সাম্প্রতিক আড্ডার ভিত্তিতে এই পোস্টটা সচলভগিনী তিথীডোরের সম্মানে দেওয়া হল
কলেজে পড়ার সময় আমরা কয়েকজন বন্ধুরা টিনটিন নিয়ে নানারকম ঘাঁটাঘাঁটি, ইন্টারনেটের সাইটে-ফোরামে গুঁতোগুঁতি করতাম। মানে শখের টিনটিনোলজিস্ট – টিনটিন-বিশারদ হয়ে উঠেছিলাম আর কি। নিজের ব্লগে বা সাইটে বইয়ের থেকে ছবি লাগানোর একটা অফিশিয়াল অনুমতিপত্রও পেয়েছিলাম হার্জের ফাউন্ডেশনের থেকে। অনেকদিন পর সেইসব গল্পগাছা আবার কিছু করার ইচ্ছা হল।
(১)
টিনটিন নিয়ে ইংরাজি/ফরাসি ট্রিভিয়া নেটে অনেকই পাওয়া যায়। নিকোলাস স্যাবোরিন-এর সাইটটা চমৎকার। আবার জিম বেলা বলে এক ভদ্রলোক টিনটিন বইয়ের ভুলগুলোর এক বিশাল তালিকা এখান-ওখান থেকে সংগ্রহ করে বানিয়েছেন। যেমন এই ছবিটা ধরেন –
ভুলটা খেয়াল করতে না পারলে বলি, কলার কাঁদি কিন্তু গাছে উল্টোদিকে ফলে! খেয়াল না থাকলে গুগল করে দেখে নিন।
আসলে হার্জ ছিলেন ডিটেলের ব্যাপারে খুবই মনোযোগী। অজস্র ছবির কাটিং সংগ্রহে রাখতেন তিনি, আর সেগুলো রেফারেন্স হিসাবে ব্যবহার করতেন আঁকার সময়। মাইকেল ফার তাঁর ‘টিনটিন – দি কমপ্লিট কমপ্যানিয়ন’ বইটাতে অনেক এরকম ছবি আর বইয়ের ফ্রেম পাশাপাশি রেখে তুলনা দেখিয়েছেন, একটা নিচে জুড়ে দিলাম। তা হার্জ কলার কাঁদির যে ছবিটা জমিয়ে করেছিলেন, সেটা দোকানে সাজানো একটা উলটো করে রাখা ছড়া। অতএব শুরুতেই গলদ হয়ে গিয়েছিল। হাজার হোক, উনি তো আর আম-জাম-কলার দেশ, আমাদের বাংলার সন্তান নন!
এরকম মজার ঘটনা আরো অনেক আছে। 'মমির অভিশাপ'এর এই ছবিটা যেমন – হার্জ উত্তর গোলার্ধের মানুষ, পেপারকাটিং-ও জোগাড় করেছিলেন উত্তর গোলার্ধের ছবির – দক্ষিণ গোলার্ধে যে সূর্যগ্রহণ উলটো দিক থেকে হয়, সেটা বোধহয় তাঁকে কেউ বলে দেয় নি!
আগের লেখাটাতেই আল কাপোনের কথা এনেছিলাম, শিকাগোর গ্যাংস্টার। উনিই একমাত্র বাস্তব চরিত্র, যাকে হার্জ সরাসরি কমিক্সে এনে বসিয়েছেন। অবশ্য ফ্লাইট ৭১৪-এর শেষে যে রিপোর্টারটিকে টিনটিনদের ইন্টারভিউ নিতে দেখা যায়, সেটিও একজনের আদলে আঁকা – এক নাছোড়বান্দা যুবক হার্জকে চিঠি লিখে সাথে ফটোগ্রাফ পাঠিয়ে অনুরোধ করেছিল, খুব মাইনর হলেও তাকে যেন টিনটিনের কোনো একটা চরিত্র দেওয়া হয়, আর ক্যাপ্টেনের সঙ্গে হ্যান্ডশেক করার সুযোগ।
(২)
ঝাকানাকা নিয়ে লেখাটায় বলেছিলাম, টিনটিনের অনেক বইয়েরই তিনটে ভার্শন হয় – সাদাকালো, শুরুর রঙিন রূপ, আর আধুনিক চেহারা। সেই বিবর্তনের চেহারা দেখেন, ‘কৃষ্ণদ্বীপের রহস্য’এর মলাটে–
এর জন্য একবার হার্জ একটা ক্রোনোলজিকাল ঘোটালাও করে ফেলেছিলেন। 'ফারাওয়ের চুরুট' এর রঙিন এডিশনটা যখন বেরোয়, ততদিনে 'চন্দ্রলোকে অভিযান' এর রঙিন এডিশন বেরিয়ে গেছে। ফলে, যদিও সময়ের দিক থেকে 'ফারাওয়ের চুরুট' আগের ঘটনা, তবুও তাতে শেখ পাত্রাশ পাশা টিনটিনকে তাদের চাঁদে অভিযানের বইটা দেখাচ্ছে!
(৩)
একটা যে বড় টপিক নিয়ে আমরা কনটেন্ট দিতাম, সেটা হল টিনটিনের বাংলা অনুবাদ। প্রথম দিকের অনুবাদগুলো করতেন নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, পরে কে করতেন জানি না – আনন্দ পাবলিশার্স তাদের বইতে অনুবাদকের নাম দেয় না। তবে পরের দিকে অনুবাদের ভাষা যে অনেকটাই পড়ে গিয়েছিল, এটা বেশ বোঝা যায়। ‘কালো সোনার দেশে’তে একটা অনুবাদের ছিরি দেখুন–
ভাল কথা – ‘সোভিয়েত দেশে টিনটিন’ বইটায় আনন্দ কিন্তু একটা পুরো পাতা-ই হাপিস করে দিয়েছে। এই পাতাটা (সিরিয়ালে ৯৮ নম্বর, বইতে কত মনে নেই) কিন্তু বাংলা বইটায় মেলে না, অন্তত প্রথম এডিশনে। ফলে পরের পাতায় প্রথমেই যখন টিনটিন বলছে, ‘মনে হচ্ছে কোনো ভুতুড়ে বাড়িতে এসে ঢুকলাম’, তার কোনো কারণ পাওয়া যায় না!
