জানের দোস্তোকে বলছিলাম দোস্তো আমার কেমন কেমন লাগতেছে। এর আগের বার যখন ফেরিতে উঠছিলাম, তখন ফেরি ঘুরে ঘাটের বা’দিকে যেয়ে তারপর নদী পার হয়ে ওইপাশে গেলেই যায়গামত পৌঁছে গেছিলো। কিন্তু এই ফেরিতো সোজা চলা শুরু করলো? যদি আমরা ভুল ফেরিতে উঠে থাকি?
জানের দোস্তোকে বলছিলাম দোস্তো আমার কেমন কেমন লাগতেছে। এর আগের বার যখন ফেরিতে উঠছিলাম, তখন ফেরি ঘুরে ঘাটের বা’দিকে যেয়ে তারপর নদী পার হয়ে ওইপাশে গেলেই যায়গামত পৌঁছে গেছিলো। কিন্তু এই ফেরিতো সোজা চলা শুরু করলো? যদি আমরা ভুল ফেরিতে উঠে থাকি?
আলোচনা চলে আমাদের। নিশ্চিন্তে দুইজনে কল্পনা করি আর উচ্চস্বরে আলাপ করি, এখন যদি অন্য যায়গায় নামিয় দেয়, এতো রাতে যাবো কোথায়? টাকাও তো বেশি নেই যে হোটেলে গিয়ে থাকবো, অবশ্য হোটেল যদি থাকে আরকি। খুক খুক খ্যাখ্যা করে হাসি আর বিড়িতে টান দেই আমরা।
পাশে দাঁড়িয়ে এক ব্যাটা অনেক্ষণ ধরে মিচকি মিচকি হাসছিলো আর আমাদের কথা শুনছিলো। এইবার সে আর থাকতে না পেরে জিজ্ঞেস করে, ভাই আপনারা যাবেন কই? আমরা সগর্ব উত্তর দেই শরিয়তপুর। লোকটা চোখ কপালে তুলে ফের প্রশ্ন করে, তাইলে এই ফেরিতে কি করেন?
এইবার আমাদের চোখ কপালে ওঠে। আমরা দুইজনে খানিক্ষণ হা করে তাকিয়ে থাকি, তারপরে হুংকার দিয়ে হেসে উঠি। কি কপাল। পকেটের হালকাত্ব চিমটি কাটে, কিন্তু সেই সাথে অভিযানের গন্ধ পাই। ভয় লাগে না মোটেই।
রাত দশটা বা পৌনে এগারোটা হবে, ফেরি ঘাটে লাগে। ফেরি থেকে নেমে আমাদের মত বাটে পড়া আরো দুই বেকুবের দেখা পেয়ে যাই। তারা দুই ভাই সিঙ্গাপুর প্রবাসী, দেশে ফিরে বাড়ি যাচ্ছে। ভুল ফেরিতে উঠে এখন খালি এদিক ওদিক চায়। দুই ভাইয়েরি ঘাড়ে বিশাল “তারেক অণু” সাইজের ব্যাকপ্যাক। ব্যাটারা মেলা শপিং করে নিয়ে এসেছে নির্ঘাত। মনে মনে গাল দেই শালা, সুখেই আছো তোমরা।
আমাদের চারজনেরি দাঁত সব বের হয়ে পড়ে একে অপরের দূর্দশা দেখে। ঘাটে খানিক অনুসন্ধান চালাই। নৌকা ভাড়া করা যেতে পারে মালুম হয়। জন প্রতি পঞ্চাশ টাকা, শরিয়তপুর ঘাটে নামিয়ে দেবে। সিঙ্গাপুর প্রবাসী সদ্য পাওয়া ভাইয়েরা আমার তাতেই রাজী হয়ে যায়। ওদের পকেটে কুবের ডন দিচ্ছে কিন্তু আমাদের তো আর তা না। সাবধানে হিসাব করি। দুই জনের নৌকা ভাড়া দিয়েও যৌথ পকেটে একশ পঁচিশ টাকা থাকবে। সুতরাং মধ্যরাতে নৌকা ভ্রমণ নিরাপদ মালুম হয়।
