“মৌ, দেখো, গণ্ডোলা! আমরা গণ্ডোলায় চড়ব!”
একটা ভালোরকম ধমক দিয়ে ওর উচ্ছ্বাসটা দমাতে হয়। ভেনিসের ট্রেন স্টেশনটা এমন বুদ্ধির সঙ্গে তৈরি করা যে বেরোলেই সামনে খাল, ছবির মত ব্রিজ, মধ্যযুগীয় স্থাপত্য, মূর্তি এবং সেই সঙ্গে ভেনিসের প্রতীক-প্রায় গণ্ডোলা সবকিছুই এক পলকে সামনে এসে পড়ে সবাইকে প্রথম দর্শনেই হকচকিয়ে দেয়। কিন্তু লাস্যময়ী ব্লন্ড-সহ তরুণ বা স্ফীতোদর বিগতযৌবন সাহেব, অথবা তৃতীয়বিশ্বের হঠাৎ-বড়লোক, এদের ‘ত্যাগেই আনন্দ’ প্রমোদবিহারের জন্য ঘন্টায় দু’শ ইউরো দর হাঁকে যে বস্তু তাতে ওঠার প্রয়োজন দেখি না। আর হালচাল দেখে ব্যাপারটা মনোরম নৌকাবিহার বলে মনেও হয় না। নৌকার নাকের ডগায় এক দামড়া সায়েব আর চতুর্দিকে ক্যামেরা-হাতে হ্যাংলা ট্যুরিস্ট নিয়ে যাই হোক রোমান্স হয় না। তার উপর ভেনিসের খালে নৌকার ভিড় ওয়াশিংটন ডিসির বেল্টওয়ের ট্রাফিককে হার মানায়। নিরিবিলি বোটিং আমরা ভালই করেছি বস্টনের দিনগুলোয়, সামারে চার্লস নদীতে টু’সিটার কায়াক ভাড়া করে। হাসপাতালটাকে ছাড়িয়ে আরেকটু পূর্বদিকে এগিয়ে গেলেই চারিদিকে কোথাও কিছু নেই কেবল নিস্তরঙ্গ জলের উপর ঝুঁকে আসা নিবিড় জঙ্গল...
গ্র্যান্ড ক্যানাল ভেনিস শহরের মূল ধমনীর মত, ওয়াটারবাস সেটাকে এড়িয়ে এই দ্বীপ-শহরের বাইরের দিক দিয়ে ঘুরে সোজা পৌঁছে যায় সান মার্কো স্কোয়ারে। সান মার্কো স্কোয়ারের প্লাজাই শহরের মূল প্রাণকেন্দ্র আর ট্যুরিস্ট স্পট। দূর থেকেই দেখতে পাই উঁচু কাম্পানিলে টাওয়ার। জলের পাড়েই শহরের শাসক ডজ’দের প্রাসাদ, আর তার চারিদিকে লোক থিকথিক করছে। গন্ডোলার সামনে যে বেঁকানো নাকের মত অংশটা সেটার নকশা নাকি এই ডজ’দের টুপি থেকেই এসেছে। প্রাসাদটা এখন চমৎকার এক মিউজিয়াম, সময় পেলে যেতে হবে।
সান মার্কো ব্যাসিলিকায় ঢুকতে পাই না – রোববার সকাল তাই ভেতরে প্রার্থনা চলছে, ট্যুরিস্টরা ঢুকতে পারবে ফের দুপুরবেলা। গির্জার সামনে বিশাল প্লাজাটায় খানিকক্ষণ হাঁটাহাঁটি করি। দোতলার বারান্দা থেকে যেন লাফ দিয়ে পড়ে ছুটে যেতে চাইছে দুই জোড়া তামার ঘোড়া, দেখে কোনার্কের সূর্যদেবের রথের ঘোড়াগুলোর কথাই মনে পড়ে। ট্রেনে আসতে আসতে ইনফার্নো বইটা পড়ছিলাম, বইয়ের মাঝামাঝি আছি, গল্প এখন ভেনিসে। সেখানে এখন প্রফেসর রবার্ট ল্যাংডন তরুণী সিয়েনা’কে বোঝাচ্ছে এদের ইতিহাস। এই ডজ বংশের সন্তান, অন্ধ এনরিকো দান্দোলো নাকি পোপ হয়ে ক্রুসেডে নেতৃত্ব দিয়ে কনস্ট্যান্টিনোপল গেছিল, এবং জয়ের পর এই ঘোড়াগুলোকে বিজয়স্মারক হিসেবে ভেনিসে নিয়ে আসে। তবে এত বড় মূর্তিগুলোকে জাহাজে বওয়ার সুবিধার জন্য তাদের মুণ্ডু ঘ্যাচাং করে ফেলতে হয়। তাই সেই জোড়ের জায়গাটা ঢাকতে তাদের গলায় সুসজ্জিত বকলস বসানো হয় পরে। তাও এগুলো আসল মূর্তি নয়, সেগুলো জরাগ্রস্ত হয়ে পড়ায় মিউজিয়ামে সরিয়ে রেখে এখানে রেপ্লিকা বসানো।
এইজন্যেই ড্যান ব্রাউনের বই পড়তে ভাল লাগে। পাতি থ্রিলারের মধ্যে সাহিত্যগুণ খুঁজতে গিয়ে যারা তাকে নিন্দেমন্দ করে আমি তাদের মধ্যে পড়ি না। আমি ড্যান ব্রাউনের বইগুলো পড়ি তাতে জায়গাগুলোর চমৎকার বর্ণনা আর ইন্টারেস্টিং ইতিহাস মিশিয়ে দেওয়া থাকে বলে। ইতালিতে আমরা প্রথমে পৌঁছই রোমে। সেখানে সেন্ট পিটার’স ব্যাসিলিকা, ভ্যাটিকান প্যালেস, পিয়াজা নাভোনা, ট্রেভি ফাউন্টেন ইত্যাদির দারুণ ডিটেল আগেই পড়ে রেখেছিলাম এঞ্জেলস অ্যান্ড ডিমনস-য়ে। যেন চোখে দেখার আগেই অর্ধেক মনে মনে দেখে রাখা। বেড়ানোর ক্ষেত্রে দারুণ সহায়ক। সিনেমাটায় অবশ্য ধর্মানুভূতিকে আতুপুতু করতে গিয়ে ঘেঁটে ঘ করেছে, কিন্তু সেটা তো বইয়ের দোষ না।
