কাকভোরেই ভীষন হট্টগোলের মধ্য দিয়ে অকস্মাৎ ঘুম ভেঙে যায় সাগরের।
এ সময় সাধারণতঃ ঘুম ভাঙে না তার। কিন্তু আজ ব্যাপারটা একটু ভিন্ন। পুরো বস্তি জুড়ে চলছে হৈ-হল্লা। সে সঙ্গে তর্কাতর্কির শব্দও কানে ভেসে আসে। কেউ যেন কাউকে অভিশাপও দেয়। চোখ মেলে সে ঘটনাটা বুঝতে চেষ্টা করে। কিন্তু ব্যাপারটা ধরতে পারে না।
তারপর সহজাত কৌতুহলের বশেই সে বিছানা ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে আসে। দরজার সামনে মালেকাকে দেখতে পেয়ে জিজ্ঞেস করলো, 'কি হইছেরে মালু? হবরে হবরে এত চিল্লাচিল্লি ক্যান?'
মালেকা কিছুটা বিরক্তি ফুটিয়ে বলে, 'হইবো না? টুনিরে তুইল্যা নিবার আইছে কাইল্যা পাঁঠার মানুষ!'
'টুনিরে ক্যান?'
'হ্যারে নিকি বেইচ্যা দিছে!'
'কস কি তুই?'
সাগরের চোখ যেন বেরিয়ে আসে।
মালেকা যেন এবার সত্যিই বিরক্ত হয়। বলে, 'আমি এত কিছু জানি না! বাইরে গিয়া হুন!'
বিস্মিত সাগর বাইরে এসে জটলার পাশে এসে উঁকি মারে। লম্বা টিঙটিঙে একটা লোককে চিনতে পারে। পেট-কাটা বাদল। কারো সঙ্গে শত্রুতা হলে সোজা পেটের মাঝে ক্ষুর চালিয়ে দেয়। তা ছাড়া বিভিন্ন নেশার জিনিসের আখড়া নিয়ে তার কারবার। সে যে কার লোক তা আজ নিশ্চিত হয় সে।
ভিড় ঠেলে সাগর এগিয়ে যায়। তখন পেট-কাটা বাদল বলছে, 'টুনি কই আছে বাইর কইরা দে, অখনও সময় আছে কইতাছি! নাইলে আইজকার মইধ্যেই পুরা বস্তি জ্বালাইয়া দিমু!'
সবার চোখে মুখে কেমন একটা আতঙ্কের ছায়া খেলে যায়। একটা মেয়ে-মানুষের জন্য পুরো বস্তি জ্বালিয়ে দেবে?
ব্যাপারটা ভীষন ভাবে নাড়া দেয় সাগরকে।
সবিতার মা চিৎকার করে বলল, 'ওই মাগী কই পলাইছে? একজনের লাইগ্যা আমাগো পুরা বস্তির মানুষ বিপদে পরবো ক্যান?'
বেশ ক'জন নারী-পুরুষ সম্মিলিত কন্ঠে বলল, 'হ্যারে ত পাওয়া যাইতাছে না!'
পেট-কাটা বাদল বলল, 'কই গেছে বাইর কইরা আনো! আমাগো টাইম নাই!'
কথাগুলো শুনে সাগর চিন্তায় পড়ে যায়। টুনি মেয়েটা খারাপ না। স্বভাব চরিত্রেও বস্তির অন্যান্য মেয়েদের চাইতে ভাল। অথচ স্বামীটা জুয়াড়ী। ব্যাপারটা নিশ্চয়ই কোনো জুয়ার আস্তানায় ঘটেছে। নির্দোষ মেয়েটা খারাপ স্বামীর জন্য কেন খারাপ লোকেদের হাতে পড়বে? আজ টুনি যদি তার কেউ হতো তাহলে কি সে চুপ করে থাকতে পারতো? সেই ভাবনায় উজ্জীবিত হয়ে সে বাদলের মুখোমুখি দাঁড়ায়।
সাগরকে দেখতে পেয়ে বাদল বলল, 'আরে সাগর মিয়া, তুমি এহানে কোহান থাইকা আইলা?'
'ভাই, আমি তো এই বস্তিতেই থাকি!'
