আফসোস, দুনিয়ায় আন্তর্জাতিক অনেক গবেষক থাকলেও সব গবেষক বোসম্যাডামের মত স্বচ্ছ নিরপেক্ষ ও আন্তর্জাতিকমানের নন। বরং নচ্ছারদের তালিকাই বেশি লম্বা। সেই তালিকায় আরো দুইটি বজ্জাত যোগ হওয়ার ঘটনা নিয়েই আজকের এই পোস্ট।
নাস্তিক ব্লগার বলে স্টিভেন পিঙ্কার লোকটার এমনিতেই দুর্নাম আছে। হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির সাইকোলজির প্রফেসর বলে এমনি এমনিই সে সব জায়গায় জাঁক দেখিয়ে বেড়ায়। তবে তার কাজকর্ম এতদিন ছিল সাইকোলজি, কগনিশন, ভাষাতত্ত্ব ইত্যাদি মানুষের মনস্তত্ত্বের কাজকর্ম নিয়ে, তাই তার বেশি খবর রাখার দরকার ছিল না।
কিন্তু সে এক নতুন বই বার করে বসলে – ‘দি বেটার এঞ্জেলস অফ আওয়ার নেচার - হোয়াই ভায়োলেন্স হ্যাজ ডিক্লাইনড’। এবং বুক ট্যুরের অংশ হিসেবে প্রথম বক্তিমাটা সে নিজের ইউনিতেই দেবে, পোস্টার পড়ল। তা দুনিয়ার উন্নতি হচ্ছে জেনে ভাল লাগল, রবিকবি তো বলেই গেছেন, ‘অন্তর হতে বিদ্বেষ-বিষ নাশো’। গুটগুট করে শুনতে গেলুম।
তা লেকচার দিব্যি চলছিল। পিঙ্কার বেশ ভালো ভালো কথা শোনাতে লাগল, এই যেমন আগে চার্চ বিজ্ঞানীদের ধরে ধরে পুড়িয়ে মারত, এখন আর সে সব করে না, ইত্যাদি। তারপর সে ‘জিনোসাইড’ এর কথা নিয়ে এল। আগে নাকি জিনোসাইড হরবখত হত, এক অঞ্চলের লোক আরেক অঞ্চল দখল করলে এমনিতেই অর্ধেককে মেরে ফেলত আর অর্ধেককে দাস বানিয়ে ফেলত। বাইবেলের পাতায় পাতায় জিনোসাইডের কথা, ঈশ্বরের আদেশ। ওল্ড টেস্টামেন্টের ইহুদীরা আমালাকাইট, এমোরাইট, কানানাইট, হিভাইট, হিট্টাইট ইত্যাদি সমস্ত জাতিকে টাইট দিয়ে দিয়েছিল ঈশ্বরের হুকুমে। সারমর্ম হল, জিনোসাইড জিনিসটা বেশ ভালই, যতক্ষণ না নিজের উপর হচ্ছে।
তারপর একটা রঙিন প্লট দিয়ে বোঝাতে গেল, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জিনোসাইড বিষয়েও দুনিয়ার বেশ উন্নতি হচ্ছে, বসনিয়া-রুয়ান্ডার জিনোসাইডে আগের তুলনায় অনেক কম প্রাণহানি হয়েছে। তা দেখি, সেই প্লটের ডানদিকে উঁচুমত একটা অংশ। খটকা লাগল। নিচে তাকিয়ে দেখি সাল ১৯৭১এর দিকে ধায়। তারপরে সে ওদিকে আঙুল দেখিয়ে বলে, অমুক মিলিয়নস কিলড ইন পাকিস্তানি জিনোসাইড। ব্যাপার দেখে সন্দেহ হল। তখন স্লাইডের একপাশে দেখি লেখা আছে রেফারেন্স: রামেল ইটিসি ইটিসি। তখনই কেস ক্লিয়ার হয়ে গেল। রামেল সেই হতচ্ছাড়া, যার বইগুলি লোকে পাকিস্তানি জিনোসাইডে বহু লাখ হত্যার প্রমাণ হিসাবে লোকজন বোসম্যাডামের সুন্দর বইটির বিরুদ্ধে দেখিয়ে থাকে। সালা ঘোচু পিঙ্কারও এখন সেই বইটা টেনে গোটা হার্ভার্ডের লোককে আর তারপর গোটা দুনিয়ার লোককে শুনিয়ে বেড়াবে এই কথা।
সেদিন আমার ছোট্ট কুটিরে এক বয়স্ক ডাচ বন্ধুর পদার্পণ ঘটল, সে লন্ডন বেড়াতে এসেছে। পলিটিকাল সাইন্স, ল, হিস্টরি অফ ল ইত্যাদি নিয়ে গবেষণা করে, পণ্ডিত মানুষ। লন্ডনের সেকেন্ডহ্যান্ড বইয়ের দোকান থেকে অনেকগুলি বই কিনল। তার মধ্যে একটার উপর দেখি লেখা, ‘ওয়ার্স দ্যান ওয়ার – জিনোসাইড, এলিমিনেশনিজম, অ্যান্ড দা অনগোইং অ্যাসল্ট অন হিউম্যানিটি’। এটার লেখকও হার্ভার্ডের প্রাক্তন পলিটিকাল সাইন্স প্রফেসর, জনৈক ড্যানিয়েল গোল্ডহাগেন (খুক খুক)। ভাবলুম নেড়েচেড়ে দেখি, লাইনের বই না বেলাইনের বই।
