ঘুমপাড়ানি মেহেরপিসি

কৌস্তুভ এর ছবি
লিখেছেন কৌস্তুভ (তারিখ: মঙ্গল, ০৮/১১/২০১১ - ৩:৪০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ঘন্টাদুয়েক ধরে মরমিয়া সুফীবাদের ছয়েনছবিলা বিজ্ঞাপন দেখার পর মনে হল, এপারবাংলার দরদিয়া শ্যামাসাধনাই বা বাদ যায় কেন? এই সিনেমার যে মূলার্থ কালীর মতনই ন্যাংটাভাবে প্রকাশিত হয়ে পড়েছে, তাকে রামপ্রসাদী ছাঁচে ফেললে দাঁড়ায়:

দে মা আমায় বেলুচ ধরি–
আমি পাকিসেনারেই পিরিত করি।
(ওমা) মেহের বলে এমন রূপের জ্বালায় জ্বলে আমি মরি–
(এখন) ধবল সবল পুরুষ পেলে কোমল বুকে চেপে ধরি॥
দে মা আমায় বেলুচ ধরি...

এখানে সাউথ এশিয়া ইনিশিয়েটিভের আয়োজিত স্ক্রিনিংয়ে ঢুলতে ঢুলতে যা দেখলুম, মেহেরযৌবন ছবিটি মূলত একটি গোলাপিবর্ণ ঘুমপাড়ানি কমেডি ছবি। সে ছবি শুরুই হয় হলভর্তি খ্যাকখ্যাক হাসির মধ্যে দিয়ে – ভাষ্যকারের কথাকে বড় বেশি লিটারালি নিয়ে ফেলে, ৪৭’এর পর পূর্ব আর পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে ‘দূরত্ব তৈরি হতে থাকে’ দেখানো হয় ম্যাপে পাকিস্তান বাঁ দিকে আর বাংলাদেশ ডান দিকে চলকে পড়শিদেশের ঘাড়ে উঠে পড়ার মাধ্যমে। একবার ভাবলাম, জঙ্গি দেশপ্রেমিক হয়ে পড়ে ’বন্দেমাতরম’ হাঁক দিয়ে সামনের সারিতে বসে থাকা রুবাইয়াতের ঘাড়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে কিলাকিলি করি, তার বাংলাদেশ কেন ভারতের মেঘালয়-ত্রিপুরা-আসামের জমিতে ঢুকে পড়বে? তারপর দেখলাম, মহিলাকে মাপ করে দি, ব্যাপারটার একটা ভালো ইন্টারপ্রিটেশনও হয় – পাকিস্তান কান্তে কান্তে পশ্চিমের দিকে ছুটে যাচ্ছে, আর বাংলাদেশ ভারতের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে...

তারপর ধরেন দুঃখেষুঅনুদ্বিগ্নমনাস্থিতধীমুনিপ্রবর নানাজান ওরফে খাজাসাহেব, যিনি ধোপদুরস্ত পোশাকআশাকে আর চোস্ত কলকাত্তাইয়া বাংলায় প্রচুর কোল্ডব্লাডেড জ্ঞান দিয়ে যান সিনেমা জুড়ে। তিনি এক জায়গায় মাছভাত উদরসাৎ করে বলে ওঠেন, ‘বাঙালি চিরকাল লুঙ্গি-রামদা হাতে নিয়ে যুদ্ধ করেছে...’ আমি ফিকফিক করে হাসতে হাসতে ভাবি, রামদা তো ঠিকাছে, কিন্তু কী এমন আপৎকালীন দুর্দশায় লুঙ্গি কোমর পরিত্যাগপূর্বক হাতে চলে এল? দুর্ধর্ষ্‌ দুশ্‌মন্‌’দের দেখে কি বাঙালিরা লুঙ্গিতে ইয়ে করে ফেলেছিল?

আর কমেডির শীর্ষচরিত্র অবশ্যই বেলুচসৈন্য খাঁসাহেব, যিনি নায়িকার সঙ্গে ঝোপেঝাড়ে বনেবাদাড়ে ‘নান্নামুন্না রাহী হুঁ, দেশকা সিপাহি হুঁ’ গাইতে গাইতে ঘুরে বেড়ান, এবং রূপেগুণেস্বাস্থ্যে ও অবশ্যই অভিনয়দক্ষতায় বলিউডে (যেহেতু এই সিনেমা নানাবিধ জায়গায় বেস্ট বলিউড মুভি হিসাবে প্রাইজটাইজ বাগায় বলে দেখা যায়) উপেন প্যাটেলের পর যাঁর তুল্য হিরো আর দেখা যায় নি। তাঁর প্যারালালি নায়িকা আবার ‘গুলবাগিচার বুলবুলি আমি, রঙিন প্রেমের গাই গজল’ অক্ষরে-অক্ষরে মেনে মাঠঘাটবিহার চালাতে থাকে। এবং সেই শিমূলপুষ্পসম পেলব ও মেগাপ্রেমিক চরিত্রের এপিটোম দেখা যায় একটি নধরপুষ্ট কালোকোলো ছাগশিশুর ওয়াসিমখানকে কোলে করে আদর করার দৃশ্যে, থুড়ি, ওয়াসিমখানের ছাগশিশুকে কোলে করে আদর করার দৃশ্যে, যেমন বাৎসল্যরস ‘দা কিড’এ চ্যাপলিনের পর পর্দায় আর কেউ ফুটিয়ে তুলতে পারেননি। (লক্ষণীয়, কিড-এর এক অর্থ ছাগশিশুই বটে। এবং ছাগ পাকিস্তানের জাতীয় শিশু, থুড়ি, জাতীয় পশু।) আফসোস, হার্ভার্ডের স্নব জনতা তার মর্যাদা না দিয়ে কেবল হাহাহোহো করে হাসতেই ব্যস্ত ছিল।

