একটি সপ্তাহ পার হয় আর সাগরের অভিজ্ঞতার ঝুলির আকারটাও যেন কিছুটা বাড়ে। যেন হঠাৎ করেই মনের দিক থেকে পরিণত হয়ে উঠেছে বেশ কিছুটা। কাজের দক্ষতা আর কাজের প্রতি ভালাবাসাটাও যেন বেড়েছে অনেকখানি। সেই সঙ্গে বিভিন্ন পার্টির মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়তে লাগলো সগরের সুনাম। তার সুনাম বাড়বার সঙ্গে সঙ্গে ব্যস্ততাও বেড়ে গেল। সে সাথে বাড়ল আয়ের পরিমাণও। পঁয়তাল্লিশ হাজার টাকা পকেটে জমে যেতেই একদিন মহাজনকে বলল, 'আপনে আমারে বুদ্ধি দেন, ক্যামনে ট্যাকাগুলার ব্যবস্থা করমু?'
'চল, ব্যাঙ্কে একটা সেভিংস অ্যাকাউন্ট করায়া দেই!'
সাগর বলল, 'ব্যাংকে রাখনের চাইতে আপনের কাছে রাখলেই বেশি ভালা অইবো!'
মহাজন খুশি হয়ে বললেন, 'আরে পাগলা, ভালা হইবো না! ট্যাকা দেখলে কাঠের পুতলাও মুখ খুইলা বহে! তুই ব্যাংকেই ট্যাকাগুলান রাখ! বেশি ট্যাকা জমলে ভালা একটা কিছু শুরু করা পারবি!'
এ পর্যন্ত ব্যাংকে ঢুকবার কোনো প্রয়োজন পড়েনি সাগরের। তাই কেমন যেন ভয় ভয় করছিল। মহাজন জমির উদ্দিনের সঙ্গে অফিসারের সামনে এসে ঘামতে লাগল সে। জিভ দিয়ে ঠোঁট চাটতে লাগল কিছুক্ষণ পরপর।
অফিসার খুবই ভাল লোক! অনেক সাহায্য করলেন।
তবে ওদের একটা ভুল হয়ে গেল। আর তা হল, অ্যাকাউন্ট খুলতে ছবি লাগে। সাগর ছবি আনেনি বলে কাজটা পুরো শেষ হল না।
অফিসার নিজের কাছে সব কাগজ-পত্র রেখে দিয়ে বললেন, দু'দিন পর পাসপোর্ট সাইজ ছবি নিয়ে আমার কাছে চলে আসবেন!'
সাগর বলল, 'ফোটো তো তোলা নাই। নতুন ফোটো তুলতে অইবো!'
অফিসার বললেন, 'যখন পারেন আনবেন! টাকাটাও সেদিনই নিয়ে আসবেন!'
সাগর এক ধরনের অনিশ্চয়তা নিয়ে জমির উদ্দিনের পিছু পিছু ব্যাঙ্ক থেকে বেরিয়ে আসে। কিছুদূর আসতেই মহাজন বললেন, 'তুই নীলক্ষেত যা! ফোটো উঠাইয়া তার বাদে কারখানায় আহিস! আমি একটু ঘুন্না দিয়া বাইত্যে যামুগা!'
সাগর মাথা নাড়ে।
'বেশি দেরি করিস না কইলাম!'
সাগর বলল, 'আইচ্ছা!'
মহাজন রিকশায় উঠতেই সাগর আরেকটা রিকশা নিয়ে ছুটল বস্তিতে।
তাকে অসময়ে ঘরে ফিরতে দেখে টুনি অবাক হয়ে বলল, 'তুমি এই সময়?'
সাগর হাসল। বলল, 'আমার ফোটো তুলতে অইবো! তুমিও আমার লগে চল!'
টুনি যেন আকাশ থেকে পড়ে। 'হায় আল্লা! আমি তোমার লগে গিয়া কি করমু?'
'আমরা এক লগে ফোটো উঠামু!'
'ফোটো তুলুম ক্যান? তোমার কি মাতা খারাপ অইছে?'
'মাতা আমার ঠিকই আছে। কাপড় পিন্দো তাড়াতাড়ি!'
