শচীনকত্তার ওই ভক্তিমূলক হিন্দি গানখানা হয়ত অনেকেই শুনেছেন। না শুনলে শুনতে পারেন। কিন্তু না, এখানে গান নিয়ে আজ আলোচনা করছি না। দুটো কথা বলব, জয়গান নিয়ে। ধম্মকম্মের। আমার পরিপ্রেক্ষিত থেকে। আর সাথে চানাচুর হিসাবে ইতালীয় বালিকার গপ্প। (আসল লেখাটা পড়তে না চাইলে শেষে চলে যান।)
(১)
কয়েকদিন আগে আমাদের ইউনির মেডিকাল স্কুলে ক্যাথলিক স্টুডেন্ট গ্রুপ এক বক্তৃতার আয়োজন করেছিল। তার হেডিং পড়েছিল, “মিরাক্ল্ আরোগ্য? লুর্দ গির্জায় চিকিৎসাবিজ্ঞান-নির্ভর অনুসন্ধান”। এবং তলায় লেখা, যাঁরাই এই একবিংশ শতাব্দীতে ধর্ম ও বিজ্ঞানের ‘ডায়নামিক ইন্টারপ্লে’ দেখতে আগ্রহী, তাঁরা অবশ্যই আসুন।
বিজ্ঞানের পক্ষে বক্তৃতাটি ঝুঁকে, নাকি ধর্মের পক্ষে, সে সম্পর্কে কিছুই প্রকাশ করা হয়নি পোস্টারটিতে। মেডিকাল স্কুল যখন, তখন মিরাক্ল্ আরোগ্যের কোনো দাবিকে অপ্রমাণ করা হবে, এটা মনে হচ্ছিল। আবার ভাবছিলাম, ক্যাথলিক ছাত্রদের আয়োজিত যখন, তখন প্রমাণের চেষ্টাও বিচিত্র নয়। হয়ত একটা সমঝোতার চেষ্টা করা হবে, ভাবলাম। ‘অ্যাপলজিস্ট’ ধরনের কোনো অবস্থান আর কি।
(২)
গিয়ে জানলাম, বক্তৃতাটি ফ্রান্সের দক্ষিণের লুর্দ শহরের ‘আওয়ার লেডি অফ লুর্দ’ নামক গির্জাটির সম্বন্ধে। সেখানে একটি ‘পবিত্র জলধারা’ আছে, যা একটা চৌবাচ্চায় জমা করা হয়। প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ পূণ্যার্থী সেখানে স্নান করতে আসেন। স্নান মানে, দুজন কর্মী আপনাকে ধরে সেই ৮-৯ ডিগ্রীর ঠাণ্ডা জলে ঘচাং করে ডুবিয়েই তুলে ফেলবে। মানস সরোবরের হিমশীতল জলে ডুব দিয়ে যেমন তনুমনঝাঁঝাঁকরণ চাঙ্গা ভাব হয়, তেমন আর কি। তবে ওখানেই শেষ নয়। এ পর্যন্ত বহু লোকেরই নাকি ওই জলে স্নান করে দুরারোগ্য ব্যাধি সেরে গেছে। প্রায় দেড়শ বছর ধরে এই স্নান চলছে (ওই যেমন হয়, শুরুতে মাতা মেরী এক পরমাসুন্দরী শ্বেতবস্ত্রাবৃতা যুবতীর সাজে কাউকে দর্শন দিয়ে কিছু বাণীটাণী দিয়েছিলেন), এখনও অবধি হাজার হাজার লোকে এই দাবী করেছে।
নিঃসন্দেহ হতে, গির্জার পাদ্রী এক মেডিকাল বোর্ড স্থাপন করেন, তাও বহুদিন হল। তার এক হেড-ডাক্তার আছেন। তিনি এবং অন্যান্যরা মিলে এই দাবীগুলি পরীক্ষা করে রায় দেন, এগুলো সত্যিই চিকিৎসাবিজ্ঞান অনুযায়ী সারানো অসম্ভব কি না। তেমন হলে, এই কেসগুলি ক্যাথলিক হর্তাকর্তাদের কাছে যায়, তাঁরা নেড়েচেড়ে রায় দেন, হ্যাঁ এটি একটি মিরাক্ল্।
এই ইতালীয় ভদ্রলোক সেখানকার বর্তমান হেড-ডাক্তার। প্রথম অ-ফরাসী। হার্ভার্ড মেডিকাল স্কুল থেকেই পাশ। আগে অন্য কোথাও কাজ করতেন, গত বছর ওদের ডাক পেয়ে সেখানে যোগ দেন। নিজেও ক্যাথলিক, ছাত্রজীবনে সেখানে তীর্থযাত্রায় গিয়েছিলেন। ইউনির ক্যাথলিক স্টুডেন্ট গ্রুপের কিছু ছাত্র সম্প্রতি সেখানে তীর্থযাত্রায় গিয়ে তাঁর সঙ্গে পরিচিত হয়, তখন তাঁকে এখানে বক্তৃতা দিতে আহ্বান করে। তিনি সাগ্রহে স্বীকৃত হন। আরো অন্যান্য শহরেও তিনি এই লেকচারটি দেবেন বলে জানালেন।
(৩)
এ পর্যন্ত শুনেই নিশ্চয়ই বুঝে গেছেন, লেকচারটি কী ছিল। একটি বিবরণমূলক বিজ্ঞাপন, যদি ভদ্রতাবশত প্রোপাগান্ডা কথাটি না বলি। স্থানটির মহিমা সম্বন্ধে বিশদ জানালেন, কিভাবে এই ঘটনাগুলি চিহ্নিত হয়, সেখান থেকে মিরাক্ল্ ঘোষণা হওয়া অবধি পদ্ধতিগুলি কি কি, ইত্যাদি। গর্ব করে বললেন, তাঁরা অত্যন্ত ‘উন্মুক্ত’। ওনার দপ্তরে এসে যে কোনো ডাক্তার কোনো কেসের ফাইলপত্র চাইলেই ওনারা সাগ্রহে দেখাবেন, যাতে ওই ডাক্তারও পরীক্ষা করে নিতে পারেন, সত্যিই দুরারোগ্য কি না। বললেন, এইধরনের আরোগ্যকে আমরা ‘চিকিৎসাবিজ্ঞানে ব্যাখ্যার অযোগ্য’ বলি না, বলি ‘চিকিৎসাবিজ্ঞানে ব্যাখ্যা করা যাচ্ছে না’। অ্যাকাডেমিক লাইনে কিছু প্রকাশ করতে গেলে যাকে খুব গুরুত্ব দেওয়া হয় (অবশ্য এখন সম্মান কমে যাচ্ছে) – সেই ‘পীয়ার রিভিউ’ অর্থাৎ সম পেশার অন্যদের দিয়ে সেগুলিকে পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া, তাও তাঁরা করেন বললেন। প্রথম ধাপে তাঁরা নিজেরাই কাগজপত্র পরীক্ষা করেন। তারপর একটি কমিটি নির্বাচিত করা থাকে, যাতে অনেক প্রতিষ্ঠিত ডাক্তাররা থাকেন, তাদের কাছে সেগুলি পাঠানো হয়। তাঁরা পরীক্ষা করে রায় দেন। তারপর তাদের মধ্যে এটি ‘চিকিৎসাবিজ্ঞানে ব্যাখ্যা করা যাচ্ছে না’ কি না তাই নিয়ে ভোট হয়। ভোটে জিতলে সেটি ধর্মগুরুদের কাছে পাঠানো হয়।
(৪)
এ পর্যন্ত নাকি ৬৭ টি মিরাক্ল্ চিহ্নিত হয়েছে। তার মধ্যে ক্যানসার, টিবি, আর্থরাইটিস, মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস ইত্যাদি আছে। একটা কেসের সামারি ধরালেন লোকজনকে। ছবিটবি আর টাইমলাইন দিয়ে। সেসব ডাক্তারির ব্যাপার আমি কিছু বুঝি না।
এই দাবিগুলির বিষয়ে আমার কয়েকটি বক্তব্য আছে। আপনারা সহমত কি না, ভেবে বলবেন।
১. এই দীর্ঘ দেড়শ বছরে মাত্র ৬৭টি কেস মিরাক্ল্ হিসাবে ঘোষিত হয়েছে। চিকিৎসাবিজ্ঞানে ভুল হবার হার কত? এই আমেরিকার মত আধুনিক ব্যবস্থাসম্পন্ন জায়গাতেও দেশের মতই ভুল পা কেটে বাদ দেওয়া, আসল স্যামের বদলে অন্য স্যামকে ক্যান্সার হয়েছে বলে বলে দেওয়া, অপারেশনের পর পেটে ছুরি রেখে দেওয়া, এ তো কতই হয়। এমন তো হতেই পারে, বায়োপ্সির রিপোর্ট গুলিয়ে ফেলে যাঁকে ক্যান্সার হয়েছে বলে ধরে নিয়ে প্রচুর কেমোথেরাপি দেওয়া হল, সেই ভক্তিমতী মহিলা ওই জলে চান করে প্রচুর জোশ নিয়ে দেশে ফেরত গেলেন, তারপর আশায় আশায় আবার বায়োপ্সি করালেন। ব্যাস, কেল্লা ফতে!
