এক ভারতীয় প্রায়-প্রৌঢ় প্রফেসর আমেরিকায় এক কনফারেন্সে গেছেন বউ নিয়ে। বেশ ভাল হোটেলে ঘর দিয়েছে উদ্যোক্তারা, চেক-ইন করার সময় সুন্দরী রিসেপশনিস্ট মিষ্টি হেসে বলল, “প্রিয় অতিথি, আমরা আপনার সব রকম সেবায়’ই সচেষ্ট – এমনকি যদি মাঝরাত্রেও যদি আপনার বিশেষ কিছু দরকার হয় তাহলে আমাদের ফোন করে জানাবেন অবশ্যই।”ঘরে যেতে যেতে গিন্নি বললেন, “দেখেছ, এরা কত ভাল, কাস্টমারদের কত খেয়ালযত্ন করে, মাঝরাত্রেও সার্ভিসের জন্য লোক আছে।”
প্রফেসর হেসে বললেন, “আরে, এ-লোক সে-লোক নয়, এ হল গিয়ে, ইয়ে, দেহপসারিণী।”
বৌ অবাক হয়ে বললেন, “ধুর, এ হতেই পারে না, কত ভদ্রসভ্য হোটেল, এখানে কি ওসব হতে পারে? ”
উনি বললেন, “আচ্ছা, তোমার সামনে প্রমাণ করেই দেব’খন।”রাত্রিবেলা বৌকে বললেন, “এই দেখ, আমি এখনই প্রমাণ করে দিচ্ছি।” রিসেপশনে ফোন করে বললেন, “আমার একটু বিশেষ প্রয়োজন হয়েছে, কিছু ব্যবস্থা করতে পারেন?” তারপর ফোন রেখে বললেন, “তুমি বাথরুমে গিয়ে লুকোও, দেখো কে আসে আর কী কথা হয়।”
একটু পরেই ঘরে এল এক সুবেশা (নাকি সাহসীবেশা) সুন্দরী তরুণী, দুয়েককথার পরেই বলল, “কী, হবে নাকি?” প্রফেসর কাটানোর উদ্দেশ্যে বললেন, “তা তো হবে, কিন্তু দর কত?”
মেয়েটি বলল, “দর তো ফিক্সড, দুশো ডলার।” প্রফেসর চটপট বললেন, “আমি তো অত দিতে পারব না, বিদেশ থেকে এসেছি, পঞ্চাশে রাজি থাক তো বল।” মেয়েটি রেগেমেগে চলে গেল।মহা খুশি হয়ে বাথরুম থেকে বেরিয়ে এলেন মহিলা, তাঁর স্বামী যেমনই আঁটঘাট-অভিজ্ঞ তেমনই পত্নীনিষ্ঠ। আর উনিও খুব খুশি, নিজের কথা এমন অকাট্যভাবে প্রমাণ করে দিতে পেরেছেন। দুজনে মিলে হাত ধরাধরি করে মহানন্দে ডিনার করতে রওনা দিলেন।
নিচে নামতেই হোটেলের লবিতে চোখাচোখি হয়ে গেল সেই ঘরে-আসা তরুণীটির সঙ্গে। সে মুখে বাঁকা হাসি ঝুলিয়ে প্রফেসরকে বলল, “দেখো, পঞ্চাশ ডলারে তুমি কী পেয়েছ!”
(১)
হুমম, দুষ্টু গল্প, মজার গল্প। কিন্তু প্রশ্ন হল,
মজার কথা শুনলে আমরা হাসি কেন? মজার কথা শুনলে আমরা মজা পাই কেন?
প্রশ্ন দুটো শুনতে একরকম হলেও কিন্তু আলাদা। কারণ, মজা পেলাম ঠিক আছে, কিন্তু পেলে হাসিই আসবে কেন? হাসি কেন মজা লাগার বহিঃপ্রকাশ?
এই প্রশ্নটা আরো গভীর একটা প্রশ্নের সঙ্গে জড়িয়ে – আমরা হাসি কেন? এর উত্তরে বিজ্ঞানীরা বলেন, হাসি হচ্ছে একটা সঙ্কেত – আপনি যে খুশি আছেন, আনন্দে আছেন, তার ইঙ্গিত। ছোট শিশু যখন কথা বলতে শেখেনি, নড়াচড়াও বিশেষ করতে পারে না, তখন তার যে প্রয়োজনগুলো মিটেছে, সে যে পরিতুষ্ট, তারই ইঙ্গিত হচ্ছে হাসি – পেটভরে ডুডু খেয়ে গাবলু-গুবলু বাচ্চারা যখন হাসি দেয়, আর তাই দেখে বাবা-মা-আত্মীয়পরিজন-মায় অচেনা লোকেরও যে মনটা ভালো হয়ে যায়, এসবই হচ্ছে প্রাকৃতিক নির্বাচনের ষড়যন্ত্র। বুদ্ধিমান প্রাণীরা – বাঁদর, ডলফিন, এরাও ওদের হিসাবে আনন্দ হলেই হাসে, দেখেন না?
(২)
তাহলে ওই প্রশ্নটায় ফিরে যাই, যে হাস্যরসের কথা আর পাঁচটা কথার থেকে আলাদা কেন, রসিকতা শুনলেই ঠিক আমাদের হাসি আসে কেন? হাসির সঙ্গে রসিকতার যোগ আবশ্যক না হলেও খুব গভীর – হাসি সাধারণভাবে মজা পাওয়ার বহিঃপ্রকাশ, যেমন ভাবনার সাধারণ বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে কথা। তা এই সংযোগ কেন, তা নিয়ে অনেক থিয়োরি আছে। এই যেমন দেখুন, রাস্তায় কেউ কলার খোসায় পা পিছলে চিৎপাত হল, সবাই সমস্বরে হেসে উঠলাম। কেন?