স্রোতে ভেসে যাবার সময় নাকি বানভাসি মানুষ খড়-কুটোও আঁকড়ে ধরে। বাদলও এ অবস্থায় নালিশ দেবার মানুষ পেয়ে সাগরকেই ধরে বসে। বলে, 'ভাই তুমিই কও, টুনিরে না পাইলে আমার ট্যাকার কি হইবো?'
সাগরের কাছে ব্যাপারটা খোলাসা হয় না। বলে, 'আমি তো আগা-মাথা কিছু বুঝতে পারতাছি না! খুইলা কন দেখি!'
'খুইলা কওনের কিছুই নাই মিয়া! পরশু রাইতে আজগইরা বাজির টেবিলে সব হাইরা গেল। বাজি ধরলো তার বউ টুনিরে। দাম ধরলো পাঁচহাজার ট্যাকা। হাইরা গিয়া কইছিলো গতকাইল বউ পৌঁছাইয়া দিবো। কিন্তুক শালার কোনো খবর নাই! অহনে আইছিলাম তুইলা নিবার! তয় তোমারে যখন পাইয়া গেছি জোরাজুরির কামে আর যামু না! তুমিই একটা কিছু কর! হয় আমার পাঁচহাজার ট্যাকার ব্যবস্থা কর, নয় টুনিরে আমার হাতে তুইলা দ্যাও!'
'আজগর ভাই তো অনেকদিন হইলো বস্তিতে থাকে না। কী যে করমু!'
সাগর আমতা আমতা করে বলল।
'আমি জানি না! এক সপ্তাহের টাইম! তোমারে আমার পছন্দ হইছে। আগে কামডা শেষ কর! তার বাদে তোমারে খবর পাঠামুনে!'
তারপর একটা হাত তুলে বিদায়ের ভঙ্গিতে পেট-কাটা বাদল কাইল্যা পাঁঠার লোকজন নিয়ে মাইক্রোবাসে উঠে চলে গেল।
মাইক্রোবাস চলে যেতেই সবার মনে যেন স্বস্তি ফিরে আসে। আপাতত বিপদ কেটে যেতেই পুরো বস্তিবাসীর কাছে মুহূর্তেই হিরো হয়ে যায় সাগর। লোকজন নানা ভাবে তাকে সাধুবাদ জানাতে লাগল। ও আজ না থাকলে এবং পেট-কাটা বাদলের সঙ্গে পরিচয় না থাকলে সবারই যে বিপদ হতো, তা থেকে রেহাই পাবার কোনো উপায় জানা ছিল না কারো। তাই সাগরকে সবাই টুনির ব্যাপারটা মিটমাট করবার দায়িত্ব দিয়ে বলল, 'শত হইলেও টুনি আমাগো বস্তির মাইয়া! মাইয়াডাও খারাপ না! তার ইজ্জত মানে আমাগো সবার ইজ্জত! তারে কিছুতেই বিক্রি হইতে দেওয়া যাইবো না!'
সাগর হ্যাঁ-না কিছুই বলল না। কিন্তু মনেমনে ভাবতে লাগল যে, টুনিকে কোথায় খুঁজবে? আজগরকেই বা কোত্থেকে বের করবে? এদের কোনো একজনকে না পেলে সমস্যার জট খোলা অসম্ভব। কিন্তু টুনি কোথায় গেল? ভাবতে ভাবতে সে ঘরে ঢুকে আবার বিছানায় এলিয়ে পড়ে।
তার ঘরটা বেশি বড় না। দিগপাশে মাত্র ছ'হাত-সাত হাত।
নিজের বাপ কে? সে জানে না। কোনোদিন দেখেনি। তার বাপ সম্পর্কে কেউ তাকে কিছু বলেনি। এমন কি সে কখনো জানতেও চায়নি যে, কে তার বাপ? কোথায় থাকে? আজও তার নিজের বাপ সম্পর্কে কোনো কৌতুহল নেই।
তার যখন দশ-এগারো বছর বয়স তখন সে একদিন স্কুল থেকে ফিরে এসে দেখে ঘর খালি। পাশের ঘরের খালাকে জিজ্ঞেস করেছিল, 'খালা, মা কই কইতে পারো?'
খালা মুচকি হেসে বলেছিল, 'তর মায় সুখের গাঙে ভাইস্যা গেছে!'
