দীপ জ্বেলে যাই

কৌস্তুভ এর ছবি
লিখেছেন কৌস্তুভ (তারিখ: মঙ্গল, ২৬/০৩/২০১৩ - ১১:২৬পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমাদের ছোটোবেলাতেও (মানে বেশিদিন আগে না) শহরেই একটু নিরিবিলির দিকে দিব্যি জোনাকিদের দেখা মিলত। এখন নগরায়ণের ঠেলায় তারা সব উধাও। তা কেউ যদি প্রশ্ন করে, জোনাকিদের ‘কনজার্ভেশন’ প্রয়োজন কেন, তাদের আদৌ দরকারটা কী, তাহলে কী উত্তর দেবেন?

আমি বলব, গত দুই সপ্তাহে যে একগুচ্ছ ছানাপোনার প্রেজেন্টেশনের পরীক্ষক হয়ে এলাম, অ্যালঝাইমার্স (স্মৃতিভ্রম) আর বার্ধক্যের উপর, সেগুলোর প্রতিটা – প্রতিটাই – কাজ করা গেছে কেবলমাত্র সামুদ্রিক জোনাকিদের জ্যোতি ধার করে!

****************

গত সপ্তাহে গ্রীনীচের শূন্য ডিগ্রি দ্রাঘিমারেখা দেখতে গিয়ে টিকিটঘর আমার ব্যাঙ্ককার্ড হারিয়ে ফেলল। নতুন কার্ড আসতে এক সপ্তা, তদ্দিন মানিব্যাগের অবশিষ্ট কয়েক পাউন্ড দিয়ে চালাতে হবে। এমতাবস্থায় বিচক্ষণ লোকে কী করে জানিনা, আমি মনোবেদনা নিবারণ করতে কলেজের পাশের সেকেন্ডহ্যান্ড পুস্তকালয়ে ঢুকে পড়লাম।

সেখানে দেখি এক দারুণ রঙচঙে চকচকে বই, চেহারাটাও অদ্ভুত, ছোটোখাটো গাঁটাগোঁট্টা। বইটার উপরে ফ্লুরোসেন্ট কোরালদের ছবি, নাম ‘অ্যাগ্লো ইন দা ডার্ক’।

সুন্দরীকে হরণ করে নিয়ে এলাম বাড়িতে, এক রাতেই পড়ে ফেলা গেল অনেকটা। এটা ওই বইয়ের গল্প।

****************

খ্রীষ্টজন্মের অল্প কিছুদিন পরেই বিখ্যাত রোমান ঐতিহাসিক-লেখক-প্রকৃতিবিদ প্লিনি’র লেখায় পাই, ভিসুভিয়াসের পাদদেশে নেপলস উপসাগরে তিনি কেমন জ্যোতির্ময় জেলিফিশদের দেখা পেতেন। সেয়ানা বুড়ো এও বলেছেন, রাতের আঁধারে পথ চলার জন্য তিনি ওই জেলিফিশদের গায়ে তাঁর লাঠিখানা ঘষে নিয়ে দিব্যি টর্চ বানিয়ে ফেলতেন।

বস্তুত, ডাঙায় ওই জোনাকি বা দুয়েক প্রজাতির ছত্রাক (অ্যাটেনবুড়োর আফ্রিকা সিরিজে জঙ্গলের মেঝে জুড়ে ছড়িয়ে থাকা উজ্জ্বল ছত্রাকজালের ছবি দেখে মনটা বড়ই উদাস হয়েছিল) ছাড়া আলো-ছড়ানো জীবজন্তু বিরল। সমুদ্রের তলায় কিন্তু ব্যাপার অন্যরকম। সেখানে চিংড়ি থেকে জেলিফিশ থেকে কোরাল, বহু প্রজাতির প্রাণীরই নিজস্ব বিজলিবাতি আছে। পশ্চিমবঙ্গে আমাদের ছোটবেলায় জ্যোতি বসুর শাসনামলে দুপুরে আর সন্ধ্যায় ঘন্টাখানেক করে লোডশেডিং ছিল নিত্যনৈমিত্তিক, কারেন্ট গেলেই বদ্‌জোবান লোকজন বলে উঠত, “ওই জ্যোতিবাবু গেলেন”। সমুদ্রের এইসব জীব কারো জ্যোতির পরোয়া না করে নিজেরাই আলোর কুটিরশিল্প খুলে বসেছে। কারণ, ডাঙার জন্তুরা এমনি-এমনিই সারাদিন সূর্যের আলো পায়, কিন্তু সমুদ্রের কয়েক মিটার গভীরতা থেকেই আর সূর্যের আলো তেমন একটা ঢুকতে পারে না। তাই তারা সবাই নানারকম প্রয়োজনমত (রকমগুলো পরে দেখব) আপন জীবন পূর্ণ করে আপন আলো জ্বেলেছে।

আগুনে পুড়লে তেল-কয়লা নানাকিছুই আলো দেয়, কিন্তু সেটা হচ্ছে দহন, প্রচুর তাপ উৎপন্ন করাটাই যে বিক্রিয়াটার মূল কাজ। এমনকি আপনি লোহা কয়েকশ ডিগ্রিতে গরম করলে সেও উজ্জ্বল হয়ে আলো দেবে, ঠিক যেভাবে আগেকার দিনের ফিলামেন্ট লাইটবাল্বগুলো কাজ করত। কিন্তু এইসব প্রাণীদের সবচেয়ে দামি বৈশিষ্ট হচ্ছে, তারা এতই নিখুঁত এফিশিয়েন্ট একটা ব্যবস্থা বানিয়ে ফেলেছে, যে তাদের বিক্রিয়াতে কেবলই আলো উৎপন্ন হয়, তাপ নয়। শীতল আলো যাকে বলে। এই নিজে থেকে আলো দেওয়ার ব্যাপারটাকে বলে luminescence.

