খেয়াল করে দেখুন, পাকিস্তানের লোকসংখ্যার তুলনায় তাদের দেশ থেকে মশলা আমদানি অনেকটাই বেশি, আর ভারতের ক্ষেত্রে সেটা বহুগুণ বেশি। লক্ষণীয় – এই গ্রাফটা লগারিদমিক স্কেলে আঁকা, অতএব ভারতের লোকের তুলনায় তাদের মশলা রপ্তানি অনেক, অনেকগুণ বেশি।
লগ-স্কেলের ব্যাপারটা বুঝতে অসুবিধা হলে ‘হার্ড নাম্বারস’ দেখুন – বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভারতের জনসংখ্যার অনুপাত ১ : ৩ : ২৪, আর তাদের মশলা রপ্তানির অনুপাত ১ : ২৯ : ৭২২!
আমি ভারতীয় বটে কিন্তু উগ্র জাতীয়তাবাদী নই, ওইগুলোর কোনোটাতেই আমার আপত্তি নেই। তাই এই কনসাল্টিং-এর অবস্থান থেকেই আমেরিকাবাসের সাড়ে তিন বছরে মশলাপাতি কেনার স্বল্প অভিজ্ঞতা নিয়ে এই ব্যাপারটার feasibility সম্পর্কে দুয়েককথা বলতে পারি। যাঁরা এখানে বহুদিন আছেন, যাঁরা অর্থনীতিতে পারঙ্গম, মন্তব্যে তাঁরা বিশদ আলোচনা করবেন আশা করি।
টিউলিপ’দি একটা কথা শুরুতেই বলেছিল, যে ব্যাপারটা এক দিনের জন্য ভারতীয় রেস্তোরাঁয় খেতে গেলাম না, এতটা সহজ নয়। অনেকের বাড়িতেই রান্নার জন্য কৌটোভরে নানারকম ভারতীয় মশলা আছে, তাদের পক্ষে ওই একদিনের জন্য দোকান থেকে চামচখানেক বাংলাদেশী মশলা নিয়ে আসা তো সম্ভব না। কিনতে হলে পুরো প্যাকেট সবরকম মশলাই বাংলাদেশী কিনতে হবে, যেটা ব্যবহার করা হবে দীর্ঘমেয়াদি ব্যাপার – সেটা খারাপ কিছু না, কিন্তু বাংলাদেশী মশলা পাওয়াটাই সবসময় সহজ নয় – ভারতীয়, পাকিস্তানি মশলার ভিড়ে তারা যে আমদানি অর্থাৎ প্রাপ্তিযোগ্যতার নিরিখে অনেকটাই পিছিয়ে তা তো দেখাই গেছে।
এখানে একটা বিষয় খেয়াল করার – লোকে তো সরাসরি মশলা আমদানির চাহিদা তৈরি করে না।
আমদানির চাহিদা তৈরির ক্ষেত্রে একটা বড় প্রভাবক হচ্ছে উপমহদেশীয় রেস্তোরাঁগুলো, যারা মশলা অনেকটা পরিমাণে কেনে। তা এরা কোত্থেকে কী মশলা কিনছে তা নিয়ে কেউ বিশদে জানলে বলতে পারেন – কোন দেশের রেস্তোরাঁ কোন দেশের মশলা কতটা কেনে তার অনুপাত কেমন, বা ভারতীয় রেস্তোরাঁর সংখ্যার তুলনায় বাংলাদেশী রেস্তোরাঁ গড়ে কতগুলো আছে, ইত্যাদি অনেকগুলো ফ্যাক্টর চলে আসে।
সেটা যদি আপাতত বাদ দিই, মূল প্রভাবক দাঁড়ায় যা: আমরা দেশী মশলা কিনি দেশী দোকানগুলোর থেকে। অনেক সুপারমার্কেট উপমহাদেশীয় মশলা রাখে না, অনেকে আবার ‘এক্সোটিক ফরেন স্পাইসেস’ সেকশনে রাখে, যেখান থেকে অত দামী মশলা প্রায় কোনো দেশী ক্রেতাই কিনবেন না। তাঁরা যাবেন স্থানীয় দেশী দোকানেই। আর এখানেই একটা বড় ফ্যাক্টর এসে যায় – সেই দোকানগুলো যে দেশের যেমন মাল আনাবে, আমাদের কিনতে হলে তাই-ই কেনা ছাড়া গত্যন্তর থাকে না। যদি কারো ধারেকাছে কোনো বাংলাদেশী দোকান না থাকে, তাহলে তার কাছেপিঠে ভারতীয় দোকান থাকলে সেটাতেই যাওয়া ছাড়া উপায় কি?
