[অ্যালেন গিন্সবার্গ এর ‘After Lalon’ এর অনুকরণে ]
এক.
বড় বেশি পার্থিব হয়ে গেছি। ছোট বেলায় পরিবার পরিজনেরা সবাই বলতো পার্থিব হতে, বড় হতে, গাড়ি ঘোড়া চড়তে। লালন বলতো ভিন্নকথা, বলতো তাঁর ভাষায়- “সর্ব সাধন সিদ্ধ হয় তাঁর...মানুষ গুরু নিষ্ঠা যার”, “পার্থিব মায়ায় আবদ্ধ হয়ো না”। বড় হওয়া কি জানি না বড় হতে হতে প্রতিনিয়ত আবদ্ধ হয়ে গেছি বই, চিন্তা, অর্থ, অনর্থ, ভালোবাসায়, শরীরের মায়ায়! আমি সত্যিই জীবনের চোরাবালিতে আটকে আছি!
দুই.
একজন প্রেমিকের পায়ের কাছে বসে আমি পৃথিবীকে দেখেছি, দেখেছি একজন কবির, একজন বিজ্ঞানীর চোখেও পৃথিবীকে। বুঝতে পারি না তাদের চাওয়ার কথা! চারপাশের মানুষেরা অনেকেই আমাকে বলে- সাবধানে থাকো, সামলে চলো, অধৈর্য হয়ো না- আর কত! খুব বেশি কি বাঁচবো আর! হয়তো বছর কুড়ি, হয়তো কুড়ি দিন, হয়তো কিছুক্ষন পরেই মানুষ আমাকে কীটের খাবার বানিয়ে রেখে দিয়ে আসবে সারে তিন হাত মাটির নিচে! হয়তো মারাই গেছি বহু আগে, যা দেখছি- সব ত্রিমাত্রিক স্বপ্ন কোনো।
তিন.
এখন রাত দুইটা খুব সকালে উঠে মটর সাইকেলে রওনা দিতে হবে কাজে, জীবনের তাগিদে, ফিরবো আবারও রাত গভীর হলে, এমনই চক্রে বাধা জীবন, এক- দুই- সাত দিনের সপ্তাহ, মাস বছরের পর বছর। মাঝে মাঝে ভাবি কি করে আটকে গেলাম এই কর্মযজ্ঞে! আমার আত্মা বিক্রি করে দিয়েছি সুন্দর কিছু শব্দাবলীর জন্য, ফুলের জন্য, পাখির কলকাকলির জন্য, শরীর গেছে পার্থিব হতে হতে। মাঝে মাঝে ভ্রম হয়, আমি সত্যি শ্বাস-প্রশ্বাস নেই তো! আমার ভাষা হারিয়েছে দম্ভে, স্বাধীন হওয়ার, নিজের পায়ে দাঁড়ানোর বিশেষ কোনো মানে নেই এখন আর! সুন্দর কিছু শব্দ, ফুল, ঘাস-লতা, কলকাকলি আর ভালোবাসার সৌরভ ছাড়া কি আছে আর অথর্ব জীবনে!
চার.
প্রতি রাতেই মৃত্যুর কথা ভেবে ভেবে আমার ঘুম হয় না। না সে ভয় নয়, মৃত্যচিন্তা মানেই কি মৃত্যু ভয়? হয়তো মৃত্যু কাছে, হয়তো দূরে। “কি আসে যায় কার কি তাতে!” এই অসীম মহাবিশ্বের কাছে আমার এই ক্ষুদ্রতার বিশেষ কোনো দাম কি আছে! তবুও জীবন কি ভীষণ ভালোবাসি! ঘুমে কিম্বা জাগরণে রাততো ফুরোয়!
পাঁচ.
ভোরের দিকে ওরা এসেছিল, সম্ভবত আমাকে নিতে। আমি লুকিয়ে ছিলাম, নিয়ে গেল অন্য কাউকে। এভাবে আর কতকাল! লুকোচুরি খেলায় কতকাল আর শরীরের মায়ায় থাকা যাবে! কিবা হবে এই শরীরে? কি লাভ? লাভ কি আছে কিছু?
ছয়.
কত কি করার ছিল, করা হয় নি! একটা সময় মৃত্যু ভয় ছিল, ছিল আরো কত কি! কি ছাই হিসেব নিকেশ! শুধু বলে রাখি আমার এই ধ্বংশের পথে কেউ পা দিও না!
.
.
.