২. আসলে কমিটির যাঁদের দিয়ে রিভিউ করানো হচ্ছে, তাঁরাও কিন্তু প্রচণ্ড ক্যাথলিক। আর মনে ভক্তিভাব থাকলে মানুষ দরজার কাঠের নকশায়ও যিশুকে দেখে, জলাধারের শ্যাওলায় মেরীকে দেখে। আরো কত কি। তাঁদের রিভিউ কতটা নিরপেক্ষ, আর কতটা মিরাক্ল্ ঘোষণা করানোর ব্যাপারে উৎসাহী, কে বলবে?
৩. একটা দুরারোগ্য রোগ ওখানে গিয়ে সেরে গেছে বলে তা বিজ্ঞাপিত হচ্ছে। কিন্তু এমন রোগ কোনো কারণে আপনা থেকে সারতে পারে কি না, বা তেমন সারার হার কত, এসব না জানলে তুলনা করা যাবে কি করে? এত লক্ষ লোক যে ক্যান্সার নিয়ে ওখানে যায় প্রতি বছর, তার মধ্যে সারে আর বিজ্ঞাপিত হয় হয়ত মাত্র ১ জনের। আর বাকিদের? তাহলে সাফল্যের হারটা কেমন?
৪. দেড়শ বছর আগে যা স্বাভাবিকভাবে সারা অসম্ভব বলে ধরা হচ্ছিল, আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের নজরে কি তা একই রকম অসম্ভব বলে মনে করা হবে? দুর্ঘটনায় আপনার মাথায় চোট লাগল, আপনার মস্ত্বিস্ক আর ঠিকঠাকভাবে সব কাজকর্ম করতে পারে না। আগেকার দিনে মনে করা হত, এ জিনিস আর বদলাবার নয়। কিন্তু এখন ‘ব্রেন প্লাস্টিসিটি’র নতুন তত্ত্ব বলছে, মাথার নিউরনের জাল আপনা থেকেই বদলায়, এবং বড়সড় পুনর্সংযোগও হতে পারে অনেক ক্ষেত্রে।
(৫)
লেকচারের শেষ দিকে উনি বললেন, হে উপস্থিত সন্দেহপ্রবণ ডাক্তারগণ, আমি সরাসরি কিছু বলছি না, কিন্তু এই আর্টিকলটি দেখ, এখানেও বলেছে, ধর্মে মতি থাকলে রোগ তাড়াতাড়ি সারে।
কৌতূহল হল। বাড়ি এসে আর্টিকলটা নামিয়ে পড়লাম। ইতালিরই জনকয় ধর্মপ্রাণ চিকিৎসকের রচিত। পীয়ার-রিভিউ করা জার্নালেই প্রকাশিত। তবে পীয়ার-রিভিউ যে অনেকাংশেই বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরো হয়, সে কথায় পরে আসছি। আর্টিকলটা একটু পড়ি।
সেটার শিরোনাম, ‘ধর্মানুভূতির সঙ্গে লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট রোগীদের বেঁচে থাকার অ্যাসোসিয়েশন দেখা গেছে’। কোনো পেপারে যখন তথ্য-সংখ্যা ঘেঁটে স্ট্যাটিস্টিকাল কাজকর্ম করা হয়, ‘অ্যাসোসিয়েশন’ শব্দটা দিয়ে বোঝানো হয় ‘স্ট্যাটিস্টিকাল অ্যাসোসিয়েশন’ বা ‘স্ট্যাটিস্টিকাল কোরিলেশন’কে, যার মানে, সরল ভাষায়, একটার সংখ্যা বাড়লে অন্যটারও সংখ্যা বাড়তে দেখা গেছে ডেটা’য়। কোরিলেশনের মোটামুটি বাংলা সমানুপাত।
এই ‘অ্যাসোসিয়েশন’ অনেকভাবেই দেখা যেতে পারে। তাই একে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় না। কয়েকটা উদাহরণ দিই, যেখানে সমানুপাত’এর কোনো মানেই হয় না। ১. আইসক্রিমের বিক্রি বাড়লে জলে ডুবে মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ে। তাহলে কি আইসক্রিম খেলেই...? না, নিশ্চয়ই নয়। গরমে লোকে ঠান্ডা বেশি খায়, অন্যদিকে জলে দাপাদাপিও বেশি করে আরকি। ২. আপনার বয়স ২৫, মাথায় ঘন কালো চুল। বিয়ে করলেন। পঞ্চাশে মাথায় বিশাল ইন্দ্রলুপ্ত। ওই বৌ ব্যাটার জন্যই! নাকি বয়সের জন্য? ভুক্তভোগীরা অবশ্য প্রথমটারই দাবী করবেন...
(৬)
প্রথমটায় গরমকাল, আর দ্বিতীয়টায় বয়স, এগুলো হচ্ছে ‘হেতু’। যে ধরনের স্ট্যাটিস্টিকাল কাজকর্মে এই হেতু বা ‘কজ’ খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হয়, তাকে বলে ‘কজালিটি’। যেমন সিগ্রেট ফুঁকলে তার ধোঁয়ায় যে সত্যিই লাং ক্যান্সার বাড়ে, সেইটা প্রমাণ করা। এই কাজগুলো তুলনায় অনেক কঠিন। আপনি যদি নিজে হাতে একটি পরীক্ষা সেট-আপ করতে পারেন, যাতে অর্ধেক লোক ফুঁকবে, আর অর্ধেক ফুঁকবে না, আর তাদের খাওয়াদাওয়া পরিবেশ সব সমান রাখতে পারেন, তাহলে হিসাব করে বলা সোজা। নইলে এমনি এমনি কিছু ডেটা থেকে ‘কজালিটি’ বার করা খুব কঠিন।
তা এই পেপারটির শিরোনামে তো শুধুমাত্র ‘অ্যাসোসিয়েশন’ বলা হয়েছে, যে ধর্মানুভূতি বেশি এমন লোকেদের বেশিদিন বাঁচতে দেখা গেছে। তাহলে ঐ বক্তা ভদ্রলোক এমন ‘কজালিটি’র দাবী করলেন কেন, যে ওখানে নাকি লেখা, ধর্মানুভূতি থাকলে লোকে বেশিদিন বাঁচবে?
পুরোটা পড়লাম। দেখি, ভেতরে সত্যিই সেই দাবী করা! এক জায়গায় লেখা, তাহলে আমরা এই ‘হাইপোথিসিস’ পরীক্ষা করে নিশ্চিত হলাম, যে ধর্মানুভূতি সত্যিই বাঁচার হার বাড়ায়। দেখেন কাণ্ড। ‘অ্যাসোসিয়েশন’ থেকে যে লাফ মেরে কজালিটি’তে চলে যাওয়া যায় না, সেটা মানতে এঁদের বয়েই গেছে। আরেক জায়গায় বলছেন, আমরা এইটা বিশ্বাস করতে আগ্রহী, যে ওই যে সম্পর্কটা দেখা গেছে, সেটা শুধুই সমানুপাত নয় বরং হেতু; ধর্মবিশ্বাস রোগীদের জীবনপথের সত্যিই এক বিরাট পাথেয়। তা এমন বিশ্বাস থাকলে আর যুক্তি-বুদ্ধি-অ্যানালিসিসের প্রয়োজন আছে, বলেন?