আবীর অবশ্য লঘু সাহিত্য পড়ার আনন্দের জন্যই এইসব থ্রিলার পড়ে। সারাদিন নটা থেকে নটা অফিস করার পরে গুরুগম্ভীর ক্লাসিকস পড়তে ইচ্ছা না করলে কাউকে দোষ দেওয়া যায় না। আর এখন বাড়িতে শ্বেত-সিংহাসনের আরামে বসেই হোক কিংবা অফিস যাওয়ার পথে সাবওয়েতে দাঁড়িয়ে, ট্যাবলেট-কিন্ডল এগুলো বই পড়া ব্যাপারটাকে অনেক সুবিধার করে দিয়েছে। তার বইটা পড়া শেষ, আমার সঙ্গে সেটা নিয়ে কথা বলার জন্য হাঁকপাঁক করছে কিন্তু সুবুদ্ধিবশত চুপ করে আছে। এদিকে আমায় ইতালি আসার দিন সকালবেলা অবধিও গুছ গুচ্ছ পরীক্ষার খাতা মার্কিং করতে হয়েছে তাই বেশিদূর এগোতে পারি নি। তবে চটপটই শেষ করে ফেলব।
ড্যান ব্রাউন লোকটা তার প্লটের মোটামুটি ৯৯%ই রিসাইকল করে প্রতিটা বইতে। এবং আমাদের ছোটবেলার হিন্দি ফিল্মগুলোর পরিচালকদের মত তার একটা ফেটিশ দেখা যায় প্রত্যেকটা গল্পেই – ভিলেন যেমন অসহায়া নায়িকাকে বন্দী করে অনেকক্ষণ ধরে মুহাহাহা করে কিন্তু শেষ মুহূর্তে আঙুরফল টক হয়ে যায় - ধর্ষণের ঠিক আগের মোমেন্টে নায়ক এসে সবাইকে পিটিয়ে ভাগিয়ে দেয় – কেননা নায়িকা তো পবিত্রতার প্রতিমূর্তি, তাকে নায়কের সঙ্গে শেষ সিনে বিয়ে দিতে হলে তার সতীত্ব অটুট রাখা আবশ্যক (ওদিকে ভিলেনের হাতে নায়কের বোনের শ্লীলতাহানি হয়ে আত্মহত্যা করা জায়েজ আছে)। এই বইতে দেখছি জনসেবা করতে গিয়ে সিয়েনা একদল বস্তির ছোকরার হাতে ধরা পড়েছে, ঠিক ধর্ষণ হবে-হবে এমন সময় ছোকরারা এক বুড়ির হাতে বাড়ি খেয়ে পালায়। অ্যাঞ্জেলস অ্যান্ড ডিমনস গল্পেও লোলুপ অ্যাসাসিন নায়িকাকে বেঁধে রেখে অনেকক্ষণ ধরে হাত বোলায় কিন্তু ঠিক যখন ইয়ে করতে যাবে তখনই রবার্ট ল্যাংডন এসে পড়ে, মারপিট হয় এবং শেষে বারান্দা থেকে পড়ে গিয়ে দুষ্টের অন্ত হয়।
সারাদিন ভেনিস বেড়িয়ে আর বিখ্যাত ভেনেশিয়ান গ্লাসের – ম্যুরানো দ্বীপে তৈরি হয় বলে এখানে ম্যুরানো গ্লাস বলে – নানা স্যুভেনির কিনেটিনে রাত্রে হোটেলে ফিরে আনন্দবাজার খুলে একটু খবর পড়তে বসলাম। হেডলাইন দেখলাম সেই চিরন্তন টপিক – কলকাতার কাছেই কামদুনি নামের কোনো এক জায়গায় তরুণীকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে, মমতাদিদি নানারকম প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন কিন্তু ত্যাঁদড় পরিবারবর্গ ক্ষতিপূরণ চায় না, তারা খুনির শাস্তি চায়। ইল্লি আর কি। প্রথম মহিলা মুখ্যমন্ত্রী পাওয়ার পর আমরা আশা করেছিলাম কিছু অন্যরকম হবে হয়ত, কিন্তু দিল্লিতে শীলা দীক্ষিত যেমন কলকাতায় মমতাও তেমন; বরং পার্ক-স্ট্রিট শ্লীলতাহানির ঘটনায় তদন্তরত পুলিশ অফিসারকে সরিয়ে দিয়ে উল্টো সিগনালই দিয়েছেন। অবশ্য কিছুই আশ্চর্য না। আমাদের লাইনে হাসাহাসি করে বলা হয়, সারাজীবন চিরকুমার থাকতে থাকতে একদিন পার্মানেন্ট মাথা গরম হওয়া অনিবার্য – ধর্ম যতই পাপ বলে হাউমাউ করুক, বিবর্তন আমাদের শরীরকে যৌনকর্মের জন্যই তৈরি করেছে, সেলিবেট থাকতে যাওয়াই বরং প্রকৃতির নিয়মবিরুদ্ধ।
তবে কখন থামতে হয় তা মানুষ জানে না। আমাদের ভুঁড়িই এটার বড় প্রমাণ। আদিম যুগে যখন খাবার ছিল দুষ্প্রাপ্য, বিবর্তন আমাদের করে তুলেছিল পাকা ফল ইত্যাদি শর্করার ভাঁড়ারের প্রতি লোলুপ। আর ওদিকে চর্বি ইত্যাদি স্নেহপদার্থ যেহেতু শরীরে জমা থাকতে পারে খাদ্যাভাবের সময়ে শক্তির জোগান দেওয়ার জন্য, আমরা সেগুলোর প্রতিও লোভী হয়ে পড়ি। এখনকার ঘি-মাখন-কেক-পেস্ট্রির অফুরান জোগানের কথা কে আর ভাবতে পেরেছিল!
