সম্প্রতি এক পরিচিতজন আমাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের) একজন শিক্ষক শ্রী ফাহমিদুল হকের একটি গবেষণার দিকে নির্দেশিত করেন, যেটি পড়ে আমি অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হই, কারণ আমাদের পেশায় প্রচলিত অভিযোগগুলি তাতেও প্রকট থাকতে দেখি। সেই বিষয়েই এই আলোচনা।
(১)
আমাকে তিনি বলেন, আপনি এই পেশায় যখন, বাংলা ব্লগে লেখালিখিরও চেষ্টায় আছেন, তখন বাংলা ব্লগের ইতিহাসে এই প্রথম গবেষণা-প্রবন্ধটি না দেখলে চলে? আমি আমার অজ্ঞতা স্বীকার করে লিঙ্ক চাই। ব্লগের মত একটি দ্রুত উঠে আসা গণসংযোগ-মাধ্যমকে নিয়ে, অন্তত পশ্চিমে, সোশাল সাইন্স বিভাগে খুবই আগ্রহ ইদানিং। বাংলা ব্লগের মত স্বল্প-বিশ্লেষিত কিন্তু বহুল-ব্যবহৃত মাধ্যমে গবেষণা খুবই আকর্ষক ফলাফল দিতে পারে। আমি খুবই উৎসাহী হই। বিশেষ করে ফলিত পরিসংখ্যানে আমার আগ্রহ থেকে।
ওই প্রবন্ধটির লেখক যদি ‘বাংলা ব্লগ’ বলতে বাংলাদেশী কমিউনিটি ব্লগকে বুঝিয়ে থাকেন, তাহলে সেটিকে বাংলা ব্লগের উপর করা প্রথম বিশ্লেষণ বলা যেতেই পারে সম্ভবত। তবে গবেষণা বলতে এখনও একটু সঙ্কোচ থাকবে, কারণ, পিয়ার-রিভিউ করা জার্নালে প্রকাশিত না হলে তাকে বর্তমান অ্যাকাডেমিক সমাজে গবেষণার স্বীকৃতি দেওয়া হয় না। ওই ব্লগ-পোস্টটিকে তাই সেই স্বীকৃতি দিতে কিছু দেরি আছে। এমন কি, স্থানীয়ভাবে প্রকাশিত কোনো বিদ্যাচর্চা-সংক্রান্ত পত্রিকায় মুদ্রিত করলেও তাকে সে নাম দেওয়া যায় না; জাতীয় বা আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশের প্রয়োজন। অবশ্য, ফলিত বিষয়ের জার্নালগুলির যে কী ‘দুরাবস্থা’, পরিসংখ্যানের পদ্ধতিগত ত্রুটি যে সেগুলিতে প্রায়ই এড়িয়ে যাওয়া হয়, সে কথাও আমার লেখায় এনেছিলাম দুঃখের সঙ্গেই।
[এই আলোচনাটি লেখার পর দেখলাম, পোস্টটির লেখক শ্রী হক তাঁদের প্রকাশিত যোগাযোগ নামের একটি পত্রিকার জানুয়ারি - ২০১১ সংখ্যায় একটি প্রবন্ধ প্রকাশ করেছেন, এই জরিপটিকে ভিত্তি করে। আমার মূল আলোচনা অবশ্য সরাসরি তাঁর ব্লগ হিসাবে লেখা প্রবন্ধটিকে নিয়েই, মুদ্রিত প্রবন্ধটিকে নিয়ে নয়। সেটির প্রসঙ্গ এসেছে লেখার শেষে।]
(২)
শ্রী হকের পোস্টটি পড়ে আমার এই ধারণা হয় যে, এটি একটি সম্পূর্ণই গুণগত (কোয়ালিটেটিভ) সমীক্ষা। কয়েকটি সংখ্যা উপস্থাপিত করা হলেও, পুরো কাজটির কোথাওই পরিসংখ্যান-আলোচনার কোনো নিয়মনীতি রাখার চেষ্টা করা হয় নি। না জরিপটির নির্মাণে, না সেটির বিশ্লেষণে, না সেটির থেকে সিদ্ধান্ত গ্রহণে। আমার অনুমান হয়, হয়ত লেখক সজ্ঞানেই সেসবের থেকে দূরে থাকতে চেয়েছেন। একটি মতামত-আলোচনা হিসাবেই রাখতে চেয়েছেন এটিকে। একটা উদাহরণ দিই।
মনে করুন, লিবিয়াতে গদ্দাফির সেনা বেনগাজি শহরেতে বোমা ফেলল। অনেক ক্ষয়ক্ষতি-প্রাণহানি। রাষ্ট্রসংঘের কর্মীরা গেলেন, ক্ষয়ক্ষতির অনুমান করে ত্রাণ পাঠাতে হবে। তাঁরা ঘুরে ঘুরে শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে তথ্য সংগ্রহ করলেন, সেসব একত্রিত করে মোট প্রাণহানির অনুমান করলেন। ওদিকে বিবিসি’র সাংবাদিকেরা গেলেন বোমাবিধ্বস্ত কয়েকটি বাড়িতে, তাদের সাক্ষাৎকার নিলেন, দুর্দশার কথা আলোচনা করলেন, অধিবাসীরাও অভিযোগ করল, আমাদের পরিবারের চারজন লোকে নিহত হয়েছে। প্রথম পদ্ধতিটি পরিমাণগত (কোয়ান্টিটেটিভ), দ্বিতীয়টি গুণগত (কোয়ালিটেটিভ)। দেখবেন, শেষ পর্যন্ত কিন্তু সাংবাদিকদেরও তথ্যের কথা বলতেই হয়, “সরকারি সূত্রে মৃতের সংখ্যা তিনশ, বেসরকারি মতে পাঁচশ ছাড়িয়েছে...”।
আমার তখন মনে হয়, কিছু সংখ্যা উল্লেখ করা সত্ত্বেও, যদি লেখক সজ্ঞানেই পরিসংখ্যান-নীতি এড়িয়ে গিয়ে এটাকে কেবল আলোচনা-প্রবন্ধ হিসাবেই রাখতে চান (লেখক সাংবাদিকতা বিভাগে আছেন দেখে আরো সে কথা মনে হয়), তাহলে অত্যন্ত বিরক্ত হলেও, আমার বেশী কিছু বলার থাকে না। গবেষণা হিসাবে এটা আদৌ দৃঢ় হয় না, কিন্তু সেটা তাঁর এবং পাঠকের অভিরুচির বিষয়।
(৩)
কিন্তু আমি আমার অনুমান পরিত্যাগ করতে বাধ্য হই, যখন নিচের মন্তব্যগুলি পড়ি। সেখানে লেখক বলেন, “কোয়ান্টেটিভ রিসার্চে স্যাম্পলিং বলে একটা বিষয় আছে। ... এটা গবেষণা ও পরিসংখ্যানের খুব প্রাথমিক স্বীকৃত একটি পন্থা। ... আমার পদ্ধতিটাও দৈবচয়ন ছিল...।” অর্থাৎ তাঁর এই জরিপ-বিশ্লেষণটি পরিমাণগত হিসাবেই তিনি দেখছেন। অন্যত্রও পাই, “তবে এই সার্ভেটা পরিমাণগত, তা করা হয়েছে মূল গুণগত গবেষণার সমর্থনে।”