‘একটা যুদ্ধের’ সময়কার যে ছবিতে যুদ্ধের কোনো রেশ নেই, মুক্তিযুদ্ধ শব্দটার উল্লেখও নেই, আর কোনো যুদ্ধকালীন টেনশনও দর্শকের মনে ফুটে ওঠে না একবিন্দুও, তা ঢুলতে ঢুলতে দেখতে দেখতে বুঝলাম, যে অনেক কিছুই বুঝলাম না। মুক্তিযোদ্ধাদের পাকি পিটাবার অনুমতি চাইতে খাজাসাহেবের কাছে ছুটে ছুটে আসা লাগে কেন? বিবাহবন্ধনের মধ্যেই কেবল এ ছবির ক্লান্তশ্রান্ত (কোনো কাজকাম ছাড়াই) মুক্তিযোদ্ধারা মুক্তির স্বাদ খোঁজে কেন? একবার প্রেমের ঠাকুর শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নামোল্লেখ (আহা ভিক্টর ব্যানার্জির কত পুণ্য হয়েছিল!) বাদ্দিলে গোটা ছবিতে হিন্দুদের (বা পাকিদের হিন্দুতাড়ানির) কোনো প্রসঙ্গ নেই কেন; মহাবিচক্ষণ সর্বজনকল্যাণকামী নানাজানও তাদের ফেলে কেবল মুসলিমদের হালত নিয়েই ভাবিত কেন? ওদিকে আবার ধার্মিক মুসলিম মেহেরজানের সাজগোজের টেবিলে গণেশ আর বিষ্ণুর মূর্তি কী করে? ডুডুকাল থেকে জার্মান পরিবারের পালাপোষা সারাহ’র বাংলা-ইংলিশ কোনোটাতেই জার্মানের গন্ধমাত্র নেই কেন? পাকি আর্মির কি বিশেষ মেক-আপ ইউনিট থাকত, যে ‘খানেলাগা’ হয়ে ফেরার পথেও নীলাকে অমন পিসিবাড়ী যাওয়ার মত সাজুগুজু করিয়ে দেওয়া হয়? খাজাসাহেবের বাড়িতে যে অমন মেক-আপ ইউনিট ছিল সে তো শিওর, নইলে অমন সাউথ সিটি মল থেকে কেনা রঙ্গিবিরঙ্গি জামাকাপড় ‘গণ্ডগোলের’ সময় মেহেরজান পেত কোত্থেকে? আর তার মাসতুতো ভাই কি যুদ্ধে যাওয়ার নাম করে কলকাতার সাউথপয়েন্ট ইঞ্জিরি মিডিয়াম ইস্কুলে ক্লাস করে গিয়েছিল, নইলে ‘আমি তোমাকে জেনুইনলি ভালোবাসি’র মত ট্যাঁশ ভাষা শিখল কেমনে? পাকি সৈন্যদের কি ট্রেনিং দিয়ে এমন ফুলের ঘায়ে, থুড়ি, চুড়ির ঘায়ে মুচ্ছো যাওয়া পাবলিক হিসাবে তৈরি করে দেয়া হয় ওয়াসিমের মত? এই যেমন শুনলাম, সে যুদ্ধ করতে পূর্ব পাকিস্তানে এসে এত হানাহানি, (মুছলিম) ‘ভাইয়ে ভাইয়ে শত্রুতা’ ইত্যাদি দেখে ফেলল যে তার মন বিষিয়ে গেল, অথচ ওই মসজিদে অ্যাকশনের আগে তাকে কখনও গুলি চালাতেই হয়নি, যে ব্যাখ্যা দিয়ে খাজাসাহেব তাকে ক্ষমা করে দিলেন?

ছবিটা অবশ্য একেবারেই খারাপ, এমন না। ‘মনের মানুষ’এর পরে আবারও বড় পর্দায় বাংলার সুন্দর প্রকৃতি দেখে বেশ মনটা ইয়ে হয়ে গেল। আর টুকরোটাকরা ভাল কিছু কমেডি ছিল, সে তো বললামই। সালমা’র মুক্তিযোদ্ধা শিমুলের সাথে রোম্যান্টিক ড্রিম সিকুয়েন্স, যেটার কালমিনেশন হচ্ছে সুসজ্জিত বাসরঘর হিসাবে তার বাঙ্কার-আলমারিটায় দুজনের ঢুকে পড়া, সেটা একটা ভাল ইচ্ছাকৃত কমেডি। উল্লেখ্য, ছবিটায় মুক্তিযোদ্ধাদের বারেবারেই আকাইম্মা, যুদ্ধ-অনিচ্ছুক ল্যাদখোর, বে’পাগলা, নাদুসনুদুস হিসাবে দেখানো হয়েছে, এবং ওই দৃশ্যটার মত কমেডির পাত্র করে তোলা হয়েছে বারবার। এমনকি, তাদের প্রতি যে পিরীত করে সেই সালমা’ও মাথাপাগলা ও হাস্যকর। ওদিকে পাকিসেনা টল, ফেয়ার (এবং লাভলি তো বলাই বাহুল্য) অ্যান্ড হ্যান্ডসাম, তারা বারবার লম্বু বলে খ্যাতি পায় – কারা এবং কী যে লম্বা, সে ফ্যান্টাসির গোপন কথাটি আর গোপন রয় না; লম্বু শব্দটার আর্ষপ্রয়োগ তো আর আজকের না। ব্যালেন্স করার দায়ে অন্যদিকে মুক্তিযোদ্ধা শিমুলকে লম্বু বলে বারকয়েক ডাকা হলেও তার পৌরুষ কেমন হাস্যকর তা ওই স্বপ্নদোষেই, থুড়ি স্বপ্নদৃশ্যেই প্রকাশিত।

পয়সা দিয়ে হলে এ ছবি দেখা বেকারই হত, কিন্তু যেহেতু টিকিটফিকিটের ব্যাপার ছিল না, বরং শেষে ব্রাউনিটাউনি খাদ্যদ্রব্য দিয়ে আমাদের পরিতোষের ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল, তাই আর বেশি নালিশ করব না।