পুরো বই জুড়েই দেখি প্যাশনেট আবেদন, জিনোসাইড কতো খারাপ, কেমন অন্যায় অবিচার, আমরা যেন এই নিষ্ঠুরতা বন্ধ করি, ইত্যাদি ইত্যাদি। আর বই দেখি পুরোই বেলাইনের। প্যারায় প্যারায় কেবল বাংলাদেশের নাম। ডেথ মার্চ (লোকজনদের উদ্বাস্তু করে দূরদেশে পাঠিয়ে দেওয়া এমন খারাপ অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাতে পথেই প্রচুর লোক মারা যায়), এলিমিনেশনিস্ট পলিসি, মাস মার্ডার, রেপ ইত্যাদি সব চ্যাপ্টারের মধ্যেই ব্যাটা পাকিস্তানিদের শাসনব্যবস্থার অহেতুক নিন্দামন্দ করে গেছে। এই যেমন, “Even before raping as a constitutive feature of some eliminationist assaults became broadly known to the world, Pakistanis employed the same strategy in their mass-murderous and eliminationist attack in 1971 against Bangladesh, raping perhaps 200,000 Bangladeshi women.” একপাতা জুড়ে কেবল এইসব অশ্লীল কথা। সাথে সুসান ব্রাউনমিলার ইত্যাদি গিজগিজে রেফারেন্স।
আর শুরু থেকেই এসব কাণ্ড। প্রথম চ্যাপ্টারে বলা হয়েছে জিনোসাইড কেন ওয়ার্স দ্যান ওয়ার। সেখানে জিনোসাইডের লিপির মধ্যে ঠিকই বাংলাদেশের নাম গুঁজে দেওয়া হয়েছে। “The people slaughtering large civilian populations under war’s cover have usually been the military aggressors, who furthermore have either exterminated peoples other than those against whom they fought or began their mass murdering before suffering major defeats. This was true for … the Pakistanis in Bangladesh in 1971, where the killed between 1 million and 3 million people”.
এলিমিনেশন পলিসি অধ্যায়ে আরো খারাপ খারাপ কথা বলেছে, “The Pakistanis targeted the Bengalis’ political, communal, and intellectual elite, most intensively when the Indians were about to defeat them, which is when they began during a three-day period to systematically slaughter the leadership of the soon-to-be rival country.”
যাক, এইসব প্রলাপের তালিকা বাড়িয়ে কোনো লাভ নেই। মোট কথা, আমার ওই বিদ্বান বন্ধুটির মত কত লোকেই কত অপপ্রচার শিখছে এই সব বই থেকে!
মন্তব্য
আন্নে বোসম্যাডামেথ্যে বেশী বোজেন?
চমৎকার পোস্ট
------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।
আরে না, আমি তাঁর অনুরাগী পাঠক!
আশা করি এটা আমারেই দিছেন, ওসব গবেষকদের না।
হার্ভার্ড পিচডি লই চুদুর ভুদুর চইলত ন
-----------------------------------------------------------
আঁখি মেলে তোমার আলো, প্রথম আমার চোখ জুড়ালো
ঐ আলোতে নয়ন রেখে মুদবো নয়ন শেষে
-----------------------------------------------------------
হার্বার্টের ছাত্র প্রফ সব চু-বু-তেই ভরে গেল
মাসুদ সজীব
বোসম্যাডামের জন্য
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
কোনটা, ডান না বাঁয়েরটা?
ডাইনেরটা, সময় মত বাত্তি দেওনের যদি কেউ না থাকে... মানবাধিকার বলে কথা
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
হুঁ, বাত্তি খুব জরুরি জিনিস... ঢাকা গিয়ে একটা গান শুনিয়াছিলাম, 'তুমি দিও না গো বাসরঘরের বাত্তি নিভাইয়া...'
নিভাইনাই তো, জ্বালাইছি
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
ছড়াটাতো ভালো লিখসেন! এরকম আকাঁবাকা করে টাইপসেট করলেন কেমনে?
৭১ এ পাকিস্থানীরা কি ভারতীয়দের কাছে হেরে গেছিলো হিসাবে দেখা হয়?
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
থ্যাঙ্কু। সেন্টার অ্যালাইনমেন্ট দিলে এমনটা আপনা থেকেই হয়, বরং এক লাইনে আনার পথ পেলুম না।
সে আমি কী জানি, ওই বজ্জাত ইহুদী প্রফেসরকে জিজ্ঞেস করে দেখেন।
অহো! বোস ম্যাডামের লুঙ্গি ধরে টান দিচ্ছেন? খসে এলে চোখে সইবে? এইবেলা সাধু সাবধান
ইশ ইশ, এসব কী কন!