এইরকম অনেক ভুল – ভুল না, সচেতন ঘাপলা – আনন্দ প্রবলভাবে করেছিল ‘কালো সোনার দেশে’ বইটায়। কেন জানি না, হয়ত মুসলিমানুভূতি আঘাত পেতে পারে এমন দুশ্চিন্তায়...
প্রথমেই তো বই থেকে সব আরবী লেখা মুছে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেগুলোকে অনুবাদও করা হয় নি। নিচের ছবিগুলোর বাঁদিকে ইংরিজি আর ডানদিকে বাংলা বইয়ের থেকে ফ্রেম–
এইবার নিচের ৩৪ নম্বর পাতাটা লক্ষ্য করুন। প্রথম ফ্রেমেই যে মিনার থেকে আজান দেওয়ার ঘটনাটা, স্পিচ বাবলটা মুছে দিয়ে সেটাকে একটা অদ্ভুত দৃশ্য করে দেওয়া হয়েছে, একটা লোক দুহাত তুলে কী যেন করছে।
আরো বড় ঘোটালাটা তার পরের লাইনে। ওই তিনটে ফ্রেমে দেখানো ছিল, জনসন-রনসনের গাড়ি একটা মসজিদের দেওয়াল ভেঙে ঢুকে পড়ে, যেখানে কিছু লোক নামাজ পড়ছিল। সেই লাইনটা পুরোটাই বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে!
তার বদলে পরের লাইনগুলো এক ঘর করে তুলে আনায় যে ফাঁকা জায়গাটা তৈরি হয়েছে, সেটা পরের পাতায় একটা টেক্সট বক্স বসিয়ে কিছু আটভাট করে ভরানো হয়েছে। আসলটা দিলাম তার নিচে–
এই একই কাজ করা হয়েছে ২২ নম্বর পাতাতেও। সেখানে নামাজ পড়া এক গ্রামবাসীকে মরীচিকা মনে করে লাথি মারে মানিকজোড়। সেই লাইনটাকেও বাদ দিয়ে আটভাট কথা ঢোকানো হয়েছে। ফলে বরং মনে হয়, ওই গ্রামবাসীরা নেহাত অহেতুকই মারমুখো হয়ে জনসন-রনসনকে তাড়া করছে–
(৪)
শেষে বলি, টিনটিনকে নিয়ে কিন্তু বেশ মজার মজার কুইজও আছে অনেক। যেমন ধরুন এইটা – নিচে হার্জের সৃষ্টি ছটা কাল্পনিক দেশের পতাকা দেওয়া রয়েছে, দেখেন তো কোনটা কোন দেশ চিনতে পারেন কি না? (ছবিতে ক্লিক করলে উত্তর পাবেন)
মন্তব্য
আহা টিনটিন! বাহা টিনটিন! সিনেমাটা নিয়ে অনেক উৎসাহ ছিল। ট্রেইলার দেখে আশাভঙ্গ হয়েছে। দেখা যাক কি বানান স্পিলবার্গ সাহেব।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
হ্যাঁ, ট্রেলারটাতে আমিও সামান্য আশাহত হয়েছি, চরিত্রগুলোর মুখ দেখে প্রধানত। বিশেষ করে মানিকজোড়। তবে দেখা যাক।
মারহাবা! মারহাবা!!
তলে তলে যে এত কিছু তা কে জানতো!? আপনারে তো 'সচলের টিনটিন' উপাধি দেয়া উচিত!
আর ইয়ে, এমন পোস্ট এসটেরিক্স নিয়ে হয় না? গল-গুলোরে বড় ভালু পাই!
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
থ্যাঙ্কু, থ্যাঙ্কু।
'সচলের টিনটিন' কেন, আমি তো 'বাংলার টিনটিন'ই তহে চাই, হুঁ হুঁ বাবা
অ্যাসটেরিক্স? আচ্ছা দেখুম...
টিনটিনের কিন্তু গার্লফ্রেন্ড নেই, Tintin and Alph-Art এর মিস মার্টিন বাদে (ওই বালিকাটি অবশ্য খুবই আকর্ষনীয়, তবে তিনিও বোধহয় 'পাইরেটেড') এরপরেও টিনটিন হতে চান?
টিনটিন তো কিশোর! বড় হলে নিশ্চয়ই বে-থা হবে!
বিবাহ একটি 'নিকিশাপূর্ণ ভ্রাণ্ত ধারমা।'
এদ্দিন সচল ঘেঁটেও দাদা এ কথাখানা জানলেন না!
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
ডুপ্লি এবং
ঘ্যা-এ-এ-এ-চাং~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
বাহ!
আহা...দিব্যি পোস্ট।
আরবী গেছে যাকগে, ওটা থাকা না থাকা সমান কিন্তু আনন্দ যে বাংলা করতে গিয়ে খানিকটা খেয়ে দিয়েছে সেটা অবশ্য জানতাম না। আসলে ইংরেজীগুলো জোগাড় করলেও কেন যেন সবগুলো পড়তে ইচ্ছে করেনি।
অনুভূতির গুষ্টি বাঁচাতে গিয়ে আরো কত কী যে হারাতে হয় আমাদের কে জানে।
অ্যাকেবারে! যখন ইংরাজিগুলো পড়তে গিয়ে এই ব্যাপারটা খেয়াল করলাম, তখন অ্যাত্তো রাগ হয়েছিল যে কী বলব! মনে হয়েছিল, এতদিন ধরে আমাদের খুঁতো জিনিস চালিয়ে এসেছে আনন্দ!
