০১
১৮৯৭/৯৮ সালে জাপানের ইয়কোহামার কাছে একদল জাপানী জেলে নতুন এক প্রজাতির সামুদ্রিক প্রাণী খুঁজে পেল। বিশালাকৃতির এই প্রাণী দেখতে হাঙরের মত। জাপানী জেলেরা এর নাম দিল 'ত্যানগুজামে' (Tenguzame) যার অর্থ ভুতুড়ে হাঙর।
০২
উপরে যে ছবি দেখছেন, তা একটি হাঙরের। ২২ আগস্ট, ১৯৮৩ তে 'এফআরভি কাপালা' নামের এক মাছ ধরা জাহাজ অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথওয়েলসের সিডনী উপকূলে সমুদ্রের প্রায় এক হাজার মিটার গভীর হতে প্রায় চার মিটার লম্বা এই বিচিত্র হাঙরটিকে ধরে।
হাঙরের এই প্রজাতির নাম ইংরেজীতে Goblin Shark, বৈজ্ঞানিক নাম Mitsukurina owstoni, বাংলায় বলা যেতে পারে ভুতুড়ে হাঙর।
জাপানি প্রাণী বিজ্ঞানী কাকিচি মিৎসুকুরি ও এশিয়ার বন্যপ্রাণী সংগ্রাহক ব্রিটিশ নাগরিক অ্যালান আউস্টনের (১৮৫৩-১৯১৫) স্মরণে এদের নামকরণ করা হয়।
০৩
ভুতুড়ে হাঙরদের খুঁজে পাওয়া যায় সমুদ্রের গভীরে অন্ধকারে। এরা সাধারণত: অতলান্তিক, ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরের গভীর জলে থাকে। তবে, বিশেষত: অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস, দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়া ও তাসমানিয়ার সমুদ্র উপকূল, জাপান, দক্ষিণ আফ্রিকার উত্তমাশা অন্তরীপ, পুর্তগালের সমুদ্র উপকূল, দক্ষিণ আমেরিকার সুরিনাম, ফ্রেঞ্চ গায়ানার সমুদ্র উপকূলে এদের বেশি দেখতে পাওয়া যায়। সাধারণত: সমুদ্রের ১,২০০ থেকে ৪,০০০ মিটার নিচে এদের বসবাস।
ভুতুড়ে হাঙর সম্পর্কে হাঙরবিদরা খুব বেশি কিছু জানতে পারেননি। কারণ, ভুতুড়ে হাঙরের দেখা খুব কমই দেখা পাওয়া গেছে। এ পর্যন্ত মাত্র পঁয়তাল্লিশটি নমুনা সংগ্রহ করা গেছে।
০৪
ভুতুড়ে হাঙরের লম্বা শুড় আর ধারালো-তীক্ষ্ণ দাঁত অন্য হাঙরদের থেকে এদের আলাদা করে রেখেছে। এদের মুখটি আরেক বিস্ময়; বিশাল হা করতে পারে, মনে হয় যেন সব শুষে নেবে। এদের শরীর কিন্তু বেশ নরম, থলথলে। গায়ের রং ধূসরে-গোলাপী। এরা প্রায় পাঁচ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। স্ত্রী ভুতুড়ে হাঙররা আকৃতিতে বড় হয়। এদের সন্তরণ থলি (মাছের পটকা/Swim bladder) থাকে না। অবাক করা আরেকটি বিষয় হল: এদের যকৃৎ শরীরের এক চর্তুথাংশের সমান হয়। এদের চোখ ছোট হয়। পাখনা প্রায় গোলাকৃতির।
ভুতুড়ে হাঙরদের খাদ্যাভাস সম্পর্কে খুব বেশি জানা যায় না। এরা সাধারণত: গভীর সামুদ্রিক মাছ, স্কুইড, অক্টোপাস, চিংড়ি জাতীয় সামুদ্রিক পোকামাকড় খেয়ে থাকে।
ভুতুড়ে হাঙরদের প্রজনন সম্বন্ধে খুব বেশি কিছু জানাতে পারেননি হাঙরবিদরা। তবে, হাঙরবিদরা মোটামুটি নিশ্চিত যে, স্ত্রী ভুতুড়ে হাঙরদের দেহের অভ্যন্তরে ডিম থাকাকালীন সময়ে ভ্রুণ পরিপক্ক হয় এবং শিশু ভুতুড়ে হাঙর ডিম ফুটে মায়ের পেট হতে বেরিয়ে আসে।
এই জাতের হাঙররা মানুষের জন্য ক্ষতিকর নয় বলেই ধারণা করা হয়।
