কুন্তলরহস্য

কৌস্তুভ এর ছবি
লিখেছেন কৌস্তুভ (তারিখ: শুক্র, ১৭/০৫/২০১৩ - ৯:১৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

“আপনার একঢাল সুন্দর ঘনকালো চুলের রহস্য কী?”

এই প্রশ্নটা টিভির বিজ্ঞাপনে সব নায়িকাকেই কোনো সাংবাদিক বা আবহভাষ্যকার বা ঈর্ষাতুরা বালিকা করে থাকে, এবং উত্তরটা হয় কিছু একটা কেশতৈলের নাম। কিন্তু ও সব মিছে... শ্যামের যে চাঁচরকেশের জন্য বৃন্দাবনের গোপিনীদের হুতাশে মরে যাওয়া নিয়ে বৈষ্ণব পদাবলী ছয়লাপ, তার বেলা? রবিঠাকুর যেসব বাঙালী যুবতীদের ছায়াময় এলোকেশ আকাশে-বাতাসে দেখে বেড়াতেন, সেসবই বা এল কোত্থেকে?

এর উত্তর পেতে গেলে, হে পাঠক, আপনাকে অর্ধেক পৃথিবী পেরিয়ে দক্ষিণ আমেরিকায় যেতে হবে। দুটো কারণ। প্রথমটা এই, যে আমি আপাতত তাদের লোকজনদের নিয়েই কাজ করছি যে! আমার প্রফেসর কলাম্বিয়ান, ল্যাবও ল্যাটিন লোকজনে পরিপূর্ণ – এই যেমন মাসকয়েক আগে আসা একটি খুকিকে নিয়ে স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম
ল্যাবে মোর এল এক নবীনা ল্যাটিনা
নাম তার আনা কারেনিনা।

তারপর কী হইল জানে শ্যামলাল – মানে সেখানে কারা কারা কতপরিমাণ হুতাশ এবং চিত্তচঞ্চলতা প্রকাশ করে গেছিলেন সে কথা নাহয় না-ই বললাম, আস্ত একটা চলচিত্তচঞ্চরি লেখা হয়ে যাবে তাহলে। মোদ্দা কথা হল, ওদিককার নানা দেশে নানা ইউনিভার্সিটির লোকজন আমাদের ইউনির সঙ্গে কোলাবরেশনে অনেক অনেক লোকেদের ডেটা সংগ্রহ করছে। ডেটা বলতে জুতোর মাপ, গায়ের রঙ, কান কটকট করে কি না, জীবিত কি মৃত, ইত্যাদি আবশ্যকীয় বিবরণ তো আছেই, তার সঙ্গে একটুখানি রক্ত নিয়ে সেটা থেকে ডিএনএ বের করে তার থেকে জিনটিন বের করাও আছে।

***************************

আমাদের ছোটোবেলায় টিভিতে ‘ক্যাপ্টেন ব্যোম’ বলে একটা আন্তঃগ্যালাক্টিক কল্পবিজ্ঞান সিরিয়াল হত, যেটায় চকচকে লেদারসুট আর শোলার বিশাল বন্দুক হাতে সুপারমডেল মিলিন্দ সোমান দৌড়াদৌড়ি মারপিট আর প্রেমটেম করত। তো যথারীতি সেইটায় নায়ক হচ্ছে এক পাগলা বৈজ্ঞানিকের একমাত্র সন্তান যে কিনা তার বাবার পরিচয় জানে না। ভিনগ্রহে এক বিধ্বস্ত স্পেসস্টেশনে অভিযান চালাবার সময় সে ওই বৈজ্ঞানিকের একখানা চুল পায়, তারপর সেখানেই ইলেকট্রিক চাটু’র মত একটা যন্তরে নিজেরও মাথা থেকে ছিঁড়ে একখানা চুল রাখতেই মনিটারের স্ক্রিনে ‘পোলা! পোলা!’ বলে ম্যাচিংয়ের ফল ভেসে ওঠে।

ব্যাপারটা ঠিক অতখানি সহজ না হলেও আজকালকার দিনে ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে পিতৃত্ব বের করা রুটিন পদ্ধতি হয়ে গেছে। আর আমাদের কাজের ব্যাপারটাও অনেকটা ওইরকমই, কেবল পিতার বদলে জাতি খোঁজা। তা সেসব বলার আগে একটু জিন-ক্রোমোজোম ইত্যাদির ব্যাপারগুলো একবার চট করে মনে করিয়ে দিই।

যদিও ডিএনএ জিনিসটা জোড়ায় জোড়ায় থাকে, মইয়ের মতন, পড়বার সময় একটা দিক পড়লেই চলে, অন্যদিকটা এটার প্রতিবিম্ব বলতে পারেন। তো টাইম-লাইফ বুকস’য়ের একটা চমৎকার সিরিজ আছে, ‘ফুডস অফ দি ওয়ার্ল্ড’ বলে, রেসিপিরাশি, তেইশ ভলিউমের। আমাদের প্রতিটা দেহকোষের নিউক্লিয়াসেও ডিএনএ-তন্তুর উপর জিনগুলো অমনই তেইশটা খন্ডে সাজানো আছে, যেগুলোকে বলে ক্রোমোজম। বইগুলোর মধ্যে একেকটা জিনকে একটা পূর্ণাঙ্গ রেসিপি ধরতে পারেন, যারা প্রস্তুত করে একটা আস্ত প্রোটিন। আর জানেন বোধহয়, ডিএনএ-তে সব তথ্য লেখা থাকে মাত্র চারটে অক্ষর দিয়ে, A T G C।

তো মানবদেহের এই বইগুলো পড়ার দরকার এই জন্য, যে সবার শরীর-মন তো একরকম হয় না, যার অর্থ রেসিপিতে নিশ্চয়ই ছোটখাট হেরফের থাকে। মুদ্রণপ্রমাদে যেমন বীরাঙ্গনা বারাঙ্গনা হয়ে অর্থ পুরো বদলে যেতে পারে, সেই রকম। এখন ছাপার ভুল তো অনেক রকমের হয়, একটা অক্ষরে ভুলচুক হওয়া যদিও সবচেয়ে সাধারণ গণ্ডগোল, একটা গোটা শব্দ হাপিস হয়ে যাওয়া বা ভুল শব্দ ছাপা এসবও হতে পারে। তো আমাদের এখনকার কাজ হচ্ছে প্রথম ধরনের মানে সবচেয়ে প্রচলিত ভুলগুলোকেই দেখা, যেখানে ডিএনএ-র সুতোয় একটা মাত্র জায়গা বদলে গিয়ে থাকে। এটার পোশাকি নাম SNP, আমরা ডাকি স্নিপ।

ডাক্তাররা নাক কেন ডাকে আর পিলে কেন চমকায় এইসব জটিল প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে এই নোটবুক থুড়ি রেসিপিবুকেই তদন্ত চালান; ক্যান্সার কোন কোন জিনে মুদ্রণপ্রমাদ হলে হতে পারে তাও কিছু কিছু খুঁজে বের করা গেছে।

তবে জিনে হেরফের হলে যে কেবল রোগবালাই-ই হয় তা না। প্রোটিন তো অনেক রকমেরই হয়, ধরেন হরমোনও একরকমের প্রোটিন, তো যাদের গ্রোথ হরমোন একটু কম তৈরি হয় তারা একটু কম লম্বা হবে, এইরকম।

একই রকম ভাবে গায়ের রঙ, চোখের রঙ ইত্যাদি অনেক প্রকট লক্ষণের পেছনেও জিন খুঁজে পাওয়া গেছে এইভাবে। উপায়টা এইরকম, যে একশজন লোককে নিন যাদের চোখের রঙ কালো, আর একশজন লোককে নিন যাদের চোখের মণি নীল। এবার এদের সবার জন্য ওই তিন বিলিয়ন অক্ষর লম্বা বইখানা পড়ে ফেলুন তাদের একটুখানি স্যাম্পল মেশিনের মধ্যে ঢুকিয়ে। তারপর কম্পিউটারকে খুঁজতে দিয়ে দিন, এর মধ্যে কোন খণ্ডের কোন রেসিপিটায় এদের দুদলের মধ্যে তফাত দেখা যাচ্ছে?

