সিস্টেম

খেকশিয়াল এর ছবি
লিখেছেন খেকশিয়াল (তারিখ: রবি, ১৯/০৭/২০০৯ - ৫:০৬পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

অনিক ভাবছিল অনেকক্ষণ ধরে। এই লোকটাকে সে এইভাবেই দেখেছে এই শপিং মলেই ঠিক একই অবস্থায়। এতোটা মিল কখনো ওর হয়নি। ও কি গিয়ে কথা বলবে লোকটার সাথে? প্রথমবার দেখে তেমন কিছুই মনে হয়নি তার। কিভাবে তাহলে ব্যাপারটা মনে থেকে গেল? লোকটার অদ্ভুত শার্টটা দেখে হয়ত।

"আচ্ছা কিছু মনে না করলে আপনাকে একটা প্রশ্ন করতে পারি ?"
ঘুরে দাঁড়াল লোকটা। হাবেভাবে হিপ্পি একজন, গায়ে প্রায় ময়লা হয়ে যাওয়া একটা হাওয়াই শার্ট।
"শিওর আমিগো!" ঠোটে হাসি ঝুলিয়ে বলল লোকটা।
"আচ্ছা আপনাকে কি আমি কোনভাবে চিনি? বা আপনি কি আমাকে চিনতে পারেন কোথাও থেকে? আমি আসলে ঠিক বুঝতে পারছি না .."
"হাহা আমার চেহারাটাই এরকম, খুবই কমন একটা ফেইস আমি, আমার ছাঁচে মনে হয় তোমাদের ঈশ্বর একশোটা বানিয়ে ফেলেছেন ভুল করে।"
অনিক হেসে বলল, "ঈশ্বর মানেন টানেন না মনে হয়.."
"হাহ! ঈশ্বর, আগে সিস্টেম থেকে তো বেরোও, দেখি কিভাবে সাহায্য করে তোমাদের ঈশ্বর!"
লোকটা পাগল নাকি! কি সিস্টেম? ভাবল অনিক। যেন অনেকটা অনিকের মনের কথা জেনেই লোকটা বলতে শুরু করল, "দেখো সবকিছু খুলে বললে তোমারও মেনে নিতে অসুবিধা হতে পারে, একবার যে সমস্যায় পড়লাম, বাবারে!"
অনিকের কেন জানি পাগলের সাথে পাগলামি করতে ইচ্ছা করল, বলল, " আমাকে ক্ষমা করবেন, কিন্তু সিস্টেম কি না বললে আমি আজকে আপনাকে ছাড়ছি না!"
"হাহাহা পাগল নাকি? আচ্ছা যাও! তোমাকে বলব আর উদাহরণ ও দেব, তুমিই দেখবে, মানা না মানা তোমার উপরে তবে একটা কথা.. অবশ্য ওটা জানার দরকার নেই তোমার , তুমি বুঝতেই পারবে না কি হয়েছিল তোমার। এর জন্য একটা জিনিস করতে হবে। ইশারা বোঝ?"
এরপর হিপ্পি ইশারায় অনিককে তার পকেট দেখাল কিছু না বলে। অনিক পকেটে হাত দিয়ে দেখে তার পকেটে কি করে যেন একটা ভাজ করা কাগজ এসে পড়েছে, ভাজ করা দুই পিঠেই বড় করে লেখা 'পকেট থেকে বের করো না, এখানেই খুলে পড়।'
অনিক পকেটেই এক হাতে খুললো তাতে অতি ছোট কিন্তু স্পষ্ট করে লেখা,

"আমার ডেটা যদি নির্ভুল হয় তবে আপনার নাম অনিক। আপনি একজন বাংলাদেশী-আমেরিকান। ইংরেজী পড়ান স্কুলে। রোম এসেছেন বউয়ের সাথে ঘুরতে, আপনার বউয়ের প্রিয় মুভি রোমান হলিডে। আপনি নিজে একজন কবি। যাক, আপনাকে কিছুটা হলেও ভড়কে দিতে পেরেছি মনে হয়।

কোন ভূমিকা না দিয়েই শুরু করছি। অনিক, আপনি আপনার জন্মের পরপর থেকে যাকিছু দেখে এসেছেন সব..."