IUCN দুর্লভ এই ভুতুড়ে হাঙরকে Least Concern প্রাণীর তালিকায় অর্ন্তভুক্ত করেছে। মানুষের ভয়াবহ থাবা থেকে এরা বেঁচে গেছে, কারণ, এরা সমুদ্রের এতই গভীরে থাকে, যেখানে মানুষের হাত নিত্য-নৈমত্তিকভাবে এখনো পৌঁছায়নি। তারপরও ভুতুড়ে হাঙররা বিপদমুক্ত নয়; সৌখিনদের কাছে এদের চোয়াল, শুড় ও মুখাংশের চাহিদা আছে। এছাড়া, সচরাচর এদের দেখা না পাওয়ায় সমুদ্রের পানি দূষণে কারনে এদের কি পরিমাণ ক্ষতি হচ্ছে তাও ঠিকমত জানা যাচ্ছে না।
মানুষের ভয়াল থাবার শিকার হয়ত ভুতুড়ে হাঙররা হয়েছে অথবা, হবে। তবু, কামনা করি, এই বিচিত্র সুন্দর ভুতুড়ে হাঙররা যেন বেঁচে থাকে পৃথিবীর শেষ সূর্য অস্তের দিন পর্যন্ত।
রেফারেন্স:
০১। রিফ কোয়েস্ট সেন্টার ফর শার্ক রিসার্চের সাইটে প্রকাশিত প্রবন্ধ।
০২। অস্ট্রেলিয়ান মিউজিয়ামের সাইটে প্রকাশিত প্রবন্ধ।
মন্তব্য
ওরে বাবা!
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
পোস্ট পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
আরো জানতে পারলে ভাল লাগত, বছর কয় আগে জাপানের কাছের সমুদ্রপৃষ্ঠে উঠে এসে ছিল একটা। টিভিতে দেখেছিলাম।
facebook
ওই রকম একটা ভিডিওটা আছে আমার কাছে। জাপানী ভাষায় বলে পোস্টে দিলাম না।
পোস্ট পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
ভুতুরে হাঙর তো দেখি সুন্দর! মানুষের ভুতুরে আচরণের শিকার তারা!
সেটাই; একদিন দেখা যাবে, মানুষ বাদে আর কেউ নেই। সব শেষ।![মন খারাপ মন খারাপ](http://www.sachalayatan.com/files/smileys/2.gif)
পোস্ট পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
“Peace comes from within. Do not seek it without.” - Gautama Buddha
পোস্ট পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
খাইছেরে!!
দেবা ভাই
-----------------------------------------
'দেবা ভাই' এর ব্লগ
পোস্ট পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
আহা, অদ্ভুতুড়ে সব পোস্ট আসছে। আসুক, আসুক।
পোস্ট পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
ওররে বাবা!!![অ্যাঁ অ্যাঁ](http://www.sachalayatan.com/files/smileys/13.gif)
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
পোস্ট পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
প্রাণিজগত নিয়ে আপনার পোস্টগুলো দারুণ! আরো লিখুন!![চলুক চলুক](http://www.sachalayatan.com/files/smileys/yes.gif)
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
পোস্ট পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
রাজামশাই দেখি এখন সবুজ পাহাড় ছেড়ে গভীর সমুদ্রে চলে গেছেন!![হাসি হাসি](http://www.sachalayatan.com/files/smileys/1.gif)
আপাতত: দৌঁড়ের উপর আছি। তাই, পাহাড়ে যাবার সময় নাই গো দিদি।
পোস্ট পড়ার জন্য ধন্যবাদ।![হাসি হাসি](http://www.sachalayatan.com/files/smileys/1.gif)
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
মজা পেয়েছি পড়ে।![দেঁতো হাসি দেঁতো হাসি](http://www.sachalayatan.com/files/smileys/4.gif)
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
পোস্ট পড়ার জন্য ধন্যবাদ।![হাসি হাসি](http://www.sachalayatan.com/files/smileys/1.gif)
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
রাজাসাহেব, চলুক!