সেদিন কথাটার অর্থ পরিষ্কার বুঝতে না পারলেও এটা সে নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিলো যে, তার মা আর ফিরে আসবে না।
সেই থেকে সে একা একাই থাকে বস্তিতে। নীলক্ষেতের একটা ছোট-খাট লেদ মেশিনের কারখানায় কাজ করে। যা আয় হয় তা দিয়েই খুব ভাল মত মাস চলে যায় তার। নিজের জীবন নিয়ে তার কোনো অভিযোগ নেই। কারো মুখাপেক্ষী সে নয়। কিন্তু একটু আগেই যে ব্যাপারটা ঘটে গেল তা নিয়ে তার মাথা ব্যথা হবার কথা না। কিন্তু সে আশ্চর্য হচ্ছে এই ভেবে যে, টুনি হঠাৎ কোথায় যেতে পারে? এমন বিপদ যার মাথায়, কেই বা তাকে আশ্রয় দেবে? আজগর কি আবার বিয়ে করেছিল? এমন কথাও সে শোনেনি। তবে আজগর আবার বিয়ে করলেও সেটা তার না শুনবারই কথা। কারণ সে সারাদিনই থাকে কারখানায়। রাতে এসে শুয়েই ঘুমিয়ে পড়ে। বস্তির অনেক কিছুই যেমন তার চোখে পড়ে না। অনেক ঘটনার কথাও সে জানতে পারে না। কিন্তু টুনি এখন বস্তিতে নেই। কোথায় গেছে কেউ জানে না। এ অবস্থায় সে তাকে কোত্থেকে খুঁজে বের করবে? বাদল লোকটা খুবই খারাপ! মনের ভেতর দয়া-মায়া জিনিসটা একেবারেই নেই। খুনাখুনি করে মজা পায়। কোনো এক তুচ্ছ কারণে নাকি নিজের ছেলের পেটেই ক্ষুর চালিয়ে দিয়েছিল। এখন টুনি সমস্যার সমাধান না হলে তার নিজের জীবন নিয়েই সংশয় দেখা দিতে পারে। তা ছাড়া তাকে বেঁচে থাকতে হলে ব্যাপারটার একটা নিশ্চিত নিষ্পত্তি করতে হবে। তার কেমন যেন একটু একটু ভয় হতে লাগল। আর শুয়ে থাকতে পারল না। উঠে টুথব্রাশে পেস্ট লাগিয়ে দাঁত ঘঁষতে ঘঁষতে ঘর থেকে বের হয়ে আসে।
সে ভাবছিল, টুনির ব্যাপারে কাকে জিজ্ঞেস করা যায়? কার সঙ্গে তার বেশি ভাল সম্পর্ক ছিল? বৃদ্ধ সোভান খোনকার তাকে দেখতে পেয়ে লাঠিতে ভর করে এগিয়ে এসে বললেন, 'বাবা, তোমারে আমরা লিডার বানামু! এহানে আমাগো সুবিধা অসুবিধা দেখনের কেউ নাই!'
বৃদ্ধের কথার কোনো উত্তর না দিয়ে সে বলল, 'টুনি কি বস্তিতে আইছে?'
'আমি তো দেখি নাই বাবা! তুমি মদিনারে জিগাও!'
বৃদ্ধ নিজেই মদিনা মদিনা বলে ডাকতে লাগলেন।
কিছুক্ষণ পর আরেক পক্ককেশ বৃদ্ধা কফিলের মা এসে বললেন, 'মদিনা কামে গেছে গিয়া। অরে ডাক পারতাছ ক্যান?'
'টুনি আইছে কি না আমি জিগাইছিলাম।'
মুখ থেকে পিচকারির মত পেস্টের ফেনা ফেলে আবার মুখ তোলে সাগর।
বৃদ্ধা বললেন, 'না তো! আমি দেহি নাই। তয় কোই থাকতে পারে মালু কইতে পারবো!'
'হ্যারে আইতে কও!'
সাগরের কন্ঠে কর্তৃত্বের সুর ফুটে উঠল। নিজের কন্ঠস্বরে নিজেই চমকে উঠে।
বৃদ্ধা তাড়াতাড়ি সরে গেল।
কিছুক্ষণ পর মালেকা এসে বলল, 'কি কও সাগর ভাই? আমার কামে যাওনের সময় অইয়া গেল!'
