আজ ১৭ ই এপ্রিল

কালবেলা এর ছবি
লিখেছেন কালবেলা [অতিথি] (তারিখ: বিষ্যুদ, ২৫/১২/২০০৮ - ৫:৩৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

অবশেষে ঘটা করে বিয়ে হয়েগিয়েছিল তিথির। ১৭ই এপ্রিল। আজ এতোটা বছর পরও তারিখটা খুব অবহেলাতেই মনে আছে। এত ভালোবাসত মেয়েটা, তবুও ফিরিয়ে দিয়েছিল শুভ্র। খুব নিষ্ঠুর ভাবে। কিই বা করার ছিল। নিষ্ঠুরতা ছাড়া যে ভাঙ্গা যাচ্ছিল না। খারাপ কিছু না ঘটা পর্যন্ত- সম্পর্ক চলতেই থাকে, চলতেই থাকে। তাই অন্য আর একজনকে ভালোবাসার মিথ্যে অথচ বাস্তব অভিনয়টা করতেই হয়েছিল শুভ্রর। সেখানেও জন্ম নিয়েছে আরেক ভুল। যা ছিল একজনের জন্য অভিনয়, তাইই হয়ত ছিল অন্যজনের জন্যে প্রথম প্রেম। মদ, ফেন্সিডিল, গাঁজা এসব করে যে তিথির মন ভাঙ্গা সম্ভব ছিল না। একমাত্র নারীদোষটাই বাকি ছিল। সেটা কাজেও দিয়েছে জায়গামত। শুভ্রকে ঘৃণা করতে তিথির এক মুহুর্ত লাগেনি। কষ্ট কি পেয়েছিল? সে প্রশ্ন অবান্তর। কল্পনাতীত সে কষ্ট। যে মানুষটাকে ভালোবাসা হল, একদিন আসবে বলেও সে যদি সেদিনই আর একটা মেয়ের কাছে যায়, তার থেকে কষ্টের, অপমানের, ক্ষোভের আর কি হতে পারে? এতোটা নীচ শুভ্রকে ভাবেনি তিথি। মনে মনে বিশ্বাস করত, শুভ্র মুখে যতই না না বলুক, মনে মনে একটু হলেও হয়ত ভালোবাসে। কিন্তু না, সে ভুল ভাংল তিথির। একদিক দিয়ে ভালোই হয়েছিল। পরিণতিহীন, ঝুলন্ত একটা সম্পর্কের ইতি টানতে, একটা শক্ত কারণ তার সামনে হাজির হয়েছিল। তিথি যেদিনই জেনেছিল সেই মেয়ের কথা, সেদিন থেকেই চ্যাপ্টার ক্লোজ । আস্তে আস্তে তিথির মন থেকে হারিয়ে যেতে লাগল শুভ্র নামের অবিমৃষ্যকারী ছেলেটি।
তিথির জীবনে নতুন গোলাপ হাতে এসেছিল ফয়সল। এক সমুদ্র ভালোবাসা জন্মেছিল ফয়সালের বুকে, সবটাই তিথির জন্যে। তিথির জীবনে এলো নতুন প্রেম। এবারে চখা-চখি মিলে গেছিলো। দে মেড ফর ইচ আদার। সুগভীর প্রেম হল। ১৭ই এপ্রিল বিয়ে হয়ে গেল। বিয়ের পর একবার মাত্র কথা হয়েছিল শুভ্রর সাথে। সেদিন অনেক কথার দেনা-পাওনা মিটিয়েছিল দুজনে। সেসবের মাঝে আজো তিথির যে কথাটা শুভ্রর কানে বাজে- “ আমি জানিনা এভাবে বালাটা ঠিক হচ্ছে কি না। এভাবে বলে আমি ফয়সালকে ছোট করছি কিনা। আমি ফয়সলকে অসম্ভব ভালোবাসি, সেও আমাকে বাসে। অথচ, এখনো মনে হয়-আমি তোমাকে ভালোবাসি। এরকম কেন হচ্ছে বলতে পারো?” শুনে, শুভ্র কিছু বলতে পারেনি। তিথির চরিত্র নিয়ে কথা বলার মত কোন মায়ের সন্তানের আজ অবধি জন্ম হয়নি। সুতরাং এই কথার অন্য কোন মিনিং ধরার কোন অবকাশ নেই।
এরপর আর কোন কথা হয়নি দুজনের। শুভ্র চলে গিয়েছিল আস্ট্রেলিয়া। মাঝে আট’টা বছর পেরিয়ে গেছে। আজ সেই ১৭ই এপ্রিল। আজ নিশ্চই তিথি স্বামী সন্তানের সাথে বাইরে কোথাও ঘুরতে যাবে । রাতে খাবে কোন ভালো রেস্টুরেন্টে । শুভ্র আর পাঁচটা দিন পরে দেশে যাবে। এখনো বিয়ে করা হয়নি। আট বছর আগে যখন অস্ট্রেলিয়া এসেছিল, তখন সবার কাছ থেকে পালিয়ে আসেনি, কিন্তু আসার পর যেন পলাতক হল। যাকে বলে যোগাযোগ রেখে পালিয়ে থাকা। এবার দেশে নাকি সবাই রশি নিয়ে বসে আছে। বিয়ে দিয়েই ছাড়া হবে তাকে। এতদিনে শুভ্রও বিয়ের জন্যে বেশ খানিকটা উতসুক। পুরোদমে প্রস্তুতিও আছে। অস্ট্রেলিয়ায় বসে বসে আজ ১৭ এপ্রিল তারিখটা নিয়ে কিছুক্ষন আনমনে কেটে গেল শুভ্রর। ফয়সল কি সত্যিই তিথিকে ভালোবেসেছিল? কিংবা তিথি ফয়সলকে? শেষ পরিণতি ঠিকঠাক ছিল তো?....................................
দেশের চেহারা যেন অনেক পাল্টে গেছে। দেশে আসার পর কেমন অচেনা অচেনা লাগছে শুভ্রর সবকিছু। লাগতেই পারে। আটটা বছর, কমতো নয়! কেন জানি দেশে নামার পর থেকেই জানতে ইচ্ছে করছে তিথি কোথায় থাকে? ওর ছেলে হয়েছে না মেয়ে? ক’টা? কোথায় থাকে? কেমন আছে? শ্যামলা মেয়েটার প্রতি কদিন বাদেই আগ্রহ হারিয়ে ফেলেনি তো ফয়সল? কি হালে আছে তিথি?
পরদিন বিকেলে নিউ-মার্কেটের পুরনো আড্ডায় আমিনের কাছ থেকে যা শুনল তাতে মনে হল কেউ যেন বিষ মাখা ফলা দিয়ে খচ খচ করে খুচিয়ে চলেছে বুকটা। ডিভোর্স হয়েছে তিথির। ছেলেকে নিয়ে মীরপুরে থাকে, গ্রামীণের কাপড়ের একটা শোরুমে চাকরী করে। চোখের পানি লুকোতে আড্ডা ছেড়ে চলে এলো শুভ্র। রিক্সায় বসে এলোমেলো ভাবছিল অনেক কিছু-এম্বেসিতে যেতে হবে-আলাদা করে রাখতে অবে তিনটা টিকেটের টাকা, আর, আমীনকে ফোন করে জানতে চাইল -তিথির বাড়ির ঠিকানা ।