(৭)
আর সেসব হলে যে অ্যানালিসিস ছেড়াবেড়া হবে, সে তো প্রত্যাশিতই। এনারা স্ট্যাট-এর যে পদ্ধতিটা ব্যবহার করেছেন, তার নাম ‘সারভাইভাল অ্যানালিসিস’। আতিপাতি স্ট্যাট কাজকর্মের চেয়ে এটা একটু বেশি জটিল, তাই অসাবধানে এটা ব্যবহার করলে ভুলও বেশি হয়। একটা উদাহরণ দিই।
মনে করুন, আমরা দেখলাম আপনার ৭০ বছরের বেশি বাঁচার সম্ভাবনা ২০%। তাহলে ৫০ বছরের বেশি বাঁচার সম্ভাবনা তো অন্তত ওই ২০% হবেই। আসলে আরো বেশিই হবে, হয়ত ৪০%। তাই বয়সের তুলনায় বাঁচার হার আঁকলে সেই গ্রাফ কেবল কমবেই।
অথচ, একটা পীয়ার-রিভিউ করা পেপার, যাতে তুলনা করে দেখানো হচ্ছে, যে সাধারণ মানুষের তুলনায় পপ-স্টারদের বেশি ঝুঁকিপূর্ণ জীবনযাত্রার কারণে মৃত্যুহারও বেশি, সেখানে কিন্তু পপ-স্টারদের সেই গ্রাফ উঠছে-নামছে!
(৮)
এই পেপারেও ওই অ্যানালিসিস লাগাতে গিয়ে যাচ্ছেতাই সব কাণ্ড করেছেন ওঁরা। আমার ব্লগে বিস্তারিত লিখেছিলাম, এখানে সংক্ষেপে বলি।
চিকিৎসার পর বাঁচার হার যখন মাপবেন, তখন লিভার প্রতিস্থাপনের পর কোনো শারীরিক জটিলতায় মৃত্যু হচ্ছে কি না, সেটাই তো মাপবেন। হঠাৎ কেউ এসে আপনাকে গাড়ি চাপা দিল আর আপনি পটল তুললেন, এটা কেন ওই চিকিৎসা-গবেষণার মৃত্যুহারে মাপা হবে? বরং, নিয়ম হল, যেহেতু এভাবে মারা গেলে আপনার প্রকৃত শারীরিক হালচাল আর মাপা যাচ্ছে না, তাই বলা হবে, আপনাকে ‘সেন্সর করা’ হয়েছে। সেন্সর করা আর জটিলতায় মারা যাওয়া দুটোকে আলাদা ভাবে হিসাব করতে হয়। এখানে সব মিশিয়েটিশিয়ে দিয়েছেন ওঁরা। কেন করা হয়েছে, সেটায় পরে আসছি।
৩ বছর ধরে ১৭৯ জন রোগীকে স্টাডি করেছেন ওঁরা – ৮৯ জন ধার্মিক আর ৯০ জন অধার্মিক, তাতে মাত্র ১৮ জন মারা গেছে মোট। এই হারটা খুবই কম। তাই হিসাবে ত্রুটি হবার সম্ভাবনা বেশি। পরে আসছি তাতে। তা এঁরা বলেছেন, কোনো ‘ডেটা লস’ হয় নি, এই ৩ বছর সবাইকেই স্টাডি করতে পেরেছেন (মারা যাওয়া লোকেদের বাদ দিয়ে)। অথচ, ১ বছর পরেই বলছেন, এখন ১২৮ জনকে মাপছি। বাকি ৪৯ জন কই? অত লোক তো মরেও নি। হিসাবের কড়ি বাঘে খেয়ে গেল?
আচ্ছা, হিসাব শুরু করেছিলেন, প্রায় সমান ধার্মিক ও অধার্মিক মানুষ নিয়ে। তাহলে সমান সমান হলে, দুটো গ্রুপেই ৯ জন করে মরার কথা। এবার যদি ধার্মিক গ্রুপে ১ আর অধার্মিক গ্রুপে ২ জন দুর্ঘটনায় মরে থাকেন, তাহলেই তো আসল মৃত্যুহারের অনুপাত বেড়ে ১১৫% হয়ে যায়। হিসাবে গণ্ডগোল, যা দেখাতে চাইবেন তা আসবে না। তাই দে গরুর গা ধুইয়ে, সব ধরনের মরা মিশিয়ে দে।
আসলে, যেসব বিষয়গুলির গবেষণায় স্ট্যাট ব্যবহার করা হয়, যেমন ডাক্তারি, ভাষাতত্ত্ব ইত্যাদি, তাদের পরীক্ষালব্ধ ফলগুলি থেকে কিছু প্রমাণ বা প্রতিষ্ঠা করতে, সেখানে স্ট্যাটিস্টিক্স একটা সেকেন্ডারি বিষয়। অন্যান্য সরঞ্জামের মতনই স্ট্যাটকেও একটা ব্যবহার্য সরঞ্জামের মতই ধরা হয়। তাই তাদের স্ট্যাটে যথেষ্ট ট্রেনিং দেওয়া হয় না, এবং তেমন গুরুত্বও দেওয়া হয় না, কোনোরকম করে একটা লাগিয়ে রেজাল্টটা পছন্দমত পেলেই হল। রিভিউয়ের সময়ও অ্যানালিসিসে কোনো ভুল আছে কিনা দেখার জন্য কোনো স্ট্যাটের লোককে রাখা হয় না।
(৯)
পেপারের রেজাল্ট সেকশনে অ্যানালিসিস করে পাওয়া ফলগুলো দিয়ে, ডিসকাশন সেকশনে সেগুলো ব্যাখ্যা করার নিয়ম। এই পেপারে ওনারা সেখানে ফল ব্যাখ্যার বদলে ধর্মকে ব্যাখ্যা করেছেন। গোটা স্টাডিতে কোথাও মাপা হয় নি, ওনারা বলে দিলেন, লোকেরা ঈশ্বরকে গভীর ভাবে উপলব্ধি করেছেন, এবং এই ধার্মিক ‘সেন্টিমেন্ট’ তাঁদের সংস্কৃতি থেকে উঠে আসা। ‘গভীর ভাবে উপলব্ধি’, ‘সংস্কৃতি’ সেসব তথ্য এল কোত্থেকে?
অবশ্য আশ্চর্য হই নি। ইতালী ইউরোপের অন্যতম ধর্মপ্রাণ দেশ হিসাবে খ্যাত, ভ্যাটিকান’এর আবাস। সেখানের ভদ্রলোক, ডাক্তার হলে কি হবে, বক্তৃতার শেষে ‘দিস ইস মিরাক্ল্’ বলে চিৎকার করবেন, সে আর বেশি কি। ওই পেপারের লেখক ডাক্তাররাও ইতালীয়, খেয়াল করবেন।
এই তো কদিন আগেই মহামতি পোপ বলেছেন, “বিজ্ঞানীরা তো আর দুনিয়া বানায় নি, তারা সেটার হালচাল শেখার চেষ্টা করে শুধু। তাদের কাজ হচ্ছে তাই এই মহাজাগতিক সূত্রগুলি বোঝার চেষ্টা করা। এবং সেটা বুঝলেই তাই তারা বুঝতে পারে, এক সর্বশক্তিমান ‘কারণ’ এই দুনিয়া চালাচ্ছে – সেটাই হল ভগবান, মানুষ চালাচ্ছে না।” এই দ্বিতীয় থেকে তৃতীয় লাইনে লাফ দেবার লজিকে যে প্রচণ্ড ফ্যালাসি, সেটা বোঝার ক্ষমতা তাঁর বা অনেকেরই নেই। তাই ওই ভদ্রলোক বা ওই ডাক্তাররা একই ধারণার অনুসরণে যে ‘মেরী’ নামের নেশায় সবাইকে চুর হতে আমন্ত্রণ জানাবেন, এ আর আশ্চর্য কি।
সাধারণ ভাবে ধরা হয়, পশ্চিম ও উত্তর ইউরোপের দেশগুলি বেশি আধুনিক এবং উদারপন্থী, আর পূর্ব ও দক্ষিণের দেশগুলি প্রাচীনপন্থী। বোরখা-ব্যানের মত পদক্ষেপ নিতে থাকা ‘লিবারেল’ ফ্রান্সে উচ্চশিক্ষিত ক্যাথলিক ডাক্তারের অভাব তাই এখন পড়তেই পারে, আর তার জোগান দিতে ইতালীর চেয়ে উপযুক্ত আর কে? ফ্রান্সে ৭৩% ধর্মকে গুরুত্ব দেয় না, জার্মানীতে ৫৭%, আর ইতালীতে মাত্র ২৬%।