(অবশ্য ব্যাপার কি, মোট তিন বিলিয়ন অক্ষরের মধ্যে ৯৯%এর বেশিই সব মানুষের সমান, তা না হলে, মানে আবশ্যক প্রোটিন তৈরির রেসিপিগুলো সবার মধ্যে সমান না হলে তো রাণীর পেটে ব্যাঙ জন্মাতো। তাই হিউম্যান জিনোম প্রোজেক্ট কয়েক মিলিয়ন অক্ষরের একটা তালিকা করে দিয়েছে, যে কোন কোন বইয়ের কোন কোন রেসিপির কোন কোন জায়গায় মানুষদের মধ্যে সচরাচর হেরফের দেখা যায়। যন্তরগুলো শুধু ওই জায়গাগুলোই পড়ে।)

***************************

এইবার ল্যাটিন আমেরিকা নিয়ে কাজ করার দ্বিতীয় সুবিধাটায় আসি। সাম্বানৃত্যপটিয়সী ব্রাজিলিয়ান ললনা যারা অধিকাংশই পূর্ণ ইউরোপীয় বংশের, তাদের দেখে যেমন মনে হতে পারে সেটাই কিন্তু পুরো কাহিনী নয়। লাতিন লোকেদের মধ্যে গায়ের রঙ মুখের গড়ন ইত্যাদির অনেক হেরফের কাছে, মায় পুরো আফ্রিকান বংশীয় লোকজনও আছে; এবং আমার অভিজ্ঞতা বলে তাদের অনেককেই পুরো ভারতীয়দের মত দেখতে, না বলে দিলে বোঝার যো নেই!

এটার কারণ বুঝতে গেলে আমাদের ‘রেড ইন্ডিয়ান’ যাদের বলা হত সেই নেটিভ আমেরিকানদের আবির্ভাবের ইতিহাস জানা দরকার। উপরের পৃথিবীর ম্যাপটা দেখলে আদিযুগ থেকে মানুষের বিস্তারের একটা ধারণা পাবেন, যদি হলুদ-সবুজ চাকতিগুলোকে ভুলে গিয়ে আপাতত নীল তীরগুলোর উপর নজর করেন। আফ্রিকায় মানুষের পূর্বসূরীদের থেকে প্রথম আধুনিক মানুষ মানে হোমো স্যাপিয়েনসের উৎপত্তি হবার পর, প্রায় লাখখানেক বছর আগে (যখন আরবের উপকূল ছিল অনেক শস্যশ্যামল) তারা ওই পথ ধরে ভারতে আসে – এরাই ছিল দ্রাবিড় সভ্যতার পূর্বসূরী, এবং এসব জনজাতির অবশিষ্টাংশ এখন আন্দামান-নিকোবরের দ্বীপগুলোতে পাওয়া যায়। এরাই আরো এগিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া হয়ে অস্ট্রেলিয়ায় পৌঁছে যায় চল্লিশ-পঞ্চাশ হাজার বছর আগে। এই গতিপথটাকে প্রত্নতত্ত্ব দিয়ে স্টাডি করার সমস্যা এই যে, তখন সমুদ্রের জলস্তর ছিল কম, গোটা দ্বীপময় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ছিল একটা বিশাল স্থলভাগ – এখন সেসব অংশ এবং আরবের উপকূল বেশিরভাগই সমুদ্রের তলায়।

ওটা ছিল নিচের তীরটা; উপরের তীরটা হচ্ছে পরের দিকে যারা এসে এশিয়া-মাইনর অঞ্চলে বসতি করেছিল তাদের পথনির্দেশ। এখানেই ফর্সা রঙের ‘আর্য’দের উদ্ভব, যারা একদিকে ইউরোপে অন্যদিকে ভারতে ছড়িয়ে পড়ে। এক অংশ আবার মধ্য এশিয়া হয়ে চীনে ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে চৈনিক চেহারা বলতে আমরা যে রকমটার কথা বুঝি সেটার উৎপত্তি। তারা শীতলতর অঞ্চলে বসবাসের জন্য বিবর্তিত হয়, চ্যাপ্টা মুখ খাটো উচ্চতা ইত্যাদি। এরা ক্রমে উত্তরদিকে ছড়িয়ে সাইবেরিয়াতেও বসবাস করা শুরু করা, সেইসব চুকচি ইয়াকুৎ উপজাতি যাদের গল্প আমরা রুশ উপকথার বইগুলোয় পড়েছিলাম।

তারপর ১৫-২০ হাজার বছর আগে আইস এজের শেষদিকটায়, যখন সমুদ্রস্তর ছিল নিচু, এরা বেরিং প্রণালী সহজে পেরিয়ে উত্তর আমেরিকায় প্রবেশ করে। সেখানে এস্কিমো ইনুইট উপজাতিদের আবির্ভাব এভাবে। এরা ক্রমেই দক্ষিণ দিকে এগোতে থাকে, যেখানে আবহাওয়া ছিল গরম আর তাই নদীনালা বনজঙ্গল চাষবাস জীবজন্তু সবেরই সুবিধা ছিল। সেই সঙ্গে আবার খানিক উল্টো বিবর্তনও হতে থাকে, যেমন এদের গায়ের রঙ একটু গাঢ় হতে শুরু করে আবার। এরা একেবারে চিলির দক্ষিণ প্রান্ত অবধিও পৌঁছে গিয়েছিল। এরাই মায়া আজটেক ইনকা ইত্যাদি বিখ্যাত সভ্যতাদের পূর্বপুরুষ।

তারপরে ওই যে, ১৪৯২তে কলম্বাস আমেরিকা আবিষ্কারের পরে হুড়মুড়িয়ে স্প্যানিশ লোকজন ঢুকতে লাগল সেখানে, তারা মেরেকেটে রোগবালাই ছড়িয়ে কত যে লোক হাপিস করে দিল তার ইয়ত্তা নেই। সেই সঙ্গেই তারা পশ্চিম আফ্রিকা থেকে দাস আনাও শুরু করল। এইভাবে তিনটে জনজাতির মিশ্রণ হয়ে একেবারে সুপের হাঁড়ির মত অবস্থা হল সে দেশের জিন পুলের, সব ঘেঁটে ঘ।

এখন একটু ভাবলেই দেখতে পাবেন, ভারতের অবস্থাটাও খুব অন্যরকম না। আফ্রিকার উত্তরসূরী দ্রাবিড় জনজাতি, ইউরোপীয়দের পূর্বসূরী আর্য জাতি তো আছেই, আর চীনাদের প্রতিনিধি মোঙ্গল থেকে বার্মিজ এরাও নিয়মিত হাজিরা দিয়েছে, রবিবাবু স্মর্তব্য।

***************************

এই প্রোজেক্টে প্রাথমিক ধাপ হিসেবে সব ভলান্টিয়ারদের তাদের অ্যানসেস্ট্রি রিপোর্ট উপহার দেবার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। তাদের কত % আমেরিকান রক্ত, কত % ইউরোপিয়ান আর কতটা আফ্রিকান, এই হিসাবটা। এটা করা বেশ সোজা। মনে করে দেখুন, স্নিপ হচ্ছে বা/বী(রাঙ্গনা) এই একটা অক্ষরের হেরফের। আমরা আন্তর্জাতিক ডেটাবেস থেকে যেসব প্রচলিত মুদ্রণপ্রমাদ দুনিয়াজুড়ে ভালরকম স্টাডি করা হয়েছে তাদের একটা তালিকা নিলাম, আর তার থেকে ৪০টা স্নিপ বেছে নিলাম এই দেখে যে তারা এই জনগোষ্ঠীগুলোর মধ্যে স্পষ্টভাবে আলাদা।

সহজে বুঝতে গেলে আসুন দুটো স্নিপ নিই। এক্ষেত্রে হিসেবটা এইরকম - ১ নম্বরটা সম্পর্কে আমরা জানি যে ‘বী’ শুধু ইউরোপে দেখা যায়, আফ্রিকায় ‘বা’। ২ নম্বরটার ইউরোপে দেখা যায় ম(রু) আর আফ্রিকাতে গ(রু)। এইবার একটা লোকের এই দুটো ঘরে কোন কোন অক্ষর আছে গুনে নিয়ে, কোনটা কোন জাতির সেই অনুপাতটা কষে নিলেই হিসাব রেডি। যে বী+ম সে ১০০% ইউরোপিয়ান, যে বা+গ সে ১০০% আফ্রিকান, আর বাকি দুটো কম্বিনেশনে ফিফটি-ফিফটি।

(চল্লিশটা নেওয়া হয়েছিল কারণ যত কম নেব তত কম খরচ, অথচ মোটামুটি প্রিসিশন পাওয়া চাই। এর সঙ্গে আলিবাবার কোনো সম্পর্ক নাই।)