অর্থাৎ একজন ক্রেতার নিকটবর্তী অঞ্চলের মধ্যে চাহিদামত জিনিস পাওয়া যায় কিনা, বা পেলেও মানসম্মত জিনিস পাওয়া যায় কিনা, এগুলো বড় একটা ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়ায়।
এই যেমন, বাল্টিমোরের সাবার্বে এক পশ্চিমবঙ্গের দাদার বাড়িতে গিয়েছিলাম। ছোট টাউন, শহর থেকে অনেকটাই দূরে। এসব জায়গায় ড্রাইভ করাই একমাত্র পন্থা। তা তাদের কাছেপিঠে বাংলাদেশী দোকান তো নেই-ই, ভারতীয় দোকানও নেই – পাঁঠার মাংস বা রুইমাছ কিনতে গেলে খানিকদূরের মলের একটামাত্র পাকিস্তানি দোকানই সম্বল।
বা দিফিও’র লেজেন্ডারি বিরিয়ানি রেসিপি’র কথাই ধরেন। সেটায় বলা হয়েছে, শানের মশলাই সবচেয়ে ভালো। শান যে পাকিস্তানি কোম্পানি, সেটা কেবল সম্প্রতিই খেয়াল করলাম, কজন জানেন বলতে পারি না।
নয়ত ধরেন, পারদু ইউনিভার্সিটি মানে বহুদূরের ইন্ডিয়ানাপোলিস/ওয়েস্ট লাফায়েত-এর পশ্চিমবাঙালি কমিউনিটির লোকেরাও কেউ শিকাগো গেলে ডেভন অ্যাভিনিউ(উপমহাদেশীয় মহল্লা)-এর আল-আমিন গ্রোসারি নামের বহুপরিচিত দোকান থেকেই সবার জন্য একেবারে কুড়ি কেজি ছাগমাংস আনিয়ে ফেলে।
এখন আমেরিকাতে আমার মত অধিকাংশ গরীব গ্র্যাড স্টুডেন্টই গাড়ি চালায় না, ফলে কাছেপিঠে যা পাওয়া যায় তাই একমাত্র পথ। আমাদের বাড়ির কাছে একটা ছোট পাঞ্জাবি দোকান আছে, বেশ অল্প সম্ভার এবং খারাপ মানের জিনিস রাখলেও তাই তাতেই যেতে হয় – এই অঞ্চলে অনেক ভারতীয় ছাত্র থাকে, তারা একটা ‘স্টেডি ডিমান্ড’ বজায় রাখছে; আর সেই সুযোগে এরা প্রায়শই এক্সপায়ারি মালও চালিয়ে দেয়, ছেলেপিলে কে আর অত খেয়াল করে দেখে।
---------------------------------
তথ্যসূত্র:
১. http://factfinder2.census.gov/
(এথনিসিটি’কে ভেরিয়েবল হিসাবে ধরা হয়েছে, ইমিগ্র্যান্ট পপুলেনশন সাইজ-কে নয়, কারণ ইমিগ্র্যান্ট/সিটিজেন/এলিয়েন এই শ্রেণীবিভাগের হ্যাপায় লোক বাদ চলে যাওয়ার সম্ভাবনা। আমরা যারা লিগাল এলিয়েন অর্থাৎ পরিযায়ী পাখি তারাও যেমন দেশী মশলা কিনি, তেমনি যারা পাকাপোক্ত আমেরিকান হয়ে গেছেন তারাও তো কেনেন।)
২. http://www.fas.usda.gov/GATS/
মন্তব্য
মশলা আসলেই একটা সমস্যা। আমারতো গাড়ী নেই, এমনকি অন্যদের গাড়ীতে যে কয়েকবার গিয়েছি, তাতে বাংলাদেশী এক মিষ্টির দোকান বাদ কিছু পাইনি। এখন উপায় পাকিস্তানী বা ভারতীয় গ্রোসারী। রাধুনীর মশলা এই দোকানগুলোতে পাওয়া যেতে দেখেছি, বিশেষত পাকিস্তানী দোকানে। আপাতত কিছু মশলা অ্যামেরিকান গ্রোসারী থেকে কিনে আনছি, যে দাম, অনেকটা স্বর্ণের গুড়ার মওত করে তরকারীতে ছিটাই। আমার মনে হয় লোকসংখ্যা অনুপাতে বাংলাদেশী মালিকাধীন দোকানই তেমন নেই।
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
আমারও আশপাশ দেখে এমনটাই মনে হয়েছে...