ক) কেউ যদি আমাকে এবারের জন্মদিনে সবগুলো টিনটিনের বই গিফট করে, তবে তাহাকে নিজহাতে সবজির পাকোড়া আর আলুর চপ বানাইয়া খাওয়াইবো। [আমি আর কিছু বানাতে পারিই না! ]
খ) পোস্ট অবলোকনের প্রতিক্রিয়া হিসেবে ৯ মিনিটে আঁকা টিনটিনকে নিরাপত্তাজনিত কারণে প্রদর্শন করা গেলো না।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
আমার কাছে সব কটা টিনটিনও আছে আবার সব কটা টিনটিনের এ্যানিমেশানও আছে!!!
লাল গানে নীল সুর, হাসি হাসি গন্ধ
সব কটা বাংলা বই আছে কি? তাইলে বুঝি!
আমার আছে যে ক'টা বাংলা বেরিয়েছে সব ক'টা, সব ক'টা ইংরেজী এবং সবক'টা অ্যানিমেশান
নেহিইইইইই.........
আমার কাছে সব কয়টা বাংলা বই আছে। কালো সোনার দেশে, লোহিত সাগরের হাঙর দু'বার কিনতে হয়েছে সেট ঠিক রাখার জন্যে, এগুলো একজন পড়তে নিয়ে আর ফেরত দেয় নি।
------------------------------------------------------------------
এই জীবনে ভুল না করাই সবচেয়ে বড় ভুল
ওরে নথি গবেষক!
দারুণ পোস্ট! কৌস্তুভ, অনেক ধন্যবাদ, আমি বাংলা টিনটিন পড়েছি অল্প কয়েকটা তাই বিষয়গুলা জানতামই না!!
কলার বিষয়টা বেশ মজার!
এ্যাস্টেরিক্স বিষয়েও এরকম ১টা পোস্ট দিও।
লাল গানে নীল সুর, হাসি হাসি গন্ধ
কেন কেন, কার নিরাপত্তা? নিজের না টিনটিনের না সচলের?
আর মেয়ের ইয়ে দেখ! আমি যে একটা আস্ত পোস্ট গিফট করলুম, আমাকে আধখানা পাকোড়ারও কোনো আশা দিলোনাকো!
মাত্তল আধখানা পাকোড়ায় হবে?
আমি বুঝি মানুষ চিনি না?
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
আরে, নেই মামার চেয়ে তো কানা মামা ভালো!
আমার কাছে বাংলা টিনটিনের সবগুলোই আছে এবং ইংরেজীগুলো আছে সফট কপি... কিন্তু দিচ্ছি না ওসব পাকোড়া কি আলুর চপ তো নস্যি, কোনকিছুর বিনিময়েই ওগুলো দেয়া যাবে না
না দিলে বয়েই গেলো।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
ঝাকানাকা পড়ার পরে গত কয়েকদিন ধরেই মাথায় টিনটিন ঘুরছে। তিথীর ফেসবুকে টিনটিনের ছবি আর সেই সঙ্গে আপনার আলাপচারিতা দেখে এই পোস্টে এলাম।
টিনটিনের সাথে আমার পরিচয় আনন্দমেলার মাধ্যমে। মাত্র দুইপাতা করে থাকত ওতে। সেটাই গোগ্রাসে গিলতাম। আশির দশকে টিনটিনের ইংরেজী কমিকগুলোর সন্ধান পাই, এক বন্ধু মারফত। এরপর আমিও ছোটখাট গবেষণা চালিয়েছিলাম - নেট সংযোগ ছাড়াই।
মুসলমানুভতির আঘাতের ভয়ে যে অংশগুলো বাদ দেওয়া হয়েছে সেগুলো আমিও বের করেছিলাম - আমারও মনে হয়েছিল এইগুলো ধর্মানুভুতিতে আঘাত না লাগানোর জন্য করা হয়েছে।
উলটো কলার কাঁদির ব্যাপারটাও লক্ষ্য করেছিলাম।
দেখা যাচ্ছে সর্বযুগে ও কালে টিনটিন নিয়ে পোলাপানরা গবেষণা করত।
খুব ভালো লেগেছে কৌস্তুভ। হাজার ব্যস্ততার মাঝে এটা বলার জন্যই লগ-ইন করলাম।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
তি হি হি, তাইলে তো আপনি এই নিখিল বঙ্গ টিনটিনোলজিস্ট সংঘের বুজুর্গ সদস্য
একটা কথা বলেন তো, আপনি প্রথম বাংলা টিনটিন (ওই দুপাতাই) কোন সময়ের আশপাশে দেখেন?