সন্তানোৎপাদনের ক্ষেত্রেও কথাটা একই রকম সত্যি। তখনকার দিনে অল্পসংখ্যক শিশুই পূর্ণবয়স্ক অবধি বেঁচেবর্তে পৌঁছতে পারত, আর বুনো জন্তু বা ভিন্ন গোষ্ঠীর আক্রমণ থেকে বাঁচাই হোক কিংবা খাদ্য সংগ্রহ, সংখ্যাই শক্তি। কিন্তু আজকের দিনে যেরকম অবস্থা তাতে এত মানুষের খাদ্য-বাসস্থান ইত্যাদি বেসিক চাহিদা যোগানোই মুশকিল হয়ে পড়েছে। বইটায় দেখছি এর উপরে জনৈক প্লেগ মাস্ক-পরা (ভেনিসের সিগনেচার) পাগলা বৈজ্ঞানিক লম্বা লেকচার দিচ্ছে অনিয়ন্ত্রিত জনসংখ্যা জোর করে কমাবার জন্য অনুপ্রাণিত করে, এবং তার আবিষ্কার নাকি ঠিক এটাই করতে যাচ্ছে যা থামাবার ক্ষমতা কারো নেই।
আর আদিম বস্তু বলেই ধর্মগুলোতেও সন্তান উৎপাদনের উপর এত গুরুত্ব। তার জন্য যতগুলো বিয়ে কর সমস্যা নেই। হিন্দুশাস্ত্রে যেমন ডিভোর্স মানে স্ত্রীকে ত্যাগ করা মানা, কিন্তু – কিন্তু স্ত্রী যদি বন্ধ্যা হয় তাহলে নতুন আরেকটা বিয়ে করতে কোনো সমস্যাই নেই। “পুত্রার্থে ক্রিয়তে ভার্যা”। ক্যাথলিক চার্চও বলে সন্তান জন্মের মত পবিত্র কর্তব্যের মধ্যে কণ্ডোম এনে বাগড়া দেওয়া ঘোর পাপ। আফ্রিকায় এডস ইত্যাদি যৌনরোগ এবং জন্মহার কমানোর জন্য আমাদের সব প্রচেষ্টাতেই তারা তাদের বিপুল কোষাগার নিয়ে যথাসাধ্য বাগড়া দিয়ে চলেছে। ওদিকে মনে পড়লে হাসি পায়, লন্ডনের ন্যাশনাল গ্যালারিতে সে দেশের রাজাদের উপর প্রদর্শনীতে দেখেছিলাম, পুত্রসন্তান দিতে না পারায় রাজা অষ্টম হেনরি তাঁর রাণী ক্যাথরিনকে ডিভোর্স দিয়ে অ্যানে বোলিন-কে বিয়ে করতে চান, ক্যাথলিক চার্চ তাতে ক্যাঁওম্যাঁও করছে বলে তাদের দুচ্ছাই করে রাজা নিজে একটা চার্চ অফ ইংল্যান্ডই খুলে ফেললেন!
বলাই বাহুল্য, এজন্য ধর্মগুলোয় বা ধার্মিক দেশগুলোর সংবিধানে ম্যারিটাল রেপ বলে কোনো বস্তু নেই। সে আবার কেমনতরো আবদার? স্ত্রী তো স্বামীর ইচ্ছামত কর্ষণ করে ফসল ফলাবার জন্যই, তাতে আবার ধর্ষণের কথা আসে কেন? আমি তাই বুঝি না, চারিদিকে অনেক নারীবাদী মহিলাকে দেখি যাঁরা আবার ধার্মিক – এই সোনার পাথরবাটি মানসিকতাটা আসে কী করে?