একটা ব্যাখ্যা হচ্ছে, আদিমকালে যখন মানুষেরা ছোট ছোট গোষ্ঠী করে থাকত, তখন দলের কেউ পড়ে মারা গেলে দলেরই ক্ষতি। কিন্তু কেউ পড়ে গেলে আশপাশের লোকেরা যদি হেসে ওঠে, তাহলে সেই ঘটনায় এটা ইঙ্গিত, যে আসলে বড়সড় কিছু হয়নি, বাকিরা নিশ্চিন্ত হতে পার।
আরেকটা ব্যাখ্যা হচ্ছে, যে পড়ে গেল, তার প্রতি আমরা সবাই সমব্যাথী, কিন্তু এই বিষাদের আবহাওয়াটা কাটিয়ে ওঠার চালক হচ্ছে হাসি।
আরেকটা ব্যাখ্যা বলে, এই যে কলার খোসায় লোকে পড়ে যেতে পারে, এইটা আমাদের মনে করিয়ে রাখার মাধ্যম হচ্ছে সেই ঘটনায় হাসা। ঠেকে শেখার আগেই দেখে শেখা।
ডারউইন বলেছিলেন, মজা হচ্ছে মনের সুড়সুড়ি। আমরা শরীরে সুড়সুড়ি লাগলে হাসি, অনেক বাঁদরেও হাসে। তাই মনে সুড়সুড়ি লাগলেও আমরা হাসি। এইটা আরেকটা থিয়োরি।
আরেকটা থিওরি হচ্ছে সুপিরিওরিটি। যার প্রতি হাসা হচ্ছে – সেটা পড়ে যাওয়া অসতর্ক লোকটা হতে পারে, নিজের আগের কোনো ভুল হতে পারে, সেটার কথা ভেবে এখন নিজেকে যে সুপিরিয়র, উন্নত, হুঁশিয়ার মনে করা, সেই আনন্দ বা গর্ব থেকে হাসি।
বলাই বাহুল্য এগুলো কোনোটাই আমার মস্তিষ্কপ্রসূত নয়। এ-বছরই প্রকাশিত, ড্যানিয়েল ডেনেট ও তাঁর ছাত্রের লেখা Inside Jokes - Using Humor to Reverse-Engineer the Mind নামের বইটা লাইব্রেরি থেকে তুলে এনেছি সম্প্রতি। হাসি-মজার পেছনে মনস্তত্ত্ব-দর্শন-বিজ্ঞান ইত্যাদি নিয়ে বৈজ্ঞানিক আলোচনা। সেটার থেকে খাবলা খাবলা যেমন মনে ধরেছে আপনাদের শোনাচ্ছি।
আরো অনেক রকম থিয়োরি আছে, সবগুলো যে আমি বুঝতে পেরেছি এমনও নয়। তারপর হাসির অনেকরকম ধরনও আছে – ‘পান’ অর্থাৎ শব্দ নিয়ে খেলা যেমন। এটা আরো জটিল, কারণ এটা ধরতে ভালো ভাষাগত দক্ষতারও প্রয়োজন। এগুলোর ব্যাখ্যাও তাই আলাদা হতে হবে।
(৩)
আরেকটা থিয়োরি বলে, কোনো জটিলতা, অবাস্তব, অভাবনীয় ঘটনার সৃষ্টি দেখে এবং তার পরেই তার সমাধান পেয়ে আমাদের যে আনন্দ হয়, সেটাও মজা পাওয়ার কারণ। একটা উদাহরণ:
“ডাক্তারবাবু বাড়িতে কি?” ফিসফিস করে জিজ্ঞাসা করল রোগীটি।
“না, বাড়ি নেই...”, ফিসফিস করে উত্তর দিলেন তাঁর সুন্দরী স্ত্রী;
“... চটপট ঢুকে পড়ো!”
এখানে ফিসফিস করা নিয়ে হয়ত একটু খটকা লাগতে পারে, কিন্তু প্রথম লাইনে এবং তার উত্তরে আমরা ধরেই নিচ্ছি যে এটি এক রোগী আর ডাক্তারের স্ত্রীর রুটিন কথাবার্তা। কিন্তু শেষ লাইন অর্থাৎ পাঞ্চলাইনে এসে পুরো সিনারিওটা বদলে যাচ্ছে আমাদের চোখে, অবৈধ প্রেমিক-প্রেমিকার। এই কথাটা কিন্তু জোকটায় স্পষ্ট করে লিখে দেওয়া নেই, তবুও আমাদের ধরতে অসুবিধা হয় না। আর ধরতে পেরেই, এই ব্যাপারটার একটা বোধগম্য সমাধান পেরেই তাই আমরা এত আনন্দ পাই।
(৪)
ওতে এই ব্যাপারটা লক্ষণীয়, যেটাকে ফাহিম ভাই বলেছেন ইঙ্গিতপূর্ণ রম্য। আমরা সাধারণ রম্যের থেকে প্যাঁচালো, ইঙ্গিতপূর্ণ রম্যের জট ছাড়িয়েই মজা পাই সবচেয়ে বেশী। কেন? কারণ হিসাবে ওঁরা বলছেন, এই ইঙ্গিতের জট ছাড়ানোর কাজটা একটা জটিল ধাঁধা বা একটা কঠিন অঙ্ক সমাধান করার মতই এক্কেবারে, তাই একদম সেইরকমই আনন্দও দিয়ে থাকে। তাই এরকম রম্য শুধুর মজা হিসাবেই আনন্দ দেয় না, বুদ্ধিকে একটা পুরষ্কারও দেয়। সেইজন্য এগুলোয় ডবল মজা।
এই যেমন,
আমি দাবা খেলতে ভালোবাসি বলে আমার বিজ্ঞানী বন্ধু একদিন আমাকে ডাকল, সে এক কম্পিউটার বানিয়েছে, যা নাকি দাবা খেলায় বিরাট পারঙ্গম, তা পরখ করে দেখতে।আমি বেরোবার সময় তাকে বললাম, “হ্যাঁ, তোমার কম্পিউটার দাবায় আমাকে হারানোর মত তুখোড় হতে পারে, কিন্তু বক্সিং-এ সে নিতান্তই কাঁচা!”
এখানে বুঝতে হবে এই ঘটনাটা, যা গল্পে বলা নেই – যে আমি হেরে গিয়ে রেগেমেগে বেরিয়ে আসার সময় সেটাকে ভেঙেচুরেই দিয়ে এসেছি! তবেই মজা পাওয়া যাবে। নইলে একটা পাতি কম্পিউটার যে বক্সিং করবে না, এটা আর বলার মত কী ব্যাপার?
