হে পাঠক, নিচের শিম্পাঞ্জিশিশুর ছবিটা একবার ভালো করে দেখুন তো দেখি, অনেকটাই একটা ছোট্টখাট্ট শান্তশিষ্ট নম্রভদ্র কালোকোলো বাচ্চাছেলের মত (মানে ছুডুকালে আমি যেমন কিউট ছিলুম আরকি) মনে হয় কি না!
হুঁ হুঁ। তা এইবার বলেন দেখি, কেন এমন মিল?
আচ্ছা, উত্তরের সুবিধার জন্য এর ধাড়িবয়সের ছবিটাও পাশে জুড়ে দিলাম। এইবার দেখেন।
সেটার তুলনায়, বাচ্চাটাকে কেন মানুষ-মানুষ মনে হচ্ছে, সেই লক্ষণগুলো আমার যা মনে আসছে সেগুলো বলতে পারি; আপনারা হয়ত আরো কিছু পেতে পারেন:
তবে এইবার আসছে সবচেয়ে দামি পয়েন্টটা – ভেবে দেখুন, এই প্রতিটা লক্ষণই কিন্তু শুধু মানবশিশুতে নয় বরং প্রাপ্তবয়স্ক মানুষেও উপস্থিত!
মানে, যে মিলগুলোর জন্য মানবশিশু আর শিম্পু-শিশু একরকম লাগে, সেগুলো কিন্তু অনেকাংশেই ধাড়ি মানুষেও উপস্থিত, কোনো ধাড়ি Ape-এর বিপরীতে। আর মানুষ এক্ষেত্রে অনন্য কারণ অন্য কোনো পূর্ণবয়স্ক গ্রেট এপ (বিবর্তনবৃক্ষে যারা আমাদের সবচেয়ে কাছের ভাই, সেই শিম্পাঞ্জি, গোরিলা, ওরাংওটান) শিশুকালের এই লক্ষণগুলো বহন করে না।
(নিচের ছবিটা দেখুন, একটা শিম্পাঞ্জির সদ্যোজাত, বাচ্চাবয়সের আর পূর্ণাঙ্গ খুলির হাড়ের গঠন কীভাবে পরিবর্তিত হয় তা দেখানো হয়েছে। আর তা তুলনা করা হয়েছে সদ্যোজাত আর পূর্ণাঙ্গ মানুষের খুলির সাথে। দেখলেই বুঝতে পারবেন, একটা প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের খুলি অনেকাংশেই একটা বাচ্চা শিম্পাঞ্জির খুলির সমতুল্য – যেন মানুষের খুলিটা মাঝপথে গিয়েই থমকে গেছে, পরিবর্তনের ধারায় পুরোটা অগ্রসর হতে পারেনি।)
আগে এই লক্ষণগুলো আলাদা আলাদা করে ব্যাখ্যা করা হত, এই যেমন, আমাদের পরিবেশ-জীবনযাত্রা বদলানোর সাথে সাথে অধিকাংশ জীবের মত মুখ দিয়ে খাবার তোলার প্রয়োজন ফুরোয় – আদিম মানুষ দুপায়ে দাঁড়িয়ে হাত দিয়ে নিয়ে খাদ্য মুখে দিত – তাই আমাদের মুখ ছুঁচোলো হয়ে এগিয়ে থাকার দরকার কমে যায়।
সে কথা অবশ্যই সত্যি, কিন্তু স্টিফেন জে গুল্ড বা জে. বি. এস. হল্ডেনের মত জীববিজ্ঞানীরা এত নানারকম মিল দেখে যে সামগ্রিক তত্ত্বটা প্রতিষ্ঠা করেন তা হল এই যে,
মানুষ আসলে একরকম আধা-শিশু বা অপূর্ণবয়স্ক এপ।
এই যে বড়বয়সেও বাচ্চাদের মত দেখতে লাগা, এটাকে বলে পেডোমর্ফিজম। (পেডো = শিশু, যেমন পেডোফিলিয়া। এবং এই প্রসঙ্গটা এখানে উল্লেখ করা অহেতুক নয়, আমরা পরে দেখব।)
আর তার এই যে ব্যাখ্যাটা, যে আমরা বড়বয়সেও শিশুকালের শারীরিক গঠনকেই বয়ে নিয়ে চলেছি, এটাকে বলে নিওটেনি। (নিও = নতুন, টেনি = টেন্ডেন্সি = প্রবৃত্তি, ধারা।)
এই লেখাটা তাহলে মূলত মানবদেহের নিওটেনি নিয়ে আলোচনাই বলা যায়।
******************************************************************
তা বলে আপনি নিশ্চয়ই এমন ভাববেন না যে, বড় মানুষ = ছোট শিম্পাঞ্জি। বা মানুষের প্রত্যেকটা লক্ষণই একটা বানর-শিশুর মত। তবে বিবর্তনের ধারায় বেশ কিছু দিক এই নিওটেনি’র ইঙ্গিত করে, আর সেগুলো আমরা এখন একটু বিস্তারিত দেখব।
বিবর্তনের ধারায় মানুষের সবচেয়ে বড় অর্জন কি? তার বুদ্ধি, তার মস্তিষ্কের ক্ষমতা। একটা ডলফিন বা শিম্পাঞ্জির মত শিকারপটু সামাজিক বুদ্ধিমান প্রাণী হয়ে থাকলেই যার চলত, আগুন আর কাঠপাথর দিয়ে তৈরি উন্নত অস্ত্রেই সে পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী বাসিন্দা হয়ে উঠেছিল। তাহলে তার এত ক্ষমতাবান একটা মস্তিষ্ক গজাল কেন যেটা তাকে চাঁদে পাঠিয়ে ছাড়ল?
যদি বাকি স্তন্যপায়ীদের তুলনায় মানবমস্তিষ্কের আয়তন মাপা হয়, শরীরের অনুপাতে, সেটা তার সবচেয়ে কাছের ভাই শিম্পাঞ্জির তিনগুণ, আর ডলফিনের দ্বিগুণ। এই ধরেন, গ্রেট এপ সবারই ঘিলুর ওজন ৩০০-৫০০ গ্রামের আশপাশে, এমনকি আমাদের চেয়ে কয়েকগুণ ভারি গোরিলারও ঠেলেঠুলে ৭০০। কিন্তু আমাদের ঘিলুর পরিমাণ ১০০০-১৮০০ গ্রাম!
এটা মোটামুটি নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে বুদ্ধিবৃদ্ধিই মানবজাতির ধারাকে অন্যান্য এপ’দের থেকে আলাদা করতে শুরু করে। কিন্তু এটা মায়েদের জন্য একটা বিরাট সমস্যার সৃষ্টি করে। দ্বিগুণ পরিমাণ মস্তিষ্ক ধারণকারী একটা শিশুকে প্রসব করার জন্য নারীদেহের শ্রোণীচক্র (পেলভিস) তো অত সহজে দ্বিগুণ হয়ে যেতে পারে না। বার্থ ক্যানাল, অর্থাৎ যেখান দিয়ে শিশুর মাথাটা বেরিয়ে আসে, সেটা একটা বড় প্রতিবন্ধক – সেটা যথেষ্ট চওড়া না হলে শিশু জন্মের সমস্যা হবে এবং প্রসূতি ও শিশু দুজনেই মারাও যেতে পারে। অনেকে যায়ও।
দেখা যায়, পুরুষের তুলনায় নারীদের পেলভিসের কোটর বেশ খানিকটাই চওড়া (২০%), এবং তা স্ত্রী-শিম্পাঞ্জি’দের তুলনাতেও মোটামুটি অনেকটাই চওড়া (২০%), তবুও তো অতটা বর্ধিত মস্তিষ্ককে জায়গা দিতে পারার মত নয়।
তার ফলে যেটা দাঁড়ায়, মানবশিশুকে তুলনায় অনেকগুণ অপূর্ণ অবস্থায় বেরিয়ে আসতে হয়। একটা সদ্যজাত শিম্পু-শিশু যতটা চটপটে, ছটফটে, সজাগ, নিজে নড়তেচড়তে পারে, সেই অবস্থায় পোঁছতে মানবশিশুকে আরো এক বছর লাগে প্রায়। তাই অনেকে প্রস্তাব করেছেন, মানুষের গর্ভধারণ-সময় আসলে হওয়া উচিত ছিল ৯ মাসের বদলে ২১ মাস!
এবং ওই একই হারে, শিশু থেকে কিশোর হয়ে পূর্ণবয়স্ক হতে মানুষের যতটা সময় লাগে, সেটাও তাদের ভাইবেরাদরদের তুলনায় বেশ কয়েকগুণ। মানে তাদের নাবালকত্ব অনেকটা দীর্ঘস্থায়ী। এবং আমরা যা দেখেছি, যেটাকে আমরা সাবালক বলে মনে করি সেটাও আসলে ওদের তুলনায় আধা-বালক – একজন বড় মানুষের শরীরের সাথে ঘিলুর যা অনুপাত, সেটা একটা অল্পবয়সী শিম্পাঞ্জির মত।
তো এইটুক বোঝা গেল, যে এপ-শিশুর মত শরীরের তুলনায় বড় মাথা থাকায় আমাদের সুবিধা হয়েছে, আমরা আজ ‘মানুষের মত মানুষ’ হতে পেরেছি।
তা প্রশ্ন আসে, এমনটা হল কেন?
******************************************************************
শুরুতে যেমন বলছিলাম, যে আদিম মানুষদের জীবনযাত্রা-পরিবেশে নানারকম বদল হতে শুরু করে। আমরা নিয়মিত দুপায়ে ভর দিয়ে দাঁড়াতে শুরু করি। শিম্পাঞ্জি-গোরিলারা সেটা টুকটাক মাঝেসাঝে করে, ঘাসবনের মধ্যে দিয়ে অনেক দূর অবধি দেখার সুবিধা পাওয়া যায়, আবার হাতদুটোকে অন্য কাজে ব্যবহার করতেও সুবিধা হয়। ওহ, বলিনি বুঝি? ওদের মত জঙ্গলে বাস করার বদলে, মনে করা হয় যে মানুষের পূর্বপুরুষ একসময় মধ্য-আফ্রিকার ঘাসবনে নেমে এসেছিল, যখন আফ্রিকা রুক্ষতর হতে শুরু করে, জঙ্গল কমতে থাকে।
তার সঙ্গেই খাদ্যাভাসেও পরিবর্তন হতে থাকে – ঘাসের দানা, ফলপাকুড়, ছোটখাট জন্তু। ছুলে নেওয়া লাঠি অস্ত্র হিসাবে শিম্পাঞ্জিও ব্যবহার করতে পারে, বানরে পাথর ব্যবহার করে বাদাম ভাঙতে; আমরা লাঠিসোঁটা-পাথর ইত্যাদির ব্যবহারে খানিকদূর এগিয়ে যাই, আকস্মিক পেয়ে যাওয়া আগুনের ব্যবহার আরো খানিকটা সুবিধা দেয়। যেমন ধরেন, ঝলসানো মাংস হজম করা কাঁচা মাংসের চেয়ে অনেকগুণ সুবিধাজনক। একই পরিমাণ খাবার থেকে বেশি পুষ্টিগুণ পাওয়ার অর্থ, খাবার জোগাড়ের কষ্ট কম করতে হবে।
এর সঙ্গে যোগ করুন আমাদের গোষ্ঠীবদ্ধ জীবনযাপন, যেখানে দল বেঁধে শিকারের সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে, সংগ্রহ করা খাবার ভাগ হচ্ছে, শিশু, নতুন মা বা অসুস্থদের সাহায্য করার লোক থাকছে।
একটা ধারা দেখা যাচ্ছে, কীভাবে আমাদের জীবনযাপন সহজতর হয়ে উঠছিল। হিংস্র বন্য প্রবৃত্তিগুলোর দরকার কমে যাচ্ছিল। এবং তার উল্টোটা কী? ‘সরল শিশুর মত’ ব্যবহার!
