লিখেছেন যূথচারী (তারিখ: সোম, ১১/০৬/২০০৭ - ১২:৩৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:
মানুষের মননের মনীষার মঞ্জুষার মুক্তির মানে মানবের মহাজীবনের মুক্তি। এই মুক্তচেতনা যতই আধ্যাত্মিক মনে হোক না কেন, মানুষ তার বস্তুগত প্রয়োজন মেটাতেই বার বার এই মহাজীবনের দিকে ফিরে এসেছে। অনিশ্চয়তার আশঙ্কা এবং অপ্রাপ্তির সম্ভাবনা মানুষকে যে অনাকাঙ্খিত বিপদের দিকে ঠেলে দেয়, সেই অভিজ্ঞতা অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে সুন্দর ভবিষ্যৎ নির্মাণের জন্য মানুষকে বার বার তাগাদা দেয়।
ব্যক্তিমানুষের সুন্দর জীবনযাপনের জন্যই দরকার ব্যক্তিমানুষসমূহের মধ্যকার সৌন্দর্য সম্প্রসারণ, পারস্পরিক সৌন্দর্য অনুসন্ধান এবং তার বিকাশের জন্য সমপ্রেরণা ও সহচারণ।
জানি, দিন বদলের স্বপ্ন দেখা আজকের দিনে শিশুতোষ বলে মনে হবে- কিন্তু তবু 'দিন বদলের স্বপ্ন আমার আজও গ্যালো না'। কারণ এই স্বপ্ন আমার আচরণে এবং চিন্তায় ক্রমাগত বিস্তৃত হয়। বৈষয়িক জীবনের কিছু স্বপ্নক্ষয়ী চর্চার পরেও ব্যক্তিমানুষের সাথে আমার মিথষ্ক্রিয়া থাকে স্বপ্নানুগ। সমাজবাদের স্বপ্ন তাই আজো দেখে যাই।
অপ্রাপ্তির আশঙ্কা মানুষকে যতোটা আলোড়িত করে, অকস্মাৎ বৃষ্টি কিংবা দীর্ঘকালের অনাবৃষ্টি ভেবে কিষাণের চোখ ছাড়া আর কেইবা অতটা প্রকাশ করতে পারে? বাজেটে যতোই কৃষিখাতে ভর্তুকি বাড়ানো হোক না কেন, ২ কোটি মানুষের যেখানে গড় কনজ্যুমিং বাজেট মাসে পাঁচশো টাকারও কম, সেখানে এই ভর্তুকির কীইবা অর্থ থাকতে পারে? কৃষক পরিবারের সন্তান হিসেবে জানি, আমার বাবা প্রতি বছর জমিতে লোকসান দিচ্ছেন। প্রতিবছর যতো টাকা খরচ করা হয় জমির পেছনে,কোনো বছরই উৎপাদিত ফসল সেই পরিমাণ টাকা ফেরৎ দেয় না। প্রতিবছর বলি, জমি চাষের আর দরকার নেই, জমিতে অন্য কিছু করি- প্রতিবছরই তিনি আমার যুক্তি মেনে নেন এবং আবার বীজ বোনেন।
আমরা যারা শহরে থাকি, আমরা যখন খাই তখন আমরা ভাবি না যারা আমাদের খাদ্য উৎপাদন করেছে তারা খেতে পারছে কিনা। মওলানা ভাসানী বলেছিলেন, "কৃষক ভাইয়েরা, শহরে খাদ্য পাঠানো বন্ধ করে দিন, ওরা টাকা পয়সা আর বইপত্র খেয়ে থাক।" আমরা বইপত্র আর টাকাপয়সা নিয়েই আছি এবং দিব্বি সুখে খাচ্ছি-দাচ্ছিও।
আমরা যারা পুরুষ, আমরা ভাবি না আমাদের মা-বোনদের কথা, পরিবারে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখার পরেও পরিবারে যারা সবচেয়ে বেশি নিগৃহীত হয়। চিন্তায় এবং সত্তায় নারীর যে অবস্থান তা খুব কমই আমরা অনুভব করতে পারি। বিশেষ করে, নারী নিপীড়নের যে ঘটনা আমাদের চারপাশে ঘটে চলেছে অহরহ, আমরা সেখানে কোনো যুক্তিসঙ্গত অবস্থান নেই না।
না, কেবল কৃষক কিংবা নারী নয়- কোনো প্রশ্নেই আমরা কোনো অবস্থান গ্রহণ করি না। আমাদের পছন্দ নির্দলীয় নিরপেক্ষ এবং ভারপ্রাপ্ত। সেই রুশ প্রবাদটা আবার মনে করছি,
বন্ধু নয় ততোটা ভযঙ্কর, কেননা সে করে বিশ্বাসঘাতকতা বড়জোর
শত্রু নয় ভয়ঙ্কর ততোটা, বড়জোর তোমায় সে করবে হত্যা!
