে চায়, তাদের কে পুরো বিষয় টা বুঝিয়ে বলা হয়। তারা রাজি হলেই শুধুমাত্র তাদের কে প্রকল্পে নেয়া হয়। প্রতিটা সাবজেক্ট এর জন্য আলাদা নথি রাখা হয়।
২। dukoral প্রকল্পে যারা অংশগ্রহণ করেছিল, তাদের কে ১০ বছর পর্যন্ত পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখার জন্য।
৩। আমার জানা মতে booster dose প্রয়োগ এর সার্থকতা সন্তোষজনক। প্রথম dose এর সময় সাবজেক্ট কে বুঝিয়ে বলা হয় কখন কখন আবার আসতে হবে।
৪। প্রথম ২ dose এর মধ্যে ১৫ দিনের বিরতি, এই জন্য এটা কে জরুরি পরিস্থিতিতে কম কার্যকর বলে যে মন্তব্য করেছেন লেখক, তার আলোকে মনে করিয়ে দিতে চাই যে টীকার মুল উদ্দেশ্য জরুরি পরিস্থিতি নয়, আগে থেকে শরীরে রোগ প্রতিরোধ গড়ে তোলা। শিশু দের এই জন্যই শিশুবেলায় টীকা দেয়া হয়, রোগ হওয়ার পর নয়।
আমি ফেরদৌসি কাদরি আপার ল্যাব এ ৪ মাস রিসার্চ করেছিলাম ২০০৯ এ। আমি মিরপুর এ icddrb এর কেন্দ্রেও গিয়েছিলাম, মিরপুর বস্তি তে গিয়েছিলাম, dukoral এর সাবজেক্ট দের সাথে কথাও হয়েছিল। মিরপুর বস্তিবাসীদের সবার কাছে icddrb অনেক বড় কিছু, অনেক আশার উৎস। আর icddrb এর মাঠকর্মীরাও আমাদের কে মুগ্ধ করেছিল। সাবজেক্ট দের প্রতি তাদের মমতা খাঁটিই মনে হয়েছিল!
আমি এই লেখা কে সমর্থন জানাই, লেখক কে ধন্যবাদ বিষয়টি তুলে আনার জন্য। অনৈতিক ভাবে যেন কোন গবেষণা না হয়।
মুসা
গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টস!!
পলিস্যাকারাইড (polysaccharide) বেইসড ভ্যাকসিনে (এই কলেরা ভ্যাকসিনের মত) বুষ্টার ডোজ মাস্ট, কারণ এই জাতীয় ভ্যাকসিন প্রোটিন বেইসড ভ্যাকসিনের মত স্ট্রং ইমিউনোজেনিক (immunogenic) না।
আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
১. আড়াই লাখ লোকের অনুমতি কিভাবে এবং কতদিন ধরে যোগাড় করা হলো? এত বড় একটা কাজ কিভাবে কোন সাড়াশব্দ না করে করা হলো? আমি যতটুকু বুঝি, এই ভ্যাকসিন ট্রায়ালের বেশির ভাগ লোকই অল্পশিক্ষিত বা অশিক্ষিত হবার সম্ভাবনা বেশি। তাদেরকে কি বুঝিয়ে বলা হয়, আর কিভাবে তাদের অনুমতি নেয়া হয়, সে বিষয়টি আমি জানতে আগ্রহী। আমি মনে করি এই প্রকৃয়াটি অত্যন্ত স্বচ্ছ, এবং প্রকাশ্য হওয়া উচিৎ। এটি আইসিডিডিআর,বি এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েব সাইটে সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত হওয়া উচিৎ। যতরেখে-ঢেকে রাখতে চেষ্টা করা হবে, ততই প্রশ্ন বাড়বে। ভ্যাকসিন রিসার্চ এথিকস কোডে একটা কথা বলা আছে, একটা বড় জনগোষ্ঠীর ক্ষেত্রে জননেতারা একটা সার্বিক অনুমতি দিতে পারেন সবার পক্ষা থেকে। বাংলাদেশে এই পদ্ধতিতে একটা বড় ফাঁকি থেকে যায়, কারণ আমাদের নেতারা সহজেই বিকিয়ে যান।
২. Dukoral প্রকল্প নিয়েও উপরের পর্যবেক্ষণ/সন্দেহ/প্রশ্নগুলো থাকবে।
৩. বুস্টার ডোজ বাংলাদেশে অন্যান্য টীকা কর্মসূচীতেও ব্যবহার করা হয়েছে, আপনার পয়েণ্টটিতে একমত হতে সমস্যা নেই। তবে বুস্টার ডোজ প্রয়োজন হয় না এমন ভ্যাকসিনের কদর অবশ্যই বেশি হবে।
৪. দেখুন, আমি এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ নই, তাই উপরের বেশির ভাগ মন্তব্যই আসলে ঠিক আমার নয়। রেফারেন্সগুলো দেখলেই বুঝবেন। জরুরী পরিস্থিতিতে কার্যকারিতা নিয়ে মন্তব্যটিও বিশেষজ্ঞদের, সেটি ৩ নম্বর রেফারেন্স-এ পাবেন, আমি আগে উল্লেখ করতে ভুলে গিয়েছিলাম। এখানে জরুরী পরিস্থিতির কার্যকারিতা নিয়ে যে তথ্য এসেছে, সেটি এই ভ্যাকসিনটির নির্মাতা বা প্রচারকদের কার্যক্রমের কারণেই। এই ভ্যাকসিন মার্কেটিং করার ক্ষেত্রে হাইতির জরুরী অবস্থার উদাহরণ টানা হয়েছে। তারা পাকিস্তানে জরুরী অবস্থায় এটি প্রয়োগের চেষ্টা চালিয়েছেন, যখন লক্ষ লক্ষ লোক ঘর-বাড়ি ছেড়ে উদ্বাস্তু বা ভাসমান অবস্থায় ছিলো। সে সময় পনেরো দিনের ব্যবধানে ২য় ডোজের জন্য একই মানুষকে আবার খুঁজে পাওয়া একটা অবাস্তব ব্যাপার হতো।
আইসিডিডিআর,বি, এর বিজ্ঞানী বা মাঠকর্মীদের মমতা নিয়ে আমার সন্দেহ নেই। আমি আমার লেখাতেই বলেছি তারা বাংলাদেশে স্বার্থকভাবে কলেরা বা ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণ করেছেন। যাদের আমি বিশ্বাস করি না তারা হলো বহুজাতিক ওষুধ বা ভ্যাকসিন কোম্প্যানী। এদের ট্র্যাক রেকর্ড সুবিধার না কখনোই। তারা এ ধরনের মমতাবান মানুষদের আবেগকে পুঁজি করেই ব্যবসা করে খাচ্ছে।
আপনার মত যারা এ ধরনের প্রকল্পে কাজ করেছেন, তাদের এ ব্যাপারে আরও সশব্দ হওয়াটা জরুরী। আপনার এ ব্যাপারটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানা থাকলে, আর আপনার সরাসরি কাজের যে অভিজ্ঞতা আছে, আমাদের সাথে সেগুলো শেয়ার করবেন আশা করি। বিশেষ করে Dukoral ট্রায়ালের সাবজেক্টের সাথে আপনার ইণ্টার্যাকশনের কথা জানতে আমি খুবই আগ্রহী।
ধন্যবাদ আমার মতামত কে যথার্থ মূল্যায়ন করার জন্য।
আমি আমার অভিজ্ঞতার আলোকে আমার দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরার চেষ্টা করছি। আমি এখন আর কাদরি আপার ল্যাব এর সাথে সম্পৃক্ত নই, তাই আমার এই মতের কোন পুঁথিগত ভিত্তি নেই। আমি কাজ করতাম টাইফয়েড নিয়ে, তবে ল্যাব এর গবেষক হিশেবে dukoral সম্পর্কে প্রাথমিক জ্ঞান আমাদের দেয়া হয়েছিল।
আড়াই লাখ সাবজেক্ট একটি লক্ষ্যমাত্রা মাত্র - এই আড়াই লাখ মানুষ পূর্ব নির্ধারিত না। ২০০৯ এ যখন আমরা মিরপুর বস্তি পরিদর্শন এ যাই, তখন জানতে পারি মিরপুর বস্তিতে ১০ লাখ মানুষ থাকে। তাদের মধ্যে থেকে আড়াই লাখ উৎসাহী মানুষের উপর এই গবেষণা চালানো হবে। যত গরিব আর অশিক্ষিতই হোক এই মানুষগুলো, ২ টি শব্দের সাথে তারা পরিচিত - ডাইরিয়া এবং টীকা। এতেই তারা বুঝে কি করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আর মাত্র ২৫% সাবজেক্ট যোগাড় করার জন্য মিথ্যার বা কোন গোপনীয়তার আশ্রয় নিতে হয় না, যেখানে এই গবেষণার জন্য বয়স কোন ফ্যাক্টর না। যখন বস্তিতে খবর দেয়া হয় যে এই টীকা নিলে ডাইরিয়ার প্রকপ কমতে পারে, তারাই উৎসাহী হয়। dukoral এর সময় আমি সাবজেক্টের নথি দেখেছি, তাদের কে মোটামুটি যথেষ্টই জানানো হয় যে তারা কেন টীকা নিচ্ছে এবং এর ফলাফল কি হতে পারে।
আমি এই গবেষণার ব্যাপার গুলো এত পাবলিক বা প্রকাশ্য করার ব্যাপারে পক্ষপাতি নই, বিশেষকরে বাংলাদেশ এর যে রাজনৈতিক রীতি! তা করতে গেলে দেখা যাবে সরকারি আর বিরোধী দলের কামড়াকামড়িতে গবেশনাই বন্ধ হয়ে যাবে, যা ঘটে আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবগুলোয়! তবে কোন গোষটি যদি যথাযথ প্রক্রিয়ায় বিস্তারিত জানতে চায়, আমি নিশ্চিত icddrb এর তা প্রকাশ করতে কোন সমস্যা থাকবে না। আমি বর্তমানে কানাডায় বায়োলজিতে পিএইচডি করছি, এখানেও কোন ট্রায়ালে ঢালাও করে কিছু প্রকাশ করা হয় বলে আমার জানা নেই - বিশেষ করে সাবজেক্ট সিলেকশন এর মত প্রাথমিক বিষয়গুলো। আমি ভুল জানতে পারি, সংশোধনী আমন্ত্রিত। আমি জানি কানাডা আর বাংলাদেশের অনেক পার্থক্য, কিন্তু icddrb একটি আন্তর্জাতিক গবেষণাকেন্দ্র, এবং তারা সেই ষ্ট্যাণ্ডার্ড রক্ষা করে।
আমি মাঠকর্মী দের মমতা সম্পর্কে আরেকটু বলতে চাই। লক্ষ্য করবেন, আমি বিজ্ঞানীদের কথা এখানে বলছি না। তারা ল্যাবেই থাকেন, বস্তিবাসী তাদের থোরাই চেনে! কিন্তু মাঠকর্মীরা যেন বস্তিবাসীদের পরম বন্ধু! আমরা ঘুরে ঘুরে অনেকগুলো ঘরে যাই, সব ঘরেই কর্মীদের খুব সমাদর দেখলাম! কর্মীরাও সব সাবজেক্ট ও তাদের পরিবারকে চেনে! এক ঘরে গৃহিণী মাঠকর্মী কে নালিশ করে "আপা আমার পুলাটা ইশকুলে যাইতে চায় না, ওরে একটা ধমকি দিয়া জান"! আরেক ঘরে আমাদের দেখেই বাবা মাঠকর্মীর কাছ থেকে জেনে নিল যে তার বাচ্চার শরির ভাল না, কি করা উচিত! ওরা আসলেই এদেরকে অনেক আপন করে দেখে, আর খুশি লেগেছিল এটা দেখে যে ভালবাসাটা দ্বিপাক্ষিক - icddrb কর্মীরাও ওদের মন থেকেই সাহায্য করে। উল্লেখ্য, যাদের সাথে দেখা করেছিলাম, তারা সবাই-ই dukoral এর সাবজেক্ট, আর তাদের সাথে icddrb এর বন্ধুতাটাও এই সূত্রেই।
আমার মনে হয় আপনার লেখার মূল বিষয়টি হওয়া উচিত এই ভাক্সিনের কার্যকারিতা আর ট্রায়ালটা বাংলাদেশে চালানোর যৌক্তিকতা এবং তার পিছনে কোন বিশেষ মহলের উদ্দেশ্য আছে কিনা সেটা হওয়া। কিভাবে ও কি প্রক্রিয়ায় ট্রায়াল চালানো হচ্ছে - এটার চাইতে এই ট্রায়াল আদৌ কার্যকারী আর যৌক্তিক কিনা, সেটাই মূল প্রশ্ন। icddrb এর প্রক্রিয়া সম্পর্কে আমার সরাসরি অভিজ্ঞতা শেয়ার করাই আমার কমেন্টের উদ্দেশ্য ছিল।
আসলে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতাও এ লেখার মূল বিষয় না। মূল বিষয় আপনি ঠিকই বলেছেন, এটা বাংলাদেশে চালানোর যৌক্তিকতা, ঐবং তথ্য গোপন রাখা।
গোপনে গবেষণা করে, তথ্য শেয়ার না করে মানুষের বেশি উপকার করাই ভালো, এটা বোধহয় God Complex এর কাছাকাছি মতবাদ। আজকের উন্মুক্ত তথ্য আর সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে এই কনসেপ্ট বোধহয় খাটে না।
আমেরিকাতে মার্কিন সরকারের পক্ষ থেকে clinicaltrials.gov ওয়েব সাইটে আমেরিকার এবং পৃথিবীর নানা দেশের ট্রায়ালের বিস্তারিত থাকে, হ্যাঁ, সাবজেক্ট নির্বাচনের বিস্তারিতও পাবেন এখানে। আইসিডিডিআর,বি-র অনেক ট্রায়াল এখানে তালিকায় পাবেন, শুধু বর্তমানেরটি ছাড়া।
ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল নিয়ে তথ্য প্রকাশের বাধ্যবাধকতা নিয়ে চিন্তা করছিলাম। লুকোচুরি করে ’মঙ্গল’ করার স্কোপ তো দেখা যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে একেবারেই নেই, যেভাবে বিশেষ ওয়েবসাইট ক’রে তারা তথ্য জানাচ্ছে। এই বাধ্যবাধকতা আমাদের দেশেও থাকা উচিত। তাছাড়া জননেতা মত দিলেই হয়ে যায়, এই ব্যাপারটা পরিবর্তন করা দরকার। আমি একজন নাগরিক হিসেবে আমার নির্বাচিত নেতাকেও আমার স্বাস্থ্যের উপর পরীক্ষা চালানোর কনসেন্ট দেবার ক্ষমতা দিতে রাজী নই।
আমিও ব্যাপারটাতে রাজী নই। তবে জননেতার মত দেয়াটা কোন আইন নয়। এটা মোটামুটি অনেকগুলো সংগঠনের মেনে নেয়া একটা নর্ম। কারণ, আড়াই লক্ষ মানুষের ইনফরমড কনসেণ্ট নেয়াটা প্র্যাকটিক্যাল হয় না অনেক ক্ষেত্রেই (এজন্যই উপরে একজন যে দাবী করলেন সেটা শুনে আমি খুবই আগ্রহী জানতে যে আইসিডিডিআর,বি কিভাবে এটা করেছে, ঠিক কি ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে এগুলো মানুষকে বুঝাতে, আর কিভাবে এই তথ্য সংরক্ষণ করা হচ্ছে)। তাছাড়া অনেক ক্ষেত্রে একটা জনগোষ্ঠী এরকম একটা নর্ম মেনে নেয়, যদিও সেটা শিক্ষা বা সামাজিক ব্যবস্থা উপরে নির্ভর করে ("মৌলানা সাহেব যা কইবেন আমরা তাতেই রাজী" - এই টাইপের ব্যাপার আর কি)। সেক্ষেত্রে আপনার-আমার অনেক ক্ষেত্রেই কিছু করার থাকে না।
ঘটনাতো ভয়াবহ। এই ব্যাপারে আমাদের সরকার বাহাদুরের ভূমিকা কি? উনারা কি দেখেও দেখছেন না? নাকি উনাদের সম্মতি আছে বা কিছু?
কন্সট্যান্ট গার্ডেনারে কেনিয়ার সেই বস্তির কথা মনে পড়ল। বাংলাদেশের মানুষ এখানে যে গিনিপিগ তাতে কোনো সন্দেহ নাই। কোনো দেশের সরকারই চায় না তার নাগরিকদের গিনিপিগ বানাতে, তা সে যত মহৎ প্রজেক্টই হোক না কেন। আর এত বড় আকারে তো নয়ই। বোঝা গেলো পাকিদেরও অন্তত যেটুকু মেরুদণ্ড আছে, আমাদের সরকারগুলির ততটুকু মেরুদণ্ড বা বোধশক্তিও নাই।
এগজ্যাক্টলি। আমারও কনস্ট্যাণ্ট গার্ডেনারের কথাই মনে হয়েছিলো প্রথম।
যদি আমাদের আশংকা সত্যি হয় তবে বাংলাদেশের সরকার তার নাগরিকদের অধিকার, সুরক্ষা, তথ্য অধিকার ইত্যাদি বিষয় সমূহের চুড়ান্ত লংঘন করে মিরপুরে এই প্রকল্পের প্রথম দফার আওতাধীন ১ লক্ষ ৬৫ হাজার মানুষের সাথে রীতিমত গিনিপিগের মতই আচরণ করেছে। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের নাগরিক হয়ে আমার তথ্য জানার অধিকার আছে - সেই অধিকার বলে আমরা এই প্রকল্পটির সকল গুমোঢ় জানতে চাই। আর সেই সাথে বিল গেইটস ফাউণ্ডেশন অনুদানে চালিত এই প্রকল্পের বাস্তবায়ন কেন পর্যাপ্ত মানুষ, পরিবেশ ও প্রায়োগিক উপযুক্ততা থাকা সত্ত্বেও ঔষধ নির্মাতা দেশ প্রতিবেশী ভারতে হলো না তার কারণ জানতে চাই।
পুরো বিষয়টিতে আমাদের আশংকায় আমরা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের "সার্বভৌমত্ব"-কে আরেকবার প্রশ্নবিদ্ধ করলাম। সেই সাথে বলতে চাই এই রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রের সরকার কোন ভাবেই জনকল্যাণমূখী নয়। বেনিয়া স্বার্থ হাসিলের জন্য নিজ নাগরিকদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা বিপন্ন করতে এদের এক মূহুর্ত ভাবতে হয় না।
Just to point out something - there was a Shanchol trial in Kolkata which started in 2006 that includes 66 900 participants aged >1 year and the trial is still going on. An interim analysis showed that 2 doses of Shanchol induced an overall protective efficacy of 67% against confirmed cholera. Ref - WHO position paper on cholera vaccines, March 2010 (Link - http://www.who.int/immunization/Cholera_PP_Accomp_letter__Mar_10_2010.pdf). So this is not only being conducted in Bangladesh.
Also, vaccines are meant to be preventive - not a cure. So it is required that any vaccine study must be done in populations at high risk and the inhabitants of the Ganges delta (aka West Bengal and Bangladesh). And as far as I understand, "informed consent" has been obtained from the participants of the study and the reason why the inhabitants of Mirpur have not been pre-informed of this study's details is because it is a randomized double-blind study (Ref - http://clinicaltrials.gov/ct2/show/NCT01042951). There is a whole another debate about double blind studies and the ethics of using placebo on high risk participants of a study, but that should be postponed for another time.
It is not necessarily a conspiracy or a bad thing that this trial is taking place in Bangladesh since this vaccine is low-cost and has proved a minimum 60% efficacy with initial 2 doses. While it is true that WHO does recommend only using vaccines as an additional tool with the main weapon against cholera being proper sanitation and infrastructure, it only shows the failures of the two oscillating govt./regimes we have suffered so far, especially because this vaccine probably would not even be needed if we had clean water and proper sanitation in the slums.
But it is very surprising that this did not get as much local coverage as it did in the international news, especially with the involvement of ICDDRB, WHO and Gates Foundation.
Thank you for bringing this news to my attention!
