কাঁচা রাস্তাটা বেশ এবড়োথেবড়ো। এই পথে মানুষ পায়ে হেঁটে যায় এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে, কিংবা বাজারে। রিকশা এইদিকে একটু কমই আসে। রিকশায় বসে ঝাঁকুনি খেতে খেতে পলাশের মনে হচ্ছিলো যেন শরীরের সব কলকব্জা খুলে যাবে। আস্তে যেতেও বলতে পারছে না। এমনিতেই সন্ধ্যা হয়ে গেছে, দেরী হয়ে যাবে। অনেকদিন পর গ্রামে আসলো পলাশ। প্রায় ছয় বছর পর।
সন্ধ্যা হয়ে আসছে। পাখিগুলো সব হল্লা করে ফিরে যাচ্ছে যার যার বাড়িতে। ঘন্টা খানেক হয়ে গেল এখনও রাস্তায় ও। শৈশবের রাস্তাগুলোকে অপরিচিত লাগে ওর, অন্ধকারের আনুপাতিকে। দূরের ঐটা যদি মাস্টারবাড়ির ছাতিম হয় তাহলে আরো আধ ঘন্টা।
'ভাই রাস্তাঘাটে কাউরে দেখি না যে?' রিকশাওয়ালাকে জিজ্ঞাসা করে পলাশ। ক্যাঁচকুচ শব্দ করে চলছিল রিকশা। একগাদা মুখভর্তি কালো ছ্যাপ ফেলে রিকশাওয়ালা, গুল নেয় ব্যাটা। উত্তর আসে, 'কেমনে কইতাম.. কে জানে কেন নাই..' । আস্তে আস্তে এগিয়ে আসে মাস্টারবাড়ির ছাতিম। মাস্টারবাড়ির ছাতিম! পলাশের মনে পড়ে যায় সবকিছু! এ সেই ভয়ংকর গাছটা না? যেটাতে সবাই গলায় দড়ি দিতো? ওটাই তো, কি করে ভুলে পলাশ। সবাই বলতো গাছটায় ভূতের বাসা। পলাশের মনে আছে ছোটবেলায় তারা দিনের বেলাতেও এই গাছের ধারে কাছে ঘেষতো না। একবার এক বড় ভাই তার বন্ধুদের সাথে পাল্লা দিয়ে মাঝরাতে গাছের তলা থেকে ঘুরে আসতে গিয়ে ভয়েই ফিট খেয়েছে। কি জানি এক উলটা মাথা মামদো দেখেছে নাকি। সেইসময় বেশ ভয় পেতো ওরা ছোটরা। ছাতিম এগিয়ে আসে। পলাশ উত্তেজিত হয়। একটূ কেমন ভয়ও লাগে তার, শৈশব ভয়।
গাছটা পেরিয়ে যেতে যেতে রোম দাঁড়িয়ে যায় পলাশের। দেখে ও বিশাল গাছটাকে। এতদিন পরেও এই ভয়টা উপভোগ করে সে। গাছটা পেরিয়ে গেলে স্বস্তির মত লাগে, সেই ছোট বেলার মত।
'ভাই দেশে কি এখনো, দেও দানো ভূত আছে ? দেখা টেখা যায় কিছু?' রিকশাওয়ালার সাথে আলাপ জমানোর চেষ্টা করে পলাশ। হে হে করে হাসে রিকশাওয়ালা, অন্ধকারে তার লিকলিকে শরীর কেঁপে উঠে হাসিতে, বলে, 'এইতো একটু আগে পার হইলাম ফাসুইড়া গাছ.. কত লোক ফাস দিলো এই গাছে..'
আরে তাইতো.. এই গাছকে সবাই ফাঁসুইড়া গাছ বলেই ডাকতো।
'কিন্তু এই গাছই কেন? আর কোন গাছ নাই?' পলাশ শুধোয়
'কেমনে কইতাম? হেহে.. মনে হয় একজনের দেখাদেখি পরের জনও একই গাছ বাইছা নিছে.. অন্য গাছে ভরসা পায় নাই।'
'হাহা ভাল কইছো..' রিকশাওয়ালার রসিকতায় হাসে পলাশ। এইদিকের লোকগুলা বেশ মজার, মনে পর ওর। একটু থেমে আবার জিজ্ঞাসা করে ও,
'রাত বিরাইতে তোমার ডর লাগে না?'
