মরুপ্রথা

কৌস্তুভ এর ছবি
লিখেছেন কৌস্তুভ (তারিখ: শুক্র, ০৩/০৮/২০১২ - ২:০৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

“বাকি সবার মতই আমাদের পরিবারও ছিল সোমালিয়ার মরুভূমির পশুপালক। সেখানে আমরা ছোটোরা, মুক্ত আদিম প্রকৃতির সঙ্গ উপভোগ করতে পারতাম একশ’ভাগ। আমরা খোলা মাঠে সিংহদম্পতিকে রোদ পোয়াতে দেখতাম, জিরাফদের সঙ্গে দৌড়োতে পারতাম, মরু-খরগোশদের ধাওয়া করতাম।

কিন্তু বড় হবার সাথে সাথেই সেই সব স্বাধীনতাগুলো ফুরিয়ে আসতে থাকে। আমরা শিখতে থাকি, একজন আফ্রিকান রমণী হওয়ার অর্থ।

আফ্রিকায় মহিলারাই সমাজের মেরুদণ্ড, পরিবারের অধিকাংশ কাজের দায়িত্ব তাদেরই। কিন্তু পরিবারে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে তারা নেহাতই ক্ষমতাহীন, উপেক্ষিত। তারা এতটাই পরাধীন, যে নিজের বিয়ের মত সিদ্ধান্তটুকুতেও তাদের কোনো মত দেওয়ার অধিকার নেই।

আর খুব ছোটোবেলাতেই আমাদের জীবনে একজন ‘মেয়ে হয়ে ওঠার’ প্রথম ধাপটা আসে।

আমাদের ওই মরুচারী যাযাবর সমাজে একজন অবিবাহিত মহিলার কোনো স্থান নেই, আর তাই সময় থাকতেই মায়েদের চেষ্টা শুরু করতে হয়, যেন তার মেয়ের জন্য যথাযোগ্য ভালো স্বামীর বন্দোবস্তই করতে পারে।

এবং সোমালিয়ার প্রচলিত ধারণা এই যে, একটি মেয়ের দুই পায়ের ফাঁকে খারাপ জিনিসপত্র থাকে, আর তাই মেয়েরা হল নোংরা, অতিরিক্ত কামপূর্ণ, এবং বিয়ের অযোগ্য – যতক্ষণ না ওই খারাপ অংশগুলো, ভগাঙ্কুর আর লেবিয়া, কেটে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। তারপর যোনিমুখ সেলাই করে ফেলা হয়, কেবল ছোট্ট একটা ছিদ্রপথ বাদ রেখে।

এই খৎনা করার জন্য কোনো বেদেনীর মজুরিই একটা সোমালিয়ান পরিবারের কাছে সবচেয়ে বড় খরচ, কিন্তু সেটা একটা গুরুত্বপূর্ণ লগ্নি – তা ছাড়া বাড়ির মেয়েকে বিয়ের বাজারে তোলাই যাবে না।

তার শরীরে ঠিক কী করা হতে চলেছে, সেটা একটা মেয়ের কাছে গোপনই রাখা হয়, তাকে শুধু এই কথা শিখিয়ে রাখা হয় যে বয়স হলে তার জীবনে দারুণ একটা কিছু হতে চলেছে। আর তাই ছোটো বয়স থেকেই সোমালিয়ান মেয়েরা উৎকণ্ঠার সাথে উৎসুক হয়ে থাকে এই ‘মেয়ে হওয়ার’ অনুষ্ঠানের জন্য।

আগে এই প্রথা পালন করা হত মেয়েরা বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছলে, কিন্তু ক্রমে ক্রমে তা আরো অল্পবয়সী মেয়েদের উপরেই করা হতে থাকে।

যখন আমার বয়স প্রায় পাঁচ, এক সন্ধ্যায় আমার মা আমাকে বললেন, “তোমার বাবা ওই বেদেনীর সঙ্গে দেখা করে এসেছেন। সে এবার যেকোনোদিনই এসে পড়বে।”

আমার এই ‘অনুষ্ঠানের’ আগের রাত্রে, বাড়িতে আমাকে ঘিরে বেশ একটা হইচই পড়ে গেল। রাত্রের খাবারও আমাকে বেশি করে দেওয়া হল। বেশি দুধ খেতে বারণ করল মা।

দারুণ উত্তেজনা নিয়ে শুয়ে ছিলাম, ঘুম আসছিল না। নিঝুম কালো আকাশের চিকমিক তারাগুলোর দিকে চেয়ে ছিলাম, হঠাৎ মাথার উপর একটা ছায়া দেখতে পেলাম। মায়ের ছায়া। আমাকে ইশারা করছে উঠে পড়ার জন্য।

আমার ছোট্টো চাদরখানা জড়িয়ে ঘুমচোখে তার পিছু পিছু এগোতে লাগলাম।

আমরা মাঠের মধ্যে ঝোপঝাড়ের পাশে গিয়ে থামলাম। “এখানে অপেক্ষা করি’, মা বলল। আমরা ঠাণ্ডা মাটিটায় বসে রইলাম। আসে আস্তে ভোরের আলো ফুটছিল। আমি ওই বেদেনী মহিলার চটির আওয়াজ পেলাম। আর হঠাৎই দেখি সে এসে দাঁড়িয়েছে আমার পাশে।

“ওখানে গিয়ে বসো”, সে একটা চওড়া পাথর দেখিয়ে বলল। কোনো গল্পসল্প কথাবার্তার ব্যাপার নেই, এটা নিছকই যেন এক নীরস ব্যবসায়িক লেনদেন।

মা আমায় সেখানে নিয়ে গিয়ে বসাল। ওই মহিলা আমার পেছনে বসে আমার ছোট্ট মাথাটা তার বুকে তুলে নিল, আর তার পা-দুটো দিয়ে আমাকে শক্ত করে চেপে ধরল। আমিও তার পা আঁকড়ে রইলাম। সে আমার মুখে একটা শিকড়ের টুকরো দিয়ে বলল, ওটা দাঁতে চেপে ধরে থাকতে।

আমার কানের কাছে মুখ নামিয়ে এনে মা ফিসফিস করে বলল, “আমার সোনামণি অনেক সাহসী, তাই না? মায়ের কথা শোনো, লক্ষ্মী মেয়ের মত চুপটি করে থাক, দেখবে খুব তাড়াতাড়িই সব মিটে যাবে।”

আমি মিটমিট করে তাকিয়ে দেখতে পেলাম রুক্ষ চেহারার ওই মহিলার কঠোর চাহনি। সে তার পুরোনো কাপড়ের থলিটা হাতড়ে বের করে আনল একটা ভাঙা ব্লেড। মনে হল, সেটার গায়ে যেন দেখতে পেলাম শুকনো রক্ত লেগে আছে। মহিলা তার উপরে থুতু দিয়ে নিজের কাপড়ে মুছে পরিষ্কার করে নিল। ততক্ষণে আমার চারিদিক অন্ধকার হয়ে এসেছে, কারণ মা আমার চোখে শক্ত করে একটা কাপড় বেঁধে দিয়েছে।

তার পরেই যেটা অনুভব করতে পারলাম, আমার মাংস কাটা হচ্ছে, আমার শরীরের মধ্যে দিয়ে ওই ব্লেডটা চলাচল করছে। আমি শক্ত হয়ে বসে থাকতে চাইলাম, নিজেই নিজেকে বোঝাতে লাগলাম যে আমি যত শান্ত হয়ে থাকব তত তাড়াতাড়ি এটা মিটে যাবে। কিন্তু আমার পা-দুটো থরথর করে কাঁপতে আরম্ভ করল। আমি প্রার্থনা করতে লাগলাম যে সবকিছু যেন দ্রুত মিটে যায়। তাই-ই হল, কারণ আমি তখনই জ্ঞান হারালাম।

যখন আমার জ্ঞান ফিরল, দেখলাম আমার চোখের বাঁধন আর নেই, আর ওই মহিলা একটা বাবলার কাঁটাঝোপ জোগাড় করে এনেছে। সেই কাঁটা দিয়ে সে আমার চামড়ায় কতগুলো ফুটো করে, একটা সাদা সুতো চালিয়ে সেলাই করে দিল। পা-দুটো ততক্ষণে সম্পূর্ণ অসাড় হলেও, তাদের মাঝখানে এমন দুর্দান্ত যন্ত্রণা যে আমি মরে যাওয়ার প্রার্থনা করছিলাম।

মুখে রোদ পড়ায় আমি আবার জেগে উঠলাম। সেই বেদেনী মহিলা ততক্ষণে চলে গেছে। আমার কোমর থেকে গোড়ালি অবধি কাপড় দিয়ে বাঁধা, যাতে আমি পা ফাঁক করতে না পারি। যে পাথরের উপরে শুয়েছিলাম, তার পাশে তাকিয়ে দেখি যে সেটা রক্তে ভেসে যাচ্ছে, যেন সদ্য সেটার উপর কোনো পশু জবাই করা হয়েছে। এক পাশে আমারই শরীরের টুকরো রোদে শুকোনো হচ্ছে।

যখন রোদ আরো চড়া হতে থাকল, আমার মা আর দিদি আমাকে টেনে নিয়ে গেল একটা ঝোপের ছায়ায়, যাতে আমি সেখানে অপেক্ষা করতে পারি যতক্ষণ তারা আমার জন্য একটা ছোট্ট ছাউনি বানিয়ে দেয়। এইটাই এখানের প্রথা – মেয়েটির জন্য কোনো গাছের তলায় একটা ছোট ঘর বানিয়ে দেওয়া, যাতে সে কয়েক সপ্তাহ সেখানে একা বিশ্রাম নিয়ে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠতে পারে।

অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করার পর যখন আর সহ্য করতে পারছিলাম না, তখন দিদিকে ডাকলাম। সে আমায় পাশ ফিরিয়ে শুইয়ে দিয়ে বালিতে একটা ছোট গর্ত করে দিয়ে বলল, “এইখানে।”

আমার প্রথম অনুভূতি হল যেন কেউ আমার ক্ষতস্থানে অ্যাসিড ঢেলে দিয়েছে। সেলাই করে দেওয়ার পরে মেয়েদের প্রস্রাব আর পরবর্তীতে মাসিক বেরোনোর জন্য কেবলমাত্র ছোট্ট একটা ফুটো রাখা হয়, একটা দেশলাইকাঠির মতন সরু।

দিনের পর দিন ওই কুঁড়েঘরে পড়ে থাকতে থাকতে আমার ক্ষতস্থান বিষিয়ে যায়, প্রবল জ্বরের ঘোরে পড়ি। বারবারই অজ্ঞান হয়ে পড়তাম। মা দীর্ঘদিন ধরে আমার জন্য খাবার আর জল নিয়ে আসত।

যখন চেতনা থাকত, বাঁধা পায়ে নিশ্চুপ হয়ে শুয়ে থাকতে থাকতে আমি কেবলই চিন্তা করতাম, কেন? কিসের জন্য?
ওই বয়সে আমি যৌনতা সম্পর্কে কিছুই জানতাম না। কেবল বুঝেছিলাম, আমার মায়ের সজ্ঞানেই আমার উপর ছুরি চালানো হয়েছে।”

************************************

অধুনা আফ্রিকান সুপারমডেল ওয়ারিস দিরি’র আত্মজীবনী Desert Flower-এর কিছু অংশ আমি রীডার্স ডাইজেস্ট পত্রিকায় পড়ি যখন আমার বয়স মাত্র তেরো বছর, যে বয়সে উনি নিজেদের গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছিলেন যখন তাঁর বাবা পাঁচটা উটের বিনিময়ে একজন শুভ্রশ্মশ্রু বৃদ্ধের সঙ্গে তাঁর বিয়ে দিয়ে দিতে যাচ্ছিলেন। সেই বয়সে এ বিবরণ পড়া আমার কাছে বেশ শকিং ছিল, সম্ভবত সে কারণেই লেখাটা আজো আমার মনে আছে। আরো তের বছর পর সেটা অনুবাদ করে অন্যদের পড়াতে পেরে খানিক হালকা লাগছে, যদিও অনুবাদ করাটা বেশ কষ্টকর ছিল।

লন্ডন পালিয়ে এসে খাবারের দোকানে কাজ করতে করতে তিনি এক গ্ল্যামার ফটোগ্রাফারের নজরে পড়ে যান, আর তাঁর ‘এক্সোটিক’ চেহারার জন্য দ্রুতই বিখ্যাত হয়ে ওঠেন। সেই সঙ্গেই তিনি ‘ফিমেল জেনিটাল মিউটিলেশন’ (FGM) বা নারী-খৎনা বিষয়ে একজন অ্যাক্টিভিস্ট হয়ে ওঠেন। এই বর্বর প্রথার সম্পর্কে আমার বেশি কিছু যোগ করার নেই, কেউ আরো বিশদে জানতে চাইলে দেখতে পারেন [১] [২] [৩] [৪]

তিনি ওখানে বলেছেন, “আমি যে এত কষ্ট পেয়েছিলাম, তার পরেও আমাকে ভাগ্যবান বলা চলে – কত মেয়ে ইনফেকশন, শক, টিটেনাসে পড়ে মারাই যায় শেষমেষ।”