মিনিট পনেরো পরে নৌকা সামান্য এগিয়ে যেতে ফেরি ঘাটের আলো, গ্যাঞ্জাম মিলিয়ে আসে পেছোনে। মাথার উপর চাঁদ মামা। কি কপাল। চাঁদ ব্যাটা আস্ত না হলেও প্রায় আস্ত। চাঁদের আলোয় চারিদিক হেসে ওঠে। নৌকার ছই এর উপর উঠে শুয়ে পড়ি। বিড়ি ধরাই মহানন্দে। মনের সুখে চিৎকার করে গান ধরি দুই জনে। অপার্থিব অভিজ্ঞতা। নদীর জলে চাঁদের আলো আর দাঁড়ের ছপ ছপ শব্দ ডাকাতের ভয়, পকেটে টাকা না থাকার দুশ্চিন্তা সব ধুয়ে নিয়ে চলে যায়। ঘোর কেটে যায় একটু পরে। কেমন যেন লাগে। মনের মধ্যে কুটিল সন্দেহ নিয়ে জামার পিঠের দিকে হাতিয়ে দেখি। হাত আল্কাতরায় মাখামাখি হয়ে যায়।
নৌকার ছইয়ে আলকাতরা মাখিয়ে রেখেছে ব্যাটা বদেরা। মানে মানে নেমে আসি ছই থেকে। মাঝি ব্যাটা টের পায় ঠিক। দাঁত বের করে বলে ও ভাইজান কেমুন লাগতেছে? আমরাও কিল হজম করে দাঁত বের করি। পানিতে হাত ডুবাই। আবার মনের মধ্যে মহান সব চিন্তা ভাবনারা এসে ঠেলা ঠেলি করে। আহা এমন চাঁদের আলো, সেই সাথে কি বাতাস। এর মাঝে বেরসিক পেট কুঁ কুঁ করে ওঠে। নৌকা বাঁক নেয়, তীরের দিকে এগিয়ে যায়। দূরে আলো আর মানুষের কথার আওয়াজ ভেসে আসে।
মাঝি ব্যাটার পাওনা শোধ করে ঘাট থেকে উপরে উঠে এগিয়ে যাই আমরা। চারিদিক থেকে কয়েকজন ঘিরে ধরে আমাদের। বেশ ভয়ই লাগে। আমার ঘাড়ে ঝোলানো লম্বা কালো খাপটার দিকে আঙ্গুল তুলে জিজ্ঞেস করে বন্দুক কিনা। সবেগে মাথা নেড়ে বলি না না গিটার, সেই সাথে ব্যাখ্যা করি গিটার কি জিনিস। লোক জন মাথা নাড়ে, বলে ও বুজছি হারিন্দা।
হেড লাইটের জোরালো আলো সেই সাথে বাসের হর্ন শুনে আমরা আশায় আশায় ছুটে যাই। ফাঁকা বাস, ড্রাইভার জানালা দিয়ে মাথা বের করে। আমরা বিনীত ভাবে জিজ্ঞেস করি শরিয়তপুর যাওয়া যাবে কিনা। ড্রাইভার বলে অবশ্যই যাওয়া যাবে, তবে গোটা বাস রিজার্ভ করতে হবে। কারণ শেষ ট্রিপ শেষ করে সকালের ফেরির যাত্রী তোলার ফার্স্ট ট্রিপের জন্যে সে এখন ঘাটে বাস রেখে ঘুমানোর জন্যে এসেছে। আস্ত একটা বাস রিজার্ভের কথা শুনে আমাদের গলা শুকিয়ে ওঠে, এদিক ওদিক তাকাই।
সিঙ্গাপুরী ভাইয়েরা এগিয়ে এসে উদ্ধার করে। বুদ্ধি দেয় তাদের সাথে যাওয়ার জন্যে। হাটা পথে তিরিশ থেকে চল্লিশ মিনিট তাদের বাড়ি। রাতটা তাদের বাসায় থাকলাম, তারপর সকালে তারাই আমাদের বাসে তুলে দেবে। কোনো সমস্যাই নাই। আমরা দুই জনে দুই জনের দিকে তাকিয়ে থাকি। এর থেকে ভালো ব্যবস্থা আর হতেই পারে না। বলতে কি মনে মনে আমরাও পুলকিত হয়ে উঠি। চার জনে একসাথে হাঁটা দেই। আর এক অভিযান শুরু হয়ে যায় আমাদের। এক রাতে এত অভিযান সহ্য হলেই হয় শেষ পর্যন্ত।
(অভিযানের সময় ১৯৯৯)
মন্তব্য
(গুড়)
জবের ব্যাপার, ফাঁকিবাজের তালিকায় নাম দেখলাম, তারপরপরই লেখা !