(আমি বুঝলাম, আমার ধারণা ভ্রান্ত হওয়ার কারণ এই, যে তিনি মূল পোস্টে তাঁর জরিপ ও বিশ্লেষণ-পদ্ধতি তেমন ব্যাখ্যাই করেন নি। বস্তুত, তাঁর অনেক ব্যাখ্যাই বেশ অষ্পষ্ট, যেমন বহু পাঠকই প্রশ্ন তুলেছেন, অনুপাতগুলি যোগ করে ১০০% ছাড়িয়ে যাওয়া নিয়ে – পোস্টে এ কথা স্পষ্টভাবে বলে দেওয়া ছিল না, যে কিছু প্রশ্নে একাধিক উত্তর দেওয়া নিয়মসঙ্গত ছিল।)
যেহেতু তিনি এই কাজটিকে পরিমাণগত হিসাবে দেখছেন, অতএব পরিসংখ্যানের নিয়মনীতির প্রশ্ন এসেই পড়ে, এরপর এই বিশ্লেষণটি তিনি যে গবেষণায় ব্যবহার করবেন সেটি গুণগতই হোক আর পরিমাণগত। এবং সেক্ষেত্রে, গত পরিচ্ছেদে যেমন উল্লেখ করেছি, এটি তিনটি স্তরেই সমস্যাগ্রস্ত। (কয়েকটি প্রসঙ্গ ওখানে মন্তব্যে গৌতম নামের এক ব্লগারও তুলেছেন।) একে একে বলি।
(৪)
প্রথমত, এটি একটি জরিপ। এইভাবে সেটি পরিচালিত হয়েছে – “আমি ব্লগে পোস্ট দিই ১০টি প্রশ্নসহকারে, দুইটি ব্লগ কমিউনিটিতে। এতে যারা আকৃষ্ট হয়েছেন, প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন।” বা অন্যত্র বলেছেন, “...পোস্ট দিয়েছি, তা স্টিকি হয়েছে; যেসব ব্লগাররা উৎসাহিত হয়েছেন, জরিপে অংশ নিয়েছেন।”
এর অর্থ, এটি সম্পূর্ণভাবেই ভলান্টিয়ার-নির্ভর। এই ধরনের সমীক্ষা, সোশাল সাইন্সে বহুল-ব্যবহৃত হলেও, পরিসংখ্যান সংক্রান্ত কাজে তা প্রযুক্ত হলে, সেটি একটি অত্যন্ত সমালোচিত প্রথা। তথ্যের মানের দিক থেকে তা প্রায়শই এত নিকৃষ্ট হয়, যে একে বলাই হয়ে থাকে ‘আনসায়েন্টিফিক স্টাডি’। এবং যখনই এটি ব্যবহৃত হয়, পাঠকেরা প্রশ্ন করেন, এমন অবৈজ্ঞানিক জরিপ করারই বা কী প্রয়োজন ছিল, একটু পরিশ্রম করে একটি বিজ্ঞানসম্মত জরিপ পরিকল্পনা করলেই হত!
এক্সিট পোল-এ এটি ব্যবহৃত হয় প্রায়ই, এবং তা যে কত ভ্রান্তিজনক সিদ্ধান্তের জন্ম দিতে পারে, তার একটি বহুচর্চিত উদাহরণ পাবেন এখানে।
বস্তুত, লেখক যতই র্যান্ডম স্যাম্পলিং অর্থাৎ দৈবচয়ন করেছেন বলে দাবি করুন, বাস্তবে এটি আদৌ তা নয়। (পোস্টের মন্তব্যে যেমন, তেমনই সে দাবি তাঁর মুদ্রিত প্রবন্ধটিতেও করা হয়েছে।) ভলান্টিয়ার স্যামপ্লিং-কে পরিসংখ্যানের পরিভাষায় বলাই হয় নন-র্যান্ডম বা নন-প্রবাবিলিটি স্যামপ্লিং।
দৈবচয়ন বলা হয় তখনই, যখন গবেষক সমগ্র সিস্টেম’টিকে নিরীক্ষণ করে চয়নের অনিশ্চয়তা’কে একটা গাণিতিক প্রতিরূপ (মডেল) দিতে পারেন, এবং চয়নের কাজটা সেই অনুসারেই হয়। যেমন, আমার কাছে যদি একটি অঞ্চলের প্রতিটি বাসিন্দার নামের তালিকা থাকে, এবং সেখান থেকে আমার সার্ভেতে কাদের অন্তর্ভুক্ত করব তা পুরোপুরি র্যান্ডম’ভাবে নির্ধারিত করি, যেমন লটারি, তাহলেই কেবল তা দৈবচয়ন।
সেক্ষেত্রে মূল বিষয়টি হল, গবেষক নিজের পরিকল্পনার মাধ্যমে অনিশ্চয়তা’কে নিয়ন্ত্রিত করছেন। ফলে তা পরিসংখ্যানের সূত্র অনুযায়ী বিশ্লেষণ করা সম্ভব হচ্ছে। অন্যদিকে ভলান্টিয়ার-নির্ভর থাকলে পুরো বিষয়টাই আর গবেষকের হাতে নেই। যাঁরা আগ্রহী হয়ে অংশ নিচ্ছেন, ব্যাপারটা সম্পূর্ণই তাঁদের ইচ্ছাধীন। ফলে অনিশ্চয়তা বা বিচ্যুতিকে প্রতিরূপ দেওয়া যায় না, তাই কোনো রকম পরিসংখ্যান-বিশ্লেষণও সম্ভব নয়। আদৌ নয়। কেউ করতে চাইলে তা ভুল করছেন।
(৫)
গবেষক এখানে টেকনোরাটি-র করা একটি জরিপের উল্লেখ করে বলেছেন, “এটাই ব্লগপরিসংখ্যান জানার ক্ষেত্রে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য গবেষণা।” তারা দৈবচয়ন পদ্ধতি ব্যবহার করেছে, এবং তাঁর দাবি তিনিও তাই করেছেন, এবং দুজনের জরিপ-পদ্ধতি অনুরূপ। দুঃখজনকভাবে, এই দাবিটিও ভ্রান্ত।
টেকনোরাটি নিজেদের পদ্ধতির সম্পর্কে জানিয়েছে, “We emailed a survey invitation to a random sample of Technorati registered users around the world.” অর্থাৎ, তাদের নিবন্ধিত ব্যবহারকারীদের থেকে একটি অংশকে র্যান্ডমভাবে নির্বাচিত করে তাদেরই প্রশ্ন পাঠানো হয়েছে; যার ইচ্ছা তাকেই উত্তরদানের সুযোগ দেওয়া হয়নি। এইটিই বাস্তবে দৈবচয়ন – ভলান্টিয়ার জরিপের পদ্ধতির সঙ্গে স্পষ্টতই খুবই ভিন্ন। স্পষ্টতই, লেখক দৈবচয়ন পদ্ধতিটি অনুধাবন করতে পারেন নি, কারণ এক স্থানে তিনি প্রতিপ্রশ্ন করেছেন, “এই যে অনলাইনে সার্ভে, যার যার ভালো লেগেছে অংশ নিয়েছেন, একে দৈবচয়ন না বলে কী বলা যেতো?” সরল উত্তর, ভলান্টিয়ার স্যামপ্লিং!