সে তুলনায় আবার আমেরিকাও অনেক বেশি ধর্মনির্ভর। গোঁড়াদের অত্যাচারে ইউরোপ ছেড়ে চলে আসা উদারপন্থী মানুষেরা যখন আমেরিকা প্রতিষ্ঠা করেন, তখন তাঁদের লক্ষ্য ছিল ধর্মনিরপেক্ষতা। সেই থেকে আজ ‘ইন গড উই ট্রাস্ট’য়ে এসে দাঁড় করিয়েছে যীশু-অনুগামীদের দল। কোরান পোড়ানোর তাদের জিগির তাদের পাবলিসিটি স্টান্ট। আমেরিকার স্কুলে ক্রিশ্চান লবিগুলি সফলভাবে বিজ্ঞান শিক্ষার পাশাপাশি বাইবেলের সৃষ্টিতত্ত্ব শেখানো চালু করেছে কয়েক জায়গায়। সেই তুলনায় আজ ইংল্যান্ডের অবস্থা অনেক ভাল। সাম্প্রতিক এক স্টাডিতে আমেরিকার মাত্র ২৬% জনতা বলেছে, মানুষ বহু লক্ষ বছর ধরে ইশ্বরের প্রভাব ছাড়াই বিবর্তিত হয়েছে। সেইটা ইংল্যান্ডে ৪৮% লোক বলেছে। ওই ভদ্রলোক তো আমেরিকাতে আরো উৎসাহ নিয়ে লেকচার দিতে আসবেনই।
(১০)
ইতালি এবং ক্যাথলিকদের কথা যখন তুলেছি, তখন আমাদের ব্যাচের এক ইতালীয় বালিকার গল্প দিয়ে শেষ করি। বালিকা প্রচণ্ড ক্যাথলিক, তার সব কথাতেই ‘ইলাহি ভরসা’। তার একটি বয়ফ্রেন্ড আছে, সে আবার বালিকাকে যত্ন করে কামড়াইতে বড়ই উৎসাহী। কিন্তু ধর্মপ্রাণা বালিকার তাতে খুব আপত্তি। সে বলে, ওগো, আমাকে আগে বিবাহ করে নিজের শ্রীচরণে ঠাঁই দিয়ে নাও, তারপর মনের সুখে কামড়াইবে; কিন্তু বিয়ের আগে একদম ওসব নয়, আমি মাতা মেরীর মতই ভার্জিনাবস্থায় বিবাহ করতে চাই। অনেক ইতালীয় মহিলার মতই এই মেয়েও ‘আদর্শ মাতৃত্বের’ দৃষ্টান্ত স্থাপনে আগ্রহী, বিয়ের অব্যবহিত পরেই সে এক বিশাল পল্টনের উৎপাদন এবং লালনপালন করে সফল এবং প্রবল মাতৃত্বের ধ্বজা ওড়াতে চায়। এ গল্প সে সবাইকেই করে। দুষ্ট পাঠক এ কথা শুনে ভাববেন না, ওই পল্টন উৎপাদনে সে আপনার কোনো অবদান চায়।
মুশকিল হল, ওই ছেলেটি ধর্মটর্মকে পাত্তা দেয় না, সে অজ্ঞেয়বাদী। বান্ধবীর ধর্মচর্চায় কোনো আগ্রহ নেই তার, স্বভাবতই সেই ধর্মের আরোপিত বাধায় কামড়াতে না পেরে সে বড়ই ক্ষুব্ধ। ওদিকে সে পট করে বিয়েও করতে চায় না, তার মত, যখন আমাদের মধ্যে এত বিষয়েই মনের অমিল, তখন এখুনি বিয়ে করে ফেলে পরে ভোগার চেয়ে আরো কিছুদিন দেখে নেওয়া ভাল। সব মিলিয়ে বড়ই জটিল স্টেলমেট।
একই কনফারেন্সে গেলে তারা পাশাপাশি ঘর নেয়, কিন্তু ডবল-বেড একটা রুম নেয় না। আমেরিকাতে এটা বেশ ব্যতিক্রম। এমন কেন জিজ্ঞেস করলে বলে, পাশাপাশি আগুন আর ঘি? যদি ‘টেম্পটেশন’ সামলাতে না পেরে ‘কিছু’ হয়ে যায়? বলি, তাহলে তোমার ধর্মসঞ্জাত চারিত্রিক বলের কি হল? বলে, না, “হিউম্যান নেচার ইজ উইক”।
আবার ছেলেটির ‘হবু স্ত্রী’ হিসাবে খুব অভিমান করে, যখন ছেলেটির সমমনস্ক বন্ধুরা তার বাড়িতে এসে মেয়েটির গোঁড়ামিকে নিয়ে হাসিঠাট্টা করে। বলে, হবু হোক, বর তো! তার কি কর্তব্য নয়, স্ত্রীর নিন্দামন্দ দেখলে তেব্র পেতিবাদ করা? বরং সে-ও ওদের সঙ্গে মিলে খিলখিল করে!
এই অচলাবস্থাতেই গল্প শেষ করি। একে ইতালীয়, তায় বালিকা, জিএমটি এসে হাত ধরতে চাইলেই মুশকিল হয়ে যাবে। ছেলেটি আবার খাঁটি সিসিলীয়, কোনোরকম আভাস পেলেই তার পুত্রপৌত্রাদি এসে অনাগত চোদ্দপুরুষকে শুদ্ধু ভেন্ডেটা করে দিয়ে যাবে। সহসচলকে এহেন বিপদ থেকে সাবধান করা কর্তব্য। মেয়েটি সবাইকেই বলে, ছেলেটির সুমতি হোক, ভালয় ভালয় আমাদের বিয়েটা হয়ে যাক, এই দোয়া করুন। শান্তিকামনায় আপনারাও তাই করুন বরং।
মন্তব্য
ইতালীয় বালিকার জন্য দোয়া করতে যাইয়া খিয়াল হইলো আমি নিজে খাঁটি নাস্তিক, তাই আপাতত প্রচুর শুভেচ্ছা(অগ্রীম)।
আপানার তথ্যসমৃদ্ধ লেখাটা খুবই ভালো লাগলো।
অট: 'সব লাল হো যায়েগা'র চৈনিক বালিকার গল্প তাড়াতাড়ি পোষ্টান
love the life you live. live the life you love.
দ্যাশের ফাদারগণ এখনও অত পাবলিসিটি পায় নাই। সিংহভাগ মাদার টেরিজাই মাইরা দিসে।
এখন আর স্টেরয়েড মেশানো ধুনীর ছাই দিয়ে সাধুবাবারা বেশিদিন কাজ চালাতে পারে না ঠিকই, কিন্তু তাও গ্রামেগঞ্জে চলে বইকি।
সব লাল হো জায়েগা পর্ব ২ তে তো চৈনিক বালিকার গল্পই বেশি, দেখেন নাই?
তারাপ ভাই, বালিকার জন্য দোয়া করলেন, ভালো কথা, আমার বালিকাপ্রাপ্তির জন্য দোয়া করবেন না?
আমাদের পিএইচডির কোয়ালিফাইং পরীক্ষায় গতবার বালিকা ফেল করেছে। আমাদের ব্যাচে ও-ই একমাত্র। খুবই দুঃখজনক, তাই ও সংক্রান্ত কোনো প্রসঙ্গই তুলি না, নইলে বলা যেত, কি, রোজ যে উপরওয়ালাকে এত রুটি-পানি চড়াও, এইটা কী আশীর্বাদ করলেন তিনি? এইবার জোরতাড় করে পড়ছে, কারণ দ্বিতীয়বার ফেল করলেই ডিপার্টমেন্ট ছাড়তে হবে। আশা করি এইবার কোনো গণ্ডগোল হবে না। পাশের দোয়াটাই জরুরী বরং এখন।
সেরেছে... এতো দেখি কৃশ্চান হুজি!
--- থাবা বাবা!
হুজি বলতে সেই জঙ্গীগোষ্ঠীর কথা বলছেন? না, অতটা গুন্ডাবদমাশও না এরা।
পড়ার লগে
ওই এইটা নিয়া একটা পেপার সাবমিট করো!
