রাজ্য আর রাজকন্যার কথাটা বুঝতে পারল না সাগর। খানিকটা ভাবলেও ব্যাপারটা তার মাথায় ঢুকলো না।
তারপর বলল, 'মিরপুরের পাট্টি পরতেক মাসে তাগো পাইপের থ্রেড কাটানের লাইগা চুক্তি করতে চাইতাছে। আমি কইলাম আপনের লগে কথা না কইয়া কিছু কইতে পারুম না!'
'এইসব হইলো সিস্টেম! তুই রাজি হইয়া যাইতি! সব সময় কি আমারে কারখানায় পাবি, নাকি আমি অত সময় দিতে পারুম? কিছু কিছু কাজ আছে, মালিকরে জিগানের আশায় বইয়া থাকতে হয় না! ব্যবসার উন্নতি, কর্মচারিরও উন্নতি! এইটা তরে বুঝতে হইবো না!'
সাগর এত কথা বুঝতে না পেরে চুপ করে থাকলে জমিরুদ্দিন আগ্রহ নিয়ে বললেন, ’তোর কথা হুইনা তারা কি কইলো?'
সাগর উচ্ছ্বসিত হয়ে বলে, 'কইলো সামনের মাসে একটা ডিড লেইখা আনবো। আপনের ইচ্ছা আইলে রাজী অইবেন আর না অইলেও অসুবিদা নাই। তারা কইছে এখান থেইকাই কাজ করাইবো!'
তারপর কিছুটা বিরতি দিয়ে সাগর আবার বলল, 'আপনের শরীল কেমুন? কাইল থাইকা যাইতে পারবেন তো কারখানায়?'
'আরে পোলায় কয় কি? ও লতার মা! জল্লি আহো!'
লতার মা কেমন কখনো দেখেনি সাগর। এক মহিলা মাথায় ঘোমটা টেনে এসে দাঁড়াল জমির উদ্দিনের পাশে। বলল, 'তুমি এমুন কইরা জিগার পারতাছো ক্যালা রান্দা বহাইছি না! কি কইবা? কও!'
জমিরুদ্দিন সহাস্য মুখে ফিরে তাকালেন স্ত্রীর দিকে। বললেন, 'দ্যাখো দ্যাখো, পোলায় জিগায় কাইলকা কারখানায় যাইতে পারুম কি না?'
লতার মা হাসলেন।
সাগরের কেমন যেন সন্দেহ হল। হাসিটাতে কোনো একটা রহস্য আছে। যেটা তার অজানা।
মহিলা তাকে দেখিয়ে বললেন, 'এই ছেড়ার নামই সাগর? দেখতে বড় মিঠা পোলা তো! মুখটা এক্করে চান্দের লাহান! আইচ্ছা বইবার কও! আমি পাক ঘরে গেলাম!'
মহিলা চলে যেতেই সাগর বলল, 'মাহাজন আমার তাড়াতাড়ি যাইতে অইবো!'
'আবে, আইজকা উমদা খানা আছে!'
বলার সময় মহাজনের মুখ যেন ঝক ঝক করে।
তবুও সাগর কাঁচুমাচু হয়ে বললো, 'খাইতে বইলে দেরি অইয়া যাইবো!'
'আবে, তর লেইগাইত্ত ইস্পেশাল রান্দা অইতাছে! তুই খাবি না তো আমি খামু?'
জমিরুদ্দিন তেমনি হাসিহাসি মুখে বললেন, 'হালার পো, তুমি জান না আমার ডাইরিয়া?'
মহাজনের কথা শুনে মাথা নিচু করে রাখে সাগর। টুনি তার পথ চেয়ে বসে আসে। কখন কোন বিপদ এসে চড়াও হয় তার ঠিক নেই। মনেমনে সে প্রার্থনা করে, ইয়া রাব্বুল আলামিন, টুনিরে তুমি ভালা রাইখো!'
খাবারের আয়োজনটা খুব ভাল করেছিল তারা। জমিরুদ্দিন খাস ঢাকাইয়া। বউও তাই। কাজেই রান্নার ব্যাপারে তাদের সুনামের কথা সাগরও জানে। খাওয়াটা তার বেশি হয়ে যাওয়াতে কেমন হাঁসফাঁস লাগছিল। সে এমন ভাল খাবার জন্মের পর কখনো খায়নি। মনে হচ্ছিল যেন অমৃত মুখে দিচ্ছে সে। খেতে খেতে সে বলেছিল, 'মাহাজন, একটা কতা কই, রাগ অইয়েন না!'
জমিরুদ্দিন হাসিহাসি মুখে তাকিয়ে বলেছিলেন, 'কি কইবার চাস?'
সে লজ্জিত মুখে বলেছিল, 'এমন সোয়াদের খাওন আমার বুঝ অইয়া কোনো দিন খাই নাই। অনেক নামি হোটেলেও খাইছি, চাইনিস খাওনও খাইছি। কিন্তু এমন খানা খাই নাই!'
জমিরুদ্দিন আরো খুশি হয়ে উঠেছিলেন। 'আবে, এইটা খাইতো মোগল বাদশারা। খাওনটার নাম মোগলাই। সবই মোগলাই রান্দা। চাইনিজ আর মোগলাই কি এক হইলো? সব জিনিস তো আগের মতন খাঁটি নাই! খাঁটি জিনিসের পাক হইলে এতক্ষণে তর গতরে ঘাম ছুইটা যাইতো!'
মহাজনের কাছ থেকে বিদায় নিতেই রাত বারটা বেজে যায়।
রাস্তায় নেমে কোন দিকে যাবে এ নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভোগে সে। এখন টুনির ওখানে যাবে না কমলাপুর যাবে ভেবে পায় না।
হাঁটতে হাঁটতে সে নানা ধরনের চিন্তা-ভাবনা করে। শেষটায় টুনির ওখানে যাওয়াই স্থির করে। তার আগে একবার নিজের ডেরায় ঢু মেরে যাওয়া উচিত বলে ভাবল।
(চলবে..)
মন্তব্য
এগিয়ে যান জুলিয়ান ভাই, ভালো হচ্ছে। সাগরকে মনে হয় ভালো প্যাঁচে ফেলবেন সামনে?
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।
___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!
নতুন মন্তব্য করুন