(৬)
এই পদ্ধতির একাধিক সমস্যার মধ্যে এটাও একটি, যে কত জন অংশ নেবেন, তাও আর গবেষকের নিয়ন্ত্রণে নেই। অথচ, একটি পরিসংখ্যান-গবেষণা পরিকল্পনার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ধাপই এই, যে পরীক্ষায় কত জন অংশগ্রহণকারী নেওয়া হবে তা নির্ধারণ করা। এর কারণ, অনিশ্চয়তা বা বিচ্যুতির পরিমাণ লোকসংখ্যার উপর খুবই নির্ভরশীল।
বিচ্যুতির সীমা (মার্জিন অফ এরর) বলে একটি সংখ্যা পরিমাপ করা যায়, যা চলক অনুমিতির (এস্টিমেশন) ক্ষেত্রে খুব প্রয়োজনীয়। লোকসংখ্যা বাড়লে স্বভাবতই এটি কমে। যদি মূল জনগোষ্ঠীর জনসংখ্যা খুব বড় হয় (যেমন টেকনোরাটিতে কয়েক লক্ষ, বাংলা বড় ব্লগগুলিতে বহু হাজার), তাহলে জরিপের লোকসংখ্যা ও বিচ্যুতির সীমার মধ্যে সরল সম্পর্ক টানা সম্ভব।
টেকনোরাটির ২০০৯ সালের জরিপে ২৮২৮ জন রয়েছেন, ফলে বিচ্যুতি (এরর)-এর মান দাঁড়ায় ১.৮%। অর্থাৎ তারা যদি কোনো ঘটনার হার ৩০% বলে নিরুপণ করে, তাহলে মোটামুটিভাবে তা ২৮.২% থেকে ৩১.৮% এর মধ্যে থাকবে। আর এক্ষেত্রে, মাত্র ৯০ জন ব্লগারের জরিপে এই বিচ্যুতির মান দাঁড়ায় ১০.৩%, অর্থাৎ ১৯.৭% থেকে ৪০.৩% - এক বিশাল অনিশ্চিত অঞ্চল।
কোনো প্রতিষ্ঠিত জার্নালই এত বড় অনিশ্চয়তা গ্রহণ করতে চাইবে না। এই জন্যই, জরিপ বা সমীক্ষায় লোকসংখ্যা অন্তত ৩০০ রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। কিন্তু যেহেতু এ সংক্রান্ত কোনো পরিকল্পনাই জরিপের শুরুতে করা হয় নি, এবং গবেষকের ভলান্টিয়ার-সংখ্যার উপরে কোনো নিয়ন্ত্রণই নেই, তাই এটি সংশোধনও তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়।
(লেখকের সমর্থনে পোস্টের মন্তব্যে মুনীর উদ্দীন শামীম বলেছেন: “এটি একটি গুণগত গবেষণা। সেখানে নমুনার আকার খুব বেশি বড় প্রশ্ন নয়। আর যদি তাকে বড় প্রশ্ন আকারে দেখি তাহলে ৯০ খুব কম নয়।” আমরা দেখতেই পাচ্ছি, তাঁর দুই দিকের যুক্তিই ভ্রান্ত।)
অবশ্য, এই বিচ্যুতির মান তো লেখায় পরিমাপ করা হয়নি, এবং ফলিত বিজ্ঞানের রিভিউয়াররা কষ্ট করে সেটি পরিমাপ করবেন কি না, তাও নিশ্চিত করে বলা যায় না। সেক্ষেত্রে, তাঁরা এটি খেয়াল না-ও করতে পারেন।
আর মূল কথা, দৈবচয়নের ক্ষেত্রে না হয় লোকসংখ্যা ৯০ যথেষ্ট নয়। ভলান্টিয়ার স্যামপ্লিং-এর ক্ষেত্রে তো কোনো পরিসংখ্যান-প্রক্রিয়াই ঠিকভাবে প্রয়োগ করা যায় না, আগেই দেখেছি!