বস্তুত, যদি খাদ্যসমস্যা এবং তার জন্য জীবনসংগ্রাম কমে যায়, তাহলে হামেশাই দেখা যায় যে নিরীহ গুণগুলো ফুটে উঠেছে, শরীরে এবং স্বভাবে – ঠিক যেমনভাবে মানুষ উচ্ছিষ্ট মাংসের লোভে আস্তানার আশপাশে ঘুরঘুর করতে আসা বুনো নেকড়েকে পোষ মানিয়ে আজকের বাধ্য কুকুর প্রজাতি তৈরি করেছে।
কাঁচা মাংস কামড়াতে, বা পরষ্পরকে আঘাত করতে কি ভয় দেখাতে শ্বদন্তের প্রয়োজন আর রইল না, তাই মানুষের ক্যানাইন টিথ ছোট হতে লাগল। তেমনই, বেশি ছিবড়েযুক্ত খাবার – কাঁচা মাংস কিংবা অল্প পুষ্টির ঘাসপাতা অনেকক্ষণ ধরে চিবানোর দরকার কমল, তাই অমন শক্তপোক্ত বড় চোয়ালও ছোট হয়ে এল। ওই এপ-বাচ্চাদের যেমন থাকে তেমনটা; প্রাপ্তবয়স্ক এপ’দের যেমন হয় তেমনটার প্রয়োজন ফুরোলো।
এই দেখুন না, মানুষের সাথে শিম্পাঞ্জির ডিএনএ’র তো প্রায় ৯৫%ই মিল, অধিকাংশ জিনই এক। কিন্তু যে জিনগুলোর কাজ ওদের অল্পবয়সেই বন্ধ হয়ে যায়, আমাদের সেই জিনগুলোই অনেক বেশি বয়স অবধি চালু থাকে। ঠিক আমাদের দুধের দাঁত যেমন অনেক দেরিতে পড়ে, ওইরকম ব্যাপার। এইটা, যাকে বলে হেটেরোক্রোনি (পরিবর্ধনের সময় বিভিন্ন শারীরিক ঘটনার সময়ে পরিবর্তন আসা), নিওটেনির একটা বড় চালক।
******************************************************************
শারীরিক নিওটেনি নিয়ে তো অনেকক্ষণ কথা হল, এবার মানসিক নিওটেনি নিয়েও একটু দেখা যাক।
শিশুমনের সবচেয়ে বড় দুটো বৈশিষ্ট্য কী? শিক্ষাগ্রহণের ক্ষমতা, আর কল্পনাশক্তি।
অল্পবয়সে, যখন আমাদের মস্তিষ্ক পরিণত হচ্ছে, তার ভেতরে স্নায়ুসংযোগগুলো তৈরি হচ্ছে, তখনই আমাদের শেখার বা মনে রাখার ক্ষমতা সবচেয়ে বেশি থাকে, বিজ্ঞানীরা বলেন, সেটা বেশি নমনীয় (প্লাস্টিক) থাকে। এই সময় আমরা নিজেদের ইন্দ্রিয় দিয়ে শিখি, বাবা-মা-পরিবার-শিক্ষক-পরিবেশ থেকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ শিক্ষা পাই, তাও না হলে নিজেদের কল্পনামত ব্যাখ্যা দিয়েও জ্ঞানের অভাব ভরাট করার চেষ্টা করি। সব প্রজাতির শিশুরাই তাই করে। মোটামুটি বড় হয়ে গেলে তাদের এই শেখার ক্ষমতা বা আগ্রহটা চলে যায়, এবং এটা অন্য সব প্রজাতিতে হয় মোটামুটি দ্রুতই। মানুষ এখানেও অনন্য – শিশুর মতই তাদের শেখার ইচ্ছা বা ক্ষমতা থাকে বহু বছর। এবং যত গুড় তত মিষ্টি – ঠাকুমার গল্প শুনেই হোক বা ইন্টারনেট পড়ে, একটা মানবগোষ্ঠীর মধ্যে জ্ঞান আদানপ্রদান যত বেশি হবে, সামগ্রিক জ্ঞানের পরিমাণ ততই বাড়বে, সেই গোষ্ঠী ততটাই অগ্রসর হবে।
শিশুদের কল্পনাশক্তি বেশি, এইটাও সবাই জানেন। একটা তেকোনা গাছের ডাল পেলেই সেটাকে বন্দুক বানিয়ে সোফা-পাহাড়ের পেছন থেকে ছোটবেলায় কত গোলাগুলি করেছি, বিছানার চাদরটাকে সুপারম্যানের কেপ হিসাবে জড়িয়ে নিয়ে কোলবালিশটাকে সুপারভিলেন মনে করে সারাদুপুর অগুন্তি ঢিশুম-ঢিশুম করতে কোনো সমস্যাই হয় নি। এবং প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের কল্পনাশক্তিও যে শিশুর মতনই বহুলপ্রসারিত হতে পারে, তা দৈনিকবি-দের দেখলেই মালুম হয়। যাহোক, বিজ্ঞানীরা বলেন, এই বর্ধিত কল্পনাশক্তি + জ্ঞান ভাগ করে নেওয়ার ইচ্ছা, এই থেকেই প্রাচীনতম আর্ট-এর উদ্ভব।
একটু ভেবে দেখুন। গোষ্ঠীর বড়রা, অভিজ্ঞ শিকারিরা, নতুনদের শেখাতে চায়, বাইসনের গায়ে কোনখানে বর্শা ছুঁড়ে মারতে হবে। ঘর মানে গুহার মধ্যেই, গুহার দেওয়ালকেই স্লেট বানিয়ে প্রাথমিক শিক্ষাটুকু দিতে পারলে কত সুবিধা! আর কাঠিকে বন্দুক মনে করতেও যেমন আমাদের সমস্যা হয় না, দেওয়ালের আঁকিবুঁকিকে বাইসন বলে ধরে নিতেও তেমনি তাদের অসুবিধা হত না। এবং এই ধরনের অ্যাবস্ট্র্যাক্ট চিন্তা করার ক্ষমতা – যে কতগুলো রেখাকে দেখে একটা বাইসন বলে ধরে নেওয়ার ক্ষমতা – এইটাও বর্ধিত ব্রেনের সঙ্গে বাড়তে শুরু করেছে।
আর ইসে, শেখার ক্ষমতা বাড়ার সাথেই বেড়েছে নানারকম শব্দ আলাদা করে চেনার এবং বোঝার ক্ষমতা, এবং তা থেকে এসেছে ভাষা। কথার মাধ্যমে ভাব আদানপ্রদান ডলফিন ইত্যাদি অনেক বুদ্ধিমান প্রাণীই পারে, তবে ভাষার মাধ্যমে অ্যাবস্ট্র্যাক্ট চিন্তা প্রকাশে অবশ্যই মানুষের তুলনা নেই। হাসিঠাট্টা-হিউমারও ওসব প্রাণীতে দেখা যায়, তবে উন্নততর হিউমারের উৎপত্তিও বোধহয় আদিম মানুষের গোষ্ঠীজীবনের সময় থেকেই।
এইখানে ‘ডিম আগে না মুরগি আগে’ একটা সমস্যা দেখা যেত – বুদ্ধি এবং ফলত মস্তিষ্ক বাড়ার ঠেলায় মাথার আকার বেড়েছে, নাকি মাথার আকার বৃদ্ধির ফলে মস্তিষ্ক বাড়ার সুযোগ পেয়েছে, এই দ্বিধা নিয়ে বিজ্ঞানীরা দ্বন্দ্ব করতেন বহুদিন। এখন বলা যাচ্ছে, সবটাই নিওটেনি’র ফল, এবং সামগ্রিকভাবে এই সবকিছুতে এই ট্রেন্ড দেখা গেছে।
এখানেও অবশ্য সে প্রশ্ন একরকম করা যায় – বুদ্ধি বাড়ছিল বলেই কি আমাদের নিওটেনি বাড়ছিল, নাকি নিওটেনি বাড়াতেই বুদ্ধি বাড়ছিল? মানে কোনটা কারণ আর কোনটা ফল?
এটার সংক্ষিপ্ত উত্তর – অবাধ প্রাকৃতিক নির্বাচন, বা রানঅ্যাওয়ে সিলেকশন। (যখন সিলেকশনের ফলে কোনো গুণ পরিবর্তিত হতে থাকে কোনো বাধা বা রেস্ট্রিকশন ছাড়াই, তখন সেটা অবাধভাবে ক্রমেই বাড়তে থাকে এবং গাঢ়তর হতে থাকে। এটাই রানঅ্যাওয়ে সিলেকশন।)
অনুকূল পরিবেশের সৃষ্টি হওয়ায় নিওটেনির দিকে যেই একবার ঝোঁক শুরু হল, দেখা গেল সেটার ততই সুবিধা আছে (বর্ধিত বুদ্ধি ইত্যাদি), এবং ততই সেটা বাড়তে থাকল। এইভাবে মানুষের মধ্যে রানঅ্যাওয়ে সিলেকশনের দ্বারা নিওটেনি জায়গা করে নিল।
আর মানুষের বিবর্তনের পিছনে তার ভূমিকা দেখে ওই প্রবচনটার কথাই মনে পড়ে – “বড় যদি হতে চাও, ছোট হও আগে”!