অনেকক্ষণ ধরে বসেছিল অনিক, হাতে কয়েনটা। চিঠিতে লেখা ছিল ওর নাকি এই কয়েনটা এখানেই পাবার কথা ছিল। এটাই নাকি সিস্টেমের দেজা ভু, বাগ। কিন্তু এটাকে দেজা ভু বললে ভুল হবে, মাত্রাটা কমের মধ্যে থাকলে এটা ভুল ঠিক মিলে একটা বাস্তবসম্মত জগত হতে পারত। কিন্তু অনিকের হাত থেকে কয়েন সেই লোকের জানামতে নাকি পড়েছিল ১৬ বার।

অনিক উপরের পকেটটা ভালমত চেক করে কয়েনটা রাখল। পকেটে কোন ফুটো নেই, পরার চান্স নেই, হাতে থাকলেই বরং পরে যেতে পারে। লোকটা লিখেছিল "কয়েনটা পড়ার পর অনিকের আর..."
অনিক বুঝতেও পারলো না, হঠাৎ একটা ধাকায় টাল সামলাতে পারল না ও, পকেট থেকে কিভাবে ছিটকে বেরিয়ে পড়ে গেল কয়েনটা, সাথে সাথে অনিক পিছলে গিয়ে পড়লো রেলিঙ্গের উপর। লম্বা পায়ে টাল রাখতে পারল না, পিছন থেকে চেয়ার সরিয়ে নিলে যেমন হয় পড়ে গেল ওভাবেই।

অনিক পড়ছিল, তার মনে পড়ছিল শেষ লাইনগুলো...
"প্রতিবারই আমারও অনিকের সাথেই এভাবেই দেখা হত কিন্তু তারও আর কিছুই মনে থাকত না। যেদিন সিস্টেম থেকে বেরিয়ে আসি সেদিন জানতে পারি আমার যত ডেটা। ১৬ বার আমাকে আর অনিককে এই জায়গায় দেখা গেছে, প্রতিবারই কিছু না কিছু পরিবর্তন হয়েছে। একইভাবে আজ এইখানেও। ভুলটা বেশ বড়। কিন্তু অনিক আর আমার মাথা থেকে এই তথ্যগুলো বের করে রিসেট দেবার পরও একই ভুল হচ্ছিল। ওদের ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রামের বাগ। কিন্তু ওদের এই বাগ রিকোভারী করার চেয়ে দ্রুত কাজ করে আমাদের অদ্ভুত মানব মস্তিষ্ক। আমাদের মাথায় কিভাবে জানি পাজলের মত এইসব ডেটা আর ডেটাহীনতা মিলে নিউরনে একটা অনুরণন তৈরী করতে পেরেছিল যা আজ এই ষোলতম মিটিংয়ে, আমাদের মধ্যে কিছুটা হলেও কথা বলার মত একটা পজেটিভ সিচুয়েশন তৈরী করেছিল।
যাহোক অনিক তোমাকে সত্য কথা বলছি, এবার তোমাকে মেরে ফেলবে ওরা, অনেক দেরী হয়ে গেছে। ওরা এত বড় ভুলের আলামত রাখবে না। ..."

কিন্তু কেন জানি অনিক তো বিশ্বাস করে না.. এই কথাগুলো!
অনিকের মনে হল 'হতে পারে না.. ভুল হচ্ছে কোথাও.. অনেক বড় ভুল, এটা একটা স্বপ্ন, আমাকে জাগতে হবে, সর্বশক্তি দিয়ে!"