সাগর মালেকার সাজ আর পোষাক দেখে। কিন্তু কোনো মন্তব্য না করে জানতে চায়, 'টুনিরে কই পাওয়া যাইবো কইতে পারস?'
মালেকার চোখে-মুখে ভয়ের চিহ্ণ ফুটে ওঠে। নিচু স্বরে ফ্যাসফ্যাসে কন্ঠে বলে, 'হ্যারে কি অগো হাতে তুইল্যা দিবা?'
'আরে পাগলী না!' সাগর হেসে ফেলে।
'তাইলে টুনিরে দিয়া কি করবা?'
'আজগইরার ব্যাপারে কিছু জানন দরকার! হ্যায় কি আরো বিয়া করছিল? এমন কতা হুনছিলি?'
'হুনছিলাম ত! হাচা মিছা কইতে পারুম না!'
'হাতে সময় আছে কয়দিন তুই নিজের কানেই হুনছস!'
'তাতো হুনছিই! তয় আজগর ভাইয়ের খবর কিন্তুক কইতে পারুম না!'
'ওইডা তরে জিগাই নাই!'
আজগরের সঙ্গে বিয়ের আগে টুনি তাকে বলেছিল বিয়ে করতে। কিন্তু টুনির বাপ রমজান আলি রাজী হয়নি। বলেছিল, 'আজগর আমার ভাইয়ের পোলা! নগদ তিনহাজার ট্যাকা দিবো। তুই কত দিতে পারবি? আর তর তো বাপ নাই! জাউরা পোলার লগে আমার মাইয়ার বিয়া দিমু না!' বিয়ের পরদিন ট্রাক চাপা পড়ে মারা গিয়েছিলো লোকটা।
'আর কিছু কইবা?'
সাগরের নিরবতা দেখে মালেকা তাড়া দিল।
'টুনি কোই আছে আমারে ক তো! তুইও লগে আয়। নাইলে আমারে দেইখ্যা ডরাইতে পারে!'
'আমার কামে যাইতে দেরি অইয়া যাইতাছে!'
'একদিন দেরি অইলে কিছু অইবো না!'
'কয় কি!'
ঘাড় কাত করে বলে মালেকা। 'গার্মেন্স আর লেদ কারখানা এক হইলো? পনর মিনিট লেইট হইলে এক ঘন্টার ট্যাকা কাটে!'
'তাইলে তারা শ্রমিক আইন মানে না! নাইলে জানে না! হেই কথা থাউক, তর দেরি অওনের ক্ষতি বিরানী খাওয়াইয়া পোষায় দিমুনে!'
মালেকা রাজি হয়ে গেল সঙ্গেসঙ্গে। বলল, 'অহনই চল!'
তারপর সাগরের অবস্থা দেখে বলল, 'এই বেশে যাইবা? বাসী মুখে?'
'কি অইছে? অয় কি আমারে খালি গায়ে, বাসী মুখে দ্যাহে নাই কোনোদিন?'
'তাইলে একটা জামা নাইলে গঞ্জি গায়ে দিয়া লও!'
'না সমস্যা আছে। এমনে গেলে বাদলের সাঙ্গ-পাঙ্গরা মনে করবো তর লগে খাজুরা আলাপ করতে করতে বিয়ান বেলার হাওয়া খাইতাছি। সন্দেহ কইরা আমার পিছে লাগবো না। টুনিও নিরাপদে থাকবো!'
মালেকা কিছুটা অবাক হয়ে সাগরের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।
সাগর বলে, 'অমন চাইয়া রইছস ক্যান?'
'তোমার অনেক বুদ্ধি! যদি ল্যাহা-পড়া করতা তাইলে অনেক বড় মানুষ অইতে পারতা!'
'ক্যামনে অমু? ইস্কুলে তো পড়তামই! খালি খালি মায় যে আমারে থুইয়া কোই গেল গা, হেই থেইক্যা পেট চালাইতে কাম করা শুরু করলাম বইলাইত্ত ইস্কুল বন্ধ অইলো!'
'আমি সেভেন পর্যন্ত পড়ছিলাম। তুমি কোন কেলাস থাইকা পড়া ছাড়ছো?'
'সিক্সে ভর্তি হমু তহনই তো মায়েরে খোয়াইলাম!'
