বিদায়, প্রিয় কর্মী

কৌস্তুভ এর ছবি
লিখেছেন কৌস্তুভ (তারিখ: শুক্র, ১৬/১২/২০১১ - ২:৪৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বাসাংসি জীর্ণানি যথা বিহায়
নবানি গৃহ্ণাতি নরোহপরাণি।
তথা শরীরাণি বিহায় জীর্ণান্য-
ন্যানি সংযাতি নবানি দেহী॥

‘এক ব্যক্তি পুরানো পোশাক ছেড়ে যেমন নতুন পোশাক পরে, অনুরূপভাবে আত্মাও তেমন পুরানো ও অকর্মণ্য দেহ ছেড়ে নতুন জড় দেহ গ্রহণ করে।’

ছোটবেলায় এই তত্ত্ব শুনে চমৎকৃত হতাম। এমন চমৎকার উপমার সঙ্গে শরীরের নশ্বরতা বুঝিয়ে দিয়ে মৃত্যুশোক নিবারণের দক্ষ প্রয়াস সহজেই মুগ্ধ করত। বড় হয়েও সেই নশ্বরতা এখনও উপলব্ধি করি, এইডস এবং ক্যান্সারের গবেষকদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত কাজ করতে করতে, প্রতিটি মৃত্যু শুধুই যেখানে আরেকটি ডেটা পয়েন্ট। কিন্তু ওই শ্লোকের দ্বিতীয় বক্তব্যটির অসারতা উপলব্ধির মতও বয়স হয়েছে। মৃত প্রিয়জন যে রশ্মিনির্মিত দেহে অত্যুচ্চ স্বর্গলোকে পারিজাতবৃক্ষের নিচে বসে মাধ্বীকভাণ্ড হাতে সুরবালাদের সঙ্গসুখ উপভোগ করছে, সেই মিথ্যা সান্ত্বনায় নিজেকে বা অন্যকে ভোলাই না।

অ্যাক্টিভিস্ট শব্দের উপযুক্ত বাংলা পরিভাষা নিয়ে সম্প্রতি কিছু আলোচনা হয়েছিল, কারণ কর্মী শব্দটিতে আমি খুব একটা সন্তুষ্ট নই, আমার মতে তাতে অ্যাক্টিভিস্টের পুরো চিত্রটা আসে না। তাছাড়া, অল্পক্ষণ আগে যাঁর প্রয়াণসংবাদ পেয়ে এই পোস্ট লিখতে বসা, তিনি তো কেবলই একজন কর্মী নন – বাগ্মী, তার্কিক ও লেখকও বটে। ‘নব্য নাস্তিকতার চার ঘোড়সওয়ার’ দলের একজন, ক্রিস্টোফার হিচেন্স, আজ মাত্র ৬২ বছর বয়সে প্রয়াত

হিচেন্স সম্পর্কে প্রথম অবগত হই টেরেসা’র সম্পর্কে কিছু পড়াশোনা করতে গিয়ে। কলকাতায় কিছু কানাঘুষো থাকলেও, টেরেজা মূলত ‘মাদার’, একজন মহামানবী হিসাবেই পরিচিত। তাছাড়া নোবেলের উপর বাঙালির চিরাচরিত হ্যাংলামি তো আছেই। অতএব রাস্তা থেকে মূর্তি, সর্বত্রই তিনি আছেন। আর আড়ালেই থেকে যাওয়া তাঁর ক্ষতিকর দিকগুলি প্রকাশ্যে আনে এমন বই বাংলায় প্রায় নেই। হিচেন্স ইংরাজিতে সেই কাজটাই করেছিলেন, টেরেসা জীবিত থাকাকালীনই। The Missionary Position: Mother Teresa in Theory and Practice নামটিতে তাঁর তুখোড় রসবোধেরও পরিচয় পেয়েছিলাম (‘অনুভূতি’সম্পন্নরা অবশ্য বিরক্ত হতে পারেন এই নামে)। Hell's Angel নামে একটি ডকুমেন্টারিও বানিয়েছিলেন, দেখা হয়নি অবশ্য।

তারপরে জানতে পারি, ওই চতুঃচক্রে তাঁর অবস্থান, জানতে পারি, God Is Not Great: How Religion Poisons Everything বলে একটি ধারালো ও জ্বালাময়ী বই লিখেছেন তিনি। বইটি পড়ে খুবই ভালো লাগে; সত্যি বলতে, হয়ত ইনি সাংবাদিক অর্থাৎ পেশাদার লিখিয়ে বলেই, এনার লেখার ধরনই আমার সবচেয়ে পছন্দ হয় ওনাদের মধ্যে। হিচেন্সের ধাঁচ সম্পর্কে ডকিন্স বলেছিলেন,

A formidable adversary to the pretentious, the woolly-minded or the intellectually dishonest, he is a gently encouraging friend to the young, to the diffident, to those tentatively feeling their way into the life of the freethinker and not certain where it will take them.

যা হোক, সে বইয়ের বিস্তারিত আলোচনা করে রক্ষণশীল পাঠকদের নাই বা অস্বস্তিতে ফেললাম। ক্ষুরধার ব্যঙ্গ ও যুক্তির সম্মেলনে সেই উপভোগ্য বইটা যাঁদের এ বিষয়ের বই পড়বার রুচি আছে তাঁদের নিজেদেরই পড়ে দেখতে পরামর্শ দিই। কেবল বইয়ের খুব প্রিয় একটি লাইন থেকে একটা পোস্টার বানিয়েছিলাম, সেটা এখানে জুড়ে দিয়ে যাই।

সিগারেট এবং পানীয়ের প্রতি কিঞ্চিৎ বেশিই আকৃষ্ট হিচেন্স গত বছর গলার ক্যান্সারে আক্রান্ত বলে জানা যায়। তখনই জানা গিয়েছিল যে তাঁর হাতে আর বেশিদিন নেই। কেমোথেরাপির ফলে চুলও উঠে যেতে থাকে, তাঁর চেহারা বেশ অন্যরকম হয়ে পড়ে। কিন্তু এর মধ্যেই নিরলস হিচেন্স অবশিষ্ট জীবনের শেষ রসটুকু উপভোগ করে যেতে থাকেন, একই রকম কর্মচঞ্চলতার মধ্যে দিয়ে। যেমন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেওয়া জারি রাখেন, তেমনই নিয়মিত লেখাও চালিয়ে যেতে থাকেন। মৃত্যুর সামনে দাঁড়িয়ে এমন রসিকতাও করেন, I am a member of a cancer elite. I rather look down on people with lesser cancers.

কয়েক মাস আগেই আমেরিকান অ্যাথেইস্ট কনভেনশনের রিচার্ড ডকিন্স পুরষ্কার দেওয়া হয় হিচেন্সকে। তাঁর হাতে সেটি তুলে দিতে গিয়ে মৃত্যুপথযাত্রী হিচেন্স সম্পর্কে ডকিন্স বলেন,

... And in the very way he is looking his illness in the eye, he is embodying one part of the case against religion. Leave it to the religious to mewl and whimper at the feet of an imaginary deity in their fear of death; leave it to them to spend their lives in denial of its reality. Hitch is looking it squarely in the eye: not denying it, not giving in to it, but facing up to it squarely and honestly and with a courage that inspires us all.