- Nafis
PS - Banglatei likhtam, kintu library-r pc-te avro install kora nai ebong korteo dey na
সচলে লিখতে গেলে অভ্র ইনস্টল করতে হবে না কিন্তু। কমেন্ট বক্সে দেখবেন "অ" লেখা একটা বাটন আছে, ওখানে গিয়ে ফোনেটিক বেছে নিয়ে বাংলা লিখতে পারবেন। আর আপনার মন্তব্য মডারেশন কিউ ঘুরে আসবে, তাই কমেন্ট করার পর একটু অপেক্ষা করতে হবে। এক মন্তব্য একাধিকবার করার প্রয়োজন নেই।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
কলকাতায় যে ট্রায়ালের কথা বলছেন , সেটি আসলে ফেজ-থ্রী ট্রায়াল। এটি এক বছর আগের WHO-এর পজিশন পেপারে বলা হয়েছে চলছে, আসলে এখনও এটি চলছে কি না সে ব্যাপারে কোন তথ্য আমি পাইনি। তবে এর অন্তর্বর্তী ফলাফল এর মধ্যেই প্রকাশ করা হয়েছে, যেটা নিয়ে পরে বলছি। এটুকু মোটামুটি বোঝা যায় যে যে এই ট্রায়ালটি ৬৬০০০-৭০০০০ লোকের উপরে চালানো হয়েছে। নতুন কোন সাবজেক্ট আর নেয়া হচ্ছে না, তবে এই ৭০ হাজার মানুষ এখনো পরীক্ষাধীন আছে। অনুমান করছি সে কারণেই এটিকে এখনও চলমান ট্রায়াল বলা যেতে পারে। তাহলে নতুন প্রশ্ন আসে, সেই ট্রায়াল শেষ হবার আগেই বাংলাদেশে তার তিন গুন বড় আকারের একটি ট্রায়ালের প্রয়োজন পড়লো কেন? এবং সে প্রয়োজনটি কোথাও ব্যাখ্যা করা হয়নি কেন?
বাংলাদেশে যে কোন পর্যায়ের ট্রায়াল চলছে সেটি আমি জানতে পারিনি। আপনি যে রেফারেন্সটি দিয়েছেন, খেয়াল করে দেখবেন সেটি বাংলাদেশে বর্তমানে যে ট্রায়ালটি হচ্ছে, সেটি নয়। এটি ২০১০-এ করা একটা স্টাডি, যেখানে মাত্র ৩৩০ জন সাবজেক্ট হিসেবে ছিলো। সেটিও মীরপুরে হয়েছিলো, মনে হচ্ছে সে খবরটা প্রথম আলো ২০০৯-এ ছাপিয়েছিলো। মনে হচ্ছে এটি বর্তমাণ স্টাডিটির প্রি-কার্সর ছিলো। সেটির ফলাফল কি, সেটা কোথাও খুঁজে পাইনি। তাছাড়া এটাও উল্লেখ করার মত, বর্তমানের ট্রায়ালটি clinicaltrials.gov তে তালিকাবদ্ধ নেই, যেখানে পথিবীর প্রায় সব ট্রায়ালের খোঁজই থাকে।
উইকিপিডিয়া থেকে জানতে পারছি, ফেজ-থ্রী ট্রায়াল একটার বেশি করা হতে পারে। এর পরের ধাপ হলো ফেজ-ফোর ট্রায়াল, যেটি করা হয় শুধুমাত্র ভ্যাকসিন বাজারজাতকরণের অনুমতি পেলেই। সেটি যেহেতু এখনও পাওয়া যায় নি, তাহলে এটা ধরে নেয়া যেতে পারে যে বাংলাদেশে যেটি হচ্ছে, সেটিও আসলে ফেজ-থ্রী ট্রায়াল। এটুকু বুঝতে পারছি যে এটি কলকাতার ফেজ-থ্রী ট্রায়াল থেকে আলাদা। আসল সত্য যেটিই হোক না কেন, এতে আসলে আমার প্রশ্নটির উত্তর পাওয়া যায় না যে ভারতে কেন এই আকারের বড় ট্রায়ালটি হল না।
গাঙ্গেয় উপত্যকায় কলেরার ট্রায়ালের যৌক্তিকতা আছে স্বীকার করি। ধরুন, যদি ভ্যাকসিনটির নির্মাতা আমেরিকা হতো, সেক্ষেত্রে এই ট্রায়াল করতে তারা ভারত, হাইতি বা বাংলাদেশে যেতো, সেটি খুব বেশি অস্বাভাবিক হত না। কিন্তু নিজ দেশে বড় মাপের ট্রায়ালের উপযোগী জায়গা এবং অসংখ্য সাবজেক্ট থাকার পরেও অন্য দেশে ট্রায়াল করা হয় তাহলে প্রশ্ন উত্থাপন হবেই, বিশেষ করে যদি মূলধারার মিডিয়া থেকে বিষয়টি লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয়।
তারপরও বাংলাদেশের ট্রায়াল হবার ব্যাপারটি "is not necessarily a conspiracy or a bad thing" - আপনার এই বক্তব্যের সাথে আমি একমত। এক্ষেত্রে তথ্য যত উন্মুক্ত করা হবে, অযথা সন্দেহ বা এ ধরনের ব্লগ লেখার প্রয়োজন তত কমে আসবে। তবে, একটা তথ্য দেই। আশির দশকে শেষভাগে ভিয়েতনামের VA Biotec কলেরার আরেকটি সস্তা ভ্যাকসিন বের করেছিলো। এটি তৈরীতে সাহায্য করেছি সুইডিশ সরকার, Dukoral এর উদ্ভাবকদের সহায়তায়। এটি এ পর্যন্ত ভিয়েতনামে ২০ মিলিয়ন শিশুর উপরে স্বার্থকভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে ১ । কলকাতার ফেজ-থ্রী ট্রায়ালের অন্তর্বর্তী ফলাফল থেকে জানা গেছে, ShanChol এর কার্যকারিতা ভিয়েতনামের এই ভ্যাকসিনের সমপর্যায়ের (৬৭%) ১ রেফারেন্স)। যে ভ্যাকসিন ২০ মিলিয়ন শিশুর উপরে ইতিমধ্যে পরীক্ষিত, সেটি ব্যবহার না করে একটা নতুন ভ্যাকসিনের ট্রায়ালে আমাদের দেশের লোককে কেন অংশগ্রহণ করতে হবে বলতে পারেন?
পাদটীকা
আরেকটা কথা বলতে ভুলে গিয়েছিলাম, ডাবল-ব্লাইণ্ড স্টাডি আর প্ল্যাসিবোর ব্যবহার নিয়ে সময় পেলে কিছু লিখবেন আশা করি, এটা সবার জানা জরুরী।
লেখাটির জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ। নিচের লিংকগুলো আগ্রহী হলে খতিয়ে দেখতে পারেন। আইসিডিডিআরবির তত্ত্বাবধানে এমন ফিল্ড ট্রায়াল আমাদের দেশে আগেও অনেক বার হয়েছে যেগুলো ভয়াবহভাবে বায়োএথিকস্, লঙ্ঘণ করে।
The politics of colera research in Bangladesh, http://ir.lib.sfu.ca/bitstream/1892/9273/1/etd2971.pdf
Akhter, Farida (1986). International Centre for Diarrhoeal Disease Research, Bangladesh. The Hygeia, 2:5-12.
Mahmood Ali (2005). ICDDR,B's procurement of the Independence Day Award - an insult to the martyrs in the War of Liberation of Bangladesh. Meghbarta: Online Forum for Activism. Retrieved 7 February 2010 from http://www.meghbarta.org/nws/nw_main_p02b.php?issueId=6§ionId=14&articleId=65
Ali, Mahmood (2006). ICDDR,B Develops a Performance Enhancing Drink for the US Military in Iraq. Meghbarta: Online Forum for Activism. Retrieved 7 February 2010 from http://www.meghbarta.org/nws/nw_main_p01b.php?issueId=6§ionId=30&articleId=146.
Ali, Mahmood (2010). What is for ICDDR,B? thepeoplesvoice.org: News and Viewpoints. Retrieved 7 February 2010 from http://www.thepeoplesvoice.org/TPV3/Voices.php/2010/01/01/what-is-for-the-icddr-b.
জনাব ইয়াংসি,
আপনার লিংকগুলো খতিয়ে দেখলাম। খালি সূত্র নং ২ আমি পড়তে পারি নাই Akhter, Farida (1986). International Centre for Diarrhoeal Disease Research, Bangladesh. The Hygeia, 2:5-12.
আপনার মতে
১ নং বাদে কোন লেখাই আপনার বক্তব্যকে সমর্থন করে না। ১ নং লিংক নিয়ে কথা বলি।
Simon Fraser University এর তকমা আঁটা গবেষক ১০০ পাতার প্রবন্ধ লিখেছে ICDDR,B নিয়ে। যেখানে পুরোটাই নৃ-তাত্ত্বিক আলোচনা। কোন পরিসংখ্যান বা বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ নেই। এই ১০০ পাতার প্রবন্ধে মূল আলোচনা দশ পাতারও কম। গবেষক বেবি ট্যাক্সি নিয়ে ICDDR,B খুঁজে বের করেছেন এমন ব্যক্তিগত তথ্যে প্রবন্ধ ভরপুর। কেইস স্টাডি ও মৌখিক বয়ানের উপর ভিত্তি করে কেউ এ্যাত্ত বড় থিসিস ফেঁদে বসতে পারে তা বিশ্বাস করা শক্ত। কোন দৈনিক পত্রিকার বিনোদন পাতায় এর থেকে মান সম্মত লেখা ছাপা হয়।
৩ ও ৪ নং লিংক মেঘবার্তা নামক অনলাইন ম্যাগাজিনের/ ফোরামের আর্টিকেল। এই ফোরামে প্রকাশিত লেখাগুলোর মান রাজনৈতিক অবস্থানপ্রসূত ও নিম্নমানের। লেখাগুলোর কিছু অংশ আবার একটা আরেকটার কপি পেস্ট।
Ali, Mahmood তার লেখা আর্টিকেলগুলোতে ICDDR,B কে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন -
The International Centre for Diarrhoeal Disease Research, Bangladesh (ICDDR,B), is the continuation of the Cholera Research Laboratory (CRL), originally established in 1960 as a result of the military alliance between Pakistan and USA under the umbrella of the South Asian Treaty Organization (SEATO).
উনি ICDDR,B এর ওয়েবসাইটে গিয়ে ABOUT US অংশটি পড়েও দেখেননি।
এছাড়াও উনি বারবার দাবী করেছেন যে ICDDR,B যুক্তরাষ্ট্রের পরিচালিত প্রতিষ্ঠান। ইজরায়েলের তল্পিবাহক। কিন্তু কোন যুক্তি দেখান নাই। ICDDR,B সম্পর্কে এক জায়গায় বলেছেন -
it is engaged in activities which have little to do with the diarrhoeal problem of the people of Bangladesh.
এই কথাটা উদ্ভট।
৫ নং লিংক কাজ করে না।
-------------------------------------------
এরকম একটা শ্রমলব্ধ পোস্টে আপনার মন্তব্য আমার চোখে অপ্রাসঙ্গিক ও প্রয়োজনীয়।
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
>> উনি ICDDR,B এর ওয়েবসাইটে গিয়ে ABOUT US অংশটি পড়েও দেখেননি
আইসিডিডিআরডি নিশ্চয় নিজের সুনাম নষ্ট করে এমন কিছু নিজের ওয়েবসাইটে লিখবে না। নিচের লিঙ্কগুলো দেখবার অনুরোধ জানাচ্ছি (যেহেতু বাংলাদেশি লেখক/ গবেষকদের লেখা আপনার কাছে যথেষ্ট নির্ভরযোগ্য মনে হচ্ছে না)
>> http://profiles.nlm.nih.gov/VV/Views/Exhibit/narrative/retirement.html
চুম্বক অংশঃ In the summer of 1960, Dr. Joseph Smadel asked Soper to establish the administrative machinery for a Cholera Research Laboratory being planned for Pakistan. Cholera had appeared in Thailand in 1958, after a relatively quiet decade, and spread rapidly through the country, threatening several of the countries that were members of the South East Asia Treaty Organization [SEATO]. The U. S. had sent a technical commission to Southeast Asia expecting to recommend collaboration in a cholera research program in Thailand. The commission found Pakistan, where cholera is permanently endemic, more suitable for long-term studies, and recommended basing the laboratory in East Pakistan (now Bangladesh). An agreement was drafted, providing U.S. collaboration (and funding) on the project for the first 3 years, and the U.S. had begun sending out personnel, materials, and lab equipment to set up the cholera lab at the public health institute in Dacca. Soper was to get the project up and running, and establish a basis for its long term administration. He arrived in Dacca in early 1961 and spent several months arranging for basic necessities such as typewriters and office furnishings, and wrestling with the local bureaucracy. These troubles, plus jurisdictional squabbles between American and Pakistani personnel, prompted Soper to resign from his position as of February 1962 and return to the US
>> যুক্তরাষ্ট্রের NIH এর নিচের রিপোর্টটি পড়ে দেখুন। পাকিস্তান-সিয়েটো কলেরা রিসার্চ ল্যাবোরেটরিই আমাদের আজকের আইসিডিডিআরবি।
http://profiles.nlm.nih.gov/VV/B/B/G/P/_/vvbbgp.pdf
জনাব ইয়াংসি,
ভুল বুঝেছেন। এমন কথা আমি কোথাও বলিনি।
আর পাকিস্তান-সিয়েটো কলেরা রিসার্চ ল্যাবোরেটরিই আমাদের আজকের আইসিডিডিআরবি হলেই বা কী! আমার পয়েন্টটা হল যেসব লেখা ঢালাও অভিযোগ করে সেগুলোর কথা বাদ দিন। যদি আপনি একটু কষ্ট করে কোন ভালো পিয়ার রিভিউড জার্নালের আর্টিকেলের লিঙ্ক দিতে পারেন যেখানে আইসিডিডিআরবির কোন গবেষণা ভুল প্রমাণ করছে তাহলে আপনার দাবী বিশ্বাসযোগ্য হবে। নচেৎ না।
পোস্টের মেরিটটা দেখেন। একজন নন-অ্যাকাডেমিক সাধারণ মানুষ খবরের কাগজ পড়ে জানলো যে দেশের একটা অঞ্চলে ড্রাগ ট্রায়াল হবে। এ নিয়ে তাই মনে অনেক প্রশ্ন জাগে। সেই প্রশ্নগুলো নিয়ে এই পোস্ট - পুরো প্রক্রিয়াটা সম্পর্কে স্বচ্ছ একটা ধারণার জন্য।
আপনি এই টীকায় ব্যবহার করা উপাদান নিয়ে লিখুন, পার্শপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে সচেতন করুন বা প্রাতিষ্ঠানিক অস্বচ্ছতা তুলে ধরুন। তাহলে আলোচনাটি প্রাসঙ্গিক থাকবে। রাজনৈতিক প্রোপাগান্ডার অর্টিকেল অনেক সময় ভুল ধারণা ছড়ায়।
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট। ফলো করছি নিয়মিত।
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
(১) শান্তা বায়োটেকের আগের প্রডাক্টগুলোর সমস্যা ছিলো; এভেন্টিস পাস্তুরে কাজ করবার সময় দেখেছি; ওদের বানানো র্যাবিস ইমিউনোগ্লোবিউলিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছিলো!
(২) শান্তা ভারতীয় কোম্পানী, পাস্তুরের সাবসিডিয়ারী নয়, যতদূর জানি!
(৩) কলেরা ভ্যাক্সিন বা টাইফয়েড ভ্যাক্সিনের কার্যকারিতা কম, প্রতিরোধক হিসেবে এর স্বার্থকতার হার বোধহয় মাত্র ৭০%, এর কারণ এই দুই রোগের ক্ষেত্রে এন্টিবডির কোনো মেমোরী সেল তৈরী হয় না।
(৪) বাংলাদেশের টীকাদান কর্মসূচী ভারতের চাইতে অনেক এগিয়ে আছে, আসল ঘটনা হলো ভারতের জন্যই বাংলাদেশে পোলিও নির্মূল করা যাচ্ছে না।
(৫) বাংলাদেশের জাতীয় টীকাদান কর্মসূচীতে কলেরা ভ্যাক্সিন ঢুকালে তা বিশাল অংকের টাকার ব্যাপার। এর জন্য জাতীয় পর্যায়ে দেশের হর্তাকর্তাদের হাত থাকতেই হবে। ঔষধ প্রশাসন এমনিতে কোন এস্টাবলিশড ভ্যাকসিনেরি ছাড়পত্র দেয় না, এক্ষেত্রে এইটা কিভাবে ছাড় পেলো? অবশ্যই স্বাস্থ্যমন্ত্রী বা সমপর্যায়ের সরাসরি টাকা সংক্রান্ত ব্যাপার আছে!
(৬) এটা বন্ধ করতে হবে... এখুনি!!!
ভয়ঙ্কর!!
এখনই ফেসবুকে শেয়ার করলাম।
-----------
তৌফিক
সচলায়তনের মত সমাবেশে ভারত জুজু আশা করিনি
জনাব হামিদ, সচলায়তন নিয়ে আপনি কী আশা করেন আর কী আশা করেন না সেগুলো নিয়ে দয়া করে মডারেটরদের লিখুন, তাদের সাথে আলাপ করুন - তাদের মেইল অ্যাড্ড্রেস এই পাতার নিচের দিকে পাবেন। এই পোস্টের কোন পয়েন্টের ব্যাপারে আপনার দ্বিমত থাকলে সেটা বিস্তারিত আলোচনা করুন। অযথা একটা আলগা মন্তব্য করবেন না।
এই পোস্টের লেখক ও আলোচনায় অংশগ্রহনকারী পাঠকদের বলছি, গুরুত্বপূর্ণ কোন ইস্যুতে কোন পোস্ট দেয়া হলে দেখবেন কিছু অজ্ঞাতনামা পাঠক আলোচনাকে ডাইভার্ট করার জন্য আলটপকা কিছু মন্তব্য করে ঝগড়া বাঁধানোর চেষ্টা করে। এতে অহেতুক শক্তিক্ষয় হয়, আলোচনার ফোকাস ঘুরে যায়। সুতরাং এই পোস্ট এবং ভবিষ্যতে প্রকাশিতব্য সকল গুরুত্বপূর্ণ পোস্টে পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া বাঁধানো মন্তব্যগুলোকে দয়া করে ইগনোর করুন।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
পোস্টে
আশা করছি মূল ধারার মিডিয়ায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হোক।
অসুবিধা কি? এমনিতেই এইসব জনগোষ্ঠীর মতো আমরা নানা রকম ভেজাল খেয়ে জোম্বিদের কাছাকাছি হয়ে গেছি, খাবারের সাথে ফরমালিন, মুড়ির সাথে সার, মবিলে ভাজা পুরি খেয়েও যারা মরে না, ভারতীয় ভ্যাকসিনে তাদের কিছুই হবে না
আপনি দুইটা ভ্যাকসিন নিয়েন।
আপত্তির কারনটা বুঝলাম না...
১। ভ্যাক্সিনের "গিনিপিগ" ?
ঃ যতটুকু জানি, প্যারাসিটামল থেকে এইচ১এন১ ভ্যাক্সিন, সকল ঔষধকেই কমপক্ষে ৪টি ধাপ (phase) "ক্লিনিকাল পরীক্ষা" (clinical evaluation) পার হতে হয়েছে / হয়, এবং এর সবগুলোই মানব দেহের উপর। এতে নতুন কি হল ?
২। "মিরপুরবাসী" কেন?
ঃ কলেরার প্রকোপ যেখানে বেশি সেখানেই এই প্রস্তাবিত ভ্যাক্সিনের পরীক্ষা চালানো সমীচিন নয় কি ? সেটা বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, কিংবা হাইতি হতে পারে। ICDDRB (একমাত্র আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান যার প্রধান কার্যালয় বাংলাদেশে, কলেরা গবেষণায় বিশ্বে চতুর্থ) যদি বাংলাদেশকে এই গবেষণার জন্যে বেছে নেয় এবং অংশগ্রহণকারীর সজ্ঞান সম্মতিক্রমে (Informed written consent) গবেষণা চালায়, তাতে সমস্যাটা কোথায়?
৩। "WHO-এর অনুমোদন"
ঃ
ক। ভুল হতে পারে, তবে যতটুকু জানি, ঔষধ কিংবা ভ্যাক্সিন এর অনুমোদন WHO দেয় না, বেশীর ভাগ দেশেই এরূপ অনুমোদন নিতে হয় সুনির্দিষ্ট অনুমোদনকারী প্রতিষ্ঠানের (যেমনঃ FDA, European drug regulator) কাছ থেকে।
খ। পূর্বোক্ত ৪টি ধাপ (phase) "ক্লিনিকাল পরীক্ষা" (clinical evaluation) -র ৩টি সমাপ্ত হলেই কেবল অনুমোদনের আবেদন করা যায়।
৪। "যে ৮০ হাজার লোক প্ল্যাসিবো পাবেন, তারা কি জানবেন যে তারা কনট্রোল গ্রুপের সাবজেক্ট মাত্র?"
ঃ যতটুকু জানি - না।
যদি এটা double blind randomised controlled trial (DB RCT) হয়ে থাকে, তবে ভ্যাক্সিন দাতা ও গ্রহিতা কেউ ই জানবেন না যেটা দেয়া হচ্ছে সেটা ভ্যাক্সিন নাকি প্লাসিবো, bias এড়ানোর পরীক্ষিত কৌশল হিসেবে এটা করা হয়। এতে নতুন কিংবা আপত্তিকর কিছু পেলাম না।
৫। "বিল অ্যাণ্ড মেলিণ্ডা গেইটস ফাউণ্ডেশন টাকা দিচ্ছে বুঝলাম, সেটি আমরা কেন আমাদের প্রয়োজনমত খরচ করতে পারবো না?"
