ম্যাঙ্গালোরের চুক্তি ব্রিটিশদের জন্য খুব অপমানজনক ছিল। কিন্তু সে সময় ম্যাঙ্গালোর চুক্তি মেনে নেয়া ছাড়া তাদের আর কোন উপায় ছিল না। দ্বিতীয় এ্যাংলো-মহীশুর যুদ্ধের পর বেশ ক'বছর ব্রিটিশরা প্রকাশ্যে মহীশুরের বিরুদ্ধে কাজ করা বন্ধ করে দেয়। কিন্তু গোপনে মহীশুরের বিরুদ্ধে নিজেদের সুসংগঠিত করছিল ব্রিটিশরা।
টিপু বুঝতে পেরেছিলেন, ইংরেজরা শুধু ব্যবসায় নয়, পুরো ভারতবর্ষকে নিজেদের অধিনস্ত রাজ্যে পরিণত করতে চাই। তার চেয়ে বড় বিপদের কথা, দেশীয় অনেক রাজ্য ব্রিটিশদের সাথে হাত মিলাচ্ছে। হায়দ্রাবাদের নিজাম, কর্নাটকের নবাব, মালাবার উপকূলের এবং মহীশুরের পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের রাজারা ব্রিটিশদের সাথে এক জোট হয়ে টিপুর বিরুদ্ধে কাজ করছিল। যত দিন যাচ্ছিল শক্তিশালী হচ্ছিল ব্রিটিশরা।
হায়দ্রাবাদের নিজাম নিজেকে মুঘল সম্রাটের দক্ষিন ভারতের প্রতিনিধি মনে করত। মহীশুর সালতানাতের হঠাৎ উত্থান নিজাম সহ্য করতে পারেনি। ১৭৬১ সালে সুলতান হায়দার আলী মহীশুর সালতানাত প্রতিষ্ঠা করেন; সালতানাত প্রতিষ্ঠা করার পর হতেই হায়দার রাজ্য বিস্তার শুরু করেন, যা, মহীশুরকে নিজাম-মারাঠাসহ আশেপাশের রাজ্যগুলোর চরম শত্রুতে পরিণত করে।
সেসময় ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর কার্যক্রম দেখে ভারত উপমহাদেশের সবাই বুঝতে পেরেছিল ব্রিটিশরা কি করতে যাচ্ছে। কিন্তু ভারতের দেশীয় রাজ্যগুলোর পরস্পরের উপর অবিশ্বাস, অনাস্থা, শত্রুতা, পররাজ্য লোভ. মুঘল-মারাঠা চরম দ্বন্দ্ব, এক ভারত উপমহাদেশ রাষ্ট্রের উপর অবিচল বিশ্বাস না থাকার কারনে ব্রিটিশরা তাদের ভারত শাসনের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেয়ার সুযোগ পেয়ে যায়।
হায়দার আলীও পররাজ্য লোভী ছিলেন, এটা অস্বীকার করার কোন কারন নেই। আমরা ভারত উপমহাদেশীয়রা হায়দারকে স্মরন করি তার ব্রিটিশ বিরোধী যুদ্ধের কারনে। টিপু যখন সুলতান হন, তখন মহীশুরদের সাথে মারাঠা, নিজাম, ব্রিটিশদের সাপে-নেউলের সম্পর্ক। হায়দারের রেখে যাওয়া বিশাল মহীশুর সালতানাতের এক বিরাট অংশ ছিল অনেকগুলো অধিকৃত রাজ্য, যেগুলোর রাজারা মহীশুর সালতানাতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে ব্যস্ত ছিল। এই রাজ্যগুলো স্বাভাবিক কারনেই ব্রিটিশদের মিত্রে পরিণত হয়। আবার, এই রাজ্যগুলোকে সুযোগ মত পেয়ে গ্রাস করতে বিন্দু পরিমান দেরি করেনি ব্রিটিশরা।