এইবার আমরা বেশ কিছু পলিটিকালি ইনকারেক্ট কথাবার্তায় ঢুকে পড়ব, সাধু সাবধান! এই যে লোকেরা বলে, মেয়েরা ন্যাকা, খামখেয়ালি, হ্যান ত্যান... সেগুলো নিয়ে কিছু নাড়াঘাঁটা করব। কাটাছেঁড়া করব লুল্পুরুষ আর শিশুকামীদেরও।
(ডিসক্লেমার: যদি বলি যে কবিরা ন্যাকা পাঠিকা পছন্দ করে, তার মানে যেমন এই নয় যে প্রত্যেক কবিই তাই চায়, তেমনই এখানের বলা কথাগুলো যে প্রত্যেকের ক্ষেত্রে সত্যি তা নয়, তবে সাধারণভাবে অনেকের মধ্যে দেখা যায়, বা বিবর্তনকে ঠেলা দেওয়ার মত যথেষ্ট প্রকট।
এবং এই আলোচনায় আমরা নানা দুষ্প্রবৃত্তির ব্যাখ্যা পাওয়ার চেষ্টা করব – সেটা হবে এক্সপ্ল্যানেশন, জাস্টিফিকেশন নয় – অতএব সেই আনন্দে লুল্পুরুষদের বগল বাজানোর কিছু নেই।)
ন্যাচারাল সিলেকশন কী, তা প্রায় সবাই জানেন। কিন্তু তার একটা মস্তবড় শাখা, সেক্সুয়াল সিলেকশন সম্বন্ধে পরিচিতি তুলনায় কম। অনেকে আবার কনফিউজড হয়ে গিয়ে সেক্সুয়াল সিলেকশনকে ন্যাচারাল সিলেকশনের বিপরীত ধারা বলেও মনে করে বসেন। তাই ওটা আগে বুঝে নিই।
রঙচঙে ময়ূর দেখতে সবারই ভালো লাগে। অথচ এই রঙঢং, পেখমের সাজ কেবল ছেলে-ময়ূরগুলোর, ময়ূরী নেহাতই ম্যাড়ম্যাড়ে। কেন? এই প্রশ্নটারই উত্তর হচ্ছে সেক্সুয়াল সিলেকশন, এবং আবারো সেই বদ ছোঁড়া ডারউইনের ভাবনাতেই এসেছিল এটা।
ডিম পাড়া, ছানাপোনা বড় করা এসব খাটনি তো করতে হয় ময়ূরীকেই। বলা চলে, সে সঙ্গম করতে দিয়ে মস্ত বড় একটা সুযোগ দিচ্ছে ময়ূরকে, বংশবিস্তার করার। তা সে দেওয়ার আগে একটু বাজিয়ে দেখে নিতে হবে না? সবচেয়ে সুস্থসবল, হ্যাঞ্ছাম ময়ূরকেই কিনা সে তার কাছে ঘেঁষতে দেবে, আর তাতে তার ছানারা সুস্থসবল হওয়ার সম্ভাবনা (ফলস্বরূপ তার জিনগুলো বেঁচে থাকার সম্ভাবনা) বাড়বে।
আর তাই বসন্তকাল এলে সেই সুযোগটুকু পাওয়ার জন্য ময়ূরের এত লম্ফঝম্প, দারুণ রংবাহারী (ইরিডিসেন্ট) পালক সাজিয়ে, চিৎকার-চেঁচামেচি করে তরুণী ময়ূরীদের মন জয় করার এত চেষ্টাচরিত্র। রঙের জেল্লা তার সুস্বাস্থ্য, শারীরিক তাকত, যৌবনের পরিচায়ক কিনা।
এখন কথা এই, এই হ্যাপা না থাকলে ময়ূরের বয়ে গেছিল এত সাজগোজ করতে! এতো পালকের সাজসজ্জা তৈরিতে শরীরের অনেকটা পরিশ্রম হয় (রিসোর্স খরচ হয়), ফলে আয়ু কমে, এবং নজরকাড়া যত বেশি হবে তত ঈগল থেকে চিতা সব হানাদারদের চোখে পড়ে প্রাণপাখি ফুড়ুৎ হওয়ার সম্ভাবনাও বাড়ে। অতএব, ময়ুরী যে লক্ষণগুলো সেক্সুয়াল সিলেকশনের মাধ্যমে পছন্দ করে, সেগুলো আসলে ময়ূরের সারভাইভাল প্রবাবিলিটি কমিয়ে দেয়। এইখানেই ওই আপাত-দ্বন্দ্ব।
তবে একজন ময়ূরের বাঁচা/মরা দিয়ে কিই বা যায়-আসে – তার জিনগুলো ওই প্রকট রঙচঙে জিনের ঘাড়ে চড়ে পরের প্রজন্মে পৌঁছে যেতে পারছে, এটাই হল সার কথা। বিবর্তন তো দিনশেষে ‘সিলেক্ট’ করে জিনকেই, একখানা প্রাণীকে নয়।
তা সেক্সুয়াল সিলেকশনের ফলেও ওই ‘রানঅ্যাওয়ে সিলেকশন’ দেখা যায় – বড় পেখম আর রঙিন পালকের প্রকোপ বাড়তে বাড়তে ক্রমশ সারা পপুলেশনেই তা ছড়িয়ে পড়ে, এবং রঙের মাত্রাও ক্রমেই কেবল বাড়তে থাকে। হয়তবা শারীরিক সক্ষমতার একটা সীমায় গিয়ে থামে সেটা।
******************************************************************
চারিদিকে খেয়াল করে দেখুন, এইরকম সেক্সুয়াল সিলেকশনের প্রভাব অনেক প্রাণীতেই দেখতে পাবেন, এবং উল্লেখ্য, তা দেখবেন পুরুষদের মাঝেই। যেমন সিংহ আর সিংহী, মোরগ আর মুরগি। বা ধরেন গোরিলা থেকে জিরাফ, সবর্ত্রই পুরুষরা হয় আকারে অনেক বড়সড়, শক্তিশালী, আর স্ত্রীরা ছোটখাট, নিরীহ, সন্তান উৎপাদন আর প্রতিপালনই কাজ তাদের।
আর এইটা বিশেষভাবে প্রকট বহুগামিতা বা পলিগ্যামির ক্ষেত্রে। যেখানে পালের গোদা সুযোগ পাচ্ছে বহু নারীর সঙ্গে মিলিত হওয়ার, বা গোরিলার মত অনেক ক্ষেত্রে হারেম রাখার, সেখানেই ‘আলফা মেল’ বা প্রধান পুরুষ হওয়ার দরকার বেশি, এবং পৌরুষ ফুটিয়ে তোলার জন্য পুং-হরমোনগুলো বেশি সক্রিয়, আর সব মিলিয়ে সেক্সুয়াল সিলেকশনের চাপে পুরুষেরা স্ত্রীদের থেকে অনেকটাই আলাদা হয়ে পড়ে। একে বলা চলে দ্বিরূপতা বা ডাইমর্ফিজম।
যেসব প্রাণীতে একগামিতা বা মোনোগ্যামি দেখা যায়, তাদের ক্ষেত্রে দেখা যায় স্বামী-স্ত্রী ভাবসাব করে দুজনেই সন্তান পালনে হাত লাগাচ্ছে, এবং সেসব ক্ষেত্রে টাটানো পৌরুষও দেখা যায় কম – তাদের ক্ষেত্রে স্ত্রী-পুরুষের চেহারা বা স্বভাবের দ্বিরূপতা অনেকটাই কম।
বস্তুত, পলিগ্যামিকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়, গোরিলার মত হারেম প্রথা, যেখানে একজন আলফা মেল’এর দখলে থাকে অনেকগুলি নারী, এবং তাদের উপর পুরুষটির একচ্ছত্র অধিকার। অন্যদিকে, আমাদের অন্য ভাই শিম্পাঞ্জির মধ্যে দেখা যায় যথেচ্ছগামিতা বা প্রমিসকুইটি, মানে তাদের গোষ্ঠীবদ্ধ সমাজে যে যার সঙ্গে পারে মিলিত হয়, হয়ত বেশি শক্তিশালী পুরুষ একটু সুবিধা পায় কিন্তু একচ্ছত্র অধিকার কারো নেই, আর নারী-পুরুষের একনিষ্ঠ জুটিও সেভাবে নেই। এখানেও, বোঝাই যাচ্ছে, দ্বিরূপতা খানিকটা কম থাকবে।
তা মানুষের আদি পূর্বপুরুষের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা কেমন ছিল?
প্রথমত, তাদের গোষ্ঠীবদ্ধ সমাজব্যবস্থা ছিল শিম্পাঞ্জিদের মতনই, আর তাই দ্বিরূপতাও মোটামুটি কমই ছিল। কিন্তু বড় সমস্যা হল ওইটা, যা আগে দেখলাম – মানুষের শিশু জন্মায় বাকিদের তুলনায় অনেক অপরিণত অবস্থায়, তার লালনপালন ইত্যাদিতে শ্রম এবং যত্ন অনেক বেশি লাগে, এবং তার রোগবালাই ইত্যাদিতে মরার সম্ভাবনাও অনেক বেশি থাকে।
এর ফলে, বানর-মা যেমন শিশুকে কোলেকাঁখে নিয়েই গাছে গাছে ঘুরে ফলপাকুড় খেতে পারে, মানবশিশুর দায় ঘাড়ে পড়লে তেমনটি আর করা চলে না। ফলে খাদ্য থেকে সুরক্ষা, অনেককিছুর জন্যই শিশুর মা তার বাপের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে অনেকখানি।
তার ফলটা কী দাঁড়ালো? যথেচ্ছাচার করে আর নারীদের তেমন লাভ নেই, বরং তাদের খোঁজা দরকার একটা শান্তশিষ্ট, বিশ্বাসী, দায়িত্বশীল পুরুষ (আমার মত, হেঁহেঁ, ঘটকগণ টেক হীড) যে শুধু সঙ্গম করেই কেটে পড়বে না, অন্তত বছরকয়েক তার সঙ্গে থাকবে, তার এবং শিশুর যত্ন নেবে। ফলে পলিগ্যামির বদলে তাদের মোনোগ্যামির দিকে ঝুঁকে পড়তে হল।
******************************************************************
এইটার প্রভাব হল বেশ বড়সড়। পুরুষদের সাজগোজ পরে নাচাকোঁদা করে মহিলাদের মন জয়ের চাপটা যেমন কমছিল, তেমনই মহিলাদের পক্ষে পুরুষদের ধরার এবং ধরে রাখার দায়টা বাড়ছিল। অতএব তাদের মধ্যে পরোক্ষ প্রতিযোগিতাও বাড়ছিল। এরকম ঘটতেই পারত যে, সমাজে দায়িত্বশীল বলে সুপরিচিত একজন পুরুষকে দেখে এক উর্বর মহিলা ডাক দিল, কিন্তু তাকে দেখতেশুনতে ভালো নয় দেখে সেই পুরুষ “সময় যেদিন আসিবে আপনি যাইব তোমার কুঞ্জে” বলে এড়িয়ে গেল; ঠিক যেমন পাত্রী দেখতে গিয়ে পছন্দ না হলে ‘পরে জানাব’ বলে চলে আসে পাত্রপক্ষ।
একটা নতুনরকম জিনিস দাঁড়াল – যারা সন্তান ধারণ ও পালনের সবরকম হ্যাপা পোয়াচ্ছে, সেই মহিলাদের উপরেই সেক্সুয়াল সিলেকশন! এবং সেটাও আবার রানঅ্যাওয়ে সেক্সুয়াল সিলেকশন।
(বলছি না যে পুরুষদের উপর থেকে সেক্সুয়াল সিলেকশন ভ্যানিশ করে গেল, তবে তার চাপ এবং রকম অনেকটাই বদলে গেল, পরের পর্বে দেখব।)
তা পুরুষেরা হবু সঙ্গীর মধ্যে চাইত কী? বুনোদির থেকে ধার করা এই বিজ্ঞাপনের লুল্পুরুষটি আজ যা চায়, রাজাবাদশারা যা চাইতেন, লক্ষ-লক্ষ বছর আগের পুরুষেরাও তাই চাইত – কচি নধর মেয়ে!