[করতে চাচ্ছিলাম আসলে অনুবাদ, এরপর মনে হলো বড় বেশি জুলুম করা হয়ে যাবে গিন্সবার্গের উপর, লালনের অনুবাদ দেখলে আমার যেমন জুলুম বলে মনে হয় তেমনি! তাই তাকে অনুকরন করে নিজেই লেখার চেষ্টা করলাম, যা যা আমার মত, আর আমার ভাবনার সাথে মিলে]
মূল লেখাটা গিন্সবার্গের কন্ঠে আবৃত্তি শুনতে পারেন এখান থেকে-
আলাদা করে ইউটিউব লিঙ্ক দেয়ার উপায় পেলাম না, কেউ সাহায্য করলে খুশি হবো।
মন্তব্য
"বিছানা জুড়ে আমার এ ছায়া বড় স্পষ্ট, প্রবল বাস্তব। স্বপ্ন যেন প্রবল বাস্তব, তবে কি এ বাস্তব কারো কোন স্বপ্ন, তবে কি আমি কারো ছায়া। ভেঙে যায় ঘুম অকারন দুঃস্বপ্নে....।" এটা ওয়ারফেজের একটা গানের কথা। আবার আইজ্যাক আসিমভের একটা গল্পে এক নায়ক তার জীবনকে মনে করে একটা তুচ্ছ কিন্তু বাস্তব একটা স্বপ্ন; গল্পের শেষে নায়ক আত্মহত্যা করে। গল্পের শেষ লাইনে একটা শুয়োপোকাকে কোন একটা জগতের মরুভূমিতে হাঁটতে দেখা যায়; যেই শুয়োপোকা ভাবতে ভাবতে চলছিল - কি অদ্ভূত একটা স্বপ্নই না এতক্ষণ দেখছিলাম।
লেখা ভাল লাগলো।
অনন্ত আত্মা
আমাদের সবার মধ্যেই একজন করে লালন বাস করে। সবাই সন্যাসী হতে পারে না এটা ঠিক, তবে বাউলিয়ানা কে ছাড়াতে পারে! আবার খেয়ালের বশে নিতান্তই সংসারী মানুষটিও কোনো এক আষাঢ়ের পূর্নিমায় হঠাৎ কখন যে পথে নামে, কে জানে! জন্ম মৃত্যু নিয়ে কে না ভাবে! কোথা থেকে এসেছি, কোথায় যাবো! যে নাস্তিক সে যেমন প্রশ্ন করে, যে আস্তিক সেও করে, কেউ ভয়ে কোনো একটা বিশ্বাসকে আকড়ে ধরে আরো জোড়ালো ভাবে, কেউ না বিশ্বাসের ধার ধারে না।
এই ভাবনাগুলো চিরকাল আছে, থাকবে, আসিমভ, ওয়ারফেইজ, আর লালনে এক্ষেত্রে কোনো দূরত্ব নেই! মূল্যবান মন্তব্য'র জন্য ধন্যবাদ। ভালো থাকুন-
মূল লেখায় এ সিরিজের পুরোনো লেখাগুলোর লিঙ্ক দিতে ভুলে গিয়েছি-
দেখতে পারেন নিচের লিঙ্ক থেকে-
ছিন্নকথন
ছিন্নকথন-দুই
ভালো থাকুন
=================================
"রঙিন কাফনে মোড়া উৎসুক চোখে
ছায়া ছায়া প্রতিবিম্ব দেখি
মানুষ দেখি না।।"
=================================
"রঙিন কাফনে মোড়া উৎসুক চোখে
ছায়া ছায়া প্রতিবিম্ব দেখি
মানুষ দেখি না।।"
এরকম একটা অংশ তো মুহম্মদ জাফর ইকবালের গল্পেও আছে!
কোন গল্প বলতে পারেন?
যদি ভাবনার মিল থাকতে পারে তবে রেফারেন্স ছাড়া এভাবে সরাসরি শুয়োপোকা কে টেনে আনাটা ঠিক কেমন যেন!!
=================================
"রঙিন কাফনে মোড়া উৎসুক চোখে
ছায়া ছায়া প্রতিবিম্ব দেখি
মানুষ দেখি না।।"
=================================
"রঙিন কাফনে মোড়া উৎসুক চোখে
ছায়া ছায়া প্রতিবিম্ব দেখি
মানুষ দেখি না।।"
লেখককে ধন্যবাদ, লালন-এর কিছু অমীয় বাণী সচলায়তনে শেয়ার করার জন্য। এ যেন লালনের কথা নয়, আমার জীবনের সাথেই আছে অনেক মিল............