২২ অক্টোবর, ১৭৬৪ সালের বক্সারের যুদ্ধের পর ভারত উপমহাদেশে ব্রিটিশদের উদ্দেশ্য সবার কাছেই পরিস্কার হয়ে যায়। তখন যদি হায়দার-টিপু পররাজ্য দখল না করে ভারতের অন্যান্য রাজ্যগুলোর সাথে জোট তৈরী করত, ইউরোপীয় অত্যাচারী বেনিয়াদের বিপক্ষে অস্ত্র ধরত, তাহলে আমাদের এই ভারত উপমহাদেশ কখনোই ব্রিটিশদের করতলগত হতো না। হায়দার-টিপু ক্ষেত্রে করণীয়টি একইভাবে মারাঠাদের ক্ষেত্রেও সত্য। কারন, ততদিনে ব্রিটিশদের সাথে মারাঠাদের শত্রুতা সৃষ্টি হয়ে গেছে। মারাঠার যদি সেসময় ভারতে রাজ্যগুলো আক্রমন না করে ভারতের অন্যান্য রাজ্যগুলোর সাথে জোটবদ্ধ হতো, তাহলে, ইউরোপীয়রা ভারতে সাম্রাজ্য বিস্তারের কথা ঘুমের মাঝে স্বপ্নেও দেখত না। মারাঠা-মহীশুরের মিত্রতা হবার বেশ সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল; কিন্তু বাস্তবে তা পরিণত হয়নি। অপরদিকে, হায়দ্রাবাদের নিজামের চরিত্র ছিল অনেকটা মাছির মত; যেদিকে রসগোল্লা পাওয়া যাবে, সেদিকে ছুট। নিজামের সাথে ব্রিটিশ বিরোধী জোট করা মানে নিরাশার চরে ঘর বাঁধা।
মার্চ, ১৭৮৪ সালে দ্বিতীয় ব্রিটিশ-মহীশুর যুদ্ধ শেষ হবার পর মহীশুরের আকাশে বিপদের নতুন মেঘ দলা বাঁধতে শুরু করে। জুন, ১৭৮৪ সালে শুরু হয় মহীশুরের সাথে নিজাম-মারাঠা বাহিনীর নতুন যুদ্ধ। ব্রিটিশরা ভারত উপমহাদেশের পরিস্কার শত্রু হিসেবে আর্বিভাব হবার পরও ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে মহীশুরকে সাহায্য না করে মারাঠা-নিজাম উল্টো মহীশুর আক্রমন করে। এই গল্প ভারত উপমহাদেশে বিশ্বাসঘাতকাতার পুরনো রীতির নতুন এক অধ্যায় মাত্র।
১৭৭১ সালে, হায়দার মারাঠাদের কাছে পরাজিত হন। এর প্রেক্ষিতে, হায়দার মারাঠাদের সাথে শান্তিচুক্তি করেন। এই চুক্তি অনুসারে মহীশুর প্রতি বছর মারাঠাদের মাশোয়ারা দিবে। কিন্তু দ্বিতীয় এ্যাংলো-মহীশুর যুদ্ধ শুরু হলে হায়দার মারাঠাদের এই মাশোয়ারা দেয়া বন্ধ করে দেন। অপরদিকে, নিজাম ভাবত, সে হচ্ছে দক্ষিন ভারতে মুঘলদের প্রতিনিধি। হায়দার মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের নিকট অনুগত্য প্রকাশ করেছিল। তাই, নিজাম ভাবত, দিল্লীকে মহীশুরের প্রদেয় কর তার হাত দিয়ে যাবে। হায়দার-টিপু কেউই নিজামকে পাত্তা দিতেন না বরং নিজেরাই সরাসরি মুঘল সম্রাটের সাথে যোগযোগ করতেন। নিজাম এই বিষয়টি হজম করতে পারল না। দ্বিতীয় এ্যাংলো-মহীশুর যুদ্ধ শেষ হবার মাস খানেক পরে ব্রিটিশ-ইন্ধনে নিজাম বকেয়া কর১ নিয়ে চিঠি লিখল টিপুর কাছে। টিপু জবাবে, মহীশুরের হতে কর আদায় করবার নিজাম কে জানতে চেয়ে চিঠি পাঠান। নিজাম এতে খুব অপমানিত বোধ করে। তখন, ব্রিটিশ কুপরামর্শে নিজাম চিঠি লিখল মারাঠারাজ দ্বিতীয় মাধব রাওয়ের কাছে।