আর তাই-ই “মজাটা আমি ধরতে পারলাম না” বলে লোকজন এত দুঃখিতও হয়, যদি একটা জোক বুঝতে না পারে।
অন্য প্রসঙ্গে যাবার আগে ওই পাঞ্চলাইনে সিনারিও পরিবর্তনেরই আরেকটা উদাহরন দিই:
এক খ্রীষ্টান, এক মুসলমান ও এক নাস্তিক বন্ধু মিলে এক হ্রদে বোটিং করতে গেছে। অনেকটা দূরে যাওয়ার পর হঠাৎ দেখা গেল, নৌকায় ফুটো হয়ে জল ঢুকতে আরম্ভ করেছে, কিছুক্ষণের মধ্যেই নৌকা ডুবে যাবে। কিন্তু তিনজনের কেউই সাঁতার জানে না।তখন খ্রীষ্টান বন্ধু প্রার্থনা করতে আরম্ভ করল, “হে প্রভু যীশু, তুমি আমাকে এই সঙ্কট থেকে রক্ষা কর; আমি ফিরে গিয়েই ভ্যাটিকানে এক লাখ টাকা দান করব।”
মুসলমান বন্ধুও প্রার্থনা করতে লাগল, “ইয়া খোদা, তুমি আমাকে এই বিপদ থেকে বাঁচাও, আমি এই বছরই নিশ্চয়ই মক্কায় হজ্জ করতে যাব।”তখন নাস্তিক বন্ধুটি বলল, “আমার বন্ধুরা, তোমরা আমায় ক্ষমা কর। আমি এতদিন তোমাদের বিশ্বাসকে হাসিঠাট্টা করে এসেছি, কিন্তু এখন আমি বেশ বুঝতে পারছি, তোমাদের বিশ্বাস দৃঢ় এবং সত্য - প্রভু তোমাদের বিশ্বাসের মর্যাদা নিশ্চয়ই দেবেন।”
বাকি দুই বন্ধু অবাক হয়ে খুশি খুশি মুখে তার দিকে তাকাল।
তখন বন্ধুটি বলল, “তা মুমিন ভাই, বলছিলাম কি, নৌকার ও-মাথার বাক্সে না, একখানা লাইফজ্যাকেট আছে... ওটা একটু এদিকে দেবে?”
(৪)
একটা কথা কিন্তু এমনি বললেই মজার হয়ে ওঠে না। কোনো বিশেষ ভাবে গুছিয়ে বললে সেটা মজার, কোনোভাবে বললে খুব সাধারণ, আবার কেউ কেউ ভীষণ মজার করেও সেটাকে সাজাতে পারে। এবং এই সাজাবার সময় খেয়াল রাখতে হয় পাঞ্চলাইন বা ইঙ্গিতের দিকে। এই যেমন, প্রথম জোকটার পাঞ্চলাইনে এই ইঙ্গিত দেওয়া হচ্ছে, যে ওই মেয়েটি প্রফেসরের স্ত্রীকেও বেশ্যা মনে করেছে। ( এই ইঙ্গিতটাও ওতে সরাসরি বলে দেওয়া নেই, তাই তো সেটা ধরতে পেরে আমরা আরো বেশি মজা পাই।) তা এই জোকটাকে যদি সংক্ষেপ করে এভাবে বলা যেত,
একজন ভারতীয় প্রফেসর তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে বিদেশে গেলে সেখানে একটি বেশ্যা তাঁর স্ত্রীকে বেশ্যা বলে ভুল করে।
তাহলে কিন্তু সেটা একদমই মজার থাকত না। কিন্তু এতটা না করে যদি স্রেফ শেষ লাইনটুকুই এমন হত:
সে মুখে বাঁকা হাসি ঝুলিয়ে প্রফেসরকে বলল, “দেখো, পঞ্চাশ ডলারে তুমি কেমন একটা বিচ্ছিরি বেশ্যা পেয়েছ!”
তাহলেও কিন্তু মজা অনেকটা নষ্ট হয়ে যায়। মেয়েটার ওই কথা বলার পেছনে তার পুরো ধারণাটাই আমাদের মনে মনে গঠন করে নিতে হয় যখন, সেটাতেই সবচেয়ে বেশি মজা।
ডেনেট তাই বলছেন, একটা ভালো রসিকতা তৈরি করা অনেকটা টিউনিং করার মত, নানা জিনিসের – যেমন ইঙ্গিত, পরিবেশ, শব্দচয়ন, আদিরস – নব ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে তার পরিমাণ বাড়িয়ে-কমিয়ে মাপমতন করে সেটা ঠিক তরঙ্গে আনতে হয়।
(৫)
খুব সরল বা প্রাথমিক হাস্যরস আসে যখন আমরা খুব স্বাভাবিক বা প্রচলিত কিছুর ব্যতিক্রম দেখি। যখন চশমা খুঁজতে খুঁজতে হন্যে হয়ে যাওয়া দাদু উঠে দাঁড়ালে চশমাটা তাঁর কান থেকেই খসে পড়ে। আমাদের কাছে এটাই স্বাভাবিক যে দাদু যখন চশমাটা খুঁজছেন তখন সেটা দুষ্প্রাপ্য কোথাও লুকিয়ে আছে, যখন আমাদের এই ধারণাটা ভেঙে যায় চশমাটা খসে পড়লে, তখন আমরা হাসি।
খেয়াল করুন, আমাদের ধারণা। আমাদের চোখে স্বাভাবিক কিছু। এগুলোকে তাই বলে ফার্স্ট-পার্সন হিউমার বা উত্তম-পুরুষ রসিকতা। এগুলো অনেক কম জটিল, এমনকি ভাষার বদলে তাই ঘটনায় হলেও চলে।
কলার খোসায় কারোর আছাড় খেয়ে পড়াটাও তাই সরল, উত্তম-পুরুষ রসিকতা।
(৬)
এখানে একটু বিপথে গিয়ে ভাষার সঙ্গে ভাবনার আলোচনা করি। জটিল ভাব প্রকাশে কিন্তু উন্নত ভাষার বিকল্প নেই। অন্য একটা বইতে ডেনেট এই উদাহরণটা দিয়েছেন:
বাচ্চারা লুকোচুরি খেলতে ভালোবাসে; তারা চায় যে তারা লুকোবে এবং আপনি তাদের দেখতে পাবেন না। অর্থাৎ, তারা মনে ভাবতে চায় যে আপনি মনে ভাবুন তারাও ঠিক যা ভাবছে – যে তারা খুব ভালোভাবে লুকিয়েছে। এটা কিন্তু বেশ জটিল ভাবনা – তৃতীয় স্তরের বা থার্ড অর্ডার থট।
তারা ভাবছে তারা ভালো লুকিয়েছে – প্রথম স্তরের ভাবনা।
আপনি ভাবছেন যে তারা এই ভাবছে – দ্বিতীয় স্তর।
আর এইটা হল তৃতীয় স্তর। এর থেকে জটিল ভাবনাও কিন্তু তারা সহজেই ভাবতে পারে, বাচ্চা হয়েও। আর এদিকে দেখা গেছে শিম্পাঞ্জীরা দ্বিতীয় স্তর অবধি ভাবতে পারে। ওনার বক্তব্য, এই পুরো সিনারিও বা আইডিয়াটা মনে মনে গঠন করতে প্রয়োজন শক্তিশালী ভাষার, যা আমাদের আছে।