*****************************************

চলচ্চিত্র শেষ হলে’পর পোডিয়ামের টেবিলের উপর রাখা চারসারি জলের বোতলের পিছে গিয়ে চারজন তরুণী বসে পড়লেন। তাঁরা হচ্ছেন প্যানেলিস্ট – বুঝলাম আজকের আলোচনাচক্র শর্মিলা বসুর বুক-রিভিউয়ের মত শ্রোতা-প্রধান খোলামেলা হবে না। প্রথমজন ইলোরা চৌধুরী, ইউনি. অফ ম্যাসাচুসেটস-বস্টনের ফ্যাকাল্টি। সিনেমা শুরুর আগে তিনিই দর্শকদের জন্য ব্যাকগ্রাউন্ড হিসাবে ১৯৭১’এর সংক্ষিপ্ত পরিচয় আর সিনেমাটা নিয়ে বিতর্ক বয়ান করে দিয়েছিলেন বেশ কড়া ভাষায়। দ্বিতীয়জন পরিচালিকা নিজে, যিনি সালমা চরিত্রের অভিনেত্রীও বটে। সত্যি বলতে, জোয়ানবয়সের চরিত্রদের প্রায় সবারই অভিনয় বেশ খারাপ, কেবল রুবাইয়াতের অভিনয়ই মোটামুটি ভাল।

যেহেতু ইলোরা’র কথা বলা শুরুতেই হয়ে গেছে, প্রথমে মতামত শোনালেন তৃতীয় প্যানেলিস্ট, লেসলি ইউনির প্রফেসর রাকসান্দা সালীম। তিনি বললেন, পাকিস্তানি হিসাবে আমি অন্য কোনো দেশের মানুষ কীভাবে তাদের ইতিহাসকে রূপায়িত করবে বা কীভাবে রিকনসিলিয়েশন অ্যাপ্রোচ করবে, তা নিয়ে আমি মতামত দিতে যাব না। এইটুকু বলব, কারোর সাথে রিকনসিলিয়েশন শুরুর আগে তাদের দিক থেকে অফিশিয়াল অ্যাপোলজিটুকু আসা জরুরী, যেটা আমার দেশ আদৌ দেখায়নি। তখনকার তাদের নিজেদের দেশবাসীর বিরুদ্ধেই তারা যে জিনোসাইড করেছিল, তার খতিয়ান করায় হামিদুর রহমান রিপোর্টটাকেই ভুট্টো খারিজ করে দিয়েছিলেন।
শেষে বললেন, সাধারণ নাগরিক হিসাবে আমাদের সাধ্য সীমিত – আমরা ‘অ্যাকশন ফর প্রোগ্রেসিভ পাকিস্তান’ সংগঠনের পক্ষ থেকে ২০০৯ সালে বাংলাদেশী পত্রিকা ডেইলি স্টারে একটা জনতার পক্ষ থেকে অ্যাপলজি ছাপিয়েছিলাম।

শেষ প্যানেলিস্ট ছিলেন জেন্ডার স্টাডিজ-এর গবেষক জ্যোতি পুরি। তাঁর বক্তব্যে শুরুতেই বলে নিলেন, আমি এই পরিপ্রেক্ষিত থেকেই সিনেমাটার সমালোচনা করতে চাই, কারণ ছবিটায় মূলত একটা প্রথাগত হেটেরোসেক্সুয়াল রিলেশনশিপকেই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে – অন্যরকম কিছু কি ১৯৭১-এর পটভূমিতে দেখানো সম্ভব হত? অনেকে বলবেন, হত না। আর বলা হচ্ছে, এই সিনেমাটাকে আক্ষরিক অর্থে না নিয়ে এর বক্তব্যটাকে দেখতে – যে রোমান্স নানা সমস্যা এবং লিঙ্গবৈষম্যকে অতিক্রম করে যেতে পারে।

তাঁর একটা সমালোচনা এই যে, রোমান্সকে প্রাধান্য দিয়ে কেবল রিকনসিলিয়েশন-কেই সুযোগ দেওয়া হচ্ছে, ১৯৭১ সময়ের রেকনিং (উপলব্ধি, পর্যালোচনা) উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে। ছবিটায় সেন্টিমেন্টালিটির বাড়াবাড়ি – যেকোনো বড় সমস্যার সমাধানই কি কেবল প্রেম-ভালোবাসা? এই ছবিটায় প্রকৃত ইতিহাস একটা সফট ফোকাসে রয়ে যাচ্ছে, আর জটিল ইস্যুগুলো এড়িয়ে যাওয়া যাচ্ছে।

নামী (আঁতেলেকচুয়াল) ‘হিরোশিমা মন আমুর’ সিনেমাটার তুলনা এনে বললেন, সেটাও ফরাসীদেশে বিশ্বযুদ্ধের সময়কালে হানাদার জার্মান সৈন্যের সঙ্গে ভালোবাসার সিনেমা, কিন্তু সমস্যাসঙ্কুল বাস্তব আর যুদ্ধপরিস্থিতিকে সেটা যত্ন নিয়েই উপস্থাপিত করে।

শেষ কথায় বললেন, ‘লাভিং দি আদার’ ঠিক আছে, কিন্তু এখানে আসলে যেটা দেখানো হচ্ছে, সেই ‘ফলিং ইন লাভ উইথ এ মোর পাওয়ারফুল এনিমি’ ব্যাপারটার অর্থ একই কিনা, দর্শকেরা ভেবে দেখবেন।