ডিমান্ড তো আলবৎ আছে। সাপ্লাইতেই সমস্যা। সুপারস্টোরে যতোবার যাই, দীর্ঘশ্বাস ফেলি। দক্ষিণ এশিয় বলে একটা সেকশান আছে, সেখানে হলদিরামের খাবারেই কেবল ভর্তি। অথচ স্বাদে গুণে বাংলাদেশি পণ্যগুলোর মান কিন্তু কোনো অংশে কম নয়। চানাচুর বলেন আর আলাউদ্দিনের মিষ্টি বলেন। শেল্ফে থাকলে বিক্রয় হতোই। কিন্তু এভাবে ক্যানাডাওয়াইড সকল সুপারস্টোরে অবিরাম সাপ্লাই দেওয়ার জন্যে হলদিরামের যে অবকাঠামো, সেটা সম্ভবত বাংলাদেশে কোনো ব্যবসার সেই পরিমাণ গড়ে ওঠে নি। বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা কোথায়? আওয়াজ দিন।
হলদিরামের মত ব্যাপক অবকাঠামো কলকাতাতেও অন্য কোনো দোকানের তেমন নেই। আর সেজন্যে তাদের সংখ্যাধিক্য, রংচঙে মোড়ক, সব মিলিয়ে তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় অন্যান্য ব্র্যান্ড যেতে পারে না ভারতেও।
তবে তাদের ব্যাপারটা চীনের কোম্পানির মত। আনএথিকাল বিজনেস প্র্যাক্টিস প্রচণ্ডভাবে। ঘুপচি গুদামে কোনোরকম সুরক্ষাব্যবস্থা-লাইসেন্স ছাড়াই মিষ্টি/ভুজিয়া তৈরি চালাতে গিয়ে আগুন লেগে বেশ কিছু শ্রমিক মারা গেছিল সম্প্রতি। মনে হয় ওইজন্যই দাম কমিয়ে রাখতে পারে। আমি হলদিরামের জিনিস কিনি না, জানতে পারলে খাইও না।
সাংঘাতিক ব্যাপার!
আমার স্বল্পকালীন প্রবাসের অভিজ্ঞতায় দেখেছি বাংলাদেশি মসলার তুলনায় ভারতীয় মসলা দামে সস্তা। ভারতীয় মসলার চাহিদা বেশি হওয়ার এটাও একটা গুরুত্বপূর্ণ কারণ।
ভারতীয় বাসমতি চাল যে দামে কিনতে পাওয়া যায় তার দ্বিগুণ দাম দিয়ে বাংলাদেশী কালিজিরা চাল খাওয়া ক'জনের পক্ষে সম্ভব?
যতদূর দেখেছি বিদেশে মানুষ ভারতের মসলা-বাংলাদেশের মসলা বেছে কিনে না। একই মানের দুটো প্যাকেটের মধ্যে যেটা তুলনামূলকভাবে সস্তা সেটাই সবাই কিনে। সেটাই স্বাভাবিক।
বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা সবকিছু শর্টকার্ট খোঁজে। দীর্ঘমেয়াদে বড় বাজার তৈরির চাইতে স্বল্পমেয়াদে বেশি লাভের প্রতি তাদের আগ্রহ বেশি। তাই, বলা যায় বাস্তবতার আলোকে বিদেশের বাজারে ভারতীয় মসলার প্রতিদ্বন্দী হিসাবে দাঁড়ানো বাংলাদেশের মসলার জন্য মোটামুটি অসম্ভব ব্যাপার।
বাংলাদেশি কালিজিরা চাল যে পান সেইটাও তো একটা আশ্চর্য বিষয় লাগছে আমার কাছে।
তা হতে পারে।
হ্যাঁ, লোকে হয়ত কোন দেশের মাল তা বেছে কেনে না। এখন এই অবস্থা থেকে আমদানি বাড়াতে গেলে তো বেছে কেনা ছাড়া উপায় নেই।
তবে ধরেন, বিরিয়ানির মশলা হিসাবে ভারতীয় MDH কিনে দেখেছি সুবিধার না। অতএব কিছু সেন্ট বেশি হলেও শান-ই কিনি। সেটা একরকম বেছে কেনাই তো হল, মানের দিক থেকে বেছে নেওয়া। (অবশ্য ভারতীয় মালের বদলে পাকিস্তানি মাল বেছে নেওয়াও দাঁড়াচ্ছে এক্ষেত্রে।) আবার ওই জন্যই আমরা চাইনিজ সুপারমার্কেট গেলেও চিনা মাল না কিনে তাইওয়ানিজ মাল কেনার চেষ্টা করি। দামের সামান্য হেরফেরে মানের অনেকটা তফাত হয়। আমরা গরীব ছাত্র, আমাদের কথা যদি বাদ দিই, যারা পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন, তারা ওইটুকু খেয়াল করেন না কি?
