তুম্বাড় চলচ্চিত্রের মূল বিষয় মানুষের তৃতীয় রিপু। লোভ। অন্ধ সর্বগ্রাসী লোভ। আর এই লোভের শুরু এক পৌরাণিক কাহিনী দিয়ে।
বলা হয় পূর্ণতার দেবীর জঠর থেকেই তেত্রিশ কোটি দেবদেবীর জন্ম। কিন্তু দেবীর প্রথম সন্তান হাস্তর ছিল মহা লোভী। জন্মাবার পরপরই সে দেবীর সব ধনসম্পদ নিজের আয়ত্তে নিয়ে নেয়, আর সেখানেই শেষ নয়; ধনসম্পদ নেবার পর সে হাত বাড়ায় দেবীর শস্যের দিকে। কিন্তু বাদ সাধে অন্য দেবতারা। তারা হাস্তরকে তৎক্ষণাৎ আক্রমণ করে চূর্ণবিচূর্ণ করে ফেলে। মেরেই ফেলতো যদি না দেবী স্বয়ং এসে রক্ষা করতেন হাস্তরকে। চুক্তি হয় দেবতাদের সাথে যে হাস্তর কোনদিন কারো পূজা পাবে না। আর পুনরায় তাকে নিজ জঠরে নিয়ে নেন দেবী।
গল্প শুরু হয় বিংশ শতকের প্রথম দশক থেকে। মহারাষ্ট্র এর একটি গ্রাম তুম্বাড়, যেখানে প্রায় সময়ই বৃষ্টি হচ্ছে। সবাই বলে এ দেবতার অভিশাপ। সেই গ্রামের এক পরিবারে এক মা, তাঁর দুই ছেলে আর তাদের দিদিমা। দিদিমাকে শেকলে বেঁধে রাখা হয়, তার রাক্ষুসে ক্ষিধে। দুই ছেলেকে বৃদ্ধার ধারেকাছে ঘেষতে দেন না মা। এক মন্দিরের বৃদ্ধ পূজারীর কাজ করেন তিনি। তাঁর দুই ছেলে পুজারীরই ঔরসজাত। সবার ধারণা অনেক ধনসম্পদ লুকানো আছে মন্দিরে, কিন্তু সন্ধান মেলেনি কখনো। একদিন গ্রাম ছাড়ে ওরা। পিছে ফেলে যায় শেকলে বাঁধা দিদিমা আর ছোট ভাইয়ের চিতা। কিন্তু বিনায়কের মাথা থেকে লুকানো ধনসম্পদ এর ভূত যায় না। এগিয়ে যায় গল্পের কাহিনী।
তুম্বাড় চলচ্চিত্রটির শিল্প-নির্দেশনা চোখে পড়ার মত। গল্পটিতে বিনায়কের কৈশোর, যৌবন আর পৌঢ়কালের সময়গুলোকে তিনটি অধ্যায়ে ভাগ করে দেখানো হয়েছে। গল্পের কাহিনী এগিয়ে গেছে অদ্ভুত এক বাতাবরণে। সেসময়কার পারিপার্শ্বিক সমাজ, ব্যবহার্য জিনিসপত্র, পরিধানের সামগ্রী এত সুন্দর করে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে যে মুগ্ধ হয়ে যেতে হয়, নির্মাতা আর কলাকুশলীদের পরিশ্রম চোখে ধরা পড়ে। সাবলীল অভিনয়, নিখুঁত সম্পাদনা গল্পের খেই হারাতে দেয় না দর্শকশ্রোতাকে। গল্পের স্রোত ধরে রাখে রহস্যের সূত্রসন্ধানে।
"উত্তরাধিকার পেলেই সবকিছু দাবী করা যায় না পুত্র।", ছেলের প্রতি বিনায়কের এই উক্তি আপনাকে নিয়ে যাবে গল্পের শেষ অব্দি।
ছবিসূত্র: imdb.com, santabanta.com
মন্তব্য
সো যা খেকু ওয়ারনা হাস্তার আ জায়গা...
___________________________________
অন্তর্জালিক ঠিকানা
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
তুম্বাড়ের মেকিং নিয়ে কয়েকটা ভিডিও আছে ইউটিউবে। মুগ্ধ হয়ে দেখেছি। সিনেমাটির স্টোরিবোর্ড কখনও বই আকারে প্রকাশিত হলে কিনে ফেলব।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
আমিও। তুম্বাড় নিয়ে আরো কথা বলার ছিল, ভাল করব বলতে পারলাম না।
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
তুম্বাড়ে গল্পটার সবচে ধারালো দিকটা হচ্ছে, দেবতার সাথে মানুষকে লোভের পাল্লায় সমানে সমানে দেখানো। বিনায়ক যেমন মোহরের কাঙাল, হাস্তরও তেমনই কাঙাল নৈবেদ্যের। মানুষ আর তার দেবতার ধারণায় ব্যাপার দুটো পরস্পর পরিপূরক, ইউ স্ক্র্যাচ মাই ব্যাক আই স্ক্র্যাচ ইয়োরস ধরনের। কিন্তু যদি পরিপূরক না হয়ে সাংঘর্ষিক হয়? ওখানে গিয়েই ছায়াছবিটা অন্যরকম।
পিঠ চুলকাচুলকির ব্যাপারটা প্রধানত পুরোহিতদের দল আর ক্ষমতাবানদের দলের সাথে দেবতাদের হয়। সাধারণ মানুষের বড় অংশ পালের ভেড়ার মতো পুরোহিত/ক্ষমতাবানদের মতো আচরণ করে, বাকিরা সংঘর্ষে যায়। সাধারণদের মধ্যে যারা গড্ডল শ্রেণীর তাদের মনের ভেতরেও বিদ্রোহের বীজ আছে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
আসলেই। এইখানে একদম লোভের প্রতিযোগিতা যেন।
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
হরর মুভি ভেবে এড়িয়ে গেছিলাম। পোস্ট পড়ে মনে হচ্ছে দেখা যায়
দেখে ফেলুন, পস্তাবেন না।
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
পোষ্ট পড়ে ছবিটা দেখার আগ্রহ হচ্ছে।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
দেখে ফেলুন, দুর্দান্ত ছবি।
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
আগ্রহ জাগানিয়া কথন বৈকি!