(৭)
তথ্য থেকে অনুসিদ্ধান্তে আসার প্রক্রিয়াকে বলা হয় (স্ট্যাটিস্টিকাল) ইনফারেন্স। তারও কিছু নির্দিষ্ট পরিসংখ্যানগত পদ্ধতি আছে। লেখক যখন তাঁর তথ্যের থেকে কোনো সিদ্ধান্ত টেনেছেন, তখন সেগুলি মোটেই সেই নীতি মেনে হয় নি। উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, “ব্লগিং শুরু করার পূর্বে লেখালেখির অভিজ্ঞতা ছিল কিনা?” এই প্রশ্নে ৬১% ব্লগার হ্যাঁ এবং ৩৯% না বলেছেন। এতেই তিনি সরাসরি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, “লেখকরাই ব্লগার হয়েছেন।” অথচ, যদি যথার্থতা যাচাই (টেস্টিং) করা হয়, তাহলে এই বাক্যটি সমর্থিত হয় না। অন্তত ৯৪% ব্লগারকে হ্যাঁ বলতে হত সেক্ষেত্রে।
(৮)
লেখক অবশ্য নানা স্থানেই দাবি করেছেন, তিনি পরিসংখ্যানগত এসব ‘জটিলতা’র মধ্যে না গিয়ে কিছু গুণগত গবেষণা করতে চেয়েছেন। এরকম সিদ্ধান্ত টানার স্বপক্ষে তিনি বলেছেন, “ব্লগসংস্কৃতি বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে গবেষকের পর্যবেক্ষণই প্রাধান্য পাবে।” কিন্তু আফসোস, গবেষকের নিজস্ব মত কেবল কিছুদূর অবধিই প্রযোজ্য হতে পারে, যদি তথ্য তার বিপক্ষে যায় তাহলেও নয়। নাহলে, সংখ্যা-পরিমাণ ইত্যাদি পরিত্যাগ করে, অন্যত্র যেমন কিছু ব্লগারের লিখিত মতামত আলোচনা করেছেন, তেমনই করা যেতে পারে বড়জোর।
গবেষকের নিজস্ব মতামতকেই প্রাধান্য দেওয়ার আরো বহু উদাহরণ দেওয়া যায়। যেমন, অধিকাংশ সুনির্মিত জরিপেই একটি প্রশ্নের উত্তরে একাধিক সম্ভাব্য উত্তর দেওয়া থাকে, উত্তরকর্তা এক বা একাধিক উত্তর বেছে নেন। কিন্তু এই জরিপটিতে কিছু প্রশ্নে তা না করে সাধারণভাবে মত চাওয়া হয়েছে, যা থেকে গবেষক নিজে উত্তর হিসাবে এক বা একাধিক কী-ওয়ার্ড বেছে নিচ্ছেন। একে বলা হয় ‘কনটেন্ট এক্সট্রাকশন’, এবং এর পদ্ধতি নিয়েও দ্বিমত প্রায়শই থাকে (যে কারণে এটি গবেষণার একটি আকর্ষণীয় বিষয়)। যেমন দেখুন, “আপনি ব্লগিং কেন করেন?” এর উত্তরে যখন কেউ ব্যঙ্গ করে বলছেন, “ব্লগারদের জ্ঞান দিতে”, তখন কি তাকে স্রেফ “অন্যান্য” বলে ধরে নিলেই চলবে? নাকি, সঠিকভাবে উত্তর দেওয়া হয়নি বলে উত্তরটি বাতিল (মিসিং ডেটা) ধরা উচিত?
আবার “নিক সংস্কৃতি”-র ক্ষেত্রে তো ব্লগারদের কোনো প্রশ্নই করা হয় নি – তাঁদের নিক থেকে গবেষক কিছু একটা ‘অনুমান’ করে নিয়েছেন। এতে যে বিশাল ভ্রান্তির সম্ভাবনা থাকে সে কথা উঠলে তিনি নিজেই তা স্বীকারও করে নিয়েছেন, “এইটায় একটু বিচ্যুতি থাকার সম্ভাবনা আছে।” অবশ্য তারপরেই তা এড়িয়ে গিয়েছেন এই বলে, যে “যাহোক এটা তো আরেক গবেষণার বিষয়।” তাহলে, গবেষণা ছাড়াই এইসব বিষয়গুলি ব্যবহার করা কি সমীচীন?
(৯)
যদিও এটি মূলত শ্রী হকের ব্লগ-পোস্টটিরই আলোচনা, ওনার মুদ্রিত প্রবন্ধটিরও দুয়েকটি সমস্যা – নিজস্ব মতামতকেই প্রাধান্য দেওয়া নিয়েই – এই আলোচনার সঙ্গে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক বিধায় তা যোগ করছি।
উনি সেখানে বারবারই বলেছেন, “বাংলাভাষীয়দের কাছে ব্লগ মানেই ব্লগ কমিউনিটি।” এই কথাটি সমর্থন করার মত তথ্য তিনি কোথায় পেলেন, তার কোনো উল্লেখ নেই লেখাটিতে। ওনার জরিপেও এই প্রশ্নটি করা হয় নি। তবে, বাংলাদেশের কয়েক লাখ ইন্টারনেট-ব্যবহারকারীর অধিকাংশেরই যে এই অভিমত, তার সংবাদ তিনি কী ভাবে পেলেন? তাহলে কী অনুমান করতে হবে, উনি এ বিষয়ে নিজের (এবং হয়ত পরিচত কয়েক জন ব্লগারের) মন্তব্যকেই সাধারণ সত্য হিসাবে পাঠকদের বলে দিচ্ছেন?
তিনি আরো বলেছেন, “ভারতীয় বাঙালিদের কোনো ব্লগ কমিউনিটি নেই, ভারতীয় বাঙালিরা এসব বাংলাদেশি ব্লগ কমিউনিটিতেই ব্লগিং করে থাকেন।” এটি আমার আলোচিত অন্য বিষয়গুলির মত পরিসংখ্যান-সংক্রান্ত ভ্রান্তি নয়, তবুও একটি দৃষ্টিকটু তথ্যবিচ্যুতি। পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিদের জন্যও বাংলায় আলাপ-আলোচনা করার মত বেশ কয়েকটি কমিউনিটি আছে যা যথেষ্ট পরিচিত – গুরুচন্ডালির মত একটি বেশ পুরোনো এবং এখনও সক্রিয় ও জনপ্রিয় সাইট, যেখানে বহু বাংলাদেশি লেখকও লিখে থাকেন – তার সম্পর্কেও কি উনি একটুও অবগত নন?