তেমনই, উচ্চ স্তরের রসিকতা গঠন করতে, তা নিয়ে ভাবতে, বুঝতেও প্রয়োজন সুগঠিত ভাষার।
(৭)
এর পরের পর্যায়ের, আরেকটু উন্নত রসিকতায় আসে ইনটেনশনাল স্টান্স বা সচেতন অবস্থান। যখন আপনি অন্য কোনো বস্তু বা মানুষের মনের ইনটেনশন বা চেতনা সম্পর্কে ধারণা বা সিদ্ধান্ত করছেন। বা এমনও বলা যায়, আপনি যেন তাঁর হয়েই ভাবছেন, তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ব্যাপারটা দেখছেন। যেমন ওই প্রফেসরের গল্পটি। এখানে ওই তরুণীটির মনে যে ধারণা হয়েছে (ওনার স্ত্রীর সম্পর্কে), সেটিকে বুঝবার চেষ্টা করছি আমরা, এবং যে ধারণা আমাদের হচ্ছে সেটাই আমাদের মনে হাসির সৃষ্টি করছে।
তাহলে দেখুন, একজনের মনে যে ধারণা হচ্ছে বলে আমরা যে অনুমান করছি, এবং যখন শেষে এসে আমাদের সেই অনুমান ভেঙে ওই ব্যক্তি (বা বস্তুর) মনে যে অন্য কোনো ধারণা ছিল সেটা প্রকাশ পাচ্ছে, এটা আমাদের হাসির কারণ হচ্ছে। এটা কিন্তু দ্বিতীয় স্তরের ভাবনা।
এর উদাহরণ ওই জোকটি, যেখানে আমাদের ধারণা হচ্ছে ওই লোকটি কেবলই রোগী হিসাবে কথা বলছে কিন্তু পরে বুঝতে পারছি যে আসলে সে মনে মনে অবৈধ প্রেমিক।
(৮)
এটার কিন্তু আরো স্তর বাড়তে পারে। মনে করুন, রামবাবুর মনের একটা ধারণা পাঞ্চলাইনে এসে কীভাবে বদলাল তাই নিয়ে একটা রসিকতা। কিন্তু সেটা বলা হচ্ছে শ্যামবাবুর জবানিতে। তাহলে গল্পে যে ধারণাটা প্রকাশ পাচ্ছে সেটা কিন্তু শ্যামবাবুর – তাঁর রামবাবুর ধারণা সম্পর্কে যা অনুমান তাই নিয়ে। সেটা আবার আমরা অনুধাবন করছি। এইটা তৃতীয় স্তর।
তবে স্তরে স্তরে জমে উঠলে কেক বা আইসক্রিম ভালো লাগতে পারে, বেশি স্তর নিয়ে ভাবতে গেলে আমার মাথা ঘেঁটে যাচ্ছে। তাই এখানেই থাক।
(৯)
শব্দ নিয়ে খেলা করা আরো দুরুহ ব্যাপার। সেটা বুঝতে কিন্তু শুধু স্তর ধরলেই হবে না, জানতে হবে যে শব্দগুলো নিয়ে মজা করা হয়েছে তাদের (প্রয়োজনে একাধিক) অর্থও। শিবরাম যখন নিজেকে ‘পানাসক্ত’ বলে কৌতুক করছেন, তখন ধরতে হবে যে তিনি আসলে pun-আসক্ত, এবং pun অর্থও জানতে হবে।
তাই, অনুবাদে এধরনের রসিকতাই ক্ষতিগ্রস্ত হয় সবচেয়ে বেশি, আর সেজন্যই অ্যাসটেরিক্সের অনুবাদ করা কঠিনতর, টিনটিনের চেয়ে।
এর একটা উদাহরণ (যদিও আমার দুর্বল অনুবাদে খানিকটা মজা নষ্ট হয়েছে) –
এক নাস্তিক জীববিজ্ঞানী আমাজনের ঘন জঙ্গলে নতুন প্রজাতির খোঁজে অভিযান চালাচ্ছেন।একবার গাছের পাতার ফাঁক থেকে একটা পোকা সংগ্রহ করে উঠে দাঁড়াতেই খেয়াল করলেন, অত্যন্ত হিংস্র চেহারার একদল আদিম উপজাতি তাঁকে ঘিরে ধরেছে। আর সবচেয়ে সামনে দাঁড়িয়ে জ্বলজ্বলে চোখে তাঁর দিকে তাকিয়ে আছে দলের বৃদ্ধ সর্দার।
তিনি মনে মনেই বললেন, “হায় ভগবান, আমি এবার গেছি!”
তখনই আকাশের ফাঁক দিয়ে এক আলোর রেখা তাঁর মুখে এসে পড়ল, আর মেঘমন্দ্র স্বরে দৈববাণী হল, “না, এখনও কিছুই হয় নি। মনে বল আনো। যা বলছি তাই কর – পায়ের সামনের পাথরটা তুলে সর্দারের মাথায় বসিয়ে দাও এক ঘা।”
বিজ্ঞানী তাই করলেন। হঠাৎ আঘাত সামলাতে না পেরে মরে পড়ে গেল বৃদ্ধ সর্দার। দারুণ অবাক হয়ে গেল সব আদিবাসীরা।
আবারও দৈববাণী হল, “হ্যাঁ, এইবার! এইবার তুমি গেছ!”
এটাকে ভাঙলে মজার অনেকগুলো অ্যাঙ্গেল পাওয়া যায়। এক, ঈশ্বর “আমি এবার গেছি”-কে আক্ষরিক অর্থে নিয়েছেন, যেটা বিজ্ঞানীর উদ্দেশ্য ছিল না, তিনি প্রচলিত অর্থে, ভবিষ্যত হিসাবে, তাঁর বিপদের কথা বলেছিলেন, কিন্তু ঈশ্বর সেটাকে বর্তমান হিসাবে নিয়েছেন বলে এই খেলাটা করতে পারলেন।
দুই, সেই ইনটেনশন-এর কথা। দৈববাণীর সময় আমাদের ধারণা হচ্ছে, যে ঈশ্বরের ইনটেনশন বা ইচ্ছা হল বিজ্ঞানীকে উদ্ধার করা। এখানে যেন আমরা ওনার মনটা বুঝতে পাচ্ছি বলেই মনে করছি, কিন্তু শেষে দেখছি আমাদের ধারণা ভুল।
তিন, বিজ্ঞানীর কাজ আমরা দেখছি থার্ড পার্সন বা প্রথম পুরুষ হিসাবে। নাস্তিক হিসাবে তাঁর হঠাৎ ঈশ্বরের কথা মেনে নেওয়ায় আমরা অবাক হচ্ছি, তাই শেষে ঈশ্বর তাঁকে আরো ফ্যাসাদে ফেলে দেওয়ায় খানিকটা ‘বেশ হয়েছে’-মতনই আনন্দ পাচ্ছি। আবার অংশত তাঁর সঙ্গেই উত্তম পুরুষে একাত্ম হয়ে চিটেড-ও মনে করছি।
(১০)
শেষ করার আগে একটা বিষয় তুলব, যেটা নিয়ে আমি কিছু ব্যাখ্যা দেব না, বরং প্রশ্নই রেখে যাব। এটা সন্ন্যাসীদা জিজ্ঞাসা করেছিলেন, যে লোকে সচরাচর দুষ্টু রসিকতাই পছন্দ করে বেশি, কেন?
