ভাবছিলাম হিচককের মুভিগুলো নিয়ে লেখবো। কিন্তু এই সাসপেন্সের বাপের মুভি রিভিউ আমি আর কি দেবো বরং গল্পের শুরুগুলো একটু ধরিয়ে দেই। হিচককের মুভির একটা ব্যাপার আছে, ব্যাটা সাসপেন্সকে নিয়ে এত ভয়ানক খেলা করতে পারে যে সে না দেখলে বলে বুঝানো যাবে না। কিছু দৃশ্য আছে, জানি এরপরে কি হবে তবু দেখা যাবে আপনিতেই আমার দম আঁটকে গেছে অথবা বুক কেঁপে গেছে পরের দৃশ্য দেখে।
রোপ
ভার্সিটিতে থাকাকালীন হাউসমাস্টার রুপার্ট (জেমস স্টুয়ার্ট) "আর্ট অফ মার্ডার" নিয়ে তাদের লেকচার দেন একবার। নিখুত খুন, অতিমানবতা নিয়ে তার লেকচারে অনুপ্রাণিত হয় ব্র্যান্ডন । সেই থেকেই তার মনে ঘুরতে থাকে খুনের স্বপ্ন। তারপর অনেকদিন পরে এক সন্ধ্যায়, নিজেদেরই এপার্টমেন্টে খুন করে ব্র্যান্ডন আর ফিলিপ তাদেরই এক ক্লাসমেট ডেভিডকে। কেন? কারণ তারা মনে করেছিল তারা পারে। দুই বন্ধু মিলে খুন করে, লাশটাকে পুরে দেয় এক অ্যান্টিক কাঠের বড় বাক্সে, আর পার্টি দেয় তারা, সেই বাড়িতেই। দাওয়াত দেয় ডেভিডের বাবাকে, তার আন্টিকে, তার প্রেমিকাকে, তার বন্ধুকে আর তাদের আরাধ্য সেই হাউস টিচারকে। আর অবশ্যই ডেভিডকে! কিন্তু সে এতো দেরী করছে কেন বলত? সবাই জিজ্ঞাসা করে। কাঠের বাক্স থেকে বের হয়ে থাকে দড়ি, যার ফাঁসে ডেভিড খুন হয়েছিল। সেই দড়ি দিয়ে বাঁধা হয় বই, ডেভিডের লাশের বাক্সকেই বানানো হয় ডিনার টেবিল, শুরু হয় ভয়াবহ স্নায়ুর খেলা..
ভার্টিগো
ডিটেকটিভ স্কটি (জেমস স্টুয়ার্ট) এক আসামীর পিছে ধাওয়া করতে গিয়ে বুঝতে পারলেন তার এক্রোফোবিয়া মানে উচ্চতাভীতি আছে। পা পিছলে ছাদের থেকে ঝুলতে গিয়ে নিচে তাকালেন তিনি। মাথা ঘুরে উঠল তার। তাকে বাঁচাতে গিয়ে পড়ে মারা গেল আরেক পুলিশ অফিসার। চাকরী ছেড়ে দিলেন স্কটি। কিছুদিন পর, এক পরিচিত তাকে অনুরোধ করে তাকে তার বউ ম্যাডেলিনের (কিম নোভাক) অদ্ভুত আচরণের কারণ আর প্রতিকার খুঁজে বের করতে। কেমন অদ্ভুত? অনুসরণ করেন স্কটি, দেখেন যে সেই মহিলা প্রতিদিন সম্মোহিতের মত এক কবরস্থানে যান, একটা বেশ পুরোনো কবরের সামনে দাঁড়িয়ে থাকেন কিছুক্ষণ, এক মিউজিয়ামে অনেকক্ষণ ধরে দেখেন এক মহিলার ছবি। স্কটি বের করেন এই মহিলার পরিচয়, ইনি কারলোটা ভ্যালদেস। খুবই করুণ তার জীবন কাহিনী, মহিলা আত্মহত্যা করেছিলেন। রহস্য আস্তে আস্তে ঘনিয়ে উঠে, যখন স্কটি জানতে পারেন ম্যাডেলিন সেই কারলোটা’রই বংশধর। এই গল্পের আর বলা যাবে না, এখানেই থামি।
রি'র উইন্ডো
ফটোগ্রাফার জেফ (জেমস স্টুয়ার্ট, সব পরিচালকেরই কিছু প্রিয় নায়ক আছে, সত্যজিতের সৌমিত্র, ঘটকের অনিল চ্যাটার্জী, হিচককের স্টুয়ার্ট) পা ভেঙ্গে ব্যাণ্ডেজ নিয়ে পড়ে আছেন হুইলচেয়ারে। তার সময় কাটে জানালা দিয়ে প্রতিবেশীদের দেখে। তিনি আবিষ্কার করেন তার নাচিয়ে প্রতিবেশী মেয়েটি তার ঘরে অন্তর্বাস পড়েই অনুশীলন করে, এক কোনার ঘরে একাকী একজন মহিলা থাকেন, একজন সঙ্গীত রচয়িতা যিনি তার পিয়ানো নিয়েই পড়ে থাকেন, একজন সেলসম্যান আর তার শয্যাশায়ী অসুস্থ স্ত্রী.. এছাড়া আরো অনেক প্রতিবেশী, সবারই নানান রকম বৈচিত্রময় জীবন দেখে তার সময় কাটে। জেফের প্রেমিকা স্টেলা (গ্রেস কেলি) তাকে এসে দেখে যায় রোজ। জেফ তাকে বলে তার প্রতিবেশীদের কথা। আর একদিন, সেলসম্যানটিকে দেখে জেফের সন্দেহ হয়। লোকটা পরিষ্কার করছিল কিছু ছুরি। জেফ দেখে, তার অসুস্থ স্ত্রীও বিছানায় নেই। এই কয়দিন লোকটার হাবভাব ভাল ঠেকেনি জেফের, এক ভয়ংকর সন্দেহ দানা বেধে উঠতে থাকে তার মনে। কিছু পরে যখন লোকটিকে বড় একটা বাক্স দড়ি দিয়ে বাধতে দেখে, তার বুঝতে আর বাকি থাকে না যে স্ত্রীকে খুন করে লাশ সরাচ্ছে সেই সেলসম্যান। শুরু হয় হুইলচেয়ারে বসেই জেফের গোয়েন্দাগিরি।
