জীবন চলার পথে

খন্দকার আলমগীর হোসেন এর ছবি
লিখেছেন খন্দকার আলমগীর হোসেন [অতিথি] (তারিখ: সোম, ৩০/০৫/২০১৬ - ১২:০৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

এই সেলফোন, ট্যাবলেট আর ল্যাপটপের যুগে আমি যদি জানাই আমরা তিনভাই শৈশব পাড়ি দিয়েছি কিসব প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে, আজকের জেনারেশন হেসে গড়াগড়ি যাবে।

রংপুর সুগার মিলের আবাসিক এলাকা থেকে মহিমাগঞ্জ বাজার ছিল এক মাইলের পথ। আর মহিমাগঞ্জে তখনো রিক্সা নামেনি। মঙ্গল আর শনিবার ছিল হাটের দিন। আব্বার সাথে বাজারে যাওয়ার জন্য তিনজনই তৈরি, না নিয়ে গেলে মুখভার, কান্নাকাটি, রাতে না খেয়ে ঘুমিয়ে যাওয়া। যেতে আসতে দুমাইল পথ হাঁটার কষ্টের চেয়ে আব্বার লেজে লেজে ঘুরে মুরগি, ইলিশ মাছ, গরুর মাংস আর তরতরকারি কেনাকাটা ছিল অনেক উত্তেজনাপূর্ণ ব্যাপার। কিন্তু ভিড়ের মধ্যে তিনজনকে সামলে রাখা যাবেনা বলে আব্বা নিয়ে যেতেন শুধু একজনকে। ফলে ভাইদের মনে মনে থাকত অপরিবর্তনযোগ্য সেই তালিকা, কোন জনের কোনদিন বাজারে যাওয়া পাওনা। সেদিনটা ছিল তার বিশেষ অধিকারপ্রাপ্ত দিন।

বাসায় মুরগি রান্না হলে, সেটার বিশেষ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ খাওয়া নিয়েও চলত ভয়ঙ্কর প্রতিযোগিতা। কলজেটা কার ভাগে, গিলাটা কে খাবে, হৃৎপিণ্ডটা আজ কার পাতে, আগে থেকেই নিশ্চিত করা থাকত ভাইদের মধ্যে। এমনকি বড় মোরগ জবাই হলে ওটার মাথার ফুলটা খাওয়া নিয়েও ছিল কম্পিটিশন।

মুরগির গিলাটার প্রতি ছিল সব ভাইয়ের বিশেষ নজর, ওটা বেশী মজাদার ছিল বলে। অনুসন্ধিৎসু হয়ে আব্বাকে একদিন জিগ্যেসই করে ফেললাম, মুরগির গিলা দুইটা কেন হয়না?

সউদিতে গিয়ে বাসায় জবাই করা মুরগি নিয়ে এলে, ওটার স্পেয়ার পার্টসগুলো (কলিজা, গিলা, হৃৎপিণ্ড, ইত্যাদি) সংগে দেয় না। প্যাকেটে করে ওগুলো আলাদাভাবে কিনতে পাওয়া যায়।

একদিন সুপারমার্কেট থেকে ঘরে ফিরলাম এক প্যাকেট গিলা নিয়ে। সুন্দর তকতকে, পরিষ্কৃত, ৩০-৪০ টা গিলা। শৈশবের অতৃপ্ত রসনার কথা ওয়াকেবহাল ছিলেন আমার নব পরিণীতা স্ত্রী। অতি যত্নের সাথে, প্রথমে গ্যাসের আগুনে ছেঁকা দিয়ে পুড়ে, তারপর মনের মাধুরি মিশিয়ে রান্না হল গিলা। আমাদের গ্রামে প্রয়োজনের বেশী কোন কাজ করলে বলা হয়, দাদার নাম জাগিয়ে করা। সে রাতে দাদার নাম জাগিয়ে ১০-১২ টা গিলা উদরস্থ করলাম!

পরদিন খাবার টেবিলে এল আবার এক পেয়ালা গিলা। অন্য কিছু দিয়ে খাওয়া সম্পূর্ণ হল। গিলা খাবার প্রবৃত্তি ছিল না।

আস্তে আস্তে পুরো সপ্তাহ ধরে খেয়ে শেষ করলাম গিলা। কিছু হয়ত ফেলেও দিলাম।

ততদিনে আমার শৈশবের জিজ্ঞাসার জবাব পেয়ে গেছি নিজে নিজে, কেন মুরগির গিলা দুইটা হয়না!


মন্তব্য

সোহেল ইমাম এর ছবি

ভালো লাগলো। চলুক

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

খন্দকার আলমগীর হোসেন এর ছবি

ধন্যবাদ পড়ার জন্য।

____________________________________________________________________
ইতিহাস পড়ি না, জন্মলগ্ন থেকে বাংলাদেশকে প্রতিদিন যেভাবে দেখেছি, সেটাই বাংলাদেশের প্রকৃত ইতিহাস।

অতিথি লেখক এর ছবি

ভালো লেগেছে..…আমরাও ছোট বেলায় এভাবে করতাম কলিজা,বুকের কুরকুরা হাড্ডি যুক্ত মাংস, গিলা সবার প্রিয়…এখনো।
এ্যানি মাসুদ

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

চলুক

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।