আরেক ঘোড়সওয়ার ড্যানিয়েল ডেনেটের ইন্টারভিউ নেওয়ার পর আশা করেছিলাম, নিউইয়র্ক-প্রবাসী (প্রথম জীবনে ইংরেজ) হিচেন্স হয়ত আরো কিছুকাল তাঁর লড়াই চালিয়ে যাবেন, একটা সাক্ষাৎকার তাঁরও নেওয়ার সুযোগ দেবেন। কিন্তু মিথ্যা আশা কুহকিনী – সেই হিচেন্স আজ টেক্সাসের এম. ডি. অ্যান্ডারসন ক্যান্সার রিসার্চ সেন্টারে, আমেরিকার সম্ভবত সেরা ক্যান্সার গবেষণাকেন্দ্রে, মারা গেছেন। পরশুরাম এককালে ভারি উপভোগ্য এক থিয়োরি দিয়েছিলেন, যে হিন্দুদের আত্মা তাদের মৃত্যুর পর চিত্রগুপ্তের কাছে গিয়ে লাইন দেয়, কত বছরের ভোগ সেরে আবার পুনর্জন্ম নেবে তা জানতে, সায়েবদের আত্মা এক বড় ওয়েটিংরুমে গিয়ে শেষ বিচারের অপেক্ষা করে, ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে মৃত্যুর পরে যে হিচেন্সের আত্মা অমন লটপট করে বেড়াবে না, তা নিশ্চিত। তাঁর আত্মা ছিল তাঁর অ্যাক্টিভিজম, এবং তার মধ্যে দিয়েই তিনি চিরকাল বেঁচে থাকবেন। আমার স্মৃতিতে, ডকিন্সের স্মৃতিতে, পাঠকদের স্মৃতিতে। বইয়ে, সাইটে, ইউটিউবে।


মন্তব্য

সাফি এর ছবি

একে একে সবাই চলে যাচ্ছে কেন? প্রথম আলোতে হুমায়ুন আহমেদের ক্যান্সার পরবর্তী লেখা পড়ে প্রথমেই মনে পরেছে হিচেন্সের কথা

কৌস্তুভ এর ছবি

একে একে সবাইকেই কি চলে যেতে হবে না?

আশরাফুল কবীর এর ছবি

মনটায় নাড়া পড়ল আরেকবার! মন খারাপ মন খারাপ

কৌস্তুভ এর ছবি

মন খারাপ

অরফিয়াস এর ছবি

কেউ চলে যায়না, বেঁচে থাকে তাদের কাজের মধ্যে... হিচেন্স বেঁচে থাকবেন মানুষের মনে শক্তি হিসেবে, ডার্ক নাইট হিসেবে ...

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

কৌস্তুভ এর ছবি

চলুক

তাপস শর্মা এর ছবি
দ্রোহী এর ছবি

বস গেল গিয়া! মন খারাপ

শ্রদ্ধা

কৌস্তুভ এর ছবি

রাত্রে বাড়ি ফিরে এসে আপনার ফেসবুক স্ট্যাটাসেই খবরটা প্রথম জানতে পারি।

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

denial of death's reality আপনের লেখাটায় প্রবল মনে হইল। কিন্তু আমার কাছে এইটা প্রবলেম না। লেখাটা ভালই লাগছে। কিন্তু স্যার, এই বাক্যটা ভাল্লাগল না : সে বইয়ের বিস্তারিত আলোচনা করে রক্ষণশীল পাঠকদের নাই বা অস্বস্তিতে ফেললাম। সকল ধরণের পাঠকের মোকাবিলা করলেই না ভালো হইত। অথবা আপনে সেই মোকাবেলায় যাইতে চান না। স্বাধীনতা। কিন্তু তারপরও আমি (হইতে পারি আমিই একমাত্র পাঠক যে এইরকম ভাবতেছি) এই বাক্যের ভিতরে রক্ষণশীল/প্রগতিশীল বাইনারি অপজিটট ব্যবহার কইরা লেখক নিজের উত্তমতা (?) প্রকাশ করছেন। বিশেষত যখন, আপনের আগের লেখায় এই জাতের একটা বিতর্ক সৃষ্টি হইছিল। আমি প্রস্তাব করি, সচলায়তনের কোর পাঠকগোষ্ঠী আপনের প্রগতিশীলতা ধারণ করার যথেষ্ঠ উপযুক্ত। খোঁচা মারার লোভ আমি নিজে সামলাইতে পারি না, আপনেরে কী বলব। কিন্তু অপরে অধম বলিয়া আপনি উত্তম হইবেন না কেন?


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

কৌস্তুভ এর ছবি

অনিন্দ্যদা, প্রথম বক্তব্যটায় অবাক হলাম। আমার তৃতীয় প্যারার মূল বক্তব্যটাই তো ছিল মিথ-ভিত্তিক ডিনায়াল থেকে বেরিয়ে আসার গল্পটা। আর শেষ অংশটাতেও তো তেমন কিছু বলেছি বলে মনে হয় নি আমার... 'উনি আমাদের স্মৃতিতেই বেঁচে রইবেন' তো স্ট্যান্ডার্ড কথাবার্তা...

বরঙ লেখাটায় যে জন্য আমি হিচেন্সকে কুর্নিশ করেছি, তা হলে মৃত্যুর নিশ্চিততাকে স্বীকার করে নিয়েও তাঁর সজীব থাকা। যদি কোনো ডিনায়াল থাকে, সেটা তাঁর মৃত্যুভীতিকে অস্বীকার। যারা তাঁর ডেথবেড কনভার্শনের আশা তেখেছিল, তাদের তিনি কেবল হতাশই করেন।

দ্বিতীয় অংশটায় বলি, 'মোকাবিলা' করার উদ্দেশ্য নিয়ে তো লেখাটা নয়। হিচেন্সের স্মৃতিচারণে তাঁর সৃষ্টির কথা উল্লেখ করলেও সেটা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনায় যাওয়াটা প্রয়োজনীয় নয়। আর সে বইতে যে কথাগুলো আছে, সেগুলো এখানে লিখতে লাগলে যে এক শ্রেণীর পাঠকের অস্বস্তি হবে, সেটা যখন তাঁরা বলেইছেন, তখন আবশ্যক না থাকলে সেটা বাদ দিয়ে গেলেও হয়।

এখন 'রক্ষণশীল' শব্দটা ব্যবহার করা নিয়ে আপনি আপত্তি জানিয়েছেন। তবে মনে হয় আপনিও প্রকারান্তরে স্বীকার করে নিয়েছেন যে কথাটা তেমন একটা মিথ্যে নয়। এখানে বলি, শব্দটা কিন্তু সবার কাছে আপত্তিকর না-ই হতে পারে - আমেরিকায় তো দেখি কনজার্ভেটিভরা বরং 'লিবারেল' শব্দটাকেই গালি হিসাবে ব্যবহার করে।

যাহোক, ধন্যবাদ।

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

১. মিথের বাইরে মানবসমাজ নাই। 'স্ট্যান্ডার্ড' কথাবার্তার মধ্যেই মিথ থাকে।
২. লেখামাত্রই মোকাবিলা। লেখক না চাইলেও। আমার মত। আপনি (সম্ভবত আপনের মনগড়া) 'এক শ্রেণীর' পাঠককে ইনক্লুড করতে গিয়া, আমার ধারণা তাদের এক্সক্লুড করলেন। এইটা শাঁখের করাত সিচুয়েশন। একটু সাবধানে আর কি।


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

কৌস্তুভ এর ছবি

১) "'স্ট্যান্ডার্ড' কথাবার্তার মধ্যেই মিথ থাকে।" একটা সাধারণত সত্যি কথাই। তবে শেষ প্যারায় বা অন্যত্র কোথায় আমি মিথের বশবর্তী হয়ে পড়েছি, একটু স্পষ্ট করে দেখিয়ে দিন দয়া করে।

২) আমার মত এখানে আপনার সঙ্গে মিলছে না, তবে তাতে মনে হয় সমস্যার কিছু নেই।

বিলাস এর ছবি

(মোম)____ মন খারাপ

কাজী ‍মাহবুব হাসান এর ছবি

একজন অসাধারন মানুষের মৃত্যু হলো। ‍
এমন ক্ষুরধার লেখনীর শুন্যস্থান পুরণ হবার মত নয়।

চরম উদাস এর ছবি

শ্রদ্ধা

স্বাধীন এর ছবি

নিশ্চিত মৃত্যুর মুখোমুখি বসেও তার যে উদ্ধত বক্তব্য, সেটা শুনি আর মুগ্ধ হই। গুরু গুরু

কৌস্তুভ এর ছবি

আমিও।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

গড ইজ নট গ্রেইট বইটার অডিও বই শুনে লোকটার ভক্ত হয়ে যাই আমি। একটা সারসংক্ষেপ লিখতেও চেয়েছিলাম বইটার। তাছাড়া বিভিন্ন বির্তকে তার অসাধারণ যুক্তি খণ্ডন দেখে একদম মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম এক সময়। হিচেন্সের মৃত্যুতে শ্রদ্ধা জানাই।

নিটোল এর ছবি

শ্রদ্ধা

_________________
[খোমাখাতা]

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

শ্রদ্ধা

এই অংশটা পরে যোগ করছি:
হিচেন্সের ইরাক যুদ্ধ সমর্থন বিষয়ে জানা ছিল না। হিচেন্স বিষয়েই সামান্য জানতাম। ব্লগ/ফেসবুক মন্তব্য থেকে কিছুটা জানলাম। আমারিকার ইরাক আগ্রাসনে হিচেন্সের সমর্থন ভালো লাগেনি। নোংরা লেগেছে।

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

তারেক অণু এর ছবি
হাসিব এর ছবি

এই লোক ইরাক আক্রমনের পক্ষে ছাগুপনার চুড়ান্ত দেখাইছে।

হাসান এর ছবি

কিভাবে? একটু ভেঙ্গে বলবেন?

