দুইদিন ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে বসে পুরোটা পড়েছি, লেখাগুলো এত ভাল প্রতিটাকে যথাযোগ্য সম্মান দিতে গেলে তাদের নিয়ে একটা করে পোস্ট দিতে হয়। তা যখন সম্ভব নয়, ইচ্ছা ছিল প্রতিটা নিয়ে অন্তত কয়েক লাইন করে লেখার। শুরু করি তীরুদার লেখা দিয়ে। আমি যদি আধুনিক আনন্দবাজারীয় সাম্বাদিক হতাম তাহলে ‘হুম’ বলেই প্রতিমন্তব্য করতাম, ক্লিশের পরিমাণটা যুতসই হত। তা যখন নই, তখন কী আর করা। ইউরোপ বারকয়েক ঘুরে আমি বড়ই মুগ্ধ হয়েছি, তাদের পুরোনো ঐতিহ্যকে ধরে রাখার অভ্যাস, যেটা তীরুদার লেখায় বেশ ফুটে উঠেছে, তার জন্য। (ইতিহাসের অনেক গল্প শুনতে পেলাম, আর বর্তমানের ছোট্ট শহরটাও আকর্ষক। তবে থাকার পক্ষে তেমন উত্তেজক নয় বোধহয়।) আর শুনেছি পূর্ব ইউরোপ তুলনায় আরেকটু ট্যুরিস্ট-অনাঘ্রাতা (তাই দামেও সস্তা), লোকজন বেশি সরল, আর যুবতীরা মাশাল্লা। আফসোস, এই ভরা যৌবনেও এখনও দেখা হল না। দেখি, সন্ন্যাসীর আশ্রমে হানা দেব একদিন...
ছোটবেলা থেকেই পড়শী রাজ্য সিকিমে এতবার গেছি, যে নতুন কিছুর থ্রিল আশা করে দমুদির লেখাটা পড়তে বসিনি। তবে আমার লেখাটায় যা বলেছি, যাঁরা ভাল লেখেন তাঁরা কীভাবে জানি খুব ভাগ্যবানও হন, সব মজার/উত্তেজনার অভিজ্ঞতা তাদের বেলাতেই এসে জোটে; আমাদের বেড়ানোগুলো হয় নিরামিষ। দমুদির বেলাতেও তাই। আর ছবিগুলো খুবই সুন্দর। অবশ্য দুষ্টু লেখকের মতই গল্পটা শেষ না করে ‘বাকিটা পরে’ করে রেখেছেন, কিন্তু সেটা যখন ইতিমধ্যেই সিরিজাকারে দিতে শুরু করেছেন তখন মাফ করা গেল।
দ্রোহী মেম্বর তো রম্য লেখক হিসাবে এস্টাবলিশড এবং জায়গায় জায়গায় কনভিক্টেডও হয়ে গেছেন ইতিমধ্যেই। এর থেকে কিছুমাত্র কম দিলেই আমাদের পোষাত না, অবশ্য তেমন অভাব যে হবে না সেটুকু ভরসাও তাঁকে করা যায়। আমার মনে হয় ‘পেদা টিং টিং’ আরেকটা বহুপ্রচলিত স্ল্যাঙ্গাত্মক শব্দ হয়ে উঠতে যাচ্ছে। এখন প্রার্থনা একটাই, আমাদের মত অবিবাহিত সচল যারা এখনও ‘গ্যালোজ’-এ ওঠেনি তাদের মধুচন্দ্রিমা যেন পেদা টিং টিং না হয়ে দাঁড়ায়। তবে শেষ অংশটা পড়ে মনে হয়, এর পরে একটা বেশ ‘মধুরেণ সমাপয়েৎ’ ছিল যেটা লেখক চেপে গেছেন। হেঁ হেঁ।
হাসিব ভাইয়ের লেখাটা পড়ে আমিও প্রথমে ভেবেছিলাম উনি কোনো বান্ধবীর সাথে দেখা করতে বার্লিন গেছেন বুঝি। পরে এই ঐতিহাসিক পোস্টারবালিকার কথা শুনে উইকি থেকে খানিক পড়ে নিলাম। আর জার্মান প্রৌঢ়াদের অভিজ্ঞতা কিন্তু আমারও খারাপ না। বন-এ আমার প্রফেসরের সেক্রেটারি ছিলেম যে পঞ্চাশোর্ধ্ব মহিলা, তিনি আমাকে সাথে নিয়ে রাইন নদীর ধারের সবুজ প্রান্তরে একটা চমৎকার ট্যুর দিয়েছিলেন আর খাইয়েওছিলেন। তারপরে আমায় বললেন, দেখা হইল না রে শ্যাম, আমার সে নত্তুন বয়সের কালে... আমি বললাম, কী ব্যাপার? বললেন, তুমি তো দেখছি আমার মতই প্রকৃতির মধ্যে ঘুরে বেড়াতে বেশ পছন্দ কর, তো আমি যখন তোমার বয়সী ছিলাম তখন আমার এক বয়ফ্রেন্ড ছিল, কিন্তু সে বেড়াতে একদমই ভালবাসত না; তাই ক্রমে ছাড়াছাড়ি হয়ে গেল, সেই থেকে এখনও একাই আছি...