টুনি বলল, 'কাপড় পিন্দোনের কি আছে? আমি কি ল্যাংটা?'
সাগরের কিছুটা রাগ হয়। 'ফাইজলামি কইরো না তো! তোমারে ভালা একটা শাড়ি পিন্দোনের কতা কইছি!'
টুনির সমস্ত অবয়ব কেমন কালিমায় ছেয়ে যায়।
তারপর বিষাদক্লিষ্ট মুখে বলল, 'আমার পিন্দোনের তো দুইডা কাপড়ই আছে!'
সাগরের মন খারাপ হয়ে যায়। একবার ইচ্ছে হল বলে যে, ভাল কাপড় সে তাকে কিনে দেবে। কিন্তু তা সে বলল না। মনেমনে ঠিক করল মার্কেটে নিয়ে গিয়ে নিজের পছন্দ মত শাড়ি-কাপড় কিনে দেবে। সে বলল, 'তাইলে এমনিই চল!'
হয়তো লজ্জা কিংবা দ্বিধা তাকে নিরাসক্ত করে রাখে। বলে, 'তোমার ফোটো তোলার শখ অইলে তুমি গিয়া তোলাও না! আমারে ন্যাওনের কী কাম?'
'দরকার আছে! তোমার লগে একটা ফোটো তোলার খুব ইচ্ছা আমার!'
'এমন পাগলামী ইচ্ছা ক্যান যে তোমার হইলো আমার মাতায় আইতাছে না!'
'তোমার মাতা ঘামাইয়া কাম নাই! চল দেহি!'
সাগর টুনির হাত ধরে টানে।
অনিচ্ছা সত্বেও টুনি ঘরের দরজায় তালা লাগিয়ে অনিশ্চিত কন্ঠে বলল, 'আমি যে বাইর অইতাছি, কোনো বিপদ অইবো না তো?'
'কিসের বিপদ? চল!'
স্টুডিওতে গিয়ে ছবি তুলবার কোনো অভিজ্ঞতা নেই তাদের কারোরই। এই প্রথমবারের মত ওরা যাচ্ছে কোনো স্টুডিওতে।
মোল্লার দৌঁড় মসজিদ পর্যন্ত। তেমনি নীলক্ষেতের মোড়ে এসে সাগর ভাবল কোথায় যাওয়া যায়?
তারপর তার মনে পড়ল বাকুশাহ মার্কেট ছাড়াও নিউমার্কেটের ভেতর ভাল স্টুডিও আছে। কিন্তু তার মন খুঁত-খুঁত করতে লাগল। দোকানদার যদি ওদের পাত্তা না দেয়? কারণ টুনির পরনের শাড়িটা একবারে বাজে! রঙ-জ্বলা, কোঁচকানো। দেখতে মনে হচ্ছে দীর্ঘকাল পর হাঁড়ির ভেতর থেকে বের করেছে। তাকে দেখতেও লাগছে ফকিন্নির মত।
সাগর নিজের ওপরই রেগে উঠতে চাচ্ছিল এই বোকামীর জন্য। সে ভাবল যে, ভাল হতো কোনো পরিচিত লোক থাকলে। তেমনটা না হলেও নিদেন পক্ষে মুখ-চেনা কেউ হলেও বুকে সাহস হতো।
হঠাৎ তার মনে পড়ল বাকুশাহ্ মার্কেটের নাহার স্টুডিওর কথা। ওখানে তার মুখ-চেনা একজন কাজ করে। নাম-টাম বলতে পারবে না। দেখা হলেই কি ভাই, খবর কি ধরনের সম্পর্ক। এ মুহূর্তে এ সামান্য পরিচয়টাই তার কাছে বেশ ঘনিষ্ঠ বলে মনে হল। আর সাথে সাথেই যেন ফিরে এলো বুকের বল।
স্টুডিওর সামনে যেতেই লোকটার সঙ্গে চোখাচোখি হল সাগরের।
লোকটা বলল, 'কি মনে কইরা?'
সাগর বলল, 'ফোটো তুলতে হইবো!'
'আসেন!' বলে, লোকটা উঠে দাঁড়াল। 'লগে কি ভাবি নাকি?'