১৭৮৪ সালের জুন মাসে, মারাঠারাজ দ্বিতীয় মাধব রাও এবং হায়দ্রাবাদের নিজাম মহীশুর হতে বকেয়া কর আদায়ের অজুহাতে ব্রিটিশ-ইন্ধনে ভীমা ও কৃষ্ঞা নদীর সংযোগস্থলের কাছে ইয়াদগির নামক শহরে সৈন্য সমাবেশ করলো; আসল উদ্দেশ্য- টিপু বধ ও মহীশুর দখল করা।
মারাঠা-নিজামদের যৌথ সৈন্য-সমাবেশের খবর পেলে টিপু ভাবলেন কি করা যায়। মারাঠা-নিজামের এই যৌথ বাহিনী নিশ্চিতভাবে মহীশুর আক্রমন করবে। অনেক ভেবে একটা বুদ্ধি বের করলেন টিপু। মারাঠা সৈন্যবাহিনীর অধিকাংশ এখন মহীশুর সীমান্তে। এই আক্রমন ঠেকাবার একটাই পথ-অরক্ষিত মারাঠা রাজ্য আক্রমন করা। এতে, দুটো সুবিধা: এক) মহীশুর বাহিনী ভিন্নপথে অরক্ষিত মারাঠা রাজ্যে প্রবেশ করে দ্রুত পুরো রাজ্য দখল করা। দুই) মহীশুর সালতানাতের আভ্যন্তরীন অংশ প্রত্যক্ষ যুদ্ধ হতে বেঁচে যাবে।
হায়দ্রাবাদের নিজামের রাজ্যও একইভাবে আক্রমন করতে পারতেন টিপু। কিন্তু সমস্যা হল, নিজামের সাথে ব্রিটিশদের প্রতিরক্ষা চুক্তি আছে। এছাড়া, সরাসরি নিজামের রাজ্য আক্রমন মুঘলদেরও ক্ষেপিয়ে দিতে পারে। তাই, টিপু শুধুমাত্র মারাঠাদের রাজ্য আক্রমনের সিদ্ধান্ত নিলেন। মারাঠাদের শায়েস্তা করা গেলে নিজাম এমনিতেই চুপ হয়ে যাবে।
১৭৮৪ সালের জুলাই মাসে, টিপু মারাঠা রাজ্যের আদুনী দূর্গ আক্রমন করেন। খুব সহজেই তিনি এই দূর্গটি অধিকার করেন। এরপর, টিপু মূল মারাঠা সেনাবাহিনীকে পিছন দিক হতে আক্রমন করেন। মারাঠা সেনাবাহিনী ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। টিপু মারাঠা বাহিনীকে তুঙ্গভদ্রা নদীর অপর পাড়ে তাড়িয়ে নিয়ে যান। মারাঠারা কোনঠাসা হয়ে পড়ল। টিপু একের পর এক মারাঠা দূর্গ, শহর, এলাকা অধিকার করে যতে লাগলেন।
কিন্তু বিজয় ভাগ্য টিপুর কপালে বেশিদিন ছিল না। ১৭৮৫ সালের মাঝামাঝি হতে কি করে যেন টিপুর সমস্ত যুদ্ধ পরিকল্পনা মারাঠারা আগে থেকে জেনে যতে লাগল। টিপু কখন, কোন পথে, কিভাবে মারাঠাদের কোন দূর্গ অবরোধ করবে, টিপুর সৈন্যবাহিনীর সংখ্যা কত, কোন সেনাপতি কোন রেজিমেন্টের দায়িত্বে আছে, টিপুর সব যুদ্ধ পরিকল্পনা কিভাবে যেন আগে থেকেই জেনে যেতে লাগল মারাঠারা।
একের পর এক যুদ্ধ হারতে লাগলেন টিপু। মারাঠা রাজ্যে অধিকার করা দূর্গগুলো একের পর এক হাতছাড়া হয়ে যেতে লাগল। মারাঠা আবার বিজয়ীবেশে ফিরে এলো। মারাঠা সেনাপতি নানা পদনাবীশ মারাঠা রাজ্যের সব দূর্গ টিপু হতে পুনরুদ্ধার করেন। এরপর, মারাঠারা খোদ মহীশুরের দূর্গগুলো আক্রমন করে। মারাঠারা একে একে দখল করে নিলো মহীশুরের গজেন্দ্রগড়, বাদামী ও কিট্টুর দূর্গ।