ঃ বিদেশী দাতা সংস্থাগুলো যখন টাকা (funding) দেয়, প্রতিটি সংস্থা আগে নিজেদের নিয়ম ও এজেন্ডা মানে, পরে আমাদেরটা। আমাদের কে এটা মেনে নিয়েই প্রকল্প প্রস্তাব (project proposal) জমা দিতে হয় - কারণ আমরা সাহায্য গ্রহীতা - তাই। তারা যুতসই মনে করলে টাকা (funding) দেয়, আমরা প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় সেটা ব্যবহার করি।
লক্ষ্য করুনঃ
ক। ভ্যাক্সিন প্রকল্পে টাকা (funding) আসলে "পরিস্কার পানি আর স্বাস্থ্যকর পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা" প্রকল্পে টাকা আসবে না - এরূপ কোনো ব্যাপার নেই। তাই, এই "প্রায় ১৮ কোটি টাকা"র বিষয়ে সুযোগ ব্যয় (opportunity cost) তত্ত্ব প্রযোজ্য নয়।
খ। "পরিস্কার পানি আর স্বাস্থ্যকর পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা" নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অনেক প্রকল্পই বর্তমানে চালু আছে - ভ্যাক্সিন প্রকল্প এগুলোর অন্তরায় নয়।
গ। উপোরোক্ত কারণেই "WHO এর নির্দেশনা"র বিপরীতে কিছু করা হচ্ছে - এটি ভুল ধারনা। এই ট্রায়াল সফল হলে WHO সবার আগে সাফল্য কাহিনী প্রচার করবে - ভ্যাক্সিন ট্রায়াল WHO-র জন্য নতুন কিছু নয়।
৬। "ভারতীয় টিকা" কেন?
ঃ "যে টিকাটি খাওয়ানো হচ্ছে, সেটি ভারত থেকে আমদানি করা হয়েছে। তবে শিগগির বাংলাদেশেও টিকা তৈরি হবে। কমপক্ষে চারটি ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান টিকা তৈরির প্রস্তুতি নিয়েছে।"
- তো সমস্যা কোথায়?
ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, ঔষধ / ভ্যাক্সিন / এপিআই (Active Pharma. Ingredients) নিয়ে গবেষণা এবং ক্লিনিকাল পরীক্ষা অনেক বেশী উতসাহিত করা উচিত - আমাদের গবেষণা ও ফার্মাসিউটিকাল প্রতিষ্ঠানগুলোর বিকাশের উদ্দেশ্যেই।
ধন্যবাদ।
১। ভ্যাক্সিনের "গিনিপিগ"?
এবং
২। "মিরপুরবাসী" কেন?:
ভ্যাকসিনের ট্রায়াল মানবদেহে হবে, এ ব্যাপারে আমার আপত্তি নেই। সেটি মূল লেখায় বোঝাতে না পরে থাকলে সেটা আমার ব্যর্থতা। প্যারাসিটামলের ট্রায়াল ঠিক কিভাবে হয়েছে আমি জানি না, তবে একটা হাইপোথেটিক্যাল কেইস চিন্তা করুন: এরকম যদি হতো যে সেটি আমেরিকার কোম্প্যানী বানাচ্ছে, আর ট্রায়ালটা দিচ্ছে আফ্রিকায়, তাহলে সেটা প্রতিবাদ করার মত ব্যাপার হত। কারণ প্যারাসিটামল (আমেরিকাতে টাইলেনল) ট্রায়াল দেয়ার সাবজেক্ট আমারিকাতেই আছে। তাহলে আমেরিকার কোম্প্যানী কেন আফ্রিকাতে ট্রায়াল করবে? কারণ, আফ্রিকাতে ইনফরমড কনসেণ্ট (কিনে?) নেয়া সোজা, রাজনীতিবিদদের কিনে ফেলা সোজা, কোন গোলমাল হলে ফেঁসে না যাওয়াটাও সোজা। বোঝা গেল?
৩। "WHO-এর অনুমোদন"
WHO এর অনুমোদন না পেলে সারা পৃথিবীতে এটা বাজারজাতকরণে সমস্যা হয়। তাই Shantha Biotechnics তাদের ShanChol ভ্যাকসিনের জন্য ২০০৯-এর সেপ্টেম্বরে আবেদন করেছে। অনুমোদন এখনো পায়নি। তবে ওরা যদি এটা ভারতে বাজারজাত করতে চায়, সেটির জন্য ভারতীয় স্বাস্থ্য বিভাগের অনুমতিই যথেষ্ট। সেটি তারা পেয়েছে।
৪। ডাবল ব্লাইণ্ড পরীক্ষা আর প্ল্যাসিবো-র ব্যবহার অবশ্যই পরীক্ষিত, তবে শুধু আমি একা আপত্তি করছি না। এটা সারা পৃথিবী জুড়েই আপত্তিকর ও ব্যপক বিতর্কিত। একটু গুগল করলেই জানতে পারবেন।
৫। দাতা সংস্থার কাজের ধরণ নিয়ে আপনার ধারণা ঠিক না। যে কোন ফাণ্ডিংএর জন্যই একটা কেইস তৈরী করতে হয়, এবং অনেকগুলো প্রকল্পের মধ্যে থেকে স্বল্প কিছুই অনুমোদন পায়। তাই কি কাজে আপনি আপনার দাতাদের দেয়া টাকা খাটাবেন, সেটি গুরুত্বপূর্ণ। সেটি নিয়ে প্রতিযোগিতা করতে হয়, কারণ এই টাকা কখনোই সীমাহীন নয়। আমর দেয়া ৩ নম্বর রেফারেন্সটা পড়ে দেখুন, কেন কলেরা ভ্যাকসিন প্রজেক্টে টাকা গেলে অবকাঠামো প্রজেক্টে সেটা কমে যাবে বুঝতে পারবেন। আমার পোস্টে আমি GAVI-এর কথাও উল্লেখ করেছি, যারা জানিয়ে দিয়েছে কলেরা ভ্যাকসিন প্রকল্পে তারা ২০১৩ পর্যন্ত টাকা খাটাবে না।
আমার প্রশ্নটা এখানেই, আমরা কেন তাদেরকে এটা মনে করালাম যে এটা একটা যুৎসই প্রকল্প? সেই বিজনেস কেইসটা আমি দেখতে আগ্রহী।
৬। "ভারতীয় টিকা" কেন?
বর্তমান আলোচনার ক্ষেত্রে টীকাটা ভারতীয়। অন্য কোন দেশে তৈরী হলেও এই আলোচনাটা ভিন্ন হতো না।
এর মানে কি আরও বেশি করে আমাদের বস্তিবাসীদেরকে ট্রায়ালে ব্যবহার করতে হবে, এটা বোঝাতে চাইছেন?
প্রিয় যুধিষ্ঠির,
উত্তর এর জন্যে ধন্যবাদ।
ঃ বোঝা গেল না। কারণঃ
ক। প্যারাসিটামল হাইপোথেসিস এক্ষেত্রে অপ্রযোজ্য। কারণ কলেরা ভ্যাক্সিন ট্রায়াল দেবার সুযোগ ফ্রান্সে কম। এবং-
খ। 'কলেরার প্রকোপ যেখানে বেশি সেখানেই এই প্রস্তাবিত ভ্যাক্সিনের পরীক্ষা চালানো সমীচিন নয় কি ? সেটা বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, কিংবা হাইতি হতে পারে।' যে ৪ টি এলাকার কথা বলেছি তার সবগুলোতেই আপনার উল্লেখ করা অনৈতিক সুবিধা নেওয়া সহজ - এখানে বাংলাদেশকে 'আফ্রিকা' আর ভারতকে কিংবা পাকিস্তানকে 'আমেরিকার' সাথে তুলনা দেওয়া অগ্রহণযোগ্য।
এবং-
গা আইসিডিডিয়ারবি র স্থান নির্বাচন বিষয়ে 'বিবর্তনবাদী'র ব্যাখ্যা।
সূত্রটি জানাবেন ?
কারণ আমি যতটুকু জানি, বাংলাদেশে হোক কি আমেরিকায় হোক, 'বাজারজাতকরণে'র জন্যে WHO এর অনুমোদন অপ্রয়োজনীয়। যেমনটি বলেছি - "এরূপ অনুমোদন নিতে হয় সুনির্দিষ্ট অনুমোদনকারী প্রতিষ্ঠানের (যেমনঃ FDA, European drug regulator) কাছ থেকে।"
আমাদের পাঠ্যসূচীতে ব্যাপারটি ছিলো (Variables to consider in using placebo, add-on designing, crossover vs. parallel designs ইত্যাদি), তাই বিতর্কটি অপরিচিত নয়।
তারপর ও গুগল করলাম।
জানতে পারলাম - 'ডাবল ব্লাইণ্ড পরীক্ষা আর প্ল্যাসিবো-র ব্যবহার' এর বিপক্ষে অনেক মত আছে, ট্রায়াল এর বিপক্ষে ও অনেক মত আছে।
আর ও খুজে জানতে পারলাম - ভাত খাবার বিপক্ষেও নাকি অনেক মত আছে।
যাই হোক, বিতর্কটি নীতিগত, সুনির্দিষ্টভাবে কলেরা ভ্যাক্সিন ট্রায়াল বিষয়ক নয়। তাই সে আলোচনা পরে হবে আশা করি।
ঠিক কোন জায়গাটায় আপনি একমত নন, স্পষ্ট করবেন দয়া করে?
সেটিই স্বাভাবিক, আমি ও বলিনি যে এই টাকা সীমাহীন।
৩ নম্বর রেফারেন্সটা (http://www.sciencemag.org/content/329/5998/1462.summary) কেবল সারমর্ম পরতে পারছি - তাতেও 'কলেরা ভ্যাকসিন প্রজেক্টে টাকা গেলে অবকাঠামো প্রজেক্টে সেটা কমে যাবে' এরকম কিছু পেলাম না। সঠিক রেফারেন্সটার অপেক্ষায় রইলাম - কারণ এই জায়গাটাতেই আমার আপত্তি।
আমি আপত্তি করি নি।
না, এটা বোঝাতে চাইছি না।
বোঝাতে চাইছিঃ 'ঔষধ / ভ্যাক্সিন / এপিআই (Active Pharma. Ingredients) নিয়ে গবেষণা এবং ক্লিনিকাল পরীক্ষা অনেক বেশী উতসাহিত করা উচিত - আমাদের গবেষণা ও ফার্মাসিউটিকাল প্রতিষ্ঠানগুলোর বিকাশের উদ্দেশ্যেই।'
ব্যাখ্যাঃ
বাংলাদেশের গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর খ্যাতি খুব বেশি নয়। তন্মধ্যে আইসিডিডিয়ারবি র অবস্থান অনস্বীকার্য - যার অন্যতম কারণ গবেষণার নিয়ম নীতি মেনে চলা এবং গবেষণার গুণগত মান। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া এরূপ গবেষণার বিপক্ষে অবস্থান নেবার বিপক্ষে আমি।
এবং,
জানেন নিশ্চয়, বাংলাদেশের ফার্মাসিউটিকাল প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে আমাদের অনেক গর্ব। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, তারা নিজস্ব মেরুদন্ডবিহীন - কারণ কোনো একটি দেশীয় প্রতিষ্ঠানেরও নিজস্ব পেটেন্ট দুরের কথা, নিজস্ব স্বনির্ভর 'drug development' সুবিধা / বিনিয়োগ নেই। তাই আমাদের দুই দিন পরপর 'বিশেষ সুবিধা' চাইতে হয় ঔষধ বাজারজাতকরণ করতে গিয়ে।
এ অবস্থার পরিবর্তনের জন্যে 'ঔষধ / ভ্যাক্সিন / এপিআই (Active Pharma. Ingredients) নিয়ে গবেষণা এবং ক্লিনিকাল পরীক্ষা অনেক বেশী উতসাহিত করা উচিত' বলেছি।
[উল্লেক্ষ্য, আমার ব্যক্তিগত মতামতটি একটি ভ্যাক্সিন এর ক্লিনিকাল পরীক্ষার প্রসঙ্গে প্রদত্ত, একান্তই নীতিগত। এই ট্রায়ালে অংশগ্রহণকারীদের অধিকার পরিপন্থী কোনো তথ্যপ্রমাণ আপনি উপস্থাপন করেন নি, আমি ও সমর্থন করিনি। আপনার ব্যাখ্যাটি তাই কাম্য ছিলো না ]
ভবিষ্যতে সময় পাওয়া সাপেক্ষে এবিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হতে পারে, অবশ্যই যদি সেটা যুক্তিনির্ভর হয়। public sentiment অনেক্ষেত্রেই আবেগ নির্ভর - সে বিষয়ে আমার আগ্রহ আবার কম।
আর একটি বিষয়ে না বললেই নয়ঃ
যেমনটি বলেছি, সকল ঔষধ ও ভ্যাক্সিন এর ট্রায়ালই মানবদেহে হয়েছে / হতে হয় - এটি ওই ঔষধ বা ভ্যাক্সিন লাইসেন্সের পূর্বশর্ত। আপনি ও বলেছেনঃ 'ভ্যাকসিনের ট্রায়াল মানবদেহে হবে, এ ব্যাপারে আমার আপত্তি নেই।'
আমি বিশ্বাস করি - 'The scientist or physician has no right to choose martyrs for society' (Kety S. : Journal of AMA 1959)
কিন্তু এটাও নিশ্চয় মানি, সর্বাঙ্গীন সুস্থ্য সচ্ছল লোক যেচে পরে ঔষধ এর ট্রায়াল এ যাবে না , সে আমেরিকান হোক কি বাংলাদেশী - যদি ও অনেক কঠিন নিয়ম মেনে এবং 'মানবদেহে ট্রায়ালের যোগ্য ও নিরাপদ' প্রমাণিত হবার পরই কেবল এসকল ট্রায়াল দেও্য়া যায়* তাই সুস্থ্য সেচ্ছায় অংশগ্রহণকারীদের (অসুস্থ্যদের নয়) 'fee for service' (not 'financial inducement') দেওয়া ও এসকল ক্ষেত্রে বৈধ।
[লক্ষ্যনীয় পার্থক্যঃ আলোচ্য ট্রায়ালটি ভ্যাক্সিন এর, ঔষধ এর নয়। 'fee for service' তাই অপ্রযোজ্য, যদিও ক্ষতিপূরণ প্রযোজ্য।]
সোজা বাংলায়, এইস / সেকলো কিংবা পোলিও ভ্যাক্সিন - সবই কারো না কারো শরীরে পরীক্ষিত হয়েছে। তাই জীবনে যে একটি ঔষধ / ভ্যাক্সিন ও ব্যবহার করেছে, তার মুখে ট্রায়ালে অংশগ্রহণকারীদের সম্পর্কে অসম্মানজনক / শ্রেণীবৈষম্যমূলক কথা হিপোক্রেসী মাত্র।
*The WMA dclaration of Helsinki (Edin 2000), International Ethical guidelines for biomedical reseach involving human subjects (CIOMS & WHO
ভাল থাকবেন।
সঞ্জয়।
আপনি নিজেই প্যারাসিটামলের কথা টানলেন, এখন আপনিই বলছেন সেটা এখানে অপ্রোযোজ্য। এ বিষয়ে আর কথা না বাড়াই।
WHO-এর অনুমোদনের ব্যাপারে ৩ নম্বর রেফারেন্সে বলা আছে, "... India's regulatory agency approved the vaccine last year, and it has been submitted for approval to WHO; that would open doors to use in many other countries." এই রেফারেন্সটা ফ্রী না, এবং কপিরাইটেড। তাই সেটা আমি সরাসরি এখানে প্রকাশ করতে পারছি না। আপনি কোন ইউনিভার্সিটির সাথে বা চিকিৎসা পেশায় কোন প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত থাকলে হয়তো ফ্রী পেতে পারেন, না হলে ১৫ ডলার দিয়ে কিনে পড়তে হবে।
আইসিডিডিআর,বি বা এরকম কোন গবেষনার বিপক্ষে অবস্থান নেয়া এ লেখার উদ্দেশ্য নয়। তবে যত স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানই হোক না কেন, সরকার এবং জনগনের কাছে তাদের দায়বদ্ধতা থাকতে হবে। তথ্য প্রকাশের ক্ষেত্রে কোন রকম কার্পন্যও তাদের থেকে কাম্য নয়।
ডাবল-ব্লাইণ্ড পরীক্ষা আর প্ল্যাসিবো নিয়ে বিতর্ক আপনার কাছে ভাতের বিতর্কের সমপর্যায়ের মনে হলে আমি সে ব্যাপারে আপনার সাথে আর কথা বাড়ানোর প্রয়োজন দেখছি না।
প্রিয় যুধিষ্ঠির,
ফেসবুকের একটি লিংক থেকে আপনার লেখাটা পেলাম। সচেতন নাগরিক হিসেবে আপনার এই লেখার জন্য ধন্যবাদ। নিজে এসব ব্যাপার নিয়ে লেখা পড়া করেছি (মাইক্রোবায়োলজি) এবং আইসিডিডিয়ারবিতে চাকরির সুবাদে নিজের চোখে যা কিছু দেখার এবং বোঝার সুযোগ হয়েছে তারই ভিত্তিতে এই আলোচনায় অংশগ্রহন করতে আসলাম।
ভ্যাকসিন রোগ প্রতিরোধের একটা গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র। যদিও সর্বজন বিধিত সত্য হচ্ছে, “প্রতিরোধের চাইতে প্রতিকারই উত্তম”, তবুও সব ধরণের রোগের বিরুদ্ধে প্রতিকারের সাথে সাথে প্রতিরোধের ব্যবস্থা না করলেই নয়। ভ্যাকসিনের ম্যাস এপ্লিকেশনের আগে অবশ্যই তার হিউম্যান ট্রায়াল করতে হবে। এর কোন বিকল্প নেই। এখন প্রশ্ন হল, ভ্যাকসিন ট্রায়াল কোথায় হবে এবং কি কি নিয়ম মেনে চলে হবে।
প্রথমেই আসি কোথায় হবে। স্থান নির্বাচনের সময় আপনার যে যে বিষয় খেয়াল রাখা উচিত তা হল, ১)যেই ভাইরাস বা ব্যাক্টেরিয়ার বিরুদ্ধে ভ্যাকসিন ট্রায়াল হবে সেটার প্রাদুর্ভাব কোথায় বেশি। ২) যেখানে ট্রায়াল করবে সেখানে এই সংক্রান্ত গবেষণা পরিচালনায়র যথেষ্ঠ ইনফ্রাস্ট্রাকচার এবংদক্ষ বিজ্ঞানী আছেন কি না?
ভারতীয় একটি কম্পানী কলেরার ভ্যাকসিন তৈরি করেছে। নিশ্চয়ই শুধু শুধু নয়। ব্যবসায়িক গুরুত্ব না থাকলে বিশ্বের কোন কম্পানিই শুধু শুধু পয়সা খরচ করবে না। দক্ষিণ এশিয়ার পর্যটনের খাতিরে এইসব ভ্যাকসিনের গুরুত্ব আছে। কারন এখানে পর্যটন শিল্পে ব্যাপাক সম্ভবনা রয়েছে (ভারতের এই ক্ষেত্রে অর্জন অনেক), বাংলাদেশও একই পথে চলছে। অনেকে বিদেশী পর্যটক কলেরাজনিত রোগের ভয়ে এসব দেশে ঘুরতে আসতে ভয় পায়। তাদের কাছে দুইবছরের ইমিউনিটির গুরুত্ব অনেক। কম্পানি এরকমই বিভিন্ন কারনে ব্যাবসায়িক লাভ আছে মনে করেই ভ্যাকসিন তৈরি করেছে। এরপর তারা তাদের ভ্যাকসিনের ট্রায়াল করতে চায়। এই উদ্দেশ্যে তারা একধরনের টেন্ডার ঘোষণা করে। বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা এসব ফান্ডের জন্য আবেদন করেন। যারা সবচাইতে কম সময়ে এবং বাজেটের মধ্যে ট্রায়াল সঠিক ভাবে শেষ করতে পারবে তারাই এই সব ফান্ড পায়। তবে রিসার্চ ফান্ডা পাওয়ার প্রথম শর্ত হল বিজ্ঞানীর আন্তর্জার্তিক ইমেজ। এই ক্ষেত্রে বাংলাদেশে আইসিডিডিআরবির বদৌলতে অনেক এগিয়ে আছে।
যদি কলেরার কথায় আসি তাহলে বলতে হয় বাংলাদেশে এই কলেরার জন্য লক্ষ লক্ষ মানুষ অতীতে মৃত্যুবরণ করেছেন। বাংলাদেশের সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগ এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইসিডিডিআরবির এইক্ষেত্রে ব্যাপক অবদান আছে। কলেরা নিয়ে কাজ করতে গিয়ে এদেশের বিজ্ঞানীরা দক্ষ হয়েছেন এবং গবেষণা কাঠামো গড়ে উঠেছে। আপনি শুনে খুশি হবেন, Thomson reuters এক প্রতিবেদনে আইসিডিডিআরবির অবস্থান কলেরা গবেষণার বিশ্বে চতুর্থ। বিশ্বের শ্রেষ্ঠ কলেরা বিজ্ঞানীতের তালিকায় ১৪তম এবং ১৯ তম অবস্থান ধরে রেখেছেন আইসিডিডিআরবির জোষ্ঠ বিজ্ঞানি ড. শাহ মোহাম্মদ ফারুক এবং ড. ফেরদৌসি কাদরি। ফলাফল এই যে, বিভিন্ন ফান্ডের দৌড়ে আইসিডিডিআরবির বিজ্ঞানীরা বিশ্বের অন্য অনেক দেশের বিজ্ঞানীদের থেকে এগিয়েই থাকেন।
বাংলাদেশে কলেরা ভ্যাকসিনের ক্লিনিকাল ট্রায়াল পরিচালনার অবকাঠামো এবং অভিজ্ঞতা সম্পন্ন বিশ্ব মানের দক্ষ বিজ্ঞানী আছেন বলেই এসব ট্রায়াল বাংলাদেশে হচ্ছে। সেই সাথে বাংলাদেশের সরকারও এই ট্রায়াল হতে দিতে আগ্রহী। আমি যদিও অত উপরের পর্যায়ের খবর জানি না, কিন্তু এটুকু জানি যে বাংলাদেশ সরকারের অনুমতি ছাড়া আইসিডিডিআরবিতে কোন গবেষণা হয় না এবং বাংলাদেশ সরকার আইসিডিডিআরবির সবচাইতে বড় দাতা সংস্থা।
এখন আসি আপনার পোস্টের কিছু প্রশ্নের ব্যাপারে,
একমাত্র প্রথম আলো ছাড়া আর কোন পত্রিকায় এটির কোন খবর খুঁজে পেলাম না, প্রথম আলোতেও পাওয়া গেলো ১৮ই ফেব্রুয়ারির পত্রিকায়, অর্থাৎ কর্মসূচি শুরু হবার একদিন পরে, তাও তৃতীয় পৃষ্ঠার এক কোনায়।
আমি বিভিন্ন পত্রিকা ঘাটাঘাটি করি নাই। কিন্তু এটা জানি এই প্রোজেক্টের উদ্বোধণ করেছিলেন, গনপ্রজাতন্ত্রীবাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী। বিভিন্ন টিভি এবং সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিরাও ছিলেন সেখানে। তাই ব্যাপারটাকে গোপনীয় কিছু তো মনে হচ্ছে না।
বিল অ্যাণ্ড মেলিণ্ডা গেইটস ফাউণ্ডেশন টাকা দিচ্ছে বুঝলাম, সেটি আমরা কেন আমাদের প্রয়োজনমত খরচ করতে পারবো না?
