মার্বেল

জুন এর ছবি
লিখেছেন জুন [অতিথি] (তারিখ: বিষ্যুদ, ১৩/১২/২০১২ - ৫:৩৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমি একজন প্রতিভাহীন মানুষ। তাই বরাবরই আর সবার ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র সাফল্যে, পারদর্শিতায় অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকি আর ভাবি সেই ব্যক্তির কতই না প্রতিভা। সবসময়ই আমি পারদর্শিতা আর প্রতিভাকে গুলিয়ে এসেছি যেমন, ঠিক তেমনি এটাও বিনা প্রচেষ্টাতেই স্বীকার করে নিয়েছি যে আমাকে দিয়ে এইসব হবে না।

মনে পড়ে ছোটবেলায় লাটিম ঘুরানোর সেই আপ্রাণ প্রচেষ্টার কথা। বন্ধুরাও কম চেষ্টা করেনি শেখানোর। আর সবার লাটিম সবসময় সোজা হয়ে ঘুরলেও আমার লাটিম ঘুরত উল্টো হয়ে। ঠিক তেমনিভাবেই মার্বেলকেও কখনই বশে আনতে পারিনি। অবাক হয়ে দেখতাম আমার কেনা মার্বেলগুলো কেমন জিতে নিয়ে যাচ্ছে বন্ধুরা।

তারপরেও মার্বেলের জন্য ছিল আমার প্রবল নেশা। ততদিনে বুঝে গিয়েছিলাম যে মার্বেল খেলায় আমার কোনও ভবিষ্যত নেই। তবুও আমি মার্বেল সংগ্রহ করতাম। নিজে কিনতাম, অন্যরা কিছু দিতে চাইলে মার্বেলই নিতাম। কারন আমার পৃথিবী আমি দেখতে পেতাম মার্বেল এর ভিতরে।

মনে পড়ে সেই বিভিন্ন সবুজ শেডের কাঁচের বলগুলোর কথা। মার্বেলের ভিতর দিয়ে আলোর দিকে তাকালে দেখা যেত বিভিন্ন ধরনের নকশা। ঘন্টার পর ঘন্টা আমি কাঁটিয়ে দিতাম সেই নকশা দেখে। কল্পনা করতাম আমার দু’আঙ্গুলের ফাঁকে আসলে এটি আরেকটি গ্রহ। আমাদের পৃথিবীর মতই। নিজে ভেবে নিজেই অবাক হয়ে যেতাম; কীভাবে সম্ভব! তাকিয়ে থাকতে থাকতে মনে হত ভিতরে নড়াচড়াও দেখতে পাচ্ছি যেন।

সেই পৃথিবীকে আরও ভাল ভাবে ধরার জন্য; দেখার জন্য একবার একটা কাঁচের বল ভেঙ্গেই ফেললাম। কিন্তু পেলাম না সেই পৃথিবীর দেখা। ভেঙ্গে যাওয়া দুই টুকরোর ভিতরে দুইভাগে বিভক্ত দুনিয়াটা কেমন ঝাপসা আর ঘোলাটে হয়ে গিয়েছিল সেসময়। খুব অসহায় বোধ করছিলাম। নিজেকে খুনি মনে হচ্ছিল।

দোতলার ছাঁদে ওঠার সিঁড়ীঘরের চালের উপরে শুয়ে পার করা অসংখ্য দুপুর এবং বিকেলে, মার্বেলের পৃথিবী দেখতে দেখতেই চোখে পড়ত দু’এক্টা বিমান; আর অজস্র পাখি। তখন থেকেই কেন যেন মনে হত আমিও একদিন পাখির মতো স্বাধীনভাবে উড়ব। আমি বিমান চালাব। লাটিম যার উল্টো ঘুরে, তার জন্য আসলে ওই স্বপ্নটুকুই ছিল সার।

যথারীতি এইসব না মেটা সাধ-স্বপ্নের ভিতর দিয়েই একসময় নিজেকে আবিষ্কার করলাম একটা অবস্থানে। স্বপ্নের সমান বড় হয়তো না। কিন্তু করে খেতে পারছি। এটাওতো আশা করিনি কখনো।

আরেকটু ভাল থাকার চেষ্টা করিনা এইটা বলা অন্যায় হবে; তবে এইটাও ঠিক কখনই কেন যেন মনে হয়নি আমার নিজের একটা গাড়ী, একটা বাড়ি -এমনটা লাগবেই। আমার বন্ধুদের এইসব নিয়ে আফসোস এবং পাওয়ার জন্য চেষ্টা দেখে অবাক হয়েছি। ভালইতো আছি এইসব ছাড়াও। সবাইকে নিয়েই।

যার সাথে তিন গোয়েন্দা আছে, যার সাথে মাসুদ রানা আছে, আছে টিনটিন বা ক্যাপ্টেন নিমো; সে ইচ্ছে করলেই যেমন পারে রোলস রয়েসে চড়তে, তেমনি পারে সাগরতলে ডুবোজাহাজ চালাতে বা আকাশে মিগ২৯ দাবড়ে বেড়াতে বা সলোমনের গুপ্তধন উদ্ধার করে ফেলতে। কিসের অভাব তার?