১৭৮৫ সালের দ্বিতীয়ার্ধে বাধ্য হয়ে টিপু শেষ পর্যন্ত মারাঠাদের সাথে শান্তিচুক্তি করেন। টিপু ও মহীশুরের জন্য এই চুক্তি ছিল খুব অপমানজনক।
মারাঠা-মহীশুর শান্তিচুক্তির মূল অংশ:
০১। মহীশুর সালতানাতের সীমানার ভিতরে মারাঠা দখলকৃত দূর্গ ও অঞ্চলগুলো মারাঠা দখলে রয়ে যাবে।
০২। মহীশুর আদুনী দূর্গ হায়দ্রাবাদের নিজামের কাছে সমর্পন করবে।
০৩। যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ বাবদ মহীশুর মারাঠা-রাজ্যকে ৪৮ লক্ষ রূপী প্রদান করবে।
০৪। বছরে টিপু মারাঠা-রাজ্যকে ১২ লক্ষ করে মাশোয়ারা দিবে।
টিপু মারাঠা-নিজামের বিরুদ্ধে তাঁর এই পরাজয় কিছুতেই মেনে নিতে পারলেন না। তিনি বুঝতে পারলেন না কি করে মারাঠারা আগে থেকে তাঁর যুদ্ধ পরিকল্পনা জেনে যায়। সন্দেহ করলেন, তাঁর নিকটতম কেউ বিশ্বাসঘাতকতা করছে। ঘরের শত্রু বিভীষণকে ধরতে চর নিয়োগ করলেন টিপু।
অবশেষে, বাড়ির ইঁদুর ধরা পড়ল। দুজন বিশ্বাসঘাতকের সন্ধান পাওয়া গেল। এরা হল রায়াদ্রুগের রাজা ভেন্কটপতি ও হারপানাপল্লীর রাজা বাসাপ্পা। এই দুজনের বিরুদ্ধে মারাত্মক সব অভিযোগ পাওয়া গেল। যুদ্ধের সময় মারাঠাদের কাছে তথ্য পাচার করা ছাড়াও টিপু সাভানুরে থাকার সময় তাঁকে হত্যা করার চেষ্টা করে এই দুই বিশ্বাসঘাতক।
ভেন্কটপতি-বাসাপ্পাকে শায়েস্তা করার জন্য টিপু রায়াদ্রুগ ও হারপানাপল্লী আক্রমন করেন। সামান্য অবরোধ ও লড়াইয়ের পর রায়াদ্রুগ ও হারপানাপল্লী টিপুর কাছে আত্মসমর্পন করে। ভেন্কটপতি আর বাসাপ্পাকে গ্রেফ্তার করা হল। সামরিক আদালতে বিচার শুরু হয়, রায়ে বিশ্বাসঘাতকতা ও টিপুকে হত্যা-চেষ্টার অভিযোগে তাদের কারাদন্ড দেয়া হয়। ব্যাঙ্গালোর কারাগারে পাঠানো হল ভেন্কটপতি-বাসাপ্পাকে।
অবশেষে একটু বিশ্রাম পেলান টিপু। তবে, তিনি বসে রইলেন না। মহীশুর সালতানাতের প্রশাসন-অবকাঠামো-দিউয়ানীসহ বিভিন্ন বিষয়ের সংস্কারকার্য শুরু করেন। সামরিক বাহিনী নতুন করে সংগঠিত করার কাজে হাত দিলেন। টিপু বুঝতে পেরেছিলেন ব্রিটিশদের সাথে সংঘর্ষ অনিবার্য এবং ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে ভারতীয় রাজ্যগুলোর সাহায্য পাওয়া সম্ভব নয়। তাই, তিনি দূত পাঠালেন বিশ্বের নানান রাষ্ট্রে।
(চলবে)
মন্তব্য
এসব পড়লে প্রথমেই যে কথাটা মনে আসে তা হল--"Divide and Conquer".