এই প্রসঙ্গে তাই গবেষকের নিজস্ব মতকে প্রাধান্য দেওয়ার বিষয়ে মজার ছলেই একটি কার্টুন সংযোজিত করলাম –
(১০)
এটি প্রামাণ্য গবেষণা হিসাবে গৃহীত হলে, এর পর প্রথাগতভাবেই প্রয়াস হবে এটিতে প্রাপ্ত অনুসিদ্ধান্তগুলিকে সাধারণীকরণ (জেনারেলাইজ) করার। কিন্তু আমরা দেখলাম, যে অনুসিদ্ধান্তগুলি বস্তুত পরিসংখ্যান-পদ্ধতি অনুসারী নয়, ফলে সেগুলির যথার্থতা নিয়েই প্রশ্ন উঠতে পারে।
তা ছাড়াও, এটিই সবচেয়ে বড় সমস্যা, যে ভলান্টিয়ার স্যামপ্লিং যেহেতু ‘আনসায়েন্টিফিক স্টাডি’ তাই এর সিদ্ধান্তগুলিকে মোটেই প্রসারিত করা যায় না। যদি মনে করি প্রথম আলো ব্লগের ৯০ জন ব্লগারকে নিয়ে এই জরিপটি করা হয়, তাহলে সমগ্র প্রথম আলো ব্লগ তো দূরস্থান, ওই ব্লগেরই অন্য যে কোনো – ৯১তম – ব্লগারের ক্ষেত্রেও সেগুলি প্রযোজ্য নয়।
এরপর যদি সেগুলি, এই জরিপ পোস্ট হয়নি এমন একটি ব্লগ, যেমন আমারব্লগের ক্ষেত্রেও গ্রহণ করার চেষ্টা হয়, তাহলে সৈয়দ মুজতবা আলীর ভাষা ধার করে বলতে হয়, সেই প্রচেষ্টা বন্ধ্যাগমনের ন্যয় নিষ্ফল হবে।
লেখক হয়ত বলতে পারেন, আমারব্লগের কয়েকজন লেখক কী আর এই দুটি ব্লগেও যাতায়াত করেন না, তাঁরা কী এই জরিপেও অংশগ্রহণ করেন নি? অংশগ্রহণকারীদের তালিকা ঘেঁটে হয়ত কয়েকজনকে পাওয়াও যাবে। কিন্তু ভলান্টিয়ার স্যামপ্লিং-এর ক্ষেত্রে যা সম্পূর্ণ অজ্ঞাত – ভলান্টিয়ারদের গুণগত ও সংখ্যাগত চরিত্র মোট জনগোষ্ঠীর চরিত্রের অনুরূপ কি না – এক্ষেত্রেও সেই একই প্রশ্ন। এবং সেই একই কারণেই, উত্তর জানা না থাকায় পরিসংখ্যান-নীতি-অনুসারে কোনো সিদ্ধান্তই নেওয়া যায় না। আর কথা আসবেই, যদি অন্যান্য ব্লগের প্রতি সাধারণীকরণ করার ইচ্ছা থাকে, তাহলে প্রারম্ভিকভাবে জরিপেই কেন এগুলি জেনে নেওয়া হল না, যে কত শতাংশ লোক কোন কোন ব্লগে লেখেন?
(১১)
সংক্ষেপে, পরিসংখ্যানের নীতি মেনে পরিকল্পনা, বিশ্লেষণ বা অনুসিদ্ধান্ত কোনোটাই না হওয়ায় আমরা এই জরিপটিকে একটি সুষ্ঠু সংখ্যাগত গবেষণা বলে গ্রহণ করতে পারি না, এবং যে গুণগত গবেষণা এটিকে অংশ হিসাবে নেয় সেটিকেও একই রকম নিরর্থক মনে হতে বাধ্য। ফিউশন ফাইভের মন্তব্য – “এই প্রথম ব্লগ নিয়ে পেশাদারিমানের একটি জরিপের ফলাফল পেয়ে ভালো লাগল।” – এর সঙ্গে পুরোপুরিই দ্বিমত করতে হচ্ছে।
আরো বড় কথা, একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক এবং গবেষকের থেকে এই ধরনের গবেষণা নিতান্তই দুঃখজনক। তিনি বলেছেন, “গবেষণাপত্রের ক্ষেত্রে যেটা হয়, লেখার আগে প্রচুর পড়তে হয়, তাতে অনেক সময় চলে যায়।” আশা করব, পরবর্তী জরিপের আগে তিনি পরিসংখ্যান নিয়েও কিছু পড়ে নেবেন, এবং সবথেকে ভালো হয় যদি পরিসংখ্যান বিভাগেরই কারোর সহায়তা গ্রহণ করেন।
কিন্তু লেখক যে এই গবেষণার বিষয়ে বেশ আস্থাবান, তা তাঁর এই কথাতে বোঝা যায়, “আর ইন্টারন্যাশনাল জার্নালকে সামলানোর বিষয়টা আমার ওপরেই ছেড়ে দিন।” তা হয়ত সত্যি যে, কিছু জার্নাল এই ত্রুটিপূর্ণ বিশ্লেষণও গ্রহণ করে নিতে পারে; তাদের পরিসংখ্যান বিষয়ে নিষ্ঠা নিয়ে আমাদের যে আস্থা নেই তা আগেই বলেছি। সব গবেষকদের কাছেই আমাদের অনুরোধ, আমরা আস্থা রাখতে পারি এমন সুষ্ঠু বিশ্লেষণই করুন, প্রয়োজনে কোনো স্ট্যাটিস্টিশিয়ানের সাহায্য নিন। না হলে, ভ্রান্তভাবে পরিসংখ্যান ব্যবহার করা থেকে বিরতই থাকুন দয়া করে – “ছুঁয়োনা ছুঁয়োনা বঁধু, ওইখানে থাকো...”
