অনেক আগের কথা। মুসাহি প্রদেশের এক গ্রামে মোসাকু আর মিনোকিচি নামে দুই কাঠুরে বাস করত। যে সময়ের কথা বলছি সে সময় মোসাকু বুড়িয়ে গিয়েছিল, আর তার শিষ্য মিনোকিচি ছিল আঠারো বছরের এক ছেলে। প্রতিদিন তারা গ্রাম থেকে পাঁচ মাইল দূরের বনটায় কাঠ কাটতে যেত। যাবার পথে বড় একটা নদী পড়ত যার সাথে ছিল ফেরী পারাপারের নৌকা। অনেকবার ফেরীর জায়গাটায় ব্রীজ বানানো হলেও বন্যার টানে ভেঙ্গে পড়ত ওগুলো। নদীর ও জায়গাটা এতোই খরস্রোতা ছিল যে কোন সাধারণ সাঁকোও টিকত না।
সময়টা ছিল শীতকাল। সেই সন্ধ্যায় মোসাকু আর মিনোকিচি যখন কাঠ কেঁটে বাড়ী ফিরছিলো, ভয়াবহ এক তুষারঝড়ে পড়ে গিয়েছিল তারা। ঠান্ডায় জমে, অনেক কষ্টে হাঁতড়ে খুঁজে তারা যখন ফেরী ঘাটে পৌছাতে পারল, দেখল নৌকা নদীর ওপাড়ে বেঁধে মাঝি লাপাত্তা। অন্য কোন দিন হলে তারা হয়ত সাঁতরেই নদী পার হত। কিন্তু সেই হাড়কাঁপানো ঠান্ডায় তারা মাঝির ছোট কুড়েটায় ঢুকতে পেরেই নিজেদের বেশ ভাগ্যবান মনে করেছিল। ঘরটা বেশ ছোট, আগুন জ্বালানোর কোন ব্যবস্থা ছিল না, জানালাও ছিল না। মোসাকু আর মিনোকিচি দরজা জানালা বেশ শুক্ত করে আটকে বৃষ্টি থামার জন্য অপেক্ষা করছিল। ঘরে বসে খড়ের বর্ষাতি গায়ে তাদের তখনও তেমন ঠান্ডা লাগছিল না। তারা ভাবছিল ঝড় থামলেই সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।
ক্লান্ত মোনাকু বলতে গেলে ঘুমিয়েই পড়েছিল। কিন্তু মিনোকিচি জেগেছিল অনেকক্ষন। সে শুনছিল ভৌতিক বাতাসের শব্দ, কাঁদছে যেন, আছড়ে পড়ছে তুষারের সাথে ঘরের দরজায়। যেন বিপদে পড়েছে কেউ, ঢুকতেই হবে তার এই ঘরে। বাইরে নদীর উথাল পাতাল শব্দ। ঝড়ে, বাতাসে ঘরটা দুলছিল, কাঁপছিল যেন উত্তাল সমুদ্রের উপর কোন ছোট নৌকা, দুমড়ে মুচড়ে যাবে এখনি। ঝড় যখন আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করল, বাতাস যখন আরো ঠান্ডা হয়ে সুইয়ের মত বিঁধতে লাগল, বর্ষাতির ভিতর কাঁপতে কাঁপতেই একসময় ঘুমিয়ে পড়ল মিনোকিচি।
হঠাৎ মুখে তুষারের ঝাপটায় মিনোকিচির ঘুম ভাঙ্গে । সে দেখে দরজাটা খোলা, বাড়ি খাচ্ছে বাতাসে। সারা ঘরটায় কেমন জানি এক ধকধকে আলো। আর সে আলোতেই মিনোকিচি দেখতে পেল মেয়েটাকে। বরফের মত ধবধবে সাদা এক মেয়ে, ঝুঁকেছিল মোসাকুর উপর, ফু দিচ্ছিল বুকভরে। তার মুখ থেকে বেরিয়ে আসছিল উজ্জ্বল সাদা ধোঁয়ার মত বাতাস। মেয়েটা যখন ঘুরে মিনোকিচির দিকে থামল, সে চিৎকার দিতে চেষ্টা করল, কিন্তু তার গলা দিয়ে কোন শব্দই বেরুল না। মেয়েটি ঠিক একইভাবে তার উপর উবু হয়ে কাছে আসতে লাগল। মিনোকিচি তখনো শব্দহীন চিৎকার করে যাচ্ছিল, মিশে যাচ্ছিল যেন মাটির সাথে। আস্তে আস্তে যখন মেয়েটির মুখ তাকে প্রায় স্পর্শ করবে, সে অবাক হয়ে দেখল, মেয়েটা অদ্ভুত সুন্দর! যদিও মেয়েটির অদ্ভুত শান্ত শীতল চোখ বুক কাঁপিয়ে দিয়েছিল তার, তবুও সে মেয়েটার থেকে চোখ সরাতে পারছিল না। কিছু সময়ের জন্য মেয়েটাও থেমে গিয়েছিল, দেখছিল তাকে। হঠাৎ মেয়েটা হাসল যেন একটু, ফিসফিসিয়ে বলল, ‘ভেবেছিলাম ওর মত তোমাকেও ঘুম পাড়িয়ে দেই, কিন্তু তোমাকে দেখে দয়াই হল। তুমি এখনো অনেক ছোট, খুবই সুন্দর দেখতে। আর তাই আমি তোমাকে মারব না। কিন্তু তুমি যদি আমার এই দয়ার কথা কাউকে বল, এমনকি তোমার মাকেও, আমি জানতে পারব। আর সেইদিনই আমি তোমাকে খুন করব। খবরদার, মনে রেখো!’
