মদ খাওয়া বড় দায় জাত থাকার কি উপায় ?

খেকশিয়াল এর ছবি
লিখেছেন খেকশিয়াল (তারিখ: রবি, ২১/০৯/২০০৮ - ৩:৪৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

প্যারীচাঁদ মিত্রের লেখাটা পড়ে হাসতে হাসতে পেট ব্যাথা হয়ে গেল, অনেকে হয়ত পড়েছেন তবু শেয়ার না করে পারলাম না । প্রথমেই বলে রাখি উনি কিন্তু মদ্যপান বিরোধী লোক, এই লেখার প্রথমেই উনি মদের অনেক নিন্দা করেছেন, ওটুকু গায়ে না মাখলেই চলবে ।

মদ খাওয়া বড় দায়
জাত থাকার কি উপায় ?
- প্যারীচাঁদ মিত্র

মদ খাওয়া বড় বাড়িতেছে মাতাল নানারূপী । কলিকাতায় যেখানে যাওয়া যায় সেইখানেই মদ খাইবার ঘটা । কি দুঃখী, কি বড় মানুষ, কি বৃদ্ধ সকলেই মদ্য পাইলে অন্ন ত্যাগ করে । কথিত আছে, কোন ভদ্রলোক একগ্রামে কিছু দিবস অবস্থিতি করিয়াছিলেন; তথায় দেখিলেন, প্রায় সকল লোক অহোরাত্র অবিশ্রান্ত গাঁজা খাইতেছে । এই ব্যাপার দেখিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, এ-গ্রামে কত লোক গাঁজা খায় ।
গাঁজাখোরের মধ্যে একজন উত্তর করিল, আমরা সকলেই গাঁজা খাইয়া থাকি, গ্রামের শালগ্রাম ঠাকুর ও আমাদিগের টেপি পিসি যাহার বয়স ৯৯ বৎসর কেবল তাহারাই খারিজ আছেন । কলিকাতা এক্ষণে প্রায় তদ্রূপ ।

মদ্যপানে কি শরীর ভাল থাকে ? কোন কোন মদ্য পরিমিত রূপে পান করিলে ধাতু বিষয়ে উপকার হয় বটে, ডাক্তারও এরূপ বিধি দেন, কিন্তু নিরন্তর পেয়ালা বাজিতে শরীর ত্বরায় নষ্ট হয় । কত কত লোক মদ্য পান করিয়া অধোপাতে গিয়াছে । যাহারা বিয়ার কি শেরি অথবা অন্য বিধি নরম গোছের মদ্যের নামও সহ্য করেন না, জল না মিশাইয়া কেবল ব্রান্ডি বোতল বোতল পান করেন- তাহারা প্লীহা, পক্ষাঘাত ও অন্যান্য রোগে যে শীঘ্র আক্রান্ত হবেন, তাহাতে আশ্চর্য কি ?
মদ্যপানে যে কেবল শরীর নষ্ট হয় এমত নহে, শরীরের সঙ্গে বুদ্ধি ও ধনও যায় । জ্ঞানশূন্য হইয়া ভোঁ অথবা টুপ ভুজঙ্গ রূপে থাকিলে কি ফল ? জ্ঞানকে একেবারে ডুবাইয়া আমোদ করিলে যে আমোদে আমোদ হইতে পারে না, মনকে নির্মল রাখিলে সৎকর্ম করিলেই প্রকৃত আমোদ হয় । মদের জোরে লম্ফ ঝম্ফ হইতে পারে বটে, কিন্তু সে কতক্ষণে বাকি ? অনেক ব্যক্তি মদে আসক্ত হইয়া বুদ্ধিকে একেবারে বিসর্জন দিয়াছে- তাহাদিগের মান সম্ভ্রমও অন্তর্ধান হইয়াছে ।