হাসিব এর ছবি

একটু হিচেন্স ইরাক ওয়ার এই কিওয়ার্ডটা গুগল করে দেখেন।

অন্যকেউ এর ছবি

হিচেন্সের শরীরটা মৃত্যুবরণ করেছে,

কিন্তু তাঁর আত্মা ছিল তাঁর অ্যাক্টিভিজম, এবং তার মধ্যে দিয়েই তিনি চিরকাল বেঁচে থাকবেন। আমার স্মৃতিতে, ডকিন্সের স্মৃতিতে, পাঠকদের স্মৃতিতে। বইয়ে, সাইটে, ইউটিউবে।

..ভার্চুয়াল জগতের অস্তিত্বে, পৃথিবীতে প্রথম বৈশ্বিক সমাজ- অন্তর্জালে, মানুষের সম্মিলিত অনুভবের সম্মানিত অংশে, আমাদের কীবোর্ডের খটাখট ভার্চুয়াল যুদ্ধের ভেতরে..

আজ আমি মন খারাপ করি নাই একটুও। আমি হিচেন্সের ভিডিও দেখতে দেখতে ভাবছিলাম, হাসিমুখে উঠে দাঁড়িয়ে এই মানুষটিকে চিয়ার্স জানাই, ধন্যবাদ দিই। গতদিন হিচেন্সের মৃত্যুদিন না, ভার্চুয়াল লাইফে চিরদিন আমাদের সঙ্গী হয়ে থাকার যে অমরত্ব, তার সূচনার দিন।

মিস্টার হিচেন্স, আজ আমি আবার সেই মুহূর্তটা মনে করি, যখন আমরা সবাই আপনাকে শুভকামনা জানাই, আমরা সবাই বলি,
We salute you, Hitch! Cheers!

_____________________________________________________________________

বরং দ্বিমত হও, আস্থা রাখো দ্বিতীয় বিদ্যায়।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

হিচেনসের মৃত্যুতে সমবেদনা।

সুব্রামানিয়ান যে কারণে রেসিস্ট হিসেবে অভিযুক্ত, সেই একই অভিযোগ কিছুটা হলেও করা যায় ক্রিস্টোফার হিচেনস্‌ এর বিরুদ্ধে। ইরাক যুদ্ধ হালালিকরণে তিনি কলামের পর কলাম লিখেছেন। অসাধারণ লেখনী আর চমৎকার যুক্তি দিয়ে কথা বলার কারণে ক্রিস্টোফার হিচেনস্‌কে পছন্দ করি। তবে ইসলামোফোবিয়া প্রচারণায় কিছুটা হলেও ইন্ধন দেওয়ার ব্যাপারটা একদম সমর্থন করি না।

হিচেনসের অনেক কিছুই ভালো। লেখা ভালো। যুক্তি দিয়ে বলা কথাগুলো ভালো। হেনরি কিসিঞ্জারকে যুদ্ধাপরাধী ডেকে তার শাস্তি দাবি করার আহবান করেছিলেন হিচেনস- এটাও খুব ভালো। কিন্তু অনৈতিক একটা যুদ্ধের কড়া সমর্থনকারীর জন্য মন্দ কথা কিছু বলাই যায়।

হিচেনসের ভালোটুকু যদি বলি, তবে মন্দটুকু একবর্ণ না বলা কি আপনি ঠিক বলে মনে করেন?

দিগন্ত এর ছবি

আমি আগের লেখাতেই পরিষ্কার বলেছি ঔপনিবেশিকতা ভাল না, আমি সমর্থনও করি না। একইভাবে গণহত্যা, রক্তক্ষয়, জাতিবৈরি আ্চরণ, একটা দেশকে ধ্বংস - এগুলো আমার কাছে অবশ্যই বড় ব্যাপার এবং এ নিয়ে হিচেন্সের মতামত সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। এবং আমি এটাতেও একমত " হিচেনস-এর এই জায়গা্টুকু পুরা (জেনেশুনে) উহ্য রেখে যেকোনো ধরণের প্রেম-নিবেদন বা শ্রদ্ধাঞ্জলি উদ্দেশ্যমূলক" ... কিন্তু এইদিকগুলো উল্লেখ করে ও নিন্দা করেও কারও বাকি অবদানে প্রশংসা করতে আমার কাছে কোনো সংকোচ নেই। আমি যদি ইরাকের ভুক্তভোগী হতাম আমার ক্ষেত্রে লজিকটা অন্যরকম হত - অবশ্যই - তাতেও আমার সন্দেহ নেই। কিন্তু আমি এটাও খুব ভালই বুঝেছি যে হিচেন্সের মতামত মার্কিন রাজনৈতিক মহলে কোনো পাত্তা পায় না - তাই ওই মতের কোনো প্রভাব নেই। বদমায়েশি ঢাকার কিছু নেই, সবটাই মুক্ত এখানে। কিন্তু যতটা বদমায়েশি ততটা বদমায়েশি, যতটা ভাল - ততটা ভাল।
(ফেসবুকের মতামত বিনিময়ের পরের লেখা।)


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

shafi.m এর ছবি

উনাকে চিন্তাম না, আপ্নার লেখা পড়ে জান্তে পারলাম। হাসি মুখে মরতে পারা খুব সহজ না হয়ত, সবাই পারে না। উনি কি জীবনের শেষ মূহুর্ত পর্যন্ত গিভাপ করেন্নি? এক বারো কি মনে হয়নি, কোথাও কি যাচ্ছি, নাকি এই আমি শেষ। এমন মূহুর্তে (যখন জানছি যে সময় শেষ) এইথিএস্ট থাকাটাও অনেক বড় ব্যাপার, উনি পেরেছিলেন, নাকি পারেন্নাই উনিই একমাত্র বল্তে পারতেন।

শাফি।

শাফি।

দিগন্ত এর ছবি

দিগন্ত - হিচেন্স কোনো নাস্তিকদের ঈশ্বর নন, যে তার সব মন্তব্য সমর্থন করতে হবে। যেমন এই ক্ষেত্রে হিচেন্স সম্পূর্ণ ভুল ...
------------
শুভাশীষ - হিচে্নস মারা গেছেন। সমবেদনা।

হিচেনসের অনেক কিছু ভালো। লেখে ভালো। বলে ভালো। ধর্মকে মাঝে মাঝে পুটু মেরে দেয়। আমি নাস্তিক বিধায় সেটা আমার জন্য খ্রাপ কিছু না। হিচেনস কিসিঞ্জারকাগুরে যুদ্ধাপরাধী ডাকে, শাস্তি চায়- এগুলোও খুব ভালো।