এরপর রুবাইয়াতকে নিজের ডিফেন্স করার সুযোগ দেওয়া হল। তিনি শুরু করলেন এই বলে, যে মেনে নিচ্ছি, ইতিহাসের সব দিকগুলো নিখুঁতভাবে দেখানো হয়নি, কিছুটা সিমপ্লিস্টিক হয়েছে। তবে কথা হল, ছোটবেলা থেকেই আমরা কেবল পাকিস্তানকে একটা ঘৃণ্য বস্তু হিসাবেই শিখে আসছি। কিন্তু বড় হয়ে পাকিস্তানের ইতিহাস পড়ে, গবেষক হিসাবে সুফিজমের ইতিহাস ঘেঁটে, বুঝলাম যে শুধু ‘কারেন্সি অফ হেট’ ভাঙিয়ে বাঁচা ঠিক না। পাকিস্তানেও তো অনেক সচেতন অ্যাক্টিভিস্ট মানুষেরা আছেন।

এই ছবি বানানোর সময় নাকি রিকনসিলিয়েশনের কথা তাঁর মাথাতেই ছিল না। তিনি মানুষের দেশ-ভাষা-সমাজের বেড়া অতিক্রম করে যাওয়ার ছবি আঁকতে চেয়েছিলেন। জ্যোতি’র রোম্যান্টিসিজমের সমালোচনা স্বীকার করে নিয়ে বললেন, তাঁর যে ইন্টারভিউয়ে পাওয়া স্মৃতিচারণ থেকে এই সিনেমার প্লট বানানো, সেটাও খুব ‘টেন্ডারনেস’ সহকারেই বলা হয়েছিল, তিনি সে বাচনের মধ্যে অনেক আশা পেয়েছিলেন। তাছাড়া নারীবাদ-গবেষক ও ইউ.এন.ও.-র কর্তা নোয়েলিন হেজার নাকি বলেছিলেন, হিংসার শোকদুঃখ ভোলাতে ‘অ্যাসথেটিক সলিউশন’ চাই।

*****************************************

এরপর মিনিট পাঁচ-দশের জন্য শ্রোতাদের মন্তব্য করার সুযোগ দেওয়া হল। এক ভদ্রলোক উৎসাহের চোটে আইলে নেমে পড়েছিলেন, তাঁকেই প্রথম মাইক দেওয়া হল। তিনি বললেন, আমি সদ্য বাংলাদেশে সরকারের উপদেষ্টার পদ থেকে ফিরছি। আমি যাঁর বাড়িতে থাকতাম, তিনি বৌকে খুবই ভালবাসতেন – ৭১’এর ভয়াবহতা দেখার পর ওই মহিলা বাকশক্তি হারান, উনি তাঁকে প্রচুর সেবাযত্ন করতেন। আর সে সময়ের সংখ্যাগুরু খারাপ পাকিস্তানি সেনার কার্যকলাপ এ ছবিতে দেখানোই হয়নি। তাই আমার মত, এমন ‘ডীপলি অফেন্সিভ’ ছবি তৈরি করাই উচিত হয়নি।

তাতে আরেক মহিলা মাইক নিয়ে বললেন, আমার আগের জনের এবং প্যানেলিস্টদের সমালোচনা বড্ড কড়া হয়েছে। এতে বাংলাদেশের সৌন্দর্য, সামন্ততন্ত্রের মত নানা সূক্ষ্ম দিক, ভালোভাবে তুলে ধরা হয়েছে। পলিটিক্সকে ছাপিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। ওয়াসিমের মত যারা উপরওয়ালার আদেশকে অস্বীকার করতে পারে, তাদের আমি শ্রদ্ধা করি। আমার মনে হয়, এই ছবি উপলব্ধি করার সময় এখনও তৈরি হয়নি; ভবিষ্যতে আরো বহু লোক এই সিনেমাকে গ্রহণ করতে পারবে।

এদের উত্তর দেওয়ার জন্য আবার রুবাইয়াতকে সময় দেওয়া হল। তিনি বললেন, হ্যাঁ হ্যাঁ, এই দেশকালের বেড়া ছাপিয়ে যাওয়া দেখাতেই তো আমি পাকিস্তানি উদারপন্থী কবি ফয়েজ আহমেদ ফয়েজের বাংলাদেশ দেখার পর ফিরে এসে লেখা গজলটা ব্যবহার করেছি এই ছবিতে। আর এমন সিনেমা করতে দেওয়াই উচিত নয়, দেখাতে দেওয়াই উচিত নয় – এমন বললে সৃষ্টিশীলতাকে বাধা দেওয়া হয়।

এরপর এক মহিলা লম্বাচওড়া বাণী দিলেন – আমার তো এই ছবিটা দারুণ লেগেছে, ‘এক্সট্রিমলি ইরোটিক’ ফিল্ম – কালার, বিউটি, ল্যান্ডস্কেপকে তুমি যেভাবে ছুঁয়ে ছুঁয়ে গেছ, যেভাবে ‘সেম-সেক্স ইরোটিকা’রও ইঙ্গিত দিয়েছ... ধর্ম, রোমান্স, স্পিরিচুয়ালিটি, ইরোটিসিজম কত কিছু নিয়ে খেলা করেছ; এসব মোটেই এসকেপিজম না। গ্রাম্য, ‘পাস্তোরাল’ পটভূমি, হিংসার অভাব, এইজন্য লোকে রেকনিং-এর অভাব বলছে বটে। আর জ্যোতির কথাপ্রসঙ্গে বলি, সারাহ তো লেসবিয়ান; বরং ‘জেন্ডার নর্মস’ ভেঙে মুক্তি আনার কথাই ছবিতে বলা হয়েছে, যেভাবে মেহের শেষে সুফীবাদের বইখানা সারাহ-এর থেকে পড়তে নিল।

তাতে ফের রুবাইয়াত উৎসাহের সঙ্গে বলতে শুরু করলেন, এই দেখুন না, মুজিব বালুচিস্তানে গিয়ে বলেছিলেন, আমরা এপাশ থেকে আর তোমরা ওপাশ থেকে চল সরকারকে একসাথে চাপ দিই... বাংলাদেশে সেই সময় অনেক ভালো বালুচ সেনার গল্পও ছড়িয়েছিল, পাঞ্জাবী/পাঠানদের না (অবশ্য হপ্তাখানেক আগেই শর্মিলা বসু ‘ভালো বালুচ’ গল্পগুলোকে গুজব, তথ্যপ্রমাণবর্জিত বলে গেছেন); বালুচ আর্মি স্থানীয়দের উপর অত্যাচার করতে অস্বীকার করে চট্টগ্রাম সেনাছাউনিতে নাকি বিদ্রোহই করেছিল (শর্মিলা আবার বলেছিলেন, তেমন যথেষ্টসংখ্যক বালুচ নাকি পাক আর্মিতে ছিলই না)।