রক্তপাত ও সংক্রমণে ওই সময়ই দশ শতাংশ মেয়ের মৃত্যু হয় বলে অনুমান করা হয়, এবং সন্তান জন্মের সময় মা ও শিশুর মৃত্যুর সম্ভাবনাও বেড়ে যায় এইধরনের নারীদের ক্ষেত্রে।

ওইসব দেশে নারী-খৎনা একরকম ‘যৌনতার তালা' বা chastity belt হিসাবেও ব্যবহার করা হয়, কারণ বিয়ের আগে বেশ আনন্দের সঙ্গে ওই সেলাই কাটার ব্যবস্থা করা হয়, যাতে মেয়েটি এবার স্বামীসঙ্গমের উপযুক্ত হয়ে উঠতে পারে।

****************

আমি বরং অন্য একটা দিক নিয়ে কিছু কথা বলি। পপুলেশন জেনেটিক্স নিয়ে পড়াশোনা করার জন্য, ব্লন্ড চুল এজাতীয় কোনো লক্ষণ দেখলেই আমার প্রশ্ন করতে ইচ্ছা হয়, এই-সংক্রান্ত জিনের উদ্ভব হল কোথায়, কবে, এবং তা কী ভাবে ছড়িয়ে পড়ল? এই একই আলোচনা করা যায় খৎনার মত মীম নিয়েও, চলুন তাই একটু দেখি।

থ্রীষ্টজন্মেরও দু-আড়াই হাজার বছর আগে মিশরে পুরুষের খতনার প্রাচীনতম নিদর্শন দেখা যায়। বুঝতেই পারছেন, মিশরীয়দের পক্ষে পাথরে খোদাই বা ছবির মাধ্যমে এই সংক্রান্ত ঘটনা লিপিবদ্ধ করে রাখা সম্ভব ছিল, কিন্তু সোমালিয়া বা অন্যান্য অঞ্চলে অত উন্নত শিল্পচর্চাও ছিল না আর কাঠ-মাটির ভাস্কর্য এতদিন টেঁকার কথাও না। তাই মিশরেই নারী-খতনা ও পুরুষ খতনা দুইরকমেরই প্রাচীনতম ইতিহাস পাওয়া যায়।

সেই বিখ্যাত গ্রীক পর্যটক হেরোডোটাসও মিশর ঘুরে দেখে লিখে গেছেন তাদের মধ্যে এই প্রচলনের কথা। শুধু মিশরই নয়, সারা সাব-সাহারান আফ্রিকা, মানে ইথিওপিয়া ইত্যাদি, এবং মধ্যপ্রাচ্য, যেমন সিরিয়া, ইজরায়েল এসব জায়গাতেও এর প্রচলন ছিল। তাদের ওল্ড টেস্টামেন্ট মানে হিব্রু বাইবেলের গল্পেও তাই পাওয়া যায় ঈশ্বরের আব্রাহামকে এ বিষয়ে নির্দেশ দেওয়ার কথা। তবে এদের মধ্যে এমন অনেক জাতি ছিল যারা ছেলেদের ক্ষেত্রে করলেও মেয়েদের ক্ষেত্রে খতনা প্রথা অনুসরণ করত না।

কিন্তু ইউরোপীয় জাতিগুলো, যেমন গ্রীক, রোমান এরা খতনা পালন করত না, আর মিশরীয়দের এই অভ্যাস তারা ভালো চোখেও দেখত না। এই প্রথার উৎপত্তি আফ্রিকা-মধ্যপ্রাচ্যের ওই অঞ্চলে ঠিক কোন সময় হয়েছে ধারণা না করা গেলেও, এসব থেকে এটুকু বুঝতে হবে যে তা মোটামুটি হিউম্যান মাইগ্রেশন-এর তুলনায় সাম্প্রতিক আবিষ্কার, কারণ ইউরোপ মধ্যএশিয়া ইত্যাদি অন্য কোথাওই এই প্রথা দেখা যায় না। তাই তৎসম বাংলায় এর কোনো প্রতিশব্দ নেই।

এই প্রথা শুরু করার পেছনে কারণ কি ছিল, তা নিয়ে গবেষকদের নানা মত, কেউ বলেন ‘পরিষ্কার’ হওয়ার চিন্তা থেকে, কেউ বলেন ধর্মভিত্তিক ‘স্যাক্রিফাইস থেকে’, অন্যেরা বলেন বয়ঃপ্রাপ্তির প্রতীক বা ‘কামিং-অফ-এজ রিচুয়াল’ থেকে, অথবা ‘যৌন সংযম’ এর উদ্দেশ্য থেকে।

****************

তা এই লোকাচার আদি জনগোষ্ঠীগুলো থেকে ছড়াল কেমন করে? যা প্রায়শই হয়ে থাকে, সংগঠিত ধর্মের পিঠে চড়ে। পৃথিবীর বড় ধর্মগুলোর মধ্যে ইহুদী ধর্মে এই লোকাচার প্রায় বাধ্যতামূলক হয়ে পড়েছে, তবে তা পুরুষের খতনা, নারী-খতনা অল্প দুয়েকটা গোষ্ঠী ছাড়া কেউ পালন করে না। এবং নারী-খতনার মত পুরুষের খতনা করাও পাশ্চাত্যে বেশ সমালোচিত। নারীদের মত এত জটিল কাটাছেঁড়া না হলেও, রক্তপাত ও সংক্রমণ ইত্যাদি মিলিয়ে নানারকম রোগের সম্ভাবনা ওই শিশুদের থেকেই যায়। তার উপর, বিশেষ করে ইহুদীরা যেমন সদ্যোজাত বাচ্চাদের উপরে এটা করে, একটা বাচ্চার ক্ষেত্রে এটা একটা গভীর শক ও ট্রমা’র কারণ হয়ে যায় – ওই বয়সে সে কথা বলে কষ্ট প্রকাশ করতে পারছে না বলেই যে সে কষ্ট পাচ্ছে না এমন ভাবার তো কোনো কারণ নেই। গোঁড়া ইহুদী র‍্যাবাই-রা আবার দাঁত দিয়ে কামড়ে ওই চামড়াটা ছেঁড়েন, ফলে লালাবাহিত রোগের সম্ভাবনাও থাকে, এমনকি তার ফলে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। তা ছাড়া, যার শরীর তার মতামত-বিবেচনা ছাড়াই একটা অপ্রয়োজনীয় অকারণ কাটাছেঁড়া তার উপর চাপিয়ে দেওয়ার অধিকার তার জন্মদাতা বলেই কেউ পেয়ে যায় কি?

(পুরুষ)খতনা-পন্থীরা অনেক কষ্টেসৃষ্টে একটা তথ্য নিজেদের পক্ষে পেয়েছেন – যেসব আফ্রিকান অঞ্চলে এইচআইভি সংক্রমণের হার খুব বেশি, সেখানে খৎনা করা থাকলে নারী থেকে পুরুষের সংক্রমণের হার কিছু কমে। তাই বিশ্বস্বাস্থ্যসংস্থা সেই অঞ্চলে এই প্রথার পরামর্শ দেয়। তবে দুটো জিনিস খেয়াল রাখতে হবে – কেবল যেসব অঞ্চলে এইচআইভি সংক্রমণের হার খুব বেশি সেসব অঞ্চলে, এবং কেবল নারী থেকে পুরুষের সংক্রমণের ক্ষেত্রে। কিন্তু বুঝি না, খৎনাকৃত ধার্মিক পুরুষদের তো ধর্মনিষ্ঠ সদাচারী হওয়ার কথা, তাদের ওইরকম বহুগামী নারী বা বারবনিতাদের দিকে যাওয়ার দরকারটাই বা কী?

****************

আর অন্য যে ধর্মে এই লোকাচার সুপ্রচলিত, তা হল ইসলাম ধর্ম। কোরানে সরাসরি এ সম্পর্কে কিছু বলা নেই, তবে নানা হাদিস থেকে জানা যায় যে ওই সময়ে আরবে ও অন্যত্র এই প্রথা প্রচলিত ছিল, এবং মুহম্মদও তা বজায় রাখেন, উভয় পুরুষ ও নারী খতনাই। তবে নারী-খতনার প্রকোপ সম্ভবত কমই ছিল, এবং সে সম্পর্কে উল্লেখও তুলনায় অনেক কম। তবে শরিয়া আইনেও নারী-খতনা সম্পর্কে জোর দেওয়া আছে

আফ্রিকার ওইসব অঞ্চলে তাই যেসব জনস্বাস্থ্যকর্মীরা নারী-খতনা বন্ধ করতে প্রচার চালান, তাঁরা এর ফলে সমস্যায় থাকেন, কারণ তাঁরা ব্যাপারটাকে ধর্মবিরোধী কিছু হিসাবে দেখাতে চান না। আর ধর্মবিরোধী হিসাবে পরিচিত হয়ে গেলে আরো বড় সমস্যা এই যে, মহিলারা যদিওবা বোঝেন এ বিষয়ে, সেইসব শস্যক্ষেত্রের মালিক যাঁরা সেই স্বামীরা কিছুতেই রাজি হবেন না। সে কাজে তাঁরা মাঝেমাঝে অল্প কিছু কোরানপন্থী গোষ্ঠীর মতবাদের সাহায্য নেন, কারণ তাদের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, যেহেতু কোরানে বলা হয়েছে ঈশ্বর মানুষকে নিখুঁত করে সৃষ্টি করেছেন, তাই মানবদেহের উপর এমনতরো কাটাছেঁড়া করাটা ধর্মপন্থী নয় বরং গুনাহ।

ধর্মে এই প্রথার অবস্থান নিয়ে ইসলামের মধ্যে নানা বিতর্ক থাকলেও, লোকাচার হিসাবে তা বহুব্যাপী। মিশরে একসময় এই প্রথা নিষিদ্ধ ঘোষিত হলেও, বর্তমানে ইসলামিক ব্রাদারহুড ক্ষমতায় এসে তা তুলে দেওয়ার চেষ্টা করছে। এর মাধ্যমেই এই প্রথা দূর ইন্দোনেশিয়াতেও ছড়িয়ে পড়েছে, তবে সেখানে এই প্রক্রিয়ার ভয়াবহতা কম।

ব্রিটেনে আগত মধ্যপ্রাচ্যের অভিবাসীদের মধ্যে এই প্রথার চল আছে, এবং অনেকে আবার দেশে উড়ে গিয়ে মেয়েদের খৎনা করিয়ে নিয়ে আসেন। যদিও সে দেশে আইন আছে একে নিষিদ্ধ করে, আন্দাজ করা হয় বছরে প্রায় পাঁচশ মেয়ে এর মুখে পড়ে, এবং অদ্ভুত এক মাল্টিকালচারালিজম-মতবাদের প্রভাবে সরকার এ নিয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয় না। ওদিকে ফ্রান্সে কিন্তু নিয়মিত সরকার এ নিয়ে তদারক চালায়। জার্মানিতে আবার এক কোর্ট রায় দিয়েছে যে মুসলিম বা ইহুদীরা যে বাচ্চা ছেলেদের খতনা করায় তাও অহেতুক শারীরিক ক্ষতি বিবেচনায় বেআইনি, যদিও জার্মান পার্লামেন্ট সেই রায় বাস্তবায়িত করে নি

****************

সংক্ষেপে বলা যায়, নরবলির মতই খতনাও এক প্রাচীন প্রথা, যা সময়ের সাথে সাথে বিভিন্ন ধর্মের অংশ হয়ে পড়েছে। মূলত আফ্রিকায় প্রচলিত এই নারী-খতনা খুবই ভয়াবহ এবং ক্ষতিকর, তবে পুরুষ-খতনাও অপ্রয়োজনীয় এবং ক্ষতিকর। নানা কর্মীগোষ্ঠী এই নিয়ে আফ্রিকায় ও অন্যত্র কাজ করছে, তাদের সাফল্য কামনা করি, এবং ব্রিটেন ইত্যাদি সরকারের চৈতন্য।


মন্তব্য

আশরাফুল কবীর এর ছবি

# নরবলির মতই খতনাও এক প্রাচীন প্রথা, যা সময়ের সাথে সাথে বিভিন্ন ধর্মের অংশ হয়ে পড়েছে। মূলত আফ্রিকায় প্রচলিত এই নারী-খতনা খুবই ভয়াবহ এবং ক্ষতিকর, তবে পুরুষ-খতনাও অপ্রয়োজনীয় এবং ক্ষতিকর।

#প্রিয় কৌস্তভদা, অনেক ভালো লেগেছে আপনার লিখা তবে শেষে যে কনক্লুশন টেনেছেন তাতে ভিন্নমত পোষন করছি।