গেটস ফাউন্ডেশন টাকা দিচ্ছে ট্রায়াল করবার জন্য। সেই টাকা দিয়ে অন্য কাজ করবেন কেন? তারা কেন করতে দেবে? প্রশ্নটা অবান্তর। এরা গবেষণার জন্য টাকা দেয় দান খয়রাতের জন্য অন্য সংস্থা আছে।
ম্যাস ট্রায়ালের ক্ষেত্রে সমাজের বা দেশের নেতারা এই অনুমতি দিতে পারেন এলাকার মানুষের পক্ষে। প্রশ্ন হলো, ভ্যাকসিন ট্রায়ালের ক্ষেত্রে এরকম এথিকস কতটুকু অনুসরণ করা হচ্ছে? মীরপুরবাসীরা কি জানেন তারা একটি পরীক্ষার সাবজেক্ট?
আইসিডিডিআর,বির কোন গবেষণাই কন্সেন্ট গ্রহণ ছাড়া হয় না। কারন অংশগ্রহণকারীর কন্সেন্ট না থাকলে পুরো প্রজেক্টের ডাটার কোন গ্রহণযোগ্যতাই থাকে না বলে আমি জানি। এসব ডাটা ভাল জার্নালে পাবলিশ করা যায় না। প্রত্যেকটা প্রজেক আইসিডিডিআরবির এবং সরকারের Ethical Review Committee এর অনুমোদন ছাড়া হয় না। এই ব্যাপারগুলো আইসিডিডিআরবিতে চাকরির সুবাদেই জানতে পেরেছি। শুধু ভ্যাকসিন দেওয়া কেন, মানুষের চুল, থুথু, মলমূত্রও যদি কোন গবেষণায় ব্যবহার করতে হয় তবেই এথিকাল রিভিও কমিটির অনুমোদন লাগে। এমনকি আপনি এক উদ্দেশ্যে গ্রহন করা স্যাম্পল থেকে অন্য টেস্ট করতে পারবে না। আমি আপনার রক্ত নিলাম হেপাটাইটিস সি টেস্ট করতে, পরে সেই রক্ত নিয়ে এইচআইভি টেস্ট করব সেটা হবে না।
আড়াই লাখ লোকের অনুমতি কিভাবে এবং কতদিন ধরে যোগাড় করা হলো? এত বড় একটা কাজ কিভাবে কোন সাড়াশব্দ না করে করা হলো?
বাংলাদেশে অনেক বড় বড় কাজ অবলিলায় সম্ভব তা দেখেছি আইসিডিডিআরবিতে এসে। বিশ্বের সবচাইতে দীর্ঘ সময় ধরে চলা সার্ভাইলেন্স সেন্টার চাঁদপুরের মতলবের আইসিডিডিআরবির শাখা। খুব সম্ভবত কমলাপুরের সাইটটি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম সার্ভাইলেন্স সাইট। আমাদের টিম প্রতি মাসে শত শত স্যাম্পল টেস্ট করে যেটার প্রসিশন এবং কোয়ালিটি দেখে উন্নত বিশ্বের অনেক ভিজিটরই অবাক হয়। একটা সার্ভাইলেন্স সাইট একদিনের গড়ে উঠে না। অনেক বছর ধরে অনেক মানুষের চেষ্টায় সেটা গড়ে ওঠে। তখন অনেক বড় কাজ সাড়াশব্দ ছাড়া করে ফেলা সম্ভব। আমি নিজেও এখানে কাজ না করলে এসব বাংলাদেশে সম্ভব তা বিশ্বাস করতাম না। কিন্তু জানি এসব সম্ভব আমি নিজেও এর অংশ।
ভ্যাকসিন মানব সভ্যতাকে ক্ষতিকারক জীবানুর হাত থেকে রক্ষা করবার একটা অস্ত্র। যারা ভ্যাকসিন আবিস্কার করেন তারা বিজ্ঞানের জন্য জীবন উৎসর্গ করা সব বিজ্ঞানীরা। কিন্তু ভ্যাকসিন উৎপাদন এবং বন্টন একটা বড় ব্যাপার, এর পেছনে ব্যবসায়ীদের অংশগ্রহন দরকার। ভ্যাকসিনের ট্রায়ালের মাধ্যমে এটা গ্রহনযোগ্যতা পায়। ভ্যাকসিন বিশেষ করে live vaccine এর বিভিন্ন ক্ষতিকারক দিক থাকতে পারে। হিউম্যান ট্রায়ালের আগে যতরকম টেস্টের মাধ্যমে ভ্যাকসিনের সেফটি নিশ্চিত করা সম্ভব তা করে দেখা হয়। তবে, জীব জগতের অনেক কিছুই আমাদের কাছে এখনও অজানা। তাই প্রায়ই দূর্ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। Respiratory syncytial virus এর একটি ট্রায়ালের পরে যুক্তরাষ্ট্রে অনেক ভলান্টিয়ার অসুস্থ হয়ে পরে। কিন্তু তারপরও কিন্তু ট্রায়াল থেমে নেই। ভ্যাকসিনের ট্রায়াল আমেরিকাতেও হয়, হয় ইউরোপেও। কোন ট্রায়ালের সীমাবদ্ধতা গুলো চিহ্নিত করে তা পরবর্তী ট্রায়ালেরর সময় সমাধানের চেষ্টা করা হয়। এটাই বিজ্ঞান, বিজ্ঞানে কিছুই থেমে থাকে না।
আমার স্বল্প অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে আপনাদের আলোচনায় অংশগ্রহন করলাম।
পোস্টের জন্য ধন্যবাদ।
আপনার জবাব পেয়ে ভালো লাগল। অনেক কিছু পরিষ্কার হল। এটা যে লুকোচুরি ব্যাপার ছিল না, সেটা বললেন। আমাদের আগ্রহটা কিসে সেটাও জানিয়েছেন।
এখন ম্যাস ট্রায়ালের ব্যাপারে যে জননেতা কনসেন্ট দিলেই চলে, এই ব্যাপারটা নিয়ে জানার আগ্রহ আছে; আপনি বা অন্য কেউ যোগ করতে পারেন। জননেতা কি কনসেন্ট গোপনে করেন? নাকি সেটা জনগণের কাছে প্রকাশ্য থাকার বাধ্যবাধকতা থাকে (ইথিকাল অ্যাপ্রুভালের ফর্মালিটি ব্যাতিরেকে)? এটা (জননেতার কনসেন্টের ব্যাপারটা) কি কেবল বাংলাদেশের ব্যাপার, নাকি পশ্চিমেও যেমন যুক্তরাষ্ট্রে বা কানাডাতেও এমন ব্যাপার চালু আছে। আর আপনাদের ওয়েবসাইটে ব্যাপারটা নিয়ে তথ্য আছে কি?
আমার এক আমেরিকান সহপাঠী দেড়শো ডলারের লোভে একটা অষুধের ট্রায়ালে ভলান্টিয়ার হয়েছিল। তার ক্ষেত্রে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হয়েছিল ভয়াবহ। সারা শরীর ফুলে ফোসকা পড়ে ভয়াবহ অবস্থা। ভাগ্য ভাল বেচারার মেডিক্যাল ইন্স্যুরেন্সের উপর দিয়ে গেছিল।
এইটা ভালো তো। সজ্ঞানে বিষ খাইতেও রাজি হইবার অধিকার আছে পোলাটার।
চিন্তা করেন, পোলাটার উপর অজ্ঞাতে ট্রায়ালটা ঘটার পরে যদি ভয়াবহ পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হইত, তখন দেড়শ হাজার ডলারেও কিন্তু পোষাইত না মার্কিন দেশে। আমার কনসেন্ট ছাড়া আমার উপর পরীক্ষা নিরীক্ষা চালানো সংস্থা আর মত-দেয়া-জননেতারে জেলের ঘানি টানাইতে চাই।
এইখানেই তো আপত্তি!
আমার চাচা-মামা-খালাদের কী খাওয়ানো হবে সেটা জানার অধিকার আমার অবশ্যই আছে। টিভিতে যে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী পরীক্ষামূলক টীকাদান কর্মসূচী উদ্বোধন করে আমার চাচা-মামা-খালাদের উপর পরীক্ষা নিরিক্ষার অনুমতি দিল সে কি আমার চাচা-মামা-খালারা মারা গেলে কোন দায়িত্ব নিতে এগিয়ে আসবে?
নিজের বুদ্ধিতে গু খাইতেও রাজি আছি কিন্তু বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বুদ্ধিতে পোলাও-কোর্মা খাওয়ার আগেও দশবার ভেবে দেখতে হবে।
প্রিয় বিবর্তনবাদী:
আপনাকে ধন্যবাদ খোলা মন নিয়ে আলোচনায় আংশগ্রহণের জন্য। প্রথমেই বলে নেই, আইসিডিডিআর,বি-র ইমেজ বিনষ্ট করা আমার উদ্দেশ্য নয়। আমার লেখায় যদি সেটি মনে হয়, সেটি আমার ভাব প্রকাশের দুর্বলতা, আমি সেজন্য ক্ষমাপ্রার্থী। এবার আপনার মতামত নিয়ে কথা বলি।
১. আপনি নিজেই
বলে ভ্যাকসিন গবেষণার ব্যবসায়িক দিকটি স্বীকার করেছেন। কাজেই যারা এই কাজটি বাংলাদেশে করাতে চাইবেন, তাদেরকে কোনভাবেই দোষ দেয়া যায় না একটি প্রতিষ্ঠিত এবং সুপরিচিত প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তাদের গবেষণা করিয়ে নিতে চাইলে। আমার কথা হলো যাঁরা এটি নিতে চাইবেন, তাদের দায়বদ্ধতা নিয়ে। একজন বিজ্ঞানীর আন্তর্জাতিক ইমেজ অবশ্যই বাংলাদেশের জন্য গৌরবের। তাতে করে তিনি গবেষণার ফাণ্ড নিয়ে আসতে পারেন বাংলাদেশে, সবকিছুই হয়তো দেশের জন্য ভালো খবর। কিন্তু এই বিজ্ঞানী বিখ্যাত বলে তাকে কি আমরা স্বাধীনভাবে যে কোন কাজ করার স্বাধীনতা দেবো? দায়বদ্ধতার জায়গাটা আমরা রাখবো না? এই বিজ্ঞানী যে কোন প্রোজেক্ট নিয়ে আসলেই আমি মন্ত্রী হয়ে যদি ভাবি, ইনি একজন বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী, এবং উনার কাজের ব্যাপারে কোন প্রশ্ন আমি করবো না, সেটি গ্রহনীয় না। তেমনটা হয়েছে বলে আমি দাবী করছি? মোটেও না। তবে তথ্য যখন উন্মুক্ত হয় না, তখন এমন কিছু সন্দেহ খুব স্বাভাবিক ভাবেই আসে। আমার কাছে মনে হয়েছে আইসিডিডিআর,বি-র আন্তর্জাতিক সম্মান রক্ষা করতে গিয়ে আমাদের নীতিনির্ধারকেরা তাদের অপরিসীম স্বাধীনতা দিয়েছেন। এমনটা যে হয়নি, সেটির তথ্য প্রকাশ করা না পর্যন্ত সেটিই আমার বিশ্বাস থাকবে।
২. Thomson Reuters-এর এই বা ওই তালিকাগুলোর কথা সম্ভবত আপনি বলছেন। আপনি নিজেই দেখুন, এটি পৃথিবীর "শ্রেষ্ঠ" কলেরা বিজ্ঞানীদের বা প্রতিষ্ঠানের তালিকা নয়। এটি পৃথিবীর শীর্ষস্থানীয় কলেরা গবেষনাপত্র প্রকাশকদের তালিকা। যে তালিকাটি তৈরী করা হয়েছে কার কতটি পাবলিকেশন আছে, আর কয়টি সাইটেশন হয়েছে, সেই সংখ্যার ভিত্তিতে। তারপরও ধরে নিলাম, শ্রেষ্ঠতার মাপকাঠিই সেটি এবং একজন বিজ্ঞানীদদের এই নাম্বারটি দিয়েই আজকের বিশ্বে মাপা হয়। সেই হিসেবে ড: ফারুক এবং ড: কাদরির প্রতি আমি সশ্রদ্ধ সম্মান জানাই। উনাদের হেয় করা আমার উদ্দেশ্য নয়, উনারা বাংলাদেশের নাম সারা বিশ্বে উজ্জল করেছেন। একজন প্রকৃত বিজ্ঞানীর মত তাঁরা তাদের গবেষনা বাংলাদেশে সীমিত রাখেননি - ড: কাদরির সর্বশেষ গবেষণা পত্রটি সম্ভবত: হাইতির প্রেক্ষাপটে লেখা। উনারা একজন বিজ্ঞানীর যা যা করা দরকার তাই করছেন। শুধু "বিজ্ঞানী" হিসেবে দেশের স্বার্থ দেখার দায়িত্ব তাদের না (বাংলাদেশি হিসাবে এটা তাদের, সেটা আলাদা রাখি এ মুহূর্তে) - এটি নীতি নির্ধারকদের, নেতাদের দায়িত্ব। আমি বলছি না যে তারা দেশের স্বার্থ দেখেন না - শুধু বলছি এটা তাদের "বৈজ্ঞানিক" দায়িত্বের মধ্যে হয়তো পড়ে না। তবে দুটি জিনিস খেয়াল করুন। এক, এই যে তালিকাটার কথা বললেন, এই তালিকায় শীর্ষে থাকাটা খুব জরুরী একজন বিজ্ঞানীর জন্য। নাহলে উনি সম্মান পাবেন না, পরিচিতি পাবেন না, ফাণ্ড পাবেন না। উনি যদি বাংলাদেশের কলেরা ১০০ ভাগ নিরমূল করে ফেলেন, কিন্তু এই তালিকায় না থাকেন, বা তাঁর কোন প্রকাশনাই না থাকে, তিনি "শ্রেষ্ঠ" হতে পারবেন না। আবারও বলছি, আমি উনাদেরকে হেয় করছি না, শুধু এইটুকু বলছি উনাদের অবজেকটিভটা ভিন্ন। উনারা সেটার পিছনে অবশ্যই ছুটবেন। সেটাকে চেক-অ্যাণ্ড-ব্যালান্সে রাখার দায়িত্ব সরকারের। নেতাদের। আর সরকার যদি সেটা না করেন, তাহলে সে দায়িত্ব আপনার-আমার উপরেই চলে আসে। দুই, পুরোপুরি সম্পর্কিত না এই ব্যাপারটা তাও বলি। আমরা বীরপূজা করতে ভালোবাসি। আবার আমাদের কীর্তিমান লোকদের এক মুহূর্তে টেনে মাটিতে নামিয়ে আনতেও দ্বিধা করি না। আর আন্তর্জাতিক যে কোন তালিকার ব্যাপারে আমাদের পাগলামি অপরিসীম। কিছুদিন আগেই কোন এক আন্তর্জাতিক তালিকায় আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নাম ওঠা নিয়ে এক কেলেংকারি হয়েছে। এমন আরও অনেক উদাহরণ আছে। কাজেই কাদেরকে কিসের ভিত্তিতে কোন পটভূমিতে সম্মান দিচ্ছি বা গুরুত্বপূর্ণ মনে করছি, কোন দাঁড়িপাল্লায় মাপছি, সেটি আমাদের খুব সাবধানে বিবেচনা করতে হবে।
আমাদের মন্ত্রীরা একটা বস্তির পাশে দাঁড়িয়ে শর্দি ঝাড়লেও সেটা প্রায় পত্রিকার খবর হয়, আর এই বিশাল দক্ষযজ্ঞটা হলো না! এই ব্যাপারটিকে আপনার খুবই স্বাভাবিক মনে হয়?
এই নীতিমালাগুলো যদি থাকেই, তাহলে একট গবেষনা প্রকল্পের কাজের প্রক্রিয়ার কথা জনগণকে জানিয়ে রাখতে বাধা কোথায়?
আবারও বলছি, একজন বিদেশির কথা শুনেই, বা সে আপনাকে কোন তালিকায় কত নম্বরে রাখলো শুধু সেটা দিয়ে দেশের প্রতি দায়বদ্ধতার দায় মেটানো যায় না।
বিজ্ঞান বা ভ্যাকসিন, কোনটার গুরুত্বই আমি অস্বীকার করি না। আশা করি আমার লেখাটায় সে বক্তব্য প্রকাশ হয়নি।
না জানিয়ে কারো উপর কোনো ভ্যাকসিন পরীক্ষা করা অবশ্যই অন্যায়।
তবে, এখানে প্রশ্ন হলো: ভ্যাকিসিন ট্রায়ালের সম্মতি আসলেই কি নেয়া হয়নি? যদি না হয় তাহলে, এতগুলো মানুষকে গিনিপিগ হিসেবে ব্যবহার করার অধিকার কর্তৃপক্ষ কোথায় পেলো; তা নিয়ে প্রশ্ন থাকে। নাকি, আমাদের "ফকিন্নীর পুত,আমরা মরলে কিছু হবে না" ভেবে ট্রিট করা হচ্ছে?
@ ধ্রুব বর্ণন –
সরকারি অনুমতিতো লাগবেই। এই জন্যই সরকারী সংস্থাগুলোর প্রতিনিধি এসব প্রোজেক্টে থাকে। সরকারের এসব তথ্য জনগনের জন্য উম্মুক্ত রাখবার কোন বাধ্যবাধকতা আছে কি না আমার জানা নেই। তবে ট্রায়ালে সেফটি এসিউর হচ্ছে কিনা, এথিক্যাল ব্যাপারগুলো ঠিক মত মেনে চলা হচ্ছে কিনা এগুলোর তত্তাবধান করা সরকারেরই দায়িত্ব বলে আমার মনে হয়। আর সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীদের তো এথিকাল বাধ্যবাধকতা আছেই। একটা প্রজেক্টের জন্য কোন বিজ্ঞানীই তার সারাজীবনের সাধনা জলে দিবে না। বছর কয়েক আগের কোরিয়ার স্টেম সেল রিসার্চারের কথা নিশ্চয়ই আমাদের মনে আছে।
এখন আমরা প্রশ্ন তুলতে পারি, সরকার সঠিক ভাবে সব মনিটর করছে কিনা? এখন সরকারি বা অন্যান্য কর্মকর্তারা যদি দায়িত্বে অবহেলা করে তার জন্যতো কাজটাকে দায়ী করা যায় না। তারপর যদি সেই কাজ হয়, জনস্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
বড় ট্রায়াল বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশে কেন হয় তার একটা বাস্তব কারন আছে। আপনি যদি আমেরিকাতে ট্রায়াল করতে চান তবে আপনাকে ডলার হিসেবে টাকা দিতে হবে এবং সেটা ৫০/১০০/১৫০ ডলারের মত হয়। আর আপনি বাংলাদেশে ৩০০/৫০০ টাকা আর সাথে নিশ্চয়তা দিলেই মানুষ রাজি। খুব স্বাভাবিক ভাবেই আপনি বাংলাদেশে ট্রায়ালটি করবেন।
এখন কথা হচ্ছে, বাংলাদেশে কেন বেশি টাকা দেওয়া হচ্ছে না। কারন, দরকার নাই। মানুষ পাওয়া যাচ্ছে অল্পতেই। আর বাস্তব হল আমাদের দেশে ৩০০/৫০০ টাকা অনেক একজন গরীব মানুষের জন্য।
এখন, আপত্তি উঠতে পারে আমাদের দেশে ট্রায়াল করতে হলে আমাদেরো উন্নত বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতই টাকা দিতে হবে। এটা নিশ্চিত করবে কারা?