১। আমার ধারণা সমস্যা হলো বাজারজাতকরণের। বাংলাদেশি মশলা বেশিরভাগ সময় শুধু বাংলাদেশি দোকানেই পাওয়া যায় (যা আবার সংখ্যায় কম)। কিন্তু ভারতীয়-পাকি মশলা বাংলাদেশী-ভারতীয়-পাকিস্তানী সব দোকানেই পাওয়া যায়। বাংলাদেশীদের নাগালে খুব কম দেশি দোকান থাকে বলে বেশিরভাগই বাধ্য হয়ে ভারতীয়-পাকিস্তানী মশলা কিনে।
২। মশলার ক্ষেত্রে দামও মনে হয় একটা ফ্যাক্টর। শানের মশলা খুবই সস্তা এবং সে হিসেবে অপ্রতিদ্বন্দ্বী। এখন অনেক ওয়ালমার্টেও মনে হয় পাওয়া যায়।
৩। শান যে পাকিস্তানি মশলা এটা আমিও ইদানিং আবিষ্কার করেছি
ঠিক।
আমাদের ধারেকাছে কোনো ওয়ালমার্ট নেই, অবাক ব্যাপার। বন্ধুদের কাছে শুনেছি আজকাল ভারতীয় মশলা কিছু রাখে সেখানে।
বেশ প্রাসঙ্গিক একটা পোস্ট। আমার দুই পয়সা -
ক
ডিস্ট্রিবিউশান চেইন:
দেশি মসলার জন্য নর্থ আমেরিকায় একটা বড় চেইন করা দরকার। বড় শহরগুলোতে তো এটা করাই যায়। টরেন্টো, নিউ ইয়র্ক, ডালাসে তো প্রচুর দেশি মা্নুষ, আনুপাতিক বিবেচনায় চাহিদার পরিমাণও বেশি হওয়ার কথা। কিন্তু যে শহরে প্রবাসী বাংলাদেশী কম, সেখানে মসলা বিক্রি ন্যূনতম থ্রেশহোল্ড ক্রস করে কিনা দেখা দরকার। পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকলে দাম তো ধেই ধেই করে বাড়বেই। সুপার স্টোরগুলোর পাশাপাশি ডাউন টাউনে স্পাইস সেন্টার টাইপের কিছু করা যায় কিনা চিন্তা করা দরকার। কানাডাতে এমন বেশ কিছু ভারতীয় স্টোর দেখেছি, বাংলাদেশী হাতে গোণা।
খ
বিপণন কৌশল:
মসলাপাতি কেনার জন্য মানুষ কী আলাদাভাবে বাজারে যায়? কখন মানুষ মসলা কিনে (ঋতু, উৎসবের স্পাইকগুলো লক্ষ্যণীয়)? আচরণগত এইসব বিশ্লেষণ করা খুব কঠিন কিছু না, ঠিকমত রিসিটবুক আপডেট করলেই হয়। এই তথ্যটুকু খুব দরকার। আমেরিকন বাজারে সিজনাল স্পাইকের সাথে মূল্য উঠানামা করে ব্যাপক হারে (একটু সরলীকরণ করছি)। ঈদে কী মসলার বাল্ক অ্যামাউন্টে কোন ছাড় দেওয়া হয়? (আমি কখনো পাই নি)
আরেকটা কৌশল হতে পারে - স্পেসিফিক দোকানকে টার্গেট করা। সোমালিয়ান, ইরানী বেশ কিছু মাংসের দোকানে দেখেছি ভারতীয় মসলা রাখে। ক্রেতারা মাংস কিনতে এসে মসলাসহ বাড়ি ফিরে। এইটা একটা চরম বুদ্ধি। অথচ দেশি মসলা পাওয়া যায় শুধু দেশি দোকানে, তাও সাত মাইল উজিয়ে। ভিন দেশি কসাইদের সাথে বন্ধুত্ব পাতানোটা এই ক্ষেত্রে উইন-উইন হবে।
গ
এডমন্টনের সুপার স্টোরে বাংলাদেশি মসলা পাওয়া যায় না, শুধুই ভারতীয় মসলা আর শান।
ঘ
সূক্ষ্ম ভাগ
এবার আসি আমদানীর ব্যাপারটা। ডেটাতে একটা বিষয় অস্পষ্ট। আমদানীর কত শতাংশ রেস্টুরেন্ট আর কত শতাংশ গৃহস্থালীর চাহিদা। অ্যানেকডোটাল এভিডেন্স - অনেক গ্র্যাড স্টুডেন্ট (বাংলাদেশী, ভারতীয়, পাকিস্তানী) নিজেরাই প্রায় ১ বছর চলার মত মসলা নিয়ে আসে।