'ধুর, আমাগো আবার কিসের ডর.. কেন, আপনের ডর লাগে?'
'হা হা .. না'
রিকশা এগিয়ে চলে অন্ধকারে।
পলাশ ঝাপসামত দেখে, বেশ দূরে তাদের গ্রামের বাড়ির আমগাছটা, উঁচু দীঘির পাড়। দূর থেকেও চেনা যায়। আর একটু .. এসে গেছে ও। পথের দুইপাশে এখন খালি মাঠ। ফসল কাঁটা শেষ, সরিষার ক্ষেত দেখা যায় দুই একটা। বাতাস বইছে বেশ। হঠাৎ রিকশওয়ালা বলে উঠে,
'আপনে ভূত পেত্নীর কথা জিগাইতাছিলেন..
আপনে বিশ্বাস করেন ভূতে?'
ভূতের কথা শেষ হয়েছে অনেকক্ষণ হবে। আবার কথা উঠতে একটু চমকে উঠে পলাশ, থেমে বলে,
'নারে ভাই.. দেখি নাই এইসব আজিরা জিনিস, দেখলেও বিশ্বাস করুম নাকি জানি না..
হয়তো এই জিনিস থাকতে পারে দেইখাই হাইসা দিমু'
'হাইসা দিবেন? হেহে.. আপনের তো মেলা সাহস..'
পলাশ বুঝে একটু বাড়িয়েই বলে ফেলেছে, গ্রাম কাছে দেখে সাহস বেড়ে গেছে।
'ডরাইতেও পারি.. যদি তারা বিকট রূপ লইয়া দেখা দেয়..' হেসে বলে ও।
'ডরাইতেও পারেন? খিক খিক খিক..'
পলাশের কথায় খিল খিল করে হেসে উঠে রিকশাওয়ালা। পলাশও হাসে। রিকশাওয়ালা থামে না, হাসতেই থাকে। রিকশা থেমে যায়, রিকশাওয়ালা প্যাডেলে পা রেখেই হাসে গা দুলিয়ে। পলাশ ভ্রু কুঁচকে ফেলে। ব্যাপার কি? হালকা ছিট আছে নাকি? এই হাসি কোন সুস্থ মানুষের হাসি হতে পারে না। পলাশের ভয় করে। হেসেই বলে, 'আরে.. হইলো কি তোমার? তুমি দেখি পাগলের মত হাসতাছো, থামলা কেন? ওইতো আরেকটু..পা চালাও মিয়া।'
রিকশাওয়ালা পা চালায় না, হাসতে থাকে। মাথা নুইয়ে টেনে টেনে হেসে চলে ও.. অদ্ভুত অপার্থিব সুরে। পলাশের কপালে ঘাম জমে। এই হাসি তার চেনা নয়, খুবই.. খুবই অপরিচিত এই হাসি।
হাসির দমকে লিকলিকে পিঠ দুলায় রিকশাওয়ালা। পলাশ অদ্ভুত চোখে দেখে, তার পিঠ আগের থেকে অনেক কালো এখন, মিশমিশে কালো। হাসির দমকে দুলতে দুলতে লম্বা হতে থাকে সেই পিঠ। ঠোঁট ঝুলে পড়ে পলাশের। আর তখন, তার দিকে ঘুরে রিকশাওয়ালা। বলে,
'ভাই.. আপনেরা বিশ্বাস না করলেও, ভূতেরা ঠিকই আপ্নেগো বিশ্বাস করে.. হে হে ..'
তার মুখ থেকে কালো কালো রস গড়িয়ে পড়ে কপাল বেয়ে.. ঘাড়ে উলটো করে বসানো মাথা.. চোখ নেই, শুধুই কোটর। কোটরে গহীন অন্ধকার।
মন্তব্য
ভাই সিরিয়াসলি কই, এই রাত সাড়ে তিনটায় গল্পটা পইড়া ডরাইসি। যদিও অনেকটা আন্দাজ করতে পারছি কী হইবো, কিন্তু এতো ভালো বর্ণনা দিসেন যে, বহুদিন পর ভূতের গল্প পইড়া ডরাইসি।
পাঁচ তারা।
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
আমিও একটু ডরাইসি, লেইখা বাইরে সিগারেট খাইতে গিয়া হে হে
------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
আপনার মাথা ভর্তি তো দেখা যাচ্ছে ভৌতিক কল্পনা! আমারও তাই কিন্তু গল্পে রূপ দেবার চেষ্টা করিনি, প্রচন্ড ভীতু!