#ভাল থাকুন সবসময়।

কৌস্তুভ এর ছবি

ভিন্নমত পোষণ করছেন তা বেশ, একটা উপকার করুন, দয়া করে একটু বিশদে বলুন -

ঠিক কোন অংশটায় ভিন্নমত,
ভিন্ন মতটা কী,
আর ওই বিষয়ে ভিন্নমত হবার কারণ কী।

তাহলে হয়তবা আলোচনার মধ্যে দিয়ে আমিও কিছু শিখতে পারব।

অরফিয়াস এর ছবি

চলুক

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

এইসব তর্কে যুক্তি আসে না, গোঁড়ামি আসে। যুক্তি আসুক সেই আশা রাখি।

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

আশরাফুল কবীর এর ছবি

তাহলে হয়তবা আলোচনার মধ্যে দিয়ে আমিও কিছু শিখতে পারব।

#এই সেরেছে, কি কারনে যে কইলাম ভিন্নমত, আহা বড্ডো মুশকিল। ভাল থাকুন কৌস্তভদা, আরেকদিন কমুনে। বাঘের বাচ্চা

অরফিয়াস এর ছবি

#এই সেরেছে, কি কারনে যে কইলাম ভিন্নমত, আহা বড্ডো মুশকিল। ভাল থাকুন কৌস্তভদা, আরেকদিন কমুনে।

এই কথার মাধ্যমে কি বোঝাতে চাইলেন একটু বলবেন? এখানে আপনার ভিন্নমত সম্পর্কে কেউ কি কিছু বলেছে? নাকি আপনার মতামতটি জানতে চাওয়া হয়েছে। আর এই জানতে চাওয়াটা আপনার মুশকিল মনে হচ্ছে কেন? আপনি একটি বিষয়ে একমত নাই হতে পারেন সেটা আপনি অবশ্যই বলবেন। কিন্তু যখন সে সম্পর্কে আপনার যুক্তি জানতে চাওয়া হবে তখন আপনি এধরনের তীর্যক উক্তি দিয়ে টাটাবাইবাই করে চলে যাবেন আরেকদিন কোন অলস দুপুরে আলাপের প্রত্যাশা শুনিয়ে সেটা তো ঠিক না। এখানে এই বিষয়ে কথা হচ্ছে এখানেই বলুন, আমরাও শুনি।

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

আশরাফুল কবীর এর ছবি

আহা বড্ডো মুশকিল।

#প্রিয় অরফিয়াসদা, আমার মন্তব্যের এ অংশটুকু ছিল ফান পার্ট আর আপনি সিরিয়াসলী নিয়েছেন, এটা ধরতে পারছেননা কেন, আরেকদিন বলার অর্থ হল এ মুহূর্তে পুরুষ-খতনাও অপ্রয়োজনীয় এবং ক্ষতিকর এটার পক্ষে ও বিপক্ষে যুক্তি দাড় করানোর মতো প্রয়োজনীয় উপাত্ত বা যুক্তি উপস্থিত ছিলনা, তাই বলেছি আরেকদিন কমুনে।

কিন্তু যখন সে সম্পর্কে আপনার যুক্তি জানতে চাওয়া হবে তখন আপনি এধরনের তীর্যক উক্তি দিয়ে টাটাবাইবাই করে চলে যাবেন আরেকদিন কোন অলস দুপুরে আলাপের প্রত্যাশা শুনিয়ে সেটা তো ঠিক না। এখানে এই বিষয়ে কথা হচ্ছে এখানেই বলুন, আমরাও শুনি।

#একটি ভাল পোষ্টের রেশ একদিনেই শেষ হয়ে যায়না বলে আমি মনে করি, আর টাটা বাই বাই জানানোর কিছু নেই, আবারো ঘুরে ফিরেই এ পোষ্ট পড়ার জন্য আসব, এমনোত হতে পারে পরবর্তীতে বলতে পারি, হতে পারেনা? আমার মন্তব্যের মাধ্যমে আপনার ভাষায় তীর্যক উক্তি কোথায় খুঁজে পেলেন, বুঝলুমনা!

মূলত আফ্রিকায় প্রচলিত এই নারী-খতনা খুবই ভয়াবহ এবং ক্ষতিকর, তবে পুরুষ-খতনাও অপ্রয়োজনীয় এবং ক্ষতিকর।

#নারী খতনার বিভিন্ন ক্ষতিকর দিকটি লেখক মুগ্ধতার মতো করে তুলে ধরেছেন তবে পুরুষ খতনার ব্যাপারে আপত্তি তুলতে চেয়েছিলাম, শুধু ধর্মের অংশ হিসেবেই নয় বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমানিত পুরুষ খতনার উপর কয়েকটি আর্টিকেল অনেকদিন পূর্বে পড়েছিলাম যা মন্তব্য করার সময় মনে করতে পারছিলামনা বা এখনো সেই লিংক দিতে পারছিনা, মূলত এ কারনটায় তখন এ মন্তব্য করেছি। ভাল থাকুন।

অরফিয়াস এর ছবি

কি কারনে যে কইলাম ভিন্নমত

এই মন্তব্যের অংশটুকু তীর্যক লেগেছে। মনে হয়েছে আপনি বোঝাতে চাচ্ছেন এখানে আপনি ভিন্নমত পোষণ করেন বলেই সমস্যা তৈরী হয়েছে। কিন্তু ব্যাপারটা সেরকম নয়। আর এই বাক্যাংশের ঠিক পরেই যখন লিখেছেন, বড্ড মুশকিল, তখন আর সেটা ফান পার্ট মনে হয়নি।

ব্যাপারনা, আপনার যুক্তি শোনার অপেক্ষায় রইলাম, আর আপনি যে খতনার উপকারিতার কথা বললেন তা নিয়ে নিচে কথা হয়েছে এবং লেখাতেও মনে হয় কিছু লিঙ্ক দেয়া আছে।

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

কৌস্তুভ এর ছবি

এড়িয়ে গেলেন দেখে দুঃখ পেলাম, ভাল আর থাকি কী করে বলুন!

আশরাফুল কবীর এর ছবি

#এড়িয়ে যাইনি ভেবেছিলাম পরবর্তীতে কোন সময় আর্টিকেল পড়ে হাজির হবো।

পুনশ্চ: ভালোতো খাকতেই হবে।

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

বস আগাইতে পারলাম না। ভয়াবহ বর্ণনা।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

কৌস্তুভ এর ছবি

ভায়া বর্ণনাটাই ভয়াবহ হলে ঘটনাটা কেমন হয় ভাবো!

তবে ওই অনুবাদ-অংশটা বাদ দিলে অন্তত বাকিটা পড়াও দরকার মনে করি।

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

বাকিটা পড়ব অবশ্যই। কাজ থেকে বের হয়ে একটু সচলে ঢুকলাম হালকা হওয়ার জন্যে। কিন্তু পুরাই মাথা আউট হয়ে গেল।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

মৃত্যুময় ঈষৎ এর ছবি

কিছু অংশ এড়িয়ে পড়তে হলো। এমনও চর্চা হতে পারে!!! মন খারাপ

পৃথিবীটার কতদূর পথ যাবার বাকী, কতদূর!!! তাই চিন্তা করি!!!

গুরুত্বপূর্ণ পোস্টটির জন্য ধন্যবাদ দাদা।

(পুরুষ ক্ষৎনা বিষয়ে কিছু উপকারিতার কথা বলা হয়। প্রাপ্ত বয়স্কে ইহুদি বা মুসলিম না হলেও ক্ষৎনা করায়, এদিকটিতে আরেকটু আলোকপাত করবে?)

পৃথিবী নারী-ক্ষৎনামুক্ত হোক, আর অপ্রয়োজনীয় পুরুষ-ক্ষৎনামুক্ত হোক।


_____________________
Give Her Freedom!

কৌস্তুভ এর ছবি

পুরুষ-খতনার মেডিকাল সুবিধা কী হতে পারে, তাই নিয়ে বেশ কিছু স্টাডি আছে। যৌনরোগ, চর্মরোগ, এইচআইভি, প্যাপিলোমা ভাইরাস ইত্যাদি নানা রকম সম্ভাব্য রোগ নিয়ে। প্রায় কোনোটাতেই নিশ্চিতভাবে খতনা করার সুবিধা প্রতিষ্ঠা করা যায় নি। কেউ বলে কিঞ্চিত ক্ষতি হয়, কেউ বলে কিঞ্চিত লাভ। একমাত্র, উপরে যেটা নিয়ে বিশদ লিখেছি সেটাতে সুফল প্রমাণিত হয়েছে তাই বিশ্বস্বাস্থ্যসংস্থা সেটা প্রয়োগ করতে পরামর্শ দেয়। গুগল করে দেখো, অনেক আলোচনা পাবে।

ওই অংশে সংক্রমণ ইত্যাদি কিছু কারণে প্রাপ্তবয়স্কদের চিকিৎসা করে বাদ দেওয়া হয় লিঙ্গাগ্রের চামড়া, তবে সেটা মোটামুটি রেয়ার।

এর বাইরে প্রাপ্তবয়স্কদের খতনা কোনো অবস্থায় করানো হয় কিনা, সে বিষয়ে আমার তেমন জানা নেই, তোমার কাছে কিছু তথ্য থাকলে বল, পড়ে দেখি।

অরফিয়াস এর ছবি

আমার নিকট আত্মীয় একজনের কিশোর বয়সে খতনা করানো হয়েছিল মেডিকেল ট্রিটমেন্ট হিসেবে। যতদুর মনে পড়ে তার প্রস্রাবের পথে সমস্যা হচ্ছিলো বা এইধরনের কিছু। এধরনের কারণে মেনে নেয়া সম্ভব যেহেতু পুরোটা বিশেষজ্ঞদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। তবে তারপরেও যথেষ্ঠ কষ্ট হয় পরবর্তী বেশ কিছুদিন।

এছাড়া পড়েছিলাম যে, খতনার পরে পুং যৌনাঙ্গের ত্বক ধীরে ধীরে পরিবেশের সাথে মানিয়ে নেয়া শুরু করে এবং দেহের বাইরের ত্বকের মতো রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতার অধিকারী হয়ে উঠে। তবে তা ফাঙ্গাল ইনফেকশন কিংবা এধরনের পরজীবি সংক্রামক রোগের জন্য। যৌনরোগের প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন হয় কিনা সেটা নিয়ে এখনও আমার সেরকম ধারণা নেই।

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

অনুবাদ খুবই ভালো লেগেছে বিশেষ করে আপনি নারী-খতনার অমানবিক দিকটি তুলে ধরেছেন। ইদানিংকালে সোমালিয়া থেকেও নারী খতনা উঠে যাচ্ছে। আশা করা যায় এই নির্মম এবং বর্বর প্রথা খুব বেশিদিন বহাল থাকবে না।

ওয়ারিস দিরির বক্তব্য আমার কাছে ১০০% সত্যি মনে হচ্ছে না। এমন হতে পারে সে বিভিন্ন কারনে সোমালিয়ার প্রতি ক্ষুব্ধ এবং হয়তো তার লাইফস্টাইলের কারনে আল-শাবাবের মৃত্যুদন্ডাদেশ পেয়ে গেছে। ক্ষোভের বহিপ্রকাশ ঘটাতে গিয়ে ঘটনাকে ইনফ্লেটেড করে ফেলেছে।

সোমালিয়ায় সিংহ নেই, জিরাফ নেই এবং অতীতে কোনওকালে ছিলো এমনও কোনও কাহিনী বাজারে নেই। তবে বিরল কিছু সিংহ পাওয়া যায় আধুনা স্বাধীন সোমালিল্যান্ডের বারবেরা এলাকায় যেটা গ্যালকাইও থেকে হাজার মাইল দূরে। ওয়ারিস সে শহরের মানুষ আমি নিজেও সেই শহরের বাসিন্দা ছিলাম। বিশ্বাস করবেন কিনা জানিনা, গোটা পুন্টল্যান্ডে একটা কুকুর নেই।

১৩ বছর বয়সে বুড়োর সাথে বিয়ে ঠিক হওয়া, অত্যন্ত অমানবিক এবং এটা সোমালিয়ায় ঘটে থাকে। কিন্তু সেই কারনে পালিয়ে বিলেতে চলে যাওয়ার বর্ননা যারা সোমালিয়া সম্পর্কে সামান্য জ্ঞ্যান রাখে তাদের কাছে হাস্যকর একটা গল্প। তবে সোমালিয়া থেকে একটি মেয়ে পশ্চিমে গিয়ে নিজের গুনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, এটা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। সোমালি পরিচয়ের কারনে, যুদ্ধবিদ্ধস্থ প্রেক্ষাপটের কারনে এরা অল্পেই পাদপ্রদীপের আলোয় চলে আসে। যেমনটি আমরা দেখেছি কন্ঠশিল্পী কেইনানের ক্ষেত্রে।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

কৌস্তুভ এর ছবি

হাহাহাহা, এই মন্তব্যটার জন্যই আপনাকে উত্তম জাঝা! খতনার প্রসঙ্গটা একটা আলাদা পরিচ্ছেদ, আমি প্রথমে ভেবেছিলাম ওখান থেকেই শুরু করব, তারপর ভাবলাম 'এক যে ছিল দেশ' টাইপের একটা ভূমিকা দিয়ে শুরু করাই ভাল। এখন দেখছি যে সেটাই ভাল হয়েছে, কারণ আপনি এই পয়েন্টটা তুলে ধরেছেন।

'সেই কারনে পালিয়ে বিলেতে চলে যাওয়ার বর্ননা'... উম, লেখাটায় খানিক ডিটেল আছে, পালিয়ে আত্মীয়র বাড়িতে মোগাদিশুতে চলে যাওয়া, কাজের মেয়ে হিসেবে লন্ডন যাওয়ার কাগজ জোগাড় করা, ইত্যাদি। তবে আপনিই ভালো বলতে পারবেন।

তবে খতনার বর্ণনা সম্পর্কে তার লেখায় খুব ভুল নেই মনে হয়, তাই না?