যারা ফান্ড দিচ্ছে তারা?? নিশ্চয়ই না।
যে রিসার্চ চালাচ্ছেন তিনি?? সম্ভবনা কম। কারন, তিনি কেন খরচ বাড়াবেন। যেখানে অল্পতে কাজ করে দেওয়ার জন্য লোকের অভাব নাই।
তৃতীয়ত, বাংলাদেশ সরকার?? অবশ্যই। তাই আমাদের যদি আপত্তি থাকে তবে আপত্তি উঠা উচিত বাংলাদেশ সরকারের দিকে।
তবে, মনে রাখতে হবে ট্রায়াল হলেই আমরা গিনিপিগ হয়ে যাই না।
যখন কোন জননেতা আমার মতামতের তোয়াক্কা না করে আমার পক্ষ থেকে আমার পোঁদে ইনজেকশন ঠোকার অনুমতি দিয়ে দেয় তখন আমি কেবল গিনিপিগ হই না সরাসরি পিগ হয়ে যাই।
মনে রাখতে হবে গিনিপিগ সে গিনির হোক আর নিউ গিনির হোক আদতে তা পিগই। সুতারাং, অনুমতি নেয় কোন শালা?
সমস্যা সেটাই। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় সরকার থেকে শুরু করে সবাই আমাদের বস্তিবাসীদেরকে "ফর গ্রাণ্টেড" ধরে নিয়ে বসে আছে। সতরাং অনুমতি নেয় কোন শালা!
(১)
মাইক্রোবস যে প্লস-ওয়ানের পেপারটির লিঙ্ক দিয়েছেন, সেটি কলকাতায় করা একটি ফেজ -২ ট্রায়াল। ফেজ-১ ট্রায়ালে সচরাচর কোম্পানির পরিচিত কয়েকজনের মধ্যেই ওষুধটার কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হয়। সেটায় পদ্ধতিগত জটিলতা কম। ফেজ-২ ট্রায়াল করা হয় ছোট স্কেলে, ৫০-১০০-২০০ জনের উপর, কিন্তু মোটামুটি সব প্রটোকল মেনে, যাতে কার্যকারিতার সম্বন্ধে এবং ওষুধের ক্ষমতা সম্বন্ধে একটা আন্দাজ পাওয়া যায়। সেই সংখ্যাভিত্তিক আন্দাজগুলো থেকে ফেজ-৩ এর বড় ট্রায়ালটা ডিজাইন করতে হয় (যেমন, কত রোগী নিয়োগ করতে হবে সেটা আন্দাজ করা)। আর কোনো ক্ষতিকর প্রভাব বা বড় সাইড এফেক্ট দেখলে ফেজ-৩ এ আর যাওয়া হয় না।
ফেজ ৩ ট্রায়াল হচ্ছে পূর্ণাঙ্গ ট্রায়াল, যেটায় সমস্ত ধরনের প্রটোকল মানতে হয়। এটার ফলাফল দেখিয়েই পেপার পাবলিশ করতে হয়, এবং সেগুলি দেখিয়েই ওষুধ বাজারজাত করার ছাড়পত্র পেতে হয়।
আমেরিকায় এই ট্রায়াল প্ল্যান করলে সরকারি সাইটে সেই বিস্তারিত প্ল্যান আপলোড করতে হয়, রেকর্ড রাখার জন্য। এবং এই প্ল্যানকে রিভিউ বোর্ডের ছাড়পত্রের মধ্যে দিয়ে আসতে হয়। সরকার সচরাচর ভালো ইউনিভার্সিটি ও প্রতিষ্ঠানগুলিকে নিজস্ব রিভিউ বোর্ড রাখার অনুমতি দেয়। সে বোর্ডে অবশ্যই NIH (national institute of health), FDA (food and drug administration) ইত্যাদি প্রতিনিধিদের থাকতে হয়, ইউনির বাইরে থেকে প্রতিনিধিদের রাখতে হয়।
সেখানে প্ল্যানের সব খুঁটিনাটি যখন দেখা হয়, তখন লোক নিয়োগের ব্যবস্থার প্রতিটি দিকও দেখা হয়। ধ্রুব বর্ণন এবং ডাঃ চৌধুরী যে 'সজ্ঞানে স্বাক্ষরিত স্বীকারোক্তি' অর্থাৎ ইনফর্মড কনসেন্টের কথাটা তুললেন, সেটার ফর্ম পর্যন্ত দেখে নেওয়া হয়।
(২)
মুসা যেমন বললেন, "আমি বর্তমানে কানাডায় বায়োলজিতে পিএইচডি করছি, এখানেও কোন ট্রায়ালে ঢালাও করে কিছু প্রকাশ করা হয় বলে আমার জানা নেই - বিশেষ করে সাবজেক্ট সিলেকশন এর মত প্রাথমিক বিষয়গুলো।", তাতে একমত নই। সরকারের বা ইন্সটিউটের কাছে যে প্ল্যান ফাইল করা হবে, সেখানে গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হোক না হোক, অনলাইনে অবশ্যই সব কিছু প্রকাশ করতে হবে। আপনি কোন কেন্দ্র থেকে কটা লোক নেবেন, তাদের নেওয়ার শর্ত ও যোগ্যতা কী হবে, তাদের ঠিক কী ফর্ম দেওয়া হবে, কত টাকা দেওয়া হবে, সব। এখানে আমি জানি না, বাংলাদেশের সরকার যে এই প্রোজেক্টটা করাচ্ছেন তাতে কতটা কী গভীরে গিয়ে কর্মকর্তারা খতিয়ে দেখছেন।
মুসা যেরকম বলছেন, আইসিডিডিআরবি'র কর্মীরা তেমন আন্তরিক হতেই পারেন। কিন্তু আমি নিশ্চিত নই, সাধারণ মানুষ, যাদের মধ্যে অশিক্ষিত বা অল্পশিক্ষিতরাও থাকতে পারেন, তাঁদের একটা ট্রায়ালের এই অনিশ্চয়তা, যে আপনি টীকাও পেতে পারেন এবং প্লাসিবোও, এবং ব্যাপারটা র্যান্ডম, এটা কী ভাবে বোঝাবেন। তোমাদের একটা নতুন পরীক্ষাধীন টীকা দিচ্ছি, এসো কনসেন্ট ফর্মে সই করো, এটা কিন্তু একদমই আলাদা ব্যাপার। (কিন্তু অত বোঝাতে না যাওয়াই সহজ, এবং আমাদের দেশে মনে হয় সচরাচর গরীবদের সাথে এটাই করা হয়।)
নাফিস যা বলেছেন, "the reason why the inhabitants of Mirpur have not been pre-informed of this study's details is because it is a randomized double-blind study", এটা সম্পূর্ণ ভুল। ডাবল-ব্লাইন্ড মানে রোগীও জানছে না যে টীকা পাচ্ছে নাকি প্লাসিবো, আর যে ডাক্তার সেই টীকাটা তাকে দিচ্ছেন, তিনিও জানেন না। কিন্তু তার মানে আদৌ এই নয়, যে তাকে এটা বুঝিয়ে বলা হবে না, যে এই অনিশ্চয়তাটা আছে। যদি তাকে বলা না হয়, যে র্যান্ডমলি হবার ফলে তার প্লাসিবো পাবারও সম্ভাবনা আছে, তাহলে সেটা 'ইনফর্মড'ই হল না। স্টাডির ডিটেইল না জানালে এরকম ট্রায়াল অনুমোদনই পাবে না। (এটা লেখার ৩.৬ এও এসেছে।)
প্লাসিবো বা ডাবল-ব্লাইন্ড ট্রায়াল বহুপ্রচলিত পদ্ধতি। কার্যকারিতা পরীক্ষায় প্লাসিবো প্রয়োজন থাকেই, তাই কিছুটা বিতর্কিত হলেও সেটার ব্যবহার এমনিতে নিন্দনীয় না। সেটা ইনফর্মড না হলেই নিন্দনীয়।
(৩)
একটা ব্যাপার হল, এক সাথে একাধিক ফেজ ৩ ট্রায়াল চালানো কিন্তু খুব একটা প্রশংসিত ব্যাপার নয়। আপনি একটা ওষুধ যদি দুনিয়াভর প্রয়োগের ইচ্ছা রাখেন, তাহলে সবচেয়ে ভালো হল ট্রায়াল ডিজাইন করার সময় দুনিয়াজোড়া মাল্টি-সেন্টার ট্রায়াল প্ল্যান করুন। নানা জায়গায় আলাদা আলাদা করে একাধিক ট্রায়াল চালানো ভালো ব্যাপার নয়, কারণ তাহলে বিভিন্ন উৎস থেকে প্রাপ্ত তথ্যগুলি জুড়তে অসুবিধা হয়। নেহাত যদি এমন হয়, আপনার চীনে ছাড়পত্র পেতে দেরী হচ্ছে, তাই বেশী অপেক্ষা না করে আপনি আমেরিকায় শুরু করে দিলেন, আর পরে চীনের অনুমতি পেলে তখন সেখানে আলাদা করে একটা ট্রায়াল চালু করলেন, তাহলে সেটাও ভালো না, পুরোটা একটাই ট্রায়ালের মধ্যে রাখা উচিত। নইলে তথ্য সমন্বয়ে যেমন অসুবিধা, কিন্তু সবচেয়ে বড় অসুবিধা, স্যাম্পল সাইজ অর্থাৎ নিয়োজিত লোকের সংখ্যা দুটো ট্রায়ালে ভেঙে গেলে কোনোটাই পূর্ণ ক্ষমতার ট্রায়াল হল না। তবে সে সমস্যা এখানে নেই।
এখানে কলকাতার ট্রায়ালটা প্রথমে একমাত্র পরিকল্পিত ফেজ-৩ ট্রায়ালই ছিল, নাফিজের লিঙ্কে যেটার উল্লেখ আছে। সেটার ইন্টারিম মনিটরিং-এর পেপার এখানে - http://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/19819004?dopt=Abstract, যেটার ৬৭% কার্যকারিতার কথা যুধিষ্ঠিরদা বলেছেন।
কিন্তু আমার বক্তব্য, এবং সম্ভবত ওনারও বক্তব্য, যে একটা ফেজ-৩ ট্রায়াল চলাকালীন আরেকটা ফেজ-৩ ট্রায়াল করার, একই ধরনের একটা জায়গায়, কী প্রয়োজন পড়ল? নাফিজের লিঙ্ক যেটা বাংলাদেশের ফেজ-২ ট্রায়ালটার প্ল্যানের কথা বলে, সেখানে স্পষ্ট করে কিছু বলা নেই। যদি আফ্রিকার মত একটা আলাদা ধরনের দেশে করা হত, তাহলে বোঝা যেত।
এর কারণ, যেটা আইভিয়াই এর সাইট বলছে (http://www.ivi.org/event_news/news/popup_shanchol.html) - "The government of Bangladesh, in collaboration with the research institute, ICDDR,B, has also decided to conduct a cholera vaccination demonstration project in a large section of Dhaka"। সরকারই এটা পরীক্ষা করে দেখতে আগ্রহী, তাই এই অতিরিক্ত ট্রায়ালটির ব্যবস্থা। আইভিআই বা শান্তা বায়োটেক এটা নিয়ে সরকারকে চাপাচাপি করেনি, সরকারেরই ইচ্ছা। হতে পারে, সরকার কলকাতার ট্রায়ালটিকে পুরো ভরসা না করে নিজেরা খতিয়ে দেখতে ইচ্ছুক।
এবার বাংলাদেশ সরকার ঠিক কেন এটা ট্রায়াল দিতে চাইছেন, সেটার পদ্ধতিগত গোলমালের কোনো সম্ভাবনা আছে কিনা, সরকার কেন তথ্য গোপন করছেন, সেগুলো আপনারাই ভালো বুঝবেন।
(৪)
আমার মনে প্রশ্ন জাগছে, ভারত সরকারই বা কেন এটাকে অনুমোদন করছেন না? লেখায় ৩ নং লিঙ্কটা বলছে, "Even India, the only country where Shanchol is available on the private market, doesn't have plans yet for a government-run vaccination campaign." এটা ঠিক কেন? সরকার কি কলকাতার ট্রায়ালটি সম্পূর্ণ শেষ হবার অপেক্ষায়? কিন্তু সেটার তো লং-টার্ম এফেক্ট ইত্যাদি দেখতে বেশ কিছুদিন সার্ভেইলান্স চলবে, অতদিন অপেক্ষা করার উদ্দেশ্য কী? আরো বলছে, "“We are very disappointed,” says Raman Rao, Shantha's vice president for R&D." এর অর্থ কি যে ওঁরা ভারত সরকারকে অনুরোধ করেছিলেন, কিন্তু সরকার প্রত্যাখ্যান করেছে? নাকি স্রেফ সরকারের উদ্যোগের অভাব?
পিপিদা, আমি ট্রায়াল নিয়ে কাজ করি না। কেবল এখানে ক্লিনিকাল ট্রায়াল ও পাবলিক হেলথ এথিক্স নিয়ে কিছু ক্লাস করতে হয়েছে, তাতে যা শিখিয়েছি তাই থেকে বললাম। আর ফাঁসিয়েছেন বা ভারতীয় ভ্যাক্সিনের সমালোচনা ওগুলো মজা করেই বলা।
চমৎকার বিশ্লেষণ!! প্লস ওয়ানের পেপারটা ভ্যাকসিনের প্যাকেজ ইনসার্টেই রেফ হিসেবে ছিল, সেটাই শেয়ার করেছিলাম।
বর্তমান ট্রায়াল সম্পর্কে ক্লিনিকাল ট্রয়ালসে কিছু খুঁজে পেলাম না, তবে পড়ে যেটা মনে হল এই স্টাডিতে সাবজেক্টের সংখ্যার ফেরফের (১৫০ র বদলে ২৫০,০০০) ছাড়া অন্য কোন ব্যাপক পরিবর্তন হবে না। খুঁজে না পাবার আরও একটা কারণ হতে পারে ফান্ডিংটা গেটস থেকে হয়েছে এবং এনআইএইচ জড়িত না। লিংক এখানে http://clinicaltrials.gov/ct2/show/NCT01042951
আগেই বলেছিলাম সময় করে বিস্তারিত লিখতে চেষ্টা করব, এখনও সেই ইচ্ছা বহাল আছে। তবে এটুকু বলতে পারি এই স্টাডি নিয়ে এত হৈ চৈ এর কিছু নেই, কারণ এটা ওরাল ভ্যাকসিন আপনিও এটা তৈরী করতে পারবেন যদি আপনার বাড়ীতেই থাকে কলেরার জীবাণু যার নাম্বার Vibrio cholerae O139 !! ১০ মিনিট ফুটিয়ে খেয়ে ফেলেন জীবাণু গুলোকে ব্যাস আপনিও পেয়ে গেলেন কলেরা থেকে মুক্তি, যদি, আবারও বলছি, যদি আপনি জানেন এই বছর ঢাকায় O139 এর কারণে চাল ধোয়া পানির মত হাগু হবে।
টিপসই হোক আর সিগনেচার, মিরপুরের স্টাডি পপুলেশনের যে লিখিত সম্মতি নেয়া হবে সেটা অনেকেই উল্লেখ করেছেন এই ব্যাপারে নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন।
ধন্যবাদ।
মাইক্রোবস
কৌস্তুভ,
সুচিন্তিত মতামতের জন্য ধন্যবাদ। আপনার ৩ নং পয়েণ্টের শেষের কথা অতি গুরুত্বপূর্ণ।
একান্ত ব্যক্তিগত একটা মত দেই এখানে। বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগ কলেরার ব্যাপারে অন্তত: আইসিডিডিআর,বি-র পরামর্শ ছাড়া কিছু করে না বলেই জানি। আমার ধারণা, সরকার যদি এই সিদ্ধান্ত নিয়েই থাকে, সেটির পেছনে এই প্রতিষ্ঠানটির একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে (সেই সাথে আছে সরকারের দায়, সেটা ভুলে যাচ্ছি না)। সেই ভূমিকাটি কি, সেটি স্পষ্ট হচ্ছে না কোন উৎস থেকেই। আমাদের এখন এই প্রতিষ্ঠানটি কতটা মহত, কতজন জ্ঞানীগুনীজন এখানে কাজ করেন সেই আবেগের বাইরে গিয়ে এই তথ্যটি স্পষ্ট করে প্রকাশ করার জন্য দাবী জানাতে হবে। সেটি কোন অন্যায় দাবী হবে না।
গিনিপিগ হওয়া যেন আফ্রো-এশীয় দরিদ্র জনপদের নাগরিকদের জন্মগত অধিকার। ফ্রী টিকা নিতে গিয়ে কে কতোবার যে গিনিপিগ হয়েছে জানার উপায় নেই। তবে এই লেখা পড়ে মনে হলো গিনিপিগ হিসেবেও অবনতি হলো আমাদের। আমেরিকার গিনিপিগ থেকে ভারতীয় গিনিপিগে ডিমোশন হলো আমাদের।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
যারা দেশ চালায় তারা তো আর ঐ ভ্যাকসিন নেয় না। তাদের হাচি আসলেও বিলাতে গিয়া ডাক্তার দেখায়।
@যুধিষ্ঠির, আপনাকে ধন্যবাদ এই ভীষণ জরুরী লেখাটির জন্য। আমরাও বিষয়টি আমাদের মতো করে খোজখবর করার চেষ্টা করছিলাম। আপনার লেখাটি পড়ার পর সেটি অনেক সহজ হয়ে আসে। আমরা এ বিষয়ে সামহোয়ারে একটি পোষ্ট দিয়েছি....
বিষাক্ত মারকারি যুক্ত কলেরা টিকার গিনিপিগ মিরপুরবাসী!
আপনার যুক্তিগুলোর পাশাপাশি আমরা আরেকটা বিয়য়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইছি, সেটা হলো ভ্যাকসিনটিতে প্রিজারভেটিভ হিসেবে ক্ষতিকর THIOMERSAL (০.০২%) এর ব্যাবহার প্রসঙ্গে।
এই THIOMERSAL (যেটা যুক্তরাষ্ট্রে এখন Thimerosal নামে পরিচিত) মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর একটি উপাদান যার প্রায় অর্ধেক অংশই হলো বিষাক্ত মারকারি।
সূত্র: Thimerosal, also and formerly known as Thiomersal, is a compound that most often contains approximately 49% mercury (by weight) http://www.thimersol.com/।
মারকারি একটি ভয়ংকর নিউরোটক্সিন হিসেবে পরিচিত যা নির্ধারিত মাত্রার বেশি পরিমাণে শরীরে ঢুকলে মস্তিস্ক-কিডনি-ফুসফুসের স্থায়ী ক্ষতি হয়, নানান ধরণের নিউরোলজিক্যাল অসুখ হয়। তাছাড়া অটিজমের সাথে মার্কারির সম্পর্ক থাকার অভিযোগ আছে।
যে সিডিসি’র সহযোগীতায় বাংলাদেশে এই ট্রায়ালটি হচ্ছে সেই সিডিসি’র ওয়েবসাইটে উপাদানটি সম্পর্কে বলা হয়েছে:
সূত্র: http://www.cdc.gov/vaccinesafety/concerns/thimerosal/index.html
অর্থাৎ “ইনজেকশানের স্থানে সামান্য লাল দাগ হওয়া ও ফুলে যাওয়া ছাড়া থাইমারসাল এর ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে কোন গ্রহনযোগ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবু, ১৯৯৯ সাল থেকে পাবলিক হেলথ সার্ভিস এজেন্সি, আমেরিকান একাডেমি অব পেডিয়াট্রিকস এবং ভ্যাকসিন নির্মাতারা একমত হয়েছে যে সাবধানতা হিসেবে ভ্যাকসিন থেকে থাইমারসাল এর পরিমাণ কমানো বা একেবারে বাদ দেয়া উচিত।“
যে কারণে, যুক্তরাষ্ট্রের ঔষধ নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা FDA এর ওয়েবসাইট অনুসারে, ১৯৯৯ এর পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে কেবল মাত্র থায়োমারসাল মুক্ত টিকারই লাইসেন্স প্রদান করা হয়েছে। সূত্র: all new vaccines licensed since 1999 are free of thimerosal as a preservative http://www.fda.gov/biologicsbloodvaccines/vaccines/questionsaboutvaccines/ucm070430.htm
এছাড়া হু’র নির্দেশনাতেও মারকারি বিহীন প্রিজারভেটিভ ব্যাবহারের কথা বলা হয়েছে:
সূত্র: WHO Expert Committee on Biological Standardization 52nd Report, page 137, 2004
যুক্তরাষ্ট্রের এনভায়রনমেন্টাল প্রটেকশান এজেন্সি ইপিএ’র মানদন্ড অনুযায়ী, প্রতি কেজি ওজনের জন্য মারকারির দৈনিক সহনীয় মাত্রা হলো ০.১ মাইক্রোগ্রাম।(সূত্র: According to the EPA, the maximum acceptable daily risk level is 0.1 mcg/kg http://www.drhansen.com/?p=374)
তাহলে, ১০ কেজি ওজনের শিশু থেকে শুরু করে ৭০ কেজি ওজনের পূর্ণ বয়স্ক মানুষের জন্য দৈনিক সহনীয় মাত্রা হলো ১ মাইক্রোগ্রাম থেকে শুরু করে ৭ মাইক্রোগ্রাম।
এখন, ০.০২% (w/v) এর থায়োমারসাল এর মানে হলো প্রতি ১০০ মিলি ভ্যাকসিনে থাইয়োমারসালের পরিমাণ ০.০২ গ্রাম= ০.০২x১০০০,০০০ মাইক্রোগ্রাম = ২০,০০০ মাইক্রোগ্রাম
সুতরাং ১ মিলি ভ্যাকসিনে থাইয়োমারসাল এর পরিমাণ ২০,০০০/১০০ মাইক্রোগ্রাম= ২০০ মাইক্রোগ্রাম
অর্থাত ১.৫ মিলি ভ্যাকসিনে থাইয়োমারসালের পরিমাণ ৩০০ মাইক্রোগ্রাম।
থাইয়োমারসালের ৪৯.৬% হলো মারকারি যা মানবদেহের জন্য বিষাক্ত।
এ হিসেবে ১.৫ মিলি ভ্যাকসিনে মারকারির পরিমাণ প্রায় ১৫০ মাইক্রোগ্রাম।
তাহলে, দেখা যাচ্ছে, ০.০২% থায়োমারসেল যুক্ত কলেরা ভ্যাকসিনটিতে শিশুদের জন্য সহনীয় মাত্রার ১৫০ গুন এবং বড়দের ক্ষেত্রে সহনীয় মাত্রার চেয়ে ২১ গুণ বেশি মারকারী আছে!