তারপর প্রায় সারপ্রাইজ-গিফট পাওয়া শিশুর মত উৎসাহের সাথে বললেন, ঠিক ঠিক, সারাহ-র চরিত্রটা তো পরিকল্পিত ছিলই, অরূপ-রাহীর মত দুজন পুরুষ একসাথে খালিখালি থাকে, এসব ইঙ্গিত নিয়েই কত সমালোচনা হয়েছে, তাও তো আমি স্পষ্ট করে কিছু বলতেই পারিনি।

আরো বললেন, ঠিকই বলেছেন, এখানে এসকেপিজম না, রোমান্স-স্পিরিচুয়ালিটি-ইরোটিসিজম এসব দিয়ে ওই যুদ্ধের দুঃখকষ্ট ভোলার চেষ্টা করা হয়েছে। পুরুষতান্ত্রিকতার থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করা হয়েছে। যেসবের জন্য ‘তালাশ’ বইটা এত বিতর্কিত হয়েছিল। কিন্তু মহিলাদের কেন তাদের উপর চাপিয়ে দেওয়া পুরুষতান্ত্রিক ন্যাশনালিজমের বোঝা বইতে হবে? আসলে বাংলাদেশের লোকে ১৯৭১-এর সময়ের রূপায়ণ হলে কেবল দুঃখকষ্টই দেখতে চায়, সেখানে আমি প্রেমের মধ্যে দিয়ে দেখাতে চাওয়ায় লোকে অসন্তুষ্ট হয়েছে।

খানাপিনার সময় এসে পড়ায় আমরা জনাকয় হাত-টাত তুললেও প্রশ্ন করার সুযোগ পেলাম না আর।

*****************************************

চিপস খেতে খেতে সেই খ্যাপাটে ভদ্রলোকের সঙ্গে পরিচয় হল। আমাকেই ডাকলেন, কী, আপনাকে বাঙালি-বাঙালি মনে হয় দেখে? বললাম, হ্যাঁ, তবে কলকেতো। তেনার নাম জোনাথন রিচমন্ড, তিনি নাকি এম.আই.টি.তে যোগাযোগব্যবস্থা নিয়ে গবেষক, নানা জায়গায় উপদেষ্টার কাজ করেন। বাংলাদেশেও মন্ত্রীর অধীনে উপদেষ্টা হিসাবে কিছুদিন ছিলেন, কিন্তু কাজের সুবিধা না হওয়ায় ছেড়ে ফিরে এসেছেন। বললেন, এনার বাবা যে মন্ত্রী সে কথা আমি তখন তুলিনি, কারণ সেটা অসম্পর্কিত হত, কিন্তু নানারকম সুবিধা যে পেয়ে থাকবেন এই সিনেমাটা করতে গিয়ে সে তো বলাই বাহুল্য। বিশেষ করে যখন ওই মন্ত্রী সে দেশের অন্যতম করাপ্টেড লোক। ওনার সঙ্গে কাজের সুবিধা হত না, আমার সঙ্গে বনতও না; যদিও অন্যান্য পদাধিকারীদের সঙ্গে আমার সম্পর্ক বেশ ভালোই ছিল। খোদ প্রধানমন্ত্রীর সচিবের সঙ্গেই আমার খুব ভালো পরিচয় ছিল, মাঝেমাঝেই ওনার বাসায় চা-নাস্তা খেতে যেতাম। ওনাকে বলেছিলাম যে, আপনাদের পি.এম.কে বলুন, কিছু কাজ করতে হলে এই মন্ত্রীকে সরান। তাতে উনি বলেছিলেন, সে কথা কী আর ম্যাডামকে বলা হয়নি? কিন্তু উনি বড়ই পাওয়ারফুল, ম্যাডামেরও ওনাকে সরাবার ক্ষমতা নেই।


মন্তব্য

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

আমি ভেবেছিলাম এটা কেবল পর্ণো ছবি, এখন জানলাম এটা পর্ণো কমেডি! হো হো হো

শেষ প্যারাতে এ কী শোনালেন!

লেখাটার জন্য কৃতজ্ঞতা।

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

কৌস্তুভ এর ছবি

নতুনদের মধ্যে, ওই এক সজলের কালেভদ্রে এক-আধটা লেখা বাদ দিলে রম্য'র বাজারে আমার শত্রুপক্ষ তেমন কেউ ছিল না। কিন্তু একটু ঢিলা দিতেই উদাস বলে ওই এক ক্যাপিটালিস্ট এসে পুরো বাজারটাই দখল করার তাল করছে। তাই এমন খাসা কাঁচামাল পেয়ে ভাবলাম লিখেই ফেলি খানিকটে। খাইছে

তাপস শর্মা  এর ছবি

খোকা তোমার জন্য আমার ঠ্যাং ছড়িয়ে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। এরকম ছাগুনামৃতঅতিপেচ্ছাবগোত্রীয়পোঁদে চলচ্চিত্রটি তুমি এক জায়গায় বসে উপভোগ করলে কি করে। হায় হায় তারপর আবার ম্লেচ্ছেসুপাকিগোত্রীয়ফাকানিমান আলোচলা । আহা রে খোকা ওঁয়া ওঁয়া ওঁয়া ওঁয়া ওঁয়া ওঁয়া ওঁয়া ওঁয়া ওঁয়া ওঁয়া

কৌস্তুভ এর ছবি

ষাট ষাট... কাঁদে না...