facebook
(ধইন্যা)
আরে বলো কি!! খালি ফাঁকিবাজের তালিকায় নাম উঠে যাচ্ছে দেখি। যাক বাবা এখন কিছু দিন নিশ্চিন্ত। আমি অবশ্য কিছু দেখতে পাই না :D এমনকি সন্দেশ মামার ঐ পোস্টেও খালি গাদা খানিক কোড দেখি।
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
ভালো লাগলো 'সচলায়তন' এর নীড়পাতায় আপনার লেখা দেখে। স্মৃতিচারণ ও ভালো লাগছে। (Y)
শুরু করে দিলাম $) পর্যাপ্ত পরিমাণ সাহস যোগাড় করতে পারলেও সময়ের টানাটানি থেকে যাচ্ছিল। পরে মনে হলো এই টানাটানি না মরলে আর যাচ্ছে না, সুতরাং যা হওয়ার এর মধ্যেই হবে। পড়ার, মন্তব্য করার আর উৎসাহ দেওয়ার জন্যে ধন্যবাদ :)
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
গল্প শেষ? :-?
আরে নাহহ, এতো তাড়াতাড়ি? কেবলতো শুরু হোলো। আপাতত (ধইন্যা) লন।
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
(পপ্পন)
(গুড়) লন সাথে :)
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
আরে বাহ! কল্যাণ ভাইয়ের আগমন, শুভেচ্ছা স্বাগতম :D
$)
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
সিঙ্গাপুরী ভাইদের দিল সাফ তো? (চিন্তিত)
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
এহহ আগে ভাগে সব বলে দিলে তারপর আমি কি লিখবো? এই নেন (গুড়)
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
খুব ভালও লগোলো।
ধন্যবাদ
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
(পপ্পন) :)
:) (ধইন্যা)
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
পুলিশ জিন্দাবাদ। বস তাইলে লেখলা!! ভীষণ ভাল্লাগছে, কিবোর্ড গুল্লির মত চলুক ভাইজান। (Y)
ডাকঘর | ছবিঘর
হ, শুরু করছি, নাইলে দূর্নাম হয়া যাইতাছিল, দেখা যাক কদ্দুর নিতে পারি।
(ধইন্যা)
তুমি কো?
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
ভাল লাগছে, তবে আপনার আলকাতরা কাহিনী বেশী ভালু পাইলাম।
হুম্ম দুঃস্থ ছাত্রদের সবেধন জামা নষ্ট হোলো আর আপনি ভালু পাইলেন!! এই দুনিয়ার অবস্থা। কষ্ট কইরা পড়ছেন তাই (ধইন্যা) লন।
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
কল্যানদা,
এই প্রথম আপনার লেখা পড়লাম। এবং মুগ্ধ হলাম! বিশেষত আপনার বলার ভঙ্গি অসাধারণ লাগল!
প্রায় আস্ত চাঁদ মাথায় নিয়ে পদ্মা নদীতে নৌ ভ্রমণ স্বর্গকেও হার মানায়!
সিঙ্গাপুর-ফেরত যে ভাইদের বর্ণনা দিলেন, তা বাংলাদেশীদের চিরায়ত সারল্য, আতিথ্য ও মহানুভবতাকেই উচ্চকিত করে!