অথচ, প্লিনির মত টুকটাক উল্লেখ ছাড়া এই ব্যাপারটা নিয়ে তেমন কোনো গবেষণাই হয়নি বলতে গেলে, যেখানে নিছক কৌতূহলে না হোক এধরনের তাপহীন আলো মানুষের বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যেও ভাবনায় আসা উচিত! কেবল ১৮০০ শতকের শেষদিকে দেখা যায়, এক ফরাসী বৈজ্ঞানিক ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে গিয়ে দেখছেন, ওখানে একরকম জোনাকির জাতভাই দেখা যায় যাদের স্থানীয় আদিবাসীরা রাত্রে পথ চলার সময় পায়ের আঙুলের ফাঁকে গুঁজে নেয়, পথ চলার আলো হিসেবে। তিনি এই পোকাগুলোকে সংগ্রহ করে গুঁড়ো করে রাখতেন, এবং একচিমটে গুঁড়ো নিয়ে জলে ফেললেই তারা একঝলক আলো দিয়ে উঠত। তিনি ওই অজানা রাসায়নিকটার নাম দেন লুসিফেরিন। (লুসিফার ল্যাটিনে ভোরের তারার নাম, কিন্তু বাইবেলের চক্করে পড়ে শয়তানের নাম হয়ে গেছে।)

তাহলে জৈব-আলোকবিকিরণ বা বায়োলুমিনিসেন্স নিয়ে গবেষণা কখন জোরেশোরে শুরু হল? উত্তরটা খুব ইন্টারেস্টিং। ওই নেপলস উপসাগরের কথা বলেছিলাম না? ইউরোপে ক্রান্তীয় অঞ্চলের আশেপাশে এমন অনেকই সমুদ্র আছে যেখানে বায়োলুমিনিসেন্ট প্ল্যাঙ্কটন (আণুবীক্ষণিক প্রাণী) ঝাঁক বেঁধে ভেসে বেড়ায়। তারা এমনিতে হালকা আলো বিচ্ছুরণ তো করতে থাকেই যা রাত্রিবেলা জাহাজচালকদের মাথা ঘুলিয়ে দিয়ে থাকে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বিশাল সমস্যা দেখা গেল যে তারা নাড়া পড়লেই আরো জোরে জ্বলে ওঠে। ফলে গোপন সাবমেরিন জলের তলা দিয়ে যাবার সময় শত্রুপক্ষের জাহাজ স্পষ্ট তার গতিরেখা দেখতে পেয়ে বোম মেরে খালাশ করে দিত। অথবা আকাশ থেকে প্লেন সমুদ্রে জাহাজের গতিপথ দেখে... ফলে সামরিক গবেষণাকেন্দ্রগুলোতেই প্রথম ঠিকমত শুরু হল বায়োলুমিনিসেন্স নিয়ে কাজকর্ম, এর রহস্যভেদের প্রচেষ্টা।

****************

এই দারুণ বইখানা মূলত জৈব-আলো আবিষ্কারের ইতিহাস এবং বর্তমান নিয়ে। গল্পগুলো সব বলে ফেলব না, তাহলে আর বই পড়ার কী রইল। তবে বইটার শুরুতে দেখতে পাই দুনিয়ার নানা স্থানে বিজ্ঞানীরা জেলিফিশ পিষে পিষে রস বার করে চেষ্টা করছেন তার মধ্যে থেকে আলো দেওয়া প্রোটিনটাকে আলাদা করার। এবং প্রোটিনটার হালচাল বুঝতে গেলে তাকে বিশুদ্ধভাবে পাওয়া দরকার, অর্থাৎ শুকনো করে কেলাসিত করতে হবে। ঠিক যেমন রোজালিন্ড ফ্রাঙ্কলিন ডিএনএ’র কেলাস থেকে এক্স-রে দিয়ে তার অণুর গঠনের ছবি এঁকেছিলেন, সেটা না হলে ওয়াটসন-ক্রিকের ডাবল হেলিক্স মডেল আবিষ্কার করাই হত না। কিন্তু চারিদিকে কেবলই ব্যর্থতা।

এর মধ্যে, অনেকটা হট করে পেনিসিলিন আবিষ্কারের মত, দেখা যায় যুদ্ধবিধ্বস্ত জাপানে পারমাণবিক বোমা থেকে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া তরুণ গবেষক শিমোমুরা একদিন রেগেমেগে বাড়ি চলে গেছেন খানিকটা লুসিফেরিনের দ্রবণ অ্যাসিডে ফেলে রেখে, আর পরদিন সকালে এসে দেখেন পাত্রের তলায় জমে রয়েছে লুসিফেরিন ক্রিস্টাল!

এর খ্যাতি থেকে তিনি আমেরিকায় এসে গবেষণা করার ডাক পান। সেখানে এ বিষয়ে আরো নানা কিছু খুঁটিনাটি আবিষ্কার করে তাঁরা ব্যাপারটা আসলে কী ঘটে তার একটা পরিষ্কার ছবি তুলে ধরতে পারেন। এই যেমন, এই প্রোটিনটা জেলিফিশের দেহকোষে সঞ্চিতই থাকে। কিন্তু ক্যালশিয়াম পরমাণু, যেটা আমাদের পেশীতেও সঙ্কেত বহনের এক প্রধান দূত, সেটার সঙ্গে যুক্ত হলেই কেবল তা আলো দেয়। তা যখন ওই প্ল্যাঙ্কটনগুলোর মতই জেলিফিশ ডিস্টাপ পায়, বা বিরক্ত হয়, বা চমকে দিতে চায়, তখন এক ঠেলা ক্যালশিয়াম পাঠায় যাতে ঝাঁ করে ওই কোষগুলোয় আলো জ্বলে ওঠে।

কিন্তু যেটাতে উনি দারুণ কনফিউজড থাকেন, তা এই যে, লুসিফেরিনের দ্রবণে ক্যালশিয়াম ঢাললে দেয় নীল আলো। কিন্তু জেলিফিশগুলো ছড়াত সবুজ আলো। তাহলে ঘটনাটা কী হচ্ছে? নীল আলো কি সবুজ বনে যাচ্ছে? কী করে?