তাপস শর্মা  এর ছবি

দেঁতো হাসি

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

আপনার পোস্ট পইড়া তো ঘুম ভাইঙা গেলো! হাসি

কৌস্তুভ এর ছবি

স্বপ্নদোষ বা স্বপ্নাদেশ হয় নাই তো? খাইছে

নাদির জুনাইদ এর ছবি

হিংসার শোকদুঃখ ভোলাতে 'অ্যাসথেটিক সলিউশন' এর অংশ হলো মুক্তিযোদ্ধাদের ক্লাউন হিসেবে উপস্থাপন করা! আলোচকরা এবং দর্শকরা কেউ এই ছবিতে মুক্তিযোদ্ধাদের এমন ডেপিকশন এর কারণ রুবাইয়াতকে সরাসরিভাবে জিজ্ঞেস করতে পারলেন না! দেখা যেতো সে কী উত্তর দেয়। রুবাইয়াত এই আলোচনায়ও একের পর এক যেসব কথা বলে গেল, সেগুলি নিয়েও তো তাকে অনেক সরাসরি প্রশ্ন করার সুযোগ ছিল। একজন লম্বাচওড়া বাণী দিয়ে ফেললো, আর অনেকের প্রশ্ন করার সুযোগ মিললো না। কী আর করা।

'হিরোশিমা মন আমু' ছবির প্রসঙ্গটি তুললেন কে? জ্যোতি পুরি?

কৌস্তুভ এর ছবি

হ্যাঁ, কী আর করা...

হুঁ - লেখায় স্পষ্ট না, কে কোনটা বলছে?

নাদির জুনাইদ এর ছবি

হ্যাঁ, স্পষ্ট। আমি প্রথমবার কোন কারণে বুঝতে পারিনি। আরেকবার পড়তেই স্পষ্ট হয়েছে।

কৌস্তুভ এর ছবি

যাক, শান্তি দেঁতো হাসি

নিটোল. এর ছবি

দারুণ লিখেছেন। এই বিষয়ে আপনি বেশ কয়েকটা লেখা দিয়েছেন সচলে। দুর্দান্ত কাজ হয়েছে।

কিন্তু শেষ প্যারা পইড়া ভয় পাইছি।

কৌস্তুভ এর ছবি

ধন্যবাদ, নিটোল।

দ্রোহী এর ছবি

কৌস্তুভ,

দেখা হবার দিন আপনাকে ছাগুর মাংস দিয়ে পারাটা খাওয়াবো। চোখ টিপি

কল্যাণF এর ছবি

আম্মো খাওয়ামু

কৌস্তুভ এর ছবি

ব্যাপারগুলো পদ্মাসেতুর প্রতিশ্রুতির মত হবে না তো? খাইছে

কল্যাণF এর ছবি

আমার অফারে যে রান্নাঘরের অধীনে দুই বেলা খাওয়া পাই তার পরিচালিকা প্রদত্ত এডভান্সড খাওন গ্যারান্টী থাকলো, চলবো? দেঁতো হাসি

কৌস্তুভ এর ছবি

এইতো, দেখেন পুরুষতান্ত্রিকতা... আপনার খাওয়ানোর ইচ্ছা আপনি ওনার উপরে চাপিয়ে দিচ্ছেন... মহিলারা যাতে এমন পুরুষদের চাপিয়ে দেওয়া ব্যাপার থেকে বেরিয়ে আসেন তাই জন্যই না ম্যাডাম সিনেমাটা বানিয়েছেন!

তাপস শর্মা  এর ছবি

হে হে হে কল্যাণভাবী এইবার একটা পেতিবাদ পত্তর লেখব মনে অইতাছে। কল্যাণ ভাই কি কন? আর আপনারে নারী বিদ্বেষী বানাইয়া দিয়া তারপর আপনার হাতে ছাগুরাম সুলভ ধরাইয়া দেওয়া হবে শয়তানী হাসি শয়তানী হাসি

তারপর একখান পেতিবাদ মিছিল - পেছিডেণ্ট হবে খোকা ( হে হে কোতুবাবু আর কি) । আর আমরা দলে দলে যোগ দেবো। শয়তানী হাসি

দ্রোহী এর ছবি

আমি না খাওয়ালে আপনি আমাকে খাওয়াবেন। কে খাওয়াবে তা ঠিক না থাকলেও খাওয়া যে হবে সেটা গ্যারান্টেড!

কৌস্তুভ এর ছবি

বোঝো!

অতিথি অন্যকেউ এর ছবি

আমার পক্ষ থেকে ছাগমাংস কনফার্মড। 'সর্বভুক'এর কসম। চোখ টিপি

কৌস্তুভ এর ছবি

ব্রাহ্মণভোজনের অনেক পুণ্য। আপনিও ষোড়শোপচার নিয়ে কাতারে খাড়িয়ে যান। খাইছে

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

হার্ভার্ডের দর্শকেরা হাহা-হোহো করে হাসছিলো বলছো? চিন্তিত

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

কৌস্তুভ এর ছবি

কই, আমি তো কিছুই বলি নি! কার কী কথা যে আমার মুখে বসিয়ে দাও! চোখ টিপি

হিমু এর ছবি

যা বুঝলাম, সিনামায় খাজা সাহেবরে গ্যাণ্ডল্ফ বানায়া ফালাইছে।

কৌস্তুভ এর ছবি

ঠিক। আজি হতে শতবর্ষ পরে যখন আমজনতা এই সিনেমার প্রকৃত মর্যাদা শিখবে, তখন গ্যান্ডল্ফ দা গ্রে আর নানাজান দা গ্রেটের মধ্যে তুলনা করে থিসিস হবে...

রু (অতিথি) এর ছবি

কিন্তু মহিলাদের কেন তাদের উপর চাপিয়ে দেওয়া পুরুষতান্ত্রিক ন্যাশনালিজমের বোঝা বইতে হবে?

কথাটার মানে বুঝলাম না। মুক্তিযুদ্ধটা তার মানে শুধু পুরুষদের ব্যাপার?