নাহ, এসব নিয়ে ভাবতে থাকলে মিছেই মাথা গরম হয়ে রাতে ঘুমোতে দেরি হবে। কাল সকালে আবার অনেক বেড়ানো আছে। ম্যুরানো আইল্যান্ডে গ্লাস ফ্যাক্টরির ট্যুরে যাব। ধেড়েখোকাটি ইতিমধ্যেই নাক ডাকাচ্ছে।
গ্র্যান্ড ক্যানালের উপর রিয়াল্টো ব্রিজ বোধহয় ভেনিসের সবচেয়ে বড় আর সবচেয়ে পরিচিত ব্রিজ। অবশ্য সান মার্কো স্কোয়ারের ওখানে ব্রিজ অফ সাইস-ও কম পরিচিত না। সেখানে জেল থেকে বন্দীদের ওই ব্রিজ পেরিয়ে ডজের প্রাসাদে নিয়ে যাওয়া হত, সেখানে বিচার শেষে তাদের দ্বীপান্তর বা লোকান্তরে পাঠিয়ে দেওয়া হত; তাই ব্রিজখানার ওই নাম, জনশ্রুতি যে ওটা পেরোনোর সময় ছোট ছোট জানলাদুটো দিয়ে বন্দীরা শেষবারের মত সুন্দরী ভেনিসকে দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলত। হাঁটাপথ আর দোকানের সারি মিলিয়ে একাধিক রো-ওয়ালা রিয়াল্টো ব্রিজের সঙ্গে আমি মিল বেশ পেলাম ফ্লোরেন্সের পন্টে ভেকিও ব্রিজের। ওখানেও এমন হাঁটা পথ আর সোনাদানা-জহরতের গয়নার দোকানের সারি। ভেনিসে অবশ্য গয়নার জায়গা নিয়েছে কাচের জিনিস বা মুখোশের মত স্যুভেনিরের দোকান। ভেনেশিয়ান মাস্কও প্রবল বিখ্যাত, এখানের কাচের মতনই। লম্বা নাকওয়ালা প্লেগ মাস্ক মানুষ এই আনন্দসফরের স্যুভেনির হিসেবে কিনছে এর বেদনাদায়ক ইতিহাসের কথা না জেনেই। ব্ল্যাক ডেথ বলে খ্যাত এই প্লেগে ইউরোপের অর্ধেক মানুষই মারা গিয়েছিল সেই মধ্যযুগে। ওই পাগলা ডাক্তারও তেমনই একটা প্রবল জনসংখ্যা হ্রাস চায়। অবশ্য রঙচঙে অনেক কার্নিভালের মুখোশও সাজানো। অনেক দোকানের বাইরে তো ম্যানিকিন দাঁড় করিয়ে রেখেছে পুরো কার্নিভালের পোশাকেই।
ফ্লোরেন্সের কথায় মনে পড়ে গেল, সেখানের সান্তা ক্রোচে চার্চ দেখে ভারি মুগ্ধ হয়েছিলাম। লোকে ওখানে গিয়ে দুয়োমো দেখে, টাওয়ারে ওঠে, মিউজিয়ামে যায়, পিট্টি প্যালেস আর ভেকিও প্যালেসও ঘোরে, কিন্তু এই চার্চের খবর বেশি লোক রাখে না। কিন্তু এখানেই রয়েছে গ্যালিলিও, মাইকেলঅ্যাঞ্জেলো, ম্যাকিয়াভেলির মত দিকপালদের সমাধি। ইনফার্নোর লেখক দান্তেরও একটা সমাধি আছে, কিন্তু সেটা প্রতিকী – দান্তেকে ফ্লোরেন্স থেকে চির-নির্বাসিত করা হয়েছিল; বিরহী দান্তে ইতালি ঘুরে ঘুরে শেষে রাভেন্না’য় মারা যান, সেখানেই তাঁর আসল সমাধি। ফ্লোরেন্স শহর পরে অনুতপ্ত হয়ে তাঁর সমাধি সেখানে ফিরিয়ে আনতে চেয়েছিল, কিন্তু রাভেন্না তা ফিরিয়ে দেয় নি। তারা নিরুপায় হয়ে ওই চার্চে তাঁর একটা প্রতিকী সমাধি গড়ে দিয়েছে আর বাইরে একটা প্রকাণ্ড ভাস্কর্য বসিয়েছে, যেখানে দৃঢ়চিত্ত কিন্তু ক্লান্ত, বিষণ্ণ দান্তে বিরক্তি নাকি অবজ্ঞা নাকি রাগের দৃষ্টিতে শহরের দিকে চেয়ে আছেন। এই গির্জার সঙ্গে তুলনা চলে একমাত্র চার্চ অফ ইংল্যান্ডের সেই বিখ্যাত বাড়িটির – ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবে – যেখানে ডারউইন, নিউটনের সঙ্গেই শায়িত আছেন শেক্সপিয়ার বা ওয়ার্ডসওয়ার্থ আবার আছেন ক্রিস্টোফার রেন’এর মত অতুলনীয় আর্কিটেক্ট বা হান্ডেলের মত সঙ্গীতশিল্পী। সিস্টিন চ্যাপেলে মাইকেলঅ্যাঞ্জেলোর বিশ্ববিখ্যাত চিত্রকীর্তি দেখতে দেখতে ভাবছিলাম, কেমন হত যদি সারাজীবন বাইবেলের কাহিনী আঁকার বদলে তিনি তাঁর বর্তমান প্রতিবেশি গ্যালিলিওর কাজকর্ম নিয়ে কিছু ছবি আঁকতে পারতেন? বিজ্ঞানের মত একটা মনোমুগ্ধকর বিষয়কে তাঁর অসাধারণ সৃষ্টিশীলতা দিয়ে কী অনবদ্য রূপময়তায় নিয়ে যেতে পারতেন?
যাক, বইটা পড়া শেষ করে ফেলেছি; এখন শহরের মধ্যে দিয়ে দোকানে ভরা জনবহুল গলিগুলোয় হাঁটতে হাঁটতে একটা অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে। কেমন হত, যদি গল্পের শেষটার মত সত্যিই জানতাম যে এখানের হাওয়ায় হাওয়ায় সর্বত্র ভেসে বেড়াচ্ছে সেই ভাইরাস যা মানুষের শরীরকে এমনভাবে নির্বীজ বানিয়ে দিতে পারবে যাতে কেউ টেরই পাবে না? এবং তা ইতিমধ্যে আমাদের সবার শরীরে ঢুকে গেছে এবং র্যান্ডমভাবে অর্ধেকের শরীরে কাজও সেরে ফেলেছে? অর্থাৎ আমার চারিদিকে যারা হেঁটে বেড়াচ্ছে তাদের অর্ধেকেরই হঠাৎ করে এই প্রজনন-অক্ষম দশা?