দক্ষিণ ভারতে দুয়েকবার গেলেও, জলিল ভাই যতটা দেখেছেন ওই অংশগুলো আমারই দেখা হয়ে ওঠেনি! তবে ওনার সুন্দর বর্ণনায় সেটা পুষিয়ে যায়। বীরাপ্পনের আলোচনাটাও ইন্টারেস্টিং। দক্ষিণ ভারতীয় খানা নিয়ে অবশ্য আমিও খুবই সহমর্মী। দুই সপ্তাহ ধরে বীটসেদ্ধ-তরকারী আর কয়েকটা সবজি আর রায়তা আর পাঁপড় – তাও তরকারীগুলো খুবই মিষ্টি মিষ্টি – আর প্রায় সবেতেই নারকেল আর কারিপাতা – উঃ! একদিন আমাদের দলকে বলা হল, তোমাদের কষ্ট বুঝতে পারছি, তোমাদের চেন্নাই শহরে নিয়ে যাওয়া হবে, বিরিয়ানি খেতে। শুনে আগের দিনের ওইসব ডিনারে কমতি দিলাম আমরা, সারা রাত লালাসার বন্যায় বালিশপত্র ভিজে গেল। পরদিন রেস্টুরেন্টে লাঞ্চে গেলাম, বিশাল গ্রুপ আমরা, ওই দূর থেকে বিশাল থালায় বিরিয়ানি আসছে। সেখান থেকেই তার নারকেল তেলের গন্ধে টেঁকা দায়। সেই সুরন্ধিত বিরিয়ানি খেতে কেমন হয়েছিল, বুঝ লোক যে জান সন্ধান।
(২)
সচলে মুস্তাফিজ ভাইয়ের অপার্থিব ছবি আর সুস্বাদু লেখা দুটোর সঙ্গেই পরিচয় আছে। সুন্দরবন নিয়েই উনি লিখেছেন বেশ কিছুটা। তাই ভাবছিলাম, একদম নতুন কিছু কি আর পাব এখানে? তা দেখলাম, একটা খুব নির্দিষ্ট বিষয় – মধু সংগ্রহ – নিয়ে লেখার মাধ্যমে বেশই একটা নতুনের স্বাদ দিয়েছেন। ইবুকের স্বল্প পরিসরের লেখায় একটা একসপ্তাহের বেড়ানোকে কিছুতেই সুবিচার করা যায় না, সব গল্প পাঠকের সাথে ভাগ করে নিতে হলে। মুস্তাফিজ ভাই একটা দিনের একটা ঘটনাকে এমন সহানুভূতির সঙ্গে লিখেছেন যে সেটা খুব সফলভাবে করতে পেরেছেন। আর আমি এই অসামান্য স্থান সুন্দরবনে যাই নি কখনও, ওই সংক্রান্ত সব লেখাই তাই খুব আগ্রহ নিয়ে পড়ি।
ছিটমহলের গল্পটা বোধহয় এই সিরিজের মধ্যে সবথেকে কম ভ্রমণ-সম্বলিত, বেশী ইমোশন-উপজীব্য। আর ইমোশনেরও খানিকটা শুনলাম নাকি ওনার নয়, এক দোস্তের। দিক্কার, মিয়া, দিক্কার!