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

নারী খতনার ভয়াবহতা নিয়ে কথা নেই। তবে যা বললাম, সোমালিয়ায় বর্তমানে এর হার কমতে শুরু করেছে। সেখানকার নারী অধিকার নিয়ে যারা কাজ করছে তারা এটা বিলুপ্তির দাবীতে খুবই সক্রিয়।

হাঁ, এটা খুবই দুরুহ কিন্তু গোটা ঘটনা না জানলে বোঝা যায় না। সোমালিয়ার ক্লানভিত্তিক সমাজে এল্ডারদের সহায়তা ছাড়া প্রায় কোনোকিছুই সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে মেয়েটি যে জীবনের ঝুঁকি নিয়েছিলো তা নিশ্চিত।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

মিয়া ভাই, কিছু জিনিস পকেটে রাইখা দিতে হয়। পরে সতী উদ্ধারের দোহাই দিয়া সাম্রাজ্য কায়েম করতে পারবেন। 'সিভিলাইজও' করতে পারলেন, বাণিজ্যও হইল।

সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ: সতীদাহ ঘৃণ্য সন্দেহ নাই।


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

সতী উদ্ধার বা সাম্রাজ্য কায়েমের ইচ্ছা নাই, এমনিতেই নানান জ্বালায় আছি। পকেটের জিনিস পকেটেও আর ঢুকাইতে পারতেছি না কারন আপনি পকেট সিল কইরা দিছেন।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

ভাববাচ্যের ঠেস গায়ে নিতে নাই হাসি


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

হো হো হো চলুক

অন্য কেউ হলে কি করতাম জানিনা কিন্তুক এখানে ঠেস যে অনিন্দ্য দিলো .......................

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

ভয়াবহ!

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

কৌস্তুভ এর ছবি

মন খারাপ

অরফিয়াস এর ছবি

বিশ্বে নারী নির্যাতনের উপরে একটা লেখা শুরু করেছিলাম, তার আগে থেকে বেশ কিছু পড়াশোনা করেছি। এরকমই ফিমেইল জেনেটাইল মিউটিলেশন নিয়ে পড়েছিলাম, তখন বেশ কিছু পরিসংখ্যান এবং অঞ্চলভিত্তিক মোটামুটি একটা চিত্র হাতে আসে এবং ধারণা তৈরী হয়। বিশেষ করে কঙ্গোতে এর পরিসংখ্যান ভয়াবহ, এছাড়াও সোমালিয়া, সুদান এবং এর আশেপাশের অঞ্চলগুলোতে ভয়ঙ্করভাবে এই প্রথা মেনে চলা হয়। এতে নারী শিশু মৃত্যু হারও অনেক।

ফিমেইল জেনেটাইল মিউটিলেশন একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিকভাবে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া জরুরিভিত্তিতে প্রয়োজন। কিন্তু বিভিন্ন গোষ্ঠির ধর্মানুভুতিতে আঘাত লাগার ভয়ে শক্তিশালী দেশের সরকারগুলো কৌশলে রাজনৈতিক পন্থা হিসেবে এটি এড়িয়ে যাচ্ছে যেহেতু এটা থেকে তাদের সরাসরি কোনো ক্ষতি নেই। আর তাদের দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণও এই প্রথাগুলোর সাথে তেমনভাবে সম্পৃক্ত নয়। শুধুমাত্র ধর্মের ভিত্তি এবং কুসংস্কার এর উপরেই টিকে আছে এই অমানবিক প্রথাগুলো। ভাবতে অবাক লাগে একজন সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ একজন শিশুর শরীরে এধরনের নির্যাতনের অনুমতি কি করে দেয়!!

এ প্রসঙ্গে ক্রিস্টোফার হিচেনস এর সাথে আমি একমত। তিনি ইহুদি একজন স্কলার সাথে বিতর্কের সময় এই প্রসঙ্গে দারুন একটি উত্তর দেন। ইহুদি স্কলার যখন তাকে প্রশ্ন করেন যে, "আপনি কি জানেন চিকিৎসাশাস্ত্র অনুযায়ী এটি সঠিকভাবে করা হলে দেহের জন্য উপকারী?" তখন ক্রিস্টোফার উত্তর দেন, "তাহলে সেই শিশুর শরীরের জন্য কি উপকারী আর উপকারী নয় সেটা তাকে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরে সিদ্ধান্ত নিতে দেয়া হোক। তার শরীর কাঁটাছেড়া করার অধিকার অন্যের উপরে কেন দেয়া হবে। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরে কেউ যদি এই পদ্ধতির ভেতর দিয়ে যেতে চায় তাহলে অন্যের কিছু বলার থাকেনা কারণ সেটা তার সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত বিষয়ে পড়ে।"

পুরুষ খতনা পুরুষের যৌনাঙ্গের ত্বকের জন্য কিছুটা উপকারী হলেও নারী খতনা কোনভাবেই উপকারী নয়। বরং এটি ক্ষতিকর। তাই ধর্মীয় প্রথার ভিত্তিতে পুরুষদের খতনার প্রচলন থাকলেও নারীদের ক্ষেত্রে এই অমানবিক প্রথার কোনো সমর্থন যৌক্তিক নয়।

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

কৌস্তুভ এর ছবি

তাহলে FGM নিয়ে একটা লেখা দাও না, আমি তো পরিসংখ্যান বা ওইরকম ডিটেলের দিকে যাই নি।

"পুরুষ খতনা পুরুষের যৌনাঙ্গের ত্বকের জন্য কিছুটা উপকারী" এটা নিয়েও অনেক বিতর্ক আছে, পড়েছ নিশ্চয়ই। কিছু বিশেষ অঞ্চল ছাড়া একজন গড়পড়তা পুরুষের পক্ষে প্রমাণিত কোনো উপকার আছে এর, এমন নিশ্চিতভাবে বলা যায় না কিন্তু।

অরফিয়াস এর ছবি

হ্যাঁ, সেটা জানি। দেখি আমি আসলে লেখা শুরু করেছিলাম, কিন্তু তথ্যের ভয়াবহতার কারণে আসলে মন খারাপ হয়ে গিয়েছিলো তাই এই বিষয়গুলোতে লিখতে এখন আর ইচ্ছে করেনা।

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

তানিম এহসান এর ছবি

তুমি চাইলে তোমাকে আরও কিছু ডকুমেন্ট পাঠাবো আমি। তুমি যেরকম পরিশ্রম করে লিখো তাতে ডকুমেন্টগুলো পাঠাতে আমার খুব ভালো লাগবে।

কাজি মামুন   এর ছবি

প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরে কেউ যদি এই পদ্ধতির ভেতর দিয়ে যেতে চায় তাহলে অন্যের কিছু বলার থাকেনা কারণ সেটা তার সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত বিষয়ে পড়ে।"

হিচেন্সের এই কথায় আমার আপত্তি আছে, প্রাপ্তবয়স্ক কেউ যদি তার শরীরের এক বিষফোড়া বয়ে বেড়াতে চায় (ধরা যাক, কোন ধর্মিয় নির্দেশ মেনে ও মৃত্যুপরবর্তী জীবনে পুরুষ্কারের আশায়), তাহলে একে ব্যক্তি-স্বাধীনতা জ্ঞান করে সমাজের অন্যান্যদের মেনে নেয়া উচিত?

অরফিয়াস এর ছবি

কেউ যদি নিজের জন্য অন্যদের ক্ষতি না করে কিছু শারীরিক ব্যাপার বহন করতে চায় তাহলে আইনত তাকে সমাজ কিছু বলতে পারেনা। এই দায়বদ্ধতা সমাজের আছে। ব্যক্তি স্বাধীনতার উপরে হস্তক্ষেপ তখনই হয় যখন সেটা অন্যের সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু আমাদের সমাজে কোনো কারণ ছাড়াও ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা হয় সেটা অন্য বিষয়। তর্কের খাতিরে তর্ক হতে পারে কিন্তু ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা ততক্ষণ সম্ভব নয় যতক্ষণ সেটা অবজেকশনেবল নয়।

আর আপনার যুক্তিটিও অনেক ভাবেই খন্ডন করা সম্ভব। কেউ নিজের শরীরে বিষফোঁড়া বহন করছে কিনা সেটা ততক্ষণ পর্যন্ত জানা সম্ভব নয় যতক্ষণ পর্যন্ত না সে অন্যকে তার সম্পর্কে জানাচ্ছে। তার এই শারীরিক সমস্যা যদি তিনি অন্যের নজরে না আনেন এবং যদি সংক্রামক না হয় তাহলে আপনি কিছুই বলতে পারেননা। একইভাবে অনেক রোগী অপারেশন করাতে চাননা ভয় থেকে কিন্তু তাকে জোর করে আপনি অপারেশন করাতে পারেননা যতক্ষণ পর্যন্ত তার সম্মতি পাওয়া না যায়।

খতনা এর ব্যাপারটা অন্যরকম। এখানে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ আছে, আছে ব্যক্তিগত স্বাধীনতার প্রশ্ন। শিশুকালে কারো উপর এটা চাপিয়ে দেয়া তার স্বাধীনতার অন্তরায় কিন্তু আমাদের সমাজে সেটা ধর্মের জোরে করা হয়ে থাকে। কিন্তু যদি সেটা না করা হয় এবং প্রাপ্তবয়স্ক মানুষকে নিজের ব্যাপারে এটা সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে দেয়া হয় তাহলে তা সম্পূর্ণ নির্ভর করে ব্যক্তি মতামত এর উপরে। এতে যেহেতু প্রতক্ষ্যভাবে অন্য কারো ক্ষতি হয়না তাতে সমাজ অবজেকশন দিতে পারেনা যতক্ষণ পর্যন্ত না এটি আইনত নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু দেখুন জার্মানির আদালত কিন্তু তাও সেটা নিষিদ্ধ করতে সক্ষম হয়নি।

তর্কের খাতিরে তর্ক করে তো লাভ নেই। বাস্তবিক প্রয়োগও দেখতে হবে। হিচেনস তো আর এই ব্যাপারটিকে সমর্থন করতে যেয়ে কথাটি বলেননি। তিনি এর ঘোর বিরোধী ছিলেন কিন্তু যখন কেউ ব্যক্তি স্বাধীনতার প্রসঙ্গ নিয়ে আসে তখন তো আর তাকে অন্যের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ব্যাখ্যা করার সুযোগ নেই।

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

কেউ যদি নিজের জন্য অন্যদের ক্ষতি না করে কিছু শারীরিক ব্যাপার বহন করতে চায় তাহলে আইনত তাকে সমাজ কিছু বলতে পারেনা। এই দায়বদ্ধতা সমাজের আছে। ব্যক্তি স্বাধীনতার উপরে হস্তক্ষেপ তখনই হয় যখন সেটা অন্যের সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

আমারও ভাবনাটা একই লাইনের।

তবে "আইনত" বলতে কোন দেশের আইনের কথা বলছেন, সেটাও কথা। সোশ্যালিস্ট রিজাইমের চোখে নিজের শরীর, নিজের সিদ্ধান্ত, প্রাইভেসি, অপারেশনের অনুমতি এইসবকে অনেক সময় ব্যক্তিবাদের এলিমেন্ট হিসাবে দেখে অস্বীকার করা হয়। যেমন, কিউবায় হেল্থ ট্রিটমেন্ট রিফিউজ করা যায় না। অন্য কারো ক্ষতি না হলেও জোর করে ট্রিটমেন্ট করা ঘটে। যেমন, হাত পা জাতীয় অঙ্গ কর্তন। সেখানে ডাক্তার-রোগীর প্রাইভেসির ব্যাপারও নাই। ডাক্তারি ম্যালপ্র্যাকটিসের বিপক্ষে কিছু বলারও সুযোগ নাই।

আমার কথা হলো একটা বিষয়ের সমালোচনা আপনি করতেই পারেন। আমিও নিশ্চয়ই পারি। কিন্তু তার মানে কিন্তু এই না যে এর জন্যে সমালোচিত জিনিসটার বিপক্ষে নিজের পক্ষের শক্তিশালী রাষ্ট্রকে শক্তি প্রয়োগের জন্যে ডাকাডাকি করা হয়েছে বা করতে হবে। নিজের পক্ষের রাষ্ট্রের শক্তিধারীরাও কোনো সাধু না। ওরা অন্যকিছুর খতনা করে রাখবে। তবে সেটা অনুভব করা নির্ভর করে কোল্যাটারাল ড্যামেজ সার্ভাইভ করার কপালের উপর।

অরফিয়াস এর ছবি

চলুক

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

কাজি মামুন   এর ছবি

ব্যক্তি স্বাধীনতার উপরে হস্তক্ষেপ তখনই হয় যখন সেটা অন্যের সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

'অন্যের সমস্যা' আপনি কিভাবে সংজ্ঞায়িত করবেন, তার উপর অনেক কিছু নির্ভর করে! ধরুন, আপনার এক প্রাপ্তবয়স্ক বন্ধু কোন একটি নদীকে পবিত্র মনে করে তার দূষিত পানি করতে চাইছে, আপনি ব্যাপারটি জানার পর দুটো বিকল্প সিদ্ধান্তে আসতে পারেন; (১) আহাম্মকটা যদি অসুখ-বিসুখ বাঁধায়, তাতে আমার কি? আমি তো আর ওকে ঐ দূষিত পানি পান করতে বলিনি। আর আমি ওকে বাঁধা দিতে যাবই বা কেন, ওতো আমার কোন ক্ষতি করছে না, (২) না, ওকে যে করেই হোক বিরত রাখতে হবে, ও আমার বন্ধু শুধু সে কারণেই নয়, বরং ওর এই কুসংস্কার অন্যদের ভিতর ছড়িয়ে সমাজের ক্ষতি সাধন করবে। তাই ওকে ফেরাতেই হবে, জোর করে হলেও।
এখন আপনার কাছে আমার জিজ্ঞাস্য, আপনি কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন?

