রঙপুকুরের নাম কেন রঙপুকুর হলো, সেই প্রশ্নের জবাব গত ১০ বছরে আমি পাইনি। তবে এই পুকুরের ঘাট রবীন্দ্রনাথের কাছে গিয়ে যদি “ঘাটের কথা” বলতো, তবে ঘাটের কথা গল্প না হয়ে নির্ঘাত ৭৭২ খণ্ডের উপন্যাস হতো! এই পুকুরের পাড়েই ইউনিভার্সিটির ছাত্র সংসদ ভবন, মেডিক্যাল সেন্টার, পরিবহন অফিস এবং ফজিলাতুন্নেসা হলের অংশবিশেষ। শিক্ষার্থীদের আড্ডার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা সুপারিতলা, এই পুকুরের পাড়েই। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রেমাপ্রেম সম্যক সম্মোহে আর কোন্ জায়গা এতো বেশি প্রভাব বিস্তার করতে পেরেছে?
এই পুকুরের পাড়েই জাকসু ভবন। প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকেই সেটি তালাবদ্ধ হয়ে পড়ে আছে। কেবল বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ছাত্র গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে এখানকার একটি ঘর খুলে তাকে রাখা হয়*। আর একটি ঘর, যেটি জাকসুর মূল সভাকক্ষ- কোনো গুরুত্বপূর্ণ সভাটভা হলে ওটাকে খুলে দেয়া হয়। দু'তিন বছর পর পর এমন সভা হয়ে থাকে।
নূরুল কুদ্দুসের আহ্বানে শঙ্কু-শমী বিষয়ক রুদ্ধদ্বার সভার জন্য এই জায়গাকে বেছে নেয়া হলো। দুই-তিন বছরের আবর্জনা পরিষ্কার করার জন্য ওই ঘর পরিষ্কার না করে আমাদেরকে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়কে একদিন ঝাড়ু দেয়ার দায়িত্ব দিলেও মনে হয় এর চেয়ে কম খাটুনি যেতো। দেড় দিনের পরিচ্ছন্নতা অভিযান শেষ হলে এলেন কমরেড কুদ্দুস। ডেইরি ফার্মে রাজ্জাকের দোকানে অর্ডার দেওয়া হলো খাবারের জন্য। নিয়মিত খাবারের চেয়ে একটু বেশি উন্নত বলা যায় সেটাকে। নারী কমরেডরা কয়েকদিন ধরে আচার-টাচার কি কি সব তৈরি করে রেখেছেন, সেগুলোর গন্ধও পেলাম।
আলোচনা শুরু হলো। মানুষের মানবিক সম্পর্কের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে এবং কমরেডদের পারষ্পরিক সম্পর্ক নিয়ে শিবদাসঘোষীয় আলোচনা শুনতে শুনতে ঘুম এসে যাচ্ছিলো। বিশেষ করে আমি ঘটনার মাথামুণ্ডু কিছুই জানি না। রুদ্ধদ্বার বৈঠকে অংশগ্রহণের যে বিশেষ ব্যাজ লাগে তা-ও আমার ছিল না। কেবল ঝাড়া-মোছার কাজে ব্যাপক অংশগ্রহণের কারণেই বোধহয় ঐ বৈঠকে আমি অংশ নেবার সুযোগ পেয়েছিলাম। তা না হলে বিকেলে মূল আলোচনা শুরুর আগেই এমন একটা আবেগ-বিধ্বংসী ঘটনা ঘটতো না।
সায়েম সৌগত দিলখোলা একজন মানুষ। যখন যেটা বোঝেন সেটা করতে বা ঐ বিষয়ে নিঃসঙ্কোচে কথা বলতে তার বাধে না। মেধাবী এবং সরল- এই দুয়ের অদ্ভুত সমন্বয় তার মাঝে জায়গা নিয়েছে। শঙ্কুর স্কুল-কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠী, একই ধরনের চর্চার সাথে শৈশব থেকেই থাকার কারণে শঙ্কু এবং সৌগত-কে আমরা হরিহর আত্মা বলেই মনে করতাম। শঙ্কু-শমীকে খুব সহজেই শঙ্কু-শমী-সৌগত বলা যেতো। কিন্তু তা হলো না।
সৌগত এমন একটি ঘটকালি টাইপ অনুষ্ঠানের জন্য বেশ উৎসাহী ছিলেন। তার ধারণা ছিল, কমরেড কুদ্দুস শঙ্কু এবং শমীকে হাত ধরে বলবেন- "তোমার হাতে ওকে সপে দিলাম"।- এমন একটা আমেজ নিয়ে রীতিমতো সেজেগুজে রঙপুকুরের সামনে এসে হাজির হলেন সৌগত।
পুকুরের ঘাটে আমরা যখন আড্ডা দিচ্ছি, সৌগত-ও আমাদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলেন। কেন্দ্রীয় কমরেড নূরুল কুদ্দুস ক্যাম্পাসের কমরেড ন্যান্সিকে বললেন, ডাকো সবাইকে। ন্যান্সির আহ্বানে আমরা সবাই একে একে ঢুকে যেতে থাকলাম প্রাগৈতিহাসিক অন্ধকারে ঠাসা ভবনের কিছুটা পরিচ্ছন্ন ঘরের ভেতরে।
"তুমি না"
সৌগতকে আটকে দিলেন ন্যান্সি। কেন সে নয়? শঙ্কু-শমী বিষয়টি তো তার চেয়ে ভালো আর কেউ জানে না! তো সৌগত নয় কেন?