কচি মেয়ের অনেক সুবিধা – তাদের শারীরিক সক্ষমতা বেশি, মানে তারা বুড়ি বা অসুস্থদের চেয়ে গর্ভধারণে বেশি সক্ষম, বেঁচেও থাকবে বেশিদিন, মানে সন্তান পালনেও বেশি সক্ষম, এবং অন্য কোনো পুরুষ ইতিমধ্যে তাদের গর্ভিণী করে গেছে এই সম্ভাবনাও কম হবে।
আশা করি এবারে আর ব্যাখ্যা করে বলতে হবে না, কীভাবে নারীদের মধ্যে নিওটেনি অবাধ নির্বাচনের দ্বারা গেড়ে বসে গেল?
******************************************************************
এখন নিওটেনির একটা মুশকিল আছে। একজন ঈমানদাঁড় পুরুষ কী করে বুঝবে, তার সামনে একটি কচি কিন্তু যৌনসক্ষম মেয়ে, নাকি একটি বাচ্চা মেয়ে? বাচ্চা মেয়ে ধরে ইয়ে করতে গেলে তো যাচ্ছেতাই কাণ্ড হয়ে মেয়েটির মারা যাওয়ারও সম্ভাবনা, আর যে বিবর্তনের মূল লক্ষ্য সন্তান উৎপাদন ও তার সারভাইভাল, সেই সন্তানরাই এমনভাবে সমস্যায় পড়বে, এই কষ্ট কি বিবর্তন সইতে পারে?
তাই উদ্ভব হল একসেট অতিরিক্ত যৌনলক্ষণ (সেকেন্ডারি সেক্সুয়াল ক্যারেক্টারিস্টিক্স)-এর, যেগুলো কিশোরী থেকে তরুণীর পার্থক্য বুঝিয়ে দেয়। (উল্লেখ্য, এগুলো প্রকট হয় বয়ঃপ্রাপ্তি বা পিউবার্টির ১-২ বছর পরে, কারণ বয়ঃপ্রাপ্তির সঙ্গে সঙ্গেই গর্ভধারণ করা অপরিণতবয়স্কা মা এবং শিশুর স্বাস্থ্যের পক্ষে সমস্যাজনক হয়ে দাঁড়ায়।) এবং তার মধ্যে প্রধান একখানা – সেয়ানা পাঠক নিশ্চয়ই ইতিমধ্যে বুঝে গেছেন – স্তন।
নারীদেহের স্তন প্রয়োজনীয় দুগ্ধগ্রন্থি ছাড়াও মেদকলায় ঠাসা, যেগুলোর সরাসরি কোনো প্রয়োজন নেই। অন্য কোনো প্রজাতিতে স্তনকে যৌনতার অংশ ধরে এমন মাতামাতি করাও হয় না। এই তো শুনলুম, আমেরিকায় ব্রেস্ট ইমপ্ল্যান্ট ইত্যাদি মিলিয়ে ফি-বছর যত খরচা হয়, তাই দিয়ে একটা ছোটখাট দেশের রাষ্ট্রীয় বাজেট হয়ে যায়! স্তনকে বলা চলে একরকম সিগনাল, যেটা কিশোরীবেলা পেরোনো সক্ষম তরুণী তার আশপাশের সক্ষম পুরুষদের প্রতি ভাসিয়ে দিচ্ছে।
আরেকটা লক্ষণ হচ্ছে, আলিসাহেব যেটার ইংরিজি অনুবাদ হয় না বলেছিলেন – নিতম্বিনী। শিশুর বড়ো মাথা বেরোনোর জন্য নারীদের পেলভিস বড় হয় তা আমরা ইতিমধ্যেই দেখেছি, কিন্তু পশ্চাতাঞ্চলে মেদের সমাহার হয়ে নিতম্ব আরো অনেকটা বৃদ্ধি পায়। বুক-কোমর-পেছন মিলিয়ে তাই ওই জলঘড়ি বা আওয়ারগ্লাস ফিগারের ইঙ্গিত আসে।
এই আফ্রিকান উপজাতিটিকেই দেখুন না (আন্দামান-নিকোবরেও এদের শাখা পাওয়া যায়) – খোইখোই নামের এই উপজাতিটির মহিলাদের চেনার বিশেষ বৈশিষ্টই হল তাদের পিঠের তুলনায় প্রায় সমকোণে বেরিয়ে আসা পুরু নিতম্ব। কে বলতে পারে, হয়ত আমাদের পুর্বপুরুষও ট্যাঙ্গান্যিকা হ্রদের ধারে কোনো বসতিতে বসে এমনই কোনো তরুণীর উদ্দেশ্যে তৎকালীন হুপহাপ ভাষায় কাব্যরচনা করত, “গুরুয়ানিতম্বিনী গমনবিলম্বা...”
সংক্ষেপে বলা যায়, এই নানা যৌনলক্ষণগুলো সক্ষম পুরুষদের লুলবৃত্তিকে উত্তেজিত করার জন্য একরকম ইঙ্গিত; তা নইলে যে বংশবৃদ্ধির সমস্যা!
(আবার তাই রজোনিবৃত্তি হয়ে গেলে, প্রজননের বেলা বয়ে গেলে, নারীদেহে নানারকম পরিবর্তন হয়ে তারুণ্যের অপ্রয়োজনীয় লক্ষণগুলো ক্রমে ঝেড়ে ফেলা হয়।)
তাহলে যা দাঁড়াল – মোনোগ্যামি বৃদ্ধি এবং পুরুষদের উপর সেক্সুয়াল সিলেকশনের প্রভাবহ্রাস, এই দুটো মিলিয়ে মানুষের মধ্যে দ্বিরূপতা অনেকটাই কমে আসে। তবুও, নারীদের উপর সেক্সুয়াল সিলেকশনের ঠেলায় (যার মধ্যে শিশুরূপতা ও যৌনলক্ষণ দুটোই আছে) স্ত্রী-পুরুষের মধ্যে খানিকটা ডাইমর্ফিজম দেখা যায়, শারীরিক এবং মানসিক। নারীদেহে পুরুষের তুলনায় মোলায়েম ত্বক, লোমের কমতি, উচ্চতা কিছু কম, কন্ঠস্বর নরম, বড় অশ্রুগ্রন্থি, কম আগ্রাসী মনোভাব, অপরকে বিশ্বাস/নির্ভর করার প্রবণতা, এইগুলো আসে নিওটেনির প্রভাবে, আর নির্দিষ্ট কিছু স্থানে মেদের বৃদ্ধি ইত্যাদি নানা প্রভাব আসে সময়কালে স্ত্রী-হরমোন থেকে, তবে দুটোর প্রভাব বর্তমানে ওতপ্রোতভাবে মিশে গেছে বলা যায়। তা অনেকে প্রস্তাব করেছেন, মানবজাতির বিবর্তনের মূল চালক যদি নিওটেনি-ই হয়, তাহলে তুলনায় আরো বেশি নিওটেনি-সমৃদ্ধ নারীদের বলা উচিত ‘মোর ইভল্ভড’!
******************************************************************
পুনশ্চ: তাহলে দেখতেই পাচ্ছেন, বিবর্তনের এই হাজার হাজার বছরে পুরুষদের মধ্যে অল্পবয়সের লক্ষণগুলোর প্রতি একটা গোপন আকর্ষণ প্রতিপালিত হয়েই চলেছে। এবং এর প্রভাব যাতে সরাসরি শিশুদের উপরে না পড়ে, তার জন্য যৌনলক্ষণের উদ্ভব থেকে সমাজে শিশুকামের প্রতি ঘৃণার শিক্ষা, সবই হয়েছে। কিন্তু তবুও আদিম প্রবৃত্তি মাঝে মাঝে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে বইকি। নাম নেওয়ার প্রয়োজন দেখি না, কখন কার অনুভূতি আঘাতপ্রাপ্ত হয়, তবে বরিষ্ঠ শিশুকামীদের অনেকের খ্যাতির সঙ্গেই আমরা কমবেশি পরিচিত আজকের দিনে।
ফুটনোট:
জানা গেছে, বিশিষ্ট গবেষক শ্রী পছন্দনীয় উপমহাদেশের নিওটেনি বিষয়ক গবেষণার জন্য বিশেষভাবে সচলাদের কেস স্টাডি চালাচ্ছেন, এবং অচিরেই ‘খুকি কেন শিশু’ বলে একটি বই প্রকাশ করবেন। আগ্রহী সচলারা তাঁর সঙ্গে ছবিসহ যোগাযোগ করুন সত্বর। বইয়ের প্রথম চ্যাপ্টার থেকে তিনি একটি চুম্বক অংশ আমাদের পাঠিয়েছেন, যাতে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, তিথীডোরকে কেন খুকীডোর বলে ডাকা হয়ে থাকে। বিশদ বললে কপিরাইট সমস্যা হতে পারে, তবে এইটুকু বলা যেতে পারে, শিশুদের মত বড়ো বড়ো ডাগর ডাগর চোখ নাকি ওই বালিকার নিওটেনি’র হাইলাইট।
মন্তব্য
কামলা দিতে যাচ্ছি তাই, আপাতত ছেড়ে দিলাম।
যখনই ফিরি, কেটেকুটে আজ -ই তোমায় কালিয়া বানাব হে কৌ দ্য হনুমান !
আমার চোখ নিয়ে মশকরা!
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
আঁই কিচ্চি! গবেষণা করলেন তিনি আর দোষ হল আমার?
যাক গে, এইবেলা তারা দাগিয়ে গেলাম।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
ইয়ে তা বেশ... গবেষক ভাই সেটাকে পড়েছেন "পাঁচতারা দাগিয়ে গেলাম", আমি বললুম ১ও তো হতে পারে
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
দুর্দান্ত লেখা হয়েছে কৌস্তুভ। ছবিগুলো কি "দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ" বই থেকে নেয়া?
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
না না, ছবিগুলো নেট থেকেই পাওয়া। সরাসরি এমবেড করা তাই সোর্স উল্লেখ করার দরকার হয় নি। ওই বইটার গাপ্পির গল্পটা দেওয়া যেত রানঅ্যাওয়ে সেক্সুয়াল সিলেকশনের উদাহরণে, তবে ছোট রাখতে দিইনি আর।
বুঝলেন, বিজ্ঞাপনেই (জিনের) বিস্তার! আর বিজ্ঞাপনের কেতার বর্ণনা তো আপনি দিলেনই অভিজিৎ'দার সখী ভালোবাসা কারে কয় সিরিজটাও এই বিষয়ে খানিকটা আলোচনা করেছে!