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

হুমম......... গল্পটা গল্প হয়েই থাক।

( জয়িতা )

কালবেলা এর ছবি

জয়িতা,
ঠিকই বলেছেন। গল্পটা যেন গল্প ছেড়ে সত্যিকার হয়ে না ওঠে কোথাও......

স্নিগ্ধা এর ছবি

১৭ই এপ্রিল আমার জীবনেও একটা বিশেষ তারিখ - গল্পটা নিয়ে তাই মন্তব্য করতে পারলাম না .........

কালবেলা এর ছবি

আরি বাহ্‌ , তাই নাকি? সেকারনেই বোধয় ঢুঁ দিতে এসেছিলেন? হা...হা...

অনিন্দিতা চৌধুরী এর ছবি

শরৎচন্দ্রের একটা গল্পে সম্ভবত একটা কথা ছিল এরকম- মুখ থেকে বার হয়েছে বলে কোন কথা সব সময় সত্যি হয়ে যায় না।
সম্পর্ক ভাঙ্গার জন্য যেকোন নিষ্ঠুরতা হযতো করা হয় এরকম কোন মিথ্যাকে সত্য বলে প্রতিষ্ঠিত করতে। এতে কি লাভ দু পক্ষের কষ্ট পাওয়া ছাড়া?
লেখাটা কেমন ঝিম ধরিয়ে দিল।

কালবেলা এর ছবি

এতে কি লাভ দু পক্ষের কষ্ট পাওয়া ছাড়া?

পৃথিবীর যেকোন লাভ ক্ষতি, তাৎক্ষনিক বিচারেই আসলে বিচার্য্য। ঐ সময় ঐ মিথ্যাটুকু বলা বা করা খুব জরুরী মনে হয়। দূর ভবিষ্যতে তা ভালো হবে না খারাপ হবে সেটা আর তেমন মাথা ঘামিয়ে দেয় না।

লেখায় ধক আছে দেখা যায়!!

দ্রোহী এর ছবি

হুম ১৭ই এপ্রিল আমি বউ তুলে এনেছিলাম। দেঁতো হাসি


কী ব্লগার? ডরাইলা?

