আজ আদুরে পিচ্চি বাটিসদের কথা বলা যাক।
ছবিতে পয়সার উপর যে প্রাণীটি দেখতে পাচ্ছেন, তা পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট সরীসৃপগুলোর একটি।
টিকটিকি শ্রেণীর অর্ন্তভুক্ত এই সৃরীসৃপের ইংরেজী নাম Jaragua Sphaero ও Dwarf Gecko, বৈজ্ঞানিক নাম Sphaerodactylus ariasae; এদের বৈজ্ঞানিক নামটি (Sphaerodactylus ariasae) রাখা হয় জারাগুয়া ন্যাশনাল পার্কের প্রবক্তা ইভোন আরিয়াসের নামানুসারে।
এবার আসা যাক এদের বাংলা নামকরণে, ইংরেজী Dwarf Gecko-এর বাংলা করলে হয় 'বামুন টিকটিকি জাতীয় সরীসৃপ'। এখান থেকে কিন্তু বেশ চমৎকার একটি নাম দেয়া যায়। বামুনের 'বা', টিকটিকির 'টি' আর সরীসৃপের 'স' নিয়ে ছোট্ট এই সরীসৃপের নাম দেয়া যায় 'বাটিস'।
বাটিসদের কথা প্রথম ২০০১ সালে আমাদের জানান প্রাণীবিজ্ঞানী ব্লেয়ার হেডজস ও রিচার্ড থমাস।
বাটিসদের বাড়ি হলো হাইতি ও ডোমিনিকান রিপাবলিক রাষ্ট্রে। সাধারণত: বাটিসদের ডোমেনিকান রিপাবলিকের জারাগুয়া ন্যাশনাল পার্ক এবং বিইটা দ্বীপে এদের পাওয়া যায়।
বিইটা দ্বীপের চুনা পাথরের গুহায় আদ্র পাতার স্তুপের মাঝে বাটিসদের প্রথম দেখা যায়।
বাটিসরা লম্বায় সর্বোচ্চ দুই সেন্টিমিটার পর্যন্ত হতে পারে। এরা ২০০১ সালের পর অনেকদিন পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট মেরুদন্ডী প্রাণীর তালিকায় প্রথম সারিতে ছিল। কিন্তু পুটো ব্যাঙরা ২০০৯ সালে এই স্থান দখল করে নেয়।
বাটিসদের গায়ের রং কালচে বাদামী। এদের চোখের পাতা থাকে না বরং চোখ ঢাকার জন্য একধরণের পাতলা আবরণ থাকে। জ্বিহবা দিয়ে ওরা চোখের এই পাতলা আবরণ পরিষ্কার করে।
বাটিসরা ছোট পোকামাকড়, ছোট মাকড়সা ও মাছি খেয়ে থাকে।
বাটিসরা থাকে বসতি আদ্রতা আছে এমন স্থানে। এর কারণ, শুষ্ক পরিবেশে বাটিসদের শরীর দ্রুত পানিশূণ্য হয়ে যায় আর এর পরিণতি মৃত্যু। তাই, এদের বসতি এমন স্থানে হতে হয়, যেখানে আদ্রতা আছে ও আশেপাশে প্রচুর পরিমাণ পানি আছে। এরা সাধারণত: আদ্র পাতার স্তুপের সাথে থাকে।
বাটিসদের প্রধান শত্রু হল চেঞ্চেলা ও বিছা। এদের একটি চমৎকার বিষয় হলো: এদের লেজ। কোন শিকারী প্রাণী এর লেজ ধরে টান দিলে আত্মরক্ষার্থে এদের লেজ খুলে চলে আসে আর লেজ ফেলে বাটিসরা হুটমুট করে দৌঁড়ে পালিয়ে যায়।
বাটিসরা সাধারণত: জন্মগত নিজস্ব পরিবেশ (Endemic) ছাড়া প্রজনন করতে পারে না এবং বেশি দিন বেঁচেও থাকতে পারে না।
বাটিসদের বসতি ডোমেনিকান রিপাবলিকের জারাগুয়া ন্যাশনাল পার্ক এবং বিইটা দ্বীপে, যা সংরক্ষিত বন-এলাকা কিন্তু তারপরও IUCN বাটিসদের Endangered প্রাণী হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। এর কারণ, হাইতি ও ডোমিনিকান রিপাবলিকের এই সংরক্ষিত বনাঞ্চলে বর্তমানে যে হারে বন উজাড় করা হচ্ছে, তাতে অতিক্ষুদ্র বাটিসরা খুব দ্রুত আমাদের ছেড়ে হারিয়ে যাবে।
বাটিসদের মত এত সুন্দর প্রাণী পৃথিবী ছেড়ে হারিয়ে যাবে?
