সাগরের দিকে চেয়ে টুনি একটু ম্লান হেসে বলে, 'আমি কি আর হেই আমি আছি? আজগইরা আমারে এক্কেরে শ্যাষ কইরা দিছে! তা ছাড়া...।'
কথা শেষ না করে থেমে যায় টুনি।
সাগর বলল, 'তাছাড়া কি?'
টুনি সাগরের দিকে মুখ তুলে তাকাতে পারে না। মাটির দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখে বলে, 'মাইয়াগো গায়ে একবার পুরুষের ছোঁয়া লাগলে তারা আরেক রকম অইয়া যায়। তোমার বয়স আমার বয়স সমান অইলেও শরীলের দিক দিয়া আমি বুড়ি অইয়া গেছি!'
'তাতে অইছে কি?'
পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয় সাগর।
টুনি এবার মুখ তুলে সাগরের চোখে চোখ রাখে। বলে, 'তুমি কি জানো বউ-জামাইর মইদ্যে কি অয়? তাগো দুইজনের শরীলের কি সমন্দ?'
সাগর লাজুক ভাবে বলল, 'অনেক কিছুই হুনছি! আর অ্যামনেও বুলু ফিলিমে দেখছি! কিন্তু নিজে কোনো দিন সাহস পাই নাই!'
মনেমনে খুশি হয়ে উঠে টুনি। ভ্রু নাচিয়ে বলে, 'দুই একবার টেরাই করছিলা নাকি?'
সাগর নিরবে মাথা দোলায়।
তারপর আবার উঠে বসে হেসে বলে, 'কয়েক বছর আগে, টানবাজার তহনও ভাইঙ্গা দেয় নাই! একবার গেছিলাম। একটা গল্লির ভিতরে যেই ঢুকছি তহনই এক চিপার ভিতর থাইক্যা একটা সোন্দর ছেড়ি বাইর অইয়া আমার সামনে খাড়াইয়া চোখ টিপ মারে। তার বাদে আমি কিছু বুজনের আগেই খপ্ কইরা আমার একটা হাত ধরল। আচানক এমন একটা ঘটনায় আমার শইল্যের কাঁপুনি শুরু অইয়া গেল। আমার কাঁপুনি দেইখ্যা ছেড়ি কইলো, নাগর কি এইখানে নতুন? আগে কোনো দিন আহে নাই?'
এই বলে একবার থেমে যেন দম নেয় সাগর।
তারপর আবার বলতে থাকে, 'আমার গলা শুকাইয়া গেছিলো। কোনো রকম মাথা নাইড়া না করলাম। তখন ছেড়ি কইলো, ডরের কিছু নাই! আমার ঘরে আইবা? ছেড়ি আমারে টাইন্যা তার ঘরে নিয়া দরজা বন্ধ কইরা দিছে। আমি তো ডরে চোখ বন্ধ কইরা বইয়া রইছি। ছেড়ি যতই বুঝায় আমার শইলের কাঁপুনি বন্ধ অয় না। কত রকমে যে চেষ্টা করলো। আমি আর সিধা অইতে পারি না। শেষে রাগ কইরা ছেড়ি আমারে তার ঘর থাইক্যা ঠেলা দিয়া বাইর কইরা দিলো। তার ঘর থাইক্যা যে বাইর অইয়া আইলাম, আর কোনো দিন যাইতে সাহস পাই নাই! ইচ্ছাও অয় নাই!'
টুনি মনেমনে ভাবে, সাগর নষ্ট অয় নাই! দিলডা সরল-সোজা আছে। কোনো পাপে এখনো তারে ছুঁইতে পারে নাই!
তারপর আরো গভীর দৃষ্টিতে তাকায় সাগরের দিকে। মনে মনে বলে, হে রাব্বুল আলামিন, সাগররে আমার কাছ থাইক্যা আর দূরে সরাইও না! বাকি জীবনডা তারে লগে কইরাই বাঁচতে চাই!
সাগর বলল, 'কি চিন্তা করতাছো টুনি?'
টুনি বলল, 'আমি অজু কইরা আহি!'
সাগর শুয়ে শুয়ে দেখতে থাকল টুনির চলাফেরা। মনে মনে ভাবতে লাগল, এ কেমুন মুসলমান? যে কবুল না কইয়াও সংসার করে। যারে মহব্বত করে, তারে পাওনের লাইগ্যা খোদার কাছে দোয়া মাঙে। আবার হেই বেগানা পুরুষের লগে থাইকাই অজু করতে যায় নমাজ পড়বার লাইগ্যা!
এসব ভাবনা এসে সাগরের সব কিছু আবার এলোমেলো করে দিতে চায়। সে জোর করে চোখ বন্ধ করে। সে অবস্থাতেই টের পায় টুনির ফিরে আসা। সে চোখ খুললে। দেখতে পায় একটা শাড়ি ভাঁজ করে মাটিতে বিছিয়ে নামাজ পড়তে দাঁড়িয়েছে টুনি।
দৃশ্যটা সাগরের কাছে খুব ভাল লাগে। মনে মনে ভাবে যে, টুনিরে একটা জায়নামাজ অবশ্যই কিন্যা দিতে অইবো। সে সাথে তার ভাবনা আরেকটু পাখা মেলে যে, এমন নারীকে স্ত্রী হিসেবে পেলে সে নিশ্চয়ই সুখী হবে। তবে, সুখ যে কী জিনিস তা আজও তার ধরা-ছোঁয়ার বাইরেই থেকে গেল! আর এ কথা মনে হতেই তার সমস্ত রাগ গিয়ে পড়ে মায়ের ওপর।
সাগর ভেবে পায় না তার কী করা উচিত। এভাবে আর কতদিন অনিশ্চিত নিঃসঙ্গ জীবন-যাপন করবে সে? অকস্মাৎ চোখ দুটো ভীষন জ্বালা করে উঠলো।
(চলবে..)
মন্তব্য
হুম্ ঘটনা প্যাঁচ খাইতাসে।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
হুম!
____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।
___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!
আসলেই প্যাঁচ খাইছে।
তাই তো দেখছি!
____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।
___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!
বড়লোকদের লিভ টুগেদার নিয়ে আমাদের জল্পনা কল্পনার শেষ থাকে না----বড় বড় চোখ করে লিভ টুগেদারের সাথীদের দেখতে থাকি। আমরা জানিই না যে, শহরে নিম্নবিত্তের প্রায় এক দশমাংশ নারী এই লিভ টুগেদার দিয়েই নিজের নিরাপত্তার বেষ্টনী তৈরি করে।
.....................................................................................
সময়ের কাছে এসে সাক্ষ্য দিয়ে চ'লে যেতে হয়
কী কাজ করেছি আর কী কথা ভেবেছি..........
.....................................................................................
সময়ের কাছে এসে সাক্ষ্য দিয়ে চ'লে যেতে হয়
কী কাজ করেছি আর কী কথা ভেবেছি..........
উপরের আর নিচের এই দুটি গোত্রে অনেক মিল। যে কারণে সুশীল মর্ধবিত্তরাই আলোচিত এবং আলোকিত।
____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।
___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!
নতুন মন্তব্য করুন