লেখা দারুণ হচ্ছে বটে। তবে আমি লিখলে আরো ভালো হত! মানে বলতে চাইছি সবমিলিয়ে সোমর্থ ভবিষ্যৎ সৃষ্টির মাধ্যমে জিন টিকিয়ে রাখতে বালিকাদের সঙ্গী নির্বাচন করা উচিত আমাকেই
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
হ্যাঁ, পরের পর্ব (যদি আসে) তবে তাতেও ওই সম্পর্কিত আরো কিছু থাকবে। মেট সিলেকশন ইত্যাদি। এখন অভিজিৎদার মূল লক্ষ্য ভালোবাসা, আর ভাগ্যে সেসব নাই তাই কাঠখোট্টা নিওটেনি নিয়ে পড়ে থাকি।
ঠিক, আপনার জীবাণু সিরিজ অনেকদিন দেখিনা?
শিম্পাঞ্জিশিশুর ছবি দেখতে পাচ্ছি না
এইবার?
পোস্টে মোট দশটা ছবি আছে, সবকটাই দেখা যাচ্ছে কি?
শিম্পাঞ্জিশিশু দেখতে পাচ্ছি। মোট দশটা কী করে?
ধাড়ি দেখা যায় না
বাকি সবাই মনে হয় দেখছে ! আমার ব্রাউজারে সমস্যা হয়তো
কিছু কিছু জায়গা থেকে ব্লগস্পট অ্যাকসেস করা যায় না (আপনি কোন দেশে, ইন্টারনেট কোম্পানি কী?), ব্লগস্পট থেকে যে ছবিগুলো নিয়েছিলাম সেগুলো অন্যত্র আপলোড করলাম, মুর্শেদভাইও একটা লিঙ্ক ঠিক করে দিয়েছে। এবার দেখুন তো দশটাই দেখা যায় কিনা।
হুম এবার দেখা যায়।
এত্তো বড় জ্ঞানভারসমৃদ্ধ লেখা, তবু অনেক ভাল্লাগলো
যাক, শেষমেষ!
থ্যাঙ্কু
এইটুকু পড়তেই মনে পড়লো বনেদি মহল্লার দুধেমাখনে পোষা মানবপোষ্যদের কথা।
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
হেহেহে আবু নাসের খান দি লেজেন্টের কথা মনে পড়িয়ে দিলে
গত শনিবার এই মুভিটা দেখলাম। দেখে মনে হল এবার একটা শিম্পাঞ্জী বাচ্চা বাসায় আনলে খুব একটা সমস্যা হবে না, বরং সুবিধা হবে (কারন, আমার হোমমেট একজনের আল্যার্জির প্রব্লেম আছে, সারা গা চুল্কে লাল হয়ে যায় । কিন্তু সেই হোমমেটের রুমমেট রাজি হচ্ছে না )।
যাইহোক, লিখাটা পড়ে অনেক কঠিন প্যাচও একটানে খুলে গেল। আদিবাসী মাতৃপ্রধান সমাজে মায়েরা বাচ্চাদের এমন ভাবে বহন করে যাতে কাজ করতে খুব একটা সমস্যা না হয় এবং তারা আমাদের সমতলের ফিমেলদের চেয়ে অনেক বেশি স্ট্রং (এমনও শুনেছি জঙ্গলে কাজ করতে গিয়ে প্রসবের ঘটনা, যে সময় তাকে সাহায্য করার কেউ থাকত না - নিজেই ম্যানেজ করতে পারত তারা সেই সিচুয়েসন।)। তো এমন চলতে থাকলে বলতে পারেন প্রুশদের পেখম লাগানোর দিন আসল বলে ।
আচ্ছা আর একটা কথা বলেনতো, সব পুরুষের মাঝেই কি তাহলে এই "লুলপ্রবৃত্তি" থাকে? যদি তাই হয়, তাহলে সন্তান জন্মদান/হাঁটতে চলতে পারার পর তারা পলিগ্যামিতে জরায় না কেন(নাকি জরায়? আমিই জানি না )?
হ্যাঁ, মানবসমাজে অনেক রকমই আছে, ম্যাট্রিয়ার্কি, প্যাট্রিয়ার্কি, এমনকি হারেমও। সমাজ অনুসারে নারী-পুরুষদের চরিত্র সেখানে কিঞ্চিৎ ভিন্ন হয় এবং সিলেকশনও সামান্য অন্য পথে ধাওয়া করে।
ডিসক্লেমার দেখেননাই ভায়া? প্রত্যেকের মাঝে আছে কিনা এমন তো বলা হয়নি, বলা যায়ও না। আবার যাদের মধ্যে থাকে হয়ত সুপ্তভাবে থাকে। যাহোক, আপনার প্রশ্নটা মাতা-পিতা দুজনের প্রতিই ভ্যালিড, যে বাচ্চা একটু বড় হয়ে গেলে তারা অন্য পার্টনার খোঁজে না কেন? এবং আজকের সমাজেই দেখুন না, এরকম ডিভোর্স তো মাঝেসাঝেই হয়। মানবসমাজ ১০০% মোনোগ্যামাস নয় তো।
এগুলো আরেকটু ডিটেলে পরের পর্বে বলব হয়ত।
আর হ্যাঁ, আপনার নিক কই?
রাগলেন নাকি? আমি কিন্তু খোঁচা দেয়ার উদ্দেশ্যে কিছু বলি নাই - ডিসক্লেমার ভাল করেই দেখছি।
নিক তো ভয়েই খায়া ফেলসি ।
ডিটেলের আশায় থাকলাম
আহা রাগব কেন? আমি কি টেস্টোস্টেরন-প্রাবল্যে ভুগছি নাকি?
দুধর্র্ষ হইেস! চলুক!!
কাজী
ধন্যবাদ
নিওটেনি বাড়ছিল বলেই বুদ্ধি বাড়ছিল তাহলে? নাকি ভুল বললাম।
পোস্টে পাঁচ তারকা।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে
এইটাকে বলা যায় পজিটিভ ফীডব্যাক লুপ। কেউ একটু নিওটেনাস হলে বুদ্ধি যদি একটু বাড়ে, তাহলে সেইটার জীবনে সুবিধা দেখে নিওটেনির উপর সিলেকশন কাজ করে, ফলে নিওটেনি আরো বাড়ে, এবং বুদ্ধিও। এই চক্রাকারে চলতে থাকে। এভাবেই রানঅ্যাওয়ে সিলেকশন হয়।
পোস্টের বিষয়বস্তু অতি মনোহর। কিন্তু আলোচনাটা যে কোন একটা টপিকে বিস্তারিত হলে আরো ভাল লাগত। যেমন - কুকুর আর মানুষের সম্পর্ক নিয়ে একটা আস্ত পোস্ট হলে (পছন্দনীয় পড়বে - রোস্ট হলে) চমৎকার হত।
এপদের সোশ্যাল ডাইনামিক্স বেশ ইন্টারেস্টিং। জেন গুডালের বইগুলো পড়েছেন?
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
সে কথা ঠিক। ধরো যদি আমার আগে কেউ সেক্সুয়াল সিলেকশন নিয়ে বিস্তারিত লিখে ফেলত ইতিমধ্যেই, তাহলে আমার কাজটা সহজ হয়ে যেত, লেখার আয়তনও কমত। নিওটেনির পরিপ্রেক্ষিতে দরকারি জিনিসগুলো সবকটা ছুঁয়ে যেতে গিয়ে এই কমপ্রেশন হয়ে গেছে।
না বইটা পুরো পড়িনি তবে কিছু কিছু অংশ পড়েছি। ফ্রাঞ্জ দে ওয়াল-এর একটা বই নিয়ে আলোচনা অর্ধেক লিখে পড়ে আছে।
দুই নম্বর পার্ট পরে দিলেও পারতেন... ঘুম আইতাছে...
গুহা আর্টের যে ধারণা দিছেন- - ভালু পাইছি...
কড়িকাঠুরে
হ্যাঁ একবার ভেবেছিলাম যে দ্বিতীয় পার্ট দ্বিতীয় পর্বে দেব। তারপরে দেখলাম যে পুরোটাই নিওটেনির গল্প, দুরকম দিক থেকে, তাই একসাথেই জুড়ে দিলাম। সে নাহয় ঘুমিয়ে এসে পরেই পড়লেন।
ভাল লাগসে
শুনে প্রীত হলুম
চমৎকার পোষ্ট।
পাঁচতারা।
অনেক অনেক কিছু জানতে পারলাম।
আর আপনার ভাষাও বেশ সুন্দর এবং সাবলীল।
ধন্যযোগ।
এক পোস্টে অনেক কিছু ধরানোর সমস্যাও আছে, ওই উপরে লোকজন যেমন বলছেন। এ নিয়ে বিস্তারিত খোঁজ করে দেখতে পারেন, আরো ইন্টারেস্টিং।
চরম হইছে!!!
দেব মুখার্জি
[db.dev.m@gmail.com]
--------------------------------------------------------------
দেব এর উঠোন॥ফেইসবুক॥গুগলপ্লাস
বলেন কি!!!
চমৎকার পোস্ট!! শিজ্ঞির পরের পর্ব চাই! এই নেন (গুড়) খেয়ে বসে পড়েন লিখতে
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
আচ্ছা হবেনে, এত লম্বা গল্প লিখতে খাটনি কি কম? তাছাড়া পোস্ট আস্তেধীরে প্রথম পাতা থেকে সরুকগে
অতি অতি দুর্দান্ত বিষয়ে চমৎকার লেখা। লেখাটা পড়ে একটা শান্তি শান্তি ভাব আসছে। কোন ভাল এবং সহজ বই সাজেস্ট করতে পারেন? আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছি পরের পর্বের জন্য। ফুটনোট এর ব্যাপারে বিস্তারিত ব্যাখ্যা চাই।
পাঁচ দাগালাম।
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
ধুর্মিয়া, 'সচল' হয়ে ফুটনোটের ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে কী লাভ? ওখানে তো শুধু, ইয়ে, সচলাদের ডেটা কালেক্ট হচ্ছে...
বই খুঁজেপেতে জানাচ্ছি।
হ।
ডাকঘর | ছবিঘর
দাগায় দিসি!
কৌ, তুই এট্টা হনুমান!
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
এঁহ, হনুমান তো এপ না, তারা মাঙ্কি... তুমি কিচ্ছু জানোনা!
কঠিন পোস্ট
কিন্তু আমি তো চেষ্টা করেছিলাম নারীদের ত্বকের মত নরম করে সবকিছু বোঝাবার
মনে তো হয় বুচ্ছি। (মাথা চুলকানো ইমো)
লেখা পুরাটা পড়ি নাই, যতটুক পড়ছি ততটুকও বুঝি নাই...
তয় এটুক বুঝছি পচুর জ্ঞানের কথা আছে...