তার এই শারীরিক সমস্যা যদি তিনি অন্যের নজরে না আনেন এবং যদি সংক্রামক না হয় তাহলে আপনি কিছুই বলতে পারেননা।

তার মানে, মেনে নিচ্ছেন যে, যদি তিনি অন্যের নজরে আনেন এবং সংক্রামক হয়, তাহলে আমরা কিছু বলতে পারি বা বাঁধা দিতে পারি তার ব্যক্তিস্বাধীনতায়?

হিচেনস তো আর এই ব্যাপারটিকে সমর্থন করতে যেয়ে কথাটি বলেননি।

হিচেন্স যে ব্যাপারটিতে সমর্থন করতে যেয়ে বলেননি, তা বোঝা মনে হয় কঠিন নয়। তবে হিচেন্সের উদ্ধৃতির একটি অংশ মেনে নিলে যে অন্য অংশও মেনে নিতে হবে নির্দ্বিধায়, তার পেছনে কোন যুক্তি কাজ করছে?

তর্কের খাতিরে তর্ক করে তো লাভ নেই।

জানার জন্য তর্ক করছি। মনের ভিতর যে সব প্রশ্নের উদয় হয়েছে, তাই করেছি!

অরফিয়াস এর ছবি

আপনার প্রশ্নের উত্তর নিচে কৌস্তভদা দিয়ে দিয়েছেন।

আর দূষিত পানি পান করা নিয়ে যুক্তি দিলেন তো, কোলকাতায় দক্ষিণেশ্বর যদি কোনো দিন যান তাহলে দেখবেন, দূষিত গঙ্গার পানিতে স্নান এবং নানা পূজার কার্যাদি সম্পন্ন করছে অসংখ্য লোক। তাদের মাঝে যে দু একজন চিকিৎসক এবং বিশেষজ্ঞ লোক নেই তা কিন্তু নয় এমনকি গঙ্গার পানি যে দূষিত তা অনেক আগেই ঘোষণা করে দেয়া হয়েছে এমনকি সেটা চোখে দেখলেই বোঝা সম্ভব। কিন্তু আপনি কিংবা আমি কি পারবো এই লোকেদের সেখান থেকে সরিয়ে দিতে কিংবা পানি ব্যবহার না করতে দিতে? না পারবোনা। এখানে যুক্তি চলেনা। আর আপনি যুক্তি দিতে গেলে উল্টো ব্যক্তি স্বাধীনতা হস্তক্ষেপ এর কারণে কপালে প্যাঁদানি জুটতে পারে কিছু ফ্রিতে।

কেউ যদি জোর করে আপনাকে সে পানি পান করাতে আসে তাহলে আপনি প্রতিবাদ করতে পারেন এমনকি আইনত সাহায্য দাবি করতে পারেন কিন্তু এর আগে নয়।

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

কৌস্তুভ এর ছবি

হিচেন্সের এই কথায় আমার আপত্তি আছে, প্রাপ্তবয়স্ক কেউ যদি তার শরীরের এক বিষফোড়া বয়ে বেড়াতে চায় (ধরা যাক, কোন ধর্মিয় নির্দেশ মেনে ও মৃত্যুপরবর্তী জীবনে পুরুষ্কারের আশায়), তাহলে একে ব্যক্তি-স্বাধীনতা জ্ঞান করে সমাজের অন্যান্যদের মেনে নেয়া উচিত?

ধরেন, আমি এই বয়সে নিজের খতনা করাতে চাই, প্রাপ্তবয়স্ক হিসাবে সজ্ঞানে।

সেটাতে টুকটাক সংক্রমণ জাতীয় সমস্যা যদি কিছু হয়ও, সেটা একা আমার নিজের হবে, আমার এই সিদ্ধান্তে অন্য কারো ক্ষতি হচ্ছে না।

তাহলে আমার এই ইচ্ছায় অন্য কেউ বা সরকার তো বাধা দিতে পারে না।

যেহেতু এটা আমি ধর্মীয় কারণের বশবর্তী হয়ে অকারণে করছি, আপনি আমাকে বোঝাবার চেষ্টা করতেই পারেন। কিন্তু সরাসরি বাধা দিতে পারেন না।

এর সঙ্গে তুলনা করা যায়, আমার বোকার মত কোনো জ্যোতিষীর কাছে ভাগ্যগণনা করতে যাওয়ার। সেটাতেও যেহেতু অন্য কারো ক্ষতি হচ্ছে না, আপনি আমাকে বাধা দিতে পারেন না। এটা অবৈজ্ঞানিক, অহেতুক গচ্চা দিচ্ছি, এটা বোঝাতে পারেন, সেই অবধিই।

কিন্তু ওই জ্যোতিষী একজন ফ্রড, সে মানুষকে ঠকিয়ে টাকা হাসিল করছে, অতএব মিথ্যার জালে বোকা বানিয়ে তাদের ক্ষতি করার জন্য তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা আইনসঙ্গত।

সাইদ এর ছবি

পুরুষ খৎনার প্রয়োজনীয়তা অপ্রয়োজনীয়তা নিয়ে আরো একটু বিশদ লিখার দরকার ছিল। উপসংহারটা একটু তাড়াতাড়ি হয়ে গেল মনে হয়।
ধন্যবাদ ভাল থাকবেন

কৌস্তুভ এর ছবি

দেখুন, এই প্রথাগুলোর ক্ষতি/অপ্রয়োজনীয়তা তো লেখাটার মূল বিষয় হিসেবে ধরিনি, অনুবাদটা বাদ দিলে প্রথাগুলোর মেমেটিক হিস্ট্রি-ই লক্ষ্য ছিল। তবে সেই আলোচনাটা দরকারি তা অস্বীকার করি না। আপনি নিজে গুগল করেও কিছু নেড়েচেড়ে দেখতে পারেন।

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

মারাত্মক লেখা। এই নারীর জীবনীর উপর ডেজার্ট ফ্লাওয়ার সিনেমাটা ভালই বানিয়েছে। দেখতে পারেন।

শিক্ষিত মানুষ যখন কেবল বিশ্বাসে অন্ধ বলে কুযুক্তির খড়কুটো জোগাড় করে প্রাণপণে বর্বরতা টিকিয়ে রাখতে চায় তখন খুব আসহায় লাগে!

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

কৌস্তুভ এর ছবি

সিনেমাটার কথা শুনেছি, দেখা হয়নি। তা রাতঃদা জীবনীতেই অতিরঞ্জনের কথা বলছেন, সিনেমায় কতদূর কী করতে পারে তা বলাই বাহুল্য খাইছে

চলুক

কাজি মামুন   এর ছবি

ভয়াবহ! আমাদের দেশে পুরুষদের খৎনা হয় (আমাকেও প্রক্রিয়াটার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছিল এবং দেখতে হয়েছিল রক্ত), কিন্ত আপনার লেখাতে নারী খৎনার যে বর্ণনা পড়লাম, পুরুষ খৎনার ভয়াবহত্ব সে তুলনায় কিছুই না। আচ্ছা, একটি বিষয় জানতে ইচ্ছে করছে, আপনার লেখা থেকে বেরিয়ে এসেছে যে, নারী খৎনার পেছনে 'chastity belt', পরিচ্ছন্নতা বা ধর্মীয় কারণ রয়েছে, কিন্তু পুরুষ খৎনার পেছনে এমন কি কারণ রয়েছে? কেন খৎনাকৃত পুরুষদের সদাচারি হওয়ার কথা? আপনি জানেন কিনা, আমাদের দেশে একে 'মুসলমানি' বলেও অভিহিত করা হয়।
আর 'তাই তৎসম বাংলায় এর কোন প্রতিশব্দ নেই' কথাটা ঠিক বুঝলাম না, আদি মানুষ মাইগ্রেট করার পর এই প্রথা জন্ম নিয়েছে, আর তাই তা ইউরোপ ও এশিয়াতে পাওয়া যায় না, ভারতে পাওয়া যায় না, তাই খৎনার তৎসম প্রতিশব্দ নেই? তৎসম শব্দ তো সংস্কৃত শব্দ, আর তার উদ্ভব আর্যদের থেকে, যারা এসেছেন ইরান থেকে, তো ইরানে কি খৎনা ছিল না আগে? মুসলিম কালচারের কারণে পরে এসেছে?
লেখাটির জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ, কৌস্তভদা!

কৌস্তুভ এর ছবি

এখনকার দিনে জানা গেছে যে মাসিক জিনিসটা ঠিক কী, কিন্তু আগেকার দিনের মানুষ সেটাকে কেবল একটা নোংরা স্রাব বলেই মনে করত, আর তাই সেটার উৎস যেটা সেটাও একটা নোংরা জায়গা।

অদ্ভুত ব্যাপার হল, কিছু গোষ্ঠী যেমন কুমারীত্বকে খুব আকাঙ্খিত বলে মনে করত, কিছু আবার মনে করত যে ওই প্রথম রক্তপাতের ব্যাপারটাও খারাপ, এবং এড়ানো উচিত। মার্কো পোলো ও তাঁর দলবল যখন তিব্বতে যান, অনেক গ্রামেই মহিলারা তাদের কুমারী মেয়েদের নিয়ে আসত যাতে তাঁরা ওই প্রথম সঙ্গমের কাজটা করে দিয়ে ওই বালিকাদের সমাজে বিয়ের উপযুক্ত করে তুলতে পারেন। এমনও হত যে এক রাত্রে বিশ-তিরিশ জন কুমারীর লাইন লেগে যেত।

অন্যদিকে মিশরীয়দের মধ্যে পুরুষ-যৌনাঙ্গ সম্পর্কেও একই রকম 'পরিচ্ছন্নতা'র ধারণা ছিল বলে জানা যায়, যে কারণে তারা নারী ও পুরুষ উভয়েরই খতনা পালন করত।

খৎনাকৃত পুরুষদের সদাচারী হবার কথাটা দুষ্টুমি করে বলা, আসলে ধার্মিক পরিবারেই বাচ্চাদের খতনা করানো হয় কিনা, তাই পরিবারের ট্র্যাডিশন অনুযায়ী বাচ্চারাও ধর্মনিষ্ঠ সদাচারী হবে বড় হয়ে, এই রকম আরকি।

'মুসলমানি' বলেও অভিহিত করা হয় জানি, তবে যেহেতু এটা ইসলাম ধর্মের বাইরেও সামগ্রিকভাবে আলোচনা করেছি তাই ওই শব্দটা ব্যবহার করতে চাইনি।

তৎসম শব্দ এসেছে সংস্কৃত থেকে, অর্থাৎ প্রোটো-ইন্দো-ইউরোপীয়ান সমাজে খতনা ছিল না এটাই বোঝাতে চেয়েছি। তারা ইরান অঞ্চল থেকে এসেছিল এটাই অনুমান করা হয়, তবে সেটা এতদিন আগে যে তখন সেখানে এইসব প্রথার উৎপত্তি হয়নি।

প্রসঙ্গত, ইরান দেশটা কিন্তু ঐতিহাসিকভাবে খুবই লিবারেল ছিল। সেখানে ইসলাম আসার পরেও তারা এতটাই লিবারেল জীবনযাপন করত যে 'ইসলামিক' লোকেরা তাদের উপর চটা ছিল। অতএব ইসলাম আসার আগে তারাও ওই প্রথার পালন করত না হয়তবা।

অরফিয়াস এর ছবি

এমনও হত যে এক রাত্রে বিশ-তিরিশ জন কুমারীর লাইন লেগে যেত।

অ্যাঁ

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

তারেক অণু এর ছবি

উনার কাহিনী অবলম্বনে নির্মিত সিনেমাটি দেখেছিলাম, খুব সাহসী একজন মানুষ তিনি।

কৌস্তুভ এর ছবি

কই সেটার রিভিউ দেবেন না?