একই ভাবে পিতৃত্বর হিসাবটাও করা যায়। যদি কারো বাবার আর মায়ের দুজনেরই ‘বা’ থাকে, কিন্তু তার নিজের থাকে ‘বী’, তার মানে এইখানা সে অন্য কোনো উৎস থেকে পেয়েছে – হয় সে দুজনের দত্তক নেওয়া সন্তান, নয়ত সে তার সামাজিক পিতার বায়োলজিকাল চাইল্ড নয়।
(কেবল দুয়েকটা জায়গায় হেরফের হলে সেটা স্বতন্ত্র মিউটেশন, বা স্রেফ ডেটা এরর বলেও ধরে নেওয়া যেত, কিন্তু যেহেতু আমাদের হাতে এখন কয়েক মিলিয়ন ঘর মেলানোর উপায় আছে, অনেকটা নিশ্চিত হয়েই বলা যায়। এবং কাজ করতে করতে যদি এরকম অপ্রত্যাশিত কিছু চোখে পড়েই যায়, সেটা ভলান্টিয়ারদের না জানানোর জন্য কড়া প্রোটোকল থাকে।)

***************************

তো আমরা যখন সব ভলান্টিয়ারদের জন্য এই ডেটাগুলো নেড়েচেড়ে দেখছিলাম, তখন দেখতে পেলাম যে দুনম্বর ক্রোমোজমে দুটো স্নিপ হাইলি সাসপিশাস – তারা চুলের প্রকারভেদের সঙ্গে খুব স্পষ্টভাবে জড়িত (চোখের রঙের গল্পটা মনে করুন)। চুলের রকমফের জিনিসটা খুব সহজেই চোখে পড়ে – চীনাদের চুল কালো, নিপাট সোজা এবং পুরুষ্টু তাই স্বাস্থ্যবান, আমেরিকায় দেখেছি চীনা যুবতীদের চুল নিয়ে শ্বেতাঙ্গী যুবতীদের কত ঈর্ষা। ইউরোপের দিকে ব্লন্ড ব্রুনেট ইত্যাদি হালকা রঙের ঢেউখেলানো চুলের হার বেশি, আর আফ্রিকার কালো কোঁকড়া চুল তো সবাই চেনেনই। এরকম প্রকট একটা জেনেটিক লক্ষণের উপর ন্যাচারাল সিলেকশনও বেশি হবার সম্ভাবনা।

নিচের ছবিটায় চল্লিশটা স্নিপের জন্য সিগনাল স্ট্রেংথের গ্রাফ দেখতে পাবেন; তলার অক্ষে কোনটা কত নম্বর ক্রোমোজমের মধ্যে বসে সেই সংখ্যা। ওই দুটোর নাম দিলাম S1, S2.

আমরা ঠিক করলাম, এটা আরো ভাল করে তদন্ত করা দরকার। যেহেতু যত ডিটেলে পড়া হয় তত খরচা বেশি, বেছে অল্প কিছু লোকের স্যাম্পল বিশদ জিন পাঠের জন্য পাঠানো হল, যাতে প্রায় আধা মিলিয়ন SNP এর তথ্য আসবে।

সেখান থেকে দেখলাম ওই দুটো স্নিপ ‘ইডার’ নামে একটা জিনের মধ্যে বসা, এবং ওই জিনের বাকি অনেকগুলো স্নিপের সঙ্গেও সিগনাল স্ট্রেংথ বেশ বেশি। এই জিনের মধ্যে থাকা সবকটা স্নিপের জন্য সিগনাল স্ট্রেংথের গ্রাফ পরের ছবিটায়।

সবচেয়ে বেশি যে স্নিপটার সঙ্গে (নাম দিই S*), প্রকাশিত পেপারটেপার ঘেঁটে দেখা গেল যে এটা ভালমতই জানা সেটা একটা বড় প্রোটিনকে বদলে দেয়, যার ফলে চুলের গঠনের পরিবর্তন হয়; দেখা গেছে ইঁদুরের উপর এক্সপেরিমেন্ট করে – যেসব ইঁদুরকে ধরে ওটা বদলে দেওয়া হয়, তাদের শজারুর মত খাড়া খাড়া রোম হয়ে ওঠে!

তাহলে ইঁদুরের চুল যদি মোটা আর শক্ত হয়ে যায়, তেমনটাই মানুষের হওয়াও বিচিত্র নয়। ওই S* স্নিপটার দুরকম ছাপার প্রকারভেদ – নাম যদি দিই A আর B, তাহলে A দেখা যায় ইউরোপ আর আফ্রিকায়, ওদিকে B দেখা যায় চীনে, স্পষ্টতই সেখান থেকে আমেরিকায় এসেছে ‘রেড ইন্ডিয়ান’ জনগোষ্ঠীর পথ ধরে। আমাদের লোকেদের মধ্যে দেখা গেল, যত আমেরিকান রক্তের অনুপাত বাড়ে ততই B-র অনুপাতও বাড়ে, আর সেই সঙ্গে বাড়ে সোজা চুলের অনুপাত।

এর পরের কাজ ছিল আরেকটা আন্তর্জাতিক ডেটাবেস থেকে দুনিয়ার কোন জনজাতিতে A/B কোনটার অনুপাত কেমন সেটা খুঁজে বের করে আমাদের ওই অনুমানকে প্রতিষ্ঠিত করা। উপরে ম্যাপটায় সেটাই দেখানো হয়েছে, হলুদ দিয়ে A আর সবুজ দিয়ে B – হলুদটাকে আদিম বলা হচ্ছে কারণ ওটাই প্রথমে সবার মধ্যে ছিল, মানে সব আফ্রিকান আদিম মানুষের মধ্যে কেবলমাত্র A টাইপটাই ছিল। সত্যি বলতে ওটা তখন স্নিপ-ও ছিল না কারণ কোনো মুদ্রণপ্রমাদ তখনও শুরুই হয় নি। সেভাবেই ইউরোপেও গেল। কিন্তু পূর্ব এশিয়ায় যাওয়ার পথে কোনো এক সময় মিউটেশন হয়ে ওখানে B-এর আবির্ভাব হয়, এবং সেটা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে ওই দিকে।

সবুজ-হলুদ চাকতিগুলো সরল পাই চার্ট – কোন জনগোষ্ঠীতে A/B দুটোর অনুপাত কেমন তাই দেখায়। আফ্রিকা, ইউরোপ এবং ভারতে প্রায় সবাই হলুদ, অন্যদিকে পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় মূলত সবুজ, এবং সেই অনুযায়ী পুরো উত্তর-দক্ষিণ আমেরিকাতেও। (পাই-গুলোর উপরে জনগোষ্ঠীর নাম, এই যেমন Isrl. = Israel, JPT = Japanese from Tokyo, Mel. = Melanesian ইত্যাদি।)

অতএব আমাদের তদন্ত এখানেই সমাপ্ত করা গেল, একাধিক তথ্যপ্রমাণ দ্বারা ইডার জিনের ওই বিশেষ স্নিপটিকে অভিযুক্ত সাব্যস্ত করা গেছে, এবং তার (বিবর্তনীয়) গতিবিধি-কর্মপন্থা সবই ধরে ফেলা গেছে। এরপর কবিদল কোনো সুন্দরীর অলকদাম নিয়ে উচ্ছ্বাসগাথা রচনা করার সময় তার মধ্যে ইডারের জন্যও দুয়েকটা প্রশস্তিবাক্য রাখবেন আশা করি!

***************************

মুদ্রণপ্রমাদ যে কতদূর সব ঘেঁটেঘুঁটে দিতে পারে তা নিয়ে একটা গল্প মনে পড়ে গেল, সেটা বলেই শেষ করি। সেটা মধ্যযুগের কথা, ছাপাখানা তখনও বহুদূর, চার্চে চার্চে রাখা থাকত বাইবেল ইত্যাদি পুরোনো পুঁথি আর নবীন সন্ন্যাসীরা কষ্ট করে সেসব হাতে হাতে কপি করত। তা সদ্য চার্চে যোগ দেওয়া এক উৎসাহী যুবকের মনে হল, আমরা কপি করছি গত প্রজন্মের লিপিকারদের থেকে, তারা করেছে তার আগের প্রজন্মের থেকে, এইভাবে চলে এসেছে; মূল পুঁথিগুলো ডেলিকেট তাই সেগুলো কেউ নাড়াচাড়া করে না – কিন্তু যদি কেউ একবার কপি করতে কোনো ভুল করে, সেই ভুলটাই তো তার পর থেকে প্রচলিত হয়ে যেতে থাকবে? কেন না আমি একটু কষ্ট করে চার্চের মূল ভল্টে গিয়ে মূল পুঁথিটার থেকেই কপি করি?

