ছবি দেখে কি ভাবছেন?
ডিজাইন করা ব্যাঙের কোন শো-পিস, তাই না?
আসলে এটি কোন শো-পিস নয়, এটি সত্যিকারের জীবন্ত ব্যাঙের এক প্রজাতি। ইংরেজীতে এই ব্যাঙকে বলে Glass Frog বা, Transparent Frog। বাংলায় বলা যায় 'অচ্ছ ব্যাঙ' [০১]। এদের বৈজ্ঞানিক নাম 'Centrolenidae'।
উত্তর-পূর্ব ইকুয়াডোরে ১৮৭২ সালে স্প্যানীশ প্রাণীবিজ্ঞানী মার্কোস এসপাদা প্রথম অচ্ছ ব্যাঙের কথা বিশ্বকে জানান। অচ্ছ ব্যাঙের প্রায় ১৫২ ধরণের উপ-প্রজাতি আছে।
অচ্ছ ব্যাঙের সবচেয়ে অদ্ভুত বিষয়টি হল, এই ব্যাঙ এতই স্বচ্ছ যে, এর ভিতরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো খালি চোখেই দেখা যায়। এদের ত্বক এত স্বচ্ছ হবার কারণ হল, এদের ত্বকে পিগমেন্টেশানের অভাব আছে। এদের ত্বক সাধারণত: স্বচ্ছ হালকা সবুজাভ, কিছু কিছু প্রজাতির রং বাদামী। ত্বক ও শরীরের আভ্যন্তরীণ পর্দা সবই স্বচ্ছ। এদের হৃদপিন্ড, ফুসফুস, পাকস্থলী, নাড়ীভুঁড়ি, হাড়, এমনকি হার্টবিটও বাইরে থেকে দেখা যায়।
অচ্ছ ব্যাঙ আকারে খুব ছোট হয়ে থাকে। এদের অধিকাংশ উপ-প্রজাতি সর্বোচ্চ তিন সেন্টিমিটার পর্যন্ত দীর্ঘ হয়ে থাকে। তবে, সব উপ-প্রজাতি হিসেব করলে অচ্ছ ব্যাঙের সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য হতে পারে দশ সেন্টিমিটার। অচ্ছ ব্যাঙের বিভিন্ন উপ-প্রজাতির মধ্যে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অচ্ছ ব্যাঙ আকারে অনেক বড় হয়ে থাকে।
কোন কোন উপ-প্রজাতিতে মেয়ে অচ্ছ ব্যাঙরা আকারে পুরুষদের থেকে বড় হয়ে থাকে।
অচ্ছ ব্যাঙের চোখ সামনের দিকে থাকে এবং বেশ বড় বড় হয়। এদের সামনের পা দুটো চিকন এবং পিছনের দুটো পা মোটা হয়ে থাকে।
অচ্ছ ব্যাঙের কিছু কিছু উপ-প্রজাতি এত বেশি স্বচ্ছ হয়ে থাকে যে, এরা যখন কোন গাছের পাতার উপর বসে, তখন মনে হয়, জেলি জাতীয় কিছু পাতাটিতে লেগে আছে।
অচ্ছ ব্যাঙের অনেকগুলো উপ-প্রজাতি উত্তর আমেরিকার দক্ষিণাংশ হতে মধ্য আমেরিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার মধ্যাংশ পর্যন্ত পাওয়া যায়।
এদের সবচেয়ে বেশি দেখা যায় আন্দিজ অঞ্চলে। আন্দিজ ও আমাজন ভূ-অঞ্চলের অর্ন্তভুক্ত গ্রীষ্মাঞ্চলীয় চির সবুজ পাহাড়ী ধোঁয়াসাচ্ছন্ন আদ্র বন অচ্ছ ব্যাঙের প্রিয় আবাসস্থল।
এরা সাধারণত: বৃক্ষচারী। জলাধারের কাছাকাছি গাছের আদ্র ডালে, পাতায় এরা বসতি গড়ে।
খাদ্যে হিসেবে এরা নানা ধরণের ছোট পোকা-মাকড় খেয়ে থাকে।
অচ্ছ ব্যাঙ নিশাচর প্রাণী। দিনের বেলা এরা নিজেদের বসতিতে (পাতায়) ঝিমিয়ে/ঘুমিয়ে কাটিয়ে দেয়। রাতের বেলা এরা খাবারের খোঁজে বের হয়। স্বচ্ছ হওয়ায় শিকারীরা এদের রাতের বেলা খুঁজে বের করতে পারে না।
প্রজনন ঋতুতে (বর্ষাকাল) এরা জলাধার আছে এমন জায়গাগুলোতে ঘর বাঁধে। জলাধারের আশপাশের জায়গার দখল নিয়ে অচ্ছ ব্যাঙদের মধ্যে লড়াইও হয়। জলাধারের পাশের উপযুক্ত কোন একটি স্থান দখলে আসলে অচ্ছ যুগল লিপ্ত হয় কামলীলায়। সাধারণত: অচ্ছ ব্যাঙেরা রাতে সংসর্গে লিপ্ত হয়।
মা অচ্ছ ব্যাঙ জলাধারের উপর ঝুলে আছে এমন গাছের পাতায় বা, আগাছায় ডিম পাড়ে। কিছু কিছু উপ-প্রজাতির মা অচ্ছ ব্যাঙ জলাধারের পাড়গুলোতে, জলাধারের সাথে লাগানো পাথরে ডিম পেড়ে থাকে। মা অচ্ছ ব্যাঙরা সাধারণত: দুই থেকে তিন ডজন ডিম পাড়ে।