যাক, তুমি যে মাঝে মাঝে আমার লেখা পড়ছ, দেখে ভাল লাগে।
রিভিউ আর্টিকল যে হয় না তা নয়, তবে বেশ কম। আর তাছাড়া সেগুলো ওই একই জার্নালে দেবার চল। ওদের কি এত দায় পড়েছে স্ট্যাটের সমালোচনা ছাপার।
জার্নালগুলো স্ট্যাটের ব্যাপারে বড়োই আলসে। সেদিন একজনকে বললাম, আপনার ডেটাটা বেশ ইন্টারেস্টিং, এই নতুন মডেলটা লাগান। বলল, না রে ভাই, রিভিউয়াররা বুঝবে না, ফেরত পাঠিয়ে দিয়ে বলবে, সবাই বুঝতে পারে এমন সাধাসিধা মডেল লাগান।
রিচার্ড ডকিন্স ২০০৬-এর এক ডকুমেন্টরিতে ঐ ‘আওয়ার লেডি অফ লুর্দ’ -এ গিয়ে ৬৬টি 'মিরাকল' নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলো। জানা যায় প্রতি বছর গড়ে ৮০ হাজার রোগী-পিলগ্রিমেজ আসে গত ১০০ বছরের বেশী সময় ধরে।
৬ মিনিট থেকে দেখতে পারেন
http://video.google.com/videoplay?docid=9002284641446868316#
লিঙ্কটা দেবার জন্য ধন্যবাদ। ওনার বক্তব্য জানতাম, যদিও ভিডিওটা দেখা হয় নি। এখানে আমি আমার তরফ থেকেই ব্যাপারটা বলেছি।
অনেক 'মডারেট' ধার্মিক ব্যক্তিগণ, যাঁরা নিজের বিশ্বাসে দৃঢ় থাকলেও অন্ততঃ এসব বিষয়ে নাস্তিকদের সঙ্গে কথাটা বলেন, তাঁরা দেখি অনেকেই আজকাল ডকিন্সের নাম এলেই চটে যান, যে তোমাদের কি আর ওই একটা লোক ছাড়া রেফারেন্স নেইকো? তাই নেহাত প্রয়োজন না হলে ওনার রেফারেন্স আনি না আর কি।
লেখা বেশ পরিশ্রমবহুল হয়েছে, এজন্যে সাধুবাদ প্রাপ্য...
চিকিৎসা বিজ্ঞান এখন আসলেই আগের চেয়ে বহুগুণ এগিয়ে। লুর্দের জলধারাইয় স্নান করে যতগুলো মিরাকল সাধন সম্ভব, তারচেয়ে শতগুণ মিরাকল বিজ্ঞাব প্রতিদিনই সারাচ্ছে। ইতালীয় ডাক্তার 'নির্মিত' স্টাটিস্টিক্যাল এসোসিয়েশন পড়ে মজা পেলাম বেশ...
_________________________________________
সেরিওজা
হেঁ হেঁ, ধন্যবাদ। তবে আসল মিরাকলগুলো দেশেবিদেশে এখনও মজিদ ভাই-ই দেখাচ্ছেন, বুঝতে পারছি!
শচীন কর্তার এই গানটা আমার ভীষণ প্রিয়। পোস্টটা পরে পড়ব, গানের লাইনটা দেখে চমকায়া উঠছিলাম!
লাল গানে নীল সুর, হাসি হাসি গন্ধ
লাল গানে নীল সুর, হাসি হাসি গন্ধ
কি ভাগ্যি, শচীনকত্তার গানের বদৌলত সুজন্দার কমেন্টধূলি আমার পোস্টে পড়ল...
ধূর মিয়া!
অনেক দিন পর গানটা শুইনা তোমারে ৫তারাও দিছি!
আমার লাইফের ১টা বড় অংশ খাইয়া ফেলছে শচীন কর্তা।
১টা ঘটনা মনে পড়লো, কর্তার গাওয়া কীর্তন খুজতেছিলাম কোথাও না পায়া বাবারে জিগাইলাম, বাবা কইলো ওনার কীর্তনের সুরে গান আছে মেলা, তবে সরাসরি কীর্তন তেমন নাই, কিন্তু হিন্দিতে গাওয়া কিছু ভজন আছে দ্যাখ খুইজা পাস কিনা? চিরুনি খোজ লাগাইলাম পুরা ঢাকায় ... পাইলাম না কিছু! সবাই খালি দেবদাসের "শ্যাম মিলো" শুনাইতে চায় ঐটা অনেক আগেই শোনা ছিলো, মন ভড়লোনা, বেশ অনেকদিন পরে কোলকাতায় খুজতে খুজতে গিয়া উঠলাম HMV-তে, ঐখানে সব আছে ভজন নাই ... তারপর ১ বুড়া কয় যশোর রোড HMV-তে যান ঐখানে থাকতে পারে... গেলাম... নাই। চইলা আসুম হঠাৎ ১লোক কয় " দাঁড়াণ ১কপি মনে হয় আচেঁ!" .... ধুলা পড়া ১টা সোনার খনি!
কী যে খুশি হৈছিলাম! বইলা বুঝাইতে পারবো না!
"কৌন্ নাগরিয়া যাওরে বংশীওয়ালে'.... আহারে অসাধারণ!
সাথে অবশ্য ১টা বোনাস ছিলো " ধীরেসে যানা বাগিয়ান মে রে ভ্রমরা"
যাইহোক অনেকদিন পর তোমার পোস্টে গানের লাইনটা অনেক দূর ঘুড়ায়া আনলো। অনেক ধন্যবাদ।
এয়ে তোমার পোস্টা কিন্তু এখনো পড়ি নাই।
লাল গানে নীল সুর, হাসি হাসি গন্ধ
লাল গানে নীল সুর, হাসি হাসি গন্ধ
শচীন কর্তা সত্যিই
মান্না দে কর্তারে লয়ে আত্মজীবনীতে অনেক কথা লিখেছেন। বম্বেতে অনেকদিন কর্তার অ্যাসিস্ট্যান্ট ছিলেন কিনা। কর্তা ইস্টবেঙ্গলের সাপোর্টার আর কলকাত্তাইয়া মান্না দে মোহনবাগানের। বম্বেতে খেলা পড়েছে, কর্তা আদরের 'মানা'রে লইয়া খেলা দেখতে গেছেন। খেলায় ইস্টবেঙ্গল হাইরা গেসে, কর্তার মনে দুখ। মান্না দের ইচ্ছা হাত-পা ছুঁড়ে লাফাবার, কিন্তু কর্তার সামনে সেসব না করে বরং মুখ হাঁড়ি করেই আছেন। অভিনয় নাকি এতই ভাল হয়েছিল, কর্তাই বললেন, যা মানা, এত দুখ করস না, যা দুপয়সার চিনাবাদাম লইয়া আয়।
শচীনকত্তা বাংলা কীর্তন তেমন গেয়েছেন বলে শুনি নি। কীর্তনসম্রাট ছিলেন মান্না দে'র কাকা কানাকেষ্ট ওরফে কৃষ্ণচন্দ্র দে। আহা, সে কি উদাত্ত গলা।
বহু দিন আগে আনন্দবাজারে পড়েছিলাম, শচীনকত্তার সঙ্গে গুরুদেবের সাক্ষাৎ হয়েছে, রবিবাবু শুধালেন, শচীন, তুমি আমার গান গাও না কেন? শচীনকত্তা লজ্জায় পড়ে বললেন, গুরুদেব, আমি যে বাঙাল! এই উচ্চারণ নিয়ে আপনার গান গাই কি করে? রবিঠাকুর বললেন, তাতে কি হয়েছে? অমুক (সায়গল না কে যেন) তো অবাঙালী উচ্চারণেও আমার গান গাইছে। তুমি তোমার মত করেই গাইবে। তারপর নাকি কর্তা কলকাতায় ফিরে ১-২ খানা রেকর্ডও করেছিলেন। সত্যি কি না কে জানে, কিন্তু কর্তার রবীন্দ্রসঙ্গীতের কথা আমি কোথাও শুনি নি। খানকয় গেয়েছিলেন কৃষ্ণচন্দ্র দে, সে অসাধারণ জিনিস।
এসব কত কিছু তুমিও মনে পড়িয়ে দিলে সুজন্দা। তারপর, লেখা না পড়েই পাঁচতারা পাওয়ার সৌভাগ্যও দুর্লভ নয় কি?
শচীন কত্তার কোন আত্মজীবনী নাই ?? আর মান্না দে'র জীবনীটার-ই বা নামটা কি ছিলো ??
_________________________________________
সেরিওজা
"শচীন কত্তা আত্মজীবনী লেখেন নাই বোধহয়" লিখেছিলাম, কিন্তু খোঁজ করে দেখলাম, 'সরগমের নিখাদ' নাম দিয়ে উনি আত্মজীবনী লিখেছিলেন বটে। জীবনীও আছে।
বাবা-মা'র সঙ্গে ছোটবেলার শচীনকত্তার একটা ছবি পেলাম।
আর মান্না দে'র আত্মজীবনীটার নাম 'জীবনের জলসাঘরে'। পড়ে একটা রিভিউ লিখেছিলাম অনেকদিন আগে, দেখতে পারেন।
ধন্যবাদ বস। তবে আনন্দের বই দেখে একটু ডর পাচ্ছি। গলাকাটা দামে কিনতে হবে যে...