উচ্ছলা এর ছবি

লেখার প্রথম অংশটুকু পড়ে চোখে পানি চলে এল।
অনেক ধন্যবাদ এ বিষয়টির প্রতি আলোকপাত করার জন্য।

কৌস্তুভ এর ছবি

মন খারাপ

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

জঘন্য এই প্রথার বিশদ বর্ণনা পড়ি আমি আয়ান হারসী আলির বই থেকে। বিষয়টি আলোকপাত করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

আমার পুত্র জন্ম হবার সময় কেউ একজন একটা ফর্ম পূরণ করতে দিয়েছলো যেখানে শিশুর সারকামসিশন করা হবে কিনা জানতে চাওয়া হয়। ডাক্তার বলেছিলো কয়েক ঘন্টার শিশুর নার্ভ তৈরী হয়না এবং কাটা সারার জন্য কোনো ঔষুধ দিতে হয় না। একটু মিষ্টি পানি খাওয়ালেই চলে। তখন খুব বেশী চিন্তা ভাবনা না করেই হ্যাঁ বলে দেই।

এছাড়া আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে জানি যে, আমার একবার কি যেনো হয়েছিলো ওখানটায়। আমি তখন খুব ছোট। তখনই ডাক্তার বলেছিলো সারকামসিশন করতে। পরে আর কোনো সমস্যা দেখা দেয় নি। সুতরাং আমার অভিজ্ঞতা পজিটিভ।

পরে বাচ্চা ঘরে আসার পর এই সারকামসিশনকে কেন্দ্র করে একটা উৎসবের আয়োজন করতে চাইলো আমার আব্বা আম্মা। তখন আমার টনক নড়ল যে এটা তো আসলে একটা ধর্মীয় প্রথা! সেসময়টা ঘাটাঘাটি করে যা জানতে পেরেছি সেটা নিয়ে তুমি লিখেছো।

স্ত্রী সারকামসিশন একবারেই বর্বর এবং জঘন্য। এই বিষয়ে আমার দ্বিমত নেই।

তবে পুরুষ সারকামসিশন নিয়ে আমি এখনো নিউট্রাল। খুব বেশী উপকার হয়না বরং আর্গুয়েবলি সেক্সুয়াল প্লেজার কমে যেতে পারে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ফাঙ্গাল ইফেকশন বা এইডস কমাতে পারে সারকামসিশন। তাই আমি নিশ্চিত নই কোন পক্ষ নেবো।

কৌস্তুভ এর ছবি

হ্যাঁ, আয়ান এ বিষয়ে সক্রিয় একজন অ্যাক্টিভিস্ট। তবে তাঁর বিরুদ্ধে সমালোচনা হল, ইসলামের বিরোধিতা করতে গিয়ে তিনি অ্যালাই হিসাবে রাইট-উইং ক্রিশ্চানদেরও সাথে নিতে অস্বস্তি বোধ করেন না।

পরে বাচ্চা ঘরে আসার পর এই সারকামসিশনকে কেন্দ্র করে একটা উৎসবের আয়োজন করতে চাইলো আমার আব্বা আম্মা। তখন আমার টনক নড়ল যে এটা তো আসলে একটা ধর্মীয় প্রথা!

চলুক

তবে পুরুষ সারকামসিশন নিয়ে আমি এখনো নিউট্রাল। খুব বেশী উপকার হয়না বরং আর্গুয়েবলি সেক্সুয়াল প্লেজার কমে যেতে পারে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ফাঙ্গাল ইফেকশন বা এইডস কমাতে পারে সারকামসিশন। তাই আমি নিশ্চিত নই কোন পক্ষ নেবো।

  • পুরুষ-খতনা যদি নিরাপদভাবে করা হয় তাহলেও সেটার নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত কোনো সংক্রমণ-প্রতিরোধক সুবিধা নেই
  • প্রথম বিশ্বের কিছু অংশ বাদ দিলে দুনিয়ার অধিকাংশ জায়গাতে খতনা করতে গিয়েই বরং সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে
  • খতনা যদি নিরাপদভাবে করা হয় তাহলেও যেহেতু সেটা আবশ্যিক বা দরকারি কোনো চিকিৎসা নয়, তাই যার শরীর তার বিনা সম্মতিতে সেটা করানো এথিকাল নয়

এইবার ভেবে দেখ...

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

পুরুষ-খতনা যদি নিরাপদভাবে করা হয় তাহলেও সেটার নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত কোনো সংক্রমণ-প্রতিরোধক সুবিধা নেই

মানছি। আগেই বলেছি ভাল মন্দ কোনোটাই প্রতিষ্ঠিত করা যায়নি।

প্রথম বিশ্বের কিছু অংশ বাদ দিলে দুনিয়ার অধিকাংশ জায়গাতে খতনা করতে গিয়েই বরং সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে

এবং সেকারণেই অনিয়ন্ত্রিত বিপদজনক খতনা রোধের দরকার আছে। মানছি।

কিন্তু দেখো আমার বাচ্চাটার খতনা হয়েছে একদিন বয়েসে, হাসপাতালে, ডাক্তারদের মাধ্যমে। এখানে বিপদের বিষয়টি আর থাকছে না।

খতনা যদি নিরাপদভাবে করা হয় তাহলেও যেহেতু সেটা আবশ্যিক বা দরকারি কোনো চিকিৎসা নয়, তাই যার শরীর তার বিনা সম্মতিতে সেটা করানো এথিকাল নয়

এই যুক্তিটা শক্ত মনে হচ্ছে না। শিশুদের হয়ে অনেক কাজ পিতা মাতা করে দেয়। কোনটা ভালো কোনটা মন্দ। কিন্তু সন্তানের ভালো হবে ভেবেই করে পিতা মাতা।

যেমন ধরো একটা বাচ্চার নাম তার ইচ্ছে মতো হওয়া উচিৎ। কিন্তু আমি কি ১৮ বছর অপেক্ষা করব নাম রাখার জন‌্য? কিংবা ধরো বাচ্চার দুধ দাঁত ফেলতে হবে। বাচ্চা এটা চায় না, আবার কষ্টও লাগে। তাহলে এথিকস মেনে কি দাঁত তুলব না? একই কথা প্রযোজ্য টিকার ক্ষেত্রে।

তাই এথিকসের প্রশ্নটা জোরালো নয়। বরং প্রথাটার কি খারাপ দিক আছে সেটাতে ফোকাস করা উচিৎ।

কৌস্তুভ এর ছবি

তোমার তুলনাদুটো বরং জোরদার হল না। বাচ্চার একটা নাম দেওয়া সমাজে আবশ্যিক, নয়তো সবকিছুতেই পেপারওয়ার্কস-সংক্রান্ত সমস্যায় পড়তে হবে। তাতেও বয়সকালে তার অধিকার থাকে নিজের নাম পরিবর্তন করার। বাচ্চার দুধদাঁতও এমনিতে স্বাভাবিকভাবেই পড়ে কিন্তু যেসব ক্ষেত্রে আটকে গিয়ে সমস্যার সৃষ্টি করে সেখানে চিকিৎসকের মাধ্যমে ফেলিয়ে দেওয়াই দরকারি নয়ত কমপ্লিকেশনস হতে পারে।

তাকে কোন স্কুলে দেবে, ইংরিজি মিডিয়াম স্কুলে দেবে কি দেবেনা, এই প্রশ্নগুলো বরং এই ধরনের এথিকসের পর্যায়ে পড়ে। সেখানে একটা বেসিক অ্যাসাম্পশন থাকে, তারা 'গুড ফেইথ' এ কাজ করছে, অর্থাৎ (তাদের ব্যয়, যাতায়াত ইত্যাদি সীমার মধ্যে) তাদের বাচ্চার যেটা ভাল হবে বলে মনে করে তারা সেটাই করছে। এবং তাতেও একটা তদারক করা হয় সরকার থেকে - যদি তারা যেটাকে ভাল মনে করছে সেটা আসলে ভাল না হয়, যেমন অনেক ইমিগ্র্যান্ট পরিবার বাচ্চাকে শাসনে রাখতে গেলে মারধরই দরকারি পন্থা বলে মনে করে - তাহলে স্ক্যান্ডিনেভিয়ার সরকার ইত্যাদিরা সেটায় বাধা দিতে পারে।

বাচ্চার খতনার ক্ষেত্রে, 'বাচ্চার ভালো হবে' এই চিন্তাটা পিতামাতার মধ্যে কাজ করে না, 'আমাদের ধর্ম পালন করতেই হবে' এই চিন্তাটাই কেবল কাজ করে। তাই উপরোক্ত বিচারে সেটা আনএথিকাল।

বোঝাতে পারলাম?

অরফিয়াস এর ছবি

চলুক

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

দিফিও-১ এর ছবি

বাচ্চার স্কুল নির্ধারণটা অনেক বড় এথিকাল প্রশ্ন, এটা বেশ ভালো উদাহরণ হয়েছে। তবে শেষোক্ত যুক্তির ব্যাপারে, 'বাচ্চার ভালো হবে' আর 'আমাদের ধর্ম পালন করতেই হবে' এই দুইটা চিন্তাধারা আলাদা ধরছেন কেনো, এরা কিন্তু ওভারল্যাপিং, একটা আরেকটার ওপর। একটা বিশাল অংশের বাপ মায়ের জন্য ব্যাপারটা সত্য।

কৌস্তুভ এর ছবি

হুমম তা খানিকটা বটে, 'খতনা না করে দিলে আমাদের সন্তান স্বর্গে যেতে পাবে না' এই চিন্তাটাও সেখানে খানিক থাকে। আমি অবশ্য প্রত্যক্ষ 'ভালো হওয়া'র কথা মানে ইহজাগতিক সুবিধার কথা বলছিলাম।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

অর্থাৎ যে কাজ করলে বাচ্চার ভালো হবে সেটা করলে ব্যাপারটা আনএথিকাল হবে না। সুতরাং ইউটিলিটি অভ অ্যান একশন ঠিক করছে কোনটা শিশুর অমতে করলেও এথিকাল হবে এবং কোনটা হবে না। সুতরাং অ্যাকশনটা খারাপ "কারণ" এটা আনএথিকাল - এটা একটা সার্কুলার রিজনিংয়ের পর্যায়ে পড়ে। আমি এইটাই বলতে চাইছিলাম। খতনাকে যায়েজ বা প্রতিষ্ঠিত করতে চাইনি।

আরেকটা উদাহরণ দেবার লোভ সামলাতে পারছি না। শিশুদের যে টিকা দেয়া হয় সেটা সাধারণতঃ ঐ রোগের দূর্বল জীবানু তার শরীরে প্রবেশ করিয়ে। শরীর এই দূর্বল জীবানুর বিরুদ্ধে এন্টিবডি তৈরী করে এবং এদের মেরে ফেলে। এতে করে এন্টিবডি তৈরীর পদ্ধতিটি শরীরের জানা হয়ে গেলো। এখন ভবিষ্যতে পুর্ণ শক্তির জীবানু শরীরে প্রবেশ করলে শরীর জানে কিভাবে প্রতিরোধ করতে হবে। আমি জীবানু বিষেশজ্ঞ বা ডাক্তার নই, তাই বর্ণনায় ফাঁক থাকতে পারে। কিন্তু সাধারণ প্রিন্সিপালটা এরকই।

সুতরাং সাধারণভাবে বলতে গেলে টিকা নেয়া ভালো। কিন্তু টিকার কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া আছে? ফ্লু শটের বিরূপ প্রতিক্রিয়ার (ফ্লু শট, রোগ) একটি ভিডিও দিলাম নীচে। খুব রেয়ার হলেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে টিকা চরম ক্ষতি করতে পারে।

সুতরাং টিকার ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে অধিকাংশ ক্ষেত্রে এর ইউটিলিটি পজিটিভ। কিন্তু কোনো ক্ষেত্রে চরম ক্ষতি করতে পারে। এটা জানার পর শিশুকে টিকা দিতে কি একজন পিতা মাতার বুক কাঁপবে না? (ভ‌্যাকসিনকে না বলুন, বই)।

তারপরও বৃহত্তর ইউটিলিটির কথা চিন্তা করে, এইটুকু রিস্ক মাথায় নিয়ে সন্তানের অমতে আমরা টিকা দেই। যদি এই ইউটিলিটির ব্যাপারটি বাদ দাও তাহলে এটা আন এথিকাল। কিন্তু যদি ইউটিলিটির ব্যাপারটি নিয়ে আসি তখন এটাকে এথিকাল বলা যেতে পারে।

সুতরাং "খতনা সন্তানের অমতে করা হয় এবং আনএথিকাল। তাই এটি বর্জন করতে হবে।" এই যুক্তিটি দূর্বল। বরং "খতনার কোনো উপকার নেই বরং x, y, z ক্ষতি আছে। তাই এটি সন্তানের ক্ষতি করবে। একারণে এটি আনএথিকাল।" - যুক্তিটি এভাবে হতে পারে।