এবার একটু মন্দ। মন্দটুকু হচ্ছে- এই ভদ্রলোকের ইরাক যুদ্ধকে সমর্থন আর ইসলামোফোবিয়া তৈরিতে ইন্ধন। এই যুদ্ধ শুরু করার জন্য কলামের পর কলাম নামিয়েছেন ভদ্রলোক। যুদ্ধ শুরুর পর হালালিকরণের চেষ্টাও করেছেন। ইরাক যুদ্ধের মতো একটা রক্তক্ষয়ী অনৈতিক যুদ্ধকে জান লড়িয়ে সমর্থন করার জন্য হিচেনসকে দুদলা থুথু দেয়াই যায়।
------------
দিগন্ত - আমার কাছে যোগ-বিয়োগ ইকুয়েশনে হিচেন্সের ভালটা বেশী খারাপটা কম। হিচেন্স ইরাক যুদ্ধে বিরোধিতা করলে যুদ্ধ বন্ধ হত না, কিন্তু যৌক্তিক নাস্তিকতা প্রচারে ভূমিকা রাখায় অনেকেই যৌক্তিক পথে এসেছেন। প্রভাবের অর্থে হিচেন্সের ভূমিকা পজিটিভ।
------------
শুভাশীষ - কার লেখায় কি হবে না হবে সেটার বিচার করলে সবার লেখা বন্ধ করে দেয়া বসে থাকা উচিত।

হিচেনস যুদ্ধের বিরুদ্ধে লিখলে যুদ্ধ বন্ধ হতো না, অতএব একটা অনৈতিক যুদ্ধকে সমর্থন দেয়া অনৈতিক কিছু না বা কম অনৈতিক!!!!! অদ্ভুত একটা যুক্তি শুনলাম অনেকদিন পরে।

ফাইনম্যান আর হিচেনস- এই দুইজনের বিরুদ্ধে জাতিবৈরিতা আর যুদ্ধাপরাধের দায় একদম সহজ হিসাব করে চালানো যায়।
------------
দিগন্ত - আমি কখনই কম অনৈতিক বলিনি। আপনার লিস্টে আইনস্টাইনের নামও আসে তাহলে ইজরায়েল প্রস্তাবের সমর্থন করায়? আমি এখনও অবধি ১০০% নৈতিক কাউকে পাইনি - তাই যোগ-বিয়োগের ইকুয়েশনে চলি। যোগ অর্থে পজিটিভ এফেক্ট, বিয়োগ অর্থে নেগেটিভ এফেক্ট।
------------
শুভাশীষ - নারে ভাই। লিস্ট ফিস্ট নাই।

ফাইনম্যানের ঘটনাটা কি অনেক আগেও হাসিব ভাইয়ের এক স্ট্যাটাসে উল্লেখ করেছিলাম। ফাইনম্যানরে ক্যান বলছি সেটা মনে হয় জানেন। যদি মনে হয়- না, এটা আর এমন কি!! তাইলে আর আমার কথা বলার অর্থ নাই।

একটা গণহত্যা বা অনৈতিক যুদ্ধের পক্ষে যিনি দালালি করেন তাঁর এই অপরাধ সর্বাগ্রে আলোচনায় আসা উচিত। তারপর তাঁর অন্যান্য কাগুজে ভালোপণা। কিন্তু আপনি তো জাজমেন্ট দিয়েই দিয়েছেন- সব বিবেচণায় একজন যুদ্ধ সমর্থনকারী ও জাতিবৈরি আচরণকারি ভদ্রলোকের ব্যাপারে আপনার অভিমত- "যোগ-বিয়োগ ইকুয়েশনে হিচেন্সের ভালটা বেশী খারাপটা কম।"

কথা কয়ে আসলেই লাভ নাই। হাসি
------------
দিগন্ত - প্রায়োরিটি হিসাবে কোনো রাজনৈতিক নেতার ক্ষেত্রে যদি আমি তার রাজনৈতিক মতবাদ দেখি তাহলে একজন বিজ্ঞানীর ক্ষেত্রে তার বিজ্ঞানের অবদানই দেখব। আপনার-আমার মতবাদ এ নিয়ে মেলে না। "কথা কয়ে আসলেই লাভ নাই।" - এটা আমারও মনে হল।
------------
শুভাশীষ - ফাইনম্যান বিজ্ঞানী ভালো কথা। হিচেনস্‌ও কি বিজ্ঞানী? যতোদূর জানি- তিনি তো সাংবাদিক।

দার্শনিকরাও বাকি থাকেন ক্যান? তাইলে নাজি সমর্থক হাইডেগাররে বকি ক্যান শুধু শুধু? নীৎসে? সেও তো ভাল তাইলেু? দর্শনশাস্ত্রে এই দুই ভদ্রলোকের অবদান অনেক। কিন্তু আমার পক্ষ থেকে দুদলা থুথু সবসময় বরাদ্দ।
------------
দিগন্ত - আমি শেষ লেখাটা আইনস্টাইন আর ফাইনম্যানকে নিয়েই লিখেছি। হিচেন্সের পজিটিভিটি আগে আছে। নীৎসের সম্পর্কে ভাল জানি না। তবে ধরে নিচ্ছি তার কিছু অবদান আছে দর্শনশাস্ত্রে, কিছু আছে নাৎসীবাদে। কোনখানে কতটা, মেপে দেখেন - তারপরে ভেবে নিন। নিউটন-সহ প্রায় সব রেনেঁসা আমলের ইউরোপীয় বিজ্ঞানী ঔপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে চুপ ছিলেন, বরং যথাসম্ভব নিজের সরকারকে সমর্থন করে গেছেন। এর মানে এই নয় তাদের বিজ্ঞানের অবদান কমে যাচ্ছে ... বা ঔপনিবেশিকতা একটা ভাল জিনিস।
------------
শুভাশীষ - অবদান ফবদানের কথা বলতে থাকুক। সাথে বাকি তথ্যও জানালে সমস্যা নাই তো।

ফাইনম্যান, হাইডেগার, নীৎসে সরায়ে হিচেনসে আসি। হিচেনস-এর এই জায়গা্টুকু পুরা উহ্য রেখে যেকোনো ধরণের প্রেম-নিবেদন বা শ্রদ্ধাঞ্জলি উদ্দেশ্যমূলক। একটা অনৈতিক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পক্ষে যিনি দালালি করেছেন, তাঁর লেখা-ভালু-বলে-ভালু-নাস্তিকতা-প্রচার-করে-ভালু বলে তাঁর বদমায়েশি ঢাকার দরকার কি?

আপনি রায় দিয়েছেন- সার্বিক বিচারে হিচেনস্‌ পজিটিভ। খুবই আপত্তিকর মন্তব্য। গণহত্যা, রক্তক্ষয়, জাতিবৈরি আ্চরণ, একটা দেশকে ধ্বংস- এগুলো আপনার কাছে ব্যাপার না। যৌ্ক্তিক কি ছাগলা নাস্তিকতা প্রচার করছেন- এটাই একটা বিশাল ব্যাপার। অদ্ভুত!!!!!!
------------
দিগন্ত - আমি আগের লেখাতেই পরিষ্কার বলেছি ঔপনিবেশিকতা ভাল না, আমি সমর্থনও করি না। একইভাবে গণহত্যা, রক্তক্ষয়, জাতিবৈরি আ্চরণ, একটা দেশকে ধ্বংস - এগুলো আমার কাছে অবশ্যই বড় ব্যাপার এবং এ নিয়ে হিচেন্সের মতামত সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। এবং আমি এটাতেও একমত " হিচেনস-এর এই জায়গা্টুকু পুরা (জেনেশুনে) উহ্য রেখে যেকোনো ধরণের প্রেম-নিবেদন বা শ্রদ্ধাঞ্জলি উদ্দেশ্যমূলক" ... কিন্তু এইদিকগুলো উল্লেখ করে ও নিন্দা করেও কারও বাকি অবদানে প্রশংসা করতে আমার কাছে কোনো সংকোচ নেই। আমি যদি ইরাকের ভুক্তভোগী হতাম আমার ক্ষেত্রে লজিকটা অন্যরকম হত - অবশ্যই - তাতেও আমার সন্দেহ নেই। কিন্তু আমি এটাও খুব ভালই বুঝেছি যে হিচেন্সের মতামত মার্কিন রাজনৈতিক মহলে কোনো পাত্তা পায় না - তাই ওই মতের কোনো প্রভাব নেই। বদমায়েশি ঢাকার কিছু নেই, সবটাই মুক্ত এখানে। কিন্তু যতটা বদমায়েশি ততটা বদমায়েশি, যতটা ভাল - ততটা ভাল।
------------
অনিন্দ্য - কিছু কিছু বদমায়েশি কর্লে কি আর ভালুতে ফিরত আসা যায়? কিছু কিছু বদমায়েশি কি বাকি সবকিছুকে বাতিল করার পক্ষে যথেষ্ট না?
------------
দিগন্ত - উল্টোটা সত্যি নয় কেন?
(পুরো কথোপকথনের লিস্টিং)


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

কোথাকার কথোপকথন এটা?