শেষের প্যারাটা পড়ে আসলেই ভয় পেয়েছি।

কৌস্তুভ এর ছবি

হুঁ। রেপ-কে 'শেম' বলে ধরা, বা তাকে গ্লোরিফাই করে 'বীরাঙ্গনা' বানানো, পুরোটাই পুরুষদের চাপিয়ে দেওয়া ব্যাপার... বুঝলেন?

তারেক অণু এর ছবি
কৌস্তুভ এর ছবি

হাসি

শিশিরকণা এর ছবি

আচ্ছা, একটা প্রশ্ন। ঐ পাকি সেনা ( উচা লম্বা, ফেয়ার আন্ড লাভ্লি, কয় শাহাদাৎ ইস্মাট ?) সেনা পোশাক বাদ দিয়ে বিছানার চাদর পরে ঘুরে কেন?

~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~

হিমু এর ছবি

খাজা সাহেবের পায়জামা উহার তনুতে ফিট করে নাই মনে হয়

কৌস্তুভ এর ছবি

উহাকে প্রাচীন রোমদেশীয় ফর্সা সুপুরুষদের পরিধেয় টিউনিকের মত প্রতীতি হয় তাই...

শিশিরকণা এর ছবি

রোমান অর্গি?
মেহেরজান আফা তো দেখি আসল বীরাঙ্গনা। পাকি সেনার ইজ্জত লুটে নিয়ে বিছানার চাদর ধরায়ে দিছেন। বেচারা লুঙ্গির মতো গিট্টা মারতেও জানে না। আহারে!

~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~

কৌস্তুভ এর ছবি

খাইছে

তানভীর এর ছবি

জোনাথন রিচমন্ড যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের 'ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কোঅর্ডিনেশন বোর্ডের' উপদেষ্টা ছিলেন। বাংলাদেশের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, সরকারি প্রজেক্টে এসব বিদেশি উপদেষ্টা দিয়ে বোঝাই। সাধারণত বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ বা অন্যান্য ডোনার এজেন্সির শর্তানুযায়ী সরকারকে বিদেশি উপদেষ্টা রাখতে হয় (সরকারের মেরুদণ্ডহীনতারও এটা একটা উদাহরণ) এবং প্রজেক্টের টাকার সিংহভাগই এদের পেছনে খরচ হয়ে যায়। এরা এদেশে এমন হাতি-ঘোড়া কিছু করেন না, যেটা দেশি বিশেষজ্ঞরা করতে পারেন না। একটা উদাহরণ দেই। আমার প্রথম চাকরি ছিলো বাংলাদেশ সরকারের স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে পরিচালিত একটা প্রজেক্টে। আমাদের প্রজেক্টের টিম লিডার ছিলো রিচমন্ডের মতই এক আমেরিকান। নিশ্চিত নই, তবে টিম লিডার বিদেশি হতে হবে এরকমই ছিলো বোধহয় ছিলো বিশ্বব্যাংকের শর্ত। আমাদের বেতন যেখানে ছিলো মাসে আট হাজার টাকা, সেখানে মার্কিন ভদ্রলোক পেতেন মাসে এগারো লাখ টাকা! তখনকার দিনে ডলারে কনভার্ট করলে মাসে প্রায় বিশ হাজার ইউএস ডলারের মতো। ভদ্রলোক আরবান প্ল্যানার ছিলেন। এখন জানি আরবান প্ল্যানার হিসেবে খোদ আমেরিকায় বড়কর্তা হিসেবেও কখনো এমন অংকের বেতন পাওয়া সম্ভব না। কিন্তু আবুল হোসেনদের কল্যাণে বাংলাদেশে তা পাওয়া সম্ভব। যাই হোক, টিম লিডার মাসে একবার আমাদের আগারগাঁও হেড অফিসে ডেকে পাঠাতেন কাজ কেমন হচ্ছে জানার জন্য। কাজের চেয়ে টিম লিডারের সাথে ইংরেজিতে কথা বলতে হবে এই ভয়েই সবাই তটস্থ থাকতো। এই হলো বাংলাদেশের অবস্থা।

হিমু এর ছবি

বিদেশী কনসালট্যান্টদের বেতন নিয়ে তথ্যগুলো মানুষের সামনে আসা উচিত। এদের কাজের পরিধি সম্পর্কে তথ্যও।

কৌস্তুভ এর ছবি

কন কী!

শিশিরকণা এর ছবি

বিলাতি টিম লীডার হইতে মুঞ্চায়।

~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~

তন্ময় আহসান এর ছবি

হো হো হো চলুক

তন্ময়_আহসান

কৌস্তুভ এর ছবি

হাসি

তানিম এহসান এর ছবি

চলুক

কৌস্তুভ এর ছবি

ধন্যবাদ।

ফাহিম হাসান এর ছবি

ভাল বাঁশ দিলেন, লেখা পড়ে হাসতে হাসতে ... গড়াগড়ি দিয়া হাসি

যে কোন যুদ্ধেই ক্ষতিগ্রস্তের তালিকায় থাকে সাধারণ মানুষ। কিন্তু নারীরা হয় সিলেক্টিভ অত্যাচারের শিকার। অত্যাচারের এই বিবরণ কোন সচেতন মানুষ এড়িয়ে যেতে পারেন না, জাস্টিফাই করার তো প্রশ্নই আসে না। আর চলচ্চিত্রের নান্দনিক দিকগুলোতেও চরম ভাবে ব্যর্থ এই ছবি।

সব হিসেবেই "মেহেরজান" স্রেফ প্রোপাগান্ডা, ফালতু-বাতিল মাল।

কৌস্তুভ এর ছবি

থ্যাঙ্কু দেঁতো হাসি

এসব কী বলেন? ভায়োলেন্স নয়, নারীরা হয় ভালোবাসার শিকার...