আমি এটাই বলতে চেয়েছিলাম।

কৌস্তুভ এর ছবি

x কাজটা বাচ্চার উপকারে লাগে
x কাজটা বাচ্চার কোনো উপকারে লাগে না
x কাজটা বাচ্চার অপকার করে

প্রথমটা ছাড়া বাকি দুটো বাচ্চার উপর রুটিনমাফিক করে যাওয়াটা আনএথিকাল। আমি এটা বলতে চেয়েছি।

*******************

বাচ্চাকে টীকা দেওয়া হল।
অনুমিত ইউটিলিটি - প্রাণবাঁচানো। সেটার প্রবাবিলিটি - ১০%। (মানে, ওই রোগ পরিবেশে আসা এবং টীকার সেক্ষেত্রে কার্যকর হওয়ার যুগ্ম সম্ভাবনা)
অনুমিত ক্ষতি (নেগেটিভ ইউটিলিটি) - স্নায়ুরোগ, কঠিন তবে মৃত্যু না। সেটার প্রবাবিলিটি - ১%।

এই দুটো থেকে একটা গড় (স্ট্যাটের ভাষায়, এক্সপেক্টেড) ইউটিলিটি হিসাব করা যায়। এবং অধিকাংশ টীকার ক্ষেত্রে সেগুলো ভীষণই পজিটিভ।

(আরো একটা ফ্যাক্টর থাকে অবশ্য, খরচ)

তাই পোলিওর মত প্রচলিত টীকাগুলো বাচ্চাদের দেওয়ানোর জন্য সরকার এত করে অনুরোধ-প্রচার করে। আর সেগুলো তাই আমার ওই তালিকার প্রথম ঘরেই পড়ে। আর FDA-ও ড্রাগ ট্রায়ালগুলো এত খুঁটিয়ে দেখে নেয়, দ্বিতীয় ঘরে পড়লেও হবে না, প্রথমটাতেই পড়তে হবে।

আমেরিকাতে অবশ্য টীকা নিয়ে নোংরা একটা পলিটিক্স চলে, কনজারভেটিভ ক্রিশ্চানরা ০.১% ক্ষতিসম্ভাবনার কোনো টীকা নিয়েও যেভাবে ফিয়ার-মঙ্গারিং করে...

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

বুঝলাম।

*******************

ভ্যাকসিন যে ভীষণ পজিটিভ সেটা তো আমি বলেইছি। যেমন ফ্লুর ক্ষেত্রে সম্ভাবনা প্রতি মিলিয়ন ভ্যাকসিনে ০.১ (সুত্র)। আমেরিকার পপুলেশন ৩১২ মিলিয়নের মতো (সুত্র)। হিসেবের সুবিধার জন্য ধরি ৩০০ মিলিয়ন। এর মধ্যে এক তৃতীয়াংশ যদি ফ্লুর ভ্যকসিন নেয় তাহলে ১০ জন এই রোগটির কবলে পড়বে। (প্রায় ৪৫% জনগণ ফ্লু শট নেয়; সুত্র)। এখন যদি কোনো বাবা মাকে বলা হয় এবার যতজন ফ্লু নেবে তাদের মধ্যে ১০ জন মারাত্মক এই রোগে আক্রান্ত হবে এবং এটা শুনে যদি কোনো বাবা মা তাদের সন্তানকে ভ্যাকসিন না দেয় তাহলে তাদের ইড়্যাশনাল বলতে পারি, কিন্তু সন্তানের ভালো চায় না সেটা বলতে পারি না (লস এভারশন)।

অবশ্য ভ্যাকসিন না নিলে মৃত্যুর সম্ভাবনা বাড়ে দশ হাজারে একজন হিসেবে এবং ওই রোগটির সম্ভাবনা দশগুন হয়ে যায় (১০০ মিলিয়নে ১০০ জন)।

সুমাদ্রী এর ছবি

এই ব্যাপারটা নিয়ে আমি নিজেই ছোট্ট একটা পোস্ট দেব ভেবেছিলাম। কৌস্তুভ অবশ্য দারুণ সব তথ্যসহ ভাল একটা লেখা লিখেছেন। আমি যেখানে কাজ করি বর্তমানে সেই কোত দিভোয়ার পশ্চিম-উত্তরাঞ্চলে এই ' নারী যৌনাঙ্গাংশ কর্তন' এর প্রথাটা এখনও প্রচলিত। মাস তিনেক আগে এক দুপুরে খবর পেয়েছিলাম কাছের একটা গ্রামে একটা ' ঘটনা ' ঘটতে যাচ্ছে। যদিও রাষ্ট্রীয়ভাবে এই প্রথাটা কোত দিভোয়ারে নিষিদ্ধ, তবুও লুকিয়ে চুকিয়ে যারা এটাকে ঐশী নির্দেশ বলে মানেন তারা এখনও এটা করেই চলেছে। আমরা দ্রুত ঐ গ্রামের দিকে ছুটলাম ' ঘটনা ' টাকে থামানোর জন্য। যখন গ্রামে গিয়ে পৌঁছাই, তখন সেখানে একটা উৎসব-উৎসব পরিবেশ। আমাদের আগেই স্থানীয় পুলিশ আর ইউএনও এসে ব্যাপারটার তদন্ত শুরু করে দিয়েছিল। শুনলাম আইন-প্রয়োগকারী সংস্থার হস্তক্ষেপে অনুষ্ঠানটি(?) হয়নি। তবে আমাদের এভাবে ' নাক গলানোটাকে' গ্রামবাসীরা খুব একটা সুনজরে দেখলনা। আমরা সেই মেয়েটিকেও দেখতে যাই। ৯-১০ বছরের ভীত, সন্ত্রস্ত একটা মেয়ে। গ্রাম-প্রধান জানাল সাধারণত ঊষাকালে কিংবা গোধূলিলগ্নে এই পবিত্র অনুষ্ঠানটি সম্পন্ন হয়। সেদিন আমরা ঘটনাটি থামাতে পারলেও আমি একেবারে নিশ্চিত নই যে কয়েকদিন পর ঘটনাটি ঘটে নি। আমাদের গ্রামদেশে 'হাজাম' নামের একটা শ্রেণী আছে যাদের পেশাই হল ছেলেদের খৎনা করানো। তাদের অনেকেই একটা অসম্ভব অস্বাস্থ্যকর পদ্ধতিতে কাজটি করে থাকে। বাঁশ কেটে ধারালো করে অথবা বাঁশের ধারালো বাকল দিয়ে লিঙ্গের চামড়াটা কাটার পর লিঙ্গের চারপাশে ছাই দিয়ে একটা প্লাস্টার তৈরী করে দেয়া হয়। ঐ অবস্থায় ছাইয়ের প্লাস্টারটা কয়েকদিন থাকে। জমে শক্ত হয়। শুধুমাত্র প্রস্রাব করতে পারার মত ছোট একটা ছিদ্র থাকে ওতে। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বন্ধুকে এই পদ্ধতির পক্ষে একদিন খুব সাফাই গাইতেও দেখেছিলাম।

'নারী যৌনাঙ্গাংশ কর্তন' নিয়ে মর্মস্পর্শী একটা ছবি দেখেছিলাম বেশ ক'বছর আগে। উসমান সেম্বেনে পরিচালিত " Moolaade'' ছবিটা আগ্রহীরা দেখতে পারেন।

অন্ধকার এসে বিশ্বচরাচর ঢেকে দেওয়ার পরেই
আমি দেখতে পাই একটি দুটি তিনটি তারা জ্বলছে আকাশে।।

কৌস্তুভ এর ছবি

আরে, আমার তো শুধুই থিয়োরিটিকাল জ্ঞান, আপনি যখন প্রত্যক্ষ জড়িত ছিলেন তখন অবশ্যই লিখে ফেলুন!

সাবেকা এর ছবি

এই কাহিনীটি আমি রিডার্স ডাইজেষ্টে তখন পড়েছিলাম । এক বসায় পড়া অসম্ভব ছিল । তখনই কিছু বাদ দিয়ে দিয়ে পড়েছিলাম । এক কথায় ভয়াবহ বললেও কম বলা হয় মন খারাপ

কৌস্তুভ এর ছবি

আপনিও কি আমার মত ছোট্টটি ছিলেন নাকি সব বুঝেশুনে পড়েছিলেন? খাইছে

সাবেকা এর ছবি

তখন আমার বাচ্চাদের শিশুকাল ছিল, অতএব আমি মনে হয় বুঝেশুনেই পড়েছিলাম হাসি

কৌস্তুভ এর ছবি

খাইছে

তুলিরেখা এর ছবি

কী ভয়ানক ব্যাপার!!!
এদিকে কেনিয়ার প্রেক্ষাপটে লেখা একটা উপন্যাস, "দ্য রিভার বিটুইন", পড়ে পুরো অন্যরকম ধারণা হয়েছিলো। সেখানে তো রীতিমতন জনজাতির সুপ্রাচীন বহুমূল্য প্রথা বলে দেখানো হয়েছিলো এই "পুরুষ হয়ে ওঠার"ও "নারী হয়ে ওঠার" প্রক্রিয়াকে। সেখানে তরুণ ও তরুণীদের উভয় দলেরই সারকামসিশন একই সময় হয়, রীতিমতন গোষ্ঠী উৎসবের মতন করে বর্ণনা করা আছে। খৃষ্টধর্ম নেওয়া একটি পরিবার থেকে বাবার কড়া নজর এড়িয়ে তাদের তরুণী মেয়ে পালিয়ে এসে জনজাতির এই প্রথায় যোগ দিচ্ছে, সেই দিয়েই কাহিনি শুরু। মাঝে মাঝে ভাবলে বেশ অবাক লাগে, ঘটনাচক্রে ভাগ‌্যিস এমন দেশেকালে এমন গোষ্ঠীর মধ্যে জন্মেছিলাম যেখানে এইসব বিতর্কিত প্রথা নেই। একটু এদিক ওদিক হলেই পড়ে যেতে পারতাম।

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

সাইড টক: এনগুগি ওয়াথিওঙ্গোর ডিকলনাইজিং মাইন্ডটা না পড়া থাকলে, পড়তে পারেন। ছোটো বই, কিন্তু দরকারি মনে হয় আমার। আচেবেকে সবাই ঐদিককার লিটারেচরে গুরু মানে। আচেবে আবার ওয়াথিয়োঙ্গোর মতো সাম্রাজ্যবাদবিরোধি না, লিবালর হিউম্যানিস্ট ভাবভঙ্গী আছে, তিনি ইংরেজিতে সাহিত্যরচনার পক্ষে পলেমিক লিখছিলেন।


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

কৌস্তুভ এর ছবি

সেখানে তো রীতিমতন জনজাতির সুপ্রাচীন বহুমূল্য প্রথা বলে দেখানো হয়েছিলো এই "পুরুষ হয়ে ওঠার"ও "নারী হয়ে ওঠার" প্রক্রিয়াকে।

বটে? চিন্তিত

ঘটনাচক্রে ভাগ‌্যিস এমন দেশেকালে এমন গোষ্ঠীর মধ্যে জন্মেছিলাম যেখানে এইসব বিতর্কিত প্রথা নেই। একটু এদিক ওদিক হলেই পড়ে যেতে পারতাম।

হুঁ, আম্মো...