এখন বুঝতে পারছি কেন ও আমার সঙ্গেই বিশেষ করে এটা নিয়ে কথা বলতে এত উৎসুক ছিল। কিন্তু এটা আসলেই বাস্তবে সম্ভব কিনা, এই প্রশ্নের উত্তর একা আমার পক্ষে দেওয়া অসম্ভব, কারণ ব্যাপারটা কেবলমাত্র হিউম্যান জেনেটিক্সের মধ্যেই সীমাবদ্ধ না। মানুষের শরীরতত্ত্ব ঠিকমত জানা থাকলে তবেই বলা যেত, দেহের সব কোষ ছেড়ে কেবলমাত্র যৌনকোষেই কাজ করতে পারে এমন ভাইরাস বানানোর মত প্রয়োজনীয় জ্ঞান আমাদের এখন আছে কি না। ভাইরাস জেনেটিক্স জানার প্রয়োজনীয়তা তো ছেড়েই দিলাম। স্পেশালাইজেশন আমাদের সব দেহকোষই করে, নাহলে তো লিভার থেকে হাত বেরোত আর হাতে চুল গজাত। কিন্তু কাকে কী করতে হবে সেই নির্দেশটার রূপ ঠিক কী, সেটা কী ভাবে পৌঁছোয় আর কী ভাবে কাজ করে এগুলো আমাদের এখনও জানা বাকি।
তবে সম্ভব হোক আর অসম্ভব, আইডিয়াটা ইন্টারেস্টিং, সন্দেহ নেই। আমেরিকায় জীববিজ্ঞান-চিকিৎসাবিজ্ঞান সবেতেই পড়ার শুরুতে এথিক্সের ক্লাস করা বাধ্যতামূলক। বুঝতেই পারছি, পরের বছর আমাদের ইউনিতে বায়োএথিক্স পড়াবার সময় এই বইয়ের প্রস্তাবটা নিয়ে একটা জমাটি বিতর্ক হবে। রাষ্ট্রের বা এক্ষেত্রে দুনিয়ার কল্যাণের জন্য চীনের মত এহেন জোর করে এমন গুরুতর একটা পদক্ষেপ নেওয়া কতটা নৈতিক, তা নিয়ে। তবে এটাও তো সত্যি বটেই যে মানুষ তার নিজের ভাল নিজে বোঝে না, কখন থামা দরকার তা জানে না।
এই আবীর যেমন। আপাতত সে পুরো এক বোতল কিয়ান্তি মেরে দেওয়ার চেষ্টায় আছে। অবশ্য ইতালিতে এসে পাস্তার সঙ্গে স্থানীয় রেড ওয়াইন ‘পেয়ার’ না করা নাকি চরম বেরসিকের কাজ। আর ভেনিসের সবচেয়ে বিখ্যাত পাস্তা হল, আপাতত আমরা যেটা খাওয়া শেষ করলাম, সেই ব্ল্যাক পাস্তা। স্কুইডের ইঙ্ক দিয়ে বানানো কালো রঙের সসে মাখানো পাস্তা, সাথে স্কুইডেরই মাংস, স্থানীয় নাম কালামারি। ব্ল্যাক পাস্তা আমরা বস্টনেও অনেক খেয়েছি এক ইতালিয় দোকানে, তাদের এ বস্তু এতই বিখ্যাত ছিল যে প্রতিদিন সন্ধ্যাবেলা তাদের ছোট্ট দোকানের বাইরে দুর্গাপুজো দেখার মত লাইন পড়ত। তবে তাদের পাস্তাটাই ছিল এই ইঙ্ক দিয়ে বানানো, কালো রঙের, তাই কোনো সস ছিল না, শুধু অলিভ অয়েল। তারই টানে আমরা গ্র্যাডস্টুন্টের সামান্য আয় থেকে কিছুকিছু বাঁচিয়ে নিয়মিত ছুটে যেতাম লাইন দিতে।
পানীয়গুণে রুমে ফিরেই সে চিৎপাত হয়ে পড়ে ঘুমে ডুবে গেল। ওয়াইন খেলে আবার আমার ঘুম চটে যায়। ওদিকে বইটাও শেষ। কিছু করার না পেয়ে ল্যাপটপে একটু নিউজফিডটা দেখছিলাম। সাবস্ক্রাইব করা জার্নালগুলোয় কোনো নতুন আর্টিকল বেরোলে সেখানে এসে জমা হয়। হেডলাইনগুলো দেখি, ইন্টারেস্টিং মনে হলে অ্যাবস্ট্র্যাক্টটা উল্টে দেখি। হঠাৎ করে একটা আর্টিকল খুবই ইন্টারেস্টিং মনে হল দেখে। মানুষের না অবশ্য, পাখিদের জেনেটিক্স নিয়ে।
দেহকোষের অনেকরকম স্পেশালাইজেশনের একটা হল প্রোগ্রামড সেল ডেথ। খুবই আবশ্যক জিনিস। ভ্রুণ অবস্থায় আমাদের হাতের তালু থাকে একটা চ্যাপ্টা চাকতির মত। সেখান থেকে আঙুল তৈরির উপায় হচ্ছে, চাকতিটা বাড়ার সময় চারটে খাঁজ বরাবর কোষগুলো মরে যাওয়া। তাহলেই পাঁচটা আঙুল বাড়তে থাকবে। কোথায় কী কোষ তৈরি হবে সেই স্পেশালাইজেশনের মতনই কোথায় কোন কোষ মরবে এই প্রোগ্রামিংটাও আমাদের শরীর নিখুঁতভাবে করে দেয়।
এই পেপারটায় পাখিদের ভ্রুণের একটা খুব ইন্টারেস্টিং অংশের প্রোগ্রামড সেল ডেথ নিয়ে কথা বলেছে। দায়ী জিনটাকে শনাক্তও করে ফেলেছে।
বস্তুটা হল শিশ্ন।
অল্প কয়েক প্রজাতি ছাড়া দুনিয়ার বেশির ভাগ পাখিদেরই শিশ্ন নেই বলে তারা মিলনের সময় ‘পেনিট্রেশন’ করতে পারে না। তাদের পরষ্পর যৌনছিদ্র ঠেকিয়ে মিলনের পদ্ধতিটা বেশ সাম্যবাদী, একটা সুন্দর নাম দেওয়া যায় – যৌনচুম্বন। এরা দেখছি এই দুর্দান্ত প্রশ্নটা নিয়ে তদন্তে নেমেছিল, বিবর্তনে পাখিদের শিশ্ন হারিয়ে গেল কী ভাবে?