আমার ধারণা আমদানীর মূল অংশে সিংহ থাবা বসায় রেস্টুরেন্ট মালিকেরা। যেহেতু ভারতীয় রেস্টুরেন্ট বেশি, চাহিদার পরিমাণও বেশি।
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
আহা, এই তো ইকোনমিস্টের বিদগ্ধ মতামত
এ কথাটা ঠিক, আমাকেও আসার সময় একবাণ্ডিল মশলা দিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তবে তার পর থেকে আর আনিনা। একটু খুঁজে শহরের মাঝখানের ভালো ভারতীয় দোকানে গেলে প্রায় সবকিছুই পাওয়া যায়, কাস্টমসের ওইসব হ্যাপার আর দরকার পড়ে না।
চেইন বলতে কি হলদিরামের মত চেইন স্টোরের কথা বলছ? এদেশে তো লোকালি ওনড বিজনেসের প্রতি সমর্থনটা বেশি, মেগাস্টোর মানেই নানারকম আনএথিকাল প্র্যাকটিস চলে আসে...
দিলেন তো এক্সপায়ারড জিনিসের কথা বলে এক ইউনিক ঘটনা মনে করিয়ে। টরন্টোর এক বাঙালি দোকানে মা'র আদেশে ম্যাঙ্গো পাল্প (সম্ভবত ভারতীয় ব্র্যান্ডের) কিনতে গিয়ে দেখি ক্যানের গায়ে কোন এক্সপায়ারি ডেট দেখা যাচ্ছে না। দোকানে থাকা লোকটাকে জিজ্ঞেস করায় প্রথমে ক্যানটা ভাল করে উলটে পালটে দেখল, না পেয়ে খানিকক্ষণ মাথা চুলকাল, তারপর বলল এই ম্যাংগো পাল্পের মেয়াদ দুই বছর। আকস্মিক সেই অদৃশ্য এক্সপায়ারি ডেট উনি কোথায় পেলেন কে জানে, তাই জিজ্ঞেস করলাম কত তারিখ থেকে সেই দুই বছর কাউন্ট হয়, জবাব দিল "যেদিন কিনবেন, সেদিন থেকে" !
আমাদের এখানে বাংলাদেশি দোকানির পণ্যে মাঝে মাঝেই দেখি ডেট পার হয়ে গেছে। দোকানি ভাইকে জিজ্ঞেস করলে বলেন ইচ্ছে করে পেছানো ডেট বসানো যাতে নাকি জাহাজ থেকে মাল তাড়াতাড়ি ছাড়ে। যা বোঝান! তারপর মূল্যও ওনার দৈবচয়ন ভিত্তিক। কখনো দুই ডলার তো কখনো পাঁচ ডলার। যা পাই তাই কিনি। পাকিস্তানি দোকানে ঢুকলেই যেভাবে উর্দু বলা শুরু করে। বিপরীতে ইংরেজি বললে গাল ফোলায়। বাংলা বলা ডেটওভার দেশি ভাইটারেই বেশি ভালা পাই। উর্দু না শুনতে পেয়ে পাকিস্তানির ফোলা গাল দেখার চেয়ে দেশি ডেটওভার জিনিস খেয়ে মরলেও সুখরে ভাই।
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
তোমার এই বাংলা বলা দেশিভাইর কিন্তু পাকিদের সাথে বড়ই পীরিতের সম্পর্ক। সে তাদের সাথে অত্যন্ত সুললিত গতি ও ছন্দে উর্দু বলে। এই নিয়ে তার সাথে আমার বেশ উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ের পরও তার খুব একটা পরিবর্তন হয়নি।
আমি আমার নিজের কথাটাই খালি বললাম। আমার ভালো লাগে না কেউ আমার কাছ থেকে উর্দু আশা করলে। আমি বিনা ভিন্ন দুইজন ব্যক্তি নিজেদের মধ্যে কী ভাষায় কী আলাপ করলো সেইটা আমার কাছে তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। অন্যের ব্যক্তিগত ব্যাপারে আমি মাথা কম ঘামাই।