দিগন্ত এর ছবি

ফেসবুক ...


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

একবিংশ শতকের বৃহত্তম গণহত্যা ইরাকে হইছে। এইটা করছে আমেরিকা আর তার সাঙ্গপাঙ্গরা। এই গণহত্যা শুধু একটা এককালীন হত্যাকাণ্ড না। এই 'চলমান' গণহত্যা মানবেতিহাসে নতুন। ইরাক দখলকে সমর্থন দিয়া যেই লোক একটা বাক্যও লিখছে তার প্রতি আমার কোনো ভক্তি নাই। এবং যারা মনে করেন ইরাক দখল কোনো কারণে ঠিকাছে, তাদের প্রতিও আমার কোনো ভক্তি নাই। আমি মাসের পর মাস, ইরাক দখলের ফুটেজ দেখছি। ঐটা আমার চাকরি ছিল।


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

আরে আরে, এগুলা ব্যাপার না। উনি লেখে ভালো। বলে ভালো। এতো নিন্দুক হৈলেন ক্যামনে? উনার অবদানের কথাগুলো ভাবুন। উনার কোন কোন অবদানকে আপনি অস্বীকার করবেন?

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

নিৎশে থাইকা আল মাহমুদ, অবদান রাইখাই যাইতেছে।


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

দিগন্ত এর ছবি

"আমি মাসের পর মাস, ইরাক দখলের ফুটেজ দেখছি।"

- যারা দেখেনি তাদের ক্ষেত্রে আপনার যুক্তি কিভাবে প্রযোজ্য?


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

যারা দেখে নাই, তারা বাণী দিবে না। (আর দেখার কথাটা বলছি কোনো যুক্তি হিসাবে না। আমার ব্যক্তিগত স্মৃতির কথা বলছি। না বললেও চলত আসলে)

আর, অন্ধ হলে কি প্রলয় বন্ধ থাকে?


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

দিগন্ত এর ছবি

প্রলয় কি বন্ধ আছে? মার্কিনিরা তো বাহিনী প্রত্যাহার করছে। বারাক ওবামা অবধি স্বীকার করে নিয়েছেন ইরাক যুদ্ধ সম্পূর্ণ অনৈতিক ও অযৌক্তিক। কার্যত ইরাক যুদ্ধে আমেরিকার লোকসানের পাল্লা অনেক ভারি - নৈতিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক থেকে তেলের দখল - সব লড়াইতেই হেরে গেছে।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

আমি তো বললামই ঐটা একটা অটোম্যাটেড গণহত্যা। এখনও চলমান। ঘৃণ্য সাম্রাজ্যবাদীরা কী হারাইল, কী জিতল এইটা আমার মাথাব্যাথা না। ওবামার স্বীকার অস্বীকারও অপ্রাসঙ্গিক। আমেরিকার লাভ হইলেও তারা গণহত্যাকারী। তাদের লস হইলেও তারা গণহত্যাকারী।


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

দিগন্ত এর ছবি

ঠিক কথা। কিন্তু সবার কাছে এই সংবাদ নেই। হিচেন্স আরব-বিশ্বে গণতন্ত্র আসবে বলে মশগুল ছিলেন। তার বিশ্বাস লাখের মৃত্যুর বদলেও সাদ্দামের মত স্বৈরতান্ত্রিকের পতন ইরাকের জন্য ভাল। তার ধারণা ভুল এটার সাক্ষী সময়। তবে উনি নিজেকে ঈশ্বরের সমতুল্য মনে করেন নি - বা অন্যেদেরকেও তার মত নির্ভুল বলে বিশ্বাস করতে বলেন নি। হিচেন্স একগুঁইয়ে জেদীর মত বিপক্ষের যুক্তি উপেক্ষা করেছেন - সেখানেই তার ভুল। আপনি কি মনে করছেন উনি জাতিবিদ্বেষ বা অর্থনৈতিক স্বার্থের কথা ভেবে সমর্থন দিয়েছেন? সেটা হলে কিন্তু আলোচনা ভিন্ন হবে।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

মতাদর্শ উৎপাদন সম্পর্কের সাথে জড়িত। যেমন, লেইট (অন্তিম? বিলম্বিত?) পুঁজিবাদের মতাদর্শ হচ্ছে নয়াউদারবাদ। একজন ব্যক্তি যখন 'ভাষণ' দান করে, সেই 'ভাষণ' ধারণ করা হয়, প্রচার করা হয়, বিতরণ করা হয়, তখন সেই ব্যক্তির বক্তব্য যে মতাদর্শের পুনরুৎপাদন ঘটায়, সেইটা উৎপাদন সম্পর্কের বাইরের কিছু না। একগুঁয়েমি, জেদ - ইত্যাদি ব্যক্তিগত পর্যায়ের দুর্ঘটনাও না। উপরন্তু, বিদ্বান ব্যক্তি যখন অনৈতিক আগ্রাসনের সঙ্গে কমপ্লিসিট ও কম্পাটিবল (ভালো বাংলা পাইতেছি না) হয়, তখন তার একান্ত বৈশিষ্ট্যের চেয়ে বড় হয়া দাঁড়ায়, সে কতবড় নষ্টামীর অংশ, সেইটা। কেউ যদি ইরাক আগ্রাসনকে নৈতিক মনে করে, তাইলে ভিন্ন কথা।


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

ধারণার এই মেমেটিক বিবর্তনটা খুব ইন্টারেস্টিং। জিন যেমন, ধারণাগুলাও তেমন মানুষরে যথেচ্ছা ব্যবহার কইরা নিজের পুনরুৎপাদন বজায়া রাখে। কিন্তু কথা হইলো, ভালো ধারণা বইলা কি আদৌ কিছু আছে, যার উৎপাদনের জন্যে ঘটে জায়গা ছাইড়া দেওয়া যায়?

এছাড়া, একদলা থুথুর থেইকাও মোক্ষম রিসপন্স আছে ভাবতেছি। থুথুর সমস্যা হইলো, সাবজেক্ট নিয়া বোঝাবুঝির অবকাশকে রুদ্ধ করে এইটা। মানে হইলো, জিনিসটা আমি বুঝছি, তোমার বোঝা লাগবে না, তুমি ওইটা ঘাটাইতে যাইয়ো না, থুথুর পাহাড় দেইখা সইরা আসো।

থুথুর প্রতি সুশীল রিজার্ভেশান দেখাইতেছি না, জিনিসটা যেই ধারণার উৎপাদন ঘটায় আর যেই যেই গুরুত্বপূর্ণ ধারণারে রুদ্ধ করে বইলা আমার কাছে বরাবরই মনে হয়, সেইটা কইতেছি।

আর ধরেন হাইডেগারের বা ফাইনম্যানের হক কিছু কথা আমি প্রচার করলাম, থুথু না ফেইলা। তাদের নষ্টামীগুলার কথাও স্মরণ করাইয়া না দিয়া। তখন পাঠকরে কি নির্বোধ গাড়ল ভাইবাই নিতে হবে যে তার ভিতরে হাইডেগার বা ফাইনম্যানের দুইটা হক কথার লগে নষ্টামীগুলাও অলক্ষ্যে ঢুইকা যাইতেই থাকবে? সেইটার দায়িত্ব কি লেখকের নেওয়া চলে? নাকি পাঠকের সুবুদ্ধির উপর ভরসা করা চলে যে খারাপ কথা আর ভালো কথা আলাদা কইরা চলতে সে সক্ষম হবে।