মন্তব্য
ঐ! সব কাহিনী বইলা দিলে লোকে দেখবে কী??? স্পয়লার অ্যালার্ট লাগাও।
তিনটাই মাস্টারপিস।
এক কাজ করো খেকু, হিচককের উত্তরসূরী কারা হতে পারেন, সেটা নিয়ে একটা বিশ্লেষণী পোস্ট দাও।
শুধু রির উইন্ডোতে অ্যালার্ট দিলাম হিহি, অন্যগুলা তো অত কই নাই, মনে হয় সমস্যা হইব না, আগে দেখুকই না।
ভাইরে জটিল আইডিয়া দিসেন, তবে বেশ রিসার্চের কাজ। হিচককের এখনো বেশ কিছু মুভি দেখা বাকী, ভালমত শেষ কইরা লই।
------------------------------
'..দ্রিমু য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
কাহিনীর ইংগিত দিলে সুবিধাও হয়। দেখতে আরাম লাগে
শেয়ালমামা আবারো ঝড় তুলছে, আজকে টরেন্ট করতে হইব বাসায় গিয়া। উত্তেজনায় আমার পেটের ভিতর গুর গুর করতাছে
আমার "দ্য ম্যান হু নিউ টু মাচ' ও ভালো লেগেছিলো, ভালো লেগেছিলো 'স্ট্রেনজারস অন এ ট্রেন'
লাল গানে নীল সুর, হাসি হাসি গন্ধ
লাল গানে নীল সুর, হাসি হাসি গন্ধ
ফাটফাটি দুইটা মুভি!
------------------------------
'..দ্রিমু য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
ইনফরমেশন জানা থাকলে দেখার সময় কাজে লাগে।
_________________________________________________________
খাতার দিকে তাকিয়ে দেখি,এক পৃথিবী লিখবো বলে-একটা পাতাও শেষ করিনি।
_________________________________________________________
খাতার দিকে তাকিয়ে দেখি,এক পৃথিবী লিখবো বলে-একটা পাতাও শেষ করিনি। ( জয় গোস্মামী)
শুধু ভার্টিগো দেখেছি। ছবিগুলো দুষ্প্রাপ্য কিছুটা মনে হয়।
খালেদ হাসান
khaledbd2003@ ইয়াহু.কম
দুস্প্রাপ্য নয়। ঢাকার প্রায় সব ভাল দোকানেই পাওয়া যায়। বিশেষত রাইফেল স্কোয়ার আর বসুন্ধরার দোকান গুলোতে।
আহা, কী পাগলের মত হিচককের মুভিগুলো গিলেছি একটা সময়!
হিচকক কিন্তু দুর্দান্ত লিখতেনও। তাঁর লেখা রোমাঞ্চগল্প পড়েছিলাম এক সময়। খুব গুরু-গম্ভীর বর্ণনার মাঝে হঠাৎ করেই "লেখক" এসে পড়তেন, বৈঠকি ঢং-এ কিছুক্ষণ পাঠকের সাথে আলাপ করতেন। অসামান্য।
খুব শখ কোনদিন হিচককের মত কিছু মুভি বানানোর, যেখানে বাজেটের চেয়ে মেকিং হবে গুরুত্বপূর্ণ।
আপনি হিচককের একটা কোনো ফিল্ম নিয়ে আরো বিশদে লিখুন, গল্প না বলেও অনেক কথা বলা যায়, সেই সব অনুভূতি। আমি হিচককের ঠিক ফ্যান নই, হয়তো আপনার লেখা পড়েই কনভার্টেড হবো।
ভদ্রলোকের এত সুনাম শুনে বছর তিনেক আগে দেখেছিলাম সাইকো। আমার কাছে কেন যেন সেরকম অসাধারণ লাগে নাই। আমি মনে হয় ভালো জিনিস ভালো পাই না
---------------------------------------------------------------------------
No one can save me
The damage is done
---------------------------------------------------------------------------
একা একা লাগে
আমার অনুভূতি খুব আলাদা নয় আপনার থেকে, তবে আমার মনে হয় সময়ের কনটেক্সটটা মাথায় রাখলে ব্যাপারটা ঠিক হবে। আজকে দেখতে বসে সেই রকম রোমাঞ্চ না হলেও যখন ছবিটি তৈরি হয়েছিলো তখনকার হিসেবে অনেক আধুনিক ছিলো হয়তো।
গুড।
---------------------------------------------------------
ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে
---------------------------------------------------------
ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে
________________________________________
http://ahmedurrashid.