****************

এইখানে আসে এই বইয়ের মূল বিষয়টা। তা ঠিক লুমিনিসেন্স নয়, ফ্লুরোসেন্স। ফ্লুরোসেন্স জিনিসটা ফসফরাসের হালচাল থেকে হয়ত অনেকেই পরিচিত। এবং অনেক খনিজ পাথরেও তা দেখা যায়। ব্যাপারটা সহজ কথায় এই, যে একরকমের আলো এসে পড়লে এই পদার্থগুলো সেটাকে শুষে নিয়ে অন্যরকমের আলো বিকিরণ করে। এরা আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্যটা পালটে দেয়, তাই আলোর রঙ অন্যরকম লাগে। আমেরিকার স্মিথসোনিয়ান মিউজিয়ামে একটা অংশে ফ্লুরোসেন্ট পাথরের একটা বিশাল সমাহার আছে, এক মিনিট এমনি আলোয় দেখলে তারা খুবই সাদামাটা, কিন্তু পরের মিনিটেই যেই আলো নিভে গিলে অতিবেগুনি আলো ফেলা হবে, তারা লাল কমলা সবুজ ইত্যাদি নানা রঙের আলো ছড়াতে থাকবে অন্ধকারে (যেহেতু আমাদের চোখ অতিবেগুনি আলো দেখতে পায় না)।

এই পদ্ধতিটাই দেখা যায় ওই জেলিফিশেরও মূলে। লুসিফেরিন যে নীল আলো তৈরি করে, আরেকটা প্রোটিন যা ওই কোষেই ওর পাশাপাশি থাকে, সেটাকে শুষে নিয়ে সবুজ আলো ছড়ায়। এইটার নাম দেওয়া হয় গ্রীন ফ্লুরোসেন্ট প্রোটিন বা GFP। আর এই ঘটনাটাকে বলা হয় বায়োফ্লুরোসেন্স।

দ্রুতই জীববিজ্ঞানীরা এটার উপর সিন্দবাদের রত্নভাণ্ডার পাওয়ার মত করে ঝাঁপিয়ে পড়লেন। রোগীদের দেহের ক্ষতয় স্ট্রেপটোকক্কাস ব্যাকটেরিয়া আছে কি না, সেটা প্রমাণ করতে একজন আমাদের দেহের স্ট্রেপটোকক্কাস-বিরোধী অ্যান্টিবডিগুলো নিয়ে (রোগবীজাণু প্রতিরোধক প্রোটিন) তার সঙ্গে ওই ফ্লুরোসেন্ট প্রোটিন জুড়ে দিলেন। ক্ষতস্থানে দেখা গেল নীল আলো ফেললেই পষ্ট সবুজ আলো দেখা যাচ্ছে। এই দিয়ে শুরু, ইমিউনোলজি ছেয়ে গেল এই আলোর খেলায়।

****************

কিন্তু একটা বড় সমস্যা তখনও ছিল। সেটা হচ্ছে ওই প্রোটিনের জোগান। শিমোমুরা এক টন জেলিফিশ পিষে পেতেন কেবল ১০০ মিলিগ্রাম প্রোটিন।
এমন অবস্থায় আরেক দল বিজ্ঞানী করলেন কি, জেলিফিশের ডিএনএ থেকে ওই প্রোটিন তৈরির জিনটা খুঁজে বের করে এক ব্যাকটেরিয়ার ডিএনএ’তে বসিয়ে দিলেন। ল্যাবে শয়ে শয়ে প্লেটে কোটি কোটি ব্যাকটেরিয়ার চাষাবাদ করা খুবই সহজ, অতএব ক্রমশ ওই ব্যাকটেরিয়ারা GFP তৈরি করে যেতে থাকল আর তাদের থেকে বাটি’ভরে তা নিংড়ে নেওয়া হতে লাগল। সহজ, দ্রুত কারখানা।

আর যেই এই জিনটা খুঁজে পাওয়া গেল, এক বিজ্ঞানী আরো বৃহৎ এক ষড়যন্ত্র শুরু করুলেন। জীববিজ্ঞানী মহলে ফিতাকৃমি C. elegans ছোট্ট মডেল প্রাণী হিসেবে খুবই বিখ্যাত এবং বহুল ব্যবহৃত। তিনি এই কৃমির দেহে ওই জিনটা ঢুকিয়ে দিলেন, তৈরি হল প্রথম কৃত্তিমভাবে তৈরি জ্যোতির্ময় প্রাণী।

এখন সবুজ ফ্লুরোসেন্ট খরগোশ থেকে রঙবেরঙের আলো দেওয়া মাছ, যাদের পোশাকি নাম GloFish, আপনি কিনে দিব্যি অ্যাকোরিয়ামে পুষতে পারবেন, সবই হই হই করে তৈরি হয়ে চলেছে।

****************

এই কাজটা যেই করা গেল, অর্থাৎ কোনো প্রাণীর দেহকোষে যেই আলো জ্বালানোর ব্যবস্থা পাওয়া গেল, অমনি জৈব-ইঞ্জিনিয়ারের দল মাঠে নেমে পড়লেন। একটা জিনিস খেয়াল করে দেখুন, আমাদের ডিএনএ’তে কিন্তু সবধরনের জিনিস বানাবারই রেসিপি লেখা আছে। কিন্তু তাও সব জায়গায় সব রেসিপি চালু হয়ে যায় না। মাথায় শুধু স্নায়ুকোষ তৈরির রেসিপিই কাজ করে, হাতেপায়ে শুধু পেশীকোষ তৈরির। এই দেখে, তাঁরা স্নায়ুকোষ তৈরির রেসিপিটার মধ্যে ফুটনোট হিসেবে GFP’র ছোট্ট রেসিপিটা ঢুকিয়ে দিলেন, অর্থাৎ যখনই স্নায়ু তৈরির জিনগুলো চালু হয় তখনই GFP-ও তৈরি হতে থাকে। সারকথা, কেবল স্নায়ুগুলোই আলো দেবে, বাকি কোষগুলো না। শুরুর দিকে দ্বিতীয় ছবিটা যেমন ব্রেনের স্নায়ুগুলোকে হাইলাইট করছে।