কিন্তু ছিটমহল ইস্যুটা সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ। সেটা দরদের সঙ্গে তুলে আনার জন্য সাধুবাদ। শুনছি, ভারত-বাংলাদেশ নাকি ছিটমহল বিনিময় করতে চলেছে। সেটা হলে হয়ত ওনাদের সমস্যা কমবে।
আমার সচলপাঠের শুরুর থেকেই নৈষাদদা একজন খুব প্রিয় লেখক। এইটায় উনি আরেকবার সেটা প্রমাণ করলেন। ওনার ভ্রমণ-দর্শনের সাথেও দেখি আমার বেশ মিল। আমিও লন্ডন গিয়ে বন্ধুর বাসায় খুব কমই ছিলাম, নিজে ইয়ুথ হোস্টেল ভাড়া করে থেকেছি। এখন অবধি ইউরোপ-আমেরিকা নানা জায়গাতেই ইয়ুথ হোস্টেলে থেকেছি, আমার অভিজ্ঞতা খুবই ভাল, বিশেষ করে নতুন-প্রাপ্ত সঙ্গীদের নিয়ে। কত রঙিন চরিত্র সব। আর আমাকেও অনেকে যাওয়ার আগে বলে গেছিল কালোদের থেকে সাবধান থাকার কথা, কিন্তু আমি তাদের থেকে আলাদা করে কোনো খারাপ ব্যবহার পাইনি। দুই মহাদেশেই। ও হ্যাঁ, ব্রিক লেনের দেশীয় খাদ্য! আহা বাহা!
রিসালাত বারী মনে হয় এই সিরিজে একমাত্র অতিথি লেখক। প্রশংসনীয়। ওনার লেখাটা একটু ‘কুয়র্ক’, মানে অন্যরকম। ভাষাটাও একটুখানি ইয়ে কিনা। টাটকা-গোঁপ-গজানো কলেজজীবনে যখন বন্ধুদের সাথে ঘুরতে যেতাম, তখনকার অভিজ্ঞতা মনে পড়ে যায়। তবে আমরা খুবই ঠাণ্ডা ছেলে ছিলাম, গল্পোল্লিখিত কোনো প্রকার দুষ্টুমিই করি নাই।
আমি ক্যারিবিয়ানে যেতে চাই। এই লেখাটা পড়ে সে ইচ্ছা আরো বাড়ল। আর যাঁরা কালো ভাইদের থেকে একটু ভয়ে ভয়ে থাকেন, তাঁদের পক্ষে বোধহয় বার্বাডোসের মত ধনী দেশটা সুবিধাজনকই হবে – দারিদ্র থেকেই তো গুণ্ডামির উৎপত্তি হয়।
বস্টনের অতলান্তিকে কেবলই ধূসর-নীল জল, অতলান্তিকের রঙও যে পান্না-সমান হতে পারে তা কখনও দেখিনি। ট্রপিকাল সমুদ্রতীর বলতে হাওয়াই দেখেছি, ভূমধ্যসাগর দেখেছি, দুটোই মুগ্ধ করেছে। এই সামারে ফ্লোরিডা যাওয়ার কথা, ভাগ্য থাকলে এটাও দেখা হবে। প্রবালরাজ্যে স্নরকেলিং-এর খুব সুন্দর বর্ণনা দিয়েছেন ধ্রুব ভাই, আমিও স্নরকেলিং করেছি কিন্তু এমন চিত্তাকর্ষক-ভাবে লিখতে পারিনি। ঈর্ষা ঈর্ষা ঈর্ষা।
(৩)
শিমুলাপার সচলকাহিনী বড়ই মজাদার। বন্ধুদের সঙ্গে মিলে এমন হইহট্টগোল বহুদিন হয় না। বিশুদ্ধ ভ্রমণবর্ণনা ওনার লেখাটাতেও কিছুটা কম, তবে গল্পে গল্পে সে অভাব গায়েই লাগে না। দুএকজন বাদে কোনো সচলের সঙ্গেই সরাসরি পরিচয় নেই, তবু এইভাবেই সচলদের লেখার মধ্যে দিয়েই মনে হয় যেন তাঁদের সঙ্গে বহুদিনের আলাপ।
সচলে যাঁরা ডাকসাইটে ফটোগ্রাফার, তাঁদের হিংসা করাতেও ক্ষান্ত দিতে হয়েছে। যেমন লোচনবক্সী, ফাহা ভাই, আর এই অনুপম সায়েব। এনারা সবাই আবার ছবির সাথে সাথে লেখাতেও মাশাল্লা। বান্দরবান অঞ্চলের সৌন্দর্য নিয়ে সচলেই আগে অনেকগুলো লেখা পড়ে ইর্ষান্বিত হয়েছি, এটাতেও তাই হতে হল। নাঃ, একদিন যাবই...