এই তিনটার মধ্যে Rope টা ভাল লেগেছিল খুব। আর Psycho. প্রথম ফিল্মটায় একটা অসামান্য জিনিস দেখেছিলাম। একটা শটে প্রায় অর্ধেক ফিল্ম শেষ।
আশ্চর্যের ব্যাপার, হিচককের মত নির্মাতা অস্কার পাননি!
সাইকো, রির উইন্ডো, স্পেলবাউন্ড, লাইফবোট, রেবেকার জন্য পাঁচবার বেস্ট ডিরেক্টর নমিনি হয়েছিলেন। রেবেকা কিন্তু দুটো অস্কার জিতেছিল, বেস্ট সিনেমাটোগ্রাফী আর বেস্ট পিকচারের।
------------------------------
'..দ্রিমু য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
বিখ্যাত ক্যামেরা শিল্পী গোলাম মোস্তাফা একবার একটা ক্লাসে আমাদের হিচকক সম্পর্কে বলতে গিয়ে এই তথ্য দিয়েছিলেন। সম্ভবত তিনি বেস্ট ডিরেকশনের কথা বলেছিলেন। আমি গুলিয়ে ফেলেছি।
হিচককের (কী নামরে বাবা!) মোটামুটি সব ছবিই ভাজাভাজা করে ফেলেছি। এই তিনটা সুদূর অতীতেই দেখে ফেলেছি।
কয়টা দেখা বাকী আছে,
হিচককের মুভি ভাজা ভাজা করারই বস্তু
------------------------------
'..দ্রিমু য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
কয়টা বাকি আছে তা জানি না। মনে হয় কিছু বাকি নাই। আপ্নে একটা করে নাম বলেন আর আমি কাহিনি বলি। বাকি লোকজন এসে আমাদের গালাগালি করুক। এতে করে বোঝা যাবে আমার কয়টা দেখা বাকি আছে।
আরে আমি আমার কথা কইসি! আপ্নেরে জিগাই নাই তো হিহি
------------------------------
'..দ্রিমু য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
মামার দাওয়াতে ROPE দেখে ফেল্লাম, বড়ই মজাক পাইলাম, আমি নিজে মনে হয় সাইকোপ্যাথ, মনে হইল, ইস্ ইস্, ব্র্যান্ডেন ব্যাটা যেন পার পেয়ে যায়
এই তিনটার বাইরে আরো আছে যেমন, নর্থ বাই নর্থ-ওয়েস্ট, স্পেল বাউন্ড, বার্ডস, থার্টি নাইন স্টেপস.... আমি আসলে হিচককের সবই দেখেছি....
অজ্ঞাতবাস
অজ্ঞাতবাস
আমি আসলে তিনটা তিনটা কইরা একটা সিরিজের মত করতে চাইসিলাম আর কি...
নর্থ বাই নর্থ-ওয়েস্ট অনেক পিচ্চিকালে দেখসিলাম আবার দেখতে হইব
------------------------------
'..দ্রিমু য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
কৌশিক, ছোট্ট একটা ট্রিভিয়া। মেটালিকার 'আই ডিসেপিয়ার' গানটাতে কার্ক হ্যামেটকে প্লেন চেস করার দৃশ্যটা কিন্তু হিচককের 'নর্থ বাই নর্থ ওয়েস্টের' একটা ক্লাসিক দৃশ্য থেকে অনুপ্রানিত হয়েই করা।
দোস্ত টরেন্টহীন কোন লিঙ্ক জানা থাকলে ফেসবুকে আমাকে ম্যাসেজ দিস। আন্ড থাংক্স ফর দিস পোস্ট অফ কোর্স!
___________________________________
স্বপ্ন নয়, - শান্তি নয়, - কোন এক বোধ কাজ করে মাথার ভিতরে!
___________________________________
অন্তর্জালিক ঠিকানা
রোপ।
হিচককের সিনেমা আমারও ভাল লাগে। 'রোপ' দেখসি নাকি ঠিক মনে পড়তেসে না, তবে বাকি দুইটা দেখসি। দারুণ লাগসিল। 'রিয়ার উইন্ডো' দেখেই জেমস স্টুয়ার্টের ভক্ত হইসিলাম।
আরো লেখেন।
নতুন মন্তব্য করুন