আবার ‘লোকে’ বলতে কি ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে, নাকি কেবল ছেলেরাই?
সচরাচর কি ছেলেদের মধ্যেই রসিকতা করার, হাসিঠাট্টার আড্ডা জমানোর প্রবণতা বেশি দেখা যায় না?
হাসিঠাট্টা, বিশেষ করে দুষ্টু রসিকতা কেন ছেলেরা বেশি ভালোবাসে, তাই নিয়ে হিচেন্সের একটা ভালো লেখা আছে, শরীরগত পার্থক্যের পটভূমিতে বিবর্তন কেন এই মানসিকতাকে তৈরি হতে দিয়েছে তা নিয়ে।
(১১)
“Analyzing humor is like dissecting a frog. Few people are interested and the frog dies of it.”
তাও আশা করি এই লম্বা আলোচনাটা লিখে পাঠকদের বিশেষ কিছু অসন্তুষ্ট করলাম না। আর যাঁদের এটা ভালো লেগেছে, তাঁদের জন্য হোমটাস্ক – এইটা নিয়ে একটু ভাবনাচিন্তা-কাটাছেঁড়া করুন দিকি (ইয়ে, এর মধ্যে একটু স্টকহোম সিনড্রোমের আভাস আছে):
মার্কিন মুলুকের মিস্টার টম কাগজে বিজ্ঞাপন দেখলেন, খুব সস্তায় মাত্র ৫০ ডলারে জাহাজে করে ক্যারিবিয়ানের এক নির্জন মনোমুগ্ধকর দ্বীপে জাহাজে করে ঘুরিয়ে আনার প্যাকেজ, দুই মাসের। খুব উৎসাহিত হয়ে তিনি মালপত্র গুছিয়ে ছুটলেন জাহাজঘাটায়, টিকিট কেটে জাহাজের কাছে গিয়ে দেখেন, সেটা একটা প্রাচীনকালের দাঁড়-টানা জাহাজ।খানিক অবাক হয়ে তাও সিঁড়ি বেয়ে জাহাজে উঠে একটু এদিক-ওদিক তাকাতে না তাকাতেই এক বিশালদেহী কৃষ্ণাঙ্গ এসে কান ধরে টানতে টানতে নিয়ে একটা বৈঠার পাশে চেয়ারে বসিয়ে দিল, আর কোমরে চেন দিয়ে চেয়ারের সঙ্গে বেঁধে ফেলল। তিনি ফ্যালফ্যাল করে দেখলেন, এমনই বহু মধ্যবিত্ত লোক কোমরে চেন বাঁধা হয়ে অনেক বৈঠার পাশে বসে রয়েছে।
যথেষ্ট লোক হয়ে যাওয়ার পর, দুয়েকদিনের মধ্যেই, জাহাজ ছাড়ল। তাঁদেরকেই বৈঠা টেনে টেনে জাহাজ চালাতে হল ওই দ্বীপ অবধি। জাহাজকর্মীর মধ্যে কেবল ওই কৃষ্ণাঙ্গ লোকটিই তালে তালে ড্রাম বাজাতে লাগল ওঁদের বৈঠা চালানোর তাল মেলাবার জন্য, যেমনটা হত প্রাচীন দিনের জাহাজে।
প্রায় মাসখানেক পর জাহাজ গিয়ে ভিড়ল একটা দুর্দান্ত সুন্দর কিন্তু জনমানবহীন ছোট দ্বীপে। কোমরের চেন খুলে সবাইকে নামিয়ে দেওয়া হল। আর সময় দেওয়া হল এক সপ্তাহ, ইচ্ছামত ঘুরে বেড়ানোর জন্য।
এক সপ্তাহ পর অনেকেই বাড়ি ফেরার তাগিদে চুপচাপ জাহাজে ফিরে এল, অনেকে আবার ফিরতে চাইল না এই দ্বীপ ছেড়ে, ওই লোকটি গিয়ে তাদের জোর করে ধরে নিয়ে এল। আবার ছাড়ল জাহাজ, ড্রামের তালে তালে বৈঠা টেনে মাসখানেক পর আমেরিকার এক বন্দরে গিয়ে তাঁরা জাহাজ ভেড়ালেন। এবার তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হবে।
তার ঠিক আগে, মিস্টার টম পেছন ফিরে তাঁর সহযাত্রীটিকে বললেন, “বাব্বা”, সফর ছিল একখানা! তবে যতই কড়া হোক, ওই লোকটা কিন্তু ড্রামখানা বাজায় ভাল। কী বলেন, ওকি ডলারদশেক টিপস দেব নাকি?”
সহযাত্রীটি বললেন, “কেন? গত বার তো কিছু দিই নাই!”
মন্তব্য
আপনি কিন্তু এইবারও ভালোই দিলেন .... লেখা চালু হইছে
কী দিলুম, ভাই?
ভুল বুইজ্জেননা, ভুল বুইজ্জেন্না, আইজকা সকাল থিকা লোকজন ভুল বুঝতাছে, আয়নামতি আপার ডরে সচলে ঢুকতাছিনা, উনি আমারে “উয়িদ লাঠি” নামক একখান জিনিস লইয়া খুঁইজা বেড়াইতাছে, আবার ”তিথীডোরে” নারদ নারদ বইলা তারে দিছে আজান, কনতো দেহি ভাই, এই হরতালমরতাল এর দিনে জানে পানি থাকে?