এর ফলে বিশেষ বিশেষ কোষ স্পষ্টভাবে দেখার খুবই সুবিধা হল। প্রথমত, আপনি জ্যান্ত প্রাণীর মধ্যেই শরীরের ভেতরের অংশগুলো দেখতে পাচ্ছেন, স্নায়ু দেখতে মেরে ফেলে ব্যবচ্ছেদ করতে হচ্ছে না। আর বাকি সব কোষের মধ্যে এক বিশেষ রকম কোষ (ধরুন টিউমারের) ঠিক কোনখানটায় লুকিয়ে রয়েছে তাও সহজে খুঁজে পাওয়া গেল। তৃতীয়ত, ক্যালশিয়ামের কাজকর্ম মনে করে দেখুন – পেশীতে যদি GFP ফুটিয়ে তোলেন, তাহলে হাত ভাঁজ করতেই দেখতে পাবেন পরিশ্রমের ফলে বাইসেপে আলোর ঝলক!

ইমিউনোলজি থেকে এখন পুরোদস্তুর ডাক্তারিতে ফ্লুরোসেন্স ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতে লাগল। ভেবে দেখুন, আমরা মাত্র ছ-রকমের স্বাদের তফাত করতে পারি, কিন্তু গন্ধ পাই কয়েক হাজার। নাঁক বঁন্দঁ থাকলে আপেল শাঁকালু আর পেঁয়াজ সবই একরকম খেতে লাগে ওইজন্যই। তো একজন ইঁদুরের মাথার ঘ্রাণ-সংবেদী অংশে এইটাকে ঢুকিয়ে দিলেন, তারপর খুলিতে অপারেশন করে ছোট্ট একটা ক্যামেরা বসিয়ে দিলেন (যেহেতু আলো হাড় ভেদ করে আসবে না)। এরপর আপেল শুঁকিয়ে দেখলেন, ওই অংশের ঠিক কোন কোষগুলো জ্বলে ওঠে, পেঁয়াজ শুঁকিয়ে কোনগুলো। এভাবে দিব্যি একটা ম্যাপ তৈরি করে ফেলা গেল।

****************

কিন্তু ওই স্বচ্ছ ফিতাকৃমি নিয়ে কাজ করা সহজ, মানুষের মত অস্বচ্ছ, গাবদা প্রাণী নিয়ে কী করা যায়? ধরুন আমি লিভারে সবুজ রঙ ফুটিয়ে তুললাম তার কাজকর্ম দেখার জন্য, কিন্তু সে আলো তো ভুঁড়ি ভেদ করে আমাদের চোখে এসে পৌঁছবে না?

লোকে ওই জিনটায় কিছু মিউটেশন ঘটিয়ে হলুদ আলো পর্যন্ত পৌঁছতে পারল, কিন্তু সবচেয়ে ভালো হত লাল আলো দেওয়া প্রোটিন খুঁজে পেলে। কারণ, লাল আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য সবচেয়ে মোটা, আর তা যত মোটা ততই তা কম বাধাপ্রাপ্ত হয়। তাপের তরঙ্গদৈর্ঘ্য আরো মোটা, আর তাই আমাদের শরীরের উষ্ণতা দেওয়ালও ভেদ করে নিরাপত্তাবাহিনীর ইনফ্রারেড সেন্সরে এসে ধরা দিতে পারে। কিন্তু দুনিয়াভর অনেক প্রাণী খুঁজেপেতেও লাল আলো দেওয়া কাউকে পাওয়া গেল না।

এইখানে এসে আরেকটা অদ্ভুত কাহিনী শুনতে পাই। সোভিয়েত রাশিয়া ভেঙে পড়ার পরবর্তী সময়ে এক অর্থকষ্টে ভোগা ল্যাবরেটরিতে এক তরুণ রাশিয়ান বিজ্ঞানীর গল্প শুনতে নিয়ে যান লেখকেরা। তিনি নতুন এবং অদ্ভুত আইডিয়ার আশায় এক প্রৌঢ় খ্যাপা বৈজ্ঞানিকের সঙ্গে আলোচনা করতেন মাঝে মাঝে। তিনি বলেন, দেখো বাছা, সবাই লুমিনিসেন্ট জীবজন্তুর মধ্যে লাল ফ্লুরোসেন্ট খোঁজার চেষ্টায় আছে। কিন্তু তারা সবাই বিবর্তিত হয়েছে মোটামুটি একই লাইনে, তাই ওখানে বিশেষ সুবিধা হবে না। তুমি বরং, তাদের জাতভাই কিন্তু আলো দেয় না, এমন প্রাণীদের নেড়েচেড়ে দেখ। হয়ত তাদের মধ্যে GFP জিনের কোনো জাতভাই আছে যা তোমার প্রশ্নের উত্তর।

ওই তরুণ বিজ্ঞানী তো ‘আরে ভীমরতি হয়েছে বুড়োর’ বলে সে কথা উড়িয়ে দিলেন। কিন্তু কদিন পরেই বুড়ো এসে তাঁকে কানে ধরে টেনে নিয়ে গেলেন নিজের বন্ধু আরেক বুড়োর বাসায়। সেখানে কয়েকশ গ্যালনের বিশাল এক অ্যাকোরিয়ামে বুড়ো কোরাল পালেন, আর দেশবিদেশ থেকে নানা দুষ্প্রাপ্য কোরাল এনে জমান। সেখান থেকে ওই বিজ্ঞানী এমন এক কোরালখণ্ডের হদিস পেলেন, যা খালি চোখে আতিপাতি কিন্তু আলট্রাভায়োলেট আলোয় জ্বলে উজ্জ্বল লাল হয়ে!