বাটিসরা বেঁচে থাকুক অনন্তকাল।
আমরা চাই না, আমাদের আগামী প্রজন্মের কেউ বাটিসদের কন্কালের ছবি নিয়ে পোস্ট দিবে, 'একদা বাটিস নামে এক ক্ষুদ্র টিকটিকি ছিল'।
রেফারেন্স:
বিবিসি নিউজে প্রকাশিত প্রবন্ধ।
নিউজ সাইন্টিস্টে প্রকাশিত হ্যাজেল মুয়েরের প্রবন্ধ।
এনসাইক্লোপিডিয়া অব লাইফে প্রকাশিত প্রবন্ধ।
ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক নিউজে প্রকাশিত বিজল পি ত্রিবেদীর প্রবন্ধ।
হিলিয়ামে প্রকাশিত পোলাইন এব্রু ও সিলিসসার প্রবন্ধ।
মন্তব্য
কিছু ছবিতে তাদের শরীরের বর্ণ আলাদা আলাদা মনে হল!
facebook
লাস্ট দুইটা ছবি নিয়া কনফিউশান ছিল।
মেইল করেছিলাম। কনফার্ম করলো ফটো ঠিক আছে, Sphaerodactylus ariasae-এরই ফটো। ক্যামেরাম্যানের কিছু কারসাজি থাকতে পারে।
হেডজসের লেখায় আছে, এদের গায়ের রং blackish brown।
পোস্ট পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
'বাটিস' তাহলে আপনার দেওয়া নাম! শেষের ছবিতে মাথাটা জুয়েলারীর মতো লাগছে!
আসলেই অনন্য সুন্দর এই প্রাণীগুলো।
পোস্ট পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
যদিও মন্তব্য করা হয়না, কিন্তু আপনার এই সিরিজটার মনোযোগী পাঠক আমি। এক কালে ম্যাক্রো ফটোগ্রাফিতে ভয়াবহ আসক্তি ছিলো, তাই পোকামাকড় আর নানা পদের পিচকি পাচকি প্রানী খুব পছন্দের তালিকায় আছে।
তৃতীয় ছবিতে আঁশের ভাঁজে লাইট রিফ্লেকশনের কারণে এভাবে রঙের একটু পরিবর্তন হতে পারে, কারন পেছনের ব্যাকগ্রাউন্ড বলছে পরিবেশ খুব 'লালচে' ছিলো। আর ফটোগ্রাফার একটু ভিভিড প্রিসেটে ছবি তোলার কারনেও হয়তো রঙ আরেকটু বেশিই লাগছে।
যাই হোক, এই সিরিজটা খুব ভালো লাগছে, চলুক।
==========================================================
ফ্লিকার । ফেসবুক । 500 PX ।
মন্তব্য ও পোস্ট পাঠের জন্য ধন্যবাদ।
আপনার কাছে তোলা ছবিগুলো থাকলে পাঠিয়ে দিতে পারেন। সেসব প্রাণীদের নিয়ে লেখা যাবে।
মেইলের অপেক্ষায় থাকলাম:
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
সময় করে এখনো পড়তে পারিনি, আপনার ওয়েবটা রেখে দিয়েছি, পড়ে নেব সময় করে। আগ্রহ বোধ করছি, একটু ঘুরেও এসেছি কদিন আগে আপনার ব্লগ থেকে।
শুভকামনা।
__________________________
বুক পকেটে খুচরো পয়সার মতো কিছু গোলাপের পাঁপড়ি;
পোস্ট পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
টিবাস,বাসটি, বাটিস
ইফতি
ইফতি, আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ, আমার প্রতিটি পোস্ট পড়ার জন্য।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
আপনার দেয়া চতুর্থ ছবির মত দেখতে একই রকম হলদে রঙের প্রাণী আইভরি কোস্টে দেখা যায় মনে হয়। এদের নাম জানিনা তবে পোষ্টের বাটিস গুলো দেখতে বেশ। লেখা ও ছবি ভালো লেগেছে।
পোস্ট পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
আইভরি কোস্টের এই সরীসৃপটির কথা বলছেন, তাই তো।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
তথ্যসমৃদ্ধ, ভালো লেগেছে।
...........................
Every Picture Tells a Story
পোস্ট পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
ভালো লাগলো!