এখন প্রশ্ন হলো, এই বিষাক্ত মারকারিযুক্ত মাত্র দুই বছর মেয়াদি ভ্যাকসিন দিয়ে লাভ কার হবে? পানি ও পয়:ব্যাবস্থা নষ্ট রেখে(যেটার সঠিক ব্যাবস্থাপনার মাধ্যমে প্রায় ১০০% কলেরা প্রতিরোধ করা সম্ভব), সেখানে মাত্র ৬৭% কার্যকরিতার এই ভ্যাকসিনের পেছনে প্রতি দুইবছর পরপর দেশের জনগণের কোটি কোটি টাকা খরচের কি যৌক্তিকতা থাকবে, ভ্যাকসিন কম্পানির মুনাফা ছাড়া? মিরপুরবাসীকে কি এই বিষাক্ত মারকারি আর ৬৭% সাফল্যের কাহিনী শুনিয়ে তারপর ট্রায়াল করা হচ্ছে?
অসাধারণ গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য যোগ করলেন।
ধন্যবাদ আপনাকে।
এ যে দেখি কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরোচ্ছে! অনেক ধন্যবাদ এই গুরুত্বপূর্ণ দিকটি তুলে ধরার জন্য। এফডিএ-র ওয়েব সাইট দেখে মনে হচ্ছে প্রচলিত ভ্যাকসিনে থায়োমারসালের মাত্রা ০.০০৩% থেকে ০.০১%, তার মানে এই ভ্যাকসিনটিতে প্রচলিত যে সর্বোচ্চ মাত্রা, তার থেকেও দ্বিগুন পরিমাণ থায়োমারসাল ব্যবহার করা হয়েছে। আইসিডিডিআর,বি-র বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে এ ব্যাপারে তাদের অবস্থান জানতে চাই। আরও কয়েকটা প্রশ্ন মনে আসছে এ ব্যাপারে:
১. থায়োমারসালের ব্যবহারের কারণেই কি এই ভ্যাকসিনের দাম কম রাখা সম্ভব হয়েছে?
২. থায়োমারসালের উচ্চমাত্রার উপস্থিতি থাকা স্বত্বেও এটি ভারতীয় কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পেলো কিভাবে? ভারতের স্বাস্থ্যনীতি থায়োমারসাল সম্পর্কে কি বলে?
৩. WHO কেন ২০০৯ এর সেপ্টেম্বর থেকে এর অনুমতির আবেদনপত্র নিয়ে বসে আছে, সঙ্গে সঙ্গে রিজেক্ট করে নি কেন?
৪. বাংলাদেশে প্রচলিত অন্যান্য ভ্যাকসিনে এই উপাদানটির মাত্রা কেমন?
৫. উপাদানটি সম্পর্কে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের অবস্থান কোথায়? তারা এটির উপস্থিতি বা অস্তিত্ব সম্পর্কে আদৌ কিছু জানে কি না?
৬. আর সব শেষে আবারও, কলকাতায় একটি বড় আকারের ফেজ-থ্রি ট্রায়াল হবার পরও আসলে বিজ্ঞানীরা কি খুঁজছেন বাংলাদেশের এই ম্যাস ট্রায়ালে?
১. থায়োমারসালের ব্যবহারের কারণেই কি এই ভ্যাকসিনের দাম কম রাখা সম্ভব হয়েছে?
সম্ভবত না।
২. থায়োমারসালের উচ্চমাত্রার উপস্থিতি থাকা স্বত্বেও এটি ভারতীয় কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পেলো কিভাবে? ভারতের স্বাস্থ্যনীতি থায়োমারসাল সম্পর্কে কি বলে?
আমার জানা নেই।
৩. WHO কেন ২০০৯ এর সেপ্টেম্বর থেকে এর অনুমতির আবেদনপত্র নিয়ে বসে আছে, সঙ্গে সঙ্গে রিজেক্ট করে নি কেন?
এটি একটি প্রিসারভেটিভ এবং কম মাত্রায় এটি ক্ষতিকর নয় হয়ত (ফার্মাসিস্টরা আরও ভাল বলতে পারবেন)। এখন উন্নত বিশ্বে যদি ০,০১% থাকে তাতে সমস্যা নেই কারণ তাদের কালে ভদ্রে বিদুৎ যায় আর এখানে উল্টা তাই হয়ত ০,০২% ব্যবহৃত হয়েছে (এটি আমার স্পেকুলেশন, এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা আরও ভাল বলতে পারবেন) ভ্যাকসিনের সেল্ফ লাইফ বাড়ানৌর জন্য।
৪. বাংলাদেশে প্রচলিত অন্যান্য ভ্যাকসিনে এই উপাদানটির মাত্রা কেমন?
জানা নেই
৫. উপাদানটি সম্পর্কে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের অবস্থান কোথায়? --জানা নেই
তারা এটির উপস্থিতি বা অস্তিত্ব সম্পর্কে আদৌ কিছু জানে কি না?--কেউ না কেউত অবশ্যই জানেন (যেমন, কেমিস্ট বা ফার্মাসিস্ট)
৬. আর সব শেষে আবারও, কলকাতায় একটি বড় আকারের ফেজ-থ্রি ট্রায়াল হবার পরও আসলে বিজ্ঞানীরা কি খুঁজছেন বাংলাদেশের এই ম্যাস ট্রায়ালে?
এই ভ্যাকসিনটা বাংলাদেশের মানুষদের ক্ষেত্র কার্যকর কিনা সেটাই খুঁজছে, আবার ঘুড়িয়ে বললে বলতে হয় বর্তমান ভ্যাকসিনটা কতজন মিরপুরবাসী মানুষকে রক্ষা করতে পারবে। কলকাতায় ৬০-৭০% কে রক্ষা করতে পারে তাই এখানেও যে ৬০-৭০% কেই রক্ষা করবে তার গ্যারান্টি নাই। সেটা কমও হতে পারে আবার বেশীও হতে পারে।
দিনমজুরের সামহোয়্যারের ব্লগে একটা কমেন্ট করেছিলাম। সেটা এখানে শেয়ার করলাম।
http://www.somewhereinblog.net/blog/dinmojurblog/29335078#c6073538
বিবর্তনবাদী বলেছেন: আপনি অনেক কিছুই লিখলেন। আপনার লেখা পড়তে পড়তেই আমি এই প্রিজারভেটিভটির সম্পর্কে ইন্টারনেটে কিছু লেখা পড়া করলাম। পাঁচ মিনিটেই WHO এর সাইটে নিচের লেখাটি পেলাম। লেখাটি পড়বার পর তেমন চিন্তার বিষয় মনে হচ্ছে না।
http://www.who.int/vaccine_safety/topics/thiomersal/statement_jul2006/en/index.html
Statement on thiomersal
The Global Advisory Committee on Vaccine Safety concludes that there is no evidence of toxicity in infants, children or adults exposed to thiomersal (containing ethyl mercury) in vaccines.
July 2006
In 1999, concerns were raised in the United States of America about exposure to mercury in vaccines. This was based on the realization that the cumulative amount of mercury in the infant immunization schedule potentially exceeded the recommended threshold set by the United States government for methyl mercury. However, thiomersal, the preservative in some vaccines, contains ethyl mercury not methyl mercury. The Global Advisory Committee on Vaccine Safety (GACVS) first assessed this issue at a special meeting in August 2000. The Committee review has been ongoing since then.
Expert consultation and data presented to the GACVS indicate that the pharmacokinetic profile of ethyl mercury is substantially different from that of methyl mercury. The half-life of ethyl mercury is short (less than one week) compared to methyl mercury (1.5 months) making exposure to ethyl mercury in blood comparatively brief. Further, ethyl mercury is actively excreted via the gut unlike methyl mercury that accumulates in the body.
Four independently conducted epidemiological studies investigating associations and frequency of neurobehavioural disorders in relation to vaccination with thiomersal-containing vaccines have been completed in the United Kingdom of Great Britain and Northern Ireland and Denmark. The findings from these studies do not challenge the safety of existing thiomersal-containing vaccines in infants. Recently two studies were published alleging reduction of neurodevelopmental disorders in the United States of America following discontinuation of thiomersal-containing vaccines in the national immunization programme. The Committee found the conclusions made by the authors unconvincing due to the study design, and the data source.
The GACVS reviewed available information on an ongoing thiomersal pharmacokinetic study in macaque monkeys and assessed the validity of animal models in studying associations between thiomersal and neurobehavioural disorders in humans. The Committee was informed of ongoing human neurobehavioural studies and thiomersal exposure in the United States of America and Italy and of a study on the suitability of thiomersal-free vaccines in multidose vial presentations, assessed by retained sterility for up to 30 days.
On the basis of the foregoing, the GACVS concluded that the most recent pharmacokinetic and developmental studies do not support concerns over the safety of thiomersal (ethyl mercury) in vaccines. The Committee concluded, and advises accordingly, that there is no reason on grounds of safety to change current immunization practices with thiomersal-containing vaccines, as the risks are unproven. However, data for well-nourished neonates born at term cannot necessarily be extrapolated to preterm or malnourished infants. Studies on the latter group would be difficult to conduct, but the GACVS encourages further research.
The GACVS will continue to review the evidence, including any epidemiological data, that might emerge from on-going studies.
@বিবর্তনবাদী, আরেকটু ঘাটাঘাটি করলেই আপনি দেখতে পাবেন(আমাদের লেখাতেও উল্ল্যেখ করেছি), thiomersal কে হু, সিডিসি, এফডিএ ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানগুলো সরাসরি ব্যান না করলেও ১৯৯৯ সালের পর থেকে ভ্যাকসিনে এর ব্যাবহার প্রায় বন্ধই করে দিয়েছে.. আবার যেসব ভ্যাকসিনে এর ব্যাবহার হয় তাও গড়ে ২৫ মাইক্রোগ্রামের উপরে না.. এতই যখন নিরাপদ এই thiomersal তাহলে যুক্তরাষ্ট্রে কেন এখন আর thiomersal যুক্ত ভ্যাকিসিনের লাইসেন্স দেয়া হয় না, কেন ১৯৯৯ এর পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে কেবল মাত্র থায়োমারসাল মুক্ত টিকারই লাইসেন্স প্রদান করা হয়েছে?? ও, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকের জীবনের বেলায় যে সতর্কতা , বাংলাদেশের গরীব মানুষের বেলায় সেটা প্রযোজ্য নয় নাকি!
নীচে কিছু লেখার লিংক দিলাম, পড়ে দেখতে পারেন...
Study Proves Link Between Thimerosal and Autism Neurotoxicity
Study "Disproving" Mercury-Autism Link Published in Journal with Financial Ties to Vaccine Manufacturers
The great thimerosal cover-up: Mercury, vaccines, autism and your child's health
আবার হু, সিডিসি, এফডিএর সাবধানতা ছাড়াও যে বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ তা হলো টিকাতে মারকারি বা পারদের পরিমাণ। আমরা তো হিসেবে করে দেখিয়েছি যে, ০.০২% থায়োমারসেল যুক্ত কলেরা ভ্যাকসিনটিতে শিশুদের জন্য সহনীয় মাত্রার ১৫০ গুন এবং বড়দের ক্ষেত্রে সহনীয় মাত্রার চেয়ে ২১ গুণ বেশি মারকারী আছে! তাহলে কোন যুক্তিতে এই পরিমাণ মারকারি থাকাটা আমাদের কাছে দুশ্চিন্তার বিষয় হবে না?
দুর্দান্ত সব মন্তব্যসহ এই গুরুত্বপূর্ণ লেখাটা পড়ে মিরপুরবাসীর একজন হিসেবে আমি আসলেই বুঝতে পারছি না যে, আমি কি আতঙ্কিত হবো, না কি নিশ্চিন্ত হবো !! বিশেষ করে দিনমজুরের কমেন্টটি পড়ার পর তো চিন্তিত হয়ে গেলাম !!!
বাধ্য হয়েই এখন ব্লগটাতে শেষ পর্যন্ত পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে....
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
@ দিনমজুর - আপনার কমেন্টের উত্তরে সামুতে কিছু লিখেছি। এখানে WHO এর সাইট থেকে কিছু তুলে ধরলাম
http://www.who.int/vaccine_safety/topics/thiomersal/questions/en/
Why are some countries withdrawing thiomersal if there is no risk?
Some national public health authorities are striving to replace thiomersal-containing vaccines as a precautionary measure. There is currently no evidence of toxicity from mercury contained in vaccines. There are only a few tested, efficacious and safe alternatives to thiomersal-containing vaccines. Current production capacity for such vaccines is limited and insufficient to cover global needs.
http://www.thedailyshow.com/watch/mon-january-31-2011/bill-gates
যেহেতু এই পোস্টের প্রশ্ন/কনসার্নের আমার ব্যাখ্যা/মতামত অনেক বড় হবে তাই ধাপে ধাপে দিতে চেষ্ট করছি।
প্রশ্ন/কনসার্ন: যে ভ্যাকসিন ব্যবহার করা হবে সেটি ভারতে তৈরী এবং সস্তা।
উত্তর: ভারতে কেন তৈরী তা জানি না। তবে Dukoral থেকে সস্তা কারণ এটাতে
Recombinant cholera toxin B subunit (rCTB) নেই। rCTB নেই দেখে এই ভ্যাকসিন অকার্যকর বা কম কার্যকর সেটা ভাবার কোন কারণ নেই।
প্রশ্ন/কনসার্ন: এটাও জানা গেলো আমেরিকার সিডিসি (সেণ্টার ফর ডিজিজ কণ্ট্রোল অ্যাণ্ড প্রিভেনশন)-ও এই ট্রায়ালের সাথে জড়িত, এবং তারা বেশ উৎসুক হয়ে এর ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করছে।
উত্তর: শুধু সিডিসি না, দুনিয়া জুড়ে যারা এই বিষয়ে কাজ করেন তারা সবাই উৎসুক।
প্রশ্ন/কনসার্ন: এবার সেটা হয়তো সম্ভব হবে কারন এই নতুন প্রতিষেধকটি আগেরটির চেয়ে দামে দশ ভাগের এক ভাগ।
উত্তর: একমত এবং আমার মতে এটাই সবথেকে বড় চুম্বক অংশ এই ট্রায়ালের। এই ট্রায়াল যদি সফল হয় তাহলে আরও অনেক ভ্যাকসিন আমরা (বাংলাদেশ) তৈরী করতে পারব কম খরচে।
প্রশ্ন/কনসার্ন: প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক,এই রাখঢাক কেন?
উত্তর: জানা নেই কেন সেন্টার (আইসিডিডিআরবি) বা সরকারের কেউ প্রেস রিলিজ বা ওয়েবে দেয় নি। আর দেয়নি দেখেই যে রাখঢাক সেটা ভাবারও কোন কারণ নেই।
প্রশ্ন/কনসার্ন:
২.১. ভ্যাকসিনটার নাম হলো ShanChol১,২। নির্মাতা ভারতের Shantha Biotechnics, যেটি ফ্রান্সের Sanofi Aventis-এর একটি প্রতিষ্ঠান। সহযোগিতায় ছিলো সিউল ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান International Vaccine Institute (IVI)। একজন মানুষকে ভ্যাকসিনটির দুই ডোজ নিতে হয় দুই সপ্তাহের ব্যবধানে। শুধু ভ্যাকসিনের মোট দাম পড়ে ৪ ইউ এস ডলারের মত।৩ এটা নিয়ে এত হৈচৈ এর কারণ হলো এর আগে যে ভ্যাকসিনটা প্রচলিত ছিলো (Dukoral), সেটি অত্যন্ত কার্যকর, কিন্তু দাম ৪০ ইউ এস ডলারের বেশি, তাই ব্যাপক আকারে টীকা দেয়া বাস্তবসম্মত ছিলো না।৩
উত্তর: Dukoral তৈরীর মূল উদ্দেশ্য ছিল যারা এই এলাকায় বেড়াতে আসবে তারা যেন ডায়রিয়া এবং কলেরাতে (দুটি ভিন্ন রোগ) না ভুগে তাদের জন্য। মাস পিপলকে ভ্যাকসিনাইজড করা তাদের উদ্দেশ্য ছিল না। আর এটা কেন দামী এবং বর্তামান ভ্যাকসিন কেন সস্তা সেটা উপরে ব্যাখ্যা করেছি। আর সস্তা ভ্যাকসিন তৈরীর কারণটা গেটস থেকে কপি পেস্ট করছি:
Cholera
Until recently, there was one internationally licensed oral cholera vaccine available (Dukoral,® a killed, wholecell plus toxin B subunit vaccine produced by Crucell/SBL
Vaccines). However, only Vietnam, which began using a locally produced version in 1997, has employed the vaccine, due to its prohibitive cost.
In July 2006, we provided funding to the International Vaccine Institute (IVI) to implement the Cholera Vaccine Initiative (CHOVI), which aims to develop and deploy safe and effective oral cholera vaccines in populations at risk for endemic or epidemic cholera. The initiative is focusing on the development and testing of two oral cholera vaccines: 1) a newly reformulated killed, whole-cell vaccine based on the one used in Vietnam, and 2) a live, attenuated Peru-15 strain vaccine.
Because the approved killed, whole-cell cholera vaccine requires two doses and provides only moderate levels of protection (60 percent to 80 percent), IVI is also developing
a live-attenuated oral cholera vaccine that could confer high-grade, long-term protection after a single dose.
http://www.gatesfoundation.org/global-health/Documents/enteric-and-diarrheal-diseases-strategy.pdf
প্রশ্ন/কনসার্ন:
২.২. ভারতের স্বাস্থ্য বিভাগ এটি অনুমোদন করছে,কিন্তু বিশ্ব সাস্থ্য সংস্থা (WHO) এখনও করে নি।
উত্তর: এখনই যদি অনুমোদন দেয় তাহলে ৪০ ডলার দিয়ে কোন পর্যটক ডুকারোল কিনে ডুকরে কেঁদে উঠবে না
প্রশ্ন/কনসার্ন:
চিন্তার বিষয় হলো, ভারত সরকার ভ্যাকসিনটি ব্যবহারের অনুমোদন দিলেও জাতীয় পর্যায়ে বিশাল আকারের কোন কর্মসূচী নেয়ার কোন পরিকল্পনা তারা অনুমোদন করেনি।৩
উত্তর: জানা নেই
প্রশ্ন/কনসার্ন:
এমন কি হতে পারে যে একটি ভ্যাকসিন অনুমোদন করার আগে হয়তো WHO বড় আকারের ট্রায়াল আশা করে, যেটা এখন বাংলাদেশে করা হচ্ছে?
