কবুতরের খুপড়ি রঙ করে লাভ নাই
বহুদিন পড় লম্বা সময় নিয়ে বাড়ি এলাম। প্রায় দু সপ্তাহ্। বাবা রিটায়ার করেছেন। কয়েক বছর আগে থেকেই নার্সারি করে ফেলেছেন বাড়ির অংশটুকু বাদে পড়ে থাকা জমিতে। সেই সুবাদে অনেক গাছপালা কবলিত আমাদের বাড়িটার চারপাশে অনেক সবুজ, অনেক অক্সিজেন, অনেক বিশুদ্ধতা। তার ওপর বাড়ির সামনের অংশটা নার্সারীর ফুলের আইটেমের জন্য বরাদ্দ থাকায় সামনটা বেশ শোভা ছড়ায়। বাইরের বারান্দা ঘেঁষা নারকেল গাছ তিনটা সেই সৌন্দর্য্যে আর একটু নতুন মাত্রা এবং বাড়ির ল্যান্ডমার্ক হিসাবে কাজ করছে। বাড়ি চিনতে বা চেনাতে কাজে লাগে। সব মিলিয়ে অদ্ভুত আমেজ জড়িয়ে থাকে বাড়িটাতে আমাদের।
এবারের প্রাপ্তি বরাবরের মতই মার হাতের রান্না ছাড়াও সবুজ গাছপালার উপর গলে পড়া দু-দুটো বৃষ্টিভেজা চাঁদের রাত, আর প্রায় প্রতিটা সকালেই ঘুম ভাঙ্গার সাথে সাথেই টিনের চালে প্রবল বর্ষণের শব্দ অথবা ঐ শব্দে নিদ্রাহরণ। আহ্, মধুর দুটো প্রাপ্তি।এখনো আছি। দুই একের মধ্যেই হয়ত চলে যাবো। আবার সেই ঢাকায় ৭.৫ মাত্রার ভুমিকম্প হলেই ৭২০০০ বাড়ি ধ্বসে যাবে! কি সাংঘাতিক তথ্য।
বাবার রিটায়ারমেন্টের আগে থেকেই ভাবছিলাম বাবা-মাকে শিফট করব ঢাকায়। কিন্তু বাবা রাজি না। মা'র প্রচন্ড ইচ্ছে। তার রাজি না হওয়ার অনেক কারণ। মুক্ত হাওয়া-বাতাস ওয়ালা, খোলা-মেলা জঞ্জালহীন এই শহরতলীই তার পছন্দ। ঝলমলে নাগরিক জীবনে হাঁপিয়ে ওঠেন খুব দ্রুত। নাগরিক জীবনের অনেক অনেক অপছন্দনীয় কারণ তো তার আছেই এবার তার সাথে নতুন করে যুক্ত হল "ভুমিকম্পের" ভয়।
...আজকে বিবিসি রেডিও'র সান্ধ্য আয়োজনে নবনীতা চৌধুরী একজন সরকারী কর্মকর্তার সাক্ষাৎকার নিচ্ছিলেন এই ভুমিকম্প বিষয়ে। আমি, বাবা, আমার ছোট ভাই ড্রইং রুমে মুড়ি-চানাচুর খেতে খেতে উপভোগ করছিলাম। বলাই বাহুল্য বাবা খুব উপভোগ করছেন। কেননা,যখনই আমরা একসাথে হই তখনই বাবাকে ঢাকায় নিয়ে যাবার জন্য তুমুল মিষ্টি ঝগড়া শুরু হয়ে যায়, আর এই মুহুর্তে ঢাকার বেহাল অবস্থা নিয়ে যেহেতু অনুষ্ঠান হচ্ছে সেহেতু তাকে আর পায় কে? অনুষ্ঠান শুনছিলেন আর মাঝে মাঝে কমেন্ট ছুড়ছিলেন। এক পর্যায়ে নবনীতা জিজ্ঞেস করলেন - "এই যে ৭২০০০ ভবনের বেহাল অবস্থা