পদত্যাগ করেছেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা আইয়ুব কাদরী। কিছু কিছু ব্যর্থতার দায়দায়িত্ব নিয়ে পদত্যাগ করা এবং স্বেচ্ছায় শাস্তি মাথা পেতে নেয়ার সংস্কৃতিটা হয়তো ভালোই। কিন্তু হারিয়ে যাওয়া প্রত্নসম্পদগুলোর কি হবে?
২৩ তারিখের নিউজপেপারে দেখলাম, হারিয়েছে নবম শতাব্দীতে নির্মিত ২ টি কৃষ্ণ পাথরের বিষ্ণুমূর্তি, গতকালের কাগজে সেটা হয়ে গেছে ৫ম শতকের পোড়ামাটির বিষ্ণুমূর্তি। তার মানে কোন বাক্সে কী রাখা ৭হয়েছিলো তার ঠিকমতো ক্যাটালগ-ও কি হয়নি?
গিমে জাদুঘর বলছে, তারা মামলা করবে বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে। অভিযোগ চুক্তি ভঙ্গ। মূর্তি চুরির ব্যাপারটা সাজানো কিনা, এই আশঙ্কা যারা করছেন, তারা আরো উচ্চকণ্ঠ হওয়া ছাড়া তো উপায় দেখছি না।
এই বছর বাংলাদেশের প্রত্নতত্ত্বের ইতিহাসে কি কি ঘটলো তার মধ্য থেকে দশটি নিচে তুলে ধরলাম, মাত্র তিনটা খবর মন্দের মধ্যে ভালো। ভেবে দেখুন, কি করুণ হাল এই দেশের প্রত্নতত্ত্ব চর্চার।
১. প্রত্নসম্পদ সংরক্ষণ আইন উপেক্ষা করে ফ্রান্সে পুরাকীর্তি পাঠানো এবং মূল্যবান পুরাকীর্তি চুরি
২. উয়ারী-বটেশ্বরে প্রত্নতাত্ত্বিক খননে বাংলাদেশের প্রাচীনতম ইটের স্থাপনা আবিষ্কার
৩. সোনারগাঁওয়ের পানাম সিটির মূল নকশা নষ্ট করেই চলছে তথাকথিত সংরক্ষণ কাজ, ওয়ার্ল্ড মনুমেন্ট ফান্ডের বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ প্রত্নস্থানের তালিকায় জায়গা হয়েছে এটার। বিতর্ক রয়েছে বরিশাল, লালবাগ এবং মহাস্থান প্রকল্পের কাজ নিয়েও
৪. সরকারি প্রত্নতাত্ত্বিক খননে ১৭০০ বছরের পুরনো বৌদ্ধ বিহার এবং সীলমোহর আবিষ্কার
৫. মূল নকশা ভেঙ্গে নতুন করে তৈরি হলো বাংলাদেশের প্রাচীনতম নারিন্দার বিনত বিবির মসজিদ
৬. ফুলবাড়ি কয়লা খনি প্রকল্প থেকে এশিয়া এনার্জি পিছু হটায় এ যাত্রা রক্ষা পেল গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নস্থানগুলো
৭. নকশা পরিবতর্ন, আর্থিক দুর্নীতিসহ বিবিধ বিষয়ে আগের অনিয়মের তদন্ত শেষ না হতেই বাগেরহাট কমপ্লেক্স উন্নয়নে নতুন বাজেট এবং কাজ শুরু
৮. শাহজাদপুরের রবীন্দ্র কুঠিবাড়ি সহ প্রায় সব প্রাচীন স্থাপনাতেই সাদা রঙ করা হলো, কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রের প্রমাণ না থাকলেও সরকারি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের কর্তারা বলছেন, আগেই নাকি এগুলো সাদা ছিল
৯. আইন অনুসারে ঘোষিত সংরক্ষিত প্রত্নসম্পদ হওয়া সত্ত্বেও এমনকি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর বা প্রত্নতত্ত্ব বিভাগকে না জানিয়েই ধ্রুপদী স্থাপত্য নিদর্শনের কার্জন হল, এস এম হল, ফজলুল হক হলের মেরামত ও নির্মাণ কাজ নিজেরাই করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ
১০. ভয়াবহ সাইক্লোন সিডরে জানমাল ও বাড়িঘরের ক্ষতির পাশাপাশি বিধ্বস্ত হয়েছে প্রচুর প্রত্নস্থান ও প্রত্ননিদর্শন
১১. প্রতিবেদনেই আটকে আছে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্প, বিশেষ করে আদিবাসী প্রত্নসম্পদসমূহ (এথনিক সাইট, মনুমেন্ট এন্ড হেরিটেজ) সংরক্ষণের কোনো চেষ্টাই নেই।
কী বলবেন?