এই যে আরেকজন চির-ট্যুরিস্ট, ওডিন্দা। কলমও তেমনই জম্পেশ। এই ভ্রমণের ছবিটবি কিছু ফেসবুকেই দেখার সুযোগ হয়েছে, যেখানে নানাবিধ লোকেরা নানাবিধ ভাব নিয়ে পোজ দিয়ে থাকে। তবে সচলে ওনার অন্য বেড়ানোর সিরিজটা শেষ করেননি বোধহয়... যাহোক, ইনি লোক ভালো, প্রমিস করেছেন আমাকেও এমনই ঘুরিয়ে দেখাবেন, সাথে চানাচুর-ঝালমুড়ি-লাচ্ছি, তাই আর খোঁচাখুঁচি করব না...
আর, ইয়ে, এইটাতেও অতীশ দীপঙ্করের কথা উঠেছে। ভালো, আগে জানলে পরষ্পরকে সাইটেশন দেওয়া যেত, সেই ফাঁকে কয়েকজন পাঠক পেতাম...
তাসনীম ভাইয়ের তিনটে পরামর্শের একটাও এখন অবধি পালন করা হয় নি, যদিও অন্যদের কাছেও শুনে ইস্তক লুব্ধ হয়ে আছি। ওনার ছবিগুলো দেখে ডবল-দফা। আর কী, এ জগতে কত কিছুই দেখা হল না... যাক, তাসনীম ভাই জনকল্যাণমূলক কাজ করেছেন, যেখানে অন্যরা নিজেদের ভালো ভালো বেড়াবার গল্প বলেছেন, উনি ভালো করে বেড়াবার পরামর্শ দিয়েছেন!
রোমেল ভাই ওনার আফ্রিকা-অভিজ্ঞতা নিয়ে সচলেও সিরিজ লিখছেন। মহাদেশগুলির মধ্যে, পরিস্থিতি কারণে, আফ্রিকাতেই বোধহয় সবচেয়ে কম ট্যুরিস্ট যায় (মিশর বাদ দিলে)। অথচ কত প্রাচীন, মানব-ইতিহাসের আঁতুড়ঘর এই আদিম আফ্রিকা। তার এমন গল্প, এমন কাব্যমাখা ভাষায় এনে দেবার জন্য ওনার প্রতি বিশেষ ধন্যবাদ রইল।
(৪)
নির্দ্বিধায় বইটার মধ্যে আমার সবচেয়ে প্রিয় লেখা হল ‘চাইনীজ’। ওই নখের ইয়েটুকু বাদ দিলে এত লোভনীয় সব খাদ্যবস্তু দিয়ে সম্পৃক্ত লেখাটা, যে ভাবতেই লুলের গাঙে বন্যা এসে দুকূল ভেসে যায়। আর আমি অত্যন্ত দৃঢ়চরিত্র ব্রাহ্মণপুঙ্গব, যদি কখনও তপস্যা করতে বসি তো উর্বশী-রম্ভার পল্টন এসে নৃত্যলীলা করলেও আমার তপঃপ্রয়াস ভাঙতে পারবে না; কিন্তু যদি শূর্পনখাও একটা প্লেটে একখানা ব্ল্যাকফরেস্ট কেক নিয়ে এগিয়ে আসে তাহলে...