তাইলে
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
জ্ঞানবৃক্ষের ফল খাওয়া কিন্তু ভালো নয়, ঐ দেখেন নিচে দ্রোহীদা বলেছেন
দারুন তথ্যনির্ভর বিশ্লেষন। খুবই ভালো লাগলো। পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম। ধন্যবাদ।
___________________________________
অন্তর্জালিক ঠিকানা
খুবই ধন্যবাদ
মনুষ্য প্রজাতিতে এসে সেক্সুয়াল সিলেকশান ইউ টার্ন খাওয়াতে বড্ড গেঞ্জাম হয়েছে, ছেলেগুলা এখন আবার সব শিম্পাঞ্জির মতো হয়ে যাচ্ছে দেখতে, মেয়েদের লুলামি করার সুযোগ চাই, দেতে হবে।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
আরে কন কি, মেয়েরা লুলামি করে আলবাত! অভিজিৎদার পোস্টগুলোয় এ নিয়ে কত গল্প। নাহয় এট্টু কম করে আগের চেয়ে।
'আমার জিন' না 'জিনের আমি' - এই হইল মূল প্রশ্ন।
***
" জঙ্গলে বাস করার বদলে, মনে করা হয় যে মানুষের পূর্বপুরুষ একসময় মধ্য-আফ্রিকার ঘাসবনে নেমে এসেছিল, যখন আফ্রিকা রুক্ষতর হতে শুরু করে, জঙ্গল কমতে থাকে।"
দুই পায়ে হাঁটার পেছনে ঘাসবনের পাশাপাশি একটা জলাভূমি তত্বও আছে কিন্তু।
***
"ট্যাঙ্গানাইকা" নাকি টাঙ্গান্য়িকা?
***
এর কাছাকাছি সুরে অভিজিতদা গতবছর আরেক্টু সবিস্তারে লিখেছিলেন।
হ্যাঁ তবে সে সময়ে সাব-সাহারান আফ্রিকার পরিস্থিতির বিচারে জলাভূমি তত্ত্ব তেমন আমল পায় না। আর তার উপর এইখানে অল্প পরিসর, মেনস্ট্রিম তত্ত্বটুকুই উল্লেখ করে কাজ সারতে হয়েছে।
হ্যাঁ, ঠিক করে দিচ্ছি।
অভিজিৎদার লেখাটা, বেটার, লেখাগুলো (ভালবাসা সিরিজটাও রতন্দা যেমন বললেন), এটার সাথে খুব ইন্টারেস্টিং সাইড-রিডিং, বিশেষত মেট চয়েস আর সেক্সুয়াল সিলেকশন এর উপর। তবে এর কাছাকাছি সুরে বলব না, কারণ ওটার ফোকাস হচ্ছে ১০০% মনোগ্যামির কল্পিত আদর্শকে ভুল দেখানো, আর এটার হচ্ছে নিওটেনি, তার জন্য কীভাবে পলিগ্যামি থেকে প্রথমত মোনোগ্যামির প্রচলন এলো তার একটুখানি উল্লেখ।
এটেনবুড়োর এই ভিডিওটা মাথায় আটকে গিয়েছিল। তাই জলাভূমির কথা তুলেছিলাম
কিন্তু ঘটনাটা সম্ভবত আরো ঘোলা। শুধু জলা বা সাভানা নয়, ঋতুচক্রে আফ্রিকার একটি বড় এলাকা জুড়ে জলাভূমি-সাভানা-শুষ্ক পরিস্থিতি পর্যায়ক্রমে বিরাজ করছিল বলেই মনে হয়।
'সাব-সাহারান' এর সাহারা কিন্তু শিশুমানবের চাইতে বয়েসে ঢের ছোট।
জোনাথান কিংডনের লোওলি অরিজিনস পড়ে দেখেন, ওখানে দ্বিপদিতার পেছনে ফ্যাক্টরগুলো নিয়ে অনেকগুলো সম্ভাব্য থিওরি আছে।
পড়েছিলাম একসময়ে। ভদ্রলোকের পূর্ব আফ্রিকার সৈকত-বনানির খোপে খোপে আলাদা আলাদা ধরনের পুরাতন মানুষের অগ্রগতি বেশ আগ্রহ নিয়ে পড়েছি।
তুমি 'সেলফ মেড ম্যান' পড়েছ? জোশ না? সেখানেও সেই সৈকত-বনানির 'স্ট্রান্ডলোপার' দের কথা, তবে বোধ করি সেখানে গল্প আরেকটু এগিয়ে। (ইংরেজী মানে জানিনা, কিন্তু ওলন্দাজ বা আফ্রিকানাতে স্ট্রান্ডলোপার মানে যিনি সৈকতে হাঁটছেন)
কিংডনের বইটার একটা লম্বা রিভিউ, বলা ভালো সমালোচনা।।
এই সিরিজটা দেখা হয়নি, দেখতে হবে।
সে কথা অবশ্যই ঠিক। প্রশ্ন হচ্ছে ঠিক ঐসময়টায়, যখন বাইপেডালিজম প্রধান রূপ পেল, তখন সেই আদিম মানুষেরা কোথায় ছিল এবং সেখানকার চরিত্র কেমন ছিল?
সাহারার বাউন্ডারি অনেক সময়েই ছোটবড় হয়েছে, কিন্তু ওই সময়টাতেও তো সাহারা মরুভূমি ছিলই বলে জানি। নাহলে কিছু রেফারেন্স দেন।
সাহারার জন্ম চার হাজার বছর আগে।
ওহ এইটা দেখেছি। এ তো অতি সাম্প্রতিক ঘটনা। কিন্তু বিগত আইস এজের সময়ও সাহারা মরুভূমি ছিল, যখন আউট অফ আফ্রিকা মাইগ্রেশন হয়েছে তখনও ছিল। আইস এজ চলে যাওয়ার পর কিছুটা বর্ষণমুখর সময় কাটিয়ে সাহারা আবার মরু-রূপ ফিরে পায়, সেটা ওই সময়ে। এটার আর্টিকলটার লিঙ্ক।
পার্ট এক পড়লাম, দুই পড়ব একটু পর। বেশ মোটাতাজা পোস্ট
..................................................................
#Banshibir.
কথা সইত্য কিনা?
শিম্পাঞ্জির সাথে মানুষের মিল আছে এই কথার মাধ্যমে আপনে কি আড়ালে আবডালে বলতে চান যে বিবর্তন সত্য? তাইলে দৌড়ের উপর থাকেন।
বিবর্তন অবশ্যই একটা ভ্রান্ত ধারণা। আসল ঘটনা হইলো হাজার হাজার বছর আগে একটা লোক তার পাঁজরের হাড্ডির সাথে সঙ্গম করেছিল। তখন তাদের বাচ্চাকাচ্চা হয়েছিল। সেই বাচ্চাকাচ্চারা আবার নিজেদের মধ্যে এবং বাবা-মায়ের সাথে আন্তঃসঙ্গম করেছিল। এভাবেই মানবজাতি পৃথিবীতে এসেছে।
এই ছবিটা আসেনি: http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/c/c1/Lascaux_04.jpg
ক্যান, অতিথি লেখকদের পুস্টে ছবি না এলে ঠিক করে দাও, আমারটায় দিতারো না?
থ্যাঙ্কু
কারো "স্পেসিফিক" অনুরোধ ছাড়া পোস্টে হাত দেয়া হয় না।
লেখা পড়ছি। আজ আর কাল কাজের তুমুল প্রেসারের ঠেলায় সুযোগ করে উঠতে পারছি না। পড়েই মন্তব্য করবো।
গতকাল দৌঁড়ের উপরে একবার পড়েছি, আজ আবার পড়লাম। চিন্তা কোরো না, আমি তিথীডোরকে বুঝাবো ওর মারধোর যেন খালি পছন্দনীয়র উপর দিয়েই যায়। তুমি মার খেয়ে বিছানায় পড়ে গেলে তো আবার পরের পর্ব আসতে দেরি হবে।
এত জিনিস এক পোস্টে এত সুন্দর গুছিয়ে ধরলে কীভাবে?
___________________
রাতের বাসা হয় নি বাঁধা দিনের কাজে ত্রুটি
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাই নে আমি ছুটি
আহা ট্যুলিপদি কত্ত ভালো!
ইয়ে মানে গুছিয়ে ধরাতে গিয়ে অনেক কাটছাঁট করতে হল তো
হ, খালিদ ভাইয়াকে পিটিয়ে পরোটা বানানোর জন্য আমি খেয়েদেয়ে কেজি দুয়েক ওজন বাড়াব ঠিক করেছি।
এরপর কৌ এর লেজ কাটার পালা।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
বাপরে
অতি চমৎকার লেখা। আপনার অন্যান্য অনেক লেখার মত এইটা বুঝতে সমস্যা হয় নাই, পরিস্কার বুঝতে পারছি
শুনে খুশি হব নাকি বাকিগুলো অবোধ্য হত শুনে দুক্ষু পাব কন তো?
কৌ'দা, লেখা দারুন হয়েছে। বেশ কিছু কঠিন জিনিস সহজ ভাষায় বুঝিয়ে দিয়েছো। তবে মনে হয় এই লেখাটাকে সূচনা হিসেবে নিয়ে এর ভেতরের বিষয়গুলোকে আরও একটু বিস্তারিত নাড়াচাড়া করা যায়। মানুষের জীবন ধারা এবং সামাজিক সম্পর্কের প্রভাবটা আরও আলোচনা করলে এর লতায় পাতায় জড়ানো বিষয়গুলোও চলে আসবে তেমনি বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের আলাদা আলাদা জীবনধারাগুলোও আলোচিত হবে।
[ অট: ডাগর ডাগর চোখের চাহনি বড় ভয় পাই, হৃদয়ে ঝড় ওঠে যে !! মেয়েদের এতো মোক্ষম অস্ত্র !! এহেন অস্ত্রের আঘাতে সকল লুলপুরুষ কুপোকাত !!]
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
ইসে, আমি তো অত কিছু জানিনা... নিজের কাজের জন্য নিওটেনি আর ডাইমর্ফিজম নিয়ে যেট্টুক পড়ে বুঝলাম তাই পুঁজি করে সিরিজ চালানোর ইচ্ছা। দুর্দান্তদার মত যারা জানেশোনে তারা কিছু লিখতে পারে তো।
লীলেন্দার আওরতনামা কবিতাটা তাইলে এখানে কপিপেস্ট করি:
কবিতাটা চোখে পড়িয়ে দেয়ার জন্যে
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
সেই দায় আসলে লীলেন্দা-অ্যাডিক্ট তাপসদার, ওটাতে হঠাৎ আজকে কমেন্ট করে ঠেলা দেওয়াতেই আমার চোখে পড়ল।
ধন্যবাদ তাপসদাকে। আরেকটা বেশ প্রিয় কবিতার কথা মনে পড়ল, থিমে কিছুটা মিল আছে, রফিক আজাদের 'নারীঃ কবির অভিধান'। পড়েছেন?
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
আগে পড়েছি হয়ত, কিন্তু মনে পড়ছে না...