কোন ভাষার চলচ্চিত্র? হিন্দী কি?
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
অনেক প্রাদেশিক ভাষাতেই আছে মনে হয়। আমি হিন্দীতেই দেখলাম, সাবটাইটেল সহ।
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
আমি 'হরর ফিল্ম' দেখিনা - প্রধানত একঘেঁয়ে লাগে বলে, এবং কিছু ক্ষেত্রে কুৎসিত বা বিবমিষাকর লাগে বলে। এই চলচ্চিত্রটাকে উইকি বলছে 'period horror film' আর আইএমডিবি বলছে ' Drama, Fantasy, Horror'। অতএব আমি এই চলচ্চিত্রটি থেকে দূরে থাকলাম। কিছু মানুষের রেকমেন্ডেশনে একদিন অনিচ্ছায় এটা দেখা শুরু করলাম। দেখে বুঝলাম এটা গতানুগতিক 'হরর ফিল্ম' নয়। আদতে এটিকে 'হরর' বলা যায় কিনা সন্দেহ। এটিকে বরং জাদুবাস্তবতা বলা যেতে পারে।
পঙ্কজ কুমারের সিনেমাটোগ্রাফি চলচ্চিত্রটিকে নয়নসুখকর, অজয়-অতুলের আবহ সঙ্গীত ও জেসপার কীডের মূল সঙ্গীত চলচ্চিত্রটিকে কর্ণসুখকর করেছে। একই কারণে সম্পাদক সুকান্ত কাযা ও শব্দ বিভাগের শিল্পী-কুশলীরাও কৃতিত্বের দাবিদার। ভিজ্যুয়াল ইফেক্ট, স্পেশাল ইফেক্ট, রূপসজ্জা ও দৃশ্যপট নির্মাণ শিল্পী-কুশলীরাও বড় কৃতিত্বের দাবিদার। আমার মনে হয়েছে চলচ্চিত্রটির নির্মাণ ব্যয়ের ২৫% ব্যয়িত হয়েছে বৃষ্টি নামাতে। সাল দেখিয়ে সময়কাল বোঝানোর কোন দরকার ছিল বলে মনে হয়নি। প্রপসের পরিবর্তন, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, চরিত্রদের বয়স বৃদ্ধি সময় পরিবর্তন বোঝানোর জন্য যথেষ্ট ছিল।
কাহিনীভিন্ন চলচ্চিত্রটির পুরো অ্যাম্বিয়েন্স কোন অজানা কারণে আমার কাছে মার্চ্চেন্ট আইভরির চলচ্চিত্র 'বিফোর দ্য রেইনস'-এর মতো লেগেছে।
সোহুম শাহ্, মোহাম্মদ সামাদ, দীপক দামলে'র অভিনয় স্বাভাবিক ও যথাযথ মনে হয়েছে। সার্জেন্ট ক্যুপারের চরিত্রে ক্যামেরন অ্যান্ডারসনের চরিত্রটিকে পথের ভিখারীর মতো লেগেছে। পরিচালক রাহী অনীল বার্ভে ও আদেশ প্রসাদের ভবিষ্যত কর্মের ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে।
কাহিনীর ব্যাপারে কিছু বললাম না। বলতে গেলে স্পয়লারসমৃদ্ধ একটা পোস্ট লিখতে হবে। তারচেয়ে যারা চলচ্চিত্রটি এখনো দেখেননি তারা দেখার একটা উদ্যোগ নিতে পারেন। আশা করি ঠকবেন না।
'তুম্বাড়' চলচ্চিত্রটিকে আলোচনায় আনার জন্য এবং দীর্ঘকাল পরে পোস্ট দেবার জন্য খেকুকে ধন্যবাদ।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
পাণ্ডবদা ভাল আছেন? অনেকদিন কথাবার্তা হয় না। ধন্যবাদ পাণ্ডবদা তথ্য-সংযোজনের জন্য। অনেক কিছুই লেখার ছিল। ভাল করে লিখতে পারলাম না আড়ষ্টতার জন্য।
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
আড়ষ্টতা কাটানোর একটা উপায় হচ্ছে আরও দুয়েকটা রিভিয়্যু নামিয়ে ফেলা। আরেকটা উপায় হচ্ছে তোমার ধাঁচের একটা গল্প লিখে ফেলা। কোনটা করবে সেটা তোমার ইচ্ছে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
হ আড়ষ্টতা কাটাতে তুম্বাড়ের ছোঁয়া লাগাতে হবে।
হ, আমিও হরর দেখিনা। আলো আর শব্দের কারসাজিতে চমকে দেয়ার প্রবণতাকে খুব বিরক্তিকর লাগে, সেজন্য। সিমেনাটার ট্রেইলার দেখে আগ্রহ হারিয়েছি।
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
দেখছি। ভাল্লাগছে।
নতুন মন্তব্য করুন