আনন্দবাজারের কার্টুনিস্ট দেবাশীষ দেব আমাকে বলেছিলেন, কলকাতার কাগজের খবর, তার ছবি যখন বাংলাদেশ এডিশনের জন্য ঢাকায় পাঠানো হয় তখন তাকে হিজাব পরিয়ে পাঠানো হয় - সব মেয়েদের ছবি বাদ দিয়ে দেওয়া হয় ইত্যাদি। সেই ধারণা থেকেই হয়ত আনন্দ পাবলিশার্স এটা করেছে।
যে সময় আনন্দমেলায় টিনটিন বেরোতো ওই সময়ের তুলনায় এটা পুরোই ফালতু ধারণা। ফ্যান্টমের কমিকসে অহরহ বিকিনিসজ্জিতার ছবি যদি ঢাকায় কেন, এমনকি বরিশালেও ঘুরে বেড়াতে পারে তাহলে অন্যগুলোতেও সমস্যা থাকার কথা না।
তবে আমি যে সময়ের কথা বলছি সেটা অনেক আগের। এখনকার অবস্থা কী হবে জানি না। এই ধর্মীয় আপদগুলো যে হারে বাড়ছে তাতে প্রচন্ড আশংকা হয় মাঝে মধ্যে।
আমি আনন্দমেলার গ্রাহক ছিলাম না। একটা বোধহয় পড়েছিলাম '৮৯ বা '৯০ তে সেটাতে লোহিত সাগরের হাঙরের ওই যে নৌকায় বসে টিনটিন স্কাটের প্লেনকে গুলি করে ফেলে সেইটার একটা দু'পাতা সিকুয়েন্স ছিলো - শেষ ফ্রেমটা ছিলো শাহারজাদির রেডিওর "আর থ্রি কে জিরো কথা বলছি, কে সিক্স ভি এম ওভার"
(মনে আছে এখনো )
হা হা... আপনার কথায় ফ্যান্টমের সেই বিকিনিসজ্জিতাদের কথা মনে পড়ে খুব মজা লাগল এখন
আমি টিনটিন প্রথম পড়ি ৭০ এর দশকের শেষভাগে, আনন্দমেলার পাতায়। তবে কালো সোনার দেশে আনন্দমেলাতে বের হয় ৮২ - ৮৩ সালের দিকে। ওই সময়ে আনন্দমেলা বা দেশ বাংলাদেশের পাঠকদের টার্গেটে রাখত না। ইনফ্যাক্ট কলকাতায় বের হওয়ার প্রায় দুই সপ্তাহ পরে ঢাকায় পাওয়া যেত পত্রিকাগুলো। আনন্দমেলার দাম কলকাতায় ২ টাকা ছিল, আর ঢাকায় পড়ত ৬ টাকা, রূপি ও টাকার বিনিময় রেটের চেয়ে অনেকখানি বেশি। আমার মনে হয়েছিল ওই সেন্সরগুলো আনন্দ পাবলিশার্স করেছিল পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানদের কথা চিন্তা করেই।
ঢাকায় আনন্দের পত্রিকা ঢালাওভাবে আশা শুরু করে নব্বুইয়ের দশকে, বাসায় তখন দেশ আর সানন্দা রাখা হতো, পত্রিকার দাম বিনিময় রেটেই পাওয়া যেত। হকার যেদিন পত্রিকাগুলো বাসায় দিত সেদিনই কলকাতাতে বেরিয়েছে দেখতাম। ওই সময়ের কথা হয়ত দেবাশীষ বলেছেন।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
হ্যাঁ, আমারো তাই ধারণা ছিল, কারন আমি বাবার কমবয়সের আনন্দমেলা, যেগুলো পকেটবই-সাইজের হত, তাতেও দুপাতা করে টিনটিন দেখেছি। সালের আন্দাজটা পাওয়ার জন্য আপনাকে জিজ্ঞেস করলাম।
দেবাশীষবাবু ওটা টিনটিনের সাপেক্ষে বলেন নি, এখনকার খবরের কাগজ সম্পর্কে বলেছিলেন। আপনি যা বলেছেন, তা-ই হবে মনে হয়।
বাহ্। ইন্টারেস্টিং ব্যাপারতো... টিনটিনোলজিস্ট।
কৈশোরে টিনটিনের বিরাট ভক্ত ছিলাম। সত্যজিতের একটা বইতে প্রথমে হার্জের ব্যাপারে প্রশংসাবাক্য পড়েছিলাম, তারপর হার্জের ব্যাপারেও ইন্টারেস্টেড ছিলাম। চিটাগাং এর চমৎকার দিনগুলিতে কাছের এক বন্ধুর নাম হয়েছিল টিনটিন - জেল দিয়ে চুলে একটা টিনটিন জাতীয় স্টাইল এনেছিল। বন্ধু টিনটিন এই নামটিকে প্রতিদিনের রুটিনে নিয়ে এসেছিল...।
আহ, তখন আমিও ওইরকম চুল আঁচড়াবার কত চেষ্টা করতাম!
ইসলামিক ব্যাপার গুলোকে পালটে দেবার ঘটনাগুলো ইন্টারেস্টিং। কোন কোন ক্ষেত্রে মনে হয়েছে হয়তো দরকার ছিলো না! তবে নামাজরত আরবকে লাথি মারার ব্যাপারটা ভালো লাগেনি!
ফ্রান্সে ফরাসি ভাষায় ওরা টিনটিনকে বলে "তাঁতাঁ" ।
ওটা তো মানিকজোড়ের ইনসেন্সিটিভিটি দেখানোর জন্যই...
দারুণ একটা পোষ্ট! একটা সময়ে আমিও মাঝারি গোছের টিনটিন ভক্ত ছিলাম। প্রথম সারির ভক্ত না হবার পেছনে একটা করুণ কাহিনি আছে! চমৎকার এই পোষ্টের জন্য কৌস্ত্তভকে
ইশ, করুণ কাহিনী?
এই সকাল বেলা সচলায়তনের ফুটপাত ধরে হাঁটতে গিয়ে আপনার (ল্যাম্প)পোষ্টে এসে বাড়ি খেলুম।তারপর থেকে আবার ঘোরের মধ্যে আছি। হার্ডডিস্কের কোন চিপায় যে টিনটিন লুকিয়ে আছে।আজই খুঁজে বের করতে হবে। নেক্সট টাইম ওবেলিক্সের গদার বাড়ির অপেক্ষায় আছি।
আমার বাড়ির টিনটিনের বইগুলো পড়ে পড়ে লুচি হয়ে গেছে।
ওরে টিনটিন রে!
আমার আবার ক্যাপ্টেন হ্যাডকরে বেশি পছন্দ! বিয়াঙ্কা কাস্তাফিওরের সামনে বেচারা ক্যাপ্টেনের অবস্থা দেখে আরো মজা হয়।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
হি হি, আমারো তখন খুব মজা লাগে! এই জন্য 'পান্না কোথায়' আমার খুব পছন্দের বই!
"জানি না কোথায় যাবো, মিলানেও যেতে পারি - বজ্রকন্ঠীর ভয়ে এদ্দিন ওখানে যেতে সাহস পাইনি" - বিয়াঙ্কা কাস্তাফিওরের মার্লিনস্পাইকে বেড়াতে আসার খবর শুনে এই ঝাড়া সংলাপখানা মনে হয় টিনটিনের সেরা সংলাপ
ট্যাপিওকা, খুব ভাল বিদ্রোহের চেষ্টা হয়েছে, অনেকগুলো নতুন ব্যাপার জানলাম। তবে বাঙলায় ভাষানুবাদ আর ইনরিজি-র মধ্যে বেজায় পার্থক্য আগেও চোখে ধরা পড়েছে। প্রস্পার রেমীর সূতীর মোজা জিন্দাবাদ।
সূতীর মোজার ব্যাপারটা তো ভুলেই গিয়েছিলাম, "তিনবার তো গুলি করেছে, চার বারের বা তফাৎ কী হবে?..."