তবে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় যদি করতেই চান, যারা মিলউড্স গ্রোসারি অ্যান্ড হালাল মিট্সের মালিক আহমদীয়া দেখে সেখানের মাংসকে হারাম বলে আর সেখান থেকে মাংস না কেনার জন্যে মসজিদে ফতোয়া দেয়, তাদের সাথেও করে দেখতে পারেন। সেইটা বরং একটা সমষ্টিগত ব্যাপার।
"যেদিন কিনবেন, সেদিন থেকে"
ভালো লাগল।
আমি অর্থনীতির ছাত্র নই, তাই ব্যাপারটা বিশ্লেষণ করতে পারবো না। তবে বলতে পারি - যে কোন কিছুরই শুরুটা একদিনে হয়না, সফলতাও একদিনে আসেনা, সময় লাগে। ফলে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনায় যে জিনিষটা দরকার তা হল স্থিতিশীলতা। আর বাজারের গড় স্থিতিশীলতা ক্রেতার হাতেই। তবে উতপাদক এবং বানিজ্যকরণের মাঝখানের যে গ্যাপ সেখানেও পরিবর্তন মনে হয় দরকার আছে।
আর কৌস্তুভ থেকেই কোট করে বলি, 'আমি ভারতীয় বটে কিন্তু উগ্র জাতীয়তাবাদী নই।' যা ভুল তা ভুলই হয়। সে যেই হোক না কেন। একটি কথা দু'একদিন ধরে মাথায় আসছে, 'রাজার প্রতি রাজার আচরণ।' আজকের দিনে কনভার্ট করলে যা দাঁড়ায় একটি পূর্ণ রাষ্ট্রের প্রতি আরেকটি পূর্ণ রাষ্ট্রের আচরণ। - ০১ মার্চ ভারত বনধ সফল হোক।
ডাকঘর | ছবিঘর
(তবে সবটা বুঝিনাই)
মশলার যুদ্ধে বাংলাদেশের যোগ দেবার দরকার দেখি না। বাংলাদেশ মশলা আমদানী নির্ভর দেশ। আর ভারত মশলা উৎপাদনকারী দেশ। এই যুদ্ধে আমাদের জেতার কোন সম্ভাবনাও নেই, যুক্তিও নেই।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
সহমত।
দেশেই আমদানি কমাতে পারিনা, রপ্তানীর বাজার দখলের কথা কিভাবে চিন্তা করি?
ভারতের মশলা আমদানি-রপ্তানি নিয়ে যা ডেটা পেলাম নিচে দিয়েছি। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে হালচাল কেমন?
আমাদের দেশেই এখন মসলা আমদানী হয়। যে কোন মসলাতেই আমাদের দেশ স্বয়ংসম্পুর্ণ না। সুতরাং এখান থেকে রপ্তানীর ব্যাপারটা আরো পরের ব্যাপার।
অমুকের সর্ষের তেল খেতেই হবে এরকম চিন্তা যারা করেন সে সব প্রবাসীর জন্য কোন কোন ব্যবসায়ী কিছু বাংলাদেশী পণ্য/মসলা দোকানে রাখেন।
আন্তর্জাতিক বাজারে চেইন স্টোর গুলোতে কোন পণ্য সরবরাহে সরবরাহকারীকে সেই পণ্যের জন্য ইউপিসি (Universal Product Code) নাম্বার নিতে হয়, যা ফলমূল বা সবজীর পিএলইউ (Price-Look Up) নাম্বারের অতিরিক্ত। এসব সংগ্রহের ঝামেলায় অনেকে যতটুকু সম্ভব ততটুকুও রপ্তানীতে যেতে চাননা।
তবে বাজারের কথা যদি ভাবেন তাহলে আমাদের দেশী মসলা কিংবা সব্জীর আন্তর্জাতিক বাজার কিন্তু আছেই। একটা ছোট্ট উদাহারণ দিই, আমাদের দেশী মরিচের স্বাদের কাছাকাছি মরিচ এখানে থাইল্যান্ড থেকে আমদানী হয়, সবচাইতে সস্তার দোকানে ১০০ গ্রামের দাম বাংলাদেশী টাকায় ২০০ এর উপর।
...........................