লেখায়
একটা জিনিস নিয়ে প্রায়ই খুব হতাশায় ভুগি, বহির্বিশ্বে আমাদের মুক্তিযুদ্ধটাকে অধিকাংশ লোক ইন্ডিয়া-পাপীস্তান যুদ্ধ হিসেবে দেখে। আর অনেক অতি জ্ঞানী ছাগু এইটাকে গৃহযুদ্ধ বলে।
আর একটা প্রশ্ন ,
পাপীস্তানিরা আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আজে বাজে কথা বলে, বলবে বা এইটাতে হেরে যাবার দুঃখে অনেক কিছু বলবে, ওদের কাছ থেকে এর থেকে বেশি কিছু আশা করাও বোকামি, যতই ওদেরকে বোঝানো বা প্রমাণ দেয়া হোক না কেন।
কিন্তু আমি বাইরে বেশিরভাগ ইন্ডিয়ান্দেরও দেখেছি ১৯৭১ সালের আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে স্রেফ ইন্ডিয়া-পাপীস্তান যুদ্ধ হিসেবে দেখে। এই যে এতবড় একটি গেরিলা বাহিনী মুক্তিবাহিনী যুদ্ধ করল তার ব্যাপারে তারা কিছুই জানে না। এখন এই ব্যাপারটি কি ইচ্ছাকৃত নাকি আসলেই জানে না, এটা নিয়ে কনফিউজড হয়ে যাই।
ভারতীয়দের জন্য সেটা পাক-ভারত যুদ্ধও বটে। ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে ডিসেম্বরে পাকিস্তান কতৃক আক্ত্রান্ত হওয়ার পর।
লাইনে আসুন, এসব অশালীন সম্বোধন বর্জন করুন।
অপপ্রচার! স্রেফ অপপ্রচার!!
এই পোস্টটা স্টিকি করা যায় কি?
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
এত এত অপপ্রচার-এর মধ্যে যারা বহু পরিশ্রম আর যত্নে সত্যকে খুঁজে বার করে আনে, তাকে প্রচারে রাখে তাদের সকলকে অজস্র অভিবাদন আর শ্রদ্ধা।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
এহেম এহেম!
একাত্তরের গণহত্যা নিয়ে রম্য ধাঁচের এই লেখাটা সকালটাকে আরেকটু মিসটি করে দিলো।
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
শুনে আমারো ভালো লাগল। অনেকদিন দেখি নি আপনাকে। কেমন আছেন?
এই হতভাগা নালায়েক গবেষক নামের কীটগুলো এমনভাবে নগ্ন সত্যগুলোকে প্রচার করে যে নমস্য বোসম্যাডামের মত সত্যভাষীরা হালে পানি পান না! কী দরকার ছিল এভাবে কথায় কথায় পূর্ব পাকিস্তান, থুড়ি, বাংলাদেশের নাম নিয়ে আসার?
লেখা জটিল হয়েছে কৌদা -
____________________________
ধন্যবাদ!
'বোস ' এর সংখ্যা তত্ত্ব এর হিসেব নিয়ে যারা মাথা ঘামাচ্ছেন তাদের জ্ঞাতার্থে বলতে চাই, এই ভিডিও টি দেখুন যদি আগে না দেখে থাকেন। ইটা একটা ডকুমেন্টারি সত্তর মিনিট এর। এতক্ষণ ধৈর্য ধরে না দেখলেও হবে।অন্তত প্রথম কুড়ি মিনিট দেখলেই পরিষ্কার হয়ে যাবে ঐসময় কত লোক মারা গিয়েছিল সেটা এত স্পষ্ট ভাবে আর কোথাও বলা নে যতটা স্পষ্ট ভাবে এটাতে বলা আছে। ইন্ডিয়ার প্রোপাগান্ডা বলে এটাকে উড়িয়ে দেবার উপায় নাই। কারণ ব্রিটিশ, অস্ট্রেলিয়ান , মার্কিন, সুইডেন, সবার হিসেবই একরকম শোনা যাচ্ছে। আমি সবাই কে অনুরোধ করব যারা দেখেনি একটু কষ্ট করে দেখবেন। ভারতীয় প্রচারণা মনে হবার ব্যাপারটুকু বাদ দেয়ার পরেও যতটুকু সত্যি মনে হতে পারে সেটা ভাবলে গা শিউরে উঠে। আর মনে মনে হাজার বার নিজেকে ধন্যবাদ দেই ওই সময় ওই সময় এর অনেক পরে জন্ম হয়েছে অন্তত মেয়ে হয়ে জন্ম নিতে হয়েছে বলে।
muktijuddho
শিশির অশ্রু
ধন্যবাদ। এই ভিডিওটা কয়েকদিন ধরে ফেসবুকেও লোকজন ছড়িয়ে দিচ্ছে।
আস হে, তোমাকে ধুতি টোপর পরা অবস্থায় দেখতে আসিতেছি-
facebook
অপ্রাসঙ্গিক কথা আনিবেন্না, লাইনে থাকুন।
তা আপনার আবার এইগুলা প্রচার করে বেড়ানোর দরকার পড়লো কেন? কানে কানে বলি, লেখা অতি চমৎকার।
রু
নতুন মন্তব্য করুন