ভয়ঙ্কর সবচেয়ে- যে নির্লিপ্ত
কারণ
যুগে যুগে এরা ছিল বলেই, বিশ্বাসঘাতকতা এবং হত্যার ঘটনা ঘটেছে!
এবং আমরা বেশিরভাগই আসলে নির্লিপ্ত। কারণটাও খুব জানা। আমাদের আয়তনগুলো সবই তো খুবই মাপা। ফলে তা স্থির এবং অচল। আমাদের পরিবার, শিক্ষাকেন্দ্র এবং সমাজ আমাদেরকে মাপে মাপে খাঁপের মধ্যে রাখতে পছন্দ করে। আর আমরা সেই খোপের মধ্যে পোষা সাপের মতো বাস করি- খেলা দেখাই, বাহ্বা পাই। কিন্তু বন বিনাশ করে গড়া নগরেও সাপে কাটে মানুষকে, শেয়াল ডেকে ওঠে মধ্যরাতে আচমকা- কোত্থেকে? এই নগরীতেই নিরবে, মুখ বন্ধ রেখে লুকিয়ে আছে এই শ্বাপদেরা। চলে যায়নি একেবারে, যেতে পারেনি; নিঃশেষিত হয়নি এখনও। যাবেও না। বরং আগামী কোনো এক ফাগুনে তারা কয়েকগুণ হয়ে আমাদের বড় রাস্তা ধরেই মিছিল করবে।
*অতিরিক্ত- ব্লগিং চেতনা বদলের কোনো জায়গা নয়, সমাজ বদলেরও নয়। তবু আমরা আসি, কথা বলি, কথা শুনি। ব্লগে নীতি থাকবে, নিয়ম থাকবে, নিয়ম ভঙ্গের জন্য কিছু ব্যবস্থাও থাকবে- জানি। আমরা যারা লিখতে চাই, লিখে যাই, এখানে-ওখানে লিখবো, আড্ডাবাজি করবো। সব আয়তনই সচল থাকেই শুরুতে, একসময় অচল হয়েই যায়। তবু লিখে যাচ্ছি, আড্ডা দিচ্ছি- চালিয়েই যাবো। কারণ আগামী দিনটিকে কতোটা ভালো করে রেখে যেতে পারবো, তা নয়- আজকের দিনটিকে কতো ভালোভাবে যাপন করতে পারি, সেটাই গুরুতর হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আমি ঢাকার যে প্রান্তে বড় হয়েছি, সেটা হলো কমলাপুর। কমলাপুর কবরস্থানের পাশেই আমার বাস ছিল- ওখানে আমি রোজ রাতে শেয়ালের ডাক শুনতাম। এখনও হয়তো শোনা যায়, আমি অন্য এলাকায় চলে গেছি। সারাদিন এই শেয়ালদের দেখা যেতো না। কোথায় যে লুকিয়ে থাকতো- কে জানে? শেয়াল এমন একটা প্রাণী যে না ডেকে থাকতে পারে না। শেয়াল আছে এমন জঙ্গলের ধারে যদি আপনি কখনও থেকে থাকেন, তবে আপনি জানেন যে প্রায় ৩-৪ ঘণ্টা পরপর শেয়াল ডেকে ওঠে সমস্বরে। প্রহর গোণে অনেকে এভাবে। কিন্তু ঢাকার শেয়ালেরা সারাদিন মুখে কুলুপ এঁটে সংগোপনে অপেক্ষা করে। রাত হয়, আর তারা শুরু করে সমগীত।
হয়তো, সময় এমন আসে, আসবে, যখন কিছুটা সময় অপেক্ষা করতেই হবে। কিন্তু তাই বলে আমি চলে যাই না। কারণ আসলে যেতে পারি না। অনেক মানুষ অনেক মানস আমাকে যেতে দেয় না। আর আমিও পারি না যেতে, কারণ এই পথ আমার আরাধ্য এবং গন্তব্যের পথ।
** শিরোনামটি নেয়া হয়েছে কফিল আহমেদের গান থেকে।
মন্তব্য
চোখের সামনে পুড়ছে যখন মনসুন্দর গ্রাম...
আমি যাই নাইরে, আমি যেতে পারি না, আমি যাই না...
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
স্বপ্নের মতোন মিলেছি সংশয়ে...সংশয় কাটলেই যেনো মৃত্যু আলিঙ্গন...
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
অজ্ঞাতবাস
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
খুবই ভাল লাগলো পড়ে। প্রথম পাতায় ছিল না, তার উপর আমি এসেছিই এটা ছাপার পরে। সেজন্যই দেরি করে পড়া। আরো পড়বার অপেক্ষায় থাকলাম। আপাতত আপনার অন্য লেখাগুলো সারি।
অনেএএএএএক দেরীতে পড়লাম। কিন্তু ভালো লাগাতে দেরী নেই একটুও। অনেক ভাল লেগেছে এই লেখাটা।
নতুন মন্তব্য করুন