তাছাড়া চীন নামক ‘এক্সোটিক ওরিয়েন্টাল’ দেশটিতে আমার কখনও যাওয়াও হয় নি। আমার অগুন্তি চীনে বান্ধবীরা আমায় প্রায়ই বলে, আমার সে দেশটিতে যাওয়া উচিত, আমি নাকি বড়ই প্রীত হব; কিন্তু সুযোগ মেলে না। যাযাদির এই লেখাটা যেন ছোটভাইয়ের হাত ধরে ঘুরিয়ে এবং খাইয়ে আনল। তাই সঙ্গত কারণেই, যাযাদি যখন শ্রীমান চেন-এর সাথে, ইয়ে, মিষ্টালাপ করছিল তখন আমি কিছু শুনি নাই...
আর পড়ে থাকে আমার লেখাটা। সেটা নিয়ে আর কী বলি। ঠ্যাং ভেঙে দেওয়ার হুমকি দিয়ে যাযাদি এইটা লেখা করিয়েছেন। আমার একটি চরণকমল যে গত বছর থেকেই ভাঙা, তাই নিয়েই লন্ডন-অক্সফোর্ড-বার্মিংহাম ঘুরতে হয়েছে, সেসব কথায়ও কলকে পাওয়া যায় নি। অগত্যা লিখতে হল কিছু ধুনফুন। বিষয়টাও তাঁরই হুকুমানুযায়ী। আর যেহেতু সম্পাদিকা বুনোদি খুবই স্নেহশীলা দিদি তাই প্রকাশিতও হয়ে গেল আর কি...
(৫)
ভ্রমণীয় নিয়ে কিছু খেদও কী নেই? আছে। একটার কথা যাযাদির পোস্টে উল্লেখ করায় লোকজন এসে দাবড়ানি দিয়ে গেছে, যে তাহলে বইটার নাম বদলে ‘ভ্রমণীয় ও ঘটকীয়’ রাখতে হত। অতএব সেইটা চেপে যাই।
আর এত তাড়াহুড়োয় করা বলে বুঝলাম বেশ ছিমছামের উপর দিয়েই সারতে হয়েছে। বিশেষ করে প্রচ্ছদটা আরেকটু জমকালো হলে বেশ জমত, এখন একটু যেন পাওয়ারপয়েন্ট টেমপ্লেটের কথা মনে করিয়ে দিল। মুস্তাফিজ ভাইয়ের হাতযশ তো আমরা জানিই, তাই অনেকটাই আশা ছিল...
আরেকটা দুঃখু হল, সচলের অনেক সুলেখকের থেকে কিছু পাইনি এই বইটায়। দিঙমূঢ়ের পুণ্য আবির্ভাবের আগে পর্যন্ত হয়ত যেটা সচলের দীর্ঘতম পোস্ট ছিল, সেই ভ্রমণকাহিনীর লেখক হিমুভাই ফাঁকি দিয়েছেন। অবশ্য পুরোনো সচলদের অনেকেই তো অ্যাবসেন্ট। নতুন লেখকদের মধ্যে যাঁদের লেখা আমার বড়ই ভাল লাগে, (রম্যের প্রতি আমার পক্ষপাত থাকা একটা কারণ হতে পারে), যেমন সজল, অপছন্দনীয়, ধৈবত, এঁরাও ডুব মেরেছেন। তুলিলেখা আমার বড়ই প্রিয়, তারও দেখা পাইনি। যাঁরা লেখার পাশাপাশি আঁকাতেও চমৎকার, যেমন বুনোদি, সুরদি, তাঁদের অনুরোধ করেছিলাম লেখার সাথে ফোটো না দিয়ে স্কেচ দিতে, আরো জমবে। কিন্তু তাঁরা লেখাটাই দেন নি, তার আবার স্কেচ। গরীবের কথা কেউই কানে নেয় না।
আর সবচেয়ে বড় ব্যাপার, তিনের মধ্যে দুইজন সম্পাদকই এবার আমাদের লেখাবঞ্চিত করেছেন। কর্মব্যস্ত বুনোদিকে মাফ করা গেলেও, এই অপরাধের জন্য নজুভাইবিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলা দরকার। ভ্রমণীয় হাতে নিয়ে আমাদের রাস্তায় নামতে হবে।
শেষে কিছু ফর্মালিটি – ভ্রমণীয়র সম্পাদকদের জন্য কৃতজ্ঞতা, বিশেষ করে প্রচুর খেটেছেন বুনোদি, তাঁর প্রতি। সম্পাদনার সংগ্রামময় জগতে তাঁর জন্য স্বাগতম রইল। অবশ্য ওনার অনেক ভাগ্যই বলতে হবে, এখনও কবিতা-সম্পাদনার ভার কাঁধে চাপে নি...