****************

রুশদেশের উপকথা এখানেই শেষ করি। সহজ ভাষায় পুরো গল্পটা জানতে হলে, আর কিছু সুন্দর সুন্দর ছবি দেখতে হলে, বইটাই পড়ে ফেলুন। কে বলতে পারে, হয়ত আপনার এত ভালো লেগে গেল যে এটাই হয়ে উঠল আপনার রিসার্চ ফিল্ড? এই যেমন ধরেন আমাদের শান্তনুদা চুপিচুপিতে বাচ্চা বাচ্চা ক্যান্সারকোষের উপর স্পাইং করার জন্য কী সব বিদঘুটে জিনিসপত্র আবিষ্কার করে চলেছেন। এই পোস্টটা ওনাকেই ডেডিকেট করা যাক, কেমন?

ওহ ইয়ে, যাবার আগে কৃত্তিমভাবে আলো দেওয়া প্রাণী থেকে চট করে সামুদ্রিক প্রাণীদের কথায় ফিরে আসি। প্ল্যাঙ্কটন, জেলিফিশেরা যে আলো দেয়, এবং কেন দেয়, তা দেখেছি একটু আগেই – বিরক্ত হলে, বা শত্রুকে চমকে দিতে/ভয় পাওয়াতে হলে। আর একদল প্রাণী আছে যারা সমুদ্রের গভীরে অন্ধকারে শিকার করে নিজেদের এই আলোর সাহায্যে, যাতে দেখতে সুবিধা হয়। আরেকদল প্রাণী আছে যারা আলোটাকে ব্যবহার করে টোপ হিসেবে। গ্লোফিশ যেমন সর্বাঙ্গ দিয়ে জ্বলে, উল্টোদিকে anglerfish বা বঁড়শি-মাছ বলে একরম অদ্ভুত মাছ আছে যাদের মাথা থেকে বেরিয়ে এসে বঁড়শির মত একটা জিনিস মুখের সামনে ঝোলে, আর সেইটায় আবার আলো জ্বলে। কোনো চারামাছ কৌতূহলী হয়ে সামনে এলেই অ্যাত্তবড় হাঁ করে কপাৎ! আবার একরকম চিংড়ি আছে, তাদের পেটের দিকটায় হালকা নীল আলো জ্বলে, মানে ভাসার সময় নিচের দিকটায়। মনে করা হয়, তারা যেহেতু অল্প জলে থাকে, নীচ থেকে শিকারী মাছেরা তাদের ছায়া দেখে চিনে নিতে পারে। তাই তলার দিকে অল্প আলো দেখিয়ে হয়ত তারা জলতল থেকে আসা আলোর সাথে ক্যামোফ্লাজ করে নেয়। ওদিকে কোরাল সম্বন্ধে দেখা যায়, গাছেরা যেমন একরকম সালোকসংশ্লেষকারী ব্যাকটেরিয়াকে শুষে নিয়ে তাদের ক্লোরোফিল বানিয়ে নিয়েছে, কোরালদের মধ্যেও বসতি করে থাকে অমন একরকম ব্যাকটেরিয়া যারা দেয় কোরাল-কলোনীকে খাদ্যের জোগান; ওই আলো হয়ত তাদের রান্নার চুলা। কারা যে কীভাবে আলো বানাচ্ছে, আর কেন বানাচ্ছে, এ নিয়ে ভাবনাচিন্তা করার প্রচুর সুযোগ, লেগে পড়ুন!


মন্তব্য

চলছি আমি এর ছবি

দারুন হয়েছে ।

কৌস্তুভ এর ছবি

থ্যাঙ্কু হাসি

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

এই রঙিন মাছ খাইলে মানুষ রঙিন হইতে পারবে?

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

কৌস্তুভ এর ছবি

আজ্ঞে না। আমরা মাছমাংস এসব প্রোটিন যা খাই সব হজম হয়ে যায়, হয়ে শরীরে পুষ্টি আসে। রঙিন হতে গেলে শরীরের কোষগুলোর মধ্যে এই প্রোটিন থাকা দরকার। হাসি

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

এরপরেও একটা প্রশ্ন মনে আসছিলো, জিগানোর সাহস পাইলাম না

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

সত্যপীর এর ছবি

শরীরের কোষে প্রোটিন ইঞ্জেকশন মারা যায়না?

..................................................................
#Banshibir.

কৌস্তুভ এর ছবি

প্রোটিন ইঞ্জেকশন মারলে হবে না, তবে প্রোটিনের জিনবাহক ভাইরাসের ইঞ্জেকশন দিয়ে কিছুমিছু সফলতা এসেছে। তবে সেটা রোগবালাইয়ের বিষয়ে, আলো জ্বালার মত শৌখিন বিষয়ে না খাইছে

দ্রোহী এর ছবি

আপনেরা কী খান ভাই? এত গোছানো একটা পোস্ট লিখতে আমার বছরখানেক লেগে যাবে!

কৌস্তুভ এর ছবি

এ সব আসলে আপনার বছরখানেক পোস্ট না দেওয়ার অজুহাত!

চলছি আমি এর ছবি

আসলে কৌস্তুভ দার জবাব নেই । যা লেখেন তাই ভাল লাগে । কারন সব লেখাই অত্যন্ত আগ্রহোদ্দীপক এবং শিক্ষনীয় ।

এই লেখা পড়ে আমি ডি এন এ এর প্রকৃত আবিস্কারকের কথা জানতে পেরেছি ।

চলছি আমি এর ছবি

আসলে কৌস্তুভ দার জবাব নেই । যা লেখেন তাই ভাল লাগে । কারন সব লেখাই অত্যন্ত আগ্রহোদ্দীপক এবং শিক্ষনীয় ।

এই লেখা পড়ে আমি ডি এন এ এর প্রকৃত আবিস্কারকের কথা জানতে পেরেছি ।

কৌস্তুভ এর ছবি

লইজ্জা লাগে

ফ্র্যাঙ্কলিনকে ডিএনএ'র (ডিএনএ'র গঠনের) প্রকৃত আবিষ্কারক বলা ভুল হবে। ওনার এক্স-রে বিচ্ছুরণের কাজ একটা অত্যাবশ্যক ধাপ ছিল তো বটেই, কিন্তু ডাবল হেলিক্স গঠনটা ভেবে বের করার কাজটা ওয়াটসন-ক্রিকেরই।

ইয়াসির আরাফাত এর ছবি

কি দুর্দান্ত একটা টপিক!