উত্তর: বাংলাদেশের ট্রায়াল সফল হলেও যে হু সঙ্গে সঙ্গে অনুমোদন দিয়ে দিবে সেটা ভাবার কোন কারণ নেই। (উদাহরণ হিসেবে বলা যায় জাতীয় টিকা কর্মসূচীতে হেমোফিলাস ইনফ্লুএনজা ভ্যাকসিন (Hib) ঢুকানোর জন্য বাংলাদেশকে রীতিমত যুদ্ধ করতে হয়েছে, এবং যুদ্ধটা করেছেন ঢাকা শিশু হাসপাতালের অনুজীববিদ সমীর সাহা, পিএচডি)
প্রশ্ন/কনসার্ন:
পাকিস্তানে বন্যার পরে কলেরার প্রকোপ ঠেকানোর জন্য এই একই ড্রাগ দিয়ে বড় আকারে টীকা কার্যক্রম চালানোর জন্য IVI গত বছর ব্যাপক তদবীর চালিয়েছিলো, কিন্তু পাকিস্তান সরকার রাজী হয়নি৩।
উত্তর: ওটা পাকিরা জানে। আর ভ্যাকসিন দিতে রোগ হবার আগে, রোগ হয়ে গেলে তারপর ভ্যাকসিন দিলে কোন কাজ হবে না। আমার মনে হয় যারা তখনও আক্রান্ত হয় নি তাদেরকে ভ্যাকসিন দেবার কথা বল হচ্ছে এখানে।
প্রশ্ন/কনসার্ন:
২.৩. ভারত ও পাকিস্তান সরকারের এই অনীহা আসলে বেশ যুক্তিসঙ্গত – এর কারণটি মূলত রোগ প্রতিরোধের বাজেটের সঠিক ব্যবহার নিয়ে। WHO সবসময়ই বলে এসেছে, কলেরা প্রতিরোধে ভ্যাকসিন কখনোই একমাত্র সমাধান নয়, বরং পরিস্কার খাবার পানি আর স্বাস্থ্যকর পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থার অবকাঠামো তৈরী করাটা প্রাথমিক লক্ষ্য হওয়া উচিৎ। তাদের মতে ভ্যাকসিনের ব্যবহার করতে হবে একটি সহযোগী পদক্ষেপ হিসেবে, অথবা ভুমিকম্প বা বন্যার মত বড় ধরনের কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষেত্রে শেষ রক্ষা হিসেবে।৪
উত্তর: একমত। পরিস্কার খাবার পানি খেলে কলেরা হবে না, কিন্তু যতদিন সবার জন্য পরিস্কার পানি পাওয়া যাচ্ছে না ততদিন কলেরার জীবাণু বসে থাকবে না। তারা বছর বছর কলেরা করেই যাবে। তাই দুটো একসাথেই চালাতে হবে। তাই হু, ভারতীয় বা পাকি সরকাররের অনীহা মোটেও যুক্তিসঙ্গত নয়। হু এর কারণ ব্যবসায়িক ,উপরে বলেছি। ভারতীয় আর পাকি সরকারের কারণটা পলিটিকাল/সোশ্যাল কারণ তাদের বাংলাদেশের মত এত স্ট্রং ভ্যাকসিন ডিপলয়মেন্ট ইনফ্রাস্টাকচার নেই। এই ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বে রোল মডেল।
(চলবে)
ঘ্যাচাং
এ বিষয়ে কালের কণ্ঠের রিপোর্টগুলো:
ষোলো কোটি গিনিপিগের দেশ
মিরপুরের গিনিপিগরা
কলেরা টিকা সঞ্চলে মাত্রাতিরিক্ত বিষাক্ত সিসা
এই টিকা তেমন কোনো কাজে আসে না
কলেরার টিকা বিতর্ক (এই রিপোর্টের ভাষাটার সাথে আমার এই পোস্টের বেশ কিছুটা মিল পাওয়া যায়। বৃহত্তর স্বার্থের কথা ভেবে আপাতত সে আলোচনায় গেলাম না)
ড. ফেরদৌসি কাদরী-র বক্তব্য: সরকার যদি অনুমতি দেয় সেখানে আর বাইরের অনুমতির প্রয়োজন কী?।
ড. খন্দকার মো. সিফায়েত উল্লাহ, পরিচালক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর-এর বক্তব্য: যদি কোনো সমস্যা আসে তাহলে তো আমরা আছিই।
প্রশ্ন/কনসার্ন:
২.৪. যদিও নতুন ভ্যাকসিনটির দাম আগেরটির চেয়ে দশ ভাগের এক ভাগেরও কম, তারপরও কলেরার জন্য জাতীয় পর্যায়ে প্রতিষেধক টীকা দানকে WHO এবং অন্য অনেক বিশেষজ্ঞরা কার্যকর পদক্ষেপ মনে করেন না।
উত্তর: কথায় বলে সস্তার তিন অবস্থা, তাই হয়ত হু এবং উন্নত বিশ্বের বিশেষজ্ঞরা বলছে এটা ভাল নয়। যদি খেতে হয়ই তাহলে বেশী দামেরটাই খাও। এখন এটা পাবলিকের ব্যাপার কার্যত একই জিনিষ তারা ৪০ ডলার দিয়ে কিনে খাবে না ৪ ডলার দিয়ে কিনে খাবে সেটাই দেখার বিষয়। আমিতো মনে করি ৪ ডলারও অনেক বেশী। কয়েকটা কলেরার জীবাণু কে সিদ্ধ করে বা ফরমালিন দিয়ে ট্রিট করে একটা প্রিসারভেটিভ দিয়ে বোতলে ভরে বাজারজাত করতে ৪ ডলার লাগার কথা না (এটা আমার ব্যাক্তিগত মত)।
প্রশ্ন/কনসার্ন:
ভ্যাকসিনের খরচ ছাড়াও এরকম একটি কর্মসূচি চালাতে অন্যান্য যে খরচ হয় সেটি অনেক। ইন্দোনেশিয়ার সুনামির পরে বান্দা আচেহতে কলেরার পূর্বপ্রচলিত ভ্যাকসিন Dukoral প্রয়োগের সময় মাথাপিছু অতিরিক্ত ৮ ডলার লেগেছিলো শুধু প্রাথমিক ডোজগুলো দিতেই ৩। তাদের মতে, এর পেছনে টাকা খরচ করার চাইতে সমপরিমাণ টাকা দিয়ে যদি খাবার পানি এবং স্যানিটেশনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা যায়, সেটি বাংলাদেশের মত দেশের জন্য বেশি কার্যকর।
উত্তর: ধরুন সিডর/সুনামি/ক্যাটরিনার আগে ঐসব এলাকায় খাবার পানির সুব্যবস্থা ছিল। এই মাপের বড় একটা প্রকৃতিক দুর্যোগের পরে কি সেই সুব্যবস্থা অক্ষুন্ন থাকবে? তাই খাবার পানি, স্যানিটেশন এবং ভ্যাকসিনেশন সব কিছুই সমান তালে চালাতে হবে বাংলাদেশের মত প্রকৃতিক দূর্যোগপূর্ণ দেশে।
প্রশ্ন/কনসার্ন:
তাছাড়া জাতীয় পর্যায়ে ভ্যাকসিনেশনের ক্ষেত্রে কলেরার ভাইরাসকে ঠেকানোর চাইতে pneumococcus (নিউমোনিয়ার জীবানু) আর rotavirus (জটিল ডাইরিয়ার জীবানু) এগুলোকে ঠেকানো বেশি জরুরী আর কার্যকর ৩। একটি দাতা সংস্থা Global Alliance For Vaccines And Immunisation (GAVI) এর মধ্যেই ঘোষনা করেছে যে ২০১৩ পর্যন্ত তারা কোনরকম কলেরা টীকাদান কর্মসূচীতে অনুদান দেবে না, যাতে করে তারা pneumococcus এবং rotavirus-এ বেশি মনোযোগ দিতে পারে৩।
উত্তর: নিউমোনিয়া করবে নিউমোনিয়ার জীবাণু, রোটাভাইরাস জনিত ডায়রিয়া করবে রোটাভাইরাস, সিগেলোসিস করবে সিগেলা, সালমোনেসিস করবে সালমোনেলা আর কলেরা করবে কলেরার জীবাণু। এগুলো সবই লাইফ-থ্রেটেনিং ডিসিজ। এই রোগগুলোর কোনটাকেই দ্বিতীয় শ্রেণীর মর্যাদা দেয়া যাবে না। তাই নিউমোনিয়ার জন্য ভ্যাকসিনে ফান্ডিং দেয়া হবে কিন্তু কলেরার বা সিগেলোসিসের জন্য দেয়া হবে না এটা ঠিক না। আর একটা ভ্যাকসিন তৈরী করার পরে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকারও উপায় নেই। ভ্যাকসিন/ঔষধ (বিশেষ করে এন্টিবায়োটিক) ডেভেলপমেন্ট একটা চলমান প্রক্রিয়া।
প্রশ্ন/কনসার্ন:
২.৫. ShanChol এর প্রাথমিক ডোজের কার্যকারিতা বছর দুয়েকের মধ্যে অনেক কমে যায়৩, এবং তখন বুস্টার ডোজ দেয়া জরুরি। এই খরচটি মূল হিসাবে ধরলে, ভ্যাকসিন কর্মসূচীর পেছনে টাকা খরচ করার উপযোগিতা আরও কমে যায়। তারপরও প্রশ্ন থাকে বাংলাদেশের মত তথ্য অব্যবস্থাপনা আর স্বাস্থ্য অসচেতনতার দেশে এই বুস্টার ডোজটি নিশ্চিত করা কতটুকু সম্ভব সেটি নিয়ে।
উত্তর: যেহেতু এটা একটা হিট-কিলড/ফরমালিন ট্রিটেট ভ্যাকসিন (পলিস্যাকারাইড বেইসড) সেহেতু এটা প্রোটিন বেইসড ভ্যাকসিনের মত দীর্ঘস্থায়ী সুরক্ষা দিতে পারে না। তাই বুস্টার ডোজের প্রোজন হয়। এই জাতীর ভ্যাকসিনকে সেফ ভ্যাকসিন হিসেবে ধরা হয় (কারণ এটা ওরাল ভ্যাকসিন এবং এর পার্শপ্রতিকি্রিয়া কম আর হলেও ম্যানেজএবল)। প্রোটিন বেসড ভ্যাকসিন নিয়ে গবেষণ চলছে। ভাগ্যভাল হলে খুব শীঘ্রই পাওয়া যাবে হয়ত, কিন্তু কবে সেটা কেউ জানেন না। তাই এখন এই ভ্যাকসিন দেয়া যাবে না বা অর্থ খরচ হবে সেটা বলাটা ঠিক না। কারণ মানুষের জীবনের চেয়ে মূল্যবানত আর কিছু না!! আর বাংলাদেশকে এতটা অসচেতন ভাবার কোন কারণ নেই। জাতীয় টীকাদান কর্মসূচীই তার প্রমাণ। একজন মা-বাবা অগ্রাণ (অগ্রাহয়ন) মাসের পত্থম রবিবার কবে সেটা ঠিকই মনে রাখেন যখন মাঠকর্মী আফা (আপা) বলে দেন।
প্রশ্ন/কনসার্ন:
২.৬. অন্যসব ট্রায়ালের মতই এখানে প্ল্যাসিবো ব্যবহার করা হবে। অর্থাৎ আড়াই লাখ লোকের এক তৃতীয়াংশ লোককে আসলে ভ্যাকসিন দেয়া হবে না, এবং এই ৮০ হাজার লোককে কণ্ট্রোল গ্রুপ হিসেবে পর্যবেক্ষণে রাখা হবে।
উত্তর: প্ল্যাসিব অথবা কন্ট্রোল গ্রুপ ছাড়া কিভাবে স্টাডি করবেন একটা ট্রায়াল। যদি আমার ভুল না হয়ে থাকে তাহলে এটা ডাবল-ব্লাইডেড স্টাডি। অর্থাৎ কে ভ্যাকসিন/প্লাসিবো পেল আর কে পেল না সেটা যে ভ্যাকসিন খাওয়াবে বা যে এনালাইসিস করবে কেউ জানবে না এবং সব সাবজেক্ট কে একটা সিরিয়াল নাম্বার (ভ্যাকসিন বোতলের গায়ে লেখা থাকার কথা) দেয়া হবে। ল্যাবে যখন টেস্ট করা হবে ইমিউনলজিকাল এনালাইসিস দেখে ডাটা ইন্টারপ্রিট করার পরেই প্রয়োজন হলে সবার সম্মতিতে সিরিয়াল নাম্বারের এগেইন্সেটে সাবজেক্টকে খুজে বের করা হবে। এবং সেটার জন্য সেই কোম্পানির ডাটাও লাগবে।
প্রশ্ন/কন্সার্ন:
২.৭ কলকাতায় ২০০৬ সালে ShanChol-এর একটি ফেজ-থ্রী ট্রায়াল শুরু হয়েছে ৩,৫। এখনও এটি চলছে কি না সে ব্যাপারে কোন তথ্য আমি পাইনি। তবে এর অন্তর্বর্তী ফলাফল এর মধ্যেই প্রকাশ করা হয়েছে। এটুকু মোটামুটি বোঝা যাচ্ছে যে এই ট্রায়ালটি ৬৬০০০-৭০০০০ লোকের উপরে চালানো হয়েছে। নতুন কোন সাবজেক্ট আর নেয়া হচ্ছে না, তবে এই ৭০ হাজার মানুষ হয়তো এখনো পরীক্ষাধীন আছেন। অনুমান করছি সে কারণে এটিকে এখনও চলমান ট্রায়াল বলা যেতে পারে। বাংলাদেশে যে কোন পর্যায়ের ট্রায়াল চলছে সেটি আমি জানতে পারিনি। উইকিপিডিয়া থেকে জানতে পারছি, ফেজ-থ্রী ট্রায়াল একটার বেশি করা হতে পারে। এর পরের ধাপ হলো ফেজ-ফোর ট্রায়াল, যেটি করা হয় শুধুমাত্র ভ্যাকসিন বাজারজাতকরণের অনুমতি পেলেই। সেটি যেহেতু এখনও পাওয়া যায় নি, তাহলে এটা ধরে নেয়া যেতে পারে যে বাংলাদেশে যেটি হচ্ছে, সেটিও আসলে ফেজ-থ্রী ট্রায়াল। তাহলে এটি কলকাতার ফেজ-থ্রী ট্রায়াল থেকে আলাদা কেন? তাছাড়া এটাও উল্লেখ করার মত, বর্তমানের ট্রায়ালটি clinicaltrials.gov তে তালিকাবদ্ধ নেই, যেখানে পথিবীর প্রায় সব ট্রায়ালের খোঁজই থাকে।
উত্তর: ইউরোপ/এমেরিকা থেকে পেপার পাবলিশ করার গড় সময় হল ১ দিন থেকে ৬ মাস আর এর বাইরের দেশ থেকে পেপার পাবলিশ করার গড় সময় হল ৩-৬ মাস। আবার সেটা ইন্টারন্যাশনাল পাবলিশার হতে হবে যেমন ইউরোপ/এমিরিকা থেকে প্রকাশিত পেপার। জাপান/চায়না/ইন্ডি/বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত হলে সেটাকে ইন্টারন্যাশনাল বলা যাবে না !! তাই হয়ত কলকাতার পুর্ণাঙ্গ রিপোর্ট এখনও পাননি। আরও একটু অপেক্ষ করতে হবে।
পিচ্চি হান্নানকে যদি বলেন কলকাতার পাঠা বিরুর (কাল্পনিক শীর্ষ সন্ত্রাসী) এলাকায় গিয়ে একটা দোকান থেকে তারনামে চাদা নিয়ে আসতে। সেটা কি পিচ্চি হান্নান পারবে? যদিও তারা দুজনেরই পেশা এক অর্থাৎ সন্ত্রাসী কিন্তু এক এলাকার মাস্তান না। ঠিক তেমনি ১)কলকাতার মানুষের ইমিউন সিস্টেম বা খাদ্যাভাস আর ঢাকার মানুষের ইমিউন সিস্টেম বা খাদ্যাভাস এক না; ২) তারা একই কলেরা জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হলেও একই রকম ফলাফল নাও দিতে পারে, তাই যদি সম্ভব হয় তাহলে প্রতিটা ভ্যাকসিনই (বিশেষ করে ওরাল ভ্যাকসিন) লার্জ স্কেলে ইমপ্লিমেন্ট করার আগে ম্টেস্ট করে নেয়া ভাল। তাই বাংলাদেশে যেহেতু সুযোগ আছে এবং ফান্ডিং পাওয়া গেছে তাই ট্রায়াল করা হচ্ছে। ক্লিনিকাল ট্রায়ালসের বিষয়ে ৬৯ নং মন্তব্যে কারণটা ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছি।
২.৮ আশির দশকে শেষভাগে ভিয়েতনামের VA Biotec কলেরার আরেকটি সস্তা ভ্যাকসিন বের করেছিলো। এটি তৈরীতে সাহায্য করেছিলো সুইডেন সরকার, Dukoral এর উদ্ভাবকদের সহায়তায়। এটি এ পর্যন্ত ভিয়েতনামে ২০ মিলিয়ন শিশুর উপরে স্বার্থকভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে। কলকাতার ফেজ-থ্রী ট্রায়ালের অন্তর্বর্তী ফলাফল থেকে জানা গেছে, ShanChol এর কার্যকারিতা ভিয়েতনামের এই ভ্যাকসিনের সমপর্যায়ের (৬৭%) ৩।
উত্তর: এইটাই সবথেকে উল্লেখযোগ্য চুম্বক অংশ এই ট্রায়ালের। আমরা যদি দেখাতে পারি কার্যত একই উপাদানে তৈরী হওয়া সস্তা ভ্যাকসিন দামী ভ্যাকসিনের মতই কাজ করছে তাহলে আর আমাদের দামী ভ্যাকসিনের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে না। আমরাই আমাদের প্রয়োজনমত ভ্যাকসিন (শুধু কলেরা নয়, আরও অনেক ভ্যাকসিনেরই কাজ হচ্ছে বাংলাদেশে) তৈরী এবং ব্যবহার করতে পারব।
প্রশ্ন/কনসার্ন:
৩.১. প্রথম প্রশ্ন, ভারতীয় কম্প্যানীর তৈরী ভ্যাকসিনটির ব্যাপক আকারের ট্রায়াল ভারতে হলো না কেন? ভারতের তৈরি টীকা বাংলাদেশে পরীক্ষা করাটা শুনতে ভালো লাগে না, যখন ভারত নিজেই এই পরীক্ষা করতে চায় না। ভারত কিন্তু কলেরামুক্ত কোনো দেশ নয় যে তাদের এই পরীক্ষা করার দরকার নেই। মীরপুরের আড়াই লাখ লোকের উপরে চার বছর ধরে যে পরীক্ষা হবে, সেটি করার মত এলাকা এবং জনগন ভারতেও ছিলো। ভারত সরকার এ ব্যাপারে আগ্রহ না দেখানোর কারনটি যদি হয় WHO এর নির্দেশনা অনুসারে ভারত পরিস্কার পানি এবং পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থার অবকাঠামো নির্মানে বেশি আগ্রহী, তাহলে বাংলাদেশ কেন ভ্যাকসিনেশনের ব্যাপারে উৎসাহী হলো সে প্রশ্ন দেশের নাগরিকরা জানতে চাইতেই পারেন। আমার জানামতে কলেরা এ মুহূর্তে বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় সমস্যা নয়। আইসিডিডিআর,বি এবং অন্যান্য অনেক সরকারী বেসরকারী সংগঠনের কার্যক্রমের কারণে কলেরা এবং অন্যান্য ডায়রিয়াজনিত রোগ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। গত ২০-২৫ বছরে আমাদের দেশে যে বড় বড় বন্যা আর সাইক্লোন হয়েছে, কোনটিতেই কলেরা আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়নি। বিদেশি রিপোর্টগুলোতে আইসিডিডিআর,বি-র নাসমিন আহমেদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, এই প্রকল্পের ফলাফল অন্যান্য দেশে জাতীয় পর্যায়ে কলেরা টীকা প্রকল্প চালু করতে সাহায্য করবে। মীরপুরের মানুষরা তাহলে ভ্যাকসিন বাজারজাত করার গিনিপিগে পরিণত হলো? যদিও এটা নতুন না, বাংলাদেশে বস্তির মানুষরা ১৯৮৫ সালেও কলেরার আরেকটি ভ্যাকসিনের (Dukoral)গিনিপিগ হয়েছিলেন।৩,৫ আমার জন্য এ খবরটিও অজানা ছিলো।
উত্তর: ভারতে ৭০,০০০ মানুষের উপরে একটা ট্রায়াল হয়েছে এবং সেটার ফলাফল নিশ্চয়ই কোন ভাল জার্নালে প্রকাশের অপেক্ষায় আছে। আর এক একটা ট্রায়াল করতে প্রচুর টাকার (ফান্ডের) প্রয়োজন হয়। সব সময় সব প্রজোক্টে ফান্ড পাওয়া যায় না। গেটসের ফান্ড যেহেতু বাংলাদেশ পেয়েছে তাই এই ট্রায়ালটা বাংলাদেশে হচ্ছে বলেই আমার মনে হয়।
আগেও বলেছি আবারও বলছি লাইফ-থ্রেটেনিং কোন রোগকেই আপনি দ্বিতীয় শ্রেণীর মর্যাদা দিতে পারবেন না। এরা কখন কি করবে কেউ আগে থেকে বলতে পারবে না। উদাহরণ, হিসেবে হাইতির ঘটনাই আছে। নেপালি এক ত্রাণকর্মী হাইতি গিয়ে হাগু না করা পর্যন্ত হাইতিতে কলেরার প্রকোপ দেখা দেয় নি। যখনই উনি হাগু করেছেন/খাবার শেয়ার করেছেন তার অল্প কিছুদিনের মধ্যেই যা ক্ষতি হবার হয়ে গেছে। http://www.msnbc.msn.com/id/39996103/ns/health-infectious_diseases/ http://www.sciencedaily.com/releases/2010/12/101209185554.htm
মিরপুরের মানুষরা গিনিপিগ না মানুষ সেটা সময়ই বলে দিবে। গিনিপিগ যদি বলতে হয় তাহলে সেন্টারে প্রথম যখন ফেজ-১ বা ফেজ-২ ট্রায়াল হয়েছে বা আরও যেসব ড্রাগ বা ভ্যাকসিনের ট্রায়াল হচ্ছে তাদেরকেই বলতে হবে। তারা সেই ট্রায়ালে যেহেতু পাশ করেছেন তাই এখন মিরপুরে বড় আকারে ট্রায়াল চলছে। ১৯৮৫ সালের ট্রায়ালের ফলাফলা কি ছিল? সেটা কি সফল হয়েছিল না ব্যার্থ? কতজন মানুষ সেই ট্রায়ালে মারা গিয়েছিল বা পঙ্গু হয়েছিল (উত্তর: ০)? ডুকারোল (দামের দিক দিয়ে) সফল হয় নি দেখেই নতুন এই ভ্যাকসিনের ট্রায়াল চলছে। কিন্তু এর মধ্যে ডুকারোল যা ব্যবসা করার করে নিয়েছে এবং এখনও করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। লাইফ সেভিং ভ্যাকসিন/ড্রাগ পাবার অধিকার সবারই থাকা উচিত তাই নয় কি?
