As soon as I conquer Egypt, I will establish relations with Tipu Sahib and together with him, I will attack the English in their possessions in India and drive them to Arab sea.-নেপোলিয়ান বোনাপার্ট, ১৭৯৮১
ব্রিটিশ বেনিয়ারা যখন ভারতবর্ষে একের পর এক রাজ্য গ্রাস করছে, তখন যেকজন ভারতীয় রাজা ব্রিটিশদের সমীহ আদায় করে নিতে পেরেছিলেন তাঁদের মাঝে টিপু সুলতান অন্যতম। ব্রিটিশ ও ব্রিটিশ ঘেঁষা ভারতীয় ঐতিহাসিকদের লেখনীতে ভিলেন হিসেবে আর্বিভূত হলেও বাস্তবের টিপু সুলতান ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে ভারতীয় প্রতিরোধের এক অমর নায়ক হয়ে থাকবেন।
১৭৫০ সালের ২০ নভেম্বর দক্ষিণ ভারতের মহীশুর রাজ্যে উচ্চ পদস্থ সেনা কর্মকর্তা হায়দার আলী ও তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী ফাতিমার ঘরে জন্মগ্রহণ করেন ফতেহ আলী খান টিপু। টিপু সুলতানের পুরো জীবনটাই যুদ্ধ; যুদ্ধের মাঝে জন্ম, বেড়ে উঠা, যুদ্ধেই মৃত্যু। বাবা হায়দার আলীরও সারা জীবন কেটেছে যুদ্ধে। ১৭৬১ সালে মহীশুরের দুর্বল শাসক কৃষ্ঞরাজাকে নামমাত্র সম্মানসূচক রাজা হিসেবে রেখে প্রতিষ্ঠা করেন মহীশুর সালতানাত। হায়দার মহীশুরের উপর দাবি পাকাপোক্ত করার জন্য মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের কাছ হতে সালতানাতের ফরমানও আনিয়ে নেন। ক্ষমতায় বসেই রাজ্য বিস্তার আর সুসংহত করার কাজে মন দেন। রাজ্য বিস্তার আর মুঘল ঘন্ষ্ঠিতার কারণে বেশ কয়েকবার মারাঠা আক্রমণের শিকার হয় মহীশুর। কিন্তু মারাঠারা হায়দারকে দাবিয়ে রাখতে পারেনি। ছোট মহীশুর সালতানাতকে তিনি বিশাল এক সালতানাতে পরিণত করেন।
১৭৬৫ সালে হায়দার আলী মালাবার অভিযান করেন। টিপুর বয়স তখন পনেরো বছর। বাবা হায়দার আলীর সাথে প্রথমবারের মত যুদ্ধে গেলেন। মালাবারের বেদুন অঞ্চলের দক্ষিণে পাহাড়ী এলাকায় যুদ্ধে অসামান্য বীরত্ব দেখান কিশোর টিপু।
১৭৬৭ প্রথম এ্যাংলো-মহীশুর যুদ্ধ শুরু হয়। আর এই যুদ্ধেই টিপু তাঁর আজীবনের শত্রু ব্রিটিশদের সাথে প্রথমবারের মত মুখোমুখি হন। সে যুদ্ধে বাপ-ব্যাটা মিলে ব্রিটিশদের খুব ভালো প্যাদানী দেয়। আর এই যুদ্ধেই আমরা দেখতে পাই বিচক্ষণ টিপু সুলতানকে।
হায়দার আলী ১৭৬১ সালে মহীশুরের সুলতান হবার পর হতেই রাজ্যবিস্তারে মনোনিবেশ করেন। এতে করে পাশের রাজ্য হায়দ্রাবাদের নিজাম, মারাঠারাজ মাধব রাও পেশোয়া, আরকোটের নবাব মুহাম্মাদ আলী খান ও ব্রিটিশরা চিন্তায় হয়ে পড়ে যায়।
নিজাম ও ব্রিটিশদের সহায়তা নিয়ে মারাঠারাজ মাধব রাও পেশোয়া ১৭৬৭ সালের জানুয়ারীতে মহীশুরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন২। শুরু হলো প্রথম এ্যংলো-মহীশুর যুদ্ধ (১৭৬৭-১৭৬৯)। সুলতান হায়দার আলী বুদ্ধিমান ছিলেন, তিনি চিন্তা করলেন এতগুলো শত্রুর সাথে এক সাথে যুদ্ধে যাওয়া সমীচিন হবে না; সন্ধি প্রস্তাব পাঠালেন মাধব রাওয়ের কাছে। মারাঠারা সন্ধিতে রাজি হলো, ত্রিশ লাখ রূপির বিনিময়ে তারা সরে এলো মহীশুর থেকে।
