১৭৮১ সাল মহীশুরের জন্য দু:সময়ের মধ্য দিয়ে গেলেও বছরের শেষে সুসংবাদ আসে। ১৭৮১ সালের ডিসেম্বরে টিপু ব্রিটিশদের কাছ হতে চিতোর ছিনিয়ে নেন।
১৭৮২ সালে হায়দার নতুন উদ্যমে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেন। কিন্তু বছরের শুরুতেই পান দু:সংবাদ।
তৃতীয় পর্বের শুরুতে বলে ছিলাম, ১৭৭৯ সালে মহীশুর অনুগত চিরাক্কালের বাহিনী ব্রিটিশদের থলেশ্বরী বন্দর দখল করার জন্য অভিযান করে। একই বছর মহীশুর অনুগত চিরাক্কাল বাহিনী ব্রিটিশদের মিত্র কোত্তায়াম রাজ্য আক্রমন করে। যুদ্ধে কোত্তায়াম পরাজিত হয়। এরপর, মহীশুর বাহিনী কাডাথান্ড নামক আরেকটি ব্রিটিশ অনুগত দেশীয় রাজ্য দখল করে নেয়। ১৭৭৯ সালের ডিসেম্বরে মহীশুর বাহিনী ব্রিটিশদের থলেশ্বরী বন্দর অবরোধ শুরু করে। এসময় কোত্তায়ামের রাজা গোপনে ব্রিটিশদের রসদ সরবরাহ করতে থাকেন। এই অবরোধ চলতে থাকে জানুয়ারী, ১৭৮২ সাল পর্যন্ত। জানুয়ারীতে, ব্রিটিশ অধীন থলেশ্বরী বন্দরের দায়িত্বে থাকা কর্নেল জন কটগ্রোভ, মেজর উইলিয়াম এভিংটন ও কোত্তায়ামের রাজা একত্রিত হয়ে অতর্কিত মহীশুর বাহিনীকে আক্রমন করে। হঠাৎ আক্রমনে দিশেহারা হয়ে পড়ে মহীশুর বাহিনী। অবশেষে, ১৮ জানুয়ারী, ১৭৮২, সর্দার আলী খানের নেতৃত্বাধীন মহীশুর বাহিনী আত্মসমর্পন করে। সর্দার আলী খান মারাত্মক আহত হন, বন্দী অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। মহীশুর বাহিনীর এই পরাজয় পুরো মালাবার অঞ্চলে মহীশুরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের আগুন দাউদাউ করে জ্বালিয়ে দেয়। কুরগ ও মালাবারের দেশীয় রাজ্যগুলো একে একে মহীশুরের অধীনতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষনা করে।
হায়দার বুঝতে পারলেন ব্রিটিশরা মহীশুরের জন্য বিষবৃক্ষ। এই বিষবৃক্ষকে দক্ষিণ ভারত হতে তাড়াতে না পারলে বৃহত্তর মহীশুর সালতানাতের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা যাবে না।
ফেব্রুয়ারী, ১৭৮২, হায়দার টিপুকে পাঠান ব্রিটিশদের অধীন তান্জোর পুনরুদ্ধার করতে। এই খবর পাবার পর ব্রিটিশরা কর্নেল ব্রেথওয়েটের নেতৃত্বে সৈন্য পাঠালো টিপুর বাহিনীকে ধ্বংস করার জন্য।
ব্রিটিশ সৈন্যরা অবস্থান নিল কলেরুন নদীর তীরে কোম্বাকোনাম নামক জায়গায়। কর্নেল ব্রেথওয়েট অপেক্ষা করতে লাগলেন টিপুর জন্য। ১৬ ফেব্রুয়ারী টিপু সৈন্যবাহিনী নিয়ে পৌঁছুলেন কোম্বাকোনামে। পরদিন শুরু হলো তুমুল যুদ্ধ। টিপুর গোলন্দাজ বাহিনী শুরুতেই কোনঠাসা করে দিল ব্রেথওয়েটের বাহিনীকে। এরপর শুরু হলো টিপুর অশ্বারোহী বাহিনীর তুমুল আক্রমন। অবশেষে, ১৮ ফেব্রুয়ারী, ১৭৮২, কর্নেল ব্রেথওয়েট আত্মসমর্পন করেন।
এই সময় পোর্টো নভো হতে সংবাদ আসে- ফ্রেঞ্চ অ্যাডমিরাল সাঁফ্রেনের নেতৃত্বে ফ্রেঞ্চ বাহিনী সেখানে অবতরন করেছে। হায়দার-টিপু উভয়েই উষ্ঞ অভিনন্দন জানান অ্যাডমিরাল সাঁফ্রেনকে।
হায়দার ও সাঁফ্রেনের মধ্যে চুক্তি হয়- কোড্ডালোরে নতুন ফ্রেঞ্চ কুঠি খুলতে মহীশুর সাহায্য করবে, বিনিময়ে ফ্রেঞ্চরা ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে মহীশুরকে সাহায্য করবে।