কিন্তু আপনি আলকাজার? পেগী আপনাকে এখানে কমেন্ট করতে লগাতে দিলো?
এইটা তো কিশোর আলকাজার, তখনও টাপিওকার সঙ্গে ভাব ছিল, দেখছেন না? পেগী এখনও আসে নাই।
আলকাজারের সুতির মোজা জিন্দাবাদ!
এই উল্টো কলার কাঁদি নিয়ে আমি আর আমার ভাই খুব হাসাহাসি করেছিলাম মনে আছে৷ নীরেনবাবুর পরের অনুবাদের ভাষা বেশ জোলো৷ পাতা বাদ দেবার ব্যপারটা ইংরিজী ভার্সান পড়তে গিয়ে জেনে কেন যেন খুব একটা গুরুত্ব দিই নি মনে আছে৷
লেখাটা ভারী পছন্দ হল৷
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'
আপনিও তো তাহলে সম্মানিত সদস্যা
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
দারুন হয়েছে।
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
Billions of Blue Blistering Barnacles!
Ten thousand thundering typhoons!
বাংলা টিনটিন পড়ি নাই। তাতে আফসোস নাই। টিনটিন যে কোন ভাষায় পড়তে পেলেই হলো। অনেকদিন মনে হয়েছে "টিনটিন ইন কঙ্গো" নিয়ে লিখি। পড়ে ভেবেছি, কী লাভ এইসব পুরনো বিষয় নিয়ে লিখে!
এই বেলজিকের চেয়ে আমি অবশ্য গল'দের বড়ই পক্ষপাতি। Caligula Minus is out!
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
লিখুন না!
কঙ্গো আর সোভিয়েত, দুটো নিয়েই হার্জ অল্পবিস্তর লজ্জিত ছিলেন। সোভিয়েত তো তাই আর আপডেট করেনই নি, কঙ্গোও অনেক টোন-ডাউন করেছিলেন।
অ্যাসটেরিক্সে ফান অনেক বেশি। ভিজুয়াল এলিমেন্টস-ও বেশি।
মার্হাবা মার্হাবা।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
শুধু টিনটিন নিয়ে লিখলেই কি হবে। চাচা চৌধুরী, বিল্লু, পিঙ্কী এরা কোথায় যাবে???
তাদের নিয়ে আপনিই লিখুন না!
আমি টিনটিন এতো কম পড়েছি
তাও পোস্ট টা অনেক মজা লাগলো
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
তাহলে পড়ে ফেলুন! টিনটিন অবশ্য ছোটবেলাতেই পড়তে বেশি মজা। বড়বেলায় পড়লে সিরিয়াস দিকগুলো চোখে পড়ে।
এইটা একটা খুব ভাল লেখা হয়েছে।
অনেক মজা করে পড়লাম।
ক্লাস ৮ বা ৯-এ আমাদের ক্লাসে সবার টিনটিন পড়ার বাই চেপেছিলো। আগে তো পড়েছি কিন্তু ওই সময়টার সাথে টিনটিন আর হ্যাডক জড়িয়ে আছে ওতপ্রোত ভাবে। ক্লাসে বই না পড়ে কতদিন যে টিনটিন পড়েছি তার ইয়ত্তা নেই। এখানে এসেও আস্তে আস্তে সব সফট কপি যোগাড় করলেও আমার সবচেয়ে প্রিয় লোহিত সাগরের হাঙর কোথাও পাইনি (কারো কাছে থাকলে আওয়াজ দয়া করে আওয়াজ দিয়েন।)
ছোটবেলায় কমিক্সের স্মৃতি থাকবেই।
আপনার কাছে কি বাংলাগুলোর সফট কপি আছে? লিঙ্ক দিতে পারবেন?
এখানে পাবেন http://bdscraps.blogspot.com/2010/09/blog-post_05.html খালি লোহিত সাগরের হাঙর-টাই পাই নাই।
অনেক ধন্যবাদ...
লোহিত সাগরের হাঙরটা কোথাও আছে বলে মনে হলো না - কিছু অতিঅভিজ্ঞ টিনটিন 'বোদ্ধা'(!) লোহিত সাগরের হাঙর নাম দিয়ে টিনটিন অ্যান্ড দ্য লেক অফ শার্কস এর ইংরেজী কপিটা দিয়ে পুরো টরেন্ট ভরে রেখেছে।
এরা যা বোঝে না সেটা নিয়েও মাতব্বরী করতে যায় কেন?
উপরের যে ওয়েবসাইটের লিংকটি দেয়া হয়েছে সেই ওয়েবসাইটটি আমার একটি ক্ষুদ্র প্রয়াস। আমি এই ব্লগের নিয়মিত সদস্য নই। আমার ওয়েবসাইটের ভিজিটর ট্রাফিক সোর্সের রেফারেন্স হিসেবে এই পোস্টটির লিংক দেখলাম। সবাইকে ধন্যবাদ।
এই মাত্র বছর তিনেক আগে এক মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীর কোন এক ডিপার্টমেন্টের সাথে কাজ করতে গিয়ে দেখলাম ওই ডিপার্টমেন্টে মানুষ পাঁচজন - চারজনের ডেজিগনেশনের পিছে কোন না কোন ধরনের ম্যানেজার লাগানো আর বাকি একজনের পেছনে এঞ্জিনিয়ার। প্রথমেই মনে পড়লো আলকাজারের সেনাবাহিনী, ওই যেখানে ঊনত্রিশ জন কর্পোরাল আর শ'খানেক কর্নেল ছিলো।
আরেকবার কিসের যেন দুই টিচারকে কথা বলতে শুনেছিলাম, "এই যে স্যার কেমন আছেন?"... "ভালো আছি স্যার, আপনি?" এবার মনে পড়লো কর্নেল এস্পোঞ্জা, আলভারেজ আর আরেকজনের সেই, "নমস্কার কর্নেল, কর্নেল আছেন?" "কর্নেল আপনার অপেক্ষায় আছেন কর্নেল"...