কৌস্তুভ এর ছবি

হ, বহুৎ খুবসুরৎ খাইছে

মনি শামিম এর ছবি

কি পোস্ট দিয়েছ গো, পুরা মাথা নষ্ট অবস্থা! দারুণ লাগলো। কত কিছু যে জানলাম।

-মনি শামিম

কৌস্তুভ এর ছবি

দেঁতো হাসি

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

চলুক হাততালি
ওরে জানার আছে কত কিছু .... ইয়ে, মানে...

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

কৌস্তুভ এর ছবি

হ, হ আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

বেচারাথেরিয়াম এর ছবি

পড়তে পড়তে হঠাৎ মাথায় চিন্তা আসল, কোনদিন যদি বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করে ফেলে মানুষের শরীরে এমন আলো জ্বালার ব্যাবস্থা তাইলে কি হবে??
ধরেন কেউ রেগে গেলে শরীর লাল হয়ে গেল
লজ্জা পেলে গোলাপী
মন খারাপ থাকলে নীল
মন খুব ভাল থাকলে সবুজ!!!

কি আজিব!!! হাসি
সেরাম লেখা হইছে কিন্তু কৌ-দা।

কৌস্তুভ এর ছবি

মানুষের ভ্রুণ ধরে ওই প্রোটিন ঢুকিয়ে দেওয়াটা খুব শক্ত হবেনা মনে হয়। কিন্তু এথিক্স অ্যাপ্রুভাল পাওয়া যাবে না।

তবে ব্যাপারটা হলে মন্দ হবেনা কিন্তু। ধরেন, ভ্যাটিকান শুধু যেসব পাদ্রীদেরই নিয়োগ দেবে যাদের সামনে একটা বাচ্চা নিয়ে এলে আলো জ্বলে ওঠে না... চোখ টিপি

বেচারাথেরিয়াম এর ছবি

ধরেন, ভ্যাটিকান শুধু যেসব পাদ্রীদেরই নিয়োগ দেবে যাদের সামনে একটা বাচ্চা নিয়ে এলে আলো জ্বলে ওঠে না

গড়াগড়ি দিয়া হাসি গুল্লি

শুভায়ন এর ছবি

ধরেন, ভ্যাটিকান শুধু যেসব পাদ্রীদেরই নিয়োগ দেবে যাদের সামনে একটা বাচ্চা নিয়ে এলে আলো জ্বলে ওঠে না...

হো হো হো গড়াগড়ি দিয়া হাসি দেঁতো হাসি

স্যাম এর ছবি

গড়াগড়ি দিয়া হাসি হো হো হো

স্যাম এর ছবি

চলুক চলুক যথারীতি এ ক্লাস
(লেখায় 'নতুন মন্তব্য' করলাম - পোস্ট হল জবাবে!?)

কৌস্তুভ এর ছবি

আহা ব্যাপার না, পড়লেই হল হাসি

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

এতো চমৎকার একটা পোস্ট না লিখলে আপনার খুবই অন্যায় হতো। এযাত্রা ধর্ম রক্ষা করলেন বলে ধন্যবাদ।

আপনার এই লেখায় অথবা অন্যকারো একটা লেখায় জীববিজ্ঞানে/চিকিৎসাবিজ্ঞানে এই আলোর কারিকুরি কী তা ঠিকঠিক কেউ বুঝবে না। সেজন্য এরকম লেখা আপনার আরো শ'খানেক লেখা উচিত। GFP আবিষ্কারের জন্য একটা নোবেল প্রাইজ কিন্তু দেয়া হয়েছিল। সেই প্রসঙ্গে দুলাইন লিখলে কেমন হতো?

প্রসঙ্গত, ফ্লুরোসেন্সের কারিকুরির কৃতিত্ব ব্যাকটেরিয়াদের না দিয়ে কুলুক্ষুনে মাছেদের দিয়ে দেয়ার তীব্র প্রতিবাদ জানাইলাম। মানুষ গরু পালতে পারে, কিন্তু গরুর দুধ তো আর মানুষে দেয় না হো হো হো

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

কৌস্তুভ এর ছবি

এই নোবেল নিয়ে অনেক ফ্যাচাং, ঐ কাজকর্ম যারা করেছিল বা ইনোভেটিভ ভাবনাচিন্তা যারা দিয়েছিল এমন কিছু কিছু বিজ্ঞানী প্রথমে পেপারে/পেটেন্টে তারপর পুরষ্কারে বাদ পড়ে যাওয়ায় রেগেমেগে বলেছিল, 'কেউ পাবে, কেউ পাবে না, তা হবে না, তা হবে না'... আর তাছাড়া নোবেল যারা দেয় তারা এমনিতেই বদলুক। তাই ওদিকটা পুরো বাদ দিয়ে দিলাম, জানি তো মন্তব্যে আপনারা আছেনই।

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

বলছিলাম যে, বইটার এবং আরো অন্যান্য বইয়ের কিন্ডল ভার্সন পাঠালে পড়ে নিয়ে জ্ঞানগর্ভ বিস্তারিত মন্তব্য করতে পারতুম চোখ টিপি

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

সাফি এর ছবি

ধর্ম রক্ষা হলো কেমতে? এই যে কি সব জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং মার্কা খোদার উপরে খোনকারি হচ্ছে, ধর্মপ্রান মাছদের ধরে ধরে ওদের শরীরে ইহুদি নাসারা আলো ঢুকায় দেওয়া হচ্ছে, এতে আমার ধর্মানুভূতি চরমভাবে আহত। ব্লগার কৌস্তুভ এর বিরুদ্ধে কেন অবিলম্বে ৫৪ ধারায় ব্যবস্থা নেওয়া হবেনা, অনার্য মডুর কাছে এই কারণ দর্শানোর অনুরোধ জানানো হল।

ধন্যবাদান্তে,

বিআরটিছি ওরফে বিটিআরছি।

কৌস্তুভ এর ছবি

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

কৌস্তুভ নাস্তিক এবং নষ্ট! বিভিন্ন ইউরোপিয় বালিকার সঙ্গে দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্রে সে লিপ্ত থাকে বলে আমরা জানতে পারছি। ষড়যন্ত্র পূর্ববর্তী কিছু কিছু ছবি আমাদের নজরে এসেছে। চুড়ান্ত ষড়যন্ত্রের এমএমএস বাজারে আসা এখন কেবল সুমায়ের ব্যপার!