মন্তব্য
ড. ফাহমিদুল হক ভবিষ্যতে জরিপনির্ভর গবেষণা করার আগে কিছু পরিসংখ্যান শিখবেন, এই কামনা করছি। পরিসংখ্যান না জেনে গবেষণা করলে সেটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যে অপমানকর, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের জন্যে তো বটেই। সেইসাথে প্রাচ্যের অক্সফোর্ডখ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুপ্রাচীন পরিসংখ্যান বিভাগটিরও মর্যাদাহানি ঘটে, যদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরই অন্য কোনো বিভাগের সহকারী অধ্যাপক পরিসংখ্যান সম্পর্কে এমন ণত্ব-ষত্বজ্ঞানহীন থেকে গিয়ে গবেষণার প্রচেষ্টায় লিপ্ত হন।
পরিসংখ্যান বিভাগের মেধাবী কোনো ছাত্রের কাছে প্রাইভেট কোচিংও করতে পারেন ড. হক। এতে লজ্জার কিছু নেই। গবেষণার জন্য ইতিহাসবিদ তপন রায়চৌধুরী হল্যাণ্ডের এক গির্জার পাদ্রির কাছে মধ্যযুগীয় ডাচ ভাষা শিখেছিলেন কয়েক বছর ধরে [বাঙালনামা, তপন রায়চৌধুরী]। ড. হক চেষ্টা করলে এক বছরের মধ্যেই হয়তো পরিসংখ্যানে সুপণ্ডিত হয়ে উঠবেন, ব্লগ নিয়ে দারুণ সব গবেষণা উপহার দেবেন আমাদের। এক বছরের মধ্যে না পারলে, দুই বছর, তিন বছর লাগবে। কিন্তু আমি আশা রাখি, তিনি পারবেন, একদিন পরিসংখ্যানে শিক্ষিত হয়ে বাংলা ব্লগ নিয়ে সত্যিকারের গবেষণা করতে পারবেন।
খুব সহমত।
এহহে..."জ্ঞানীগুণী"রা কি সাধে আর সচলায়তনকে এড়িয়ে থাকেন? দিলেন এত সুন্দর একটা গবেষণাকর্মের বারোটা বাজিয়ে, কাজ কর্ম কিছু নেই নাকি? চৈনিক বালিকারা কি ফ্যাকাল্টি ছেড়ে চলে গেছে? গুরু পেট ব্যথায় শয্যাশায়ী?
কোথায় একটা ভালো কাজকে একটুখানি প্রশংসা করবেন, তার বদলে খালি সমালোচনা। কেউ আপনাকে বলেনি সবকিছু "অপ্টিমিস্টিক" দৃষ্টিতে দেখতে হয়? এই জন্যই আমাদের কিছু হয় না।
(নেহায়েত কৃতজ্ঞতাবশতঃ পোস্টে পাঁচতারা + + দিলাম - তবে কাউকে বলবেন না দয়া করে, একটু সংস্কৃতি সচেতন হওয়ার চেষ্টায় আছি। লোকজন জানলে সমস্যা হতে পারে)
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
নামী মানুষদের থেকেই তো আমাদের বেশি আশা থাকে, যে তাঁরা নিজেদের নামের প্রতি সুবিচার করবেন, পরিসংখ্যানের নামও বদনাম করবেন না...
প্রিয় কৌস্তভ,
আপনার লেখাটি প্রথম পাতার তুলনামূলক বড় একটি অংশ দখল করেছে। অনুগ্রহ করে প্রথম পাতায় শুধু এক প্যারা রাখার অনুরোধ রইল।
"কৌস্তুভ" বানান টা ঠিক হয় নাই
আরে, তাতে কী-ই বা আসে যায়?
খুব ভালো একটা লেখা। সহজপাঠ্য এবং সহজপাচ্য বৈজ্ঞানিক লেখাই বলবো একে। লেখায়
টেকনিক্যাল বিষয়গুলো না জেনে এবং না বুঝে রিসার্চ করলে এর থেকে ভালো কিছু হয়না যেমনটা ড. হাক করেছেন। পরিমানগত এবং গুণগত বিশ্লেষনের শতঃস্বিদ্ধ কিছু রুলস্ আছে, মডিফাইড কিছু রুলস্ও আছে। এগুলো না মেনে কিছু স্বোদ্ভাবিত সুবিধাবাদী স্যাম্পলিং মেথড প্রয়োগ করলে তার আউটকামও হয় নিছক উদ্দেশ্যমূলক।
হিমুর মন্তব্যে চরমভাবে সহমত।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
ধন্যবাদ।
ডঃ হক বলতে চেয়েছেন বোধ হয়?
ইংরেজি উচ্চারণে বলেছি, তাই ড. হাক হয়ে গেছেন।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
কানা কেষ্টোর এই কেত্তন্টা আমার বেদম প্রিয়! অনেকদিন বাদে বেশ মোক্ষমভাবে শুনলাম!
তোমাকে ২টো ধন্যবাদ!!
লাল গানে নীল সুর, হাসি হাসি গন্ধ
ওনার গান আমার বড়ই ভাল লাগে। ওনার রবীন্দ্রসঙ্গীত গুলো শুনেছেন? খুব ঋজুতা নিয়ে গাওয়া, 'শান্তিনিকেতনী' স্টাইলে কেঁদেককিয়ে নয়। এইখানে লো কোয়ালিটি হলেও অনেক গান পাবেন - http://www.krishnachandradey.com/
তোফা, তোফা! পুরাই অ্যাকাডেমিক
কৌস্তুভদা, কয়েকটা ব্যক্তিগত মত:
১। ভূমিকার একদম শেষে পোস্টের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এইটা আরেকটু এগিয়ে আনলে ভালো হয়।
২। আপনি বলেছেন -
যেহেতু পরবর্তীতে লেখকের পদবী এসেছে, কাজেই ভূমিকাতে নামটা স্পষ্ট আসা উচিত। যার লেখার প্রতিক্রিয়া তার নামটা ভূমিকাতেই চলে আসা উচিত। সেই সাথে এক বিশ্ববিদ্যালয় না বলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ওনার বিভাগের নাম উল্লেখ করলে ভালো হয়।
৩। লেখাটা খুব গোছানো। বিশেষ করে আপনার প্যারাগ্রাফগুলো অত্যন্ত সুনির্দিষ্ট। কিন্তু একটু বড় লেখা তো, কোন একটি নির্দিষ্ট পয়েন্ট স্ক্রল করে খুঁজতে কিঞ্চিৎ বেগ পেতে হয়। যদি প্রতি প্যারার শুরুতে মূল বিষয়টি উপ-শিরোনাম হিসাবে দিতেন তা হলে একবার পুরো লেখায় চোখ বুলিয়ে আলোচনায় মুখ্য বিষয়গুলো বোঝা যেত।