_________________________________________
সেরিওজা
......আকাশে ছিলো না মনে হয় চাঁদের পালকি/ তুমি হেঁটে হেঁটে সন্ধ্যায় আসো নি কালকি......নদী যদি হয় গো ভরাট কানায় কানায়/ হয়ে গেলে শূন্য হঠাৎ তাকে কি মানায়......
পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকি না কেনো শচীনকত্তা আমার সঙ্গেই থাকেন। তাঁর স্ত্রী মীরা দেব বর্মণের লেখা গানগুলো কী অসাধারণ!
এই লেখাটির পাঠসূত্রে শচীনকে প্রণাম আরো একবার।
ধন্যবাদ কৌস্তুভ।
হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!
অনেক পরিশ্রম করে লিখেছেন।
আরে ভাই যদি মিরাকল সত্যই থাকত তাহলে হেলথ ইন্সুরেন্স কোম্পানিগুলো ওই চৌবাচ্চার পানি প্রতি মাসেই পাঠাতো।
মানুষ দিশেহারা হলে খড়কুটো জাপটে ধরে, এটাই কারো কারো জন্য ব্যবসার ভালো পুঁজি।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
ধন্যবাদ
ওই 'মক্কা নোটস' লেখাটা পড়ে লজ্জা হল, যে এইসব বিষয়ে প্রায় কিছুই জানি না। তাই উইকিতে কাবা, আব-এ-জমজম ইত্যাদি নিয়ে একটু পড়াশোনা করছিলাম। দেখলাম ইউরোপে জমজমের পানি বলে নাকি অনেক ভেজাল জল বিক্রি হয়, তাতে আবার আর্সেনিক বিষক্রিয়ার ভয় থাকে। লুর্দের জল নিয়ে ব্যবসা হলেও অবাক হবার কিছু নেই।
- লেখাটা বরাবরের মতই দারুন হয়েছে। লিংক গুলো পড়ি নাই (আপনে যখন কইছেন, বিশ্বাস করছি )। তবে আপনার ব্লগটা পড়েছি। ব্যাপারটা আসলেই ইন্টারেস্টিং যে কোরিলেশন থেকে কেম্নে জাম্প দিয়ে হাইপোথিসিস দাড় করায়। যেখানে মিলিয়নের উপর মানুষ যায় সেখানে ৬৭টা কেইস যে কিছুই না এটা বোঝার জন্য স্ট্যাটিস্টিক্স জানা লাগে না। সমস্যা হল এই মজিদদের প্রভাব সবসময়ই বেশি। এই ধরণের প্রচুর পেপার আছে কিন্তু রিভিউ পেপার তেমন নাই।
- তারমানে পিয়ার রিভিউ আসলে অনেক সময়েই বিয়ার রিভিউ (মানে বিয়ার খেয়ে যে রিভিউ)।
- আর ইতালিয় বালকের প্রতি সমবেদনা। বালিকাকে আমার পক্ষ থেকে আলতো করে কামড়ে দিয়েন (যদি পারেন )।
অনন্ত
আমার মত দুদিনের ব্লগারের লেখাকেও আপনি 'বরাবরের মতই' বলছেন দেখে যারপরনাই পুলকিত হলাম।
৬৭ টা কেস কিছুই না নাও হতে পারত, যদি হাত-পা গজানোর মত কেস হত। তা নয় যখন, তখন একটু খতিয়ে দেখে হিসাবনিকেশ করা দরকার বইকি।
আপনি ব্লগ অবধি পড়েছেন দেখে খুব ভাল লাগল। অবশ্য আপনি আমাদের লাইনের লোক, নিজেদের মধ্যে এইটুকু না করলে ক্যাম্নেকি
পিয়ার রিভিউ আসলেই প্রচুর ঘাপলা। এইটা দেখেছেন হয়ত -
কি বলব, আমার অধুনা গুরুদেবই একটা পেপার লিখেছেন, স্ট্যাট জেনেটিক্সে একটা নতুন মেথড দিয়ে, থিওরিতে বিশাল ঘাপলা। আমি রিভিউয়ার হলেই সেটাকে পাশ করতাম না। কিন্তু স্ট্যাটজেন হল অ্যাপ্লায়েড স্ট্যাটিস্টিক্স, এখানে থিওরির থেকে সিমুলেশনের দাম বেশি। আর মজার ব্যাপার, থিওরির ভুলটা এমনই, সিমুলেশন করলে অর্ধেক ক্ষেত্রে পজিটিভ আর অর্ধেক ক্ষেত্রে নেগেটিভ বায়াস আসে, গড়ে কাটাকুটি হয়ে যায়।
আপ্নে তো মশায় লোক ভালু না! ওই বালকের হাতে আমার পিন্ডি চটকাইতে চান?
পিএইচডি কমিক্সের এই কমিকটা দেখি নাই আগে। আমি রিভিউয়ার হলে যে কোনো পেপার -১০০০ পাবে।
আমিও অনেক পেপার দেখেছি যেখানে স্ট্যাট ব্যবহার করে করতে হয় বলে, অনেকেই ডিটেইলসে যায় না।
অনন্ত
১.
জ্ঞানের চাপে ধর্মের লোকেরা ক্রমশ কোণঠাসা হয়ে পড়ছে। তাইতো ধর্মবেত্তারা ইদানীং অলৌকিকত্বের বৈজ্ঞানিক প্রমাণ দেবার জন্য ক্ষেপে উঠছে। লোকজন বড় খারাপ হয়ে যাচ্ছে দিনে দিনে। তারা এখন আর মাজারে পয়সা ফেলতে চায় না।
২.
সিসিলীয় বালকটিকে বলবেন ইতালিয় রোমান ক্যাথলিক বালিকাটিকে একদিন জোরপূর্বক চেপে ধরে ইহুদী ক্যাম্পে আগুন ধরিয়ে দিতে। একবার ইহুদী ক্যাম্পে আগুন দিতে পারলে বালিকা মজা পেয়ে যাবে। তখন দেখবেন বালিকা নিজেই অর্ধেক ইউরোপ জ্বালিয়ে দেবে হিটলারের মত। [ধরে নিচ্ছি জোকটা জানেন]
কাকস্য পরিবেদনা
উম... সত্যি বলতে কি, মিম্বর সাব, জোকটা জানি না আমি... বলেন না (বা লিঙ্ক দ্যান)।
লোকজন বড়ই পাষণ্ড হয়ে যাচ্ছে আজকাল। আরো দুঃখের ব্যাপার কি, তার মধ্যে আমি-আপনিও পড়ি। বাবার বলা একটা ঘটনা মনে পড়ল। উড়িষ্যায় ভুবনেশ্বরের কাছে উদয়গিরি আর খণ্ডগিরি বলে দুটি টিলা, মাথায় প্রাচীন গুহা আছে। আমি তখন খুবই ছোট। বাবা-মা-আমি উঠতে যাচ্ছি, টিলার নীচেই এক উড়িয়া পাণ্ডা ধরেছে। ওহে, পবিত্র স্থান, জুতো নীচে এখানে রেখে যাও। উদ্দেশ্য এই, জুতো রেখে কিছু পয়সা পাবে। বাবা বললেন, ওটা তো মন্দির-টন্দির কিছু না, আর্কিওলজিকাল সার্ভে দেখাশোনা করে, তার জন্য এখান থেকে জুতো খুলে যাব কেন? সুবিধা হল না দেখে পাণ্ডা বড়ই রেগে গেল, গালি দিয়ে বলল, "পাষণ্ড অছি!"
জোকটা আমিও জানি, কিন্তু কমু না!
লেখাটা ভাল লাগল। স্ট্যাটিসটিক্সের অপব্যাবহার দেখে খারাপ লাগল, তবে অবাক হই নাই। সঠিক স্ট্যট জ্ঞানের গুরুত্ব নিয়ে আপনার সাথে একমত।
একটা কথা আছে---মিথ্যা ৩ রকমের, ১।মিথ্যা, ২। ডাহা মিথ্যা, ৩।স্ট্যাটিসটিকস। প্রায়ই মনে হয়, কথাটা এরকম হওয়া উচিত ছিল----সত্য ৩ রকমের, ১। সত্য ২। নির্মম সত্য, ৩। স্ট্যাটিসটিক্স।
---দিফিও
থেঙ্কু দিফিও ভাই।
স্ট্যটকে সত্যি কি মিথ্যা বলবেন সেটা একান্তই নির্ভর করে আপনি কিভাবে সেটাকে ব্যবহার করছেন তার উপর। শুনেছেন নিশ্চয়ই, "টর্চার দা নাম্বারস অ্যান্ড দে উইল কনফেস এনিথিং..."