এবং সেই প্রশ্নটার সম্ভাব্য উত্তর এই যে, পাখিরাও বলপূর্বক পেনিট্রেটিভ সেক্স পছন্দ করে না। এবং পাখিদের মেটিংয়ের নিয়ম যেহেতু এই যে মেয়ে পাখিরাই সঙ্গী নির্বাচন করে তাকে প্রজননের জন্য মিলনের অনুমতি দেয়, তারা হয়ত ছোট অস্ত্রের পুরুষকেই পছন্দ করত।
আচ্ছা, এই একই সিলেকশন প্রেশারটা মানুষের ক্ষেত্রে ঘটতে পারে না? পুরুষের ওটার প্রয়োজনটাই বা কী? ঘরে বসে পর্ন দেখতে দেখতে, ডুংলুং-ডো নিয়ে খেলতে খেলতে নানা রকম অবাস্তব ফেটিশ-ভরা চিন্তা করার জন্য? যার পরিণতি হচ্ছে মিশর থেকে দিল্লি রোজকার ধর্ষণ? যদি তাদের নাঙ্গা পর্বত একদিন গোবি মরুভূমি হয়ে যায়, যদি তাদেরও যৌনচুম্বনের মাধ্যমে মিলন করতে হয়, তবে প্রজননের তো কোনো সমস্যা নেই?
আমি জঙ্গি নারীবাদী নই; যারা বলে যে পৃথিবী থেকে পুরুষ বিলুপ্ত হয়ে গেলে কেবল তবেই উইমেনস লিবারেশন সম্ভব, তাদের দাবি বায়োলজিকালি পসিবল বলে মনে করি না; যারা ধর্ষকের পুরুষাঙ্গ কেটে দেওয়ার শাস্তি প্রস্তাব করেন তাদের বড্ড ভায়োলেন্ট মনে হয়। কিন্ত আমার কেন জানি মনে হচ্ছে, আজ সারাদিনে পড়া এই দুটো জিনিস জুড়ে দিতে পারলে একটা নির্ঝঞ্ঝাট সমাধান সম্ভব। যেহেতু ওরা বিএমপি৪ জিনটাকে শনাক্ত করেই ফেলেছে, মানুষের মধ্যে কোনোভাবে সেটাকে সক্রিয় করে দিতে পারলেই পরের প্রজন্মকে পুরোপুরি দণ্ডহীন বানিয়ে ফেলা সম্ভবপর। বইয়ের কল্পনাটা এতটা অবাস্তব নাও হতে পারে।
ডক্টর জোব্রিস্ট, লেট’স প্লে।
মন্তব্য
যাঁরা ভালোমতন খবর নিতে চান তাঁদের জন্য - ১, ২
এত দিন কোথায় ছিলেন, কৌ?
__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার
আহা এই কথা সব্বাই প্রতিবার বলার দরকার নেই
ছিলাম তো এখানেই। লেখা পড়ে মন্তব্যও করি। রোজ ঢোকা হয় না এই যা।
মানলুম। কিন্তু, ছোট ছেলেপিলেদের কি এই সব বড়দের বিষয়ে বলতে হয়?
__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার
ওমা আমি আবার কী করলুম!
ভালো লাগলো পড়ে
সামনের উঠানটা খস খস করে ঝাট দিচ্ছে এক বৃদ্ধ ঝাড়ুদার। সকালের রোদ চমকাচ্ছে তার বেসবল ক্যাপে। চায়ের কাপের মৃদু ঠুনঠান আর আবছা কোলাহল ভেসে আসছে পাশের স্টল থেকে। আমি এক মগ দুধ চায়ে (এরা বলে টে-সি) চুমুক দিতে দিতে এই জব্বর গল্প খানা পড়ে ফেললাম।
দিন টাই উজ্জল করে দিলেন।
একটু খানি পড়তেই চিন্তাভাবনা একেক দিকে দৌড় দেয়। কিছুক্ষণ দম নিয়ে পরের অংশ শুরু করতে হয় তখন।
তো এই যে গল্পে তরুণ-তরুণী ভেনিসে ভ্রমন করলো, কিন্তু দুয়েকটা মৃদুচুম্বনও দিলো না। এমনকি রাতে ঘরে ফিরেই স্রেফ ভোস ভোস ঘুম! খানিকটা “যৌনচুম্বন” গল্পের পাত্রপাত্রীদের মধ্যে না ঘটলে ব্যাপারটা কেমন কৃত্রিম হয়ে যায় না?