পোস্ট পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
গেকো'র প্রমিত বাংলা নাম কী? একটা স্থানীয় নাম হচ্ছে 'আরজিনা'। প্রমিত বা স্থানীয় বাংলা নাম থাকলে নতুন করে নাম দেবার দরকার পড়েনা। প্রজাতিগত পার্থক্য করার ক্ষেত্রে নামের আগে বিশেষণ যোগ করা যেতে পারে কেবল। যেমন, শতপদীদেরকে আপনি বলছেন চেঞ্চেলা - আমি হলে বলতাম চ্যালা। এর কোনটাই ভুল নয়। এখন যদি আপনি হঠাৎ সবুজ রঙের একটা শতপদী আবিষ্কার করে ফেলেন তাহলে তাকে 'হরিৎ শতপদী' বলুন বা 'সবুজ চেঞ্চেলা' বলুন বা 'কইচ্ছা চ্যালা' বলুন কোনটাই ভুল হবে না।
- কেন এরা শত্রু? একটু বিস্তারিত বলুন। বিছা মানে কি বৃশ্চিক নাকি শুঁয়োপোকা?
- লেজ কী পরে আবার গজায়?
সিরিজ চালিয়ে যান। খান পঞ্চাশেক এপিসোড হলে একটা ই-বুক করে ফেলবেন।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
'গেকো'র প্রমিত বাংলা হল- টিকটিকি জাতীয় সরীসৃপ। টিকটিকি কোন নির্দিষ্ট একটি প্রাণীর নাম নয়। 'টিকটিকি' সরীসৃপ গোত্রীয় 'একই ধরণের কিছু প্রাণীর' সমষ্টিগত নাম।
বাটিসরা এদেশী নয়। বাটিসদের কোন বাংলা নাম দেয়া হয়েছে বলে আমার জানা নেই।
তাই, বাটিসদের আলাদা নামকরণ করা।
বৃশ্চিকের সমার্থক হিসেবে বিছা শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। চেঞ্চেলা ও বিছারা বাটিসদের খাদ্য হিসেবে শিকার করে।
হুমম। লেজ পরে গজায়।
আচ্ছা, পঞ্চাশটার মত পোস্ট হলে, একটা ইবুক করে ফেলা যাবেনে।
পোস্ট পড়া, আলোচনা করা ও ইবুকের পরামর্শের জন্য ধন্যবাদ।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
গেকো হচ্ছে তক্ষক।
তক্ষকের আরেক প্রতিশব্দ টিকটিকি।
বাঙালীরা বেশ কয়েকটি সরীসৃপ প্রাণীকে টিকটিকি বলে সম্বোধন করে। ঠিক তেমনি ইংরেজীতেও গেকোর অনুরূপ ব্যবহার হয়। গেকো বা, টিকটিকি কোন একটি নির্দিষ্ট সরীসৃপ প্রাণী নয়। এটি বেশ কয়েকটি সরীসৃপকে বুঝায়।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
পোস্ট পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
ব্লগে একজন গিরিগিটি বিশেষজ্ঞ পাওয়া গেল দেখি।
তবে এই প্রাণীগুলোরে দেখলে গা শিরশির করে কেন জানি।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
পোস্ট পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
"আদুরে পিচ্চি বাটিস"! - উরি!
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
পোস্ট পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
আমি জানি যে আমার মাথার উপ্রে দিয়া যে বেটা টিকটিক কইরা ঘুরতাছে সে যদি নিজে না পড়তে চায় তাইলে পড়বে না। কিন্তু তারপরেও যখন স্কুলে পড়তাম তখন রাজশাহী ফুফুর বাড়ি গিয়ে একবার কয়েকটা টিকটিকির শরীরের সাইজ দেখে সারারাত বারান্দায় এসে বসে ছিলাম। কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না যে অত ছোট ছোট চারটে পা দিয়ে অত বড় শরীর এরা ছাদের সাথে আটকায় রাখতে পারবে।
টিকটিকিকেও আমি লেজ খসাতে দেখেছি। চেহারা সুরত এবং অন্যান্য হিসেবে এইটা একটা ছোট টিকটিকিই মনে হইল। লেখা চমৎকার হচ্ছে। চলতে থাকুক।
যদি ভাব কিনছ আমায় ভুল ভেবেছ...
টেগটিইঙ্গার কথা বলছেন নাকি? বিশাল আকৃতির টিকটিকি জাতীয় সরীসৃপ।
বাটিসদের টিকটিকি বললে খুব বেশি ভুল হবে না।
পোস্ট পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
আপনার জন্য: http://www.wimp.com/mudskipperfish/
লিংক শেয়ারের ধন্যবাদ।
এদের নিয়ে লেখা যাবে।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
বাটিস, বাটিস, বাটিস । ভালো লেগেছে বাতিসদের।
পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
নতুন মন্তব্য করুন