পোস্ট পড়ার জন্য ধন্যবাদ।![হাসি হাসি](http://www.sachalayatan.com/files/smileys/1.gif)
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
ইহার নাম দিলাম শিশির, থুক্কু !! ইহার নাম দিলাম গণ্ডার হাঙ্গর !! দারুণ একটা পোস্ট !!![উত্তম জাঝা! উত্তম জাঝা!](http://www.sachalayatan.com/files/smileys/jajha.gif)
পোস্ট পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
হাঙ্গরের চেয়ে আপনার ব্যাঙগুলা অনেক কিউট ছিল।
জ'স এর প্রথম টা দেখার পর আমি কক্সবাজারের মতো নিরীহ যায়গার সমুদ্রে নামতেও ডরাইছি বহুতদিন। বাকিগুলা দেখি নাই আর।
আপনার সবগুলো পোস্ট ভয়ংকর মচমচে হচ্ছে।![হাসি হাসি](http://www.sachalayatan.com/files/smileys/1.gif)
যদি ভাব কিনছ আমায় ভুল ভেবেছ...
ব্যাঙ নিয়ে আরো পোস্ট দিবো।![হাসি হাসি](http://www.sachalayatan.com/files/smileys/1.gif)
![মন খারাপ মন খারাপ](http://www.sachalayatan.com/files/smileys/2.gif)
সমুদ্রতটে গেলে হাঙর নিয়ে আমারো ভয় লাগে।
পোস্ট পড়ার জন্য ধন্যবাদ।![হাসি হাসি](http://www.sachalayatan.com/files/smileys/1.gif)
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
সচলায়তনে আপ্নে দেখি চিড়িয়াখানা খুইলা বইছেন। পোস্টগুলো পড়ে বেশ ভাল লাগছে। সিলাকান্থ নিয়ে একটা পোষ্টাইয়েন।
ভূতুড়ে হাঙরের দেহ নরম ফ্লেক্সিবল হওয়ার পেছনে গভীর পানির অতিরিক্ত চাপের পরিবেশ একটা কারণ হতে পারে।
পোস্টে হাঙরের ফুসফুসের সাইজ নিয়ে বলেছেন, হাঙরের তো ফুসফুস থাকার কথা নয়, তাই না ?
ঠিক তো। হাঙরের ফুসফুস আসবে কোথা থেকে?
লিখার ভুলটি দেখিয়ে দেয়ার জন্য ধন্যবাদ। ওটা ফুসফুস নয়, বরং যকৃত হবে। পোস্টে ঠিক করে দিলাম।
সিলাকান্থ নিয়ে পোস্ট দেয়ার ইচ্ছা রইল।
পোস্ট পড়ার জন্য ধন্যবাদ।![হাসি হাসি](http://www.sachalayatan.com/files/smileys/1.gif)
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
মানুষের সুরে ডাক দেওয়া আরেক পদের ভুতুড়ে (বেলুগা) হাঙরের ডাক শুনুনঃ--
-------------------------------------------------
উপ্রে সাউন্ড এমবেডটা না আসলে এখানে দেখুন।
****************************************
![](http://farm6.static.flickr.com/5201/5238901770_07cdea183b_m.jpg)
নতুন মন্তব্য করুন