নিৎশের দর্শন থেইকা নাৎসিরা মসলা পাইছে, ফলে নিৎশের সকল কথা নষ্টামিপূর্ণ, এইটা তো অ্যাড হোমিনেম ফ্যালাসির ক্ল্যাসিকাল উদাহরণ। আর নিৎশের সকল কথা যদি নষ্টামিপূর্ণ না হয়, তাইলে তখন যেইটা নষ্টামিপূর্ণ না, সেইটার উচ্চারণে তার নষ্টামিগুলাও স্মরণ করাইয়া দেয়া লাগে কেন? আর উৎপাদন-সম্পর্ক তত্ত্বের হেজামোনির সামনে যুক্তির তত্ত্বগুলারে কোথায় রাখবেন? যুক্তির তত্ত্বরে নাকচ করা বিপর্যয়কর ও ইনকনসিস্টেন্ট বইলা মনে হয়। উৎপাদন সম্পর্ক বা যেই তত্ত্বরেই মাইনা উপস্থাপন করবেন, সেইটার উপাস্থাপনায় যুক্তিই উপস্থাপিত হয়। ফলে যুক্তিরে খাটো করা নিতান্ত অবান্তর বইলাই তো মনে হয়।

হাসিব এর ছবি

নিৎশের দর্শন থেইকা নাৎসিরা মসলা পাইছে, ফলে নিৎশের সকল কথা নষ্টামিপূর্ণ, এইটা তো অ্যাড হোমিনেম ফ্যালাসির ক্ল্যাসিকাল উদাহরণ।

আমি নিশ্চিত গু আযমের সকল কথাই নষ্টামিপূর্ন নহে। সে নিশ্চয়ই জামাতি কর্মীদের সারাক্ষণ ছুরি চাকু ধার দিতে বলছে না। নিশ্চয়ই পার্টির জন্য কাজ করা, পার্টির একে অন্যের দেখভাল করার মতো সুন্দর সুন্দর ভালু কথা বলছে, মারামারি না করে ভালু হয়ে চলতে বলতেছে। এইবার চলেন গু আযমের গুন গাই।

এখন চলেন কাইজ্জা ফ্যাসাদ বাদ্দিয়ে হযরত নিৎশের দর্শন থেকে একটু খানি পাঠ করি। ভালুদের কিছু সংজ্ঞা পাওয়া যাবে সেইখানে। আইজকাই নাপিতের দুকানে গিয়ে চুল ব্লন্ড করে আসপো! -

The Latin malus ["bad"] (beside which I place [mélas, Greek for "black"]) might designate the common man as dark, especially black-haired ("hic niger est"), as the pre-Aryan settler of the Italian soil, notably distinguished from the new blond conqueror race by his color. At any rate, the Gaelic presented me with an exactly analogous case: fin, as in the name Fingal, the characteristic term for nobility, eventually the good, noble, pure, originally the fair-haired [Blondkopf] as opposed to the dark, black-haired native population. The Celts, by the way, were definitely a fair-haired race [eine blonde Rasse]; and it is a mistake to try to relate the area of dark-haired people found on ethnographic maps of Germany to Celtic bloodlines, as Virchow does. These are the last vestiges of the pre-Aryan population of Germany. (The subject races are seen to prevail once more, throughout almost all of Europe; in color, shortness of skull, perhaps also in intellectual and social instincts. Who knows whether modern democracy, the even more fashionable anarchism, and especially that preference for the commune, the most primitive of all social forms, which is now shared by all European socialists -- whether all these do not represent a throwback, and whether, even physiologically, the Aryan [master] race of conquerors is not doomed?)

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

যুক্তি দিয়াই গু আজমরে চিন্তে হবে। গু আজম দিয়া যুক্তি চিনতে হইলে তো তাতে গুআজমীয় যুক্তি ছাড়া আর কিছু তৈরি হইবে না। গু আজমের সমস্যা বাইর করতে যদি যুক্তিতে টান পড়ে, তাইলে সেইটা দ্রষ্টার চোখের সমস্যা। কিন্তু তাই বইলা অ্যাড হোমিনেমের হেত্বাভাস তো নাই হইয়া যায় না। এখন বলেন, উপরের ছাগ্লামি নিৎশে লিখছে বইলা নিৎশের এক্সিস্টেনশালিজম নিয়া আলোচনা করা ছাগ্লামি, এই যুক্তিটা একটা ছাগ্লামি নাকি না?

গুআ আলোচনার করার মতো কোনো কন্টেন্ট রাইখা গেলে তো মানুষ সেইটা নিয়া কথা বলবে? ওনার পার্টির বালের আলাপের গান গাইতে যাবো কেনো?

আর পশ্চিমের লোকজন নিৎশের ব্যাপক রেসিজম আর অন্যান্য বিষয়ের চিন্তাভাবনারে পাশাপাশি সচেতনভাবে পাঠ করার যোগ্যতা রাখে, সেইটা নিয়া গবেষণা থিসিস করে, কিন্তু আমরা প্রাচ্যের লোকজন আমাদের জন্য কিছু কিছু জিনিস নিয়া আলাপ আলোচনা মানা, কারণ আমাদের ইমামরা আগেই সেগুলা পইড়া একদলা থুথু মাখাইয়া রাইখা দিসেন, এই ভাবনাটাই ইনহেরেন্টলি সেল্ফ ডিসরেস্পেক্টিং ইমামতিবান্ধব ও রেসিস্ট।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

থুথু বিষয়ক আলোচনা আপাতত বাদ দিই নাহয়। বাকিটুকু দেখি।

ভালো ধারণা বইলা কি আদৌ কিছু আছে, ... ?

আপাত কিছু ভালো ধারণাকে ভালো ভাবি বলেই তো ভালো-খারাপ, ন্যায়-অন্যায় ইত্যাদি নিয়ে কথা বলি, তর্ক করি। আবার যেমন এই ধরেন যুদ্ধাপরাধ ভালো না, অন্যায় যুদ্ধের সমর্থক হয়ে জান লড়িয়ে দেয়া খারাপ। খারাপ-ই তো! নাকি আবার বলবেন, খারাপ ধারণা বইলা আদৌ কি কিছু আছে?

হাইডেগার তো সরাসরি যুদ্ধাপরাধী নাজি বাহিনীর সদস্য ছিলেন। দার্শনিক হিসেবে তাকে পরিচিত করানো হলে সেটা আর্ধেক জানানো হয়। হাইডেগারের পুরো পরিচয় হওয়া উচিত- তিনি একজন 'দার্শনিক ও যুদ্ধাপরাধী'। তারপর নাহয় আমরা ভদ্রলোকের দর্শন নিয়ে আলাপে যাই। এই পরিচয় গোপন করে তার হক/ঠিক/মোক্ষম কথা পাঠককে জানিয়ে লাভ কি বলুন? গোলাম আযমের প্রসঙ্গটাও এখানে আনা যায়। যুদ্ধাপরাধের গুণগ্রাহীরা বলে- উনি নাকি ভাষাসৈনিক ছিলেন। আর দুষ্টলোকেরা বলে- সে যুদ্ধাপরাধী। তাইলে গোলাম আযমের ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে 'দুইটা হক কথার লগে নষ্টামীগুলাও অলক্ষ্যে ঢুইকা যাইতেই থাকবো'। কি মুসিবত? এই কাজ আদৌ কি ঠিক? এই যে যুদ্ধাপরাধের কথাটা গোলাম আযমের গুণগ্রাহীরা এড়িয়ে যাচ্ছেন- সেটা নিয়ে কি বলবেন? এখানে একটু কিন্তু খিয়াল কৈরা- এই দুই ব্যক্তিই (হাইডেগার ও গোলাম আযম) কিন্তু যুদ্ধাপরাধের সাথে জড়িত।

নীৎসের ব্যাপারে বলা হয়- ইনি নাজিবাদের নবী-রসুল। 'নাজিবাদের নবী নীৎসে' নামে বইপত্রও আছে। সচলে সিরাতের একটা পোস্টে নীৎসে নিয়ে কথাবার্তা হয়েছিল। ঐখানে আপনার মন্তব্যও আছে। 'হাইডেগার ও নাজিজম' শিরোনামেও বইপত্তর আছে। সেটাও পড়তে পারেন।

আর গোলাম আযম যে যুদ্ধাপরাধী- সেটা তো যুক্তি দিয়ে বোঝানোর দরকার নাই- এটা তথ্য। হিচেনস্‌ ইসলামোফোবিয়ার একজন প্রচারক। তাঁর আরেক অবদান- তিনি একটা অন্যায় যুদ্ধের দালালি করেছেন। শেষ পর্যন্ত সেটা নিয়ে আফসোস খুব একটা শোনা যায় নাই। এই লেখার এক জায়গায় হিচেনস-এর কথা শুনুন-

If nothing has been found so far, and if literally nothing (except the mobile units predicted and described by one defector) is found from now on, it will mean that the operation was a success.