ঠিক বলেছেন।
"Divide and Conquer"
এই পদ্ধতিটিই ব্রিটিশরা ব্যবহার করেছিল ভারতে।
ব্রিটিশরা ভারত দখল করতে চাই এই বিষয়টি পরিষ্কার হবার পরও ভারতীয় রাজ্যগুলো এক হতে পারল না।
ভাবতেই কষ্ট হয়।
একতার অভাবে আমাদের অনেক বড় মূল্য দিতে হল। ১৯০ বছরের পরাধীনতা, বিশাল ভারত উপমহাদেশকে কেটে টুকরো টুকরো করার মাশুল আমরা আজীবন দিয়ে যাবো।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
এইটা আমরা বলি বটে কিন্তু ঘটনা হল আমরা ডিভাইডেডই ছিলাম, ব্রিটিশেরা শুধু কঙ্কার করেছে। এখন আমরা ইউনাইটেড হয়ে বুঝি যে তখনও ইউনাইটেড থাকলে হয়ত কঙ্কারড হতে হত না।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
আমরা তো এখনো একতাবদ্ধ নই। ভারত ভাগ তার প্রমাণ।
ভারত ভাগের পরও কিন্তু একতাবদ্ধ হতে পারিনি। রাষ্ট্র হিসেবে আলাদা পরিচয় পেয়েছি মাত্র কিন্তু একতার দিক থেকে এখনো ১০ এ ৩ পেরুতে পারিনি আমরা ভারত উপমহাদেশের কেউই।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
সালতানাত প্রতিষ্ঠা করার প্রক্রিয়াটা আসলে কেমন?
উদিয়ার রাজবংশ মহীশুরের সিংহাসনে বসে ১৫৬৫ সালে।
১৭৩২ সালে মহীশুরের সিংহাসনে বসেন ষষ্ঠ শ্যামারাজা উদিয়ার (১৭৩২-১৭৩৪)। তার শাসনামলে মহীশুরের প্রকৃত ক্ষমতা চলে যায় মহীশুরের দুজন মন্ত্রীর কাছে আর রাজা হয়ে পড়ে সে দুজন মন্ত্রীর হাতের পুতুল। সেই দুজন মন্ত্রী হলেন- প্রধানমন্ত্রী নানজা রাজা ও তার ভাই মূখ্যমন্ত্রী দেবারাজা। প্রায় ত্রিশ বছর ধরে এই দু'ভাই মহীশুরের প্রকৃত ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন।
হায়দার আলী ছিলেন দ্বিতীয় কৃষ্ঞরাজা উদিয়ার (১৭৩৪-১৭৬৬) একজন ক্ষমতাধর সেনাপতি। ১৭৬১ সালে হায়দার আলী অভ্যুথান করেন, নিজেকে সুলতান হায়দার আলী ঘোষনা করে ও মহীশুর সালতানাত প্রতিষ্ঠা করেন।
তবে, হায়দার আলী উদিয়ার রাজবংশকে পুরোপুরি ক্ষমতাচ্যুত করেননি। তিনি উদিয়ার রাজবংশের উত্তরাধিকারীদের মহীশুরের সম্মানসূচক রাজা হিসেবে রেখে সব ক্ষমতা নিজের কাছে কুক্ষিগত করে নেন। হায়দার পুত্র টিপুও একই পন্থা অবলম্বন করেছিলেন।
১৭৯৯ সালে টিপু সুলতানের মৃত্যুর পর ব্রিটিশরা তৃতীয় কৃষ্ষরাজা উদিয়ারকে ব্রিটিশ অনুগত রাজা হিসেবে মহীশুরের ক্ষমতায় বসায়।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
আমি যতদূর জানি টিপুর বিশ্বাসঘাতকরা আসলে কৃষ্ণরাজের অনুগত ছিল। বর্তমানে কর্ণাটকে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পরে আলোচনা হচ্ছে এর পেছনে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণও ছিল।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
টিপুর সাথে যারা বিশ্বাসঘাতকতা করেছে, তা নিয়ে পরের পর্বগুলোতে লিখব।
বিশ্বাসঘাতকতার পিছনে অনেক ইন্ধনই রয়েছে- ধর্ম, অর্থ, ক্ষমতা, প্রতিপত্তি।
ভারত উপমহাদেশীয় হিসেবে যদি ঘটনাটি দেখেন তাহলে কৃষ্ণরাজাও ভারত উপমহাদেশের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।