Muntasir Roman  এর ছবি

আমাদের চরিত্র যদি মৌলবাদীদের মতো হত তবে ছবির পুরো টিমকে পাকিস্তান আশ্রয় নিতে হত ।................... তাসলিমা নাসরিন এর নাগরিকত্ব বাতিল করা হয় এইদেশে কারন তিনি প্রগতির পক্ষে কথা বলেন । কিন্তু পাকিস্তানপ্রেমিক বাঙ্গালী জারজ যারা এখনও পাকিস্তানীদের প্রেমে বুদ হয়ে এই দেশকে পাকিস্তান বানানোর জন্য মরিয়া হয়ে ্উঠেছে তাদের কি আমরা পাকিস্তানে পুনর্বাসন করতে পারিনা? কারন তারা এদেশে পাকিস্তানী লম্বা ফর্সা ছেলে খুঁজে পান না .......পাক (আমাদের জন্য বিষতুল্য ) আলো বাতাস পানি খুঁজে পান না । ........... অন্তত তাদের মানসিক সুস্থতার জন্য হলে ও মানবিক দিক বিবেচনা করে আসুন আমরা পাকিন্তানের ধর্মপুত্র ও পুত্রীদের আপন দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করি ।

সাফি এর ছবি

হাফমিদুল ভাই কে প্যানেলে না নেওয়ায় তেব্র পিত্তিবাদ জানাইলাম

কৌস্তুভ এর ছবি

সেটার বেশি দরকার ছিল শর্মিলা বসুর প্যানেলে, বসু'র এস্টিমেটটাকে ওনার সার্ভে এস্টিমেটগুলোর মতই 'জাস্টিফাই' করার জন্য...

তৌফিক জোয়ার্দার এর ছবি

মেহেরজান দেখার আগেই নিষিদ্ধ হয়েছিল। আপনার লেখা পড়ে ছবিটা দেখতে না পারাটা পুষিয়ে গেল। উপরন্তু উপকার হল, কারণ ওটা দেখলে মেজাজ খারাপ হত; আর আপনার লেখটা পড়ে বেশ মজা পেলাম। By the way, আপনি যে প্রশ্নটা করার জন্য হাত তুলেছিলেন (খাবারের সময় হয়ে যাওয়ায় যেটা করা হয়নি) সেটা জানতে কৌতূহল হচ্ছে।

দ্রোহী এর ছবি

মেহেরজান দেখার আগেই নিষিদ্ধ হয়েছিল।

মেহেরজান তো নিষিদ্ধ হয়নি। কোথাও পড়েছেন মেহেরজান নিষিদ্ধ ঘোষিত চলচ্চিত্র? একমাত্র রুবাইয়াত আফা আর তার সাঙ্গপাঙ্গরা এই গুজবটা ছড়াচ্ছে। হাসি

শিশিরকণা এর ছবি

মেহেরজান ব্যবসায়িক ভাবে অসফল এবং বিতর্কিত হওয়ায় সিনেমা হল থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল।
আবুল মন্ত্রীর যুগে তার মেয়ের ছবি নিষিদ্ধ করার মতো বুকের পাটা সেন্সর বোর্ডের নাই।

~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~

তৌফিক জোয়ার্দার এর ছবি

ধন্যবাদ ভুল জানাটুকু শুধরে দেবার জন্য। তবে এরকমই শুনে এসেছিলাম নানা মাধ্যম থেকে।

হিমু এর ছবি

এখানে বিস্তারিত পাবেন।

তৌফিক জোয়ার্দার এর ছবি

ধন্যবাদ। দারুণ লেখা। তার চেয়ে কমেন্টগুলোও কম যায়না। দেঁতো হাসি

কৌস্তুভ এর ছবি

মেহেরজান যে বিতর্ক ওঠার পর তার পরিবেশক নিজেই হল থেকে তুলে নিয়েছিল, এটা ইলোরা শুরুতেই অন্যান্য কথার সঙ্গে বলে দিয়েছিলেন। তাই 'নিষিদ্ধ হয়েছিল' টাইপের কথা ওঠার অবকাশ হয়নি।

রাজিব মোস্তাফিজ এর ছবি

চলুক

----------------------------------------------------------------------------
একশজন খাঁটি মানুষ দিয়ে একটা দেশ পাল্টে দেয়া যায়।তাই কখনো বিখ্যাত হওয়ার চেষ্টা করতে হয় না--চেষ্টা করতে হয় খাঁটি হওয়ার!!

কৌস্তুভ এর ছবি

হাসি

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

গড়াগড়ি দিয়া হাসি

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

কৌস্তুভ এর ছবি

দেঁতো হাসি

সাই দ এর ছবি

ফেডোরা দিয়ে অভ্র লিখছি। এটা পরীক্ষামূলক মন্তব্য। এটা দেখা গেলে এরপর মন্তব্য লিখব।

কৌস্তুভ এর ছবি

দেখা তো যাচ্ছে, পরের মন্তব্য কই?

আজাদ মাষ্টার( রিডার/কমেণ্ট)  এর ছবি

শর্মিলা বসুর বইকে পাকিরা চমৎকার ভাবে কাজে লাগাচ্ছে নিচের ভিডিও দেখুন

কৌস্তুভ এর ছবি

এইটা শর্মিলা বসুর পোস্টে দিলে বেশি প্রাসঙ্গিক হত মনে হয়।

"শর্মিলা এক-একটা করে সব উৎসে গিয়ে চেক করেছেন, সেগুলো গলত!" - হ্যাঁ, এরকম অ্যামপ্লিফিকেশনই আশা করা যায় পাকি 'পণ্ডিত'দের কাছ থেকে...

হিমু এর ছবি

রিচমন্ড কাগু দিয়েছেন মেহেরজানের পুটু মেরে। ছি ছি ছি, এইভাবে কেউ শিল্পসমোসকৃতির পুটু মারে?

দুষ্ট বালিকা এর ছবি

খুব হাসলাম! হো হো হো

**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।

মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

নির্মল বিনোদন।
ভাই আপনে পারেনও।
দেঁতো হাসি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।