স্ট্যাট জবর ডরাই, তাও কিভাবে কিভাবে যেন পুরোটা পড়ে ফেলেছি!
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
যাক, লেখাটা শিশুপাঠ্য হয়েছে শুনে সুখী হলাম।
ঝোলাভরা ঝোলাগুড় পেয়ে ধন্যবাদ
লেখাটা বেশ ভাল লাগল। কোন মন্ত্রপূত পানিপড়া খেয়ে লিখলেন নাকি?
আজ্ঞে না, স্রেফ মুনিশ-ই-পালটির কলের পানি, ছ্যার!
ইন্টারেস্টিং। ... খুব ভাল লাগল আপনার বিশ্লেষণ কৌস্তুভ।
গত কয়েকদিনের আমার কিছু ‘ডায়নামিক ইন্টারপ্লের’ উদাহরণ দেই। পারিবারিক একটা গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা বিষয়ক সিদ্ধান্তের (CAG vs. PTCA) জন্য গত ১৫/২০ দিন বিভিন্ন বেশ কয়েকজন ‘বড়’ ডাক্তারের সাথে কথাবার্তা হলো। (বড় ডাক্তারের সাথে আম-পাবলিক হিসাবে দেখা করতে চাইলে আবার ১-২ মাসের মধ্যে অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাওয়া যায়না। ভরসা - রেফারেন্সায় নমঃ)। এই কিছুদিনের ‘কথাবার্তা’র প্রেক্ষিতে আমারও চিকিৎসা বিজ্ঞানকে মোর অভ ধর্ম/মিরাকল বলেই মনে হল। ডাক্তাররা ধর্ম ও বিজ্ঞানের ‘ডায়নামিক ইন্টারপ্লে’ই তো মনে হয় বোঝালো আমাকে। (যেমন, ‘হায়াত’ তো উপরওয়ালাই ঠিক করে দিয়েছেন, আমরা শুধু কিছু সিম্পটমেটিক চিকিৎসা দেই; ডাক্তাররা ৮০% রোগেরই চিকিৎসা করতে পারেনা [স্ট্যাট কিন্তু আমি দেই নাই, খুউব খিয়াল কৈরা], এই ব্যাক্টেরিয়া জাতীয় কিছু রোগের চিকিৎসা দিতে পারে শুধু। আমরা শুধু আপনাদের ‘পেইনটা কিছুটা রিলিফ’ করি। তারপর ধরুন আরও স্ববিরোধী ইউএস কন্সপেরিন্সি থিওরী...।)
এই কয়দিনে চিকিৎসার বানিজ্যিকরণের প্রভাব এবং দুর্বৃত্বায়ন দেখে ভাবি সাধারণ মানুষজন অদৃষ্টবাদী হওয়া ছাড়া হয়ত উপায় নাই। বিস্তারিত কখনও লেখার ইচ্ছে রইল। (একজন মহিলাকে দেখেছি যিনি সকালে তিন মাসের একটা বাচ্চা নিয়ে ডাক্তার দেখাতে এসেছেন, সন্ধ্যায় ডাক্তার দেখাতে ব্যর্থ হয়ে চলে যাচ্ছেন!!!)।
বেশির ভাগ বড় ডাক্তারই দেখলাম প্রচন্ড ধার্মিক। রিচুয়্যাল প্রেফারেন্স পায় এমন সব ব্যাপারের উপরে, দেখলে অবাক লাগে।
থাক এসব প্যাঁচাল। তারচেয়ে স্বর্ণালী দিনের স্মৃতিচারণই ভাল। চাকুরীর শুরুর দিকে একজন পশ্চিমা হার্ডকোর প্রটেস্টান্ট তরুণীর সান্নিধ্য পেয়েছিলাম। আহহারে ধর্ম সম্পর্কে কতকিছুই না শিখলাম!! কষ্ট হয়েছিল এই কন্ট্রাস্টে - উচ্চশিক্ষিত ঝলমলে তরুণী vs হার্ডকোর ফান্ডামেন্টালিজম। (আমি ‘খ্রিস্টে’ বিশ্বাসী না দেখে কত দূঃখ। আমি অবশ্য পুরাই ফ্ল্যাক্সিবল ছিলাম – 'যেহেতু কিছুই বিশ্বাস করিনা, তুমি বললে ‘খ্রিস্টে’ বিশ্বাস করলাম আরকি, নো ইস্যু'। তারপর দেখলাম বহুত হার্ডল...!!)
ধন্যবাদ নৈষাদ ভাই।
ডাক্তারির বড় বড় কাজ গুলোয় সফলতার সম্বন্ধে অনেকটা অনিশ্চয়তা থাকে বটে। এবার সেটাকে উপরওয়ালার নামে চালিয়ে দিতে পারলে আখেরেই লাভ। কোনো সমস্যা হয়ে গেলে 'তিনিই মারসেন' বলে চালিয়ে দিলে লোকেও কম ঝামেলা করবে, আর নিজের গিল্টি ফীলিং-ও কম হবে।
আপনি কোন দেশে আছেন জানি না, তবে এক মাস ডেট না পাওয়ার ব্যাপারটা খুবই সত্যি। একবার আমার পা ভাঙল, প্রথম দেখাশোনাটা তখনই করে ক্রাচ দিয়ে দিল। কিন্তু অর্থোপেডিক ডাক্তারের ডেট পেতে প্রায় এক মাস। তিনি এক্স-রে দেখে অবশ্য 'যেমন আছ তেমনই থাক' এর বেশি কিছু বললেন না।
যখন দাঁতে ব্যাদনা হল, তখনও স্রেফ পরীক্ষা করার ডেট নিতেই এক মাস। তার পরের ডেট আবার অনেক দিন পর।
স্বর্ণালী দিনের গল্প শুনি। সেই প্রটেস্টান্ট তরুণী আপনাকে প্রথমে ধর্মসঙ্গী ও তারপর জীবনসঙ্গী করতে চেয়েছিল, আর আপনি কোনো প্রটেস্ট করেন নাই, এই হচ্ছে গঠনা?
অনেক ভালো আর তথ্যবহুল একটা লেখা।
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ধুগোদা।
ভালো লাগলো লেখাটা পড়ে। অনেক তথ্যবহুল...বিশেষ করে স্ট্যাট এর ভুল্গুলোতে মজা পেলাম!!
ইটালীয় বালিকের মত আমিও একই ধারায় বিশ্বাসী
"মান্ধাতারই আমল থেকে চলে আসছে এমনি রকম-
তোমারি কি এমন ভাগ্য বাঁচিয়ে যাবে সকল জখম!
মনেরে আজ কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক-
সত্যেরে লও সহজে।"
থেঙ্কু থেঙ্কু।
বালিকের মত কোন ধারা? খুইল্যা কন
*অনেক ধন্যবাদ, পোস্টটার পেছনে খাটাখাটনির জন্য।
*ইউরোপের এই 'শিক্ষিত'রা দেখলাম আমাদের চেয়ে কম অন্ধকারে নেই।
*আমরা কি পিছনের দিকে হাঁটছি?
হেঁ হেঁ, 'মহাপণ্ডিত' কোন দেশেই বা নাই?
যদি কখনও মনে হয় পিছনের দিকে হাঁটতাছেন, তাহলে মুণ্ডুটাও ঘুরায়ে সেইদিকে করে নিবেন। তাহলেই মনে হবে সামনের দিকে এগাইতেছেন। আর যদি কোনো ব্যাটা যুক্তি দেবার চেষ্টা করে যে আসলেই আপনি পেছনের দিকে হাঁটছেন, তাহলে দে ব্যাটাকে ধরে... এই আসলে ওই মহাপণ্ডিতদের মোটো।
লেখা দারুণ লেগেছে।
শেষ প্যারায় ইতালিয়ান বালিকার প্রতি পুরাতন প্রেম আবার চাগাড় দিয়ে উঠেছে...