এই কথা বলেই মেয়েটি উঠে দাঁড়াল, আর দরজা পেরিয়ে আস্তে আস্তে মিলিয়ে গেল বাইরের ঝড়ে। এতক্ষন ভয়ে শিঁটিয়ে থাকা মিনোকিচি যেন বুকে নতুন করে সাহস পেল। লাফ দিয়ে উঠে সে এদিক ওদিক তাকালো, বাইরে উঁকি দিল। কিন্তু মেয়েটাকে আর দেখতে পেল না কোথাও। ঝড় বইছিল আগের মতই, ঘরে ঢুকে পড়ছিল হু হু করে। মিনোকিচি দরজা বন্ধ করল, ঘরের এখান ওখান থেকে কুড়িয়ে কিছু কাঠ দিয়ে ভালমত ঠেস দিল দরজায়। তার মনে হচ্ছিল পুরোটাই একটা স্বপ্ন, হয়ত বাতাসেই দরজা ভেঙ্গে গেছে। আর আধোঘুমে ঘরে ঘুরতে থাকা তুষারকনাকে দেখে সে ভেবেছে কোন সাদা মেয়ে। কিন্তু সে কোন কিছুই ঠিক মত বুঝতে পারছিল না। অনেকক্ষন ধরেই ডাকছিল সে মোসাকুকে, কিন্তু বুড়ো কোন শব্দ করছিল না। মিনোকিচি ভয় পেয়ে গেল, এগিয়ে গেল বুড়োর দিকে। অন্ধকারে হাত বাড়িয়ে স্পর্শ করল বুড়োর মুখ, যা জমে গিয়েছিল বরফের মত শক্ত হয়ে! মোসাকু মরে বরফ হয়ে ছিল, অনেকক্ষন আগেই...
(চলবে)
মন্তব্য
গল্পটা ভাল্লাগছে।
-------------------
--------------------------------------------------------
অনেকদিন পর
তাও আবার চা খাইতে গেলেন
তাড়াতাড়ি পরের পর্ব ছাড়েন শিয়ালভাই...এইটা একটা পিলিজ।
---------------------------------------------------------------------------
If your father is a poor man, it's not your fault ; but If your father-in-Law is a poor man, it's definitely your fault.
---------------------------------------------------------------------------
একা একা লাগে
কাইদান-চার থেকে কাইদান-পাঁচের দূরত্ব কতটুকু? মাত্র সাত মাস আট দিন।
পুরনো ঢাকার চা মজার, আবার ব্যতিক্রমীও - যেমন শিরিন চা, নামকীন চা। কিন্তু সেখানে কোন চায়ের কাপ যে এত বড় হয়, তাতে চা শেষ করতে বৎসরের অর্ধেকের বেশি পার হয়ে যায় এমনটা জানতাম না।
তুষারকন্যার গল্পটা কিছু না খেয়ে/না পান করে খালি পেটে শেষ করা যায় না!!
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
সবাই চা খাইতে যায়...
সচলায়তন থেকে বাবুলের আইপি সহ ব্যান চাই...
লেখা চাল্লু
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
আরে.. ! চা খাইতে যাই নাই ! একটু দম নিয়া আসি।
------------------------------
'এই ঘুম চেয়েছিলে বুঝি ?'
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
হ
আরেকটা বুদ্ধি দিলেন।
আধখান গল্প দিয়া অখন অর্দ্ধেক লোক যাইবো চা খাইতে, আর অর্দ্ধেক যাইবো একটু দম লইতে।
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
আমি জানি আপনি অনেক ভাল ভয়ের গল্প লিখেন, তাই ভয়ে পড়িনা, আজকে কি হল এখন রাত সারে ১২টায় পড়ে ফেললাম
ভুতের সাথে প্রেম তারপর কি হলো?
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
চলবে কয়দিনের জন্য চলতে থাকবে? অপেক্ষায় থাকলাম
মেঘ
মেঘের কথকতা
দারুন
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
নতুন মন্তব্য করুন