তাকে নিয়মিত ভল্টে যেতে দেখে একদিন প্রধান পাদ্রীর কৌতূহল হল, তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলেন ব্যাপার কি। ব্যাখ্যা শুনে বৃদ্ধের মনে হল, আরে তাই তো, এমনভাবে কেউ এতদিন ভাবে নি কেন? এরপর তিনিও সারাদিন কাজের শেষে রাত্রিবেলা পড়াশুনা করতে ভল্টে যাওয়া আরম্ভ করলেন।

একদিন মাঝরাত্রে তিনি ভল্ট থেকে “ইউরেকা, ইউরেকা” বলে লাফাতে লাফাতে বেরিয়ে এলেন। শোরগোল শুনে সবাই চার্চ ইয়ার্ডে দৌড়ে এল। তিনি উত্তেজিত গলায় বললেন, “এতদিন আমরা সবাই একটা r মিস করে চলেছিলাম!” কেউ কিছু বুঝতে না পেরে হাঁ করে চেয়ে আছে দেখে তিনি বললেন, “আমাদের প্রতি অধ্যাদেশের শব্দটা ছিল celebrate!”


মন্তব্য

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

দ্রুত পড়লাম। আরেকবার পড়ে কিছু প্রশ্ন করবো। যতারীতি অসাম! হাসি

কৌস্তুভ এর ছবি

নিশ্চয়ই, প্রশ্ন হোক!

মরুদ্যান এর ছবি

প্রথমে সবই বুঝতেসিলাম, গ্রাফে আইসা প্যাঁচঘোঁচ লাইগা গেল মন খারাপ

শেষ লাইনটা বুঝিনাই।

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

শেষ লাইন না বুঝলে ক্যামনে কী?

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

কৌস্তভ বস্লুক।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

কৌস্তুভ এর ছবি

লইজ্জা লাগে

কৌস্তুভ এর ছবি

সেলিব্রেট থেকে আর বাদ দিলে পড়ে থাকে সেলিবেট, মানে চিরকুমার দেঁতো হাসি

কৌস্তুভ এর ছবি

কিন্তু গ্রাফের ব্যাপারগুলো তো আমি কথাতেও লিখে দিয়েছি, ওদিকে নজর না গেলেও তো মুশকিল হবার কথা নয়?

মেঘা এর ছবি

দেঁতো হাসি দেঁতো হাসি দেঁতো হাসি

কিছুই বুঝতে পারি নাই দেঁতো হাসি আমি বিজনেসের স্টুডেন্ট ইয়ে, মানে...

আরেট্টু সোজা করে লিখলে কি হয়? মন খারাপ

--------------------------------------------------------
আমি আকাশ থেকে টুপটাপ ঝরে পরা
আলোর আধুলি কুড়াচ্ছি,
নুড়ি-পাথরের স্বপ্নে বিভোর নদীতে
পা-ডোবানো কিশোরের বিকেলকে সাক্ষী রেখে
একগুচ্ছ লাল কলাবতী ফুল নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছি

কৌস্তুভ এর ছবি

মন খারাপ

স্পর্শ এর ছবি

কদিন আগে যে তথ্যটা জেনে ধাক্কা খেয়েছি তা হলো, আমরা নাকি এখনো একটা আইস এজের মধ্যেই আছি, যেটা শুরু হয়েছিলো 2.58 মিলিয়ন বছর আগে। অবশ্য আর দশ পনের বছরের মধ্যেই এর সমাপ্তি ঘটার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

চুলের প্রকারভেদ নিয়ে গবেষণার বর্ণণা দারুণ লাগলো। তো শুধুই কি চুল নাকি লতিন বালিকাদের অন্যান্য আকর্ষণীয় ফিচার নিয়েও গবেষণা চলছে? চোখ টিপি


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

কৌস্তুভ এর ছবি

বালিকা কেন, আমরা তরুণ-তরুণী-বৃদ্ধ-বৃদ্ধা সবাইকে নিয়েই কাজ করে থাকি খাইছে
সবই আছে, চোখের রঙ থেকে মুখের গড়ন...

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

ঘুরায়ে জবাব দিলে হবে?

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

কৌস্তুভ এর ছবি

ঘুরালাম কই!

মাহবুব লীলেন এর ছবি

মারিচ্ছে। এখন তো দেখি বনলতা সেন কবিতা সংশোধন করা লাগব

চুল তার কবেকার ইডার-জিনে স্লিপ খাইয়া হারাইছে দিশা

কৌস্তুভ এর ছবি

খাইছে, এখন তিথীডোর আপনাকে যদি বাগে পায়...

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

চুল তার কবেকার ইডার-জিনে স্লিপ খাইয়া হারাইছে দিশা

হো হো হো

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

প্রদীপ্তময় সাহা এর ছবি

লেখাটা বেশ সুন্দর। অনেক কিছু জানতে পারলাম।
কিন্তু ঐ গ্রাফ দেখে একটু ঘবড়ে গেছিলাম।

তবে কমিক্সটা কিন্তু জব্বর দাদা দেঁতো হাসি

কৌস্তুভ এর ছবি

দেঁতো হাসি

উপরে যা জিগালাম - গ্রাফের ব্যাপারগুলো তো আমি কথাতেও লিখে দিয়েছি, ওদিকে নজর না গেলেও তো মুশকিল হবার কথা নয়?

ঈয়াসীন এর ছবি

চলুক

------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।

কৌস্তুভ এর ছবি

দেঁতো হাসি

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

বিষয়বস্তু সব বুঝি নাই, তবে দারুণ দারুণ সব তথ্য পাওয়া গেল। বাকিটা পরীক্ষার প্রস্তুতির মতো মুখস্ত করে নিলেই হবে।

কৌস্তুভ এর ছবি

এগুলা কী কন! এক্সাম দিবেন ক্যান?

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

গুরু গুরু
আপনে বস লোক..... আর কিছু কৈতাম না। হাততালি

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

কৌস্তুভ এর ছবি

যাহ দুষ্টু

অতিথি লেখক এর ছবি

বিজ্ঞানের অন্যতম জটিল একটি বিষয়ের অবতারনা করেছেন কাব্যিক আবহে, ব্যাপারটা খুবই চমৎকার হয়েছে, পোষ্টে তাই পাঁচতারা। আমার কিছু পর্যবেক্ষন, কিছু ভিন্নমত এবং প্রশ্ন আছে-

১।

তারা ওই পথ ধরে ভারতে আসে – এরাই ছিল দ্রাবিড় সভ্যতার পূর্বসূরী, এবং এসব জনজাতির অবশিষ্টাংশ এখন আন্দামান-নিকোবরের দ্বীপগুলোতে পাওয়া যায়।

ভারতে আগমনকারী এই প্রথম অভিবাসীদের দ্রাবিড় সভ্যতার পূর্বসূরী বলাটা কি খুব বিভ্রান্তিকর নয়? নৃতাত্বিক বিচারে তারা (অভিবাসীরা) ছিল নেগ্রিটো(আফ্রিকার বাইেরর নিগ্রো), তাদের সামান্য কিছু অবশেষ এখনও অবিকৃতভাবে রয়ে গেছে আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের কয়েকটি দ্বীপে(নিকোবারে নয়, সেখানের আদিবাসীরা মঙ্গোলয়েড নৃ-গোত্রের)। এই নেগ্রটো নৃ-গোষ্ঠী থেকে উদ্ভব ঘটেছিল অষ্ট্রোলয়েড নৃ-গোষ্ঠীর, কারো মতে ভারতেই, কারো মতে ভারতের বাইরে। বর্তমান ভারতের সিংহভাগ মানুষ জিনগতভাবে এই অষ্ট্রোলয়েড নৃ-তত্বের ধারাই বহন করে চলেছে। জিনগতভাবে এই ধারা সবচেয়ে বেশী বিদ্যমান অষ্ট্রিকভাষী এবং দ্রাবীড়ভাষী আদিবাসীদের মধ্যে, তবে উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম ভারত, পাকিস্তান, উত্তর-পূর্ব ভারত ছাড়া অন্যান্য অঞ্চলে সিংহভাগ ভারতীয় মানুষ এই ধারাই বহন করছে। আবার জিনগত বিশ্লেষন অনুযায়ী মুন্ডারী ভাষাভাষী অষ্ট্রিকরা ভারতীয়দের মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীন।