আপনের গত লেখাখান জব্বর লাগছিলো, এই লেখাখানও তাই। ওইযে আপনের এই গপ্পের শেষে আসেনা “কই গতবারতো কিছুই দেইনাই”, আমি সেইটারে রেফারেন্স পয়েন্ট ধইরা বলার চেষ্টা করছি যে এইবারও আপনে আমাদেরকে একদম নামকরনের (হাসিতামাশা)সার্থকতা ধইরা ধইরা দিছেন, হাসছি, সুখ পাইছি, মুগাম্বু খুশ হইছে। সত্যিকারের ভালো লাগছে।
ভাই, নিজের স্ট্যান্ড কি জলবৎ তরলং করতে পারছি?
ওঃ, এবার বুচ্চি... সরি দাদা, একটু টিউবলাইট আছি বোধয়...
যাক বিরাট শান্তি পাইলাম
ক) আমার মাথা মোটা এবং সেন্স অফ হিউমার একপেশে। মানে অন্যকে খুঁচিয়ে বেশ মজা পাই কিন্তু দুষ্টু লোকজন আমাকে নিয়ে ছুটুখাটো কিছু বললেও পটাং করে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠি।
খ) রামগরুড়ের ছানাদের সঙ্গে ইয়ার্কি করতে যাওয়া মহা বিপদজনক। ইঙ্গিতপূর্ণ রম্য তো বহুত দূর কী বাত হ্যায়। সরল বাক্যকেই উহারা জিলিপি বানিয়ে ছেড়ে দেয়।
গ) কয়েকটা জোকস বেশ ভালু। আগেও পড়েছি যদিও তবু বেরিয়ে গেলো।
৫ তারা।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
এক্ষুণি খেয়াল হল, কয়েকটা জোকসের সাপেক্ষে লেখাটায় 'যুবা' ট্যাগ দেওয়া উচিত। তবে তেমন শুরুতেই দিলে যে তিথীদেবী পড়তে পারতেন না, এমন বলছি না মোটেই - ও প্রোপাগাণ্ডা কেবল দুষ্ট বালক করে থাকে।
ভাল লাগায় পাঠিকাকে ধন্যবাদ, এবং হোমওয়ার্কটি করতে পুনর্বার আহ্বান জানানো হল।
ক) নিজে খোঁচায় কিন্তু খোঁচাতে গেলে চটে যায় - এটা শিশুদের একটা সনাক্তকারী বৈশিষ্ট্য। বড় হলে ঠিক হয়ে যায়।
খ) শৈশবে সবারই অতি দ্রুত মুড শিফট হয় বলে তারা মোটামুটি রামগরুড়ের ছানা ধরনেরই থাকে। এটাও বড় হলে ঠিক হয়ে যায়। এবং এই মুড শিফটের কারণেই তারা একটা কথা এক মুডে শুনে অন্য মুডে ইন্টারপ্রেট করতে যায় বলে সেটা জিলিপির মত পেঁচিয়ে যায়।
গ) রামগরুড়ের ছানারা একমাত্র "ছানা" অবস্থায়ই বের করে, পুরো রামগরুড় হয়ে গেলে আর করে না।
সুতরাং, সর্বপ্রকার লক্ষণ বিবেচনায় দেখা যাচ্ছে যে...
দারুন একখানা লেখা দিয়েছেন কৗস্তুভ ভাই। মানবজীবনে হিউমার খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং সঠিক বলেছেন, এর প্রয়োগ বা আত্মীকরণ আবার বেশ ব্যাক্তিগত। একেক জনের সেন্স অব হিউমার একেক রকমের। অনেক আঁতেল আবার জনসমক্ষে হাসিটাকে দিতে কার্পন্য করে থাকে হালকা হয়ে যাওয়ার ভয়ে। এরকম আঁতেলদের দেখেছি চেপে রাখা হাসিটা সশব্দে গুহ্যদ্বার দিয়ে দুর্গন্ধ সহযোগে নির্গত হয়ে যায়।
আমি একজন কৌতুকপ্রেমিক মানুষ। শালীন থেকে অশালীন কৌতুক আমার বেশি ভালো লাগে। আমার কৌতুকে আদিরস চুঁইয়ে পড়া চা'ই।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
ধন্যবাদ দাদা। কিন্তু "শালীন থেকে অশালীন কৌতুক আমার বেশি ভালো লাগে" এর কারণগুলো ভেবে বলেন দিকি, (১০)-এ কাজে লাগবে...
না মানে ইয়ে বলছিলাম কি যে শালীন আর অশালীন, দুটোই ভালো লাগে। তবে অশালীনটা একটু বেশি কারন ওগুলোয় বেশি হাসা যায়।
আচ্ছা এবার আমার একটু কৌতুক বলি, পারলে ভেদোদঘাটন করেন দেখি-
উপরতলার ভাবী নিচতলার ভাইয়ের উদ্দেশ্যে বললেন,
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
হেঃ হেঃ, এইটা জানি...
পাইলে লুসিয়াস এ্যাপুলেইয়াসের "দ্য গোল্ডেন এ্যাস" বইটা পড়েন, স্মরণীয় ভাই। আমার কেন জানি মনে হচ্ছে আপনার ভাল লাগবে।
****************************************
উইকিতে বইটার নাম লিখে একটু ঢুঁ মেরে আসলাম। মনে হচ্ছে ভালো লাগবে। খুজতে শুরু করবো একটু টাইম পেলে। সোনার হরিণ নয় নাইবা পেলেম, আপনি যে স্বর্ণালী নিতম্বের সন্ধান দিলেন, তাকে তো আর হারাতে চাইনে মাঝিদা।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র লাইব্রেরীতে ইংরেজি বইটা পেতে পারেন। আর এখানে কিছু আভাস। হাসির সব রকমফেরই পাবেন লুসিয়াসের ঝুলিতে
কৌস্তুভ ভাই, দারুন !
তবে ১১নং অনুচ্ছেদে আপনি যে উদ্ধৃতিটা দিয়েছেন (কার উল্লেখ করেননি আপনি, তবে আমার জানা মতে এটা মার্ক টোয়েনের), আমি তার সাথেই বরং একমত -- হাস্যকৌতুকের বেশি বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষন করতে গেলে হাসিটাই তখন মারা পড়ে।
মার্ক টোয়েন আর রাজশেখর বসু ওরফে পরশুরাম আমার সবচেয়ে প্রিয় রম্য লেখক। দুজনই ইঙ্গিতপূর্ণ রম্যের ওস্তাদ। উইট, উইসডম আর হিউমারের একেকটা টাইম-বম্ব বিশেষ!