আরেক লোকের গোঁফ দেখে কুর্ভি তাশের কথা মনে পড়ছিলো, আর কিছু লোকজনের অন্ধ ভক্তি আর আইকন সিলেকশন দেখে বর্ডুরিয়ার সেনাবাহিনী যে কুর্ভি তাশের গোঁফটাকেই নিজেদের প্রতীক বানিয়ে জামার কলার, আর্মব্যান্ড, ট্যাঙ্কের পাশে সবজায়গায় ছাপ্পা মেরে দিতো সেটা মনে পড়তো মাঝে মধ্যেই
ঢাকা থেকে খুলনা যাওয়ার সময় আট ঘন্টার বাস জার্নিতে পাশের সিটে পড়েছিলো এক লোক। উরিব্বাপরে, সে এক অভিজ্ঞতা বটে - কতক্ষণ পরে আবার বলে, "বক বক করলে মন উৎফুল্ল থাকে, মেদ কমে, ফুসফুস শক্তিশালী হয়..."। যা-ই বলেন পেঁচিয়েটেঁচিয়ে কিছু একটা গপ্প ফেঁদে বসবে... ওইদিন মাথায় খালি জলিয়ন ওয়াগের নামটাই ঘুরছিলো।
যতই ছোটবেলায় পড়া হোক, টিনটিনের ভূত মাথা থেকে কোনদিন নামবে বলে মনে হয়না।
বাঃ, চমৎকার! এই অভ্যেসটা আমারও খুব আছে, অনেক কিছুতেই টিনটিনের মিল খুঁজে পাই। এক বন্ধুর সম্পর্কে একটা লেখা লিখতে গিয়ে বলেছিলাম - তার তখন চারটে চাকরির অফার মিলিয়ে মোট মাসমাইনে লাখদুয়েক পেরিয়ে যাচ্ছিল - এই ছেলেটার মাথার এখন এতই দাম যে এর মাথাটা কেটে রামবাবা-দের মত সংরক্ষণ করে রাখতে ইচ্ছা করছে।
নতুন প্রোপিকটা বেশ হয়েছে
তাসনীম ভাইয়ের সিলভেস্টারকে দেখে মনে হলো দেয়া যায়... তাছাড়া
১। আমি অতিশয় মার্জারভক্ত
২। আমার মূল দুই কর্ম খাওয়া এবং ঘুমানো।
৩। এখানে টিভি নেই, কিন্তু আমি সিনেমা দেখতে বড়ই পছন্দ করি।
৪। আমার চোখও ঢুলুঢুলু থাকে, খাবারের নাম শুনলে পুরোটা খোলে।
৫। আমারও ওইরকম একখানা ভুঁড়ি আছে...
মনে হলো গারফিল্ডের সাথে সব একেবারে খাপে খাপে মিলে যাচ্ছে
আমিও মার্জারপ্রেমি...সিলভেস্টার দারুণ প্রিয় এক চরিত্র।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
Sufferin' succotash.... আপনিও ?
বেশ আনন্দ পেলাম। আমার পড়া প্রথম টিনটিন যথারীতি 'তিব্বতে টিনটিন'। এরপর কিছু ইংরেজিও পেয়েছি, কিন্তু কেন যেন প্রাণে খুশির তুফান ওঠে নি। সত্যজিৎ বেশ হার্জ ভক্ত ছিলেন। কোথায় যেন পড়েছিলাম তিনি একবার এট্টু সমালোচনাও করেছিলেন হার্জের আঁকার। গাছ ওঠে নিচ থেকে ওপরে, হার্জ নাকি আঁকতেন ওপর থেকে নিচে, হয়তো অনেক পশ্চিমারাই তাই। যাগগে, আবার উত্তরাধুনিকতা, উত্তর-উপনিবেশবাদ এসে হানা দেবে। আমার এক বন্ধুর মুখে শুনেছিলাম, পোপোক্যাটোপোটোপুলটিশ। শীতকালে হাল্কা চায়ের সুবাসের মতো ভালো লেগেছিলো। আসলেই, সুন্দরী গো সুন্দরী নেই গো তোমার তুলনা। শেষ টিনটিন, মানে আলফা-আর্ট পড়ে বাজে লাগে। পরে জানি, ওটা হার্জ লেখেন নি। সোভিয়েত দেশে টিনটিন (অতীব বাজে, গল্প আর ছবি দুদিকেই) কেনার পরে একজনের জন্যে অপেক্ষা করতে করতে ফুটপাথে বসে শেষ করি। তার বান্ধবী দেখে বেশ মজা পেয়েছিলো, হায় যৌবনের তেতো মৌবন! চন্দ্রলোকে টিনটিন আর চাঁদে টিনটিন একসাথে বের করেছিলো আনন্দমেলা দুই সংখ্যায়। খরচ বাঁচাতে ওটা কিনি, কিন্তু কোথায় আর সেটা এখন? বরং, বইটাই পরে কিনতে হয়। রাগ হয় না কিন্তু। টি-শার্টে কিছু টিনটিন আঁকবো ভেবেছিলাম, অনেক কদমের ঝরা রোঁয়ার মতো সেটাও গেছে ভেনিসের গন্ডোলার তলায় ভেসে।
_______________________________
খাঁ খাঁ দুপুরে, গোধূলিতে আর রাতে বুড়ি পৃথিবী
কেবলই বলছে : খা, খা, হারামজাদা, ছাই খা!
(ছাই: মণীন্দ্র গুপ্ত)
বেশ বলেছেন তো!
আর থাকেন কই মিয়া? লেখা দ্যান!
ওহে ভ্রাতা, ক্যালকুলাসের কথা কই? মন খারাপ হয়ে গেলো
ষাট ষাট...
ক্যালকুলাস, হ্যাডক... এমন ছোট লেখায় কি তারা সবাই আসতে পারে?
