১।
আমায় এমন পাগল করে আকাশ থেকে মধ্য রাতে নামলে কেন,
নামলে যদি মধ্যরাতেই, চোখের দেখা না ফুরাতেই থামলে কেন?
মাঝরাতের ঝুম ঝুম বৃষ্টি নিয়ে দেখা যাচ্ছে বাংলা সাহিত্যের তিন দিকপালই নানা কিছু ভেবেছেন। এক হলেন আমাদের ট্যাগোর আংকেল, তিনি লিখে গেছেন, আমার নিশীথ রাতের বাদল ধারা, এসো হে গোপনে...। তারপরে আছেন ডাকাত-কবি, মানে নির্মলেন্দু গুণ, কি অসাধারণ সব পংক্তি, নামতে তোমায় কে বলেছে, মেঘে মেঘে মেঘ গলেছে, অন্ধকারে।
আর তৃতীয়জন হলাম এই আমি। এখনো কিছু লিখিনি অবশ্য, তবে ইদানিং রাত বিরেতের বৃষ্টিটাকে যে হারে মিস করা শুরু করেছি, খুব শীঘ্রই যে একটা কিছু লিখে ফেলবো, সে ব্যাপারে কোন সন্দেহ নাই।
২।
লাল কমলা আর গোলাপী, তিনটে রংকেই আমি লাল বলে চালিয়ে দিই। ফিরোজা, সবুজ, কলাপাতা অথবা লেবু- সবই আমার কাছে সবুজ। দুর্জনে আমাকে কালার-ব্লাইন্ড বললে দোষাই কেমনে?
আমি অবশ্য দাবি করি, কালার ব্লাইন্ড নয়, বড়জোর আমাকে কালার-ডাম্ব বলা যেতে পারে। রঙ টং যে চিনি না তাতো নয়। চিনি ঠিকঠাক, তবে বলবার কষ্টটুকু করতে ইচ্ছে করে না আর কি! সে জন্যে ব্লাইন্ড হতে রাজি নই, বড়জোর ডাম্ব হওয়া চলে!
৩।
ভেবে দেখলাম, এই পোড়ার দেশের লোকেরা একেবারে পাকাপাকি সিজন-ব্লাইন্ড!
খুব সুন্দর একটা আবহাওয়া এখন। খুব গরমও নয়, ঠান্ডাও নয়। আকাশটা ঠিক শরতের মতন ঝকঝকে থাকে সারাক্ষণ। মেলবোর্ণের ঠিক মাঝবরাবর 'ইয়ারা' নামে একটা ছোট্ট খাল বয়ে গেছে এধার ওধার। এটাকেই 'ও নদী রে...' বলে গলা কাঁপিয়ে ডাকাডাকি করে কতই না আদিখ্যেতা এদের। আমি দেখে ভাবি, ব্যাটা দেখে যা একবার আমাদের গোমতী, কিংবা ডাকাতিয়া নদীটারে, বুঝবি তবে নদীর মজা!
যেটা বলছিলাম, এই সুন্দর সময়টার জন্যে একটা সুন্দর ইংরেজি নামও আছে, অটাম। কিন্তু কই, এই নামে কেউ ডাকে নাতো এখানে! একদম গোয়ারের মতন ঘাড় বেঁকিয়ে শুধু দুটা জিনিসই জানে তারা, সামার আর উইন্টার। মাঝামাঝি আর কিছু না!
ছয়টি ঋতু ছয়টি পাখি হয়ে এই দেশে এসে শুধু দুইটি সুরেই ডাকাডাকি করে যেন। বাকি সুর সব ভুল হয়ে গেছে!
৪।
কার্জন হলে ক্লাশ শেষ করে যখন বের হতাম, ফিজিক্স ডিপার্টমেন্টের সিঁড়ি বেয়ে নামলেই একদম অট্টাশ হয়ে দাঁড়িয়ে পড়তাম। লাল লাল আগুনরঙা কৃষ্ণচূড়া দেখে লম্বা সময় নড়চড়ের কোন উপায় ছিল না একদম। চন্দ্রাহত অনেকেই হয় বলে শুনেছি, আমার ধারণা, খুঁজে দেখলে আমার মতন আরো দুয়েকজন কৃষ্ণচূড়াহতর খোঁজ পাওয়া মুশকিল হবে না।
৫।
গত কদিন ধরে ঐ ইয়ারা নদীর পাড়ে আমার আসা যাওয়া বেড়ে গেছে। শরতের আকাশ দেখে আশা জাগে মনে, দুয়েকটা কাশফুল কি চোখে পড়বে না? পড়ে না শেষমেষ।
কদিন আগে লংড্রাইভে ঘুরে আসা হলো অনেকদূর। চারপাশে গাছপালার জংগলের ভেতর দিয়ে চলে যাওয়া, কিন্তু কোথাও শিমুল নেই, কৃষ্ণচূড়া নেই। তেপান্তরের সাইজের মাঠ একেকটা, কিন্তু তার কোনটাই ধানক্ষেত নয়, হলদে পাখির মতন সরিষা ক্ষেতও নয়।
রবীন্দ্রনাথ নেই, নির্মলেন্দু নেই, মাঝরাতের ক্ষণস্থায়ী বৃষ্টি নেই, নিশীথ রাতের বাদল ধারা নেই...। এত সব নেই-এর মাঝে আমি কি নিয়ে যে বেঁচে আছি, পান চিবুনো বুড়ো মানুষদের মতন বসে বসে আমি তা-ই এখন ভাবছি!
মন্তব্য
- মিয়া বউ ও কি নাই নাকি?
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
বুয়েটের কৃষ্ণচুড়া গুলো আমাকেও প্রায়শই কৃষ্ণচুড়াহত করত ছোটবেলা থেকেই।খুব ভাললাগলো পড়তে।
::একাকিত্বের বিলাস আমার অনেকদিনের সাধ::
::একাকিত্বের বিলাস আমার অনেকদিনের সাধ::
আহারে পরবাসী মন!
ধুগো,
এইটা ধরে নিতে পারেন মিয়া-বউ দুইজনেরই প্রলাপ।
বিবাগিনী ও শিমুল,
ধন্যবাদ।
-----------------------------------
যা দেখি তা-ই বলি...
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
নতুন মন্তব্য করুন