টোয়েনের কিছু রসাত্নক উদ্ধৃতির অতি দুর্বল অনুবাদ করেছিলাম একসময়। সেই উইট এ্যান্ড হিউমারের রাজার কিন্তু একটা মত হচ্ছে এরকম --
আমার কৌতুহল হচ্ছে জানতে ডেনেট এ ব্যাপারে কি বলেন।
****************************************
ওহ, ঠিক বলেছেন, ওটা লিঙ্কানো হয়নি। লাইনটা E.B. White -এর।
ওনারা আমারও খুব প্রিয় লেখক।
কথাটা অন্তত অংশত ঠিক তো মনে হয়ই। একটা জোক-এর কোনো বাস্তব বা কল্পিত চরিত্র (মানুষ হোক কি পাথর) একটুখানি ফ্যাসাদে না পড়লে তো রসটা আসে না। সে পা পিছলে পড়া লোকই হোক, আর ওই নাস্তিক বিজ্ঞানী।
(২)-তে দেখেন, প্রথম তিনটে থিয়োরিই কিন্তু দুঃখ/ব্যথা-কে লঘু করা নিয়েই। সুপিরিয়রিটি থিয়োরি-টাও পরোক্ষে তাই, ইনফিরিয়র-কে কষ্টে দেখেই। তবে ডেনেট ঠিক ঐ কোটেশনটার মত কিছু ধরেই আলোচনা করেছেন কি না, তা জানি না।
দারুণ একটা প্রসঙ্গ তুলেছেন আপনি। আপনাকে ধন্যবাদ।
কিছু মানুষ হতচ্ছাড়া কম্পিউটারকে রসিকতা শেখানোর জন্য উঠেপড়ে লেগেছিলেন এককালে - কিন্তু কম্পু যে রসিকতাগুলো বুঝতে শিখেছিলো সেগুলো পড়ে আমার কান্না পাচ্ছিলো। অন্যদিকে কে জানি এক কম্পিউটারাইজড খোয়াবনামা লিখতে শুরু করেছিলো, খুব সিরিয়াস জিনিস, সফটওয়্যার মানুষের স্বপ্নের বর্ণনা নিয়ে সেন্টিমেন্ট অ্যানালিসিস করবে সেটা পড়ে কেন যেন আমার প্রচন্ড হাসি পাচ্ছিলো
আমি মানুষটাই মনে হয় উলটো
তাই? লিঙ্ক দেন তো কিছু, কম্পু কেমন রসিকতা বোঝে জানতে আগ্রহ হচ্ছে।
সত্যি কথা বলতে কি লেখাটা আরেকটু কম তথ্য সমৃদ্ধ হলে হেসে আরাম পেতাম
শেষ জোকটার মতো ঘটনা আমার জীবনে ঘটেছিল একবার তাই হাসলাম না
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
হেঁ হেঁ... তথ্যগুলা বাদ দিয়ে শুধু সবুজ অংশগুলা পড়েন
কন কী! খুইল্লা কন, আমরাও একটু জানি...
পোস্ট পড়া শুরু করতেই মনে হইলো এই লোকটা কেন লুকায়া আছে?
দুষ্টুকথায় নিজের একটা লেখার কথা মনে পড়ে গেলো
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
আর কেন বলেন দাদা, ওই লোক্টা সচলে আর লেখেন না, এইটা যে কত দুখ...
ওইটা তো আগেই আগেই পড়ছি... তবে নন-খাইষ্টা কৌতুকও তো এখানে আছে, সেগুলো কি তবে জমে নাই?
আপনার এই লুকায়া থাকা লুকটার লিংক ধরে যেয়ে দেখি “রাজার ভান্ডার”! কামরাঙা ছড়াগুলো যেমন লাগলো তেমনি মারাত্মক খুশী হলাম দ্বিপদীদের নিয়ে (----)পেয়ে, মনের মাধুরী মিশিয়ে বহুদিন পর গালাগালি করলাম। মৃদুল এর সাথেতো উনার দেখি বিরাট খাতির ছিলো, মৃদুলকেই ধরতে হবে; উনার বিরাট কারিগরী বিদ্যা
ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ বাদ দিয়ে শুধু জোকগুলি পড়লাম। একটা দুইটা অবশ্য আগেই পড়া ছিল, তারপরও ভাল্লাগলো। মানে মজা লাগলো আর কি!
এটা সেই পিঁপড়েদের বালি থেকে চিনির দানা বেছে নেওয়ার মত
অনীয়’দা (পছন্দ): আর বেশীদিন অপেক্ষা করতে হবে না, তিথী আমাদের বড় হয়ে যাচ্ছে।
ও এখন মেঘবালিকার রুপকথায় কথার যাদুকর খোঁজে।
কৌস্তুভ দা, অসাধারণ।
তিথী বড় হলে গেলে কী করবেন, লুল ফেলবেন? খবর্দার!
ধন্যবাদ ভাই।
কৌস্তুভ’দা নজুলুলু ভাইকে বলে দেব কিন্তু !!!!
"আমি কি ডরাই, সখি, ভিখারী রাঘবে..."
দুই বেরাদরের খোঁচায় বাঁচি না.. এই এলেন আরেকজন! কী জ্বালা রে বাবা।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
সেকি! তোমাকে কে খোঁচালো খুকি? নামটা বলো খালি পিটিয়ে সোজা করে দিচ্ছি, হুঁহুঁ, বড় ভাইরা আশপাশে থাকতে পিচ্চি বোনটাকে খোঁচানো, মামদোবাজির আর জায়গা পেলো না ... এই আস্তিন গুটালাম...
অনীয়’দা, (পছন্দ)
পাড়ায় ঢুকলে ঠ্যাং খোড়া করে দেব,
বলেছে পাড়ার দাদারা
অন্য পাড়া দিয়ে যাচ্ছি তাই।।।
অঞ্জনের এই গানটাতো ভুলি নাই
ভাই, আমি এত ব্যকরন আর ব্যাখ্যা বিশ্লেষন মেনে হাসতে বা মজা পেতে অভ্যস্থ নই। তবে এটুকু বুঝতে পেরেছি লেখার জন্য আপনি অনেক স্টাডি করেছেন এবং অর্জিত জ্ঞান অত্যন্ত সফলতার সাথে delivery দিয়েছেন। ধন্যবাদ আপনাকে।
না গো দাদা, কিছুই স্টাডি করি নাই, এগুলো উপর-উপর পাঠপ্রতিক্রিয়া মাত্র।
আপনাকেও ধন্যবাদ।
যাক্ বাবা, রক্ষা ! ভাগ্যিস আমি হাসি-তামাশা বুঝি না !!
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
কী যে কন! সচলাড্ডার ফটুকে আপনারে দাড়িটুপিসমেত হাসতে দেখি নাই?