সেই ছোট্টবেলায় আম্মা এক অবাক সন্ধ্যায় আমার জন্যে 'পান্না কোথায়' এর একটা কপি নিয়ে এসেছিল। সেই আমার প্রথম পরিচয় ডাকাবুকো সাইজের, ঝকঝকে ছাপা, নতুন বইয়ের ভুবনভোলানো ঘ্রাণঅলা বাষট্টি পাতার টিনটিন কমিকের সাথে। কিন্তু শৈশবে আমাদের টাকা-কড়ি জমিয়ে বই কিনবার দৌড় সেবা প্রকাশনীর পেপারব্যাকের মসজিদ ছাড়িয়ে বেশিদূর যেতে পারতো না, তাও মাসে কি দু'মাসে একবার। ফলে বইয়ের দোকানের ডিসপ্লেতে সাজানো টিনটিনের সুদৃশ্য প্রচ্ছদের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে এবং আমাদের শিশুহাতেপড়া আদিঅন্তহীন পুরনো কপিগুলো পড়ে পড়েই বহু দিন কেটেছে। পাড়া বদল করে নতুন বাসায় আসার পর এক টিনটিনফ্যান বড় ভাইয়ের সাথে পরিচয় হয়। ওনার যক্ষের ধনের মতো আগলে রাখা সেই কমিক ধার নেবার জন্যে কম মেহনত হয়নি! এভাবে মানুষজনের কাছ থেকে ধার করেই মূলত টিনটিন পাঠ। নিজে যে কষ্ট পেয়েছি তা থেকে অন্য শিশুদের উদ্ধারের জন্যে একবার আমি ও আমার এক বন্ধু মিলে স্কুলের পুরনো খাতার পাতায় টিনটিন আঁকতে শুরু করেছিলাম। ক্লাস ফাইভে পড়ুয়া বালকদের পাল্লায় পড়ে সেবার টিনটিনকে মঙ্গল পর্যন্ত যেতে হয়েছিল! আর আমাদের আঁকার হাতের কথা কী বলব - সে ছিল স্যুরিয়ালিস্ট শিল্পীদের কাছাকাছি পর্যায়ের। কিন্তু আপসোস - বাঙালি সেই গুণের কদর করতে পারলো না!
লেখা (গুড়) , নানান জিনিস জানলাম। এবং ইংরিজিতে টিনটিন পড়ার আগ্রহ সঞ্চারিত হল। লেখককে ধন্যবাদ।
আহ, হাতে চকচকে মলাটের নতুন টিনটিন পাওয়ার যে কী আনন্দ!
ছোটবেলায় টিনটিনকে নিয়ে ফ্যান ফিকশন আমরাও আঁকতাম। এখন তো দেখি যারা আঁকে অনেকেই এইসব টিনটিন-ফোরামে আপলোডও করে...
"মা মাগো, আমি তোমার অধম সন্তান মা" এই বলে মাতাল ক্যাপ্টেন কোন কাহিনিটায় কাদছিলো?
তিব্বতে টিনটিন এ এক আলাদারকম হ্যাডক ঝলকে ওঠে, দড়ি কেটে দেবার সময়। ওটা কি তিব্বতে টিনটিনেই? সেই যে "থার্কে, আর বোধহয় ভয় নেই"???
ক্যালকুলাসের সেরা ব্যাপার সেই বিস্ফোরণে উড়ে তার বিছানাসমেত তিনি ঝুলছেন আর বলছেন "সময় হয়েছে কী?" ওটা কোনটায়? এক্সপেডিশন মুন?
কাস্তাফিয়োরে একটা গান গাইতো, "আমি এক ছোট্টো মেয়ে দারুণ ছোট্টো আমি", এটা কি পান্না কোথায় এই?
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
ওইটা 'কাঁকড়া রহস্য'তে, যখন পুরো বানচাল হয়ে থাকা ক্যাপ্টেনের সাথে টিনটিন-এর প্রথম পরিচয়।
হ্যাঁ, তিব্বতে।
না, ক্যালকুলাস মনে হয় জিজ্ঞেস করছিল, কেউ দরজায় টোকা দিল কিনা... ওটা এক্সপেডিশন মুন মানে চন্দ্রলোকে অভিযান-এই।
ওটা বোধহয় অনেকবারই গেয়েছে, সিলদাভিয়াতে, যখন প্রথম পরিচয়, তখনও...
"আমি এক ছোট্ট মেয়ে, দারুণ ছোট্ট আমি... চোখের তারা নীলচে আমার, চুলগুলো বাদামী..."
ওটা সিলদাভিয়ায়ই বটে। পান্না কোথায়তে মাত্র একটা গানই গাচ্ছিলেন বিয়াঙ্কা - "সুন্দরী লো সুন্দরী, তুলনাহীনা সুন্দরী"
বলুন তো সাদাকে ইতালিয়ানে কী বলে?
প্রিয়াঙ্কা
গুগল এবং বই ঘাঁটলাম। বিয়াঙ্কা কাস্তাফিওর এই গল্পগুলোয় এসেছেন -
ওটোকারের রাজদণ্ড - বারবার একটাই গান গেয়েছেন, "জীবন ছিল হিরের চেয়ে দামি / যখন ছোট ছিলাম আমি..."
মমির অভিশাপ - এই বইটাতেই প্রথম শুনলাম "আমি একটি ছোট্ট মেয়ে, দারুণ ছোট্ট আমি"
মূলে কিন্তু দুটো গানই এক - ফাউস্ট-এর জুয়েল সং - "Ah, My beauty past compare, These jewels bright I wear... Was I ever Margariiitaaa? Come reply! Mirror, mirror, tell me truly! Reply! Reply!" সবকটা ইংলিশ বইতে কাস্তাফিওর এই একটাই গান গেয়েছেন। বাংলায় তফাত করা হয়েছে।
কালো সোনার দেশে - সেনর অলিভেরার বাড়িতে রেডিওয় বাজছিল, "আমি এক ছোট্ট মেয়ে, আমি এক দুষ্টু মেয়ে, আমি এক মিষ্টি মেয়ে"
ক্যালকুলাসের কাণ্ড - এইটায় 'ওই মহিলা' এলেও কোনো গান নেই।
লোহিত সাগরের হাঙর - এটাতেও কোনো গান নেই।
তিব্বতে টিনটিন - শেরপারা রেডিওয় গান বাজাচ্ছিল, "আমার চোখ দুটি সুন্দর, আমার মন আরও সুন্দর!"