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।
আহা রে। এক কাজ করেন, সব ছেড়েছুড়ে দিয়ে ধর্মযাজক হয়ে ইতালী চলে যান। দেখবেন কত কত ইতালীয় বালিকা (ও বালক) আপনার চরণতলে ঠাঁই নিতে ছুটে আসছে। দুঃখ বা অভাব আর কোনোটাই থাকবে না।
আপনার লগে করা পোস্ট, আপনার মন্তব্য পেয়ে চরিতার্থ হলাম।
ধর্মযাজক হতে হলে হতে হবে আরামিসের মতন। অবশ্য এই দৃশ্যের এক মিনিট আগে থেকে দেখতে হবে...
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।
আরে! লেখাতো সেরাম পছন্দ হইলো! জিএমটির লিঙ্ক ধরেই অবশ্য এলাম!
-----------------------------------------------------------------------------------
...সময়ের ধাওয়া করা ফেরারীর হাত থিকা যেহেতু রক্ষা পামুনা, তাইলে চলো ধাওয়া কইরা উল্টা তারেই দৌড়ের উপরে রাখি...
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
আরে! সেরম
ইতালীয় বালিকার গল্পহেতু জিএমটি লিঙ্ক ধরাইছেন? বাহা বাহা।
লেখা চমৎকার!
ইয়ে মানে সিসিলিয় বালকটি কেমন?
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
থেঙ্কু
বালকটি গড়পড়তা ইতালিয়র মতই, অসাধারণ হ্যান্ডু কিছু না। কোঁকড়া ঝাঁকড়া চুল, চোখেমুখে একটু হাবলা হাবলা ভাব, গবেষক টাইপ আরকি। বালিকার সঙ্গে আগের ইউনিতেই পরিচয়। রোগাসোগা, ফর্সা, মাঝারি হাইট। স্বভাবগতিক ভদ্রসভ্য, রিসার্চের বাইরে সাতেপাঁচে তেমন থাকে না মনে হয়। ভাল জিনিস নিয়ে রিসার্চ করে, নাম হচ্ছে। হল?
খুব মজা পেলাম লেখায়। সিরিয়াস লেখা যদিও।
তাও তো ভালো রে ভাই।
এখানে এক হুজুর আছেন। কামেল মানুষ। খুবই প্রযুক্তিমনস্ক পীর।
তো তিনি কী করেন জানেন?
তিনি না রোগিকে তার কাছে আসার কষ্ট দেন না। ফোনেই ফু দিয়ে দেন। তারপর লোকজন তার ব্যাঙ্ক একাউন্টে টাকা জমা দিয়ে দেয়।
সিসিলিয় বালক সম্পর্কে তুলিরেখা কে এতো তথ্য না দিলে হতোনা?
একটু নাহয় আমাকেই বলতেন
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
ধন্যবাদ আপু।
ওই প্রযুক্তিমনস্ক পীর সত্যিই নমস্য মানুষ। দেখেন না, ফোনে ফুঁ তো আমিও কত দিয়ে দিতে পারি, কিন্তু প্রতিদানে কেউ আমার ব্যাঙ্কে কিছু দান করবে কি?
দেখেন, আঙুর ফলের রঙ কি, কত উচ্চতার গাছে ফলে, খোসার পুরুত্ব কত, ফলে শর্করা আর ভিটামিন সি'র অনুপাত কত, এসব যত কথাই হোক, আসল সত্য এই, যে আঙুর ফল টক। অতএব সে গল্প তুলিদিকেই করি আর আপনাকেই করি, একই ব্যাপার, গল্প শুনতে তো কারুর বাধা নেই। বালিকা নিজে ফলভারনম্রা পল্লবিনী লতা হোক না হোক, ওই আঙুরটুকু কেবল তারই ভাগের।
পিচ্চিবেলায় স্কুলের মাঠে সুপারম্যানের বেশী পাওয়ার, নাকি ব্যাটম্যানের বেশী পাওয়ার এগুলো নিয়ে তুমুল যুক্তিনির্ভর চিল্লাপাল্লা হত। দু একবার সেগুলো ইয়াহু-ফ্লইং-কিক ও অতঃপর ঘাসে গড়াগাড়িসহ ঘুষাঘুষিতো গড়াতো।
দাওয়াত-সভায় মাঝে মাঝেই বয়স্ক শিশুদের 'কার পাওয়ার বেশী' ধরনের কথার ঘুষাঘুষি খেলা দেখি। তুমুল বিনোদন। এই গত শনিবারেই একটা হিট খেলা দেখলাম। নায়েকের সমর্থক এক পিএইচডি জীবানুবিদকে এক আইটির যুক্তিবাদী বলছে
" ঈমানের জেল্লাই যদি আপনের জীবনধারনের জইন্ন যতেষ্ট হয়, তাইলে বিজলী, টুথপেস্ট, সাবান, চাক্কা, কম্পিউটার, আর জন্মনিরোধক এগুলার ব্যবহার ছাইড়া খালি দোয়াদরুদের ওপর জীবন পার কইরা দেন।"
হা হা, সত্যিই তুমুল বিনোদন। আসেন ঘুষাঘুষি খেলি।
ঈমানের জেল্লা দিয়েই তো হিম্ভাই সারা উইকেন্ড নেট ব্যবহার না করেই কাটালেন, তাইলে যতেষ্ট না?
স্ট্যাটিসটিক্স ইন অ্যাকশন!
অ্যাকশন মানে, পুরাই বাংলার কিংকংয়ের মত অ্যাকশন!
বাহ ভাল লেখা। আপনার মাশাই প্রবল ধৈর্য, খুব গুছিয়ে বিশ্লেষণ করেছেন। মহাপুরুষ ছবিতে কেবলানন্দ বলেছিল না, "হয় মনে ভক্তি নয় চোখে ছানি এ ছাড়া দেবদর্ষণ হয় না", এই "মিরাকেল"-ও সেই এক-ই গল্প, যাঁরা বিশ্বাস করেন তাঁদের বিশ্বাস টলানো প্রায় অসম্ভব। কিচ্ছু করার নেই
ছুটলে কথা থামায় কে/আজকে ঠেকায় আমায় কে
কথা সইত্য। নিজেই মহাপুরুষ হয়ে যাওয়া ভিন্ন তো লোককে কথা মানানোর উপায় দেখি না! আসেন ফোনে ফুঁ নিবেন?
ভাইরে হাত্তি পোষ্ট!
একবারে শেষ করতে পারুমনা।
"দৌড়ের উপর আছি" এর কোনো ইমো নাই?
কি আর করা, অল্প অল্প করেই পড়েন। পড়লেই হল।
স্ট্যাটিস্টিক্স আমারে জ্বালিয়ে খেল! ইউনির ফার্স্ট ইয়ারের রিলেটেড কোর্স্টা কোন্রকমে উৎরে গেছি, কিন্তু স্ট্যাট আর আমি, দু'জনে দু'জনাকে মোটেই ভালু পাই না! তবে, আপনার অ্যানালিসিস ব্যাপক ভালু পাইলাম।
আমার নিজের একটা মত আছে অবশ্য রোগ আরোগ্য লাভের। সেটা হলো, কেউ যদি নিজে সুস্থ হতে চায়, যদি তার প্রবল ডিটারমিনেশন থাকে, আর জীবনের প্রতি বেঁচে থাকার প্রতি আগ্রহ থাকে, নিজের জন্যে হোক বা অন্য কারো জন্যেই হোক, দুরারোগ্য ব্যধিও সেরে যেতে পারে। আমি নিজেও দেখেছি প্রচণ্ড জীবনিস্পৃহার কারণে টিকে থাকতে কিছু মানুষকে আবার এটাও দেখেছি সামান্য সমস্যাতেও চরম ভুগে কষ্ট পেতে। আসলে সত্যি মনের জোর একটা খুব জরুরি নেয়ামক। তবে মানসিক ভাবে দুর্বল থাকলে অসুস্থতার শিকার হওয়া সহজ...
যাই হোক, আপনার আগের 'লাল' লেখাটা পড়েও ভালো লেগেছিল, মাথায় কী কী যেন এসেওছিল বলবার জন্যে, কিন্তু এতই দৌড়ের উপরে থাকছি আসলে, ভুলে গেছি এখন!
লেখা জারি থাকুক।
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
আপনি নাহয় স্ট্যাটকে ভালু পান না, কিন্তু আপনার চেনাশোনা কেউ স্ট্যাটওয়ালাকে ভালু পেতে পারে কি?
মাথায় এসেছিল কিন্তু মন্তব্যে আসার সময় মেলে নি শুনে দুঃখিত হলাম, কিন্তু কি আর করা। সময় পেলে পড়বেন, তাতেই হবে।
নতুন মন্তব্য করুন