দ্রাবীড় ভাষা ও সংস্কৃতির উৎপত্তি ভারতে নাকি ভারতের বাইরে, এর পক্ষে বিপক্ষে বহু মত রয়েছে, তবে প্রথম অভিবাসীদের সাথে দ্রাবীড়দের সংযোগ যে খুব একটা ঘনিষ্ট নয় তার প্রমান হলো আন্দামানের আদিবাসী কিংবা দক্ষিন ও দক্ষিন পূর্ব এশিয়ার অন্য কয়েকটি নেগ্রিটো জনগোষ্ঠী- যেমন ভারতের ইরলা, মালয়েশিয়ার সেমাং, ফিলিপাইনের আয়োটা, আগটা ও ইটা, বা থাইল্যান্ডের মানি, কারও ভাষা ও সংস্কৃতির সাথেই দ্রাবীড়দের ন্যূনতম মিলও নেই। বরং ভূমধ্যসাগরীয় প্রাচীন সভ্যতার সাথে তাদের বেশ কিছু বিষয়ে মিল দেখে অনেকের ধারনা দ্রাবীড়ভাষীরা হয়তো দশ-পনের হাজার বছর আগে ভারতে প্রবেশ করে ভারতীয় আদি জনগোষ্ঠীর মাঝে তাদের ভাষা ও সংস্কৃতির বীজ বপন করতে সমর্থ হয়েছে।

২।

অন্যদিকে পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব আফ্রিকায় মূলত সবুজ, এবং সেই অনুযায়ী পুরো উত্তর-দক্ষিণ আমেরিকাতেও।

এখানে পূর্ব ও দক্ষিন-পূর্ব আফ্রিকার স্থলে পূর্ব ও দক্ষিন-পূর্ব এশিয়া হবে কি?

৩। আপনি জেনেটিকস এবং নৃতত্ব নিয়ে কাজ করেন জেনে খুব ভাল লাগলো, আমার একাডেমিক পড়াশুনা সম্পূর্ন ভিন্ন বিষয়ে হলেও আগ্রহের কারনে প্রধানতঃ ইন্টারনেটে এ বিষয়ে কিছু পড়াশুনার চেষ্টা করি। বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীতে ওয়াই ক্রোমোজমাল ডিএনএর বৈশিষ্ট নিয়ে কোন কাজ হয়েছে কিনা, এ বিষয়ে ইন্টারনেটে কোন তথ্য উপাত্ত আছে কি না জানাতে পারেন?

৪। স্নিপ কি শুধুই মুদ্রনপ্রমাদ? নাকি পরিবেশ প্রতিবেশের কারনে প্রয়োজনের তাগিদে এই এই ভিন্নতার সূচনা ঘটে?

আব্দুল্লাহ এ.এম.

কৌস্তুভ এর ছবি

১। এইটা নিয়ে আগের একটা পোস্টে আমার আর হিমুদার অল্প কথা হয়েছিল, এ বিষয়ে জেনেটিক প্রমাণ এখনও স্পষ্ট নয়, তার কারণ এইসব জনগোষ্ঠীর ডেটার স্বল্পতা। দেখা যাক ভবিষ্যতে কী জানা যায়।

২। ধন্যবাদ, বদলে দিয়েছি। হাসি

৩। দেখি, কিছু নজরে এলে জানাব।

৪। স্নিপ শুরু হয় যে মিউটেশন দিয়ে, সেটা শুধুই মুদ্রণপ্রমাদ। প্রকৃতি সেটাকে ফোর্স করতে পারে না। প্রাকৃতিক কারণে (যেমন বেশি সূর্যালোক ফলে বেশি ইউভি) হয়ত বেশি বেশি মিউটেশন হতে পারে, অথবা ক্রোমোজমের কোনো কোনো জায়গায় এমনিতেই মিউটেশন বেশি হয় (মিউটেশন হটস্পট), কিন্তু ঠিক কোথায় মিউটেশন হবে এবং কী পরিবর্তন হবে, এগুলো অনিশ্চিতই। একবার মিউটেশন হয়ে গিয়ে স্নিপ তৈরি হলে তখন সেটা ছড়িয়ে পড়বে কি না সেটা তার এফেক্টের উপর নির্ভর করে, সিলেকশন তাতে যেমন প্রভাব ফেলে তেমনই হয়।

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার আগের লেখাটিও পড়লাম, চমৎকার। তবে দ্রাবীড় প্রশ্নে আপনার ভাষ্যের সাথে আমার দ্বিমত আছে। নৃতাত্বিক দৃষ্টিকোন থেকে ভারতীয়দের হ্যাপলোগ্রুপ এবং হ্যাপলোটাইপ নিয়ে এখন পর্যন্ত অনেকগুলো ষ্টাডি হয়েছে, তার অনেকগুলো নেটে পাওয়া যায়। সে সকল ষ্টাডি থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট, ভারতের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ মাইট্রোকনড্রিয়াল ডিএনএ এ্যানালাইসিসে হ্যাপলোটাইপ-এম এর কোন একটি সাবক্লাড ধারন করে, যেটা আউট অব আফ্রিকার একেবারে প্রথম দিকের মিউটেশন। এটা দ্রাবীড়ভাষী কাষ্ট পিপলদের মাঝে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় আছে, দ্রাবীড়ভাষী ট্রাইবদের মধ্যে উচ্চমাত্রায় আছে। অষ্ট্রিকভাষী ট্রাইবদের মাঝেও উচ্চমাত্রায় আছে, আবার ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষী(হিন্দী, বাংলা, মারাঠি, পাঞ্জাবি) কাষ্ট পিপলদের মাঝেও আছে, এমনকি হিন্দীভাষী ট্রাইবালদের মধ্যেও উল্লেখযোগ্য মাত্রায় আছে। তবে সবচেয়ে প্রাচীন সাবক্লাড আছে অষ্ট্রিকভাষী ট্রাইবালদের মাঝে, সুতরাং আন্দামানের নেগ্রিটোদের পরে মুন্ডারী ভাষাভাষী অষ্ট্রোলয়েডরাই ভারতের প্রাচীনতম জনগোষ্ঠী। ভারতে দ্রাবীড় ভাষাভাষী অনেকগুলি ট্রাইবাল জনগোষ্ঠীর অস্তিত্বের কারনে একসময় অনেক নৃতাত্বিক পন্ডিত তাদের সবচেয়ে প্রাচীন ভারতীয় জনগোষ্ঠী বলে মনে করতেন। কিন্তু আধুনিক ডিএনএ বিশ্লেষন পদ্ধতির কারনে নৃতত্বের ধারনা এখন অনেকটা বদলে গেছে।

প্রাসঙ্গিক বিধায় অনলাভ বসু, পার্থপ্রতিম মজুমদার, সুশান্ত রায়চৌধুরী প্রমূখের সমন্বয়ে গঠিত একটি গ্রপের ২০১০ সালের একটি ষ্টাডি পত্রের মূখবন্ধের কিয়দংশ নিচে উদ্ধৃত করলাম-

"We report a comprehensive statistical analysis of data on 58 DNA markers (mitochondrial [mt], Y-chromosomal, and autosomal) and sequence data of the mtHVS1 from a large number of ethnically diverse populations of India. Our results provide genomic evidence that (1) there is an underlying unity of female lineages in India, indicating that the initial number of female settlers may have been small; (2) the tribal and the caste populations are highly
differentiated; (3) the Austro-Asiatic tribals are the earliest settlers in India, providing support to one anthropological hypothesis while refuting some others; (4) a major wave of humans entered India through the northeast; (5) the Tibeto-Burman tribals share considerable genetic commonalities with the Austro-Asiatic tribals, supporting the hypothesis that they may have shared a common habitat in southern China, but the two groups of
tribals can be differentiated on the basis of Y-chromosomal haplotypes; (6) the Dravidian tribals were possibly widespread throughout India before the arrival of the Indo-European-speaking nomads, but retreated to southern India to avoid dominance; (7) formation of populations by fission that resulted in founder and drift effects have left their imprints on the genetic structures of contemporary populations; (চাল্লু the upper castes show closer genetic
affinities with Central Asian populations, although those of southern India are more distant than those of northern India; (9) historical gene flow into India has contributed to a considerable obliteration of genetic histories of contemporary populations so that there is at present no clear congruence of genetic and geographical or sociocultural affinities."