কখনই দেখিনি এইসব চরিত্রকে কিছুতে আপস করতে বা পিছিয়ে আসতে। তাই যখন দেখি গুলি খেয়ে, আগুনে পুড়ে, ব্রিজের তলে পড়ে, দলীয় রোষানলের স্বীকার হয়ে বা একান্তই ব্যক্তিগত আক্রোশের ফাঁদে পড়ে একের পর এক জীবন নিভে যেতে; তখন খুব ইচ্ছে করে মাসুদ রানা বা টিনটিন বা ওবেলিক্স হয়ে সব ধ্বংস করে দিতে।

কিন্তু নিজেকে এঁদের মতো কল্পনা করলেও আসলেতো আমি উল্টো করে লাটিম ঘুরানো সেই আমি ছাড়া আর কেউ নই।

তাই নিজের দু’আঙ্গুলের ফাঁকে ভেঙ্গে যাওয়া কাঁচের বলটার ক্রমশ ঘোলা হয়ে আসা দেখতে থাকি এখনও অসহায় চোখে; নিজেকে আজকাল আবারও কেন যেন খুনী মনে হয়।


মন্তব্য

সোহেল এর ছবি

আহা..

জুন এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

যদি ভাব কিনছ আমায় ভুল ভেবেছ...

সজ এর ছবি

ভাল লেগেছে

জুন এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

যদি ভাব কিনছ আমায় ভুল ভেবেছ...

তারেক অণু এর ছবি

যার সাথে তিন গোয়েন্দা আছে, যার সাথে মাসুদ রানা আছে, আছে টিনটিন বা ক্যাপ্টেন নিমো; সে ইচ্ছে করলেই যেমন পারে রোলস রয়েসে চড়তে, তেমনি পারে সাগরতলে ডুবোজাহাজ চালাতে বা আকাশে মিগ২৯ দাবড়ে বেড়াতে বা সলোমনের গুপ্তধন উদ্ধার করে ফেলতে। কিসের অভাব তার? উত্তম জাঝা!

জুন এর ছবি

ধন্যবাদ ভাই।

যদি ভাব কিনছ আমায় ভুল ভেবেছ...

তাপস শর্মা এর ছবি

মন খারাপ ক্যা এত ?

আপনি না গাঞ্জানেননা ? তাই না ? এই নেন একটু । লেখাটা ভালো লাগছে

জুন এর ছবি

মনটা আসলেই অনেক স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে আছেরে ভাই। এই যে দেখেন না; অনলাইন যে হই নাই তা না। কিন্তু যে সচলে একদিন না ঢুকে থাকতে হলে হাফ ধরে যায় সেখানেই ঢুকলাম কয়েকদিন পর। তাই মন্তব্যেও দেরি হয়ে গেল। বিষের জন্য ধন্যবাদ।

যদি ভাব কিনছ আমায় ভুল ভেবেছ...

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

"অসন্তোষের চেয়ে বড় শাপ আর নেই, পাওয়ার তৃষ্ণার চেয়ে বড় পাপ আর নেই।"

"যে নিজের সন্তুষ্টিতেই সন্তুষ্ট তার সন্তুষ্টির অভাব হয়না।"

বলেছেন, চীনা দার্শনিক লাও-ৎসু

লেখা ভাল হয়েছে। চলুক

জুন এর ছবি

কথাটার পজেটিভ নেগেটিভ দুটো দিক হয় প্রৌঢ়দা। আজকাল চোখে খালি নেগেটিভ গুলোই পড়ে। ধন্যবাদ পড়া এবং মন্তব্যর জন্য। উত্তরে দেরি হওয়ায় ক্ষমা প্রার্থী।

যদি ভাব কিনছ আমায় ভুল ভেবেছ...

তিথীডোর এর ছবি

চলুক

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

জুন এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

যদি ভাব কিনছ আমায় ভুল ভেবেছ...

তানিম এহসান এর ছবি

নিজেকে সরলভাবে দেখতে পারার সক্ষমতা আছে আপনার, এইটা কম কি জুন ভাই? লড়াই চলুক!

জুন এর ছবি

গানতো এই গলায় আসে না। বেসুরেই আজকাল মাঝে মাঝেই গেয়ে উঠি -'তোমার হ্লো শুরু, আমার হলো সারা।' আমার আর লড়াইয়ের মনটা নাইরে ভাই। হারিয়ে ফেলেছি। মন খারাপ সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

যদি ভাব কিনছ আমায় ভুল ভেবেছ...

কর্ণজয় এর ছবি

কবিতার মতন। অনেকক্ষণ নিজের মধ্যে রাখে।। নিজের মনে হয়।।।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।