Every Picture Tells a Story
ভারতও গোলমরিচ লবঙ্গ পোস্ত ইত্যাদি অনেক কিছু আমদানি করে, বার্ষিক আমদানির পরিমাণ প্রায় ২৫৭ মিলিয়ন ডলার। আর তাদের রপ্তানির পরিমান ১৫০০ মিলিয়ন ডলার। যার মধ্যে ৬০ মিলিয়ন ডলারের মশলা যায় বাংলাদেশে।
অতএব আমদানি বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত রপ্তানি হবে না, এমন তো নয়। তবে "যে কোন মসলাতেই আমাদের দেশ স্বয়ংসম্পুর্ণ না" হলে অন্য কথা।
মসলার ব্যাপারটা এমন সুন্দর করে লিখার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ । আমি ইউরোপেও একই অবস্থা দেখি । লন্ডনের সেইন্সবারি টেস্কোর মত সুপারষ্টোর গুলোতে ভারতীয় / পাকিস্থানী সব মসলাই পাওয়া যায় কিন্তু বাংলাদেশী রাঁধুনি ব্রেন্ডের মস্লা কিছু পরিমানে পাওয়া যায় শুধু মাত্র বাংলাদেশী দোকানেই । তিন চার বছর আগেও বাংলাদেশী মসলা এমনকি বাংলাদেশী গ্রোসারীগুলোতেও কম পাওয়া যেত, অতি সাম্প্রতিককালে দেখছি বাংলাদেশী মসলা রাখার পরিমাণ অনেকটাই বেড়েছে । আরেকটা কথা এদেশেও বাংলাদেশী রেষ্টোরেন্ট গুলোতে (যার সংখ্যা প্রায় দশ হাজারের মত),এবং যা আবার ইন্ডিয়ান রেষ্টোরেন্ট নামে সুপরিচিত, সেগুলো হচ্ছে ইন্ডিয়ার বাইরে ইন্ডিয়ান মস্লার অন্যতম বড় ক্রেতা ।
ধন্যবাদ
কালকেই মুস্তাফিজ ভাইয়ের লেখায় পড়ছিলাম এই ঘটনাটা, উপমহাদেশীয় দোকান বা রেস্তোরাঁর ক্ষেত্রে মেজরিটি বলে সবকিছুকেই ইন্ডিয়ান বলার চল ইউরোপে আছে - আমেরিকায় যে আছে সে তো দেখেইছি।
বাংলাদেশে উৎপাদিত মশলার (হলুদ, শুকনো মরিচ, ধনে, আদা, রসুন, জিরা, রামধনে, মৌরী ইত্যাদি) পরিমাণ দেশের অভ্যন্তরে চাহিদার তুলনায় খুবই কম। আর এখানে গরম মশলার (দারুচিনি, এলাচ, লবঙ্গ, তেজপাতা, জায়ফল, জয়ত্রী, হিঙ ইত্যাদি) উৎপাদন শূন্যের কোঠায়। সুতরাং প্যাকেটজাত গুড়া মশলার আন্তর্জাতিক বাজার ধরতে আরেকটা "গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি" আমাদের চালু করা ঠিক হবে কিনা সেটা ভালো ভাবে ভেবে দেখা দরকার।
আমরা বরং যে সব মৌসুমে যে সব শাক-সবজি, ফল, মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণের সুবিধা যথেষ্ট না থাকায় পঁচে যায় সে সময়ে সেগুলো রফতানীর কথা ভাবতে পারি।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
হুমম, এই দিকটা জানতাম না। সেক্ষেত্রে রপ্তানি করতে সমস্যা বই কি। ভারতে মূল যে মশলাগুলো রান্নায় ব্যবহৃত হয় যেমন ধনে জিরে হলুদ লঙ্কা এগুলোয় স্বাবলম্বী, তবে অন্যান্য বহু মশলা আমদানী করতে হয়। উপরে বিশদ তথ্য দিয়েছি।
অনেক কিছু জানলাম।
মসলার ব্যাপারটা এমন সুন্দর করে লিখার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
ধন্যবাদ। উপরে ভারতীয় মশলা আমদানি-রপ্তানি সংক্রান্ত আরো কিছু তথ্য দিয়েছি, দেখতে পারেন।