মদের অদ্ভুত শক্তি । যে ব্যক্তি পান করে, সে দুধকে জল বলে । কলিকাতায় কোন বুনিয়াদি মাতালের বাটিতে চাকর প্রস্রাব করিতেছিল, মাতাল বাবুর মস্তকে পড়িলে তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন আমার মাথায় কি পড়িল ? পরে শুনিলেন প্রস্রাব, তখন আপনি কহিলেন তবে ভাল, আমি বোধ করিয়াছিলাম জল ।
কথিত আছে, অন্য এক বুনিয়াদি মাতাল বাবু মদে মত্ত হইয়া দশমীর দিবস প্রতিমা বিসর্জনকালীন নৌকায় দাঁড়াইয়া রোদন করিতে করিতে বলিয়াছিলেন –
“আরে ! মা চললেন- মার সঙ্গে কি কেহ যাবে না, আর বেটা ঢাকী তুই যা” এই বলিয়া ঢাকীকে ধাক্কা দিয়া জলে ফেলিয়া দেন । ঢাকী ভাসিতে ভাসিতে বহু ক্লেশে বাঁচিয়াছিল, আর তাঁর বাটীর দিক দিয়াও যাইত না ।
আবার শুনা আছে, কোন মাতাল ভোজন করিতে বসিয়াছিলেন, তাহার পার্শ্বে জলের ঘটি ছিল না - ত একটা বিড়াল বসিয়া ছিল । মাতাল জলের ঘটি মনে করিয়া বিড়ালকে ধরিলেন । বিড়াল মেও মেও করিতে আরম্ভ করিলে- বলিলেন শালা জলের ঘটা- ! তুই মেঁও মেঁও করিয়া কি বাঁচবি ? তোকে এখনে খাব । পরে বিড়ালকে মুখের কাছে তুলিলে বিড়াল আঁচর কামড় করিয়া পলায়ন করিল ।
আর এক ভক্ত মাতালের কথা বড় অদ্ভুত । সেই মাতালের নাম সিংহ । তাহার বাটীতে পূজা হইবে, ষষ্ঠীর রাত্রে উঠিয়া প্রতিমার নিকট বসিয়া কোণে পরিপূর্ণ হইয়া সিংহকে বলিলেন- আরে বেটা সিংহ । তুই নকল সিংহ, আমি আসল সিংহ, তুই মার পদতলে কেন ? এই বলিয়া সিংহকে ভাঙ্গিয়া আপনি চাদর মুড়ি দিয়া সিংহ হইলেন । প্রাতঃকালে পুরোহিত আসিয়া দেখিলেন বাটির কর্তা স্বয়ং সিংহ হইয়া রহিয়াছেন । তিনি আস্তে আস্তে বলিলেন, মহাশয় ওখানে কেন- মহাশয় ওখানে কেন ? কর্তার নেশা ছুটিয়া ছিল, সে স্থান হইতে আস্তে উঠিয়া আধোমুখে বৈঠক খানায় গিয়া বসিলেন । গুরু পুরোহিত সকলে বলিতে লাগিলেন কর্তা- বড় ভক্ত, না হবে কেন ? সিদূ বংশ ! এরূপ কর্ম কটা লোক করিতে পারে- কায়মনোচিত্তে দেবীর উপাসনা করিতে পারিলেই মোক্ষপদ প্রাপ্ত হয় ও সাধু লোক এই প্রকারেই সিদ্ধ হন । নিকটে একজন স্পষ্ট বক্তা বসিয়াছিলেন, খোসামুদে কথা সহ্য করিতে না পারিয়া বলিল- “সিদ্ধি পূর্বে হইত, এক্ষণে সিদ্ধিও হয় না বস্তুও হয় না, কেবল – অ ! আ ! হয় ”।


মন্তব্য

জুলিয়ান সিদ্দিকী এর ছবি

বটে!
____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।

___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!

মাহবুব লীলেন এর ছবি

পোলাপানের স্বভাব বড়োই খারাপ
মরুভূমিময় শেষ রাত্তিরে পানির গপ্প করে

খেকশিয়াল এর ছবি

দেঁতো হাসি

------------------------------
'এই ঘুম চেয়েছিলে বুঝি ?'

