সাগর মনেমনে ভাবতে লাগল যে, কিভাবে সে কাগজ-পাতি ঠিক করবে? সে তো এসব ব্যাপারে কিছুই জানে না। কার সাথেই বা এসব ব্যাপারে আলাপ করতে পারে সে? এ নিয়ে মহা দ্বন্দ্বের ভেতর পড়ে গেল। মহাজনের সাথে আলাপ করা যায়। কিন্তু মুরুব্বী মানুষ, কি না কি ভেবে বসে কে জানে? তবুও সে জমিরুদ্দিনের সঙ্গে আলাপ করার সিদ্ধান্ত নেয়। কারণ তার মতে মহাজন কিছু মনে করলেও অন্তত খারাপ বুদ্ধি দেবে না।
সে কারখানার সামনে এসে দেখতে পায় সেটা এখনো খোলেনি। তাই পাশের চা-দোকানের বেঞ্চের উপর বসে একটা চায়ের কথা বলে। লোকটা তাকে দেখতে পেয়ে বলল, 'কি সাগর ভাই, আইজগা দেহি হবরে হবরে?'
সাগর চিন্তিত ভাবেই বলল, 'হ, কথা তো এমুনই আছিলো। কিন্তুক কেউ তো অহনো আইলো না!'
'কোনো অসুবিদায় আছেন নিকি ভাই? মুখটা কেমুন হুকনা হুকনা লাগতাছে!'
সাগর কিছু না বলে কাপ হাতে নিয়ে চায়ে চুমুক দেয়।
তার চা শেষ না হতেই মজিদ এসে গেল। বলল, 'কি সাগর ভাই, ঘটনা কি! মাহাজন অহন তরি আহে নাই?'
'এইডাইত্ত ভাবতাছি!'
'ভাবাভাবির কাম নাই! তুমি মাহাজনের বাইত্যে যাও! চাবি নিয়া আহগা। আইজ কত কাম করতে অইবো তোমার মনে আছে?'
সাগর মনেমনে তাড়া অনুভব করে। সত্যিই আজ তার কাজের ফিরিস্তি অনেক লম্বা। সে আর দেরি করে না। বলে, 'মজিদ ভাই তুমি যাইবা আমার লগে?'
মজিদ বলে, 'না। তুমিই যাও!'
সাগর রিকশায় চড়ে মহাজনের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। কিন্তু বেশি দূর তাকে যেতে হয় না। পথেই মহাজনের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল।
সে রিকশা থেকে নেমে বলল, 'মাহাজন দেরি দেইখা আপনের কাছেই যাইতাছিলাম!'
তারপর মাথা চুলকে আবার বলল, 'ভাবলাম শইল আবার খারাপ অইলো কিনা!'
জমিরুদ্দিন বললেন, 'আবে আমি তো তর দেরি দেইখা বাইর অইলাম! তরে কাইল কইলাম না সক্কাল সক্কাল আহনের কথা!'
'আমি তো অনেকক্ষণ ধইরা কারখানার সামনে বইয়া রইছি!'
'আবে হালার পো, তোমারে আমার বাইত্যে আইবার কইছিলাম!'
বোকার মত হেসে সাগর বলল, 'আমি ওইডা বুঝবার পারি নাই!'
'তোর রিকশা ছাইড়া আমার লগে আয়া পড়!'
জমিরউদ্দিনের কথায় ভিড়মি খাবার মত অবস্থা হল সাগরের। তবুও দোনোমোনো করে সে তার রিকশা ছেড়ে জমিরউদ্দিনের পাশে উঠে বসে।
জমিরুদ্দিন বললেন, 'তুই পরতেক দিন বাইত্যে গিয়া চাবি আইন্যা কারখানা খুলবি! পারবি না?'
সাগর মাথা দোলায়। 'পারমু!'
'নাকি তোরে একটা চাবি দিয়া দিমু?' বলে, জমিরুদ্দিন সাগরের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলেন কিছুক্ষণ।
তারপর আবার বললেন, 'ঘরের থাইকা একবারে আইসা তালা খুইলা গদিতে বইতে পারতি! আমার তো বয়েস অইতাছে, অহন আর এত কষ্ট করবার পারি না! যেদিন আমু না হেইদিন বাইত্যে গিয়া হিসাব দিয়া আহিস!'
সাগর চুপ করে কথা শোনে।
দেখতে দেখতে তাদের রিকশা চলে আসে কারখানার সামনে। জমিরুদ্দিন সাগরের হাতে চাবি দিয়ে বললেন, 'তালা খোল গিয়া!'
সাগর হাত পেতে চাবিগুলো নেয়।
তারপর তালা খুলে, সার্টার দু'টো এক এক করে উপরের দিকে ঠেলে দেয়।
সার্টারের ঘরঘর শব্দে তখনই কোত্থেকে যেন ছুটে আসে মজিদ। বলে, আমি তো ভাবছিলাম দেরি অইবো!'
তারপর মহাজনকে দেখতে পেয়ে বলল, 'সালামালেকুম মাহাজন! আমরা তো আপনের দেরি দেইখ্যা চিন্তা করতে আছিলাম!'
জমিরুদ্দিন কিছুটা বিরক্তির সুরে বলেন, 'চিন্তা করবার তো কই নাই! সাগররে কাইল কইয়া দিছিলাম গিয়া চাবি আননের লাইগা। তোরা তো অনেক দিন আছছ আমার লগে! তরা দেখছ না আমি যে বুড়া অইতাছি? অহনো কি তগোরে ব্যবাক কইয়া দিতে হইবো?'
মজিদ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে।
জমিরুদ্দিন কন্ঠের পর্দা আরেকটু চড়িয়ে বললেন, 'তগো বাপ বুড়া হইলে কি তোরা জিগানের লাইগা বইয়া থাকতি?'
এবারও মজিদ কথা বলে না।
জমিরুদ্দিন গলার স্বর নামিয়ে আবার বলতে লাগলেন, 'মনে কর আমি তগো বুড়া বাপ! অহন তগো কামাইর উপরে আমার খাওন-খোরাক! তোরা আমার ভালা-খরাব দেখবি না? আমার উপকার হয় এমন কিছু করতে হইলে কি আমারে জিগানের লাইগা বইয়া থাকবি?'
মজিদ বলল, 'খুব খাঁটি কতা!'
সাগর ভেতর থেকে ডেকে বলল, 'আহেন মাহাজন। সব ঝাড়-পোছ অইছে!'
পাঞ্জাবীর পকেটে হাত ঢুকিয়ে জমিরুদ্দিন বললেন, 'নারে, অহন আমু না! তোরা কাম শুরু কর! আমি একটু বাজারের দিকে গেলাম!'
(চলবে..)
মন্তব্য
চলতে থাকুক।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
চলছে!
____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।
___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!
পেছনে পড়ে গেসিলাম।। আবার নিয়মিত হলাম,
চলুক..
---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!
---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!
অসুবিধা নাই!
____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।
___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!
ভালো সিরিজটাকে মিস করছি।
নিয়মিত পড়া হচ্ছে না।
পিডিএফ নামালে প্রথম থেকে আবার পড়বো।
যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!
শেষাংশে পিডিএফ তো অবশ্যই যুক্ত হবে।
____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।
___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!
মন্তব্য করছি না বলে মনে করবেন না পড়ছি না । পড়েই চলেছি
------------------------------------------------------
স্বপ্নকে জিইয়ে রেখেছি বলেই আজো বেঁচে আছি
------------------------------------------------------
হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন’রা কি কখনো ফিরে আসে !
দেখতে পাচ্ছি।
____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।
___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!
নতুন মন্তব্য করুন