৪। পোস্টের শেষে ফাহমিদুল হকের মূল পোস্টের একটি লিংক আলাদা ভাবে যোগ করুন। (যদিও ভূমিকার টেক্সটে আছে)।
---------------------------
আপনার পোস্ট পড়ে নানা উপলব্ধি হল। পুরো পোস্টে আপনার শব্দচয়ন, নিরপেক্ষ বয়ান আর লক্ষ্যভেদী বিশ্লেষণ আমাকে মুগ্ধ করেছে। (সেই সাথে একটু হিংসাও হল। এত মনোযোগ দিয়ে আপনি আমার কোন পোস্ট বোধহয় পড়েন নি।) আপনি যেই স্পিরিটে এই পোস্ট দিলেন তা ভালো লাগলো খুব। বস্তুত শুকনো অ্যাকাডেমিক খুঁটিনাটির সরস উপস্থাপনের এই নমুনা বড়ই চমৎকার।
এরকম পরিশ্রমী পোস্টের জন্য ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি ফাহমিদুল হকের পোস্ট সম্পর্কে আমার কিছু পর্যবেক্ষণ যোগ করতে চাই।
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
ফাহিমের সাথে একমত। আমি আরেকটু যোগ করবো। লিঙ্ক হিসাবে যা দিয়েছেন সেগুলোর সংক্ষিপ্ত বিবরণ ফুটনোটে দিয়ে লেখাটির ছাপার মাধ্যমের উপযোগী একটা ভার্শান তৈরি করুন। তারপর চেষ্টা করুন করুন বাংলাদেশের কোনো পত্রিকায় প্রকাশ করতে। এটার দরকার আছে। প্রয়োজনে এই ব্যাপারে সহসচলদের সাহায্য নিন।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
সহমত
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
ছাপার মাধ্যমে? তার প্রয়োজন আছে কী? উম... আচ্ছা, ভেবে দেখব'খন। কোনো সহসচলের সঙ্গে কথা বলা যাবে নাহয়।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
ফাহিম ভাই, বিস্তারিত মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ। আপনার কয়েকটি পরামর্শ মেনে এখনই বদলে দিলাম, কয়েকটি পরের বারে মাথায় রাখব।
লেখার শেষে আলাদা করে রেফারেন্স যোগ করাটা আমার বড় বেশি অ্যাকাডেমিক-অ্যাকাডেমিক লাগে তাই নেটে লেখার সুবিধা হিসাবে লেখার মধ্যেই লিঙ্ক যোগ করে দিতে থাকি। এখানে আপনার কথা মেনে বরং শেষ পরিচ্ছেদে আরেকবার পোস্টটির লিঙ্ক দিয়ে দিলাম।
আসলে ব্যাপার তো এই, যে আমার মূল ক্ষোভ তো পরিসংখ্যানের যে অপব্যবহার সর্বত্র হয়ে চলেছে তার সম্পর্কেই; এই বিশেষ জরিপটা একটা উদাহরণ মাত্র। সেইজন্যে লেখার শুরুতেই আমার সাধারণ অবস্থানটাই উল্লেখ করেছি, এইটার কথা এসেছে পরে। এবং সেইজন্যেই তখনই এই বিশেষ লেখকের এই বিশেষ পোস্ট এইভাবে উল্লেখ করতে চাইছিলাম না। তবে আপনি বলছেন বলে তাও ওখানেই পুরো পরিচয়টা উল্লেখ করে দিলাম।
এত প্রশংসা করে লজ্জা দিয়েন্না ভাই। আপনার পোস্ট অবশ্যই মনোযোগ দিয়ে পড়ি, তবে সেগুলো তো উপভোগ করার জিনিস, অ্যানালিসিস করার বস্তু তো নয়!
দিন না আপনার পর্যবেক্ষণ জানিয়ে একটা পোস্ট।
পরিশ্রমী পোস্টের জন্য পঞ্চতারকা।
আশা করব ফাহমিদুল হক সাহেবের নজরে আসবে এই পোস্টটা।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
উনি নিজেও যেহেতু ব্লগার এবং ব্লগ 'গবেষক' ওনার মন্তব্যও আশা করছি
হ্যাঁ, ওনার তরফ থেকেও আলোচনা এলে তো ভালই হয়...
থেঙ্কু
ড. ফাহমিদুল হকের মন্তব্য আশা করছি।
পোস্টে পাঁচতারা। অসাধারণ!
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
দুর্ধর্ষ !
****************************************
ধন্যবাদ, মাঝি ভাই!
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
সেই মালটোভার পরে আপনের নতুন পোস্ট কো?
দু'দিন বিচ্ছিন্ন ছিলাম। এই পোস্ট দেখার আগেই শুনেছিলাম ফা.হ.-এর "গবেষণা" বিষয়ে লেখা হয়েছে। একটা জমজমাট ম্যাথমেটিকাল এ্যানালাইসিসসের প্রত্যাশা করেছিলাম। পোস্ট পড়ে হতাশ হলাম। ফা.হ.-এর "গবেষণা" ফালতু প্রমাণ করতে আন্ডারগ্রাড স্টাটিসটিকস ১০১ কোর্সের কন্টেন্ট যথেষ্ট হয়ে পড়বে এটা ধারণায় ছিলো না।এই রদ্দি পাবলিশ করতে ফা.হ.-এর আত্মবিশ্বাস হাবিবমহাজন গোত্রের আইভরি টাওয়ার জায়গা অজায়গায় এ্যাকাডেমিকদের উপস্থিতি আবারো প্রমাণ করলো। এই জাতীয় গবেষকেরা আসলে কী পড়ে পাশ করে?
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
প্রথমে ভেবেছিলাম আমার লেখার কোনো দুর্বলতায় হতাশ হয়েছেন। পরে বাকিটা পড়ে হাঁপ ছেড়ে বাঁচলাম।
ভাল লিখেছেন। phdcomics টা একবারে খাপে খাপে মিলে গেলো।
ধন্যবাদ। কমিকটাকে কমিক হিসাবে দেখাই ভালো অবশ্য।
খুবই শ্রমসাধ্য পোস্ট এটা। তবে দীর্ঘ লেখা পড়তে গিয়েও একেবারে মনযোগ হারাতে হয়নি। আপনি ভালো শিক্ষক, বুঝতে পারি
শেষটা চেপে যান। ডিপার্টমেন্ট শুনতে পেলেই টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্ট-এর বোঝা ডবল করে দেবে...
খুবই খুবই খুবই চমৎকার লাগলো লেখাটা!
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না
অনেক অনেক অনেকই ধন্যবাদ!