-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- পড়িয়া হাসিতে হাসিতে কাইত হইয়া গিয়াছিলাম। পরে আপনি ভাবিয়া দেখিলাম, 'আরে মলো, আমিতো আর বাটী বসিয়া ঘটি ঘটি অমিয় সূধা আকণ্ঠ গিলি নাই, তাহা হইলে এইরূপ হাস্যের কী হইলো!' শেষে আসিয়া ধরিতে পারিলাম অমিয় সূধা পাকস্থলীপূর্ণ করিলেই যে ঠা ঠা করিয়া সহাস্য বদন প্রদর্শন করিতে হইবে এইরূপ দিব্যি কে বা কাহারা আমাকে প্রদান করিয়াছে? মদারুর জটিল বিশেষতঃ কুটিল কাহিনীর সুনিপূন বুননে যদি স্বীয় মানসপটে কিঞ্চিৎ হাস্যরেখা উদয় হয় তাহা হইলে ক্ষতি কী! এই পর্যন্ত ভাবিয়া পুনরায় হাসিবার উপক্রম করিলাম। হাসিতে হাসিতে কিম্ভূতকিমাকার একখানা শব্দও বাহির হইয়া গেলো স্বীয় প্রত্যঙ্গ হইতে। ইহা দেখিয়া আবারো হাসি পাইলো নিজের। কী আছে জীবনে এক মদ্যপান ছাড়া!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

সবজান্তা এর ছবি

লেখা পইড়া হাসতে হাসতে গড়াগড়ি।

মদ খাওয়া নিয়া আরো মজার মজার সব কথা আর ব্যঙ্গ কবিতা আছে দীনবন্ধু মিত্রের সধবার একাদশীতে।


অলমিতি বিস্তারেণ

পরিবর্তনশীল এর ছবি

হা হা হা মজা পাইলাম। প্যারীচাঁদ বাবু আর ধূগো বাবুরটা পড়ে।
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল

অমিত আহমেদ এর ছবি

আগে পড়ি নাই। শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ ব্রাদার।
ধুগো ভাই তো ফাটায় দিলেন।


ওয়েবসাইট | ব্লগস্পট | ফেসবুক | ইমেইল

পুতুল এর ছবি

পরের গ্রহে ছিল একটা মাতাল। এই যাত্রাটা ছিল খুব অল্প সময়ের, কিন্তু খোকাকে এই ভ্রমন একটা গভীর মায়ায় জড়াল।
এক সারি খালি এবং এক সারি ভরা বোতল সামনে নিয়ে মাতাল লোকটা বসে ছিল।
খোকা জিজ্ঞেস করল: তুমি এখানে কি করছ?
হতাস ভঙ্গিতে লোকটা বলল: আমি মদ খাচ্ছি।
তুমি মদ খাও কেন? খোকা আবার প্রশ্ন করল।
মাতাল লোকটা বলল; ভূলে থাকার জন্য।
লোকটার জন্য খোকার দুঃখ হচ্ছিল তাই আবার জিজ্ঞিস করল।
কি ভূলতে চাও?
লোকটা মাথা নীচু করে বলল: আমি নিজের কাছেই নিজে লজ্জিত এবং সেটা ভূলে যেতে চাই।
হয়ত সাহায্য করতে পারবে, এই আসায় মায়া ভরা কন্ঠে খোকা বলল: কিসের লজ্জা তোমার?
মাতাল: আমি মাতাল এটাই আমার লজ্জা।
কথাটা বলেই লোকটা নিরবতার আর্বতে ঢুকে পড়ল।
দুঃখিত ভাবে বিদায় নিয়ে যেতে যেতে খোকার মনে হল: বয়স্ক মানুষ গুলি বড়ই অদ্ভূত!

উদৃত অংশটুকু কার? কোন বইয়ের? কইতে পারলে, এক বোতল শ্যাম্প্যান ফ্রী!

**********************
কাঁশ বনের বাঘ

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

দেঁতো হাসি
___________________________________
বিষন্নতা ছোঁয় আমায় মাঝে মাঝেই, কখনো কি ছোঁয় না তোমায়?

খেকশিয়াল এর ছবি

“আরে ! মা চললেন- মার সঙ্গে কি কেহ যাবে না, আর বেটা ঢাকী তুই যা”


আরে বেটা সিংহ । তুই নকল সিংহ, আমি আসল সিংহ, তুই মার পদতলে কেন ? এই বলিয়া সিংহকে ভাঙ্গিয়া আপনি চাদর মুড়ি দিয়া সিংহ হইলেন ।

গড়াগড়ি দিয়া হাসি

------------------------------
'এই ঘুম চেয়েছিলে বুঝি ?'

-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।