১) আমাদের রপ্তানীকৌশলে ভারত ও ভারতীয় রপ্তানী পণ্য় অন্য়তম চালক, কিন্তু সেটাকেই একমাত্র চালক হিসাবে আমাদের পণ্য়রপ্তানীকৌশল সাজালে সেটা টেকসই বা ফলপ্রসূ হবেনা।
২) রপ্তানী থেকে যে বিদেশী মুদ্রা আয় হয়, তার অনেকটাই যায় আমদানীতে। আমেরিকায় অনেক কাঠ খড় পুড়িয়ে (ভারতীয় পণ্য়ের সাথে কামড়া কামড়ি করে মশলার বাজার ধরে যে ডলার দেশে আসবে, সেটা আমরা আবার চানাবুট/মশুরের ডাল কিনতে আমেরিকায় ফেরত পাঠিয়ে দেব।
৩) ওপরের মন্তব্য়ে এসে গেছে মশলা বাংলাদেশের পন্য় রপ্তানিপণ্য় অথবা সেই পণ্য়ের জন্য় আমেরিকা/ইউরোপই বাজার কিনা, সেটা আরো খতিয়ে দেখা দরকার। যেমন বাংলাদেশী তিল, কাওন (কিনোয়া) ও ভ্য়ারেন্ডা (ক্য়াস্টর) একটি বড় বাজার চীনে থাকতে পারে। ভারত নিজেও কিন্তু আমাদের ক্ররিষিজ পন্য়ের একটি অনেক বড় বাজার। আমাদের পান ও সুপারি দক্ষিন এশিয়ায় একটি সমাদ্রিত পণ্য় - এবং এর পরিমানগত চাহিদা বাড়ছে, সেই সাথে উপভোগ্য় হিসাবে সমাজের উঁচুশ্রেনীতে এর গ্রহনযোগ্য়তা বাড়ছে - চীন, ভিয়েতনাম, সিংগাপুর ও থাইল্য়ান্ডে পানের প্রসার চোখে পড়আর মত।
৪) আফ্রিকাতে যে আমরা নতুন ইস্টইন্ডিয়া কোম্পানি ফেঁদে বসছি, তার প্রভাব আমাদের মশলারপ্তানিকল্পে কিরকম প্রভাব রাখতে পারে?
ইন্টারেস্টিং।
২ এর কথাটা ভারতের ক্ষেত্রেও সত্যি।
ভারতের বর্তমান বিক্রিবাটা কোন দেশে কেমন, সে তথ্য তো পেয়েছি, উপরে দিলাম, বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও অমন তথ্য পাওয়া যেতে পারে হয়ত। তবে পোটেনশিয়াল বাজার কোথায় কেমন, এইটা নিয়ে বিশদ খোঁজখবর সরকার নিতেই পারে।
এমনিতে মশলা বলে যে বস্তুটা বোঝায়, তার ৭০% উৎপাদিত হয় ভারতে, সুতরাং রপ্তানীমুখী মশলায় ভারতের সাথে প্রতিযোগিতা এখন মনে হয়না সম্ভব। তাছাড়া, মশলা উৎপাদনে ব্যবহৃত কৃষিজমিতে মশলার পরিবর্তে অন্য কিছু উৎপাদন করা যায় কিনা সেটাও ভেবে দেখা দরকার। জমিতে উৎপাদনশীলতা ও লাভের ভিত্তিতে অন্যান্য চাষের তুলনায় মশলা-ভিত্তিক চাষের উপযোগিতা থাকলে তবেই এই পথে হাঁটা যেতে পারে।
এমনিতে বাংলাদেশে অর্থকরী ফসল নিয়ে বিস্তারে আলোচনা করা যেতে পারে।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
আসলে এই মসলা পাতি নিয়ে ও যে এত ভাল বিশ্লেষন ধর্মী লেখা হতে পারে তা আপনার এই লেখাটা না পড়লে আজানায়ই থেকে যেতো দাদা।বিদেশে যারা থাকে তাদের সবারই একই আবস্থা। মাঝে মাঝে হালিম খেতে মুন চায় কিন্তু আমাদের এখানে যারা সাউথ এশিয়ান খাবার যোগান দেন তাদের কে বললেই পাকিস্থানী পন্য ধরিয়ে দেয় তাই আর খাওয়া হয় না ।কারন আমি ব্যাক্তিগত ভাবে পাহিস্থানি পন্য পরিহার করার চেষ্টা করি।
লেখা খুব ভাল হয়েছে।
নতুন মন্তব্য করুন