বিশাল ওয়াচার-বট গুলি কঁকিয়ে উঠলো। G2333390 প্রোটোটাইপের জার ভেঙ্গে গেছে।

অনিক চোখ মেলতে পারছিল না.. আঠালো তরলটা সরে গেলে সে চিৎকার করে উঠল। এক ঝাটকায় উঠে খুলে ফেলতে লাগল ঘাড় থেকে পিঠে পর্যন্ত বসানো টিউবগুলি। তাকে ঘিরে তখন নাচছিল দুটা ওয়াচ-বট। অনিক ঘুরেই দৌড়াতে শুরু করল। যেন কতদিন বিছানায় পরে আছে ও, হাটু মুড়ে ভেঙ্গে পড়ল ও। দর্শনধারী সব ওয়াচ-বট গুলো ঘিরে রেখেছে তাকে, অপেক্ষা করছে যেন কিসের জন্য। হাসল ও মুখ থুবড়ে, বেশ চালাকীর একটা হাসি...বিড়বিড় করে বলল,
"..গ ইনটু ইট ইয়োরসেলফ, অ্যান্ড সি হাউ ইউ উড ডু.."
অনিকের সরছিল ডাম্পের দিকে, ...যার নীচে তখন অপেক্ষা করছিল "ব্লেক" নামধারী একটা হোভারক্রাফট।

(ম্যাট্রিক্সের কাহিনীর উপরেই তার পারিপার্শ্বিক কিছু কাহিনী নিয়ে তৈরী হয়েছিল এনিম্যাট্রিক্স, ওরকমই একটা লেখা চেষ্টা করলাম।)


মন্তব্য

শাহেনশাহ সিমন [অতিথি] এর ছবি

ম্যাট্রিক্সের মতই! কিস্যু বুঝিনাই!

অতিথি লেখক এর ছবি

ভিন্ন ধর্মী লেখ। উপস্থাপনটা অনেক ভাল লাগল

সবজান্তা এর ছবি

কমরেড, আপনাকে কি আমার অভ্যাসে ধরলো ? তাড়াহুড়া করে লেখা ?

আজ সকালেই আপনার লেখাটা দেখেছিলাম, কিন্তু পড়া হয় নাই। এখন পড়তে বসলাম। অনেকগুলি জায়গায় হোঁচট খেলাম।

প্রথমত, বিশ্বাসযোগ্যতা। বুড়োটার সাথে অনিকের কথোপকথনের ঘনিষ্ঠতা খুব এবরাপ্টলি এগিয়েছে, কিছুটা ধাক্কা লাগে।

তবে দ্বিতীয়ত এবং প্রধানত, আমার সন্দেহ যেটা গল্পের প্লট আসার পর এক ধরনের উত্তেজনায় আপনি যত দ্রুত সম্ভব আইডিয়া প্রসব (!!) করে দিয়েছেন, আর এর ফলে যে'টা হয়েছে পাঠককে একটা দীর্ঘ সময় অন্ধকারে হাতড়ে বেড়াতে হয়েছে। আমি নিজে ম্যাট্রিক্স সিনেমাটা বার দুয়েক দেখেছি ( এবং এর তার সাহায্য নিয়ে বুঝেওছি কিছুটা , আসলে এর অর্থ কী), আর সায়েন্স ফিকশন গল্প পড়ারও কিছুটা অভিজ্ঞতা আছে, তবুও আমি গল্পটা আসলে বুঝতে পারি নি।

আমার ধারণা আপনার মধ্যে এক ধরনের দ্বন্দ্ব কাজ করেছে - গল্পটাকে এক ধরনের এবস্ট্র্যাক্ট চেহারা দেওয়া এবং একই সাথে প্লটটাকে পাঠকের কাছে পৌছে দেওয়া। কিন্তু সেই দ্বন্দ্বে এবস্ট্রাক্ট করার অংশের পাল্লা দৃশ্যতই ভারি হয়ে গিয়েছে, ফলে গল্পটা অনেকেরই হয়তো মাথার উপর দিয়ে গিয়েছে/ যাবে।

এখন কথা হচ্ছে, যেখানে আমার পেটে বারোমাস গুলি করলেও এমন গল্প প্রসবের বিন্দুমাত্র সম্ভাবনা নেই, সেখানে কেন আমি এতো পন্ডিতি ফলাচ্ছি ?

