"ও বুড়া, তুমি যাবা কোনমুড়া?" ওস্তাদে মজা করে।
বুইড়া কোন কথা কয় না। মাথায় চাদর টাইনা, দুই হাতে হাঁটু প্যাচাইয়া টেরেনের তালে দুলে। তখন থিকা ওস্তাদে হালার লগে কথা কওয়ার চেষ্টা করতাছে। কিন্তু বুইড়া তাকায়ো না একবার। হালার সমস্যা কী?
"ও বুড়া, তোমার বগলের পুটলিতে কি গো", আমি কই এইবার। বুইড়ায় এইবার আমার দিকে ঠান্ডা চোখে চায়।
দুই বগির মাঝের জায়গায় বইছিলাম আমরা তিনজন, আমি ওস্তাদ আর এই বুইড়া। বগির লাইট বন্ধ হইয়া গেছে কিছুক্ষণ আগে। কিন্তু বাইরে ভাল চান্দের আলো আছে। গৌরীপুর থিকা ট্রেন আস্তে আস্তে চলা শুরু করছে।
সময় হইছে। ওস্তাদে আমার হাতে টিপ দিয়া বগির ভিতর যায়। আজকে আমি শুধু পাহারা দিমু।
গোটা তিনেক টর্চ জ্বইলা উঠে বগির ভিতর। আমি জানি ওই গেইটে আকমলে খাড়ায়া আছে। ওইডা ওর পোস্ট। ওস্তাদে আস্তে আস্তে মরা গলায় কয়, "ভাইসব, আপনাদের দিরিষ্টি আকর্ষণ করসি। এই বগি এখন লুট হবে। আপনারা চিল্লাফাল্লা করবেন না। এই দেহেন আমার হাতে একখানা পিস্তল। আমার সঙ্গী-সাথীদের কাছেও আছে। যে চিক্কুর পাড়বে তাকেই গুল্লি মারা হইবে।" ওস্তাদে মজা করতে পারে।
চাইরদিকে একটা হাউকাউ শুরু হয়, কইত্থিকা জানি মাইয়ারা কাইন্দা উঠে।
"চোপ মাতারী! একদম শেষ কইরালামু!" ...
বিশুর গলা। বগিতে মানুষ অত বেশি নাই, তারপরও আমার একটু অস্বস্তি লাগে। আমি বুইড়ার দিকে চাই। শালার কোন চ্যাদভ্যাদ নাই। অমনেই পইড়া মাথা নিচমুখী দিয়া ঢুলে। বিশুরা ততক্ষণে কালেকশন শুরু কইরা দিছে। পরথমে ওই মাইয়ারে দিয়াই শুরু করে, অন্ধকারে ভালমত দেহি না, আবছায় যা বুঝি গয়নাগাটি নেবার লেইগা ইচ্ছামতন মাইয়ার গা হাতায় বিশু। আস্ত একটা খানকির পোলা এইটা। ওইদিকে সাজু দেখি এক আনকেলরে ঠাটাইয়া থাবড়াইতাসে। ওস্তাদে এক শার্ট প্যান্ট পরা লোকের কাছ থিকা কি জানি ব্যাগের মত টান দিয়া নিলো, লোকটা ব্যাগটা ধইরা রাখছিলো, ল্যাপটপের ব্যাগ মনয়। ওস্তাদ ব্যাটার পিঠে ক্যাচা কোপ দেয়, পরপর তিনটা , হাতের ছোট চাক্কুটা দিয়া। ব্যাগটা আপন্তে আইসা পরে ওস্তাদের হাতে। কালেকশনের সময় ওস্তাদের কথা কম, হাত বেশি চলে।
সাজুর ব্যাগটা ফুইলা গেছে। বিশু একটা বস্তা নিয়া মাঝে দিয়া যায় আর সবারতে টাকা পয়সা নিয়া জমা করতে থাকে। বগিতে এখন পুরা চুপ। মাঝে মাঝে মাইয়াগো ফোঁপানি শুনা যায়, ভাগ্য ভাল এই বগিতে কোন আন্ডা বাচ্চা নাই, থাকলে চান্দির বাটি খাইয়া ফেলতো। চান্দের আলোয় বগি এখন পুরা ফকফক করে। বাইরে তাকায়া দেখি বিশাল মাঠ। টেরেনটা টাইনা টাইনা চলে।
ওস্তাদে সবাইরে নাইমা পড়তে বইলা এইদিকে আসে। এতক্ষণে আমার বুইড়ার দিকে চোখ পরে। ওস্তাদের দাঁত বাইরইয়া যায়, কয়,
"হালার বুইড়া! এতো কিছু হইয়া গেলো আর তুমি ঝিমাউ? এ বুড়া এই! এইদিকে তাকা!"