কই, আমি ভাবলাম কবিতাটা দেখাবেন বুঝি...
নারী ভাঁজ খোলো আনন্দ দেখাও, করি প্রেমের তর্জমা !!
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
আস্তাগফিরুল্লাহ্ !!
লাল গানে নীল সুর, হাসি হাসি গন্ধ
কেন, খোইখোই রমণীর ছবি দেখে বললেন?
অসাধারণ! এতো তথ্য একসাথে! কেম্নেকি?
বিবর্তন খুবই রহস্যময় মনে হয় আমার কাছে। জীব বিজ্ঞান পড়ি নাই কখনো। তবুও ছাড়াছাড়াভাবে পড়ে ফেলা কিছু বিষয় বলার লোভ সামলাতে পারছি না।
মানব জাতির ইতিহাস মনে হয় মাথা নয়, বরং পায়ের দিক থেকে শুরু হয়েছে (ব্যাখ্যা করছি ২ নম্বরই করে )।
শারীরিক নিওটেনিঃ
১। প্রথম ছবিটার বাচ্চাটাকে মানুষ মানুষ মনে হচ্ছে। কারণ ওটি খুব ঋজু ভঙ্গীতে ঘাড় সোজা করে বসে আছে মানুষের মতই।
২। পেলভিস নিয়ে কোথাও পড়েছিলাম একটু (ভুল হলে শুধরে দিয়েন কইলাম)। মানুষের পেলভিস অন্য এপদের তুলনায় নাকি বেশি চওড়া। এর কারণটা ঘটেছে পায়ের দিক থেকে। মানুষদের পুর্বপুরুষ প্রথম যেদিন পেছনের পায়ের পাতায় ভর দিয়ে দাড়ালো, সেদিন তার ইতিহাস বদলে গেলো। পায়ের পাতায় ভর দিয়ে দাড়াতে শেখার পর ওদের নজর গেলো গাছের উপরের ফলমূলের দিকে। ওরা তখন আর গাছ বাইতে চাইল না। বরং নীচে দাড়িয়ে হাত বাড়িয়ে ‘’গন্ধম’’ ফল পাড়তে লাগলো। এতে করে ভেতরে ভেতরে একটা পরিবর্তন শুরু হল। আগে যখন বানর জাতীয় অন্যান্য প্রাণীর মতো দুহাত মাটিতে মেলে সামনে ঝুঁকে থাকত, তখন কোমরের উপর শরীরের ভার পড়ত না। ফলে কোমর একটু সরুই ছিল। কিন্তু পেছনের পায়ের পাতায় ভর দেবার ফলে এবং কোমর সোজা করে দাঁড়াবার ফলে পেট বুক ঘাড় মাথা সমেত উর্ধাঙ্গের ভার এসে পড়ল কোমরে। ফলে পেলভিস এই বাড়তি ওজন ধরতে চওড়া হয়ে গেলো। একই সাথে গাছে চড়ার ও ঝুলে থাকার প্রয়োজন কমার ফলে তাদের হাতের আঙ্গুলগুলো একটু ছোট হতে থাকল। আগে ওগুলো ডাল আঁকড়ে ধরার কাজে একটু বড় ছিল। গাছ বেয়ে থাকে, এমন প্রাণীদের হাতের আঙ্গুল, বিশেষ করে বুড়ো আঙ্গুল দ্রষ্টব্য। এইজন্য আগেই বলতে চেয়েছি, মানুষের ইতিহাস মনে হয় শুরু হয়েছে পায়ের দিক থেকে। তখনো আমাদের মাথা বড় আকারের হওয়া শুরু হয় নি কিন্তু।
১ম পর্ব শেষ আপাতত। ২য় পর্ব পড়ে দেখি কিসু মাথায় ঢোকে কিনা!!
------------------
পথিক পরাণ
মগডালের ফল পাড়া কার পক্ষে সহজ, গাছে গাছে ঝুলে বেড়ানো আদিম পৃথিবীর বানরের পক্ষে, নাকি দুই পায়ে ভর দিয়ে মাটিতে সোজা হেঁটে যাওয়া এইপদের পক্ষে?
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
আমি লেখায় এপ-দের একটা গোত্রর কথাই বলতে চেয়েছি। বানর নয়। এপরা কি একদিনেই পায়ের পাতায় ভর দিয়ে আফ্রিকার ঘন ঘাসের বনে দাড়িয়েছিল? সব ফল কিন্তু জিরাফের গলার সমান উঁচু লম্বা ডালে ধরে না। আর এপরা সব ফল খায়ও না। কাজেই বানর হইয়া ব্যাপক ফালাফালি ছাড়াও কিছু গন্ধম ফল ভক্ষন করা সম্ভব।
পথিক পরাণ
যা বাবা, প্যারেন্ট মন্তব্যটাই হাপিশ হয়ে গেলো।
আমার কথা ধরতে পারেন নি। আপনি বলেছেন,
মানুষ এবং অন্য এপদের পূর্বপুরুষ ছিলো বৃক্ষচারী আদিম পৃথিবীর বানর (আমি শুধু বানর বলছি না)। আফ্রিকার বনাঞ্ছল হ্রাস পেয়ে তৃণভূমিতে পরিণত হতে থাকলে গাছের ফলের উপর নির্ভরশীল থেকে বংশ বিস্তার অসম্ভব হয়ে দাড়ালে, এই সাধারণ পূর্বপুরুষদের একটা শাখা তৃণভূমিতে খাবারের সন্ধানে নেমে আসতে বাধ্য হয়।
অর্থাৎ গাছের ফল যখন দুষ্প্রাপ্য হয়ে দাঁড়ায়, তখনি গ্রেইট এইপদের পূর্বপুরুষ মাটিতে নেমে আসে, বিবর্তনের পরিক্রমায় এক সময় দু পায়ে দাঁড়ানো এইপদের উদ্ভব ঘটে। তার মানে যখন মাটিতে নেমে আসা আর দুপায়ে দাঁড়ানোর ঘটনা ঘটে, মগডালের ফল তখন অতীতের বিষয় (মানে নির্ভরশীলতা কমতে থাকে)।
আপনার কথাটা ক্রনোলজিক্যালি পুরো উলটা।
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
সজল ভাই
আপনার কথাটা ধরতে পারছি মনে হয়। আমি গাছের উপরের ফলমূল বলতে অনেক মগডালের কথা বুঝাতে চাইনি। নির্দোষ শব্দ দুইটা বিবর্তনের উল্টোদিকে চলে যাবে বুঝতে পারিনি। আমি কেবল জ্ঞান বৃক্ষের ফলের কথা বলতে চাইছিলাম মজা করে, জানিনা ঐ বৃক্ষ কত উঁচু হয়!!
ঠিক।
পেলভিসের বিষয়ে আপনার মন্তব্য শুনে একটা দরকারি জিনিস ঠিক করে দিলাম, সেজন্য ধন্যবাদ। পেলভিসের কোটর মানে নালী বেশি চওড়া এটা বলতে চেয়েছিলাম।
এবার আপনার ব্যাখ্যার বিষয়ে আসি। যেটা শুনেছেন সেটা সত্যিই, বাইপেডালিজমের ফলে শরীরের অতিরিক্ত ভার বইতেই পেলভিস, বিশেষ করে ইলিয়াম মানে উপরের দিকের ব্লেডের মত অংশগুলো চওড়া হতে শুরু করে। এখানে কিছুটা বলেছে।
এই চওড়া হওয়ার সঙ্গে পেলভিসের কোটর চওড়া হওয়ার ব্যাপারটা এক নয়। সেটা হয়েছে বর্ধিত মাথাকে জায়গা দিতেই।
আপনার পায়ের দাঁড়ানোর থিওরির সঙ্গে ফলমূলকে জুড়ে দেওয়া সমস্যা করেছে। তারা যখন পায়ের উপর দাঁড়ায়, তখন মধ্য আফ্রিকার উষর অঞ্চলে উঁচু গাছ ও মগডালের ফলের অভাব। ঝোপঝাড় থেকেই খাবার নিতে হয়। বরং ঘাসঝোপের উপর দিয়ে উঁকি মারতেই দুপায়ে দাঁড়ানো লাগে। এইগুলো ডিটেলে তো উপরে বলেছিই।
অতএব দুপায়ে দাঁড়ানো আগে তো বটেই। দুপায়ে শিম্পাঞ্জি ইত্যাদিরাও টুকটাক দাঁড়াত। সেটা নিয়ে আপত্তি করিনি তো।
দাদা আপনি আপত্তি করেছেন তা বলিনি কিন্তু!
ফল খাবার বিষয়টি গন্ধম ফল আনতে গিয়ে বিপত্তি ঘটিয়ে ফেলেছে। এই নিয়ে উপরে বলেছি একটু।। ধারণা করছি এপদের মাটিতে নেমে আসার পরের খাদ্যাভ্যাস নিয়ে আমাদের ভেতর তেমন দ্বিমত নেই।
পথিক পরাণ
গন্ধম ফলের ব্যাপারটাকে মিথ ধরে নিলে বিবর্তন বুঝতে সুবিধা হবে। বিবর্তনের তত্ত্বানুসারে জেনেসিসের ব্যাপারটার কোন সত্যতা পাওয়া সম্ভব না।
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
তার মানে আমার মন্তব্যে এইটি বোঝা যাচ্ছে যে গন্ধম ফলের অস্ত্বিত্ব প্রমানের জন্য আমি ঐ ফলের কথা লিখেছি? টাস্কি খায়া গেলাম!!
গন্ধম ফল পেড়ে খাওয়া- এইটাকে আমি একটা স্যাটায়ার হিসাবেই লিখতে চেয়েছি। জেনেসিসের ব্যাপারে সত্যতা ধরে নিলে এপ-দের নিয়ে বিবর্তনের পথে হাঁটতাম না বোধ হয়। বিবর্তনের পক্ষে আমার বক্তব্যটি বুঝাতে যে খুব ব্যর্থ হয়েছি, তা বুঝতে পারছি। দুঃখিত।
গন্ডগোল হয়ে গেছে বুঝলাম। ক্রিয়েশনিস্টরাও বিজ্ঞানের সঙ্গে সৃষ্টিতত্ত্ব মেশাতে গিয়ে এইরকমই ককটেল বানায় মনে হয়
কৌস্তভ দা আপ্নেও আমারে ক্রিয়েসনিস্ট বানায়া দিলেন? যাই কৈ!! জালিম দুনিয়া---:(
আরে, এইবার আপ্নে স্যাটায়ার বুঝতে পারেন না?