পোষ্ট পড়ে 'ষ্ট্যাটিস্টিকাল এনালাইসিস' সম্পর্কে অনেককিছু জানলাম। তাই পাঁচ তারা নয়, আকাশের সব তারা, জ্যান্ত-মৃত সব নক্ষত্রের ঝাঁক।
অ ট
আচ্ছা, 'স্টোকাস্টিক প্রসেস' ও 'গেম থিউরী' এমন সহজ করে একটু বুঝিয়ে দিন না, স্যার। একটা কাজ পড়ে গেছে, বিষয় "এন্টি-জ্যামিং স্টোকাস্টিক গেম ফর কগ্নিটিভ রেডিও নেটওয়ার্কস"
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
এইবার এই পোস্ট থেকে পালালাম। এক স্টকাস্টিক প্রসেস আন্ডারগ্র্যাডের একটা টার্ম ভাজা ভাজা করে ছেড়েছিলো, সাথে ওই ব্যাটা মার্কভও ছিলো। এখানে এসেও একবার এসবের অত্যাচারে পড়ে নাকের জল চোখের জল একাকার করে রক্ষা পেয়েছি... এইবার এই পোস্টেও সেটা এসে ঢুকলে আমার সরে পড়াই ভালো।
একগুচ্ছ ধন্যবাদ!
রোমেল ভাই, গেম থিয়োরি সম্পর্কে আমি সামান্যই জানি, ওইটা তো ইকনোমিস্ট-দের ব্যাপার...
এইটুকুই বলতে পারি, একটা 'খেলা'য় যখন দুজন (বা তারও বেশি) প্রতিদ্বন্দ্বী থাকে, আর তারা একে অপরের প্রতিক্রিয়ার উপর ভিত্তি করে নিজেদের পরবর্তী ক্রিয়া নির্ধারণ করে, তখন সেইটাকে পরপর চাল দেওয়ার মত দেখা হয়। আর চাল দিতে দিতে এদের সবার লক্ষ্যই হচ্ছে খেলাটা জেতা, যেখানে জেতার সংজ্ঞা হল, কোনো একটা বিশেষ সংখ্যা - যেটা বাঁচা/মরার নির্দেশক হতে পারে, বা ব্যক্তিগত প্রফিট হতে পারে - খেলোয়াড়রা যথাসাধ্য বাড়িয়ে ফেলবে।
সচরাচর এই চালগুলো এবং পারিপার্শ্বিক অনেক কিছু র্যান্ডম হয়। সেইখানেই ইকনোমিস্ট-রা প্রবাবিলিটি টেনে আনেন।
আর স্টোকাস্টিক প্রসেস-ও প্রবাবিলিটির জিনিস, ঠিক স্ট্যাট না তো।
কোনো একটা সংখ্যা (বা চলক) যখন প্রবাবিলিটির সূত্র মেনে র্যান্ডম আচরণ করে, তখন তাকে বলে র্যান্ডম চলক। আর চলক যখন সময়ের সঙ্গে সঙ্গেও পালটায়, তখন সময় আর অনিশ্চয়তা দুটোকে মিলে বলে স্টোকাস্টিক প্রসেস। সময়ের সঙ্গে যা পালটায় তাকেই স্ট্যাটে প্রসেস বলে, আর র্যান্ডম-এর আরেক নাম স্টোকাস্টিক।
এর মানে, প্রতিটা সময়-বিন্দুতে চলকটা একটা কোনো প্রবাবিলিটির সূত্র মেনে চলছে। সচরাচর এই সূত্রটাও সময়ের সঙ্গে বদলায়, সাধারণত সূত্রের প্যারামিটার বদলের মাধ্যমে।
এই যেমন, শেয়ার মার্কেটের ইন্ডেক্স একটা র্যান্ডম চলক, আর সারা মাসের মানগুলো একসাথে দেখলে সেটা স্টোকাস্টিক প্রসেস।
একটা গেম-এ যেহেতু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নতুন চাল পড়ছে, খেলার অবস্থা বদলাচ্ছে, এবং সেটা র্যান্ডম, তাই সেটাকেও স্টোকাস্টিক প্রসেস বলা চলে।
প্রাথমিকভাবে তো এইটুকুই বলতে পারি...
কৌস্তুভ ভাই,
আপনার জলের মতো সরল বিশ্লেষণ আশা জাগালো। পছন্দনীয় ভাইয়ের মন্তব্য থেকে এরই মধ্যে বুঝে ফেলেছি, এই কাজটা আমাকে ভীষণ ঘামাবে। চুলোয় যাক এই বদ জ্যামারগুলো। আপনাকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে এই ফাঁকে বলে রাখি, কাজটার কোথাও আটকে গেলে ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করে আপনাকে জ্বালাবো।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
জনপ্রিয় ব্রিটিশ বিজ্ঞান-লেখক Ben Goldacre-এর একটা এই সম্পর্কিত লেখা পেলাম। সাংবাদিকরা সরাসরি ডেটা নিয়ে কাজ করলে কেমন ভুলভাল কিন্তু সেনসেশনাল রিপোর্ট বার করেন, তা নিয়ে। লেখক বলছেন,
"But if they are going to engage in primary research, and make dramatic causal claims - as they have done in this story – to the nation, I don’t think it’s too much to ask that they familiarise themselves with proper work that’s already been done, and consider alternative explanations for the numbers they’ve found."
কৌস্তুভ ভাই, ওখানে গৌতম নামে আমিই মন্তব্য করেছিলাম। আরো বেশ কিছু বিষয় বলার প্রয়োজন ছিল, কিন্তু যখন দেখলাম লেখক বলছেন আন্তর্জাতিক জার্নালের বিষয়টি তাঁর উপরেই ছেড়ে দিতে- তখন আর কথা বাড়াই নি। আপনার ব্যাখ্যাগুলোর জন্য ধন্যবাদ।
ফাহমিদুল হকের এক পরিচিতের মাধ্যমে আমি প্রস্তাব পাঠিয়েছিলাম যে, আমি টুকটাক পরিসংখ্যান জানি। যদি প্রয়োজন হয় তাহলে প্রয়োজনে আমি সহায়তা করতে পারি। কোনো উত্তর পাই নি। ফলে মন্তব্য করার ক্ষেত্রে আর অগ্রসর হই নি।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
ও, বেশ বেশ। ধন্যবাদ। আপনি কিছু ভালো পয়েন্ট তুলেছিলেন, তবে বুঝতেই পারছি, কমেন্ট বিস্তারিত আলোচনার পক্ষে সুবিধাজনক জায়গা নয়।
এই বিষয়ে ওনার সাম্প্রতিক কোনো মন্তব্য শুনলেন?
না, সাম্প্রতিক কিছু শুনি নি।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
ঘ্যাচাং
****************************************
নতুন মন্তব্য করুন