এটা নিয়ে পোস্টানোর জন্য যাযাদিরও ধন্যবাদ প্রাপ্য, তবে লেখাতেই যথোচিত প্রশংসা করা হয়ে গেছে বলে চেপে গেলাম। আর সব লেখকদের আরেক প্রস্থ ঠ্যাংখাও, দেশবিদেশের নানা জায়গায় বেড়াতে নিয়ে যাবার জন্য।
আচ্ছা, আমার ধুনফুন রিভিউ, যাতে লেখার আলোচনার চেয়ে নিজের গল্পই বেশি গুঁজে দিয়েছি, এখানেই ক্ষান্ত দিই। আমি রান্না চাপাতে যাই (চাইনিজ চিলি চিকেন, হুঁহুঁ), আপনারাও শচীনকত্তার গান শোনেন গিয়ে।
মন্তব্য
সবগুলো লেখাই চমৎকার লেগেছে। বৈচিত্রে ভরপুর এক সংকলন।
রিভিউতে ।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
খেলাপীদের কালো তালিকায় আপনার নামটাও তুলতে যাচ্ছিলাম, তারপর মনে পড়ল আপনি খুব ব্যস্ততা ইত্যাদি কী সব বলে গেছেন ওই পোস্টে...
এই জন্যেই আমি চাইছিলাম বইতে লেখা দেননি বা নিজেরা কোনভাবেই জড়িত ছিলেন না এমন কারো রিভিউ পড়তে! এই যে, দেখাই যাচ্ছে পুরোই পক্ষপাতদুষ্ট একটা রিভিউ!
আর এটা মানেই বা কী?! আমি তো শুধু লিখতেই বলেছিলাম, (না লিখলে ঠ্যাঙ ভাঙার হুমকিটা ছিলো অবশ্য সাথে, তা ঠিক), কিন্তু তীর্থযাত্রা ছাড়া নাকি আর কিছুই লেখার নেই তোমার, সেকথাতো তুমিই বলছিলে, ওটা বুঝি আমার আইডিয়া!
আচ্ছা, তোমার লেখাটার রিভিউ বরং আমিই দেই শাস্তিস্বরূপ! তীর্থ দর্শন নিয়ে তোমার দৃষ্টিকোণ আর প্রাচ্যের প্রাচীণ বিদ্যাপিঠের সাথে পশ্চিমের প্রাচীণ বিদ্যাপিঠের তুলনামূলক আলোচনা আমার চমৎকার লেগেছে। বর্ণনা সব সময়ের মতোই প্রাঞ্জল। আর খাঁটি কৌস্তুভীয়ধারায় হাস্যরসেরো কমতি নেই।
তবে রিভিউ হিসেবে ভালো হয়েছে, আমার অনুভূতিও খুব একটা ব্যতিক্রম নয়। কিছুটা আমি ই-বইয়ের পোস্টে বলেছি। আমার মনে হয়েছে এটা একটা দারুণ বৈচিত্রময় ভ্রমণ সংকলন হয়েছে। প্রতিটা লেখা একটা থেকে অন্যটা ভিন্ন স্বাদের।
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
রিভিউএর জন্য মিশ্রিত
এখানে সুযোগ পেয়ে বলে রাখি
ই বইটা খুব ভালও হয়েছে
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
বড্ড পক্ষপাতদুষ্ট লেখা, নিজেরটা বাদ দিয়ে গেলেন কেন? বললেই হতো একখানা কম্প্রিহেনসিভ রিভিউ লিখতে গিয়ে নিজের সাইটেশন দিতে বাধো বাধো ঠেকছে, আর কেউ ওইটুকু লিখে দিতেন। অবশ্য যাযাবর ব্যাকপ্যাকার কর্মটি করে দিয়েছেন ইতোমধ্যে।
ইয়ে, পাঁচ নম্বর সেকশনের দুই নম্বর প্যারাগ্রাফে আবার আমাকে খোঁচা মারলেন নাকি?