ডিম ফুটে লার্ভা বের হবার আগ পর্যন্ত কিছু কিছু প্রজাতির অচ্ছ ব্যাঙ ডিমগুলো পাহারা দেয়।
একসময় ডিম ফুটে বেরিয়ে আসে অচ্ছ ব্যাঙের নতুন প্রজন্ম। অচ্ছ ব্যাঙের ব্যাঙাচি জীবনচক্র পাড়ি দিতে হয়। ডিম ফুটে বেরিয়ে আসা অচ্ছ ব্যাঙাচিগুলো গড়িয়ে জলাধারের পানিতে পড়ে যায়। জলাধারের পানিতে বড় হতে থাকে অচ্ছ ব্যাঙের বংশধর।
IUCN অচ্ছ ব্যাঙের প্রায় ষাটটি প্রজাতিকে 'বিপদাপন্ন' হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে; এদের মধ্যে ছয়টির বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে। এছাড়া অচ্ছ ব্যাঙের প্রায় ৪৯ টি প্রজাতির সর্ম্পকে তথ্যের ঘাঁটতি আছে। এদের সংখ্যা ক্রমেই হৃাস পাচ্ছে। মূলত: গত(বিংশ) শতাব্দীর আশির দশক হতে অচ্ছ ব্যাঙের সন্ধান পাওয়া দুর্লভ হয়ে পড়ে।
অচ্ছ ব্যাঙের বিপদাপন্ন প্রাণী হবার মূল কারণগুলো হল: বৈশ্বিক উষ্ঞতা ও মানুষের সৃষ্ট বিপর্যয়।
বৈশ্বিক উষ্ঞতার কারণে আদ্র স্থানের অধিবাসী অচ্ছ ব্যাঙরা ক্রমেই বসতিহীন হচ্ছে। এছাড়া, মানুষরা বসতবাড়ি, চাষাবাদ ও কাঠের জন্য বন কেটে উজাড় করে দিচ্ছে; ফলে, অচ্ছ ব্যাঙের আবাসস্থলই ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া, বন্যপ্রাণী চোরাচালানীদের উৎপাত তো আছেই।
মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার দুর্বল 'বন ও বন্য প্রাণী সংরক্ষণ ব্যবস্থা' কতটা সফল হবে প্রকৃতির মহাবিস্ময় এই অচ্ছ ব্যাঙ রক্ষায়, তা চিন্তার বিষয়। অন্যান্য অনেক প্রাণীর মত প্রকৃতির বিস্ময়াবৃত অচ্ছ ব্যাঙরা মানুষদের সৃষ্ট বিপর্যয় হতে বিলুপ্ত হবে না, এই আশা রাখি।
অচ্ছ ব্যাঙরা বেঁচে থাকুক.....
অচ্ছ ব্যাঙের ধ্বনি:
০১।
প্রজাতি: Cochranella albomaculata
০২।
প্রজাতি: Andes Giant Glass Frog
তথ্য-ছবি-অডিও সূত্র:
০১। ছবিগুলো গুগুল ইমেজ আর্কাইভ থেকে নেয়া হয়েছে।
০২। অনলাইন লিংক: ০১, ০২, ০৩।
০৩। বই: Glass Frogs by Doug Wechsler.
০৪। অডিও সূত্র: ০১, ০২।
পাদটীকা:
[০১]
ইংরেজী 'Glass Frog' বা, 'Transparent Frog'-এর বাংলা করলে দাঁড়ায় 'স্বচ্ছ ব্যাঙ'। 'স্বচ্ছ' শব্দের আরেক প্রতিশব্দ হল 'অচ্ছ'। তাই, Glass Frog বা, Transparent Frog-এর বাংলা হিসেবে 'অচ্ছ ব্যাঙ' শব্দটি ব্যবহার করা হল।
মন্তব্য
ভাই, গুগল ইমেজ আর্কাইভ টা কী? ছবির সূত্র দিতে হবে, কে তুলেছে সেটাও লিখতে হবে। ওপেন সোর্স হলে তার সোর্স দিতে হবে। গুগল কোন সোর্স নয়।
বেশ ভালো একটা কথা বলেছেন, ধন্যবাদ। বিষয়টি এভাবে দেখিনি।
পরেরবার হতে ছবিগুলোর ক্রেডিট আরো পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করার চেষ্টা থাকবে।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
যদিও অচ্ছকে স্বচ্ছর প্রতিশব্দ বলেছেন, আমার মনে হয়েছে স্বচ্ছকে অচ্ছ মনে হয় উত্তরাঞ্চলের বলে।
এই ব্যাঙটা অনেক সুন্দর। আগেরটার মতো কুৎসিত না।
অনুগ্রহ করে ছবি গুলোর ক্রেডিট আরো পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করবেন।
উত্তরাঞ্চল মানে অংপুরী?