এর কি হবে, কি করা যায়? বা কি করবেন বলে ভাবছে যথাযথ কর্তৃপক্ষ?" তার প্রশ্নে এমন একটা ব্যাকুলতা ছিল যেটা কান এড়ায় না , এবং তাতে বাবা আরো প্রশ্রয় পেয়ে উত্তরদাতা কর্মকর্তার উত্তর এর আগেই বলে বসলেন- " কি আর হবে, সব ভেংগে চুড়ে যাবে, তখন সুযোগ আসবে নতুন করে তৈরী করার, তা না হলে এখন তো পাবলিক আর ছেড়ে যাবে না সব, অথবা ভাংগাও যাবে না, ঐ কাজটা হলেই বরং ভালো, ঢেলে সাজানো যাবে"।
যদিও কথাটা কৌতুক মিশানো আক্ষেপেরই কথা, কেননা নিশ্চিত ভাবেই তিনি এই ঘটনা ঘটুক তা চাননা।
বাবার সাথে যদিও তর্ক করি কিন্তু নিজের উপলব্ধি থেকেও ভাবিছিলাম আসলেই ঢাকা এরকম সব ভেঙ্গে ঢেলে সাজানোর দিকে এগুচ্ছে কি না? ব্যাঙ্গের ছাতার মত গজিয়ে ওঠা ডেভলপারদের কল্যানে এই অল্প আয়তনের শহরটার প্রতিটা অলি গলি যেভাবে কবিতরের খুপড়ি'তে রুপান্তরিত হয়েছে সেগুলোর দিকে আজকাল তাকালেই কেমন যেন গা গুলিয়ে ওঠে। বারো হাত বাঙ্গির তের হাত বিচির মত মনে হয় এভাবেই কেন থাকতে হবে? কেন ঢাকায় ই ভীড় করতে হবে। কেন অন্য কোথাও নয়। অন্য কোথাও কি নাই আর ঢাকায় কি আছে? কেন একটু সুন্দর করে প্ল্যান মোতাবেক এখানে বিল্ডিং ওঠে না? সবাই কেন ঢাকাতেই হামলে পড়ছে আর সবার টার্গেট কেন ঢাকাতেই একটা আস্তানা করতে হবে?
বুঝলাম না হয় ঢাকা রাজধানী, তাই । দেশের মধ্যে ঢাকা শহরটাই সবচে এগিয়ে আছে, বহির্বিশ্বে বাংলাদেশ মানেই ঢাকা, কিন্তু আসলেই কি ঢাকা এতোটাই আনপ্যারালাল হিসাবে নিজেকে মেলে ধরতে পেরেছে? ঢাকা আর রংপুরের মধ্যে একটা এয়ারপোর্ট আর গ্যাস ছাড়া কি এমন বিগ বাজেট ডিফারেন্স? স্বাধীনতার পরে ঢাকা এতদিনে যেখানে চলে যাবার কথা ছিল তার কতটুকু যেতে পেরেছে?
মনোযোগ দিতে হবে। সময় পার হয়ে গেলেও এখনও সময় আছে ঢেলে সাজাবার। ঢেলে সাজাতে হবে ব্যাবহার বান্ধব ও মজবুত করে। কবুতরের খুপড়ি সমূহ রঙ-চং করে করে লাভ নাই। বড় ধরনের মাশুল গোনার আগেই।
মন্তব্য
জ্ঞান থাকতে আমাদের হুস হয়না। আমাদের ঠুস খেয়ে হুস হয়। তাই যখন ৭২০০০ হাজার দালান কোঠা বালির বাঁধের মত ধ্বসে পড়বে তখন আমাদের হুস হবে।
ধন্যবাদ।
কামরুজ্জামান স্বাধীন।
জনসচেতনতা বৃদ্ধি পাক
_____________________
বর্ণ অনুচ্ছেদ
নতুন মন্তব্য করুন