ড্যান ব্রাউনের লস্ট সিম্বল আর ইনফারনো কোনোটাই পড়া হয়নি। আগেরগুলো পড়েছিলাম। তার গল্পে ইতিহাস, আর ঐতিহাসিক স্থ্নের চমক্প্রদ বর্ণনা দারুণ লাগে। প্লট নিয়ে যা বললেন সেটা যথার্থ।
আর অন্য সব নরবানরদের তুলনায় মানুষের পেনিস বেশিই বড়। আমিতো জানতাম এর কারণ সেক্সুয়াল সিলেকশন। মানে নারীরাই নাকি বৃহৎশিশ্ন পছন্দ করে। অবশ্য গল্পের মৌ অন্যরকম ভাবতেই পারে। তার জামাইয়ের তো আসল কাজে মন নেই। খালি ঘুম।
এরকম আরো ছাড়ুন।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
শীতল দাম্পত্যের ব্যাপারটা সচেতনভাবেই রাখা। তাতে হতাশ হয়ে থাকলে দুঃখিত
এইটা নিয়ে কী থিয়োরি ছিল এখন ভুলেটুলে গেছি। আসলে হঠ করে ওই আর্টিকলটা নজরে আসায় এই প্লটটা মনে হল। তার সঙ্গে ইনফার্নো পড়া, ইতালি সফর আর রোজকার খবর মিলিয়ে মিক্সচার। তবে গল্প ঘটনার দিক থেকে তেমন একটা এগোয় না।
ড্যান ব্রাউনের মধ্যে মাসুদ রানা খোঁজে বোকারা। এটাও সত্য কথা মিঃ ব্রাউনের লেখার স্টাইল বেশ বিরক্তিকর। তবে তার জায়গার বর্ণনা আর ইতিহাসের মিশেল দেওয়ার স্টাইলটা অসাধারণ।
এক্কেবারে। লোকটা ইচ্ছা করে কথা চেপে রেখে সাসপেন্স বাড়াতে চায়।
গল্প বলে ঠিক বোঝা যায় নি, কিন্তু চিন্তা-ভাবনা ট্যাগ দিয়ে দিলে কি ভালো হয়।
পড়তে খুবই ভালো লাগলো। যেখানেই যাবি, সে জায়গাটা নিয়ে এরকম একটা গল্প/চিন্তাভাবনা পোস্ট দিয়ে ফেলবি। দারুণ লাগে পড়তে। তোর আজকের সেরা লাইনঃ
পঞ্চতারকা
............................................................................................
এক পথে যারা চলিবে তাহারা
সকলেরে নিক্ চিনে।
নিচের প্রতিমন্তব্য দেখুন
গল্প হিসেবে পড়লে খাপছাড়া। তবে ব্লগর-ব্লগর হিসেবে আমার কাছে লেখাটা খুব ভালো লেগেছে কৌ
পাপে ভরে গেল দুনিয়াটা। লোকে কেবলই লেখার মধ্যে লেখককে খোঁজে। ছেড়ে দে শয়তাননন!
(কাল্পনিক চরিত্রের ব্লগরব্লগর গল্পই তো হল, নাকি?)
আপনার লেখা সবসময়ই আগ্রহ নিয়ে পড়ি, এইবারেরটা ভয়ে পড়লাম না। ইনফার্নোর কোন স্পয়লার আছে কি? না থাকার সম্ভাবনা বেশি থাকলেও রিস্ক নিলাম না, প্লীজ জানান।
আজ্ঞে না, আমি অমন নচ্ছার নই
দন্ডহীন বানিয়ে ফেলার মত এমন নিষ্ঠুর একটা দন্ডের কথা ভাবতেই গা শিউরে উঠছে!
হ, নারীবাদীরা নিষ্ঠুর!
লেখা ভাল লাগল হে। সিক্রেট লাইফ অফ দ্য বার্ডস পড়ছি এখন, কলিন টুজের লেখা।
আর ইয়ে, তুমি যেমন কেপ্পন, ২০০ ইউরো দিয়ে হানিমুনেও যে গনডোলা চাপতে না এ আমরা জানি , বেরসিক কাহিকা।
facebook
হাহাহাহা, নাহ, তবে মাস ভুল করে ২০০ ইউরো গচ্চা দেওয়ার মত ভোম্বলও নই!
কস্কী মমমিন!
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
পঁচিশ বছর বয়স্ক যুবক নজুলুল ভাই, খুব সাবধান!
লেখা পড়ি নাই - ড্যান ব্রাউন এর ইনফারনো অল্প পড়ে রেখে দিয়েছিলাম - আপনার ইনফার্নো তার আগেই পড়তে পারব আশা করি, তবে যে কারণে 'অসাধারণ' লিখতে চাই তা হল শেষ ছবিটার জন্য। লাকি ইউ!! কতক্ষন লেগেছে ছবিটা তুলতে নাকি আসলেই লাকি শট?!!
আরে, আমার তোলা ছবি হলে তো বলেই দিই! এগুলো নেট থেকে সরাসরি এমবেড করে দেওয়া ছবি।
ও
ইনফার্নোটা আর একটু বাকী, তাই ওটা নিয়ে কিছু বল্লাম না।
তবে ড্যান ব্রাউন আমার দারুণ লাগে, ওর লেখা পড়ার সময় কিছুতেই 'ডাকা-বুকা' কোন সাহিত্যিকদের কথা মনে পড়ে না ! ব্যাটার সমালোচনা করার জন্য মেলা বিষয় আছে ঠিকই কিন্তু বেটার ১টা জিনিস অসাধারণ... সেটা গল্পের ৭৫ ভাগ অংশ জুড়ে প্রচন্ড গতি তৈরী করা... আর যেটা দারুণ লাগে সেটা হলো ইতিহাস আর গল্পকে মাখানো....
এছাড়া যেটা বেটার অনস্বীকার্য গুণ সেটা হলো শেষে গল্পটাকে অবধারিতভাবে ১টা ফালতু জিনিসে পরিণত করা !
বেটার লেখায় ইতিহাসের গ্রাউন্ডওয়ার্ক-টা অসাধারণ ( জাগায় জাগায় বিরক্তিকরও)।
ওর সব লেখাই পড়ছি... ভিঞ্চি কোড-টাই সবচেয়ে বেশি মজা লাগছে ... তারপর ইনফার্নো... ল্যাংডনের (হিমুর ভাষা্য় ল্যাংধোণ) বাকী ২টা গল্প ভাল লাগে নাই। আর অন্য যে ২টা উপন্যাস আছে বেটার সেগুলাও খুব ১টা ভাল লাগে নাই।দেখি পরেরটা কেমন লেখে?
লাল গানে নীল সুর, হাসি হাসি গন্ধ
ল্যাংডনের নাইকাদের ভালো লাগে না?