ওহহ তাই বলুন, এমনি কি আর বাগানে গিয়ে ফুল শোঁকার বাই উঠেছে...
খোঁচা কী, লেখা না দেওয়ার অপরাধে তো আপনাকে চড়কের মত শূলবিদ্ধ করা উচিত!
হুম, এইবার কে খোঁচা দিচ্ছে, অ্যাঁ?
আমার যে কী পরিমান লেখা জমছে সচলে... কবে লিখতে পারবো বুঝতে পারতেছি না... সময়ের টানাটানি যাইতেছে খুব
তবে বিশাল একটা ভ্রমণকাহিনী লিখবো অচিরেই...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
হ! আপ্নের খবরই আছে কইলাম! ই-বইতেও লেখা দেন নাই, এই করতে করতে!
তবে টিভি প্রোগ্রাম নিয়ে যে লেখাটার কথা দিয়েছিলেন, ঐটা পোস্ট দিয়েন তাড়াতাড়ি সম্ভব হলে।
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
জলদি বিশাল ভ্রমণকাহিনী না দিলে আপনার তিন মাসের জেল আর সাত দিনের ফাঁসি চাই...
ম্যালা দিন পর আজ একটু পা ছড়িয়ে বসার অবকাশ পেলুম....
'ভ্রমণীয়' আগে পড়ে নেই, তাপ্প্পর তো সমালোচনা।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
লম্ফনরত মন্তব্য!পক্ষপাতদুষ্ট বি-শা-ল রিভিউ এর জন্য ধিক্কার।
আপনাকে অতিথি অবস্থায় মানাচ্ছে না একদম-ই। মডুগণকে বন্ধনী উঠিয়ে দেওয়ার আরজি জানালাম।
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
বলেন কি, সচল হলে শেষটা যদি লাপাত্তা হয়ে যায়? আশপাশে চৈনিক বালিকারও তো কোন অভাব নেই...
ভেটো দিলাম।
হ! জেনেশুনে শীতনিদ্রায় পাঠানো ঠিক না! আমিও ভেটো দিলাম!
আর ভোরে 'ভোট' দিতে ভুলে গেছিলাম, ঐটা এখন দিলাম।
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
নাহ! এভাবে হাচলের এক্সিট ডোরে অবস্থান ধর্মঘট... খ্রাপ, খুব খ্রাপ
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
ভাইডি, একমাত্র আপনিই আমার দুঃখের কথা বোঝেন! ওই দেখেন, প্রতিমন্তব্যে কতিপয় ছেলেমেয়ে আপত্তি জুড়েছে... ওরা আমার চোখের ঘুম কাইড়া নিতে চায়!
একটা কৈফিয়ত, প্রচ্ছদ ধারনা করা হয়েছিলো নজরুল ভাই করবেন। শেষ বেলায় এটা ছাড়া গতি ছিলোনা।
তুলি'দির নামটা ঠিক করে দেন কিল খাবার আগেই।
...........................
Every Picture Tells a Story
সময় যে একটা বড় নিয়ন্ত্রক ছিল সেটা তো বুঝতেই পারছি... তবে কী জানেন, লোচনবক্সী বলে কথা...
ভুল কী হল? তুলিদির লেখা = তুলিলেখা!
...........................