ইউরোপের বিভিন্ন দেশে অবস্থিত মডুদের ঠিকানায় কাফফারা পাঠানোর ব্যবস্থা না কল্লে আমরা অবিলম্বে কৌস্তুভ বিরোধী ফঞ্চ গঠন করব!

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

তাসনীম এর ছবি

দুর্দান্ত।

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

কৌস্তুভ এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

তথ্যবহুল, দারুণ গোছানো একটা পোস্ট। ড্যান ব্রাউনের "ডিসেপশন পয়েন্ট" বইটা পড়তে গিয়ে এই বিষয়টা জেনেছিলাম কিছু, বায়োলুমিনিসেন্স, হাবিজাবি। হাসি

কৌস্তুভ এর ছবি

ওহ ওইটা পড়েছি বলে তো মনে হয় না। ডা ভিঞ্চি কোডের ট্রিলজিটা পড়েছি কেবল, যদ্দুর মনে হয়।

তারানা_শব্দ এর ছবি

আলো অদ্ভুদ!!!

"মান্ধাতারই আমল থেকে চলে আসছে এমনি রকম-
তোমারি কি এমন ভাগ্য বাঁচিয়ে যাবে সকল জখম!
মনেরে আজ কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক-
সত্যেরে লও সহজে।"

কৌস্তুভ এর ছবি

চিন্তিত

দিগন্ত এর ছবি

দুর্দান্ত!


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

কৌস্তুভ এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

তুলিরেখা এর ছবি

আরে আরে আরেকটু হলেই ফস্কে যেত। ভাগ্যিস এসেছিলাম লগিন করেছিলাম! হাসি
খুব ভালো লেখা। বইটা সংগ্রহ করে ফেলি, কী বলো? চিন্তিত

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

তুলিরেখা এর ছবি

আর সেই বিজ্ঞানী ভদ্রলোকের কী হলো ঐ যে যিনি এইসব আলোজ্বালা জিন নিয়ে কাজ করতেন? এগুলো যত্ন সহকারে সহকর্মী বিজ্ঞানীদের পাঠিয়ে পাঠিয়ে শেষে নিজেই আর ফান্ডিং না পেয়ে মনের দু:খে গিয়ে গাড়ীর দোকানে কাজ করতেন? তাঁর কথা আছে বইটাতে?

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

কৌস্তুভ এর ছবি

আছে তো। তেনার কথাও আছে যিনি এই নিয়ে কয়েকবছর কাজ করার পর ফান্ডিংয়ের অভাবে ল্যাব তুলে দিয়ে মশা নিয়ে কাজ করতে চলে গেলেন। খাইছে

তুলিরেখা এর ছবি

আরে মশা কি কম গুরুত্বের হলো? ঘনাদার সেই নিশিমারার কথা মনে আছে? হাসি

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

আহারে, এই বুড়ো, না না প্রৌঢ় বয়সেও কত কিছু জানছি !

কৌস্তুভ এর ছবি

শুধু জানলেই হবে না, আমাদের মুখ চেয়ে কোরালের চাষাবাদ করুন খাইছে

রংতুলি এর ছবি

বাহ! কত কিছু জানলাম! চলুক

জেলীফিশের কথায় একটা মজার স্মৃতি মনে পড়ে গেল, আমার ছেলে আরও দুই বছর আগে সাউথপুল হাল এর সমুদ্দুরের নিচে একুয়ারিয়াম 'দা ডিপ' এ জ্বলজ্বলে জেলীফিশ দেখে আবিষ্কার করে ফেলছিলো যে ওদের 'লাইফ' আছে। অনেকক্ষণ তাকিয়ে তাকার পর, খুব বিজ্ঞের মত মুখ করে বললো - "হুম, দিস জেলীফিশ মাস্ট হাভ দা লাইফ!" ওর ধারণা হয়েছিলো অন্য যে মাছগুলো জ্বলছে না ওদের লাইফ নাই! হো হো হো

কৌস্তুভ এর ছবি

বাচ্চাদের কল্পনাশক্তির অন্ত নেই দেঁতো হাসি

টিউলিপ এর ছবি

চলুক

___________________

রাতের বাসা হয় নি বাঁধা দিনের কাজে ত্রুটি
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাই নে আমি ছুটি

কৌস্তুভ এর ছবি

চোখ টিপি

জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি

আচ্ছা, এইরাম একটা বাচ্চা বাচ্চা ছোট ছেলে এই ইয়া বড় একটা পোস্ট ক্যামনে লিখলো অ্যাঁ ? তাও আবার এইরাম জ্ঞানী জ্ঞানী কথা আর সোন্দর সোন্দর ছবিসহ ? আমিতো বুড়ি মানুষ, পুরাই তাজ্জব দেঁতো হাসি !

__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার

কৌস্তুভ এর ছবি

পোস্টটা তেমন বড় না, ছবিতে ছবিতে লম্বা হয়েছে খাইছে

জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি

তা অবিশ্যি ঠিক (ছোট ছেলেপিলেদের সব কথায় সায় দিতে হয়, কয়ে গেছেন রাম সন্যা) দেঁতো হাসি

__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার

হিমু এর ছবি

জোনাকির দৈনিক প্রথম আলোটা কোন দিক দিয়ে বেরোয় দেঁতো হাসি ?