প্রশ্ন/কনসার্ন:
৩.২. আইসিডিডিআর,বি মূলত একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান। যে কোন গবেষণায় অংশগ্রহণের প্রতি এর বিজ্ঞানীদের আগ্রহ থাকবে এটাই হয়তো স্বাভাবিক, তারপরও দেশের দীর্ঘমেয়াদী কল্যাণের কথা তারা ভাববেননা কেন সেটা নিয়ে প্রশ্ন করা যেতেই পারে। সম্প্রতি হাইতির ভূমিকম্প-পরবর্তী কলেরার প্রকোপ আমেরিকাতে বেশ হৈ চৈ ফেলেছে। ফ্লোরিডাতে হাইতি-ফেরত একজন কলেরাতে আক্রান্ত হয়েছেন বলেও জানা গেছে। সিডিসি আর গেইটস ফাউণ্ডেশনের এই ভ্যাকসিনের ব্যাপারে উৎসাহের কারণ এখান থেকে অনুমান করা সম্ভব। কিন্তু বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যখন এখানে জড়িত, সেখানে একটা পারস্পরিক দায়বদ্ধাতার হিসাব রাখা জরুরী ছিলো। প্রথম আলো-র ২০০৯-এর একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, আইসিডিডিআরবির জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী ফিরদাউসি কাদরি বলেছেন, “আইসিডিডিআরবিতে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের বেশির ভাগই মিরপুর থেকে আসে। তাই এই টিকা পরীক্ষার জন্য ওই এলাকাকেই প্রথম বেছে নেওয়া হয়েছে।” যদি ধরে নেয়া যায় যে সবকিছু মিলিয়ে মাথাপিছু ১০ ডলারও খরচ হবে প্রাথমিক পর্যায়ের টীকাগুলো দিতে,তাহলেও ১ লাখ ৬০ হাজার লোকের পেছনে খরচ হবে সাড়ে ১১ কোটি টাকারও বেশি, বুস্টার ডোজ দিতে ধরে নিলাম দু’বছর পরে খরচ হবে এর আরও অর্ধেকটা। এই যে দু’বছরে যে প্রায় ১৮ কোটি টাকা খরচ হবে, সেটি দিয়ে মীরপুর এলাকার আড়াই লাখ লোকের জন্য পরিস্কার পানি আর স্বাস্থ্যকর পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা করা যেত বলেই মনে হয়, যেটি দীর্ঘ মেয়াদে কলেরা নির্মূল করতে পারতো। সেটি WHO এর নির্দেশনা অনুযায়ীও সঠিক কাজই হত। বিল অ্যাণ্ড মেলিণ্ডা গেইটস ফাউণ্ডেশন টাকা দিচ্ছে বুঝলাম, সেটি আমরা কেন আমাদের প্রয়োজনমত খরচ করতে পারবো না?
উত্তর: বিশুদ্ধ খাবার পানি, ভাল পয়:নিস্কাসন ব্যবস্থা থাকা সত্বেও জাপানের কলেরার অবস্থা দেখেন এখানে http://idsc.nih.go.jp/iasr/19/219/graph/f2191.gif । তাই এই দুয়ের সাথেও ভ্যাকসিনটাও জরুরী। যদিও বর্তমান ভ্যাকসিন গুলো ততটা দীর্ঘস্থায়ী প্রতিরোধ দিতে পারবে না, তাই বিজ্ঞানীরা চেষ্টা করে যাচ্ছেন দীর্ঘমেয়াদি কার্যকরি একটা ভ্যাকসিনের জন্য। আগেও বলেছি আবারও বলি হু সবার আগে বড় বড় ফার্মাসিউটিক্যাল কম্পানির স্বার্থ দেখবে তরাপর অন্য কিছু।
প্রশ্ন/কনসার্ন:
৩.৩. দেশের সংবাদ মাধ্যমে আর জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলোর ওয়েবসাইটে এই বিষয়টি প্রকাশ না করাটাও বেশ বিরক্তিকর। এটা কি বাংলাদেশি মিডিয়ার উদাসীনতা? নাকি এটা ইচ্ছে করে গোপন রাখা হয়েছে? বিদেশী সংবাদ মাধ্যমগুলো যেহেতু এ খবর সময়মত পেয়েছে, তার মানে এই দাঁড়ায় যে খবরটা দেশীয় মাধ্যমগুলো থেকে ইচ্ছেকৃতভাবে সরিয়ে রাখা হয়েছে। সেটার কারণ কি?
উত্তর: জানা নেই।
প্রশ্ন/কনসার্ন:
এই টীকার কার্যকারিতা দুই বছরে কমে আসে, এবং বুস্টার ডোজ দিতে হয়, এ কথাও কোন রিসার্চ পেপার বা ভ্যাকসিনের বাক্সের ভেতরের কাগজ না পড়লে জানা সম্ভব না। সরকার এখানে কত টাকা খরচ করছেন সে ব্যাপারেও কোন তথ্য কোথাও চোখে পড়েনি।
উত্তর: আপনি যদি কোন পলিস্যাকারাইড/হিট-কিলড বেইসড ভ্যাকসিন কখনও নিয়ে থাকেন, তাহলে আপনিও বুস্টার ডোজ নিয়েছেন। এবং সেটা নিশ্চয়ই আপনি পেপার বা লিফলেট পড়ে জানেন নি। যে আপনাকে ভ্যাকসিনটা দিয়েছিল সেই বলে দিয়েছিল পরবর্তী ডোজটা কবে নিতে হবে। এখানেও সেরকমই বলে দেয়া হচ্ছে বলেই আমার বিশ্বাস। আর সরকার কত টাকা খরচ করছে সেটা আমি জানি না।
প্রশ্ন/কনসার্ন:
৩.৪. ShanChol এর জন্য WHO এর কাছে অনুমোদন চাওয়া হয়েছে ২০০৯-এর সেপ্টেম্বরে। সেটি এখনো মেলে নি। WHO বেশ স্পষ্ট করেই বিভিন্ন সময় বলেছে, কলেরার জন্য ভ্যাকসিন এককভাবে যথেষ্ট নয়, সঙ্গে বিশুদ্ধ পানি আর পয়োব্যবস্থার অবকাঠামো ঠিক করতে হবে। তাছাড়া, দুই ডোজের এই ভ্যাকসিন পনেরো দিনের ব্যবধানে দিতে গিয়ে অনেকটা প্রয়োজনীয় সময় কেটে যাবে, সে কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায়ও এটি তেমন কার্যকর হবে না। পাকিস্তান সরকার সম্ভবত এ কারণেই এই ভ্যাকসিন প্রয়োগে বাধা দিয়েছিলো। Shantha Biotechnics এবং IVI এর মধ্যেই এক ডোজের ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছে।৩ তাহলে এ সময়ে এই ভ্যাকসিনকে দেশে দেশে ছড়িয়ে দেয়াটা জরুরী কেন? এ মুহূর্তে এমনটা মনে হওয়া স্বাভাবিক যে ShanChol-এর গবেষণার অর্থ উঠিয়ে নিয়ে আসার প্রয়োজন আছে তার নির্মাতাদের কাছে, এবং সেটি সম্ভব একমাত্র ভ্যাকসিনটির ব্যপক ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলেই। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, “দিশারি প্রকল্পটির (পাইলট প্রজেক্ট) কার্যকারিতা প্রমাণিত হলে সারা দেশে নিয়মিত টিকাদান কর্মসূচির সঙ্গে কলেরা টিকাকেও সম্পৃক্ত করা হবে। এখন যে টিকাটি খাওয়ানো হচ্ছে, সেটি ভারত থেকে আমদানি করা হয়েছে। তবে শিগগির বাংলাদেশেও টিকা তৈরি হবে। কমপক্ষে চারটি ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান টিকা তৈরির প্রস্তুতি নিয়েছে”। এই খবর নিঃসন্দেহে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের জন্য আনন্দের, বিশেষ করে WHO-এর অনুমোদন ছাড়াই যদি এতটা পাওয়া সম্ভব হয়।
উত্তর: এখনে হুর সাথে একমত ভাল পানি ও পয়নিস্কাশন কলেরা প্রতিরোধে ভূমিকা রাখবে কিন্তু যতদিন সেটা কোন দেশ বা সরকার করতে পারবে না তার মানে কি তারা বছর বছর কলেরায় ভুগতেই থাকবে। আর ভ্যাকসিন আর ঔষধের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে ভ্যাকসিন রোগ হবার আগে খেতে বা নিতে হয় আর ঔষধ রোগ হলে পরে। তাই পাকিরা এই কারণে ভ্যাকসিন প্রয়োগে বাধা দিয়েছিল বলে আমার মনে হচ্ছে না। IVI যে একডোজের প্রটিন বেসড (লাইভ-এটুনেটেড) ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ করছে সেটা আমিও বলেছি, কিন্তু সেটা কবে আসবে কেউ জানে না। উদাহরণ দেই, ছোটবেলায় আপনি যেই নিউমোনিয়ার টীকাটা খেয়েছিলেন সেটাও পলিস্যাকারাইড বেইসড ভ্যাকসিন এবং সেটাও অতটা কার্যকর নয় নিউমোনিয়া ঠেকাতে, তাই বিজ্ঞানীরা (বাংলাদেশ সহ) এখনও একটা ভাল প্রোটিন বেইসড ভ্যাকসিন খুঁজে বেড়াচ্ছেন। তাই এখন যদি সাময়িক একটা সেফ ভ্যাকসিন পাওয়া যায় কলেরার তাহলে সেটা নিতে কোন আপত্তি থাকার কথা না। হ্যা, এই ট্রায়াল ভাল ফল দিলে শুধু কলেরা নয় আরও অনেক ভ্যাকসিনই বাংলাদেশে তৈরী করার রাস্তা অনেকটা সহজ হবে, আর যদি হুর অনুমতি মেলে তাহলে বিদেশী রপ্তানী করে বৈদিশিক মুদ্রাও অর্জন করা যাবে।
প্রশ্ন/কনসার্ন:
৩.৫. কলকাতার ট্রায়াল শেষ হবার আগেই বাংলাদেশে তার তিন গুন বড় আকারের একটি ট্রায়ালের প্রয়োজন পড়লো কেন এবং সে প্রয়োজনটি কোথাও ব্যাখ্যা করা হলো না কেন? যে ভ্যাকসিন ভিয়েতনামে ২০ মিলিয়ন শিশুর উপরে ইতিমধ্যে পরীক্ষিত, সেটি ব্যবহার না করে একটা নতুন ভ্যাকসিনের ট্রায়ালে আমাদের দেশের লোককে কেন অংশগ্রহণ করতে হবে সে উত্তরটাও জানা জরুরী।
উত্তর: উপরে উল্লেখ করেছি।
প্রশ্ন/কনসার্ন:
৩.৬ ভ্যাকসিন ট্রায়াল নিয়ে সারা পৃথিবীতে কেলেংকারি কম হয় নি। বিশেষ করে প্ল্যাসিবোর ব্যবহার নিয়ে সবসময়ই বিতর্ক আছে। তবে আজকাল মানুষকে সাবজেক্ট হিসাবে ব্যবহার করা হলে ন্যুনতম কিছু নীতিমালা পালন করা হয়৬। সাবজেক্টের কাছ থেকে সজ্ঞান অনুমতি নিতে হয়। ম্যাস ট্রায়ালের ক্ষেত্রে সমাজের বা দেশের নেতারা এই অনুমতি দিতে পারেন এলাকার মানুষের পক্ষে। প্রশ্ন হলো, ভ্যাকসিন ট্রায়ালের ক্ষেত্রে এরকম এথিকস কতটুকু অনুসরণ করা হচ্ছে? মীরপুরবাসীরা কি জানেন তারা একটি পরীক্ষার সাবজেক্ট? যে ৮০ হাজার লোক প্ল্যাসিবো পাবেন, তারা কি জানবেন যে তারা কনট্রোল গ্রুপের সাবজেক্ট মাত্র? নাকি আমাদের দেশের সরকার আর অন্য দেশের ভ্যাকসিন নির্মাতারা আমাদের ভালোটা আমাদের চেয়ে ভালো বোঝেন, তাই এসব খবর মীরপুরবাসীদের না জানানোই ভালো? ১৯৮৫ সালের Dukoral-এর ট্রায়ালে যারা অংশগ্রহণ করেছিলেন, তাদের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া যদি কিছু হয়ে থাকে, সেটির খোঁজ কেউ রেখেছে? সেই মানুষগুলোর সরকার বা নেতারা কি তাদের স্বার্থ রক্ষা করেছেন? কেন যেন সন্দেহ হয় করেননি। আমার সন্দেহ মিথ্যা প্রমাণিত হোক, এই আশা করি।
উত্তর: প্লাসিবোর বিষয়েও উপরে বলেছি,। আমিও চাই সম্পূর্ণ নীতিমালা মেনেই এই ভ্যাকসিন ট্রায়ালটা চালানো হোক এবং আশা করছি তাই করবেন সেন্টারের লোকজন।
ধন্যবাদ।
মাইক্রোবস
থায়ামার্সালের পরিমান নিয়ে বির্তকটা হলে বোধ হয় ভালো হত। প্রতিষেধকটিতে যে পরিমান থায়ামার্সাল ব্যবহার করা হয়েছে, সেটি কি ক্ষতিকর। প্রতিষেধকটি মুখে খাওয়ানো হবে। যদিও সাপ্তাহিক বুধবারে প্রকাশিত লেখা অনুযায়ী এটা ক্ষতিকারক। সেখানে সে তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে সেটি ইনজেকটেভল পরিমান। কেউ কি এ সম্পর্কে আরো বিস্তারিত বলবেন।
From Wiki: http://en.wikipedia.org/wiki/Vaccine#Role_of_preservatives
Role of preservatives: Many vaccines need preservatives to prevent serious adverse effects such as Staphylococcus infection that, in one 1928 incident, killed 12 of 21 children inoculated with a diphtheria vaccine that lacked a preservative.[33] Several preservatives are available, including thiomersal, phenoxyethanol, and formaldehyde. Thiomersal is more effective against bacteria, has better shelf life, and improves vaccine stability, potency, and safety, but in the U.S., the European Union, and a few other affluent countries, it is no longer used as a preservative in childhood vaccines, as a precautionary measure due to its mercury content.[34] Although controversial claims have been made that thiomersal contributes to autism, no convincing scientific evidence supports these claims.[35]
আমি প্রিসারভেটিভের বিশেষজ্ঞ নই, তবে আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে যা বুঝি সেটা হল থায়োমারসাল একটি প্রিসারভেটিভ এবং কম মাত্রায় এটি ক্ষতিকর নয় হয়ত। এখন উন্নত বিশ্বে যদি ০,০১% থাকে তাতে সমস্যা নেই কারণ তাদের কালে ভদ্রে বিদুৎ যায় আর এখানে উল্টা তাই হয়ত ০,০২% ব্যবহৃত হয়েছে (এটি আমার স্পেকুলেশন, এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা আরও ভাল বলতে পারবেন) ভ্যাকসিনের সেল্ফ-লাইফ বাড়ানোর জন্য।
আমাদের চিন্তা আমাদেরকেই করতে হবে আমাদের পরিবেশ এবং রিসোর্স কি সেটাও দেখতে হবে। উন্নত বিশ্বে কোল্ড চেইন (৪-১০ ডিগ্রী তাপমাত্রা) মেইনটেন করে প্রিসারভেটিভ ছাড়া ভ্যাকসিন দেওয়া সম্ভব হলেও আমাদের দেশে কি সেটা এখনই সম্ভব? আর আপনি আমি যেই ভ্যাকসিনগুলো ছোটবেলায় নিয়েছিলাম সেগুলোতেও কিন্তু থায়োমারসেল ছিল। আপনি বা আমি এবং আমাদের পরিচিত কতজনের নিউরোলোজিক্যাল ডিসওর্ডার (অটিসম) দেখা দিয়েছে সেই থায়োমারসালযুক্ত ভ্যাকসিন নেবার জন্য?
http://english.aljazeera.net/programmes/witness/2011/07/201171974227416827.html
খুব কায়দা!
ভাবসিলাম বুঝি ইন্দেপেন্দেন্ত ফিল্ম , মধুর লোভে করা না , তারপর আবার আল জাজিরা বৈলা কথা! ভালো গল্ফো ফাইদা শেষ এই ভেকসিন এর মহত্ব প্রচার হইলো. কেডা যে কখন কেমনে আমাগো সিস্টেম দিতাসে! http://english.aljazeera.net/programmes/witness/2011/07/201171974227416827.html
লেখাটা ২০১১ সালের, আর আইসিডিডিআর'বির এই ট্রায়াল এবং গবেষণা গতবছর (২০১৫) ল্যানসেট এ প্রকাশিত হয়েছে। টিকাটির সফলতা নিয়ে নিউ ইয়র্ক টাইমস এর একটা প্রতিবেদন লিংকে দিলাম। বলে রাখি, ট্রায়ালটি আমার জানামতে ৩টি দেশে হয়েছে, বাংলাদেশ, ভারত এবং ভিয়েতনাম। শুধু বাঙালিকে গিনিপিগ ভাবাটা হয়তো জনপ্রিয় চিন্তা, কিন্তু ক্ষতিকর। সঙ্গে আছে টিকা নিয়ে সন্দেহ (কত মার্কারি ইত্যাদি হাবিজাবি)। সিডিসি এবং গেটস ফাউন্ডেশানের অনুমোদনে যদি নিয়ম না মেনে টিকার ট্রায়াল দেয়া হয় তবে প্রতিষ্ঠান দু'টির রেপুটেশানের বারোটা চিরদিনের জন্য বেজে যেত সেটা নিশ্চয়ই তারা বোঝে। তার উপর এটা গেটস ফাউন্ডেশানের অনুদানে প্রথম টিকার সফল উদ্ভাবন।
সচলের লেখাটির সঙ্গে দেখলাম সমকাল পত্রিকায় একাধিক প্রবন্ধ ছাপিয়েছে এই ট্রায়াল বন্ধের পক্ষে জনমত জোগাড় করতে। ভাগ্য ভাল যে এসব প্রতিবেদনে উৎসাহী হয়ে ট্রায়াল বন্ধ হয়নাই।
সচলের লেখাটার একটা উত্তর নিউ ইয়র্ক টাইমসে পাওয়া যাবে। কেন বাংলাদেশ সরকার এই বিশেষ ভ্যাক্সিনের ট্রায়ালে গেল? হ্যা, আইসিডিডিআর'বি উৎসাহী ছিল। কেন?
"It is based on a vaccine first made in Vietnam, then improved in the 1990s at the International Vaccine Institute in Seoul, South Korea, by a team led by Dr. John D. Clemens, an American scientist who now runs the International Center for Diarrheal Disease Research in Bangladesh. Shanchol has been made by Shantha Biotechnics in India since 2009."
এই ভদ্রলোক যেই দেশেই গিয়েছেন সেই দেশেই ভ্যাক্সিনটা নিয়ে কাজ করেছেন। হাল না ছাড়ার একটা উদাহরণ হতে পারে!
নতুন মন্তব্য করুন