পান্না কোথায় - এটাতে তো অনেকবার গান আছে। বইটা নেই, তাই বলতে পারছি না কী ছিল।
বিপ্লবীদের দঙ্গলে - এটাতেও কোনো গান নেই।
আমার কাছে বইগুলো নেই, তবে যদি মনে থেকে থাকে ঠিকমত তাহলে বিপ্লবীদের দঙ্গলেতে কোর্টের মাঝখানে রায় শুনে কাস্তাফিয়োর গান গাইতে শুরু করেছিলো - সম্ভবত "আহা এই মোর অপরূপ রূপ..." যার ফলে কোর্ট মুলতবী করে সবাইকে বের করে দিতে হয়।
ঠিক ঠিক!
পান্না কোথায়-তে মনে পড়ে ক্যাপ্টেন স্বপ্নে কাস্তাফিওরকে টিয়া সাজে গান করতে দেখেছিল, "সুন্দরী লো সুন্দরী / তুলনাহীনা সুন্দরী"
উইকিতে একজন লিখেছে যে ফ্লাইট ৭১৪-তে ক্যাপ্টেন নাকি কাস্তাফিওরকে গান গাইতে কল্পনা করেছিল, কিন্তু সেটা আর কোথাও উল্লেখিত দেখলাম না। ভুলও হতে পারে। সুযোগ পেলে চেক করবেন তো।
ফ্লাইট ৭১৪ তে কাস্তাফিওর ছিলেন বলে মনে পড়ছে না। ইংরেজীগুলোর সফট কপি আছে কিন্তু দেখার সময় পাচ্ছি না। গুরু সবেমাত্র এক অতিসফল যজ্ঞ সেরে ফিরেছেন, আপাতত কিছুদিন মুডে থাকবেন। খেপে গিয়ে "নাহ তোমাকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না, কিছু করতে পারলে করো না পারলে বসে থাকো" না বলা পর্যন্ত সময় পাবো না। অভিজ্ঞতায় বলে এই কথাটা যজ্ঞ সুসম্পন্ন হওয়ার সাত দিনের মাথায় বলা হয়
আহাহা আহহহা আহহহহা! এদ্দিন পরে সচলে ঢুকেই কি একটা লেখা পড়লুম! সবাই যা বলার অনেকবার অনেকভাবে বলে দিয়েছে। কৌস্তভকে ধন্যবাদ এইরকম দুর্দান্ত্ একটা লেখার জন্য।
লেখা প্রিয়'র লিস্টে আটকাইলাম
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না
ওয়েলকুম ওয়েলকুম!
আম্মো।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
কৌস্তুভ লুক্টারে আমি লাইক্করিনা!
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
আহ, অন্তত আর একজন বুঝেছে যে কৌস্তুভ আসলে লাইকেবল কেউ না...
তার মানে কি কৌস্তুভ = অপছন্দনীয়?
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
আরে না না কি বলেন এসব! ওই কৌস্তুভ "পছন্দ করে গদগদ হয়ে যাওয়ার মত কেউ নয়", কিন্তু তাই বলে একেবারে অপছন্দনীয় হয়ে যাওয়ার মতও খারাপ নয় ছোকরা। বলা উচিত একটু কম পছন্দনীয়
বাহ, অনেকদিন পর সেই টিনটিন নিয়ে লেখা পড়ে বেশ ভালো লাগলো...
বেশ ভাল লাগল পড়ে। কদিন আগে টিনটিন নিয়ে একটা বই পেয়েছিলাম পুরনো বইয়ের দোকান থেকে, সেখানে অনেক মজার তথ্যের মধ্যে একটা ছিল বিশ্বের নানা ভাষায় সেই জমজ দুই ভাই রনসন আর জনসনের নাম, পরে এক সময় তালিকাটি আপলোড করব---
১০০= 'চেনচুরি'
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
রুনা লায়লার একটা গান আছে না, "চেন চুরি করে তুমি কোরো না ধুনফুন..."?
সেঞ্চুরি কি আমি-ই করলাম?
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
না মর্ম, তুমি কর নি হে! বানান-বালিকে সে 'ন' চুরি করেছে
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
তারে কি ধইর্যা পিটাবেন? তাহলে বসি...
হায় খোদা! আমার ঠিক মনে হইছিল আপনে গ্যালারীতে বসবেন!
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
এহহ ছুডুবেলার লুকাই লুকাই টিন্টিন পড়ার কাহিনি মনে পড়তেছে, এখন আবার টিন্টিন পড়বার মুঞ্চায়, এইডা কি করলেন কৌস্তভদা।
কোলকাতার তাঁতাঁ -র বাংলা বীভৎস লাগে। একগুচ্ছ ঢাকাই তাঁতাঁ'র খুব প্রয়োজন। তবে ইন্দ্রজালের কিছু কমিক্স খারাপ লাগতো না।
ফ্যান্টমের পরিবর্তিত রূপ বেতাল কি ইন্দ্রজাল থেকে বেরোতো না? আমার খুব প্রিয় চরিত্র ছিলো বেতাল।
ফ্যান্টম যখন নিজের নামেই বেরোতো তখন প্রচন্ড বিরক্ত লাগতো দুইটা কারণে। এক হচ্ছে সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিকভাবে কোন এক বিকিনিসজ্জিতার আগমন, উদ্দেশ্যটা বিকিনিসজ্জিতাকে স্রেফ জোর করে এনে বসিয়ে দেয়া। আর দ্বিতীয়টা হচ্ছে একই কথা কমপক্ষে চারপাঁচটা ফ্রেমে চারপাঁচবার করে বলা।
ম্যানড্রেক আর টিম্পাও তো বোধহয় ইন্দ্রজালেরই ছিলো...
নতুন মন্তব্য করুন