নৃতাত্বিক বিভাজন অনুযায়ী ভারতীয় জনসত্বার ভিত্তি হলো- ১. নেগ্রিটো, ২. অষ্ট্রোলয়েড, ৩. মঙ্গোলয়েড এবং ৪. ককেশয়েড। ট্রাইবাল অষ্ট্রিক এবং ট্রাইবাল দ্রাবীড়দের মাতৃধারায় পাথর্ক্য সামান্য, উভয়ই প্রবলভাবে অষ্ট্রোলয়েড। কিন্তু ভাষা ও সংস্কৃতিগত ভাবে পার্থক্য বিশাল। ভাষা ও সাংস্কৃতিগত ভাবে ভারতীয় বিভাজনটা হলো ১. অষ্ট্রিক, ২. দ্রাবীড়, ৩. টিবেটো-বার্মান, ৪. ইন্দো-ইউরোপীয়। আধুনিক ভারতের অধিকাংশ মানুষ ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা ও সংস্কৃতির ধারক, আবার বিপুল সংখ্যক মানুষ দ্রাবীড় ভাষা ও সংস্কৃতির ধারক।

আব্দুল্লাহ এ. এম.

কৌস্তুভ এর ছবি

একটা জিনিস মনে রাখা দরকার, সেই ব্রিটিশ আমলে তৈরি 'নৃতাত্ত্বিক বিভাজন' এখন বহুলাংশে পুরোনো ও অপ্রতুল হয়ে পড়েছে। তখন কেবল কিছু চেহারার বৈশিষ্ট আর ভাষা দেখে এটা তৈরি করা হত, এবং অনেক বিতর্কের অবকাশ থাকত। এখন মাইটোকন্ড্রিয়াল আর Y-ক্রোমোজোম ভিত্তিক ক্লাসিফিকেশনের মত প্রিসাইজ সাইন্টিফিক মেথড ছিল না ওটা। আপনার উধ্বৃত শেষ লাইনেই দেখতে পাচ্ছেন।

ইয়ে, পেপারটা অনেক পুরোনো, ২০০৩ সালের। এনাদের ভালই চিনি, আমারই আগের ইউনির কিনা।

এই নিয়ে আমি দৃঢ়ভাবে কিছু বলতে চাইব না কারণ আমার কাজের বিষয় এটা নয়, আর পপুলেশন জেনেটিক্সে আমার পড়াশোনাও অল্প। এক কাজ করুন না, আপনার যা যা জানা একটা সামারি করে লেখা দিন না এখানে।

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার মতামত এবং পরামর্শের জন্য ধন্যবাদ। ইয়ে, পেপারটা অত পুরোনো নয়, এটা ২০১০ সালের। লইজ্জা লাগে

তারেক অণু এর ছবি

চমৎকার !
হাততালি মাথার টাক নিয়ে কিছু বলবে না? ঐটা নিয়ে একটা লেখা দিও।

আরে সেই ল্যাতিনার নাম ক্যারোলিনা ছিল, কারেনিনা নয় হে ভূতনাথ চোখ টিপি

কৌস্তুভ এর ছবি

হুঁ আমাদের কাজে টাকের হিসেবও মাপা হচ্ছে। সারা ম্যাডামের খড়মের বাড়িতে তোমারও টাক পড়ুক তারপর দিব নে।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

এখানে একটু জিরাইতে আসি, আর আপনি (নাকি তুমি বলেছিলাম আগে, ভুলে গেছি) স্নিপের প্যাঁচে ফেলতেছেন। আহারে, এক সময় বেশ আগ্রহ ছিল এই জিনিসে মন খারাপ

এখনো একটু একটু আছে অবশ্য।

কৌস্তুভ এর ছবি

ওমা, মায়ামির আলাপে তো দিব্যি তুমি বলে আদরযত্ন করলেন, সব ভুলে গেছেন গা?

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

আর যাতে না ভুলি তাই গুগল ডকে লিখে রাখলাম।

চরম উদাস এর ছবি

হাততালি

কৌস্তুভ এর ছবি

আপনার কমেন্ট এলেই ভয়ে ভয়ে থাকি, কীসব ছবি পোস্ট করে বসেন!

চরম উদাস এর ছবি

খাইছে
চোরের মন র‍্যাব র‍্যাব

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

অর্ধেক পড়ে বুঝলাম যে আপনি এই বিষয়ে কিছুই জানেন না। আমার কাছ থেকে জেনে নিন।
১। যারা রেগুলার সাবান দিয়ে স্নান করে, তাদের ডিএনএ থাকে না
২। চুল নিয়া এসব হাম্বিতাম্বির যুগ শেষ, এখন দুনিয়াজোরা পচুর হেয়ার এক্সপার্ট। তারা আফ্রিকার মানুষদের মাথায় ইউরোপিয়ান চুল আর ল্যাটিনদের মাথায় আরবের চুল গজায়ে দিতে পারে।
৩। চেহারার সাদা কালো নিয়াও সমস্যা নাই। ফেয়ার এন্ড লাভলী আছে।
অতএব এইসব ভ্রান্ত বিজ্ঞান চর্চা বন্ধ কইরা 'লাইনে আসুন'

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

কৌস্তুভ এর ছবি

হো হো হো চলুক

সুমিমা ইয়াসমিন এর ছবি

হো হো হো

সুমিমা ইয়াসমিন এর ছবি

চমৎকার হাততালি

কৌস্তুভ এর ছবি

দেঁতো হাসি

রাব্বানী এর ছবি

আপনার সিদ্ধান্ত মানতে পারলাম না, কে বা কাহারা ইডার জিনের সর্বনাশ করিয়াছে তাহার দ্বায় কেন ভিকটিমের উপরেই চাপায়ইয়া দিতেছেন?তবে ইডারের কেরামতি মনে হচ্ছে অনেক: ত্বক, চুল, নোখ, দাঁত ইত্যাদির উপর তার প্রভাব রয়েছে।

কৌস্তুভ এর ছবি

হুমম, ইডার মনে হয় বাংলা চলচ্চিত্রের নাইকা...

সুরঞ্জনা এর ছবি

আরে বাহ! একটানে পড়ে ফেললাম, চমৎকার গোছানো লেখা। হাসি
সবচেয়ে ভালো লাগলো মানানসই কৌতুক/কার্টুনগুলো।

নতুন পড়া ইন্টারেস্টিং বই গুলো নিয়ে রিভিউ পোস্ট চাই, পড়ে জ্ঞানের হরাইজন বিস্তৃত করি। দেঁতো হাসি

............................................................................................
এক পথে যারা চলিবে তাহারা
সকলেরে নিক্‌ চিনে।

কৌস্তুভ এর ছবি

ইনফার্নো পড়লাম, কিন্তু ওটার রিভিউ দিলে সব মাটি!

বুড়া এর ছবি

এই বিষয়ের ছাত্র নই, তাই দুটি বালখিল্য প্রশ্ন করতে চাই। আমরা জানি অমিশ্রিত জাতিগোষ্ঠীর কিছু কিছু শারীরিক বৈশিষ্ট্য থাকে, যার পরিবর্তন ঘটে না। যেমন, মঙ্গোলয়েডদের চোখের epicanthic fold, ইত্যাদি ইত্যাদি। তাদের মূল জন্মভূমি আফ্রিকায় এইসব বৈশিষ্ট্যের অনেকগুলিরই দেখা মেলে না। তারা এগুলি অর্জন করলো আপনি যেমন বলেছেন, ‘তারা শীতলতর অঞ্চলে বসবাসের জন্য বিবর্তিত হয়, চ্যাপ্টা মুখ খাটো উচ্চতা’, শুধু এর দ্বারাই?
দ্বিতীয়ত, আদিমানবরা, যতদূর জানি সংখ্যায় বিশাল কিছু ছিল না, জীবনযাত্রাও ছিল কষ্টসাধ্য, ছোট দলে খাদ্যসংগ্রহ আর নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা করতেই ব্যস্ত থাকতো। গড় আয়ু ২২-২৫এর বেশি বোধহয় ছিল না। এরা কী কারণে, ক্রমাগত নিজের পরিচিত চারণভূমি ছাড়তে চাইতো অজানার উদ্দেশে? চরৈবেতি নীতি নিয়ে মরুপর্বত ডিঙিয়ে ঐ বিশাল পথ পেরিয়ে এক মহাদেশ থেকে ক্রমে আর এক মহাদেশ, এর পিছনে তাড়নাটা কী ছিল? মনে কী হয়, তারা এমন যাত্রার পক্ষে যথেষ্ট সক্ষম ছিল?