এতক্ষণে বুইড়া তাকায়, মনে হয় খুব রাগ করছে, ঠান্ডা চাহনি। আমি সামনে তাকাই, সাজু, বিশু আকমলে নাইমা যাইতাছে। আকমলে গালাগালি কইরা সবাইরে সাবধান করতাছে যেন কেউ পিছু না আসে। আমাগোও নাইমা পড়া উচিত। ওস্তাদের রঙ তামাশা আর ফুরায় না! ...
"বুঝছস তো আমরা কেডা? আমরা কালেকশনে বাইর হইসি, বুঝলি? শুনস আমার কথা? নাকি সারাক্ষণ ঘুমের ভেক ধরসস? এই বুইড়া তোর পোটলায় কী দেখি!" বইলাই ওস্তাদ বুইড়ার পোটলা ধইরা হ্যাচকা টান দেয়, আর ধড়াম কইরা পিছলাইয়া আছাড় খাইয়া মাটিতে পরে। বুইড়া অমনেই পোটলা ধইরা বইসা থাকে, একটুও নড়ে না। পোটলা ছাইড়া, দরজা ধইরা থতমত খাইয়া তাড়াতাড়ি উঠে ওস্তাদ। আমি ভুদাই হইয়া দেখতে থাকি। ওস্তাদ পোটলা টান দিয়া আছাড় খাইলো?
"এই খানকির পোলা তোর নাম কী? কী করস তুই? তোর পোটলায় কী আছে?" পিস্তল ধরে ওস্তাদ বুইড়ার মাথায়। ওস্তাদ এখন আর ফাইজলামি করতাছে না। বুইড়ার ঠান্ডা চোখ কেমন হাসি হাসি হইয়া যায়, ক্যান জানি খুব ডর লাগে আমার।
"কী আছে তোর পোটলায়?!" ঝাড়ি মারে ওস্তাদ।
"মরণ, মরণ চান। আমার নাম মরণ চান।"
বুইড়া এতক্ষণে কথা কয়। আমি আর ওস্তাদ ফ্যালফ্যাল কইরা বুইড়ারে দেখতে থাকি। আস্তে আস্তে উইঠা দাঁড়ায় বুইড়া। চান্দের আলোয় বুইড়ার চোখ চকচক করে।
"আমিও কালেকশনে বাইর হইছি" কয় বুড়া।
"কী কালেকশন তোর.. তো-তোর পোটলায় কী আছে?" ওস্তাদ একটু তোতলায়।
বুইড়া হাসে দাঁত বাইর কইরা।
ঝাড়ি মারে ওস্তাদ, "কী তোর পোটলায়?"
বুইড়া গা কাঁপাইয়া হাসে।
"কী তোর পোটলায়???"
"মাথা! তোর মাথা! আমার পোটলায় তোর মাথা!!"
কইয়াই বুইড়া পোটলা খুইলা ফালায়, আর আমি দেখি - পোটলার থিকা একটা কি জানি ধুম ধাম কইরা মেঝেয় পড়ে।
মাথা! একটা কাটা মাথা! লোহার মেঝেতে একটা কাটা মাথা গড়াগড়ি খায়! আমার মুখে তা লাইগা যায়, আমি চিক্কুর দিতে যাই, পারি না। মাথাটা ওস্তাদের! কী জানি আমার গায়ে আইসা ঢইলা পড়ে, একটা বডি। ওস্তাদের বডি, মাথা নাই। গলার জায়গা দিয়া রক্ত ফিনকি দিয়া আইসা আমারে ভিজাইয়া দিতে থাকে। আমি ওস্তাদের লাশ গায়ে নিয়া পইড়া যাইতে যাইতে দেখি বুইড়া শুধু গা দুলাইয়া হাসে আর হাসে।
সেইরাতের কথা আমি এট্টুকুই মনে করতে পারি, আমার আর কিছু মনে নাই। আপনেরা আমারে আর কিছু জিগাইয়েন না।
মন্তব্য
অলমিতি বিস্তারেণ
ঐ ব্যাটা তোর খবর কিরে? এম্নে ডুব দিলি ক্যা? পড়াশুনার চাপ বেশি নাকি?