স্বদেশের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা যারা করে তাদের কোন অজুহাতই গ্রহণযোগ্য নয়, এমনকি ধর্মের বাহানাও নয়। একাত্তরে বাংলাদেশে পাকিস্তানীদের যারা সমর্থন দিয়েছিল ওরাও কিন্তু এই ধর্মের অজুহাতই দিয়েছিল।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
পড়ছি। চলুক।
পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
চলুক।
একটা বিষয়ে খটকা লাগল। হায়দার আলী যেরকম স্বাধীনচেতা ছিলেন, তো তিনি কেন খামাখা শুধু বছর বছর কর দেবার জন্য মুঘলদের আনুগত্য স্বীকার করবেন! এমনও তো দেখা যায়নি যে কোনও যুদ্ধে মুঘল বাহীনি হায়দারকে সাহায্য করেছে তাহলে? তাছাড়া, সেই সময়ে ভারতবর্ষের উপর থেকে মুঘলদের প্রভাব ধীরে ধীরে কমে আসছিল।
হায়দার মুঘল সম্রাটকে স্বীকার করতেন। এর কয়েকটি কারন দেয়া যেতে পারে-
০১। তখন ভারতের সকল মুসলমান শাসকই মুঘল সম্রাটকে সম্মানসূচক অর্থে ভারতের অধীশ্বর মেনে নিত।
০২। উদিয়ার রাজবংশ মহীশুর শাসন করে ১৫৬৫ সাল হতে। ১৭৬১ সালে হায়দার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে উদিয়ার রাজাদের সম্মানসূচক রাজা হিসেবে রেখে মহীশুর সালতানাত প্রতিষ্টা করেন। হায়দারের বংশের পূর্ব কোন গরিমা ছিল না। এতে, মহীশুরের সুলতান হিসেবে তাকে না মেনে নেয়ার প্রবনতা আশপাশের রাজ্যগুলোতে দেখা যায়। তাই, হায়দার মহীশুরের উপর নিজের দাবী প্রতিষ্ঠা করার জন্য মুঘল সম্রাটের আনুগত্য প্রকাশ করেন।
একটা কথা এখানে মনে রাখা দরকার, তখন মুঘলদের শক্তি ছিল না কিন্তু সম্মান ঠিকই ছিল। মুঘলদের স্বীকৃতির মূল্যায়ন ছিল।
০৩। উদিয়ার রাজা ছিল হিন্দু। হিন্দু রাজাকে পুতুলরাজা বানিয়ে মহীশুরে মুসলিম সালতানাত প্রতিষ্টা দক্ষিন ভারতের (বিশেষত: মালাবার উপকূল) হিন্দু রাজ্যগুলোতে উৎকন্ঠার সৃষ্টি করে। পার্শ্ববর্তী মারাঠরাও বিষয়টি ভালো চোখে দেখেনি। তাই, হায়দারের মহীশুরের শাসক হিসেবে ভারতের মুসলিম শাসকদের স্বীকৃতি ও সাহায্য প্রয়োজন ছিল। আর তা পাবার সহজ রাস্তা হল মুঘল সম্রাট।
মুঘল স্বীকৃতি বাস্তবিক অর্থে তেমন কোন কাজে আসেনি হায়দারের। টিপু সুলতান হায়দারের চেয়ে বেশি স্বাধীনচেতা ছিলেন। হায়দারের সময় খুদবা দেয়া হত মুঘলদের নামে; টিপু এসে নিজের নামে খুদবা দেয়ার রীতি চালু করেন। তবে, টিপুরও মুঘলদের প্রতি সহানুভূতি ছিল। মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলম দিল্লীতে বিদ্রোহী দ্বারা বন্দী হলে তিনি সাহায্য করার চেষ্টা করেছিলেন এবং মুঘল সম্রাটের দুরাবস্থার জন্য দু:খ প্রকাশ করেছিলেন।
টিপু বিশ্বে অনেক রাষ্ট্রে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে তাঁকে যুদ্ধে সাহায্য করার জন্য দূত পাঠিয়েছিলেন। এর কারন মুঘলদের অক্ষমতা ও ভারতীয় রাজ্যগুলোর একতাহীনতা।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
facebook
পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
নতুন মন্তব্য করুন