"কারণ সৌগত-র রুদ্ধদ্বার ব্যাজ নেই।"
সকলেই কমরেড কুদ্দুসের দিকে তাকালেন, কারণ একমাত্র তিনিই বিশেষ ক্ষমতাবলে সৌগতে ঢোকার অনুমতি দিতে পারেন। কুদ্দুস ভ্রূ কুঞ্চিত করলেন, ন্যান্সি দুঃখপ্রকাশ করলেন সৌগতের কাছে।
সৌগতের জন্য এই অনধিকার শাপে বর হয়ে এলো। সকাল থেকে আরো একজন অনাহূত ছিল আমাদের মাঝে। শিস নামে ফার্স্ট ইয়ারের ওই মেয়েটি বসে থাকতো রঙপুকুরের ঘাটে। সভাবিরতির আড্ডাবাজিতে সে আমাদের সঙ্গে মেতে উঠতো। আর আমরা যারা ধূম্রসেবী, তারা বেরিয়ে এলে একটু ওর সাথে খুনসুটি করে যেতাম।
বিকেলের মূল সভা শুরু হলে, সবাই যখন রুদ্ধদ্বার, সৌগত তখন শিসের জন্য তার দ্বার খুলে দিলো। রঙপুকুরের ঘাটে তাদের এই স্বেচ্ছা-নিঃসঙ্গতা কয়েক বছর চললো।
* মাহবুব মোর্শেদ একবার অসুস্থ হয়ে ওখানে মাসকাল ছিল, ওকে ধরলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নৈশবিহারের কিছু গোপন খবর জানা যাবে।
মন্তব্য
মাহবুর মোর্শেদরে আনা হোক এখানে ।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
bhalo... kintu.. ache
কী জানেন? বলেন তাড়াতাড়ি... নইলে কিন্তু!
______________________________________________
চোখের সামনে পুড়ছে যখন মনসুন্দর গ্রাম...
আমি যাই নাইরে, আমি যেতে পারি না, আমি যাই না...
চোখের সামনে পুড়ছে যখন মনসুন্দর গ্রাম...
আমি যাই নাইরে, আমি যেতে পারি না, আমি যাই না...
কমেন্ট বদলে ফেললেন কেন? আমার কমেন্ট-টা এতিম হয়ে গ্যালো!
______________________________________________
চোখের সামনে পুড়ছে যখন মনসুন্দর গ্রাম...
আমি যাই নাইরে, আমি যেতে পারি না, আমি যাই না...
চোখের সামনে পুড়ছে যখন মনসুন্দর গ্রাম...
আমি যাই নাইরে, আমি যেতে পারি না, আমি যাই না...
edit korchi.. komuna.. bolte pari.. kintu kane kane... ektu agei nk(orofe NI)'r shathe dekha hoichilo..cholti pothe
এইখানেই বইলা ফালান, দরকার হইলে পোস্টের ওপরে বড়ো করে
A লিখে দিয়েন।
______________________________________________
চোখের সামনে পুড়ছে যখন মনসুন্দর গ্রাম...
আমি যাই নাইরে, আমি যেতে পারি না, আমি যাই না...
চোখের সামনে পুড়ছে যখন মনসুন্দর গ্রাম...
আমি যাই নাইরে, আমি যেতে পারি না, আমি যাই না...
ন্যান্সী..হাহাহাহাহাহাহাহাহহা
.......................................
ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ
অজ্ঞাতবাস
এখানেই শেষ নয়, সামনে আরো হাসির খোরাক আসছে...
সিরিয়াস বিষয়গুলোকে কিভাবে হাস্যকর করে তুলেছে এই গোপাল ভাড়েরা...
এবং হাস্যকর বিষয়গুলোকে কিভাবে সিরিয়াস করে তুলেছে এই আইনস্টাইনেরা...
অচিরেই তার টিকিটির দেখা পাবেন।
______________________________________________
চোখের সামনে পুড়ছে যখন মনসুন্দর গ্রাম...
আমি যাই নাইরে, আমি যেতে পারি না, আমি যাই না...
চোখের সামনে পুড়ছে যখন মনসুন্দর গ্রাম...
আমি যাই নাইরে, আমি যেতে পারি না, আমি যাই না...
পড়ছি, জানিয়ে গেলাম।
-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!
আরে শঙ্কুর কাহিনি থামলো ক্যান?
গড়ি দালানকোঠা ফেলে দিয়ে শ্মশাণে বৈঠকখানা
নতুন মন্তব্য করুন