'তুমি আবার পড়তে পারবা না?'
'কেমনে?'
'মালিকরে কইয়া দিনে ইস্কুল কইরা যেই সময় পাইবা তহন থাইক্যা রাইত পর্যন্ত কাম করবা!'
'তুই পড়স না ক্যান?'
'পড়ার সময় পামু না!'
'আমারও একই অবস্থা!'
তারপর মালেকাকে তাড়া দিয়ে সাগর বলল, 'তাড়াতাড়ি হাঁইট্যা চল! আমার আবার কারখানায় যাইতে হইবো!'
ওরা বস্তি ছাড়িয়ে কিছুদূর যেতেই বাদলের এক চেলার সঙ্গে দেখা হয়। সে দৌঁড়ে এসে বলল, 'কোই যাইতাছ এই বিয়ান বেলা?'
'ঘুরতাছি!'
সাগর সংক্ষিপ্ত জবাব দেয়।
'আমি রহমত। ওস্তাদ কইলো তোমাগ বস্তির দিকে নজর রাখতে!'
সাগর তার নাম জানতো না। তবু বলল, 'তোমার পুরা নাম রহমত শেখ? বিয়ানে বাদল ভাইয়ের মুখে হুনছিলাম!'
'না না! আমি শ্যাখ না! শ্যাখ আরেক জন আছে!'
'ও। আইচ্ছা পরে কথা হইবোনে!'
'টুনির খোঁজ পাইছ? লগে এইডা কে?'
'খোঁজ লাগাইছি। দুইদিনের মধ্যেই খবর পাইয়া যামু!'
রহমত এবার নিচু স্বরে বলল, 'লগে ক্যাডা কইলা না?'
সাগরের মজা করার ইচ্ছে হয়। বলে, 'এইডা আমার নানার সাত নম্বর বউ!'
রহমত কি বুঝলো কে জানে। তবে দাঁত বের করে হাসতে লাগল।
সাগর বলল, 'জাগা মতন যাইয়া পাহারা দেও! টুনিরে দেখলেই বাদল ভাইরে খবর পাঠাইবা! আমি কামে চইলা গেলে কোনো ফাঁকে আইতে পারে। পরে দেখা হইবো। কেমন?'
রহমত জবাবে মাথা হেলায়।
আরো বেশ কিছুটা পথ এগিয়ে যাওয়ার পর মালেকা বলল, 'আমারে নানি বানাইলা ক্যান?'
'নানি না কইলে ওই হালার পো আমার লগে কেমন খাজুরা আলাপ শুরু করছিল দেখলি না?'
'নানি ছাড়া আর কিছু কইতে পারলা না?'
'বইন কইলে নয়তো আমাগ বস্তির কেউ কইলে তর পিছেই কোনদিন লাইন দিবো ঠিক আছে? ঝামেলা শুরুতেই মিটাইয়া ফালাইতে হয়! বুঝলি বোকা ছেড়ি?'
মালেকা মুখে হাত চাপা দিয়ে হেসে বলল, 'বোকা ছেড়ি হয় না। কতাডা হইবো বোকা মেয়ে!'
সাগর বলল, 'হুম! তুই তো আবার আমার থাইক্যা দুই কেলাস বেশি পড়ছস!'
মালেকা রসিকতাটা ধরতে না পেরে চুপ করে থাকে।
বেশ কয়েকটি গলি পেরিয়ে একটা টিন-শেড বাড়ির সামনে গিয়ে মালেকা বলল, 'তুমি খাড়াও, আমি দেইখ্যা আসি!'
একটু পরই মালেকা বেরিয়ে এসে বলল, 'ভিতরে আস!'
সাগর বলে, 'না। ভিতরে যামু না। হ্যারে জানালায় আইয়া খাড়াইতে ক!'
জানালায় মুখ বাড়িয়ে টুনি বলল, 'ঘরে আইবা না?'
'অন্যরা খারাপ কইতে পারে!'
তারপর একটু আগ বাড়িয়ে গিয়ে মালেকা যাতে কিছু শুনতে না পায়, এমনভাবে বলল, 'আজগইরারে কোই পাওয়া যাইতে পারে বইলা তোমার মনে হয়?'
টুনি কিছুক্ষণ ভাবে। তারপর বলে, 'মনে হয় তার নতুন বউয়ের কাছে!'