শরীয়তপুর গিয়েছিলেন কেন? পরবর্তী পর্বের জন্য (পপ্পন)
বলবো কাজী মামুন ভাই, সবি বোলতে চাই, ইট্টু টাইম দেন।
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
:))
লঞ্চে করে শরিয়তপুর গেসিলাম বন্ধুর বোনের বিয়া খাইতে। লঞ্চগুলা চাঁদপুরের লঞ্চ থেকে সাইজে ছোট। গভীর রাতে মেঘনা নদীতে যখন লঞ্চ ঢুকে তখন আমরা ডেকের কিনারায়, কি যে বাতাস! চুলে জট লেগে গেসিল।
(Y)
..................................................................
#Banshibir.
খালি ফেরি ঘাটে না বাসে, বাজারে শরিয়তপুরবাসী ঐ বস্তুরে হারিন্দাই কইছে। সেই খানেই থামে নাই, আমাদের হারিন্দাওয়ালাও ডাকছে :))
(গুড়) (ধইন্যা)
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
ভালোই লাগলো।
পুঁছতাজ কি? জিজ্ঞেস করা?
ধন্যবাদ পিপিদা।
পুঁছতাজ মানে জিজ্ঞাসাবাদ। বানানটা ঠিক ছিলো কিনা বুঝতেছি না, বদলে অনুসন্ধান করে দিলাম। সেই সাথে ভালো লেগেছে শুনে আকাশে উঠে পড়লাম :)
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
চালায়ে যান, জমবে মনে হইতেছে।
ইটা লইবেন নি?
(ইটা)
লন ইটা লন।
:S মাথায় মারতে না বসতে ইটা ফিক্কা মারলেন ভাই?
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
=DX
(ইটা) এইটা আমার, বসে থাকলাম পরের পর্বের জন্য।
(ধইন্যা) আরো আসিতেছে, সম্পূর্ণ রঙ্গিন :D
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
মামুর বুঁঠা জবের লিখ্যছো তো। ম্যলাদিন পর ''পুঁছতাজ'' শব্দটা শুনলাম। পরের কাহিনীটা তাড়াতাড়ি দিস অপেক্ষায় রইলাম।
হ, চেষ্টা চালু আছে দোস্ত :) । উইকেন্ডে ফাও ঝামেলা থেকে বাচতে পারলে লিখে ফেলবো আর এক কিস্তি। আমার সাথে কে ছিলো আন্দাজ কর্ এই ফাঁকে।
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
পর পর আপনার দুটো লেখা পড়ে দারুণ লাগল।
ভাগ্যিস ফাঁকিবাজের তালিকায় নাম উঠেছিল ! :p
পরেরটার অপেক্ষায় থাকলাম। :)
(ধইন্যা)
আরে প্রদীপদা কন কি? :S পরপর দুইটা পাইলেন কো ?
আপাতত (পপ্পন) আর (গুড়) খান।
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
:S
থুক্কু !!
আমি গুলায়ে ফেলছি।
যাই হোক, আরেকটা লেইখ্যা আমার মান বাঁচান ভাইয়া।
ভাল লেগেছে। আপনি গিটারও বাজান তাহলে!
ভালো লেগেছে জেনে খুশী হলাম, ধন্যবাদ।
সে ছোটবেলায় কিছুমিছু বাজাতাম। এখন উল্টে গিটারই আমাকে বাজায় ;)
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
(পপ্পন)
বইলাম কিন্তু।
:D (ধইন্যা)
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
চাঁদের আলোয় চারজন যুবক ভেসে যাচ্ছে ব্রক্ষ্মপুত্রের জলে, আহা, বড়ই মনোহর ;) ।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
রোমালে ভাই আপনার মন্তব্য পেয়ে অনেক উৎসাহ পেলাম। মাঝি ব্যাটারেও গোনায় ধরেন, সে বেশ রসিকও ছিল, যদ্দুর মনে পড়ে নানা রকম ঘাঁটের ফুর্তির খোঁজ দিচ্ছিলো আমাদের ;) । আর ইয়ে মানে আমরা মাওয়া ঘাঁট থেকে ফেরিতে উঠেছিলাম, নদীটা পদ্মা।
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
আসলেই ফাঁকিবাজ
ও বুজছি হারিন্দা =((
গৌতম হালদার
নতুন মন্তব্য করুন