কালবেলা এর ছবি

দ্রোহী,
তারিখটা বিশেষ ভালো চ্যুজ করেছিলেন। ভাবিকে বিবাহোত্তর শুভেচ্ছা মোবারক রইল।

তুলিরেখা [অতিথি] এর ছবি

সবাই এপ্রিলের সতেরো তে ফেঁসেছে দেখি! দেঁতো হাসি
তারিখটার মধ্যেই কিছু আছে!

স্নিগ্ধা এর ছবি

উহু, তুলিরেখা - আমারটা কিন্তু নিখাদ আনন্দের ঘটনা নয়, বরং জটিল একটা বিষণ্ণতা+বিস্ময়+ফিরে তাকানো+ ..... হাসি

কালবেলা এর ছবি

কখনো ইচ্ছে হলে জানিয়ে দিয়েন......

কালবেলা এর ছবি

হাসি

লাল কমল [অতিথি] এর ছবি

শুভ্রকে দ্বিতীয়া "তিথি"র শুভেচ্ছা!!!!!!!!!!!!!!!

কালবেলা এর ছবি

কথা হল, তিথি দ্বিতীয়া হয়ে আসবে তো শুভ্র'র জীবনে?!! ওর সম্মানবোধটা একটু কড়া রকমের বেশি।

স্বপ্নাহত এর ছবি

অনেক কিছু বলার ছিল।

কিন্তু কোন কিছু না বলেই চলে গেলাম।

তিথি ভাল থাকুক। ভাল থাকুক শুভ্র। কিংবা শুভ্রর মত বাকি সবাই।

---------------------------------

বিষণ্ণতা, তোমার হাতটা একটু ধরি?

---------------------------------

বাঁইচ্যা আছি

কালবেলা এর ছবি

ও হ্‌ হো...স্বপ্নাহত! আমি সত্যিই দুঃখিত। নামটা এভাবে মিলে যাবে ভাবিনি। তোমার দীর্ঘনিঃশ্বাস ছুঁয়ে গেল।

অনিন্দিতা চৌধুরী এর ছবি

পৃথিবীর যেকোন লাভ ক্ষতি, তাৎক্ষনিক বিচারেই আসলে বিচার্য্য। ঐ সময় ঐ মিথ্যাটুকু বলা বা করা খুব জরুরী মনে হয়। দূর ভবিষ্যতে তা ভালো হবে না খারাপ হবে সেটা আর তেমন মাথা ঘামিয়ে দেয় না।


কে জানে, দূর ভবিষ্যতের ভাল মন্দ বিচার করা হয় না বলেই হয় তো অনেক সময় ক্ষতিটা চিরস্থায়ী হয়ে যায়।

কালবেলা এর ছবি

অনিন্দিতা,
আমি দেখেছি মাঝে মাঝে ক্ষতি হয়ে যাওয়ার আশংকাটা/প্রবণতাটা/সম্ভবানাটাও কেমন যেন গতি জড়তা পেয়ে বসে। কোন মতেই যেন থামানো যায় না। সিকুয়েন্সিয়ালি আসতে /ঘটতে থাকে...হতেই থাকে। একটা নেশার মতন...ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে জেনেও কখনো কখনো ক্ষতি করে যাওয়াটাই তখন নেশা হয়ে চাপে। যেন ঘটনার পরবর্তী সিনে ক্ষতিটা কে হতেই দিতে হবে।
অতঃপর ক্ষতিটার জন্য আহাজারি।(এটাও পরবর্তী সিকোয়েন্সিয়াল ইভেন্ট)
আজব লাগে।

দিগন্ত এর ছবি

আমার জন্মদিনকে শিরোনামে পেয়ে আমি খুশী হাসি লেখককে ধন্যবাদ।


হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

কালবেলা এর ছবি

হা...হা...কারো পৌষমাস কারো বা সর্বনাশ। ধন্যবাদ আপনাকেও দিগন্ত, শিরোনাম পড়ার জন্য।

তুলিরেখা [অতিথি] এর ছবি

ধরাধামে সেদিন আমার ৬ নম্বর দিন! হাসি
প্রমাণ হলো আমি দিগন্তের থেকে ৫ দিনের বড়। দেঁতো হাসি

অবাঞ্ছিত এর ছবি

শেষটা বুঝলাম না... ভালবাসা .. নাকি করূণা?

I think , therefore i am - Descartes

__________________________
ঈশ্বর সরে দাঁড়াও।
উপাসনার অতিক্রান্ত লগ্নে
তোমার লাল স্বর্গের মেঘেরা
আজ শুকনো নীল...

কালবেলা এর ছবি

হতে পারে নিজের গাধামির মাশুল, যা হয়তো গত ৮টা বছর ধরে কুরে কুরে খেয়েছে, কিংবা আত্নোপলব্ধি, হতে পারে ভালোবাসাই, হতে পারে একটা গুমরে ওঠা কান্না, কোথাও খানিকটা অপরাধবোধও কাজ করেতে পারে.........তবে করুণা কোনমতেই নয় বোধয়।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।