'কোনখানে?'
'কমলাপুর টিটিপাড়া বস্তি। ডাইল কোহিনূরের ছোডো বইন।'
'তোমার কাছে কেউ আইছিলো?'
'না।'
'তোমার এইখানের কতা কে কে জানে?'
'মালু।'
'আর কেউ?'
'নাহ্।'
'ঘর থাইকা বাইর হইও না। বিপদ হইতে পারে!'
কান্নার মত করে হাসল টুনি। বলল, 'বিপদে তো পইড়াই আছি!'
'আল্লা ভরসা। ব্যবস্থা একটা করমুই! তয় আজগইরা তোমারে ধইরা নিতে আইতে পারে। সাবধানে থাইকো!'
'হেই ডরেই তো মরি!'
'এইখানে তোমার অসুবিধা নাই তো?'
'না। এক মাসের লাইগা এই ঘরটা ভাড়া নিছি। লগে ট্যাকা আছে কিছু। ওইডি শ্যাষ অওনের আগেই আশা করি আল্লায় আমারে এই বিপদ থাইকা উদ্ধার করবো!'
সাগর বলল, 'অখন যাই! পরে দেখা হইবো।'
'সন্ধ্যার পরে আইসো! জরুরি কতা আছে!'
'আইজগা না। আগে তোমারে সামাল দিয়া লই! তারপরে অনেক সময় নিয়া তোমার কতা হুনুমনে!'
'না, আইজগাই! এক লগে ভাত খামু! তোমারে ভাতের কসম দিয়া কইলাম!'
'তাইলে অনেক দেরি হইবো!'
'বেশি রাইত হইলে জানালায় টোক্কা দিও!'
'আইচ্ছা!'
সাগর পেছন ফেরে মাথা নিচু করে।
মালেকা বলল, 'দুইজনে কি কথা হইলো আমারে বাদ দিয়া?'
'তেমন কিছু না!'
মালেকা সবজান্তার মত বলে, 'বুঝছি! খালি বিরানীই না, আরো দাবী আছে!'
সাগর খেয়াল করে না মালেকার কথা। এক সময় বলে, 'তুই কামে যা-গা!'
'বিরানী কহন হইবো?'
'অন্যদিন!'
'মনে থাকে য্যান!'
'মনে করায়া দিস!'
সে অন্য মনষ্ক হয়েই বলে।
(কমপক্ষে ১০জন পড়ুয়া থাকলে পরের অংশ চলবে। নয় তো এখানেই সমাপ্তি।)
মন্তব্য
পড়তে চাই; কিন্তু আরো ছোট ছোট করে ছাড়তে হবে...........
সচলের অচল দিনে আপনার কম্পেন্ডার পড়েছি, ভাল লেগেছে.
---------------------------------------
অর্থ নয়, কীর্তি নয় ,স্বচ্ছলতা নয়-
আরো এক বিপন্ন বিস্ময়
আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভেতরে
খেলা করে;
আমাদের ক্লান্ত করে;
---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!
কম্পেন্ডারের পরের অংশ পড়তে চাইলে এখানে CLICK করেন
ঠিক আছে! কম করে দিলাম।
____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।
___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!
খুব অন্যায় কথা। এভাবে পাঠককে বাধ্য করা পেট কাটা জামাইল্যার মতো হইয়া গেল না ? তবু বাঁচা গেলো যে কমপক্ষে দশজনকে মন্তব্য লিখতে হবে।
তো ভালোই তো লাগছে। চলতে থাকুক।
(মন্তব্য করাও কষ্টের রে ভাই। অন্যজায়গা লিখে কাট-পেস্ট করে আনতে হয়। কবে যে এই নাদানি বন্ধ হইবো !)
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
ঠিক আছে, পাঠক পড়লে পড়বেন না পড়লে নাই। আমার কি! পেটকাটা কেউ হইতে চাই না। অপমান হইলাম। তাই আমার দাবী প্রত্যাহার কইরা নিলাম।
ধন্যবাদ।
____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।
___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!
সে অন্য মনষ্ক হয়েই বলে।
কি বলে?
**********************
কাঁশ বনের বাঘ
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
তারপর তো ঘরেই গেল!
____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।
___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!
নতুন মন্তব্য করুন