মার্চের শেষের দিকে মহীশুর বাহিনী কোড্ডালোর অভিযান করে। ৮ এপ্রিল, ১৭৮২, মহীশুর বাহিনী কোড্ডালোর জয় করে নেয়। এরপর মহীশুর বাহিনী মে মাসে পরমাকলি জয় করে।
মহীশুর বাহিনীর একের পর এক বিজয়ে বিচলিত হয়ে যায় ব্রিটিশরা। মে মাসে লেফট্যানেন্ট জেনারেল আইরের নেতৃত্বে ব্রিটিশরা আরানী আক্রমন করে। আরানীতে ছিল মহীশুরের বিশাল সামরিক রসদাগার । আরানী ব্রিটিশদের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে, এই খবর পাবার পর হায়দার আলী আরানী অভিযান করেন। প্রচন্ড যুদ্ধ হল ২ হতে ৮ জুন পর্যন্ত। সুবিধে করতে পারলো না ব্রিটিশরা। অবশেষে, ব্রিটিশরা আরানী হতে পিছু হটে যায়।
জুলাই, ১৭৮২, বর্ষা শুরু হলে মহীশুর-ব্রিটিশ যুদ্ধ কিছুটা ঝিমিয়ে পড়ে। এসময় হায়দার আলী সৈন্য নিয়ে চিতোরে চলে যান।
আগস্টে দু:সংবাদ এলো: ব্রিটিশরা মালাবারে প্রচুর সৈন্য, গোলাবারুদ ও রসদ এনেছে; উদ্দেশ্য- মালাবারে মহীশুর অধীন রাজ্যগুলোর বিদ্রোহে সাহায্য করা। এ খবর পাবার পর হায়দার আলী টিপুকে মালাবার অভিযানে প্রেরন করেন।
১৮ নভেম্বর, ১৭৮২, মালাবারে মুখোমুখি হলেন টিপু ও ব্রিটিশ কর্নেল হাম্বারস্টোন। অল্প কিছুক্ষনের যুদ্ধেই কাবু হয়ে যায় ব্রিটিশ বাহিনী। কর্নেল হাম্বারস্টোন বাকি সৈন্য নিয়ে পালিয়ে যেতে থাকেন সমুদ্র উপকূল ধরে। পিছু নেন টিপু ও তার মহীশুর বাহিনী। পুন্নামী নদীর তীরে আরেক দফা যুদ্ধ হলো; নাস্তানাবুদ হলো ব্রিটিশ বাহিনী। অস্ত্র-গোলাবারুদ-রসদ ফেলে দ্রুত পালিয়ে যায় কর্নেল হাম্বারস্টোন ও অবশিষ্ট ব্রিটিশ বাহিনী।
এ সময় চিতোর হতে খুব খারাপ খবর নিয়ে আসল একজন বার্তাবাহক ।
(চলবে)
মন্তব্য
এই পর্বটা এত ছোট, যেন শুরু করতেই হঠাৎ ধাক্কা খেলাম, শেষ!
তাই বুঝি!
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
ছোট হওয়াতে আমার জন্য ভাল হয়েছে। এখনও আত্মস্থ হতে পারিনিতো, তাই।
পড়ছি। চলুক।
ধন্যবাদ।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
সবগুলো পর্ব পড়েছি। ভালো লেগেছে। অনেক কিছু জানছি।
-----------------------------------------------------------
স্নান স্নান চিৎকার শুনে থাকো যদি
নেমে এসো পূর্ণবেগে ভরাস্রোতে হে লৌকিক অলৌকিক নদী
ধন্যবাদ সুমন ভাই।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
হায়দারের ব্রিটিশ বিরোধিতা কি ভারত উপমহাদেশের প্রতি দেশপ্রেম নাকি, হায়দারের রাজ্য বিস্তার এ বাধা হবার কারণে?
হায়দারের রাজ্য বিস্তারের সময় তার প্রতিপক্ষকে ব্রিটিশদের সাহায্য করা থেকেই হায়দারের ব্রিটিশ বিরোধিতার সূত্রপাত।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
আরেকটা কথা জিগ্গেস করবার ছিল।
আপনার টিপু সুলতানকে নিয়ে লিখবার কারণ কি?
যদি কিছু মনে না করেন উত্তর দিলে খুশি হবো।
ইতিহাস চর্চা।
কষ্ট করে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
নতুন মন্তব্য করুন