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
সংসার বৈরাগ্য। হিমালয়ে যাওয়ার ট্যুর অপারেটর খুঁজতেছি ইন্টারনেটে।
অলমিতি বিস্তারেণ
এডি কি কস! সংসারের দেখলি কি? ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে যাউ!
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
চিপা ভয় ধরিয়ে দেয় গল্প।
আপনে 'ওস্তাদ' আছেন।
শুভেচ্ছা
ধন্যবাদ ধন্যবাদ
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
খাইসে, পুরাই ডার্ক । সাংঘাতিক হইসে।
অনেক ধন্যবাদ
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
সাংঘাতিক মোড় দিয়েছেন শেষে এসে!
ধন্যবাদ আপনাকে
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
জটিল হইসে দোস্ত ! অনেকদিন পর তোর লেখা পাইলাম। কাজের চাপের মধ্যেও লেখা চালায়া যাবার জন্য সাবাশ। আরো চাই।
___________________________________
অন্তর্জালিক ঠিকানা
কালকে রাতে মাথায় ধা করে প্লটটা আসলো আর আলসেমি না করে ঘা করে লিখে ফেললাম, ধন্যবাদ বন্ধু
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
উরে খাইছে
..................................................................
#Banshibir.
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
অসাধারণ , অন্যরকম একটা গল্প পড়লাম ।
ধন্যবাদ আপনাকে
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
যাক! বহু বহু কাল পরে তোমার কাছ থেকে যেমন গল্প আশা করি অমন একটা গল্প পেলাম। তুমি যদি আলসেমিটা একটু ছাড়তে পারতে তাহলে এই ধারার আরো অনেক গল্প পাওয়া যেতো।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
হ পাণ্ডবদা আলসেমি ইজ মাই আর্চ এনিমি, মাইরালামু শালারে, দোয়া কইরেন
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
কি গল্পরে বাবা! ভুই পাইছি।
লেখক এরকম গল্প আরো লিখবেন আশা করি।
গোঁসাইবাবু
লিখবো, ধন্যবাদ
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
বার বার ফিরে যেতে হবে গ্যাবোর কাছে, গ্যাবো না থাকলেও।
গোঁসাইবাবু
মার মার কাট কাট গল্প ভাইজান
_____________________
Give Her Freedom!
ধন্যবাদ ভাইজান
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
সেরাম প্লট!
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
ধন্যবাদ হাসিব ভাই
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
এইটা মনে হয় বুইড়া হবে, তাই না?
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
হ, কইরা দিতাছি
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
অনেকদিন পর আপনার গল্প! এই বৈশাখেও শীতের থ্রিলিং পেলাম।
ওস্তাদের মাইর শেষ রাইতে
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
ধন্যবাদ নীড় সন্ধানী
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
দারুণ!!!!
বস 'ফেলতো' এর জায়গায় 'ফালাইতো' পড়তে পারলে আরেকটু আরাম লাগতো।
অনেক ধন্যবাদ স্যামদা
একটু আধটু গুরুচন্ডালী চন্ডালীগুরু চলে তো কথাবার্তায়
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
গ্যাবো বিষয়ক মন্তব্যটি আমি সুজনদা'র ব্লগে করেছিলাম। ওটা এখানে ঢুকে গেল কি করে "পাশ্তেই পারছি না, মাইরি।" এই লেখার সঙ্গে ওই মন্তব্যের কোন সম্পর্ক নেই।
গোঁসাইবাবু
ভৌতিক লেখায় ভূতের আছর পরসে
___________________________________
অন্তর্জালিক ঠিকানা
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
চরম!
কালেকশন!! কালেকশনে রাখার মত গল্প একখান!!!
____________________________
আমি লোকজনকে গল্পটা বলে বেড়াচ্ছি
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
জবরদস্ত লেখারে ভাই
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
আজ আপনার শিকার গল্পটা পড়লাম। এই গল্পটাও শিকারের মত ভয়ংকর। দারুণ লিখিয়ে!
-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু
আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে
এমন গল্প পড়িনি অনেক দিন। সহসা পড়ব বলে মনেও হচ্ছে না।
---মোখলেস হোসেন
নতুন মন্তব্য করুন