এই গল্পটি পড়ে খালি বাসায় আমার গা ছম ছম করছে তাই আমিও দিলাম পাঁচ তারা মনে মনে।
ভয় পাইলে নিচে আলবাব ভাইয়ের রিপ্লাইয়ে দুআ দ্রষ্টব্য
------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
আবার ভূত!
----------------------------------------
বাসে অনেক ঘুম জমে
ভিতরে ভুলে যাই শস্যের চমক
----------------------------------------
হা-তে এ-ক প্র-স্থ জো-ছ-না পা-ড়ে-র ঘ্রা-ণ
==============================
হা-তে এ-ক প্র-স্থ জো-ছ-না পা-ড়ে-র ঘ্রা-ণ
খোমাখাতা
হ
------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
- নাশু ভাইয়ের গল্পের পেত্নীর লগে পণ্ডিতেরই বিবাহ হৈবো, যা বুজতাছি।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
গুরু আপনে থাকতে পন্ডিত ভাগ পাইবো বইলা তো মনে হয় না
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
বলেন সুভানাল্লাহ..
------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
!!!!!!!!
------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
আমগো পন্ডিত মশাইরে ভূতে তো ভালোই আছর করছে দেহা যায়.........
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
দুই একটা সুন্দর সুন্দর পেত্নী নামান মিয়া, বিয়া দেই ঘাড়ের গুলিরে (পছন্দ হইলে নিজেই..)
------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
আমিও ঘোর দুপুরে অফিসের মধ্যে বইসাও ডরাইছি, একটুও ঘামছিও মনে হয়
------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
দারুণ লাগলো।
প্যারা ১-এ কাচা আর ঝাকুনিতে চন্দ্রবিন্দু লাগবে।
ধন্যবাদ, ঠিক কইরা দিসি
------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
রাইতেই বুচ্ছিলাম, খেকু পুঙগির ভাই ডরের গল্প লিখবো। তাই পড়ি নাই।
এই তোর মাথায় ভুতপ্রেত ছাড়া আর কিছু নাই? খালি ডর দেখাস! মাইরা হাড্ডি গুড়া কইরা দিমু কইলাম।
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
একটা পুরান দুআ'র আধুনিক ভার্সন শিখায়া দেই, ডরাইলেই পইড়া বুকে ছ্যাপ দিবেন
"ভুত শালার পুত, পেত্নী শালির ঝি
ভ্যান হেলসিং বুকে আছে করবি আমার কি?"
------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
বহুত দিন পর একটা ভুতের গল্প পইড়া সেই রকম মজা পাইলাম ভাই। থ্যাংকস...
=======================
ছায়ার সাথে কুস্তি করে গাত্রে হলো ব্যাথা!
=======================
কোথাও হরিণ আজ হতেছে শিকার;
ওয়েল্কাম
------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
আসলেই দারুন হয়েছে আপনার ভুতের গল্প। সাবাস!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
ধন্যবাদ তীরুদা
------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
রাইতেই পড়ছিলাম! ডরে কমেন্টাইতে পারিনাই!
----------------------------------------------
আয়েশ করে আলসেমীতে ২৩ বছর পার, ভাল্লাগেনা আর!
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
উপরে আলবাব ভাইয়ের রিপ্লাইয়ে লেখা দুআ পইড়েন, কাজ দেয়..
------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
নাহ, ভূতে আপনের মাথাটা খায়া ফেলাইসে- এই বিষয়ে আপনি সচলে একেবারে একমোবদ্বিতীয়ম (বানান ঠিকাসে তো ??? )
---------------------------------------------------------------------------
- আমি ভালোবাসি মেঘ। যে মেঘেরা উড়ে যায় এই ওখানে- ওই সেখানে।সত্যি, কী বিস্ময়কর ওই মেঘদল !!!
হাহা খাইতাছে স্টিল, একমেবাদ্বিতীয়ম হইবো, কিন্তু আমি এই বস্তু না
------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
ডরাইসি!
____________________
যদিওবা মানুষ আমি কেন পাখির মত বাঁচি...
আপনের ভুতের গপ্পো ভালু পাই, পন্ডিতজী।
...........................
কেউ আমাকে সরল পেয়ে বানিয়ে গেছে জটিল মানুষ
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
ভয় পাইছি!
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
নতুন মন্তব্য করুন