Every Picture Tells a Story
নিজে চমৎকার একটা লেখা দিয়ে তারপর রিভিউর জন্য কৌস্তুভের অবশ্যই বড় একটা ধন্যবাদ প্রাপ্য। মাত্র কয়দিনের চেষ্টায় যারা লেখাগুলি একত্রে করে সময়মত বইটা প্রকাশ করেছে, সবাইকে ধন্যবাদ।
আমার প্রত্যাশা ছিল রিভিউটা তৃতীয় কেউ লেখবে... বিশেষ করে অমিত আহমেদ।
পুরো বইটা পড়ার সময় করে উঠতে পারিনি এখনো। শেষ করতে পারলে একটা পোস্ট দিতাম নিশ্চই।
এ লেখাটিও তাই পড়লাম না - বই শেষ করে পড়বো।
আমিও তো সেই আশাতেই ছিলাম, যাযাদি আমার হয়ে কিছু ফাইটও দিয়েছিল, কিন্তু দুই সম্পাদকের চাপে আমাকে লিখতেই হল... তা ভালো রিভিউ নিজেই একটা সাহিত্য হয়ে ওঠে, অমন একটা জিনিস নিশ্চয়ই সচলের লেখকদের কারুর থেকে পাব সামনে।
পক্ষপাতদুষ্ট
...........................
Every Picture Tells a Story
সাক্ষী হয়ে ছিলাম আমি। দুই সম্পাদকের একজনের 'চাইপা ধরলাম' একজনের 'ঠাইসা ধরলাম' জাতীয় ...... শব্দ ব্যাবহারের সাক্ষী ছিলাম আমি।
আসেন, বুখে আসেন!
...........................
Every Picture Tells a Story
বা: বা: আপনারে একটা গুড দিলাম৷
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'
চমৎকার, শুধু নিজের প্রতিই অবিচার করে গেলেন!
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
কী আর বলি, সচলজুড়ে শুধুই অবিচার...
ভুলে গেছিলাম...আমার তারকাখচিত ভোটটা...
পুরো বইটা পড়া হয়নি এখনো, রিভিউ পড়ে ফেলেছি, এখন পুরোটা ফরজ হলো।
পড়ার জন্য ধন্যবাদ
এখনো আয়েশ করে বইটা পড়তে পাল্লাম না ভাইটি, পুস্তকালোচনাই পড়ছি তাই...
যাক, এহেন রিভিউর পরে পড়ে ফেলতে হয় মনয় ই-বইটা।
কৌস্ত্তভ ভাইয়া, আপনি যখন লেখালেখিটা পারেনই না তবে সে চেষ্টায় যাওয়া কেনো রে ভাই! কী এভাবে বললে খুব ভালো হবে না? বিনয় থাকা ভালো, কিন্তু আপনার বিনয় দেখে রাগে গা জ্বালা করছে জানেন 'ভ্রমণীয়' থেকে একটামাত্র লেখা পড়েছি। পুরাটা পড়ে নেবো পরে। আপনার রিভিউটা আমার মতে দশে আট পাবার যোগ্যতা রাখে( ই-বই পুরোটা না পড়েই মন্তব্যটা করলাম, কারণ আপনার সচেতন লেখকচক্ষুটার সাথে খুব অল্প হলেও পরিচিত....)। কিছু নম্বর কাটালাম নিজেরটা নিয়ে ধুনফুন করবার জন্য ই-বইটা সত্যি সুন্দর হয়েছে। এর সাথে জড়িত সবার জন্য আবারও ধন্যবাদ। শুভেচ্ছা জানবেন।
ভালো তো হবেই, আপনারা যদি সবাই এই কথাটা যাযাদিকে বোঝাতে পারেন তাহলে তো আমি রেহাই পাই...
ওই চেষ্টাতেও যাওয়াও তো ওই জন্যই - নিজের একটিমাত্র অক্ষত শ্রীচরণকে বাঁচাতে! সহানুভূতিশীল পাঠিকাকে অনেক ধন্যবাদ।
তোমার রিভিউ পড়ে নামায় ফেললাম। পড়ুম।
আমি সামনে ব্লগেই লেখার আশা রাখি।
বাই দ্য ওয়ে, তুমি আমার ইন্ডিয়া সিরিজটা পড়সিলা?
না, পড়ি নাই বোধহয়। লিঙ্কাও।
এমনিতেই ফাঁকিবাজ-তালিকায় তুমিও ঢুকে পড়তে। অফিসের চাপে মাথা খারাপ ইত্যাদি বিজ্ঞপ্তি অনেকবার দিয়েছ সম্প্রতি তাই ছাইড়া দিলাম।
নতুন মন্তব্য করুন