এদিকে, হায়দ্রাবাদের নিজাম সেই বছরের মার্চে ব্রিটিশ কর্ণেল জোসেফ স্মিতের নেতৃত্বে সৈন্য পাঠালেন মহীশুরের বিরুদ্ধে। নিজামের বাহিনীতে ব্রিটিশদের উপস্থিতি দেখে ব্রিটিশদের উপর রেগে যান হায়দার আলী। চালেন চতুরঙ্গের কূট চাল। ১৭৬৭ সালের ১১ জুন হায়দার আলী আঠারো লক্ষ রূপিসহ টিপু সুলতানকে পাঠালেন নিজামের কাছে। কিশোর টিপুর রাজনৈতিক জ্ঞান দেখে অবাক হলেন নিজাম। অবশেষে, নিজাম রাজী হলেন; মহীশুরের সাথে একত্র হয়ে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করলেন।
দক্ষিণ ভারতের চাঙ্গামায় নিজাম-মহীশুরের যৌথ বাহিনী হায়দার আলীর নেতৃত্বে ব্রিটিশদের ঘাঁটিতে আক্রমন করে। একের পর এক ব্রিটিশ ঘাঁটি, কুঠি, দূর্গ দখল করছিলেন হায়দার আলী। অবশেষে, ১৭৬৭ সালের নভেম্বরে তিনি ব্রিটিশদের আম্বর দূর্গ অবরোধ করেন। কিন্তু সুবিধা করতে না পারায় ডিসেম্বরের শেষের দিকে হায়দার আলী পিছু হটে উত্তর সুবায় চলে যান। এসময় ঘটল বড় অঘটন! ব্রিটিশদের থেকে ঘুষ নিয়ে মহীশুরের পক্ষ ত্যাগ করলেন নিজাম; উত্তর সুবার যুদ্ধে পর্যদুস্ত হলেন হায়দার আলী।
দু'মাস পর ১৭৬৮ সালে ফেব্রুয়ারীতে ব্রিটিশরা মহীশুরের মালাবার অঞ্চল দখল করে নেয়। হায়দার আলী তখন কর্নাটক দখলে ব্যস্ত, তাই পুত্র টিপু সুলতানকে পাঠালেন মালাবার। মেজর ফিটজেরাল্ড, কর্ণেল উড, কর্ণেল জোসেফ স্মিতের সম্মিলিত আটাশ হাজার সৈন্য টিপু সুলতানের ছ'’হাজার সৈন্যর কাছে পরাজিত হলো। এ পরাজয়ে কর্ণেল জোসেফ স্মিত খুব অপমানিত হলেন; প্রতিশোধ হিসেবে তিনি মারাঠাদের সাথে নিয়ে মহীশুরের অধীন ব্যাঙ্গালোর দূর্গ অবরোধ করেন। প্রচন্ড যুদ্ধ হলো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মারাঠা-ব্রিটিশ বাহিনী পরাজিত হয় মহীশুরের বাপ-বেটার কাছে। ব্যাঙ্গালোরে মুক্তভাবে উড়তে থাকে মহীশুরের পতাকা।
এরপর, হায়দার আলী- টিপু সুলতান ব্রিটিশদের হুশার দূর্গ অবরোধ করেন। খবর শুনে কর্ণেল উড সৈন্য নিয়ে হুশার দূর্গ আক্রমন করেন কিন্তু ভেন্কটগিরীতে হায়দারের বাহিনীর হাতে পর্যদুস্ত হন। এরপর, বাপ-বেটা কর্নাটক দখল করেন, পুরো দক্ষিণ ভারতের সবগুলো ব্রিটিশ কুঠি একের পর এক দখল করে নিতে থাকেন। মার্চ, ১৭৬৯ সালে বাপ-বেটা অবরোধ করেন ব্রিটিশদের মাদ্রাজ কুঠি ৩। ভয়াবহ যুদ্ধ হলো পুরো মার্চ মাস জুড়ে।
অবশেষে, ২৯ মার্চ, ১৭৬৯, হায়দ্রাবাদের নিজাম ও মারাঠাদের সমর্থন এবং সহযোগীতা থাকার পরও মহীশুরের বাপ-বেটার কাছে ব্রিটিশদের শোচনীয় পরাজয় হয়। মাদ্রাজে বিজয়ীর বেশে প্রবেশ করেন হায়দার আলী ও টিপু সুলতান।
টিপু সুলতানের বয়স তখন মাত্র ১৯ বছর।
মন্তব্য
তথ্যসূত্র শেষ পর্বে একসাথে দেয়া হবে।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
চরম। দৌড়াক। পাঁচতারা পোস্ট।
..................................................................