কৌস্তুভ এর ছবি

দৈনিক পশ্চাত দেশ দিয়ে চোখ টিপি

জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি

দৈনিক ...দেশ ? বুড়ো হয়ে গেলাম এরাম কুনো পত্রিকার নাম তো শুনিনি অ্যাঁ

__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার

অতিথি লেখক এর ছবি

প্রিয় কৌস্তুভ, মুগ্ধ হয়ে গেছি বলাটা নিতান্ত-ই অল্প হয়ে যাবে। কি হল বলি। অনেক দিন আগের এক মজার বুড়োর লেখা একটা অসাধারণ বই-এর কথা মনে পড়ে গেল। আমি আবার সেই বইটাতে ফিরে গেলাম। গিয়ে আবার একই রকম আনন্দে ভাসলাম। এবং, তোমার এই লেখার জাত সম্বন্ধে নিশ্চিত হলাম। ‘বিশ্বপরিচয়’-এর পরিবার-এর-ই এ এক উজ্জল সদস্য। তোমার বাকি লেখাগুলো পড়ে ফেলতে হবে। সেই সাথে আরো নুতন লেখা পড়ার অপেক্ষায় থাকলাম। তোমার তুলনা তুমি-ই! (জোহরা-আপার সাথে আর আকচা-আকচি নয়, তাই তো! )
ভালো থেকো।
অমিত-দা
( এক লহমা )

জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি

এই হ’ল এক সমিস্যা সচলায়তনের । সকলেই এক একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র (এক্সেপ্ট জোহরা কুম্ভকর্ণ) দেঁতো হাসি

__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার

কৌস্তুভ এর ছবি

আপনি কি তবে গ্যালাক্সি? চিন্তিত

অতিথি লেখক এর ছবি

গড়াগড়ি দিয়া হাসি

জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি

কৌস্তুভ, আমি না হয় বুড়ি হয়েছি, তাই স্মৃতি ভংশ হই । আপনি কী করে ভুলেন যে আমি হ’লাম “কুম্ভকর্ণ” ।

__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার

কৌস্তুভ এর ছবি

এই অতি-প্রশংসার চিঁ চিঁ করে প্রতিবাদ করলুম

সাব্বির রহমান এর ছবি

হাততালি লেখা বেশি ভাল হইছে হাততালি

কৌস্তুভ এর ছবি

লইজ্জা লাগে

মরুদ্যান এর ছবি

কৌস্তুভ অদ্ভুদ!

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

কৌস্তুভ এর ছবি

ইশশ!

মাসুম আহমদ এর ছবি

চমৎকার টপিক - চমৎকার উপস্হাপনা

-------
মাসুম

কৌস্তুভ এর ছবি

থেঙ্কু হাসি

রাব্বানী এর ছবি

দারুন লিখেছেন! লাইব্রেরিতে দেখলাম বইটা আছে, উঠাতে হবে।

(শান্তনুদার লিঙ্কটাতে ক্লিক করলে কিন্তু এই লেখাতেই আসে, এটা কি ইচ্ছাকৃত?)

কৌস্তুভ এর ছবি

যাচ্চলে, ভাগ্যিস বললেন! মোটেই ইচ্ছাকৃত না, কপিপেস্টের গড়বড়। ধন্যবাদ। হাসি

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

বইটা কী করে জোগাড় করা যাবে সেটা একটা বড় প্রশ্ন। উঞ্ছবৃত্তিতে বাড়ীর বাইরে বের হলে খোঁজ করে দেখবো।

শীতল আলোর ব্যবহার নিয়ে এই পোস্টে যা পড়লাম সেই বিশাল ক্ষেত্রের বাইরে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে 'জ্যোতিবাবু'র প্রয়োজন মেটাতে জৈবিক শীতল আলো নিয়ে কী ভাবনা চিন্তা করা হচ্ছে সেটা জানতে চাই। incandescent থেকে fluorescent, সেখান থেকে light-emitting diode (মাঝখানের হ্যালোজেন, সোডিয়াম ইত্যাদির কথা বাদ দিলাম) - কৃত্রিম আলোর এই ক্রমবর্ধমান মূল্যের ও ক্রমহ্রাসমান ওয়াটেজের ব্যবস্থার মধ্যে তাপ কমানোর ব্যাপারটা চলে আসলেও জৈবিক শীতল আলোর ব্যাপারটা দৈনন্দিন ক্ষেত্রে আনার গবেষণা এখনো হালে পানি না পাবার কারণটা মনে হয় বাণিজ্যিক।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

কৌস্তুভ এর ছবি

কি জানি, হয়ত হচ্ছে, কিন্তু বাণিজ্যিক পর্যায়ে আসার উপযোগী হয়নি। স্যামসাং অর্গানিক এলিডি ব্যাপকহারে ব্যবহার করছে, কিন্তু সেটা শীতল আলো না।

তারেক অণু এর ছবি

দারুণ পোস্ট! আগে পড়া হয়েছিল, আজকে জানায়ে গেলাম।
ডেভিডের কী হইল! বিলেত আসুম না আসুম না, ও মনু?

কৌস্তুভ এর ছবি

তুমি তো সার্থককে এজেন্ট নিয়োগ করেছ, তারেই জিজ্ঞেস কর!

চরম উদাস এর ছবি

দারুণ লেখাটা পড়তে দেরি হয়ে গেল

অতিথি লেখক এর ছবি

দারুন একটা লেখা লেখা -গুড়- হয়েছে , দেরিতে পড়তে পেরেও আনন্দিত গুল্লি । অনেক কিছুই জানা হলো, জানার সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছি শুধু। আপনার বিজ্ঞান বিষয়ক লেখা পড়ে মনে হয় বিজ্ঞানের ছাত্র হিসাবে এখনো নার্সারীতে পড়ছি গড়াগড়ি দিয়া হাসি । তাই বুঝতে একটু দেরি হয় এই আর কি, তবে ঠিকি পড়তে পড়তে আয়ত্তে আসবে আশা করি, এখনকার মতো অনেক কিছু মাথার উপর দিয়ে উড়ে চলে যাবে না।

মাসুদ সজীব

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।