সে এক আদ্যিকালে হাস্যপরিহাস নিয়ে সামান্য রগড়ের কোশেশ করেছিলাম।
লেখাটা দিব্যি হয়েছে
--------------------------------------------
যদ্যপি আমার গুরু শুঁড়ি-বাড়ি যায়
তথাপি আমার গুরু নিত্যানন্দ রায়।
ধন্যবাদ, লিঙ্কের জন্যও। পড়ে মন্তব্য করে এলাম।
চমৎকার লেখা।
ধন্যবাদ নৈষাদদা
মচৎকার হইয়াছে! আমি নিজেও পানাসক্ত! কিন্তু আফসুস! আমার আশেপাশের মানুষেরা বড় রামগরু ধরনের উহাদের জন্য বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই তামাশাটির রস শুকিয়ে শুটকি হয়ে যায়! সন্ন্যাসীরে বড় মিসাইলাম এইখানে! সেই লুক্টি বড় খ্রাপ!
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
সেই খ্রাপ লুক্টিকে আমিও বড় মিস্করি!
আমিও কিন্তু বড়ই পানাসক্ত, মাথায় কিছু এলেই আমারে শোনাইবেন কিন্তু! একসাথে একটা পানের দোকানই খোলা যাবে নাহয়
যথারীতি চমৎকার!
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
হেঁ হেঁ...
কি আর কমু-
লেখাটা তো চ্রম আর জোক গুলো বাসি না
তাও হাসি চেপে যাই- আদর্শ হাসি না।
কেউ যদি বেশি বোঝে তাই ঝেড়ে কাশি না
মোটা হব সেই ভয়ে ডিনারেতে খাসি না।
পথিক রহমান
নজরুল ভাইয়ার পোষ্টের খবরটা পড়ে মনটা সাংঘাতিক বিষন্ন হয়েছিলো। সত্যি বলছি, বিষন্নতা ভুলতেই আপনার পোষ্টে এসেছিলাম। একটুও ভুল হয়নি আমার! বাকীকথা পরে বলে যাবোক্ষন(হোমটাস্ক বাদে)...........আপাতত লেখায় আর পোষ্টদাতাকে (গুড়) (গুড়) (গুড়)
যাক, আপনাকে বিষন্নতার মধ্যে যে একটুখানি বিনোদিত করতে পেরেছি এতেই আমার আনন্দ।
কিন্তু বলেন কী, হোমটাস্ক? আপনিও কি এখনও ছোট্টটি আছেন?
লেখা তো উমদা হয়েছে, বিষয়টাও চমৎকার। তবে আমার কাছে যেটা ভালো লাগে আপনি বেশ যত্ন নিয়ে লিখেন।কৌতুকের একটা নিজস্ব ঢং তো আছেই, তার উপর চোখে পড়ে আপনার ফরম্যাটিং। উপস্থাপনার গুণে আপনার পোস্ট পড়তেও আরাম, চট করে যে কোন জিনিস খুঁজে পেতেও সুবিধা হয়। এই যে আপনি প্রত্যেকটা কৌতুককে সবুজ উদ্ধৃতি বাক্সে রাখলেন, কথা গুলো প্যারা করে দিলেন - এক নজরে যে কেউ পোস্ট সম্পর্কে একটা আইডিয়া পাবে। ব্লগে লেখার ক্ষেত্রে এই ব্যাপারটা মাথায় রাখা জরুরী। (গুড়) (গুড়) (গুড়)
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
আঃ, আপনার ব্যাখ্যা শুনে মনটা ভালো হয়ে গেল! কন, আইসক্রিম খাবেন?
ঐ মিয়া, খাওয়ার ব্যাপারে না করেছি কখনো?
তাত্তাড়ি...
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
ইয়ে, কারো সামনে বসে তাকে না দিয়ে আইসক্রীম খাওয়া কি উচিত?
আচ্ছা, আপনাদের দুজনের জন্যই
লেখাও ভালো বুদ্ধি আরোও ভালো। সাড়ে ১৭ বছরের কাহিনী দিয়ে শুরু করলে যে পাব্লিক হুড়মুড় করে পোস্টে ঢুকে আরো ছয়মাস বেশি বয়েসি লেখা খুঁজতে খুঁজতে পুরোটা পড়ে ফেলবে তা ভালোই জানেন। আমিও কিন্তু পড়া শুরু করলাম ওইটা ভেবে আর লগাইলাম ওইটা নাই দেখে কমেন্ট করতে (থাকলে কিন্তু কমেন্ট করতাম না)
০২
কৌতুক বলার পর যদি কেউ না বোঝে কিংবা না হাসে তাহলে কৌতুককারীরর চেহারার যে অবস্থা হয় সেটা কোন থিউরিতে পড়ে?
আর কৌতুকের অর্থ যদি বুঝিয়ে দিয়ে বলতে হয়- এইখানে হাসো? তখন?
আপনারে সত্যিই কিছু কওয়ার নাই
ডেনেট সাহেবকে, সেইসাথে আপনাকেও।
ভালো কথা, আমি ‘ফানাসক্ত’।
আম্মো
প্রথম কৌতুকতা পড়ে এমন হাসি দিয়েছি যে পুরো পোষ্ট আর পড়া হয়ে ওঠেনি, পরে পড়বনে
ডেনেটের শুধু দু'টো বই পড়েছি- Darwin's Dangerous Idea আর Breaking the Spell। দাদুর লেখনী অত্যন্ত চিত্তাকর্ষক, পড়ার সময় মনে হয় যেন উনি পাঠককে কোলে বসিয়ে মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে বিজ্ঞান আর দর্শন শিখিয়ে দিচ্ছেন। বিশ্বাস করেন আর নাই করেন, দাদুর অতিরিক্ত বিনয়ের জন্য ব্রেকিং দ্যা স্পেল বইটা অর্ধেক পড়ে রেখে দিয়েছি- ধর্মের বিষয়ে দাদুর বিনয়ের চেয়ে ডকিন্সের ইন ইয়োর ফেইস আচরণটাই বেশি ভাল লাগে।
ভালো বলেছেন। দাদুর লেখার হাত বেশ ভাল, কিন্তু একটু বেশি কথা বলেন...
লেখাটা পড়ে বিখ্যাত চোর-জোড় 'টুকি' আর 'ঝা'-এর কথা মনে পড়ে গেল
অটঃ এ লেখার লিঙ্ক ধরে এক এক করে বেশ ক'খানা পুরোন লেখা পরান ভরে পড়ে এলাম, আপনাকে তাই- ধন্যবাদ জানাই
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
হে হে...
দুরদান্ত আলোচনা
নতুন মন্তব্য করুন