#Banshibir.
সত্যপীর দা,
শরমিন্দা হইলাম।
আপনেরে
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
মাথায় একটা কুবুদ্ধি আসছে। আমি ইংরেজ ইতিহাসলিখকের রচনা তর্জমা করে ভারি বকা খাই, বড় বড় হিরুদের নাকি বাঁশ মারা হয় ওইখানে। ভাবছি আপনার প্যারালাল পোস্ট দিব, ধরেন আপনি টিপুর উপর লিখা দিসেন আমি খুঁজে একটা টিপুর উপর লিখা তর্জমা করি। পাঠকের বোধহয় সুবিধে হবে, একই বিষয়ে দুই দিক থেকে আলোকপাত করা দেখে।
কি বলেন?
..................................................................
#Banshibir.
সেটা তো বেশ হয়।
তাড়াতাড়ি কইরা টিপুর উপর কিছু অনুবাদ ছাড়েন।
বইসা আছি মিয়া আপনার লেখা পড়নের লাইগা।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
মনে পড়ছে, স্কুলে পড়াকালে টিপু সুলতানের টিভি সিরিয়ালটা কেমন আলোড়িত করেছিল! আপনার লেখা খুব ভাল লেগেছে। ছবিসহ এমন ঐতিহাসিক লেখার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আমরা পাঠক হিসাবে এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেলি আর ইতিহাস জেনে আনন্দ লাভ করি; কিন্তু যারা গবেষনা করে, অনেক বই-পুস্তক ঘেঁটে আমাদের সামনে ইতিহাসের বিবরণ হাজির করেন, তাদের শ্রমের কথা অনেক সময় মনেই থাকে না। যাহোক, আপনাকে আবারো ধন্যবাদ। সঙ্গে একুশের শুভেচ্ছা!
আপনাকেও একুশের শুভেচ্ছা।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
চলুক, পড়ছি।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
চলুক
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
চলুক।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
দৌড়াক
ডাকঘর | ছবিঘর
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
(বাংলায়)
facebook
নেপোলিয়ানের কথাটার ঝাঁঝালো ভাবানুবাদ খুঁজছি।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
চলুক
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
"To live a day like a tiger is indeed better than living a 100 years like a jackal"
টিপু সুলতান
দারুন একটা কথা। সত্যিই বেটা বাঘ ছিল।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
ভাল লাগলো। শেষের ছবিটা দেখে সেকালেই ফিরে গেলুম।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
আআক্রমণ চালাও.... টিপু সুলতান সিরিজের এই কথা গুলো এখনো কানে বাজে।
চলুক, চলতেই হবে, ইতিহাস-অজ্ঞানীরা জানতে চায়।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
#অনেক দারুন লিখেছেন, ভাল লেগেছে।।।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
"১৭৬৭ প্রথম এ্যাংলো-মহীশুর যুদ্ধ শুরু হয়।"