বুঝছি-- তয় আগে কোন এককালে বান্দরের কাছাকাছি গোত্রীয় আছিলাম কিনা, তাই একটু বান্দ্রামি কর্লাম আর্কি।
স্যাটায়ার বুঝতে না পারার জন্য দুঃখিত। তবে আপনার প্রথম মন্তব্যটাতে কোন স্যাটায়ার নেই, নাকি? সেই ক্ষেত্রে আমার প্রথম দুইটা মন্তব্য এখনো প্রযোজ্য। ভালো থাকবেন।
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
জ্বি আছে। অন্তত একটা- --- গন্ধম শব্দটা।
ভালো থাকবেন।
পথিক পরাণ
সাহস করে দ্বিতীয় পর্ব পড়ে ফেলেছি।
আপনার বর্ণণা অতি প্রানবন্ত। কথার অন্তর্নিহিত ভাবটা ঠিকই আছে। তবে এই চিন্তাটা নারীদের ভেতর কবে থেকে শুরু হল? নাকি এই চিন্তাটা নানাভাবে তাদের ভিতর ঢুকিয়ে দেয়া হল যে একজন দায়িত্বশীল পুরুষ ছাড়া তুমি অচল?
আচ্ছা। এইভাবে একটু চিন্তা করে দেখি কি দাড়ায়।
মনোগেমি বা পলিগেমি যাই হোক, একজন নারী খুব ভালো মতো জানতে পারবে তার বাচ্চাটা কার। কাজেই সন্তানের ভরণপোষণের জন্য জব গম ভুট্টা ইত্যাদি এনে দেয়ার জন্য হয়ত সে তার সন্তানের (তার জানামতে) পিতাকে দায়িত্ব দিতে থাকে। এইসময় ঐ পুরুষটি যদি দেখে যে তার সন্তানের অর্থাৎ জিনের ধারকের দাবীদার মহিলাটি একটা পাজি, নচ্ছার। সে বিভিন্ন পুরুষের সাথে শুয়ে বসে থাকে। তখন তার ভিতরে হয়তো এই চিন্তাটি আসে যে আমার এই সন্তানটা কোকিলের (এইটারে কি বলে? কাকোল্ডি?) নাতো? পুরুষের তার সন্তান বিষয়ে সন্দেহ থাকলে নিশ্চয়ই অন্যের সন্তান লালন পালন করতে সে রাজী থাকবে না। কাজেই পুরুষ তখন নারীকে বলে দিল-
সুরঞ্জনা, ওইখানে যেয়োনাকো তুমি।
বোলোনাকো কথা ঐ যুবকের সাথে। তাইলে গম জব ফাইবা না কয়া দিলাম!!
নারী দেখল- সন্তান পালন করতে গেলে, বিশেষত শিশুটি একেবারে যখন ছোট, এবং সে নিজেও খাদ্যদ্রব্য অর্জনের উপায় তেমন করতে পারেনা, তখন তার জীবন ধারণের জন্য কিছু সম্পদের দরকার। পুরুষ তার সেই সম্পদ(এই চিন্তাটা বর্তমানে কেবল রক্ষণশীল অথবা অপ্রতুল সম্পদের দেশের/যুগের সমাজের জন্য প্রযোজ্য হবে মনে হয়)। কাজেই পুরুষের কোকিলের ন্যায় আচরণের কারণে নারী তার বহুগামিতার পথ থেকে সরে আসতে বাধ্য হল। একই সাথে, নারী যখন তার পুরুষের প্রতি বিশ্বস্ততা দেখাল, তখন প্রতিদানে সেও পুরুষের থেকে বিশ্বস্ততা চাইল। তবে পুরুষ এতো দ্রুত মনে হয় মনোগেমির দিকে ঝুঁকল না। কারণ, তার বহুগামিতার কোন প্রমাণ মেলানো শক্ত। কোকিলের মতো সে সন্তানকে সহজেই ফেলে দিয়ে অস্বীকারও করতে পারে।
আপাতত এইটুকুই। ভয়ে আছি। আমি লিখতে চাই এক। পরে দেখি অর্থ দাড়ায় আরেক। আমার ভ্ররান্ত ধারমা থাক্লে শুধ্রাইয়া দ্রিয়েন--
পথিক পরাণ
আপনার প্রশ্নটা খুব ইন্টারেস্টিং, এটা আজকের দিনের ফেমিনিজম আন্দোলনের সঙ্গেও সম্পর্কিত।
প্রথম কথা হল, বিশুদ্ধ একগামিতা জিনিসটা নারী বা পুরুষ কারোর কাছেই খুব কাঙ্খিত নয়, 'বোরিং' বলেও বলতে পারেন আবার সন্তানদের জেনেটিক ভেরিয়েশন কম হবে বলেও বলতে পারেন। তখনকার চলন্ত প্রমিসকুইটি (যথেচ্ছাচার) মডেলে তাই দুজনেরই সে অর্থে সুবিধা বেশি হত। কিন্তু সমস্যা দাঁড়াল বাচ্চার সারভাইভাল। এবং বাচ্চা দেখলেই আদরযত্ন-লালনপালন করার একটা ইনস্টিঙ্কট প্রাণীর মধ্যে বহু প্রাচীন। দেখা গেছে, যে সব পুরুষ তাদের অল্পবয়সী সন্তানদের সাথে বেশি সময় কাটায়, তাদের মধ্যে ওই ধরনের হরমোনগুলো বেশি কাজ করে, এবং সঙ্গমেচ্ছা জাতীয় প্রবৃত্তিগুলো কম থাকে। ওই অবস্থা থেকে বেরিয়ে এলে তাদের ওই প্রবৃত্তিগুলোও স্বাভাবিক হয়ে যায়।
যা বলতে চাইছি, শিশুর পেছনে (বা তার মায়ের পেছনে) খুব বেশি যত্ন করাটা পুরুষেরা নিজে থেকে চাইবে না, অতএব তারা যে নারীদের মাথায় ওই চিন্তা 'ঢুকিয়ে দেবে', এমনটা নয়।
নারীদেরও কেউ বলে দেওয়ার দরকার নেই, তারা নিজে থেকেই সাহায্যের প্রয়োজন বুঝতে পারছে। যারা যথেষ্ট সাহায্য পাচ্ছে না তাদের শিশু/তারা মারাও যাচ্ছে।
এখনকার দিনের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন, যেমন বলছেন। সেটা নিয়ে পরে কখনও লেখার ইচ্ছা আছে।
'কাকোল্ড্রি' ঠিকই বলেছেন। তবে সম্ভবত ওই জিনিসটা ঈর্ষাপ্রসূত হওয়ার দরকার নেই। কেউ যদি দেখে তার বউ অন্য এক পুরুষের সাথে ঘুরেফিরে বেড়াচ্ছে, তার মানে ওই পুরুষই তাকে খাবার/নিরাপত্তা দিচ্ছে, প্রথমজনের দায় মিটে গেল, বরং ভালোই, তার বাচ্চার দায় অন্যজন নিচ্ছে। কিন্তু দ্বিতীয়জন খামোখা ওই হ্যাপা ঘাড়ে নিতে যাবে কেন?
আপনি ফাঁকেফাঁকে অনেকগুলো থিওরি গুঁজে দিচ্ছেন। এই যেমন, "তবে পুরুষ এতো দ্রুত মনে হয় মনোগেমির দিকে ঝুঁকল না। কারণ, তার বহুগামিতার কোন প্রমাণ মেলানো শক্ত। কোকিলের মতো সে সন্তানকে সহজেই ফেলে দিয়ে অস্বীকারও করতে পারে।" কটা নিয়ে কথা কমু?
কৈবেন যখন- তখন সবটা নিয়াই কন!!
পথিক পরাণ
আচ্ছা পরে কোনো পোস্টে কমুনে।
পড়ছি। পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম। অনেক কিছু জানা হলো।
ধন্যবাদ
মাথা আর পেলভিক - ডিম আগে না মুরগী আগে মার্কা ব্যাপার দেখা যায় পুরাই!
ওইটাও পজিটিভ ফীডব্যাক লুপ বলেই মনে হয়। তবে পেলভিস খানিকদূর গিয়ে থমকে গেছে।
ছবি গুলো দেখে অন্য কিছু বুঝলাম।
দু পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করতে গিয়ে অনেকবার মুখ থুবড়ে পড়তে হয়েছে, তাই মানুষের মুখ চ্যাপ্টা হয়ে গেছে। একই কারনে নারী জাতি shock absorber পেয়েছে দুটো, যাকে আপনি বলছেন স্তন। খোইখোই মেয়েরা পেছনে ও উলটে পড়ত, তাই তারা পেছনেও shock absorber পেয়েছে।
পেলভিসের আকার প্রজাপতির মত। বিয়ের দেবতা বা দেবী তাই বোধহয় প্রজাপতি।
যুগে যুগে পণ্ডিত মশাই ছিলেন। আমি নিশ্চিত যেসব পণ্ডিত মশাই বাইসন শিকারের থিওরেটিকাল ক্লাস নিতেন তাঁরা কখনো বাইসন শিকার করেননি। নইলে পোলাপানকে মাঠে নিয়ে গিয়ে দেখিয়ে দিতেন বাইসন শিকার কত প্রকার ও কি কি?
ময়ূর তার পেখম দিয়ে আর সব ময়ূর আড়াল করে।
স্ত্রীর পেছনে থাকলে সিংহ সিংহই থাকে, সামনে আসলে হয়তো বিড়াল হয়ে যায়।
লেখার জন্য ধন্যবাদ। ছবির জন্য... আগেই বলে ফেলসি...
-এ ইউসুফ
আহেম!
সিম্পল থিংকিং ইজ বিউটি! মুগ্ধ। আপনি খালি চিড়িয়াখানা থেকে একবার ঘুরে আসুন, "লাইফ অফ ট্রি" পুরোটা একদিনে আঁকা হয়ে যাবে।
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
তার মানে বিজ্ঞানসম্মতভাবে এরশাদ কাকু একজন বাচ্চা বান্দর?
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
এইটা কি আর নতুন কথা?
জীববিজ্ঞান আমার ভীষণ পছন্দের। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর, সাবলীল, তথ্যবহুল লেখাটির জন্য।
পরের পর্বের অপেক্ষায়
ছি ছি!!
চ্রম অশ্লীষ গভেষণা!!!
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
যা কইছেন!
বড়ই সৌন্দর্্য
কামলা খাটুনির কারনে এড্ডু দেরী হইহা গেলগা পড়তে। আমনে্রে চারানা দামী এক খান লজেন্স খায়ামুনে এই লেয়াটার জন্য। আমনে ভাল তাইয়েন , আবার দেহা হইবো (নরসিংদীর আঞ্চলিক ভাষা)
লেখার জন্য
দেখুন, এইরকম ভাষা হচ্ছে ব্লগীয় ভাষা, এগুলি বর্জন করাই শ্রেয়। সুশীল ভাষায় মন্তব্য করুন।
হুমম, খুউপ খিয়াল কৈরা।
বদলে যাউ, বদলে দাউ।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
পুরোটা পড়লাম আজ। খুব ভালো হয়েছে বাকি পর্বগুলো লিখে ফেলো। দুজনে একসাথে একটা ইবইও করে ফেলা যায়।
থ্যাঙ্কু, থ্যাঙ্কু... কিন্তু, ইয়ে, ইবই? দুজনে কিডা?
ই-বই হয়েছিল?
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
নতুন মন্তব্য করুন