সাগর জবাব না দিয়ে হাসল কেবল।
'ভিতরে গিয়া বসেন। চুল-টুল আঁচড়াইয়া মুখে পাউডার দেন! এই ফাঁকে আমি যাইয়া ওস্তাদরে ডাইকা আনিগা!'
(চলবে..)
মন্তব্য
'ভিতরে গিয়া বসেন। চুল-টুল আঁচড়াইয়া মুখে পাউডার দেন! এই ফাঁকে আমি যাইয়া ওস্তাদরে ডাইকা আনিগা!'
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
ডাকতে হইবো না। ওই যে, আইসা পড়সে!
____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।
___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!
সময়ের সংকটে পড়তে পারছি না। শেষ হলে পিডিএফ করে দেবেন। এক সাথে পড়ব। দেখতে দেখতে অনেকগুলো পর্ব হয়ে গেল। মনে হয় শেরালীর আগে নষ্ট সময় শেষ হবে। অভিনন্দন।
**********************
কাঁশ বনের বাঘ
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
একজন অলস পাঠক [রাফির নামটা বলতে চাই না। ] প্রথম পোস্ট দেখেই বলে ফেললো, ছোট পোস্ট দিতে। টুকরো টুকরোটুকরোটুকরো করে দেখি ৪৪ টুকরো হয়েছে। ভাবি, সব্বনাশ! ২০০৮ তো তাইলে এমনিতেই কাটবে। তাই ভাবনা পাল্টাইলাম।
হয়তো কারো ইচ্ছা নাই আমার পোস্ট হাফ সেঞ্চুরি হোক। তাই ৬যন্ত্র কইরা আমার পোস্ট কমানের বুদ্ধি করসে আরকি! তা ছাড়া কেউ যখন শত্রুতা করে কী আর করা। জান বাঁচানি ফরজ! তাই ঠিক করলাম কাউরে কষ্ট না দিয়া একবারে PDF নামায়া দেই! ইট্টু সবুর করেন!
____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।
___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!
জুলিয়ান ভাই! নামটা কিন্তু আমি শুনি নাই।
টেনশন লইয়েন না। আপনের বই অর্ধেক শেষ। কালকের মধ্যে কাবার করে দেব।
---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!
---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!
মাঝখান থেকে উপন্যাস পড়া আর কৌতুকের মাঝখানে গিয়ে ভ্যাবাচেকা খাওয়া একই বিষয়
ট্রাক রাখতে পারব না বলে ধারাবাহিক উপন্যাস পড়া তালিকা থেকে বাদ দিয়ে দেই
কিন্তু তারপরেও কীভাবে যেন চলে আসি
আচ্ছা আপনার উপন্যাসগুলো ছাপানো আছে নাকি ছাপানোর কোনো চিন্তা আছে
একটু বলবেন?
পিডিএফ পড়াও বেশ মুশকিল
এখনও বই ছাড়া অন্য কোনো মাধ্যমে উপন্যাস পড়ার মতো শিক্ষিত হয়ে উঠতে পারিনি...
PDF ছাড়া তো ভরসা দেখি না ভাইজান! তবে আশা রাখি বড় হইলে উপন্যাসিক হমু।
ছাপানোর চিন্তা করতে খুবই ভয় পাই। ২০০৬ এ আরেক জীবন নামের বইটা মেলায় ১১কপি বিক্রি হইতে দেইখ্যা সেই দুঃখে দেশ ছাড়সি। আবার যদি ছাপানোর কথা মনে করান তো ক্যামনে কষ্ট সামলাই কন দেখি!
আর এখন কাগজের যা দাম। কে এমন অকাজ করতে আইবো কন! আরো ভালো দুই একটা উপন্যাস লেখি। তারপর যদি সাহস পাই ভাববো। দুই চাইরটা বই না রাইখ্যা যদি মরি তাইলে তো পরে বুক বাইন্ডার হইয়া পয়দা হইতে হইবো!
আপনার কথায় বুকে একটু ভরসা পাইলাম! ধন্যবাদ।
____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।
___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!
১১ কপি অনেক
জানামতে আকতারুজ্জামান ইলিয়াসের প্রথম বই অত কপি বিক্রি হয়নি
____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।
___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!
নতুন মন্তব্য করুন