ফ্রান্সে প্রত্নসম্পদ পাঠানো সংক্রান্ত লেখাটিকে শীর্ষ ব্লগ থেকে সরিয়ে দেয়ার প্রেক্ষিতে এই লেখাটি দিতে বাধ্য হলাম। প্রত্নতত্ত্ব ডিসিপ্লিনের সঙ্গে প্রায় দশ বছর ধরে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত থাকা সত্ত্বেও এই বিষয় নিয়ে ব্লগিং করতে পারিনি জীবিকা-সংক্রান্ত ব্যস্ততার কারণে। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে এমন ধোঁয়াশা এবং অস্পষ্ট ধারণা তৈরি হয়েছে যে একটু কিছু না বলাটা অপরাধ বলেই মনে হচ্ছে।
এক. সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় একটা চরম চাতুরিপূর্ণ প্রেস রিলিজ দিয়ে বিষয়টিকে আপাত ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেছে। লক্ষ্য করুন, প্রেস রিলিজে বলা হয়েছে, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের ১১৮ টি নিদর্শন ফ্রান্সে যাচ্ছে। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর নিয়ন্ত্রণ করে ঠিকই, কিন্তু বাংলাদেশের প্রচলিত প্রত্নসম্পদ আইন অনুসারে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পুরাকৃতি বিদেশে পাঠাবার কোনো এখতিয়ার আছে কি? আইন অনুসারে, না। পুরাকৃতি বিদেশে পাঠানো যাবে না, তা নয়। আইনে অধিদপ্তরের পরিচালককে এই বিষয়ে সর্বময় ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। এমনকি এটাও বলা হয়েছে, তার কাজ সম্পর্কে বাংলাদেশের কোনো আদালতে মামলা করা যাবে না। ১৯০৫ সালে যখন ভারতের গভর্নর-রা প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের পরিচালক হিসেবে থাকতেন, তখন এই আইন প্রবর্তন করা হয়। বাংলাদেশ সেই আইনের জের টানছে। কিন্তু আর যাই হোক সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পুরাকৃতি বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার কোনো আইনী অধিকার নেই।
দুই. সরকার বলছেন, ফ্রান্স সরকার পুরাকৃতিগুলোর নিরাপত্তা দেবেন। প্রশ্ন করছি, এটা কি সেই নিরাপত্তা যা কিনা চীন ভিয়েতনাম এবং তুরস্ককে গত তিরিশ বছর ধরে প্রদর্শনীর পুরাকৃতি ফেরৎ দেয়ার বিষয়ে টালবাহানা করছে। এটা কি সেই নিরাপত্তার পুনরাবৃত্তি হতে পারে না, যা তিরিশ বছর আগে প্যারিসে বাংলাদেশের পুরাকৃতি-প্রদর্শনীর পুরাকৃতি ফেরৎ চাইতেও বাঙালি অফিসারদেরকে ভয় দেখায়?
তিন. সরকার বলছেন, তাদের কর্মকর্তারা পুরাকৃতির সঙ্গে যাচ্ছেন। প্রশ্ন করছি, এরা কি সেই কর্মকর্তারাই নয়, যারা ব্রোঞ্জের খাসারপান মূর্তিটিকে বেমালুম গায়েব করে দিয়েছিলো? এরা কি সেই কর্মকর্তারাই নয়, যারা চক্ষু মেলিয়া দেশ দেখানোর নাম করে সারা দেশ থেকে পুরাকৃতি সংগ্রহ করে বিদেশে পাচার করে এমনকি জেল-ও খেটেছেন? এরা কি সেই কর্মকর্তারা নন, যাদের হেফাজতে থাকা বাংলাদেশের প্রত্নসম্পদ এখন স্মিথসোনিয়ান ইন্সটিটিউটের জাদুঘরের শোভা বাড়াচ্ছে অথচ তারা বলেছিলেন, মূর্তিটি কেমিক্যাল ট্রিটমেন্টের সময় ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে?
শুধু সরকারি প্রেস রিলিজে যে বিষয়গুলো এসেছে, সেই বিষয়গুলো নিয়েই একটু কথা বললাম। এর বাইরে রয়েছে, আরো অনেক না বলা কথা।
মন্তব্য
এই সরকার নিজেদেরকে বলে দেশে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করবে, দূর্নীতি দূর করবে তবে তাদের অধিনে অনিয়ম হয় কি ভাবে? মেজাজ খারাপ হয়।
পোস্টটা গুল্লি হইছে। এর বাইরে আরো যা যা আছে নামাও।
ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ
অজ্ঞাতবাস
বাকীটাও জানতে চাই
http://www.amadershomoy.com/news.php?id=216028&sys=3
আজকের "আমাদের সময়'ঃ একটি শিরোনামঃ
..." কোনও সদুত্তর দিতে পারেন নি উপদেষ্টা"
সন্দেহ অবিশ্বাসের দোলাচালে চলছিলাম। কাউকে বিশ্বাস করার ক্ষমতা অনেকটাই কমে গিয়েছে। দেখা যাক বাংলাদেশের ভাগ্যে কী ঘটে। আপনি কিছু প্রকাশ করার থাকলে করুন, কারণ এই সম্পদ দেশে ফেরত না আসলে তখন বলার চেয়ে এখন বলাই ভাল হবে।
নতুন মন্তব্য করুন