নষ্ট সময়-৩

জুলিয়ান সিদ্দিকী এর ছবি
লিখেছেন জুলিয়ান সিদ্দিকী (তারিখ: বুধ, ৩০/০৭/২০০৮ - ২:৫০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

কারখানায় ফিরে এলে ক্যাশের কাছে টুল নিয়ে বসে সাগর। মজিদ তা দেখে বলল, ওস্তাদ! আইজকার লাইগা ক্যাশিয়ার না ম্যানেজার?'

সাগর বলল, 'চকিদার!'

তারপর কিছুটা দ্বিধা-দ্বন্দ্ব নিয়ে ক্যাশের ড্রয়ারে চাবি দিয়ে ঘোরায়। ড্রয়ার খুলে দেখে সত্যিই টাকা আছে। এবার ড্রয়ারে হাত রেখেই টাকাগুলো গুণতে থাকে। খুচরো-খাচরা মিলিয়ে পাওয়া গেল আরো তিন'শ টাকা। আর রাবার ব্যান্ড দিয়ে বাঁধা আছে পঁয়তাল্লিশটা এক'শ টাকার নোট। তার মানে সাড়ে চার হাজার টাকা। কিছুটা ভবনায় পড়ে গেল সে। মহাজন তাকে বলেছে টাকা আছে চার হাজার। এখন পাওয়া গেল আটচল্লিশ'শ। আট-শ টাকাই বেশি?

সাগরের সাবধানি মন বলে, এর মইদ্যে কোনো কিন্তু আছে। মালিক পরীক্ষাও করবার পারে। কইছেই তো আইজ আমার পরীক্ষা। তার কানে বাজতে থাকল লতার বলা কথাগুলো। 'চুরিদারি করলে...।'

টাকাগুলো আবার ড্রয়ারে রেখে তালা আটকে দিয়ে চাবিটাকে প্যান্টের চোরা পকেটে রেখে কাজ তদারকিতে নেমে পড়ে সে।

সামসু নামে একটা ছেলে দেড় ইঞ্চি জি আই পাইপে থ্রেড কাটছে। কাজটা সাধারণত কিছুটা পাকা লোকেরই করার কথা। সামসু এখনো সাগরের চোখে পাকা হয়ে ওঠেনি। তাই সে তার কাছে গিয়ে বলল, 'কাজ কদ্দুর?'

'মোটে দুইডা কাটলাম!'

'মাপ কত আছিলো?'

'দেড় ইঞ্চি।'

সাগরের কেমন সন্দেহ হয়। বলে, 'খাতাডা দেহি তো!'

সামসু বলল, 'খাতা দেইখ্যাই লইছি! আপনে খুইল্যা দ্যাহেন!'

সাগরের মনে হল সামসু যেন তাকে চ্যালেঞ্জ করল। রাগ হয়ে গেল তার। দেড় ইঞ্চি জিআই পাইপে সবসময় এক ইঞ্চি দেড় সূতা প্যাঁচ কাটা হয়। অথচ ছেলেটা বলছে দেড় ইঞ্চি। অর্ডারের খাতা খুলে সে দেখতে পেল লেখা আছে ইঞ্চি দেড়। এটাকেই ছেলেটা ধরে নিয়েছে দেড় ইঞ্চি। মনে মনে প্রমাদ গোণে সে। পার্টিকে ভর্তুকি দিতে হলে আর উপায় থাকবে না!
সে হঠাৎ চিৎকার করে বলল, 'সামসু ! কাম বন্ধ কর!'

তার কন্ঠস্বরে এমন কিছু একটা ছিল যে, অন্যান্য সবাই কাজ বন্ধ করে এদিকে তাকিয়ে থাকল।

সাগর এগিয়ে দেখে তিন নাম্বার পাইপের অর্ধেক প্যাঁচ কাটা হয়ে গেছে। পাঁচ ফুট লম্বা পাইপ আছে বত্রিশটা। এর মধ্যে দু'টো কমপ্লিট। বাকি থাকল ত্রিশ। সে তাড়াতাড়ি কাজ করা পাইপ দু'টোর মাপ নিল। কিছুটা বেশি আছে। যাক বিপদ হবে না! নিজকে প্রবোধ দিল এই বলে, যাউক সাইজ করন যাইবো!
সামসুকে বলল, 'কিরে হালার পো, তুই জানস না পাঁচ ফুটের বেশি অইলে কাইট্যা সাইজ কইরা নিতে অইবো?'

সামসুর চোখে মুখে ভয় ফুটে ওঠে। বলল, 'ওস্তাদ মনে আছিল না!'

সঙ্গে সঙ্গে মজিদ এসে সামসুর সার্টের কলার চেপে ধরে দুটো ঝাঁকুনি দিয়ে বলল, 'মনে থাকে না ক্যান? পাছার মাইদে দুইডা লাত্থি মারলেই ঠিক অইবো!'

সাগর হাত তুলে মজিদকে থামায়। বলে, 'মাইর-পিট করনের দরকার নাই। তয় এমন একটা হিসাবের কাম এমন বাচ্চা পোলাপানরে করতে দেওয়া ঠিক অয় নাই!'

মজিদ বলল, 'বাচ্চা বইল্যা কি বেতন কম নেয়?'

'আমি দ্যাখতাছি। আপনেরা নিজের কাম করেন গা!'

মজিদ বলল, 'ক্ষতিডা সামাল দিবা ক্যামনে?'

'পাইপের সাইজ কিছুডা বড় আছে!'

তারপর সামসুকে বলল, 'হেক্সোডা আন! মাপ দিয়া দিতাছি। ঠিকঠাক মত কাটিস!'

সাগর নিজেই টেপ দিয়ে মেপে মেপে চক দিয়ে দাগ কেটে দেয় পাইপের গায়ে।

সবগুলোতে দাগ দেয়া হয়ে গেলে একটি জিআই পাইপ সামসুর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে, 'নে, কাটা শুরু কর! আর তর কামডা আমিই করতাছি!'

সামসু হঠাৎ সাগরের পা চেপে ধরে বলে উঠলো, 'ওস্তাদ আমারে খেদাইয়া দিবো না তো? তার দু'চোখ বেয়ে পানি বেরিয়ে আসে।

সাগর বলল, 'মন দিয়া তো কাম করস না! খেদাইলে আমি কি করমু?'

সামসু পা ছাড়ে না। বলে, 'এইবার আমারে একটা সুযোগ দ্যান! কাউরে না জিগাইয়া আর কাম করমু না!'

'আইচ্ছা যা অহন!'

সাগররের লজ্জা লাগছিল খুব। জোর করে সামসুকে সরিয়ে দিতে পেরে বেঁচে যায় যেন।

তারপরই সে আস্তে ধীরে ধ্যানস্থ হয়ে পড়ে পাইপের থ্রেড কাটার কাজে।

(চলবে...)


মন্তব্য

কীর্তিনাশা এর ছবি

চালাইতে থাকেন।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

জুলিয়ান সিদ্দিকী এর ছবি

চলছে গাড়ি- যাত্রাবাড়ি!

____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।

___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!

শেখ জলিল এর ছবি

জুলিয়ান সিদ্দিকীর পূর্ণ সচল হবার সময় এসেছে..

যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!

জুলিয়ান সিদ্দিকী এর ছবি

শত্রুতা কেন করেন ভাই? পূর্ন সচল হলে যে আলস্যের কাছে ধরা!

____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।

___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।