আমি রোম বেড়াতে যাবার আগে আরেকবার এঞ্জেলস-টা পড়লাম। ওটা আর দা ভিঞ্চি কোড এদ্দিন আগে পড়েছি যে সব ভুলে গেছি। লোকটার বইগুলোকে ট্রাভেল গাইডবুক হিসেবেই ব্যবহার করা যায়
গল্প, নাকি ভ্রমণকাহিণী নাকি বই রিভিঊ অথবা চিন্তাভাবনামূলক লেখা, সেটা ধরতে কিছু সময় গেছে। তবে যাই হোক না কেন ভাল্লাগছে।
ড্যান ব্রাউনের ব্যপারে ২০০% একমত। অন্য বই গুলার মত এইটাতেই কি সবচেয়ে ভাজামাছ না উল্টায়ে খাওয়া ব্যক্তিই ভিলেন? জানার জন্য টরন্টো পাব্লিক লাইব্রেরীতে ই-বুক অনহোল্ড দিলাম। ফ্রিতে বই পড়তে আমার একটু বেশী ভাল লাগে
--------------------------------
হে প্রগাঢ় পিতামহী, আজো চমৎকার?
আমিও তোমার মত বুড়ো হব – বুড়ি চাঁদটারে আমি করে দেব বেনোজলে পার
আমরা দুজনে মিলে শূন্য করে চলে যাব জীবনের প্রচুর ভাঁড়ার ।
এখনও বুঝি নাই।
তবে - ঘুরতে যাবার সময় খবরের কাগজ পড়ব না বলেই মনস্থ করেছি।
এহেম!
নেট থেকে নামিয়েও তো পড়তে পারেন
আচ্ছা টরন্টোয় নাকি দেখার তেমন কিছুই নেই? লোকে নিরুৎসাহ করছে...
আমি ভালো হয়ে গেছি লিগালি ফাও জিনিস পেলে নেটে খুঁজি না। আমিও শুনেছি টরন্টোতে দেখার মত কিছু নাই। দেখার মত সুযোগ পাই নাই যদিও এই দুই বছরে। এক আছে সিএন টাওয়ারঃ উঠি নাই। ওয়ান্ডার ল্যান্ডঃ এখনো যাই নাই। আফ্রিকান সাফারীঃ খারাপ না। তবে কানাডার দীর্ঘ শীতের পর আয়নায় নিজেকে দেখতেও ভালো লাগে। কাজেই নিজের মতামত কে বিশ্বাস করতে পারছি না। নায়াগ্রাঃ কাছে। জটিল।আর কিছু এখন মনে আসছে না।
--------------------------------
হে প্রগাঢ় পিতামহী, আজো চমৎকার?
আমিও তোমার মত বুড়ো হব – বুড়ি চাঁদটারে আমি করে দেব বেনোজলে পার
আমরা দুজনে মিলে শূন্য করে চলে যাব জীবনের প্রচুর ভাঁড়ার ।
দারুণ লেখা। চড়াই(চড়াই নাকি অন্য পাখি?) দুটোর অমন ছবি পেলে কোথায় হে? এরা তো প্রাইভেসি লঙ্ঘন হবার মামলা করবে দায়রা আদালতে!
এদিকে আমার এখনো ব্রাউন সায়েবের নতুন বইটা পড়া হইয়া ওঠে নাই।
কিন্তু বুঝলে কৌস্তুভ, সেই যে বইটার কথা আলো জ্বালানো প্রাণীদের নিয়ে লেখাটায় লিখেছিলে, সেই বইটা পড়ছি, খুবই চমৎকার বই। একজায়গায় ভাইরাস সেজে গবেষকরা টেবিলের তলায় লুকিয়ে পড়লো, তারপরে একজন টেবিলের ঢাকনা সরিয়ে বেরিয়ে এসে টেবিলে উঠে একক সংলাপ বলতে লাগলো কিং লিয়ার থেকে, টেবিলটা ব্যাকটেরিয়াকে রিপ্রেজেন্ট করছিল আর ভাইরাস সূচ হয়ে ঢুকে ফাল হয়ে বেরোলো। ঐ জায়গায় আছি এখন। এই তালে তোমাকে থ্যাংকু দিয়ে যাই বইটার সন্ধান দেবার জন্য।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
হেহে ওটা তো নেট থেকে দেওয়া, তবে আমার ফেবু অ্যালবামে একটা চড়াইয়ের ছবি আছে
হুঁহুঁ, বইটা জম্পেশ! ইউ আর মোস্ট ওয়েলখাম!
পড়লাম। পরপর দুবার। প্রথম বার কিছু বুঝি নি। দ্বিতীয় বার শেষ করেই প্রথমে মনে হল মৌ বোধ হয় সত্যিই জঙ্গী নারীবাদী!
ড্যান ব্রাউনের ইনফার্নো কিনলাম সেদিন নীলক্ষেত থেকে। পড়ার সময় পাচ্ছি নে, কারন ক্যালকুলাস আমায় সব সময় কাতুকুতু দিচ্ছে ভাল পারছিনা বলে।
গল্পের মৌ-পতি ব্যাটা একটু বেশিই কৃপণ।
কিন্তু তথ্য জানান দিতে এই গল্পের মোটেও কৃপণতা নেই।
আর বিএমপি৪ জিনটার ব্যাপার কি সত্যি ঘটনা?
যদি নৌকায় না চাপার জন্য কৃপণ বল তো তাইলে তো মেয়েটাকে বলা উচিত।
জিনটার ব্যাপার সত্যি ঘটনা, তবে পাখিদের জন্য। প্রথম কমেন্টে আর্টিকলগুলোর লিঙ্ক দিয়েছি। স্তন্যপায়ীদের ব্যাপারে একই কাজ হবে কিনা তা বলতে পারি না।
নতুন মন্তব্য করুন