আমার জানা মতে এটা তো ভারতে ফরাসী-ব্রিটিশদের আধিপত্য়ের যুদ্ধ। যেখানে ফরাসীদের পাপেট ছিল টিপু আর ব্রিটিশদের পাপেট ছিল উদিয়ার মহারাজা। ক্টোরিয়ান/এডোয়ারডিয়ান ঐতিহাসিকেরা ভারতের ইতিহাস লিখতে গিয়ে অন্য়ান্য় ইউরোপিয় শক্তিগুলোকে আর চোখে দেখতে পায়না।
এখানে ৪৬-৪৮ পাতায় সংক্ষেপে কিছু মজার কথা বলা আছে।
পুরো অষ্ঠাদশ শতাব্দীই ভারতবর্ষের জন্য চরম বিশৃঙ্খল সময়। এ সময় কে যে কার বন্ধু আর কে কার শত্রু তা বুঝা বড় দায়।
এভাবে একপেশে সামারাইজ করতে পারলাম না। প্রথম এ্যাংলো-মহীশুর যুদ্ধের প্রেক্ষাপট অনেক বিশাল।
এ্যাংলো-মহীশুর যুদ্ধ শুধুমাত্র ভারতে ফরাসী-ব্রিটিশদের আধিপত্যে বিস্তারের যুদ্ধ নয়। এখানে মহীশুর, নিজাম, মারাঠা, ইংরেজ, ফরাসী প্রত্যেকে যুদ্ধ করেছে নিজ নিজ স্বার্থে।
আমার সৃত্মি বিশ্বাসঘাতকতা না করলে যতদূর মনে পড়ে উদিয়ার মহীশূরের রাজবংশের নাম। সেনাপতি হায়দার আলী ১৭৬২ সালে মহীশূরের রাজা দ্বিতীয় কৃষ্ঞরাজা উদিয়ারকে সরিয়ে নিজেকে সুলতান ঘোষনা করেন। এই উদিয়ার-রা ১৭৯৯ সালে টিপুর মৃত্যুর পর মহীশূরের ব্রিটিশ অনুগত রাজা হিসেবে বসে। আর প্রথম এ্যাংলো-মহীশুর যুদ্ধে টিপু নিতান্তই পিতার অনুগত একজন সেনা অফিসার ছিলেন।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
এংলো-ফ্রেন্স দ্বন্দের সরাসরি প্রভাব বলা যেতে পারে পলাশির যুদ্ধকে। কারণ ফরাসি দূর্গ দখল রা থেকেই যুদ্ধের শুরু আর সে সময় তাদের মাঝে সাত বছর ব্যাপী যুদ্ধও চলছিল। টিপুর সিংহাসনে বসার পর বিশেষ করে ফরাসি বিপ্লবের পরের সময়টায় মহিশুর যুদ্ধ ইঙ্গ ফরাসি দ্বন্দের প্রকাশ্য চারণভূমিতে পরিণত হয়। দুঃক্ষিত টিপুর জন্য হরাটিও নেলসন নামের এক অসাধারণ ইংরেজ নৌ জেনারেলের অসাধারণভাবে ভূমধ্যসাগরে আধিপত্যবিস্তার এবং নেপোলিয়নের মিশরে ব্যার্থ অভিযান এবং একইসাথে সেইসময়ের সবচেয়ে মেধাবী রাজনীতিবিদ জর্জ ওয়াশিংটনের ইঙ্গ ফরাসি রেশারেশিতে নিরপেক্ষ অবস্থানের নীতিগ্রহণ। যদি নেপোলিয়নের মিশর অভিযান সফল হত এবং নেলসন বেটল অব নাইলে পরাজিত হত। ব্রিটিশ বাহিনী শ্রীরঙ্গপত্নম অভিযান ১৭৯৯ সালে শুরু করার সাহস পেতনা। বরন্চ তারা সরাসরি হুমকিতে পড়ত ভারতে তাদের সম্রাজ্য আদৌ টিকবে কিনা।
দ্বিতীয় ব্রিটিশ-মহীশুর যুদ্ধ যখন ভারতে শুরু হয়, তখনও সারাবিশ্বে ব্রিটিশ-ফ্রেঞ্চ যুদ্ধ চলছিল।
পলাশীর যুদ্ধ শুধুমাত্র ব্রিটিশ-ফ্রেঞ্চ দ্বন্দ্বপ্রসূত; এটিও মেনে নিতে পারলাম না। ভারতীয় ও ইউরোপীয়রা পলাশীর যুদ্ধে যার যার নিজ স্বার্থে যুদ্ধ করেছে। কেউ কারো হয়ে যেচে এসে যুদ্ধ করেছে, তা মানতে পারলাম না। কেউই অন্যের হয়ে যুদ্ধ করে না।
পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
বইয়ের জন্য লন @ দুর্দান্ত দা।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
ভাল লিখেন। চলুক।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
চলুক । অসাধারণ
পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
নতুন মন্তব্য করুন