এই পোস্ট আর্ধেক পোস্ট। হিচেনসকে ভক্তি প্রশংসার ঠেলায় মন্দ কথার ছিঁটেফোঁটাও আসেনি। পাঠক তো এটা পড়ে সুবুদ্ধি-কুবুদ্ধি পকেটে রেখে পুজো দিতে ছুটে আসবে।

রাজিব মোস্তাফিজ এর ছবি

চলুক

----------------------------------------------------------------------------
একশজন খাঁটি মানুষ দিয়ে একটা দেশ পাল্টে দেয়া যায়।তাই কখনো বিখ্যাত হওয়ার চেষ্টা করতে হয় না--চেষ্টা করতে হয় খাঁটি হওয়ার!!

দিগন্ত এর ছবি

হিচেনস্‌ ইসলামোফোবিয়ার একজন প্রচারক।
- হুম, তা উনি ক্রিশ্চানোফোবিয়ার প্রচারক নন কেন? ওনার অধিকাংশ লেখাই তো ক্রিশ্চানদের বিপক্ষে। আর উনি ইসলামোফোবিয়ার প্রচারক হলে প্যালেস্টাইনের সমর্থনে এত লেখালিখি করেছেন কেন?


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

আপাত কিছু ভালো ধারণাকে ভালো ভাবি বলেই তো ভালো-খারাপ, ন্যায়-অন্যায় ইত্যাদি নিয়ে কথা বলি, তর্ক করি। আবার যেমন এই ধরেন যুদ্ধাপরাধ ভালো না, অন্যায় যুদ্ধের সমর্থক হয়ে জান লড়িয়ে দেয়া খারাপ। খারাপ-ই তো! নাকি আবার বলবেন, খারাপ ধারণা বইলা আদৌ কি কিছু আছে?

চলুক ঠিকাছে।

যুদ্ধাপরাধের গুণগ্রাহীরা . . .

এই কথায় কিছুক্ষণ হাহাপগে।

উনি নাকি ভাষাসৈনিক ছিলেন ... এই যে যুদ্ধাপরাধের কথাটা গোলাম আযমের গুণগ্রাহীরা এড়িয়ে যাচ্ছেন

এটার উত্তরে যুদ্ধাপরাধের প্রসঙ্গ এনে বক্তব্যের কী ক্যাপাসিটি বাড়ে বলেন? গুআর যুদ্ধাপরাধের কথা তো গুআর মরে যাওয়া প্রদাদামহও জানতো। যারে বলবেন যে গুআ যুদ্ধাপরাধী, সে তো ওই যে বললেন, যুদ্ধাপরাধের গুণগ্রাহীই। উনি নাকি ভাষাসৈনিক ছিলেন কথাটার একটা সঠিক উত্তর হতে পারে ধরেন - "তো কী চ্যাটের বাল হইছে?" বা উহার অন্যান্য ভদ্রস্থ ভার্শন। এটাই কিন্তু সঠিক কথা। কিন্তু ব্যাপারটা সেখানেও না। গুআর ভাষাসৈনিক স্ট্যাটাস তার প্রফেসর স্ট্যাটাসের মতোই। অন্য উদাহরণ দেয়া যাইতো, যেমন ইভ টিজিংয়ের মনস্তত্ত্ব নিয়ে উকিল গুআ বলছেন "যে বিয়ে করে নারীর সঙ্গের যে মজা সে ভোগ করেছে, যে ভোগ করছে, সে নারী দেখলেই তার ভোগের ধারণা আসবে, তাকে দেখতে চাইবে, তাকে চোখ থেকে ফেরানো সম্ভব হবে না।" এখন কেউ গুআর এই যুক্তিরে যদি গুআ যুদ্ধাপরাধী ছিলো বলে খণ্ডন করে, তার মানে কিন্তু এক অর্থে এই ধারণার উৎপাদন হচ্ছে যে গুআ খালি যুদ্ধাপরাধীই ছিলো। আর অন্যান্য দোষ থেকে কিন্তু তাকে আড়াল করা হচ্ছে। অথচ বক্তব্যটাকে বক্তব্যের মেরিটে নাকচ করতে কিন্তু জিনিয়াস হওয়া লাগে না।

হাইডেগারের পুরো পরিচয় হওয়া উচিত- তিনি একজন 'দার্শনিক ও যুদ্ধাপরাধী'। তারপর নাহয় আমরা ভদ্রলোকের দর্শন নিয়ে আলাপে যাই।

আপনার এই কথায় দ্বিমত হওয়ার কোনো কারণ নাই। হাইডেগারের নাৎসীবান্ধব পরিচয় চেপেচুপে লুকিয়ে রাখার বিষয় না। "হাইডেগারের দার্শনিক আলাপে তাকে নাৎসীবান্ধব হিসাবে পরিচয় করিয়ে দেয়া কখনোই ঠিক না", এই ধরনের লাইনটা হলো "হাইডেগার নাৎসীবান্ধব বলে তার দার্শনিকতা নিয়ে আলাপ কখনোই ঠিক না"র মতোই একটা হার্ড লাইন।

তবে কথা হচ্ছিল অ্যাড হোমিনেম নিয়ে। হাইডেগারের নাৎসিবান্ধব পরিচয়ের কারণে তার সকল আলোচনা বাতিল করা নিয়ে। সে পথে আরো কিছু এগোই। একটা সাক্ষাৎ সিনারিও দেই। কাল্পনিক উদাহরণ না। এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার গবেষণার দার্শনিক আলোচনায় হাইডেগার গুরুত্বের আসন দখল করে থাকে। এআই গবেষণা ভর্তি হলো গিয়ে হাইডেগারের ফলোয়ারে। এমআইটির এআই ল্যাবকে বলে হাইডেগারিয়ান এআইয়ের সুতিকাগার। কিন্তু আমি (এবং এই লাইনের আরো অনেকে) দেখছি যে হাইডেগারিয়ান এআই ফেইল খেতে বাধ্য। এখন সেটা আমি এআই গোষ্ঠিকে জানাতে চাই। তাদের ওয়ার্ন করতে চাই, যে তোমরা এআইয়ের তরী একেবারে মাঝ সমুদ্রে নিয়া ডুবাইবা এই লাইনে। তো সেই সমালোচনায় আমি যদি আমার যুক্তিকে হাইডেগারের যুদ্ধাপরাধ ও নাৎসি ছাগুপনার উপর ভিত্তি করে উপস্থাপন না করি, তখন কি শুনতে হবে যে সেটা করাটা ঠিক না? কিন্তু সমস্যাটা কী দেখেন। সেইক্ষেত্রে আমার যুক্তি কিন্তু অ্যাড হোমিনেম হেত্বাভাসে দুষ্ট হয়। আমার সমালোচনাটা কিন্তু বিফলে যাচ্ছে সেক্ষেত্রে। আমার সমালোচনাটা আরামসে ইগনোর করা যাবে এই যৌক্তিক ত্রুটির জন্য। কারণ আমি বক্তব্যকে বক্তব্যের মেরিটে জাজ না করে হাইডেগারের অপ্রাসঙ্গিক সমস্যার বিষয়কে ভিত্তি করে তাকে নাকচ করছি। বলছি যে শালা ছাগুপনা করেছে, ফলে তার সকল বক্তব্য দুষিত, তোমরা ফিরা আসো। এতে না কোনো কাজ হলো, না কেউ আমার কথা শুনে ফিরে আসার সঙ্গত কারণ পেলো, না আমার যুক্তিটা কোনো যুক্তি হলো। ফলে হাইডেগারিয়ান এআইয়ের সমালোচনা কিন্তু আমাকে করতে হচ্ছে হাইডেগারের অপ্রাসঙ্গিক ছাগুপনা ভিত্তিক পলেমিক্স বাদ রেখেই। এখন ছাগল সেই লেখা পড়ে হাইডেগারের ছাগুত্বগুলাকেও পালনীয় ভাবলে উৎপাদন সম্পর্ক অনুযায়ী সেই দায় আমারও, নাকি? উৎপাদন সম্পর্কের খাতিরে এমনতর ছাগলকেন্দ্রিক হওয়াটাও কি ঠিক?