"সৃষ্টি ছাড়া কি করে সে সৃষ্টিকর্তা নাম ধরেছে!
সব সৃষ্টি যে করেছে, তারে সৃষ্টি কে করেছে!"
"তুমি আপনি আল্লা ডাকো আল্লা বলে..."
লালন যদি পশ্চিমা কোনো দেশে জন্ম নিতেন, তাহলে লালনকে সারা বিশ্ব চিনতো!
তিনি নিজেও অবশ্য খ্যাত হতে চান নি, যতদূর জানি তিনি লিখতেন না, তিনি বলতেন- ভক্তদের, ভক্তরা অনেকে লুকিয়ে তাঁর কথাগুলো লিখে রাখতো। মুখের কথায় কি এক মরমী দর্শন দিয়ে গেছেন তিনি আমাদের!
=================================
"রঙিন কাফনে মোড়া উৎসুক চোখে
ছায়া ছায়া প্রতিবিম্ব দেখি
মানুষ দেখি না।।"
=================================
"রঙিন কাফনে মোড়া উৎসুক চোখে
ছায়া ছায়া প্রতিবিম্ব দেখি
মানুষ দেখি না।।"
শেয়ার করার জন্য লেখককে ধন্যবাদ
ধন্যবাদ আপনাকেও
=================================
"রঙিন কাফনে মোড়া উৎসুক চোখে
ছায়া ছায়া প্রতিবিম্ব দেখি
মানুষ দেখি না।।"
=================================
"রঙিন কাফনে মোড়া উৎসুক চোখে
ছায়া ছায়া প্রতিবিম্ব দেখি
মানুষ দেখি না।।"
মৃত্যুভাবনা মানে জীবন থেকে খানিকটা ছুটি নিয়ে হঠাৎ হারিয়ে যাওয়া। পূর্ব প্রস্তুতি নেওয়া মৃত্যুর জন্য। মাঝে মাঝে আসাটা মন্দ নয়।
লেখা ভালো লাগল খুব।
বাহ! ঠিক এভাবে তো ভেবে দেখিনি!!
"কে তোমার আর যাবে সাথে!
কোথায় রবে এই ভাই বন্ধু
পড়বি যেদিন কালের হাতে"
এই কি মৃত্যু ভাবনা!
=================================
"রঙিন কাফনে মোড়া উৎসুক চোখে
ছায়া ছায়া প্রতিবিম্ব দেখি
মানুষ দেখি না।।"
=================================
"রঙিন কাফনে মোড়া উৎসুক চোখে
ছায়া ছায়া প্রতিবিম্ব দেখি
মানুষ দেখি না।।"
আমাদের সবার মাঝেই বোধকরি লুকিয়ে আছে লালন। অনেকদিন আগে একই রকমের থীমে লেখা একটা গল্প পড়েছিলাম এখানে।
শেষটা একটু কেমন যেন হয়ে গেল! প্রকৃত বাউল যারা তাদের সংসারী হতে শুনিনি কখনো!
তবে একটা লাইন মাথায় আটকে গেল-
=================================
"রঙিন কাফনে মোড়া উৎসুক চোখে
ছায়া ছায়া প্রতিবিম্ব দেখি
মানুষ দেখি না।।"
=================================
"রঙিন কাফনে মোড়া উৎসুক চোখে
ছায়া ছায়া প্রতিবিম্ব দেখি
মানুষ দেখি না।।"
আরেক জীবন, প্যারালাল জীবন। এসব ক্ষেত্রে আমার শেষপর্যন্ত রেললাইনের কথাই মনে আসে। মিলবে না জেনেও পাশাপাশি হেঁটে যাওয়া, এক অনিঃশেষ সমাপ্তির দিকে।।।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
প্যারালাল জীবন! ভাবনার বিষয় বটে!
আজকে আপনার ঘড়ায়-ভরা উৎবচন পড়ছিলাম, এই সিরিজটা আগে চোখে পড়েনি! মিস করেছি!
=================================
"রঙিন কাফনে মোড়া উৎসুক চোখে
ছায়া ছায়া প্রতিবিম্ব দেখি
মানুষ দেখি না।।"
=================================
"রঙিন কাফনে মোড়া উৎসুক চোখে
ছায়া ছায়া প্রতিবিম্ব দেখি
মানুষ দেখি না।।"
নতুন মন্তব্য করুন