আব্দুল্লাহ এ.এম এর ছবি

যদি ব্যাপারটা এই দৃষ্টিভঙ্গী থেকে দেখা হয় যে তারা একদিন আফ্রিকার সাভানা অঞ্চল থেকে মনস্থীর করে বেড়িয়ে পড়লো লেভান্ত হয়ে পারস্য হয়ে ভারত হয়ে অষ্ট্রেলিয়ার পথে, তাহলে সেটা মোটামুটি অসম্ভবের পর্যায়ে পড়ে। কিন্তু ব্যাপারটা সেভাবে ঘটে নি। তারা ছিল দীর্ঘদিন ধরে হান্টার-গ্যাদারার, খাদ্যের সন্ধানে তারা ঘুরে বেড়াতো। মূলতঃ খাদ্যের সন্ধানেই তাদের স্থানান্তর ঘটতো, তার সাথে যুক্ত হয়েছিল নানা প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা, নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগীতা এবং বৈরীতার ব্যাপারটিও নিশ্চিতভাবেই ছিল। সাভানা থেকে লেভান্তে(ইসরাইল-ফিলিস্তিন) আসতে তাদের হয়তো কয়েক বছর বা কয়েক দশক লেগে গিয়েছিল, সেখান থেকে তাদের উত্তর-প্রজন্মের মানুষদের ইরানে আসতে লেগেছিল কয়েকশত কিংবা কয়েকহাজার বছর।

আব্দুল্লাহ এ.এম.

কৌস্তুভ এর ছবি

আফ্রিকা থেকে বেরিয়ে আসার পর মানুষের যে এতগুলো পরিবর্তন, সবকটার সম্পর্কেই তো তাহলে আপনার এই প্রশ্নটা তোলা যায়। যেগুলো সম্পূর্ণভাবে ছড়িয়ে পড়েছে (যেমন ইউরোপীয় ও চৈনিকদের সাদা চামড়া, যা নিয়ে লেখা এইখানে), সেগুলো সবই একটা খুচরো মিউটেশন হিসেবেই শুরু হয়েছিল। তারপর পরিবেশে কোনোরকম অ্যাডভান্টেজ পেয়েছে, তাই বিবর্তনীয় চাপের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

আহা, তারা কি রানারের মত মাঠ থেকে মাঠে ছুটত নাকি? বেশি জমির দখল নেওয়া, দূরে কি আছে সেটা দেখতে চাওয়া, এটা তো মানুষের স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্যই। ধরুন এক জায়গায় বসতি অনেক বেড়ে যাবার ফলে স্থান সঙ্কুলান হল, বা গাছপালা/পশুপাখি ফুরিয়ে আসতে লাগল, তখন তো অল্প অল্প করে অন্য দিকে যাবেই।

বুড়া এর ছবি

ঠিক তাই। ভিন্ন ভিন্ন permanent physical feature যুক্ত যেসব জাতিগোষ্ঠী, তারা সবাই ‘আকস্মিক’ (খুচরোর পরিবর্তে)মিউটেশনের ফল, এটা বিশ্বাস করা শক্ত। এইরকম মিউটেশন হয়ে থাকলেও প্রাথমিকভাবে তা নিশ্চয় পাইকারি ছিল না, আর সেই লোকেরাই গোটা গোষ্ঠীকে তাদের মতো বানিয়ে ফেললো, আদিরা বিনাবাক্যব্যয়ে উবে গেল। এমনটাই হলো এবং তা হলো সর্বত্র

আপনি বলছেন লাখখানেক বছর আগে এবং Homo Sapiensরা আফ্রিকা থেকে ক্রমে চীন দঃপূঃএশিয়ায় পৌঁছচ্ছে। কিন্তু ওইসব দেশে Homo Sapiensএর পূর্ববর্তী fossil evidence আছে।তারা ধর্তব্যের মধ্যে আসবে না কেন? আসলে আফ্রিকা মনুষ্যজন্মের একমাত্র আঁতুড়ঘর, এই তত্ত্ব প্রমাণ করতেই এত বিপত্তি।

কেন মানুষ ক্রমাগত মাইগ্রেট করবে, তার উত্তরে আব্দুল্লাহসাহেব এবং আপনি বলছেন মূলত খাদ্যের সন্ধানে। ‘বসতি অনেক বেড়ে যাবার ফলে স্থান সঙ্কুলান হল (না), বা গাছপালা/পশুপাখি ফুরিয়ে আসতে লাগল’, কীভাবে আমরা আধুনিক ধারণাকে অতীতের ঘাড়ে চাপাই, এটি তার উত্তম উদাহরণ। অনুমান ছিল এমন উত্তর আসবে যেজন্য বলে রেখেছিলাম এদের জনসংখ্যা খুবই কম হতো, গড় আয়ু ছিল কম (তাত্পর্য খাদ্যসংগ্রহ না করে বসে খায়, এমনটা শিশুরা ছাড়া আর কেউ নেই, ফলে খাদ্যের প্রয়োজন কমে)।সঠিক জনসংখ্যা বলা অসম্ভব, তবে এটুকু বলা যায় আফ্রিকার বিশাল সাভানা অঞ্চলের তুলনায় তা নিতান্তই নিতান্তই ক্ষুদ্র। ‘বসতি বেড়ে যাওয়া’, ‘গাছপালা/পশুপাখি ফুরিয়ে আসা’ অলীক কল্পনা। আর এমনই চাপ, তার ঠেলায় আফ্রিকাএশিয়াদঃপূঃএশিয়া ঘুরে অস্ট্রেলিয়া!

মুশকিল হচ্ছে হাতে অকাট্য তথ্য আছে, কিন্তু বাস্তবপ্রমাণ কিংবা বাস্তবসম্ভাব্যতার সঙ্গে মিলছে না।তখন এইরূপ সমস্যা, এই আর কি।

অতিথি লেখক এর ছবি

@বুড়া, ঠিক কি কারনে বুঝতে পারছি না, আপনি আধুনিক মানুষ অর্থাৎ হোমো সেপিয়্যান্স সেপিয়ান্স এর মাইটোকনড্রিয়াল এবং ওয়াই ক্রোমোজমাল বিবর্তনের মূল বাস্তবতাটা হিসেবের মধ্যে আনছেন না। মাইটোকনড্রিয়াল ঈভ এবং ওয়াই ক্রোমোজমাল এ্যাডামের ডিএনএ এর সাথে বর্তমান মানব সমাজের প্রতিটি মানুষের একটা মূলগত মিল আছে, আবার বিবর্তনগত পার্থক্যও আছে। আধুনিক বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে এই মিল এবং পার্থক্যের সবচেয়ে গ্রহনযোগ্য ব্যাখ্যা হলো আউট অব আফ্রিকা তত্ব। আধুনিক মানুষের উৎপত্তি এক স্থানে হয়েছে, নাকি ভিন্ন ভিন্ন স্থানে স্বতত্ন্র ভাবে হয়েছে, এ নিয়ে বিজ্ঞানী মহল দীর্ঘদিন দুটি মতে বিভক্ত ছিল। কিন্তু রেবেকা ক্যান, মার্ক ষ্টোনকিং এবং সি এ্যালান ১৯৮৭ সালের জানুয়ারী সংখ্যা নেচার পত্রিকায় তাঁদের গবেষনাপত্র প্রকাশের পর থেকে এই বিরোধ ধীরে ধীরে কমে আসে। এখন জেনেটিক নৃতত্ববিদদের কেউই বোধ হয় মানুষের এককেন্দ্রীক উদ্ভবের বিষয়ে দ্বিমত পোষন করেন না। একটি বাস্তব উদাহরন দেই-
একসময় অনেক বিজ্ঞানীদের ধারনা ছিল পূর্বতন প্রজাতিসমূহ থেকে বিভিন্ন স্থানে আলাদা আলাদা ভাবে আধুনিক মানুষদের(হোমো সেপিয়েন্স) বিভিন্ন প্রজাতির (রেস) উদ্ভব হয়েছে, পিকিং ম্যান এবং জাভা ম্যান এর অনেকগুলো ফসিল আবিস্কৃত হওয়ার ফলে(এখন নিশ্চিত হওয়া গেছে এইগুলি আমাদের পূর্বতন হোমিনিড হোমো ইরেক্টাসদের ফসিল) এইরুপ ধারনা দৃঢ় হয়েছিল। বিশেষ করে জাত্যাভিমানী চীনাদের দৃঢ় বিশ্বাস যে তারা আলাদা ভাবে ভিন্নতর পূর্ব প্রজাতি থেকে বিকষিত হয়েছে। এই বিশ্বাস সেখানে সর্বস্তরে এতই দৃঢ় যে স্কুলের নিম্নপর্যায় থেকে এই মতবাদ তাদের পাঠ্যসূচীতে অন্তর্ভূক্ত। জেনেটিক প্রযুক্তির বিকাশের সাথে সাথে আউট অব আফ্রিকা তত্ব সারা বিশ্বের বিজ্ঞানী মহলে প্রতিষ্ঠা পেয়ে গেলে ২০০১ সালে সাংহাই বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক বিজ্ঞানী জিন লী সেই তত্বটিকে ভ্রান্ত প্রমানিত করার জন্য বিশাল এক উদ্যোগ গ্রহন করেন। তিনি চীন এবং দক্ষিন ও দক্ষিন-পূর্ব এশিয়ার ১৬০ টি মানব গোষ্ঠী থেকে ১২ হাজার মানুষের ওয়াই ক্রোমোজমাল ডিএনএ সংগ্রহ করে পরীক্ষার ব্যাবস্থা করেন। তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস এবং আশা ছিল যে চীনাদের ডিএনএ অবশ্যই অন্যদের থেকে ভিন্নরুপ হবে। কিন্তু ফলাফল বিশ্লেষন করে অবাক বিস্ময়ে তিনি লক্ষ করেন এর মধ্যে একটি ডিএনএ ও আফ্রিকার ওয়াই ক্রোমোজমাল এ্যাডামের আদি ডিএনএ থেকে আলাদা নয়। অবশেষে তিনি আনন্দের সাথে স্বীকার করে নেন, বিশ্বের সকল মানবগোষ্ঠী একই উৎস থেকে উদ্ভূত এবং আমরা সবাই পরস্পরের রক্ত সম্পর্কিত নিকটাত্মীয়।
কেন এইরুপ মূলগত সাদৃশ্য, কেনইবা আবার স্থান-কালগত বিসাদৃশ্য, সে বিষয়ে যদি ভিন্ন কোন বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার বিষয়ে আপনার জানা থাকে, তাহলে পরিবেশনের অনুরোধ রইল।