ছবির উৎসের বিষয়টি মাথায় রইল। পরেরবার ডিটেইলস ছবিসূত্র দেয়ার চেষ্টা করব।
পোস্ট পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
এই ব্যাঙ থাকলে বায়োলজি ল্যাবে আর কাটাকাটি করতে হতো না।
হুমম, তখন দেখা যেতো, ব্যাঙ না কাইটা বাসায় নিয়া শো-পিস হিসেবে সাজাই রাখছে।
পোস্ট পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
এইটার ডাকও শোনেন। অবশ্য এখানে দুই প্রজাতির (Cochranella albomaculata আর Smilisca sila) ব্যাঙ এর ডাক আছে।
...........................
Every Picture Tells a Story
অডিও শেয়ার ও পোস্ট পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
Cochranella albomaculata এক প্রজাতির অচ্ছ ব্যাঙ। তবে, Smilisca sila অচ্ছ ব্যাঙের মত গেছো ব্যাঙ হলেও এরা ভিন্ন প্রজাতির গেছো ব্যাঙ, এরা অচ্ছ ব্যাঙ নয়।
ভালো করে খেয়াল করলে আপনার দেয়া অডিওতে তিন ধরণের শব্দ শোনা যায়। ০১। ঝিঝি পোকা। ০২। এক প্রজাতির গেছো ব্যাঙ (এঁ-ওঁ ধ্বনি)। ০৩। অচ্ছ ব্যাঙ (চিক চিক ধ্বনি)।
আমি শুধু অচ্ছ ব্যাঙের অডিও দিয়ে দিলাম:
প্রজাতি: Cochranella albomaculata
বাই দা ওয়ে, আপনার অডিওর উৎস কি এই লিংক? ০০০০০
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
অচ্ছ ব্যাঙরা বেঁচে থাকুক
অচ্ছ ব্যাঙরা বেঁচে থাকুক...
পোস্ট পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
নামকরণের সময় সহজ নামটা ব্যবহার করাই শ্রেয় (স্বচ্ছ ব্যাঙ - খারাপ শোনায় নাতো )
আগেই বলেছি ব্যাঙ মাত্রই আমার খুব প্রিয়, তাই পোস্টটা খুব ভালো লেগেছে - গোছানো ও তথ্যবহুল। ব্যাঙ সিরিজ চলুক
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
নামকরণে সহজ নাম ব্যবহার করা শ্রেয়, তা ঠিক।
'অচ্ছ' শব্দটি ব্যবহারের সময় 'অম্লজান' জাতীয় বঙ্গানুবাদের ফিকির মাথায় ছিল।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
স্বচ্ছ ব্যাঙ নামটাই বোধ হয় বেশি মানায়।
পোস্ট পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
মনে হচ্ছে, এই সিরিজ টা আমার জন্য। হিঃ হি ঃ হিঃ
অচ্ছ নামটা ভালো লেগেছে। বেচেঁ থাকুক অচ্ছেরা এই সুন্দর ধামে।
যান পরের পর্বটা আপনার জন্যই লিখব।
অচ্ছ ব্যাঙরা বেঁচে থাকুক...
পোস্ট পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
প্রচুর ঝামেলায় আসি, তাই টুক করে এসে আপনার এই লেখাটা পড়ে ফেললাম। মজা পাইসি পড়ে। ভাল্লাগতেসে এখন
---- ঠুটা বাইগা
পোস্ট পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
চলুক চলুক! চামে নিজেও ব্যাঙের কিছু ছবি তুলে তাদের নিয়েও পোস্ট দিতে পারেন কিন্তু!
facebook
দেশী ব্যাঙ নিয়ে পোস্ট দেয়ার চেষ্টা থাকবে।
পোস্ট পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
পড়ছি। অনেক নতুন বিষয় জানছি। লেখা চলুক।
পোস্ট পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
এইটাই ব্যাঙ রাজকুমার ছিল
মনে হয়...
পোস্ট পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
আহা! কি সুন্দর যে ব্যাঙটা! এটাকে দেখে তো কাউকে 'ব্যাঙের মত রূপ' বললে আর ব্যাঙ্গ করা হবেনা বরং প্রশংসাই হয়ে যাবে...
........
রংতুলি
পোস্ট পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
পোস্ট পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
চরম পোস্ট হইছে, কিন্তু "অচ্ছ ব্যাংগ" এর থেকে "কাঁচ ব্যাংগ" নামটা ভালু পাই, কিংবা কনফর্মিস্ট হইলে "ইসদচ্ছ ভেক" রাখতে পারেন,
-- রামগরুড়
ভালো সাজেশান।
পোস্ট পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
নতুন মন্তব্য করুন