রু এর ছবি

যেই জিনিস পড়তে পারলাম না বাচ্চা বাচ্চা মেয়েরা সেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যায়! লেখার শেষ অংশটা পড়েছি শুধু।

কৌস্তুভ এর ছবি

ঠিক।

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

প্রথম অংশটা পড়লাম আর ভয়ানক, ভয়ানক যন্ত্রণা বোধ করলাম। ঠিক নিজে যেন ওই অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে আসলাম। মন খারাপ
এইরকম কিছু পড়েছিলাম কোনো এক পত্রিকায় বহু আগে। তখনো সব শব্দগুলোর মানে ঠিকঠাকমতো জানি না। এখন জানি বলে আজ কয়েকবারে পড়তে হলো। মন খারাপ

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

কৌস্তুভ এর ছবি

এইটুক জেনে ভাল্লাগলো যে অন্তত আমার অনুবাদ ঘটনাটাকে ঠিকভাবে তুলে ধরতে পেরেছে।

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

বহুল প্রচলিত ধর্মমতগুলিতে যেমন জুডাধর্মে ইহুদীদের পুত্র সন্তানের জন্মের অষ্টম দিনে প্রশিক্ষিত 'মোহেল' (হাযাম) দ্বারা পরিচ্ছেদন, হিব্রু 'ব্রিত মিলাহ' (circumcision) করাতে হয়, অন্যথায় চুক্তিভঙ্গের দায়গ্রস্থ হবে, যে চুক্তি হিব্রু ঈশ্বর 'এলোহিম' ও আব্রাহামের মধ্যে হয়েছিলো।

খ্রীষ্টধর্ম যেহেতু জুডাধর্মকে সত্যায়ন করেই ধর্মমত প্রচার করেছে তাই ধর্মীয় আচার হিসাবে পরিচ্ছেদন কর্মটি অবশ্য করণীয়।

ইসলাম ধর্মগ্রন্থ কুরআনে অবশ্য পরিচ্ছেদনের বিষয়ে কোন নির্দেশ নাই। তবে মুহাম্মদের সময়ে ঐ অঞ্চলে পরিচ্ছেদনের প্রথা চালু থাকার কারনে মুহাম্মদ নিজেও পরিচ্ছেদন করিয়েছিলেন। সে কারনে মুসলমানেরা এই প্রথাটিকে সুন্নাহ হিসাবে পালন করে।

তবে বহুল প্রচারিত ধর্মমতগুলোতে ধর্মীয়ভাবে মেয়েদের পরিচ্ছেদনের বিষয়টি আবশ্যিক নয়।

পৃথিবীর কোন কোন অংশের বিভিন্ন গোত্রের মধ্যে রীতি-প্রথা অনুযায়ী এ প্রক্রিয়াটি প্রচলিত।

মাফ করবেন, আমার ধারনা মতে, ঐ সব গোত্রগুলোতে পুরুষদের বহু স্ত্রী থাকতো এবং অনেক যৌনদাসীও ছিলো বটে। একজন পুরুষের দ্বারা অতগুলো সমর্থ নারীকে যৌনসন্তোষ দেওয়া সম্ভবত সম্ভব ছিলোনা। তাই মেয়েদের যৌনাঙ্গ পরিচ্ছেদনের (female genital mutilation) মাধ্যমে তাদের যৌনাকাঙ্খার তীব্রতা প্রশমিত করার ব্যবস্থা করা হতো। (অবশ্য এটা একান্তই আমার ব্যক্তিগত মত।)

যাই হোক, যে ভাবেই হোক এই বর্বর প্রথা বিলোপ হওয়া আবশ্যক।

ধন্যবাদ, ভাল থাকবেন।

কৌস্তুভ এর ছবি

খ্রীষ্টধর্ম যেহেতু জুডাধর্মকে সত্যায়ন করেই ধর্মমত প্রচার করেছে তাই ধর্মীয় আচার হিসাবে পরিচ্ছেদন কর্মটি অবশ্য করণীয়।

না।

প্রথমেই সতর্কীকরণ - যীশু একজন বাস্তব ইহুদীবংশজাত ধর্মপ্রচারক যদি হয়ও, বাস্তবের যীশুর সম্পর্কে জানা যায় খুবই কম, যিশু সম্পর্কে প্রচিলত ধারণা মূলত গালগল্পই।

খ্রীষ্টান ধর্মটা মূলত যীশুর অনেক পরে আসা পল থমাস ইত্যাদি ধর্মপ্রচারকদের নিজস্ব মস্তিষ্কপ্রসূত মতামত ও প্রথা দিয়েই তৈরি। তা একসময় যখন ঠিক করা হয় যে প্রচলিত নানারকম মতবাদগুলোকে গুণেগেঁথে একটা গোছানো 'ধর্ম' তৈরি করা উচিত, তখন খতনা'কে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সম্ভবত সে সময়ে সেই অঞ্চলের সংখ্যাগুরু জনজাতি ইহুদীদের থেকে নিজেদের আলাদা করার জন্যই। যদিও যিশু ইহুদী হিসাবে জন্মানোর ফলে তাঁর নিজের খতনা হয়ে থাকারই কথা, তবুও।

অতএব খ্রীষ্টধর্মে খতনা পালন করার নিয়ম নেই।

মাফ করবেন, আমার ধারনা মতে, ঐ সব গোত্রগুলোতে পুরুষদের বহু স্ত্রী থাকতো এবং অনেক যৌনদাসীও ছিলো বটে। একজন পুরুষের দ্বারা অতগুলো সমর্থ নারীকে যৌনসন্তোষ দেওয়া সম্ভবত সম্ভব ছিলোনা। তাই মেয়েদের যৌনাঙ্গ পরিচ্ছেদনের (female genital mutilation) মাধ্যমে তাদের যৌনাকাঙ্খার তীব্রতা প্রশমিত করার ব্যবস্থা করা হতো। (অবশ্য এটা একান্তই আমার ব্যক্তিগত মত।)

যৌন প্রবৃত্তি দমনের ধারণা থেকে নারী ও পুরুষের খতনা করা হত, এটা খতনার উৎপত্তি হওয়ার অনেকগুলো প্রস্তাবিত কারণের মধ্যে আরেকটা। তবে বিশেষভাবে সেটা বহুবিবাহের সঙ্গে সম্পর্কিত কিনা, তা জানা নেই। আর সেক্ষেত্রে প্রশ্ন জাগবে, এভাবে নাহয় পুং-খতনার ব্যাখ্যা হল কিন্তু নারীরা তো বহুবিবাহ করত না?

যাহোক, এই অভিমতটা দেওয়ার জন্য আপনাকে 'মাফ করবেন' বলতে হল কেন তা বুঝলাম না।

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

যদিও যিশু ইহুদী হিসাবে জন্মানোর ফলে তাঁর নিজের খতনা হয়ে থাকারই কথা, তবুও।

অতএব খ্রীষ্টধর্মে খতনা পালন করার নিয়ম নেই।

হ্যাঁ, সম্ভবত যীশুর সে কারনেই খতনা করা হয়েছিলো।
"পরিচ্ছেদনের জন্য আট দিন পূর্ণ হইলে, শিশুটির নাম যীশু রাখা হইল; তিনি মাতৃগর্ভে আসিবার পূর্ব্বেই এই দ্বারা দূতের নাম দেওয়া হইয়াছিল।" (নূতন নিয়ম, লুক ২:২১)

জী, খ্রীষ্টীয় ধর্মমতে পরিচ্ছেদন বিষয়ে আপনার ধারণাই সঠিক।
"তখন যিহুদিয়া হইতে কয়েকজন লোক আসিল এবং এই বলিয়া ভাতৃবৃন্দকে শিক্ষা দিল, তোমরা যদি মোশির নিরূপিত প্রথা অনুসারে পরিচ্ছেদন প্রাপ্ত না হও, তবে পরিত্রাণ লাভ করিতে পারিবেনা। তাহাতে তাহাদের সহিত পৌল ও বার্ণবার মতবিরোধ ও বিস্তর তর্কবিতর্কের সৃষ্ঠি হইবার পর স্থির হইল যে, এই প্রশ্ন লইয়া পৌল ও বার্ণবা এবং ভ্রাতাদের মধ্যে আরও কয়েকজন যিরূশালেমে প্রেরিতদের ও প্রাচীনবর্গের নিকটে যাইবেন। এই বিষয়ে অনুসন্ধান করিবার জন্য প্রেরিতেরা ও প্রাচীনবর্গ সমবেত হইলেন। আর বিস্তর তর্কবিতর্ক হইলে পিতর উঠিয়া তাঁহাদের বলেলেন,- .......... সুতরাং এখন যাহার ভার আমাদের পূর্ব্বপুরুষেরা অথবা আমরা বহন করিতে পারি নাই সেই জোয়াল শিষ্যদের কাঁধে চাপাইয়া, আপনারা কেন ঈঈশ্বরের পরীক্ষা করিতেছেন? বরং আমরা বিশ্বাস করি যে, প্রভু যীশুর অনুগ্রহ দ্বারাই আমরা পরিত্রাণ পাইয়াছি, এবং সেইরূপে তাহারাও পাইয়াছে।" (নূতন নিয়ম, প্রেরিত ১৫ : ১-১২)।
তারপরও বলতে হয় খ্রীষ্টীয়দের বিভিন্ন উপদলে এর প্রচলন ছিলো।
"খ্রীষ্টের নামে পরিচ্ছেদনপ্রাপ্ত হইয়া, মানবীয় দেহ বস্ত্রের ন্যায় ত্যাগ করিয়া, তোমরা অহস্তকৃত পরিচ্ছেদনে পরিচ্ছেদিত হইয়াছ। তোমরা বাপ্তিস্মে তাঁহার সহিত সমাধিপ্রাপ্ত হইয়াছ এবং যিনি তাঁহাকে মৃতদের মধ্য হইতে উত্থাপন করিয়াছেন সেই ঈশ্বরের ক্রিয়াশক্তির গুণে বিশ্বাস দ্বারাই তাঁহার সহিত উত্থাপিত হইয়াছে। অপরাধে ও পরিচ্ছেদনবিহীন অবস্থায় তোমরা মৃত ছিলে, কিন্তু খ্রীষ্টের সহিত তিনি তোমাদের সঞ্জীবিত করিয়াছেন...।" (নূতন নিয়ম, কলসীয় ২ : ১১-১৩)।
সমস্ত উদ্ধৃতি 'ত্রাণকর্ত্তা প্রভু যীশু খ্রীষ্টের নূতন নিয়ম' পাকিস্তান বাইবেল সোসাইটী কতৃক ১৯৬৬ সালে প্রকাশিত পুস্তক হতে উদ্ধৃত।

হিমু এর ছবি

সারকামসিশনের বাংলা কি পরিচ্ছেদন? সম্ভবত না। পরিচ্ছেদন হচ্ছে ইন্টারসেকশনের বাংলা।

অরফিয়াস এর ছবি

সারকামসাইজ হচ্ছে যৌনাঙ্গের ত্বকচ্ছেদ কেটে ফেলা আর সারকামসিশন এর প্রতিশব্দ দেখলাম এই ধর্মীয় প্রথাটাকে বোঝাচ্ছে। ত্বক মুন্ডন ও বলা যায় হয়তো।

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

কৌস্তুভ এর ছবি

ওই তাই তো, খেয়াল করিনি ওই শব্দটার ব্যবহার।

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

পাকিস্তান বাইবেল সোসাইটী ঢাকা কতৃক ১৯৬৬ সালে প্রকাশিত নূতন নিয়ম বইতে এই শব্দটিই ব্যবহার করা হয়েছে, তাই....... এটাই যে সঠিক বাংলা তা অবশ্য আমি বলবোনা।
ধন্যবাদ আপনাকে, ভুলটা ধরিয়ে দেবার জন্য।

মেঘা এর ছবি

ভয় পাইছি মন খারাপ

--------------------------------------------------------
আমি আকাশ থেকে টুপটাপ ঝরে পরা
আলোর আধুলি কুড়াচ্ছি,
নুড়ি-পাথরের স্বপ্নে বিভোর নদীতে
পা-ডোবানো কিশোরের বিকেলকে সাক্ষী রেখে
একগুচ্ছ লাল কলাবতী ফুল নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছি

কৌস্তুভ এর ছবি

এদের তুলনায় আপনারা অনেক ভাগ্যবতী হাসি

শান্ত এর ছবি

অমানবিক এবং ভয়াবহ।

__________
সুপ্রিয় দেব শান্ত

কৌস্তুভ এর ছবি

হ...

তানিম এহসান এর ছবি

কিছু বলার নাই। তবু ভালো ইদানীং এর বিরুদ্ধে প্রচুর কাজ হচ্ছে। মানুষ ধর্মের নামে, প্রথার নামে যে কতটা নৃশংস হতে পারে!

কৌস্তুভ এর ছবি

ঠিক...

কৌস্তভ  সমাদ্দার এর ছবি

আরেব্বাপ খুব বাঁচা বেঁচে গেছি , ফোরস্কিন জিন্দাবাদ , হিপ হিপ হুররে , লেখা খুব ভালো লেগেছে গুরু গুরু

অতিথি লেখক এর ছবি

আজকের টাইমস ম্যাগাজিন ওয়েবসাইটে একটা প্রাসঙ্গিক গবেষণার উল্লেখ পেলাম-----জনস হপকিন্সের কয়েকজন গবেষক তাদের স্টাডিতে দেখিয়েছেন যে আমেরিকায় সারকামসিশনের হার বর্তমান ৫৫% থেকে কমে গিয়ে ১০% এ ঠেকলে(ইউরোপের লেভেলে) অনেকগুলো রোগ-বালাই বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে
১) ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন ২১২% বেড়ে যেতে পারে
২) এইচআইভি ইনফেকসন বাড়তে পারে ১২%
৩) হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস সংক্রমণ ২৯%
৪) হারপিস সিম্প্লেক্স ভাইরাস টাইপ ২ বাড়তে পারে ২০%
৫) এমনকি এতে করে মেয়েদেরও ব্যাকটিরিয়াল ভ্যাজিনোসিস আর লো রিস্ক প্যাপিলোমা ভাইরাস সংক্রমণ ১০% এর বেশী বাড়ার সম্ভাবনা।

এই সংখ্যাগুলো থেকে ঐ গবেষকরা সারকামসিশন কমে যাওয়ার আর্থিক ক্ষতিটাও ফোকাস করেছেন, এবং বলার চেষ্টা করেছেন যে বর্তমানে সারকামসিশনকে হেলথ ইন্স্যুরেন্স কাভারেজের বাইরে রাখাটা শেষ পর্যন্ত আমেরিকার জন্য আর্থিক ক্ষতিরই ব্যাপার হবে।

--দিফিও

অতিথি লেখক এর ছবি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।