আরেকটি বিষয়, আপনি মাইটোকনড্রিয়াল ডিএনএ, ওয়াই ক্রোমোজমাল ডিএনএ এবং নিউক্লিয়াসের অন্যান্য ডিএনএ ও তাদের মিউটেশনকে এক সাথে গুলিয়ে ফেলেছেন। মাইটোকনড্রিয়াল এবং ওয়াই ক্রোমোজমাল ডিএনএ মিউটেশনে মানুষের কোন শারীরিক পরিবর্তন ঘটে না, এটা শুধু পূর্ব প্রজন্মের সাথে পরবর্তী প্রজন্মের ডিএনএর কালগত পার্থক্যের রেকর্ড মাত্র।

প্রাচীন মানুষেরা শুধুমাত্র খাদ্যের কারনেই স্থানান্তরে গমন করেছে, ব্যাপারটা সেরকম নয়, তার পিছনে হাজারটা কারন থাকতে পারে, এমনকি খাদ্যের বিষয়টাও বহুমাত্রিক হতে পারে। যেমন ধরুন এক স্থানে একটি দল কয়েক প্রজন্ম ধরে অবস্থান করছে, কয়েক বর্গমাইলব্যাপী তাদের বিচরনস্থলে খাদ্যের কোন অভাব নেই। কিন্তু তাদের পানীয় জলের উৎস ঝর্নাটি প্রাকৃতিক কারনে ধীরে ধীরে শুকিয়ে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় তারা নতুন একটি আবাসস্থলের সন্ধান করবে যেখানে ফলমূল পশুপাখীও আছে, আবার পানীয় জলও আছে। হতে পারে সেটা পাঁচ-দশ মাইল দূরবর্তী স্থান, আবার পঞ্চাশ-একশ মাইল দূরের কোন স্থানও হতে পারে।

আব্দুল্লাহ এ.এম.

শুভায়ন এর ছবি

চুল নিয়েও গবেষণা? চুলোচুলি করা বন্ধ করে এবার এক্টু এলিবিলি কাটা হোক, নাকি? ফিতের মাপ তো ২৬ পেরিয়েছে! চিন্তিত

লেখায় গুরু গুরু তা সে আমার নিরেট মটকায় না পশিলেও। ইয়ে, মানে...

কৌস্তুভ এর ছবি

ফারাবী এর ছবি

লেখার বিষয়বস্তু এত সহজভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে যে মনে হচ্ছে আনসেস্ট্রি নিরুপণ কোন বিষয়ই না, দুই-তিন রকম অল্টারনেটিভ একটার উপর একটা ফেলায় দেখলেই হইল। এর মানে হইতাছে, লেখা সফল। দেঁতো হাসি ছবি-গ্রাফ সব মিলায়ে লেখায় উত্তম জাঝা!

ফারাবী

কৌস্তুভ এর ছবি

তাই তাই? বাহ বাহ, অনেক ধন্যবাদ দেঁতো হাসি

চলছি আমি এর ছবি

ইডার

কাজি মামুন এর ছবি

কঠিন লেখা! (শক্ত ও পোক্ত - দু' অর্থেই!)
বিবর্তন রাজ্যের অনেকখানি জায়গা খুব দ্রুত ঘুরিয়েছেন। কিন্তু একটা আক্ষেপ রয়ে গেছে, চুল পড়ে যাওয়ার জেনেটিক কারণ এবং হারানো চুল ফিরিয়ে আনার জেনেটিক চিকিৎসা সম্পর্কে জানার কিঞ্চিত কৌতূহল ছিল, কৌস্তুভদা!

কৌস্তুভ এর ছবি

আহা, টাক নিয়ে উইকিতেই দেখুন না কী বলা আছে...

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

তুমুল লাগল! অতিব মজাদার। আমার কাজকর্ম নিরস টাইপ - ঐটা নিয়ে এতবড় লেখা দিলে লোকজনে আমাকে ব্যান করবে। আপনার বিষয়বস্তু সেটার উল্টো। এক নিশ্বাসে ড়ে ফেলতে পারলাম।

কমিকটা ফাটাফাটি।
শেষের জোকটাও বাঘের বাচ্চা

কৌস্তুভ এর ছবি

থ্যাঙ্কু থ্যাঙ্কু দেঁতো হাসি

স্যাম এর ছবি

কঠিন বিষয়টা এত সহজে বুঝে ফেললাম যে এখন মনে হচ্ছে - ও! বিষয়টা সহজ ই ! (কৌস্তভ দা এত সহজ জিনিসপাতি নিয়ে নাড়াচারা করে?! অ্যাঁ আগে ভাবতাম ব্যানার বানানোই পৃথিবীর সবচে সহজ কাজ দেঁতো হাসি )

কৌস্তুভ এর ছবি

আরে নাহ, ব্যানার বানানো অনেক স্কিলের ব্যাপার! স্যামদা আপনি ভচমানু (কপিরাইট বুনোদি)

জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি

আচ্ছা, বাচ্চা ছেলে পিলে এত এত জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা করলে শেষে মাথায় কি আর একটা চুলও থাকবে? তারপরে সেটল হওয়ার কি হবে? চিন্তিত

__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার

কৌস্তুভ এর ছবি

ওমা, গুরুজনেরা সব তাইলে আছে কী করতে?

জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি

কৌস্তভ, মনে থাকে যেন। গুরুজনদের কথা ছাড়া যদি কোন বালিকার কুন্তল রহস্য মোচনে যাওয়া হয়েছে... খাইছে

__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার

তুলিরেখা এর ছবি

দারুণ লেখা!
ঐ "ক্যাপ্টেন ব্যোম" কি টিভিতে হতো?
টাকে চুল গজাবার জিনটা যদি খুঁজে বার করতে পারো, তারপরে সেটাকে টার্ন অন করার কায়দা বার করতে পারো, তাহলে আর দেখতে হবে না, বাকী জীবনের জন্য নিশ্চিন্ত। হাসি দেখতে দেখতে বিলিয়ন কামিয়ে একেবারে গেট সেট হয়ে যাবে, বিশাল লাইন পড়ে যাবে তোমার প্রাসাদের সামনে। হাসি

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।