এর কারণ হচ্ছে, গল্পটা ঝাপসা পড়ে যতোটুকু বুঝতে পারছি গল্পটার মধ্যে চমৎকার একটি সায়েন্স ফিকশন হয়ে উঠার দারুণ সম্ভাবনা আছে। এর জন্য কী দরকার হতে পারে তা একান্তই আপনার সিদ্ধান্ত। তবে আমার মতো পাঠকের দু' পয়সা এমন -

  • গল্পটার ফরম্যাটিং কিছুটা ভেঙ্গে দেখতে পারেন, বিশেষত যখন কথোপকথন কিংবা কারো মুখের কথাকে উদ্ধৃত করবেন, একটু স্পেস দিয়ে আলাদা প্যারায় লিখতে পারেন।

  • পুরো প্লটটাকে আরো বিস্তৃত করতে পারেন, আরো একটু স্পেস নিতে পারেন। আমি স্বীকার করি যে কম্প্যাক্টনেস যে কোন ছোট গল্পেরই সৌন্দর্য, কিন্তু প্লটের বিস্তারের জন্য যতোটুকু স্পেস দরকার, ততোটুকু কিন্তু দিতেই হবে।

  • কিছু টীকা দিতে পারেন, যেমন হোভারক্রাফট, ওয়াচার বট ইত্যাদি।

নিজে এরকম এক লাইন লিখতে না পারলেও, পাঠক হিসেবে এই মাস্তানির জন্য অত্যন্ত লজ্জিত দেঁতো হাসি

আমার মনে হয় রিরাইট করে আজকে রাতেই গল্পটা নতুন ভাবে আবার দেন- আমার দৃঢ় বিশ্বাস, গল্পটা দুর্ধষ হবে !


অলমিতি বিস্তারেণ

রানা মেহের এর ছবি

সবজান্তাকে উত্তম জাঝা!
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

আহমেদুর রশীদ এর ছবি

খেকু, এক্সপেরিমেন্টগুলারে একটা লাইনে আনা দরকার। হবে।

---------------------------------------------------------

ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে

---------------------------------------------------------

ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে
________________________________________
http://ahmedurrashid.

খেকশিয়াল এর ছবি

হ সবজান্তার সব কথা ঠিক, গল্পটা মাখায়া গেসে
যা করতে চাইসিলাম মনে হয় আমিই একলা বুঝসি খেকেক খাইছে
টুটুল ভাই, হ লাইনে আনুম
------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

পড়তে বেশ ভালো লাগলো। কিন্তু... চিন্তিত

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

এনকিদু এর ছবি

লেখাটা পছন্দ হয়েছে । শুধু একটা জায়গায় খোঁচা দিতে ইচ্ছে করছে ।

"..গ ইনটু ইট ইয়োরসেলফ, অ্যান্ড সি হাউ ইউ উড ডু.."

এখানে কি ইংরেজি না দিলে কেমন হত তাই ভাবছি । আমি নিশ্চিত না সেটা ভাল হবে নাকি খারাপ, শুধু একটা সম্ভাবনার কথা বললাম আর কি । চিন্তা করে দেখতে পারেন ।


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...

সাইফুল আকবর খান এর ছবি

এইমাত্র একটা উত্তরাধুনিক প'ড়ে এসে আবার পড়বি পড় একটা উত্তরবৈজ্ঞানিক-এর ঘাড়ে! কেম্নে যে কী?! ইয়ে, মানে...
___________
স্বাক্ষর?!
মাঝেসাঝে বুঝতে পাই- আমি
নিরক্ষর!

___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি

ঋদ্ধ [অতিথি] এর ছবি

চেষ্টা করতে থাকুন, আরও ভালো লিখতে পারবেন। চলুক

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।