তবে আপনি হয়তো বলবেন, এই পোস্ট তো দার্শনিক সমালোচনা না, পরিচিতিমূলকই। সে কারণে পোস্টটাকে অর্ধেক বলেছেনও। তবে আপনি তো সেটাকে পুরো করে দিয়েছেনই। ফলে এখানে তো আমি আর তেমন গ্যাঞ্জাম দেখি না। বরং সেই তর্কে উদ্ভুত কিছু কথার পিঠেই কথাগুলো বলছিলাম।

দিগন্ত এর ছবি

হিচেন্সের বিরুদ্ধে সঠিক অভিযোগটা কি? যুদ্ধবাজ? সাম্রাজ্যবাদের সমর্থন? হিচেন্স তো বহুকাল ধরেই মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতা করে এসেছেন - সেই ভিয়েতনামের যুদ্ধ থেকেই। ইরাক যুদ্ধে ওনার অবস্থান ভুল বলে সেগুলোও উলটো হবে?


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

হাসিব এর ছবি

সেটাই। বাংলাদেশেও আজকাল মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধাপরাধী খুঁজে পাচ্ছেন না। কিন্তু তাতে কি! একবার যেহেতু ভালো কিছু করছে অতএব তারে ইনডেমনিটি দিয়ে দাও!

দিগন্ত এর ছবি

প্রসঙ্গে বারবার কেন বাংলাদেশ আসছে কেন বুঝছি না।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

হাসিব এর ছবি

বাংলাদেশে জন্ম যে আমার! উপরের মন্তব্যে বাংলাদেশ আসলো কারণ প্রসঙ্গ একই। কিছু ভালো কাজ দেখালে পরবর্তী মন্দ কাজগুলোর হালালিকরণ হয় না।

দিগন্ত এর ছবি

কোনো খারাপ কাজের হালালিকরণ হয় না। ব্যক্তি জীবনে কিছু ভাল আর কিছু খারাপ কাজ করতেই পারে। তার ভাল কাজকে ভাল আর খারাপ কাজকে খারাপ বলা দরকার।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

হাসিব এর ছবি

হিচেন্স আরব-বিশ্বে গণতন্ত্র আসবে বলে মশগুল ছিলেন।

হিচেন্স এরকম সস্তামানের ভূদাই ছিলেন এইটা মনে করে বেচারার জন্য খারাপই লাগতেছে।

নীড় সন্ধানী এর ছবি

"একবিংশ শতকের বৃহত্তম গণহত্যা ইরাকে হইছে। এইটা করছে আমেরিকা আর তার সাঙ্গপাঙ্গরা। এই গণহত্যা শুধু একটা এককালীন হত্যাকাণ্ড না। এই 'চলমান' গণহত্যা মানবেতিহাসে নতুন। ইরাক দখলকে সমর্থন দিয়া যেই লোক একটা বাক্যও লিখছে তার প্রতি আমার কোনো ভক্তি নাই। এবং যারা মনে করেন ইরাক দখল কোনো কারণে ঠিকাছে, তাদের প্রতিও আমার কোনো ভক্তি নাই। "

এই বক্তব্যের প্রতি ১০০% সহমত!!!

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

দিগন্ত এর ছবি

হিচেন্সের যুদ্ধ-সমর্থনের ভিডিওটা না থাকলে পোস্টটা সম্পূর্ণ হয় না। তাই এটাও জুড়ে দিচ্ছি -
http://www.youtube.com/watch?v=KZnUIeKOIgc


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

দিগন্ত এর ছবি

হিচেন্সের বক্তব্য - http://www.slate.com/articles/news_and_politics/politics/2008/03/how_did_i_get_iraq_wrong_11.single.html


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

লেখাটায় ফের আরেকবার যুদ্ধের পক্ষে তার নগ্ন সমর্থন। খারাপের বিপরীতে কম খারাপ, এতো এতো যুক্তির ভীড়ে এই তার ছিলো বলার মতো কথা? অথবা -

We were never, if we are honest with ourselves, "lied into war." We became steadily more aware that the option was continued collusion with Saddam Hussein or a decision to have done with him. The president's speech to the United Nations on Sept. 12, 2002, laying out the considered case that it was time to face the Iraqi tyrant, too, with this choice, was easily the best speech of his two-term tenure and by far the most misunderstood.

None of these positive developments took place without a good deal of bungling and cruelty and unintended consequences of their own.

আমি এই লেখাগুলো কীভাবে পড়তে হয় জানি না।

দিগন্ত এর ছবি

সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। আমি আগেই বলেছি ইরাক যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে তার অবস্থান কোনো ভাবেই সমর্থনীয় নয়।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

অবাঞ্ছিত এর ছবি

মাস দুয়েক আগে হিচেন্সের (খুব সম্ভবত শেষ) পাব্লিক স্পিচে উপস্থিত থাকার সুযোগ হয়েছিল। নিজে থেকে হাঁটতে পারছেন না, বেশিক্ষণ দাঁড়িয়েও থাকতে পারছেন না.. কিছুক্ষণ কথা বলে থেমে দম নিতে হচ্ছিলো তাঁর; কাশিতে কথা জড়িয়ে যাচ্ছিলো। কিন্তু তার মধ্যেও তাঁর মধ্যে যে প্রবল মনের জোর ছিলো তা আমি কোনোদিন ভুলবো না।

অনেক "ধর্মজ্ঞানী"কে বলতে শুনেছি মৃত্যুর আগে নাকি নাস্তিক মানুষও ভয়ে আস্তিক হয়ে যায়... খুব একটা আমল দেওয়ার মত কথা না.. তবু মনে একটা সন্দেহ ছিলো আসলেই মৃত্যুর আগে মানুষ দুর্বল হয়ে যায় নাকি। কিন্তু সেদিন হিচেন্স জানতেন যে তিনি মৃত্যুর চোখে চোখ রেখে কথা বলছেন.. তাঁর গলা একবারো কাঁপেনি..

ঘটনাটা আমাকে খুব নাড়া দিয়েছিলো..

হিচেন্সকে শ্রদ্ধা।

__________________________
ঈশ্বর সরে দাঁড়াও।
উপাসনার অতিক্রান্ত লগ্নে
তোমার লাল স্বর্গের মেঘেরা
আজ শুকনো নীল...

ডাইনোসর এর ছবি

যখনই তাঁর সম্পর্কে কৌতুহলি হলাম। তখনই তাকে বিদায় জানাতে হলো।
হিচেন্সকে শ্রদ্ধা।

কৌস্তুভ এর ছবি

প্রায় দিনদুয়েক পর নেটে বসার সুযোগ পেলাম, দেখছি ইরাক প্রসঙ্গ নিয়ে অনেকটা আলোচনা হয়েছে। কোনো তৃতীয় হাত না এনে বলি, লেখায় এই প্রসঙ্গ অনুপস্থিত থাকার কারণ একমাত্র এ বিষয়ে আমার বিশেষ কিছু না জানা। এ নিয়ে পড়ে দেখব। ইরাক যুদ্ধের পক্ষে তাঁর অবস্থান হয়ে থাকলে সেটা সমর্থনযোগ্য নয়। পরে তিনি অবস্থান বদলে থাকলে ভালো কথা। আমার বা সমমনাদের কাছে হিচেন্স কোনো পীর-নবী নন, দোষ-গুণ মেশানো সাধারণ মানুষই। এবং তাঁর সম্বন্ধে পূর্ণাঙ্গ আলোচনা করে একটা অবিচুয়ারি-পোস্ট করতে গেলে দোষগুলোও আসা উচিত। ওই প্রসঙ্গ লেখায় বাদ থাকায় পাঠকের কাছে দুঃখিত।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।