মন্তব্য
ক্ষমতাতো ছাড়তে হত, আজ না হোক ৮-১০ মাস পরই, তাই না ?
একটু আগে ক্ষমতা ছেড়ে টু পাইস কামানো গেলে মন্দ কি ?
-------------------------------------------------------
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
কয়েকটি ভয়াবহ তথ্য : ( সূত্র ব্যরিস্টার তানিয়া )
পুরো ব্যাপারটাই সম্ভবত সাজানো। আমরা সম্ভবত একটা সাজানো নাটক মুখ বুজে সহ্য করলাম।
আসলে কী বলবো? কয়েকটি খারাপ কথা মুখে আসতেছে। দুয়েকটা বলি- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে শিক্ষকরা ফ্রান্সে পুরাকীর্তি পাঠানোর বিরোধিতা করলেন, কার্জন হলের পুনর্নিমার্ণ কাজের সময় তারা কোথায় ছিলেন?
চারুকলা ইন্সটিটিউট থেকেই কেন বরাবর জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক নিযুক্ত করতে হবে? জাদুঘরবিজ্ঞান বিষয়টি তো সত্যিকার অর্থে চারুকলার চেয়ে প্রত্নতত্ত্ব ডিসিপ্লিনের সঙ্গে বেশি সংযুক্ত। বছরের পর বছর জাদুঘরবিজ্ঞান পড়ে এবং পড়িয়ে প্রত্নতত্ত্বের শিক্ষার্থী-শিক্ষকরা কি অপরাধ করলেন? দেশের প্রায় ৫০টি জাদুঘরের একটিতেও কোনো প্রত্নতাত্ত্বিক কেন কিউরেটর হিসেবে নেই?
গিমে জাদুঘরে পুরাকীর্তি পাঠানোর বিরোধিতাকারী বুদ্ধিজীবীদের কে কে সোনারগাঁওয়ের পানাম "ধ্বংস" প্রকল্পে ছিলেন, তাদের নামগুলো তো এদেশের সব প্রত্নতাত্ত্বিকই জানেন।
এশিয়া এনার্জির কনসালটেন্সি করেছেন বাংলাদেশের কোন কোন প্রত্নতাত্ত্বিক? গিমে বিষয়ে তারাও তো উচ্চকণ্ঠ দেখি!
এর আগে যখন ব্রোঞ্জের খাসারপান চুরি হয়, সেটির নিষ্পত্তি হয়েছে খুবই দুঃখজনকভাবে। আর তার সঙ্গে কারা ছিলেন?
আর কতো বলবো? আসলে বাংলাদেশের প্রত্নতত্ত্বের বেহাল অবস্থা। এই দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতি নিয়ে কারো তেমন একটা মাথাব্যথা নেই। আমরা দু'চার পাতা ইতিহাস-প্রত্নতত্ত্ব পড়েছিলাম বলে, গা বাঁচাতে দু'এক কথা না বলে পারি না। নাহলে, পেট বাঁচাতে যে কাজ করি, তার সাথে সত্যিকারের সংস্কৃতি চর্চার কোনোই সম্পর্ক নেই।
চোখের সামনে পুড়ছে যখন মনসুন্দর গ্রাম...
আমি যাই নাইরে, আমি যেতে পারি না, আমি যাই না...
চোখের সামনে পুড়ছে যখন মনসুন্দর গ্রাম...
আমি যাই নাইরে, আমি যেতে পারি না, আমি যাই না...
সম্পূর্ণ সহমত।
এই পদত্যাগের মাধ্যমে আরেকটি বিষয় পরিস্কার হলো: পাঠানো প্রত্নতত্তগুলো আর ফেরত আসবেনা। তখন যাতে ইনাকে না দোষ দেয়া যায় সেজন্যই সম্ভবত এই আরলি-পদত্যাগ।
চুরি যাওয়া বিষ্ণুমুর্তির বীমার অংক দেখে বাকহীন হলাম ।
আমার মতো গরীব ও জেদ করলে ২০ হাজার ইউরো যোগাড় করতে পারে ।
---------------------------------------
সঙ্